Thursday, December 28, 2017

নূতন বছর
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আসছে ইংরাজী নূতন বছর-
মাতবে সবাই আলোর রোশনায়ে,
৩১ ডিসেম্বর ফাটবে বাজি,
চারিদিকে কলরব 'হ্যাপি নিউ ইয়ার'-
সত্যিই কি নুতন বছর সকলের জীবনে-
সুখ, আনন্দ, শান্তি নিয়ে আসে ?
নুতন বছরের আগমনে সব কষ্ট কি
জীবন থেকে মুছে ফেলা যায় ?

কি দেয় নুতন বছর ?
জীবনের আয়ু এক বছর কমানো ছাড়া?
তবুও আমরা নবআনন্দে তাকে নিয়ে
বোকার মত সবাই মিলে মাতামাতি করি!
নুতন বছর ফিরিয়ে দেয়না -
যারা হারিয়ে গেছে তাদের,
অনাহারে, অর্ধাহারে যারা রয়েছে
দু'বেলা তাদের মুখে অন্ন তুলে,
নারীর অসম্মান, খুন, রাহাজানি,
নুতন বছরে কি বন্ধ হয়ে যায়?
যে পিতামাতা বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন-
নুতন বছরে তাদের সন্তান কি-
ফিরিয়ে আনে তাদের বাড়িতে ?

নুতন বছর ঘিরে কিসের এত উন্মাদনা?
বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাস্তবকে এড়িয়ে-
আকাশের পানে চেয়ে থাকা- নয় কি ?

@ নন্দা  27-12-17

Wednesday, December 27, 2017

ঠুনকো ভালোবাসা
          নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ভালোবাসা -
তুমি এতো ঠুনকো কেন ?
অল্পতেই তুমি ভেঙ্গে যাও !
তুমি রঙ্গীন স্বপ্ন বোনো ,
রং,তুলি বিনা - আঁকো ;
হৃদয়ে নীল প্রজাপ্রতির মত  -
ডানা মেলে উড়ে বেড়াও ;
ভয় হয় কখন পালিয়ে যাও !
ভিজে যাওয়া শাড়িতে তুমি -
আমার শরীরে লেপ্টে থাকো ।
আমি যখন ফুলের মালা গাঁথি ,
তোমার মনের কথাগুলি কেন
আমার হৃদয়ে সঞ্চার করো ?
আয়নার সামনে যখন নিজেকে সাজাই ,
বুকের ভিতর কেন তোলপাড় করো ?

তবুও তুমি কেন এতো ঠুনকো ?
 যখন খুশি উড়ে যেতে পারো !

@নন্দা 

Saturday, December 23, 2017

পারতে হচ্ছে
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

একা রাস্তায় হাঁটতে শিখেছি,
প্রথমে ভেবেছিলাম -
তুমি ছাড়া আমি অসহায়!
খরস্রোতা জীবন নদীর মাঝে-
তোমাকে ছাড়ায় সাঁতার কাটছি।

জীবন কি অদ্ভুত!
পরিস্থিতি মানুষকে কতটা বদলে দেয়!
নিজের অজান্তেই পরিবর্তন আসে জীবনে!
স্মৃতি তবু পিছন ছাড়েনা!
একাকী থাকলেই ঘিরে ধরে।
লোকালয়কে সে এড়িয়ে চলে,
নিজস্ব স্মৃতি জনারণ্য ভয় পায়!

@ নন্দা   23-12-17

Sunday, December 17, 2017

যে কথা বলবো বলে,
গিয়েছিলাম কাছে-
হয়নি বলা সে আর,
মরেছি শুধু লাজে! 

Thursday, December 14, 2017

একলা আমি
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী


জীবনে চলার বাকী পথটুকু একলায় হাঁটবো ,
পাশে নেই কেউ ,
বুকে শুধু ঢেউ ,
হারিয়েছো দরদী বন্ধু আমার !
ফিরবেনা জানি কোনদিন আর !
তোমার স্মৃতি বুকে নিয়ে আবেশে তোমাকেই জড়াই !                @নন্দা

মায়ের আসন শূণ্য আজিকে ,
হলাম মাতৃহারা আজ -
পিতাকে হারিয়েছি চৌত্রিশ বছর ,
ভাঙ্গলো পারিবারিক এজলাস ! (10-12-17)
কল্পকুঞ্জে চলে গেছো মাগো ,
রয়েছো হৃদয় মাঝে ,
সকাল থেকে রাতের আঁধার ,
স্মৃতি বুকে বাজে !
 
         মৃত্যু অবধারিত জেনেও আমরা আরও আরও বেশী বছর বাঁচতে চাই !
সংসার সমুদ্রের এক্পারে জীবন অপরপারে মৃত্যু । কারও সাধ্যি নেই এই মৃত্যুকে রুখে দেওয়ার ! তবুও আমরা প্রিয়জনের বিয়োগ ব্যথায় ব্যকুল হয়ে পড়ি ! মৃত্যু মহাসাম্যসংস্থাপক !

        যতই আমরা বলিনা কেনো -
      "মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে-"
কিণ্তু বিধাতা এ আবেদন পূর্ব থেকেই সকলের ক্ষেত্রে না-মঞ্জুর করে রেখেছেন ! সময় সকলের জন্য বাঁধা । । জীবনব্যপী রোগ , শোক , দুঃখ , যন্ত্রনা সহ্য করেও আমরা তিলে তিলে যে জীবনকে গড়ে তুলি তা অমোঘ নিয়মে তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে যায় বা ফেলে রেখে চলে যেতে বাধ্য হতে হয় ! আর এখানেই জীবনের চরম ব্যর্থতা ! সকলেই এখানে অসহায় ! অর্থ দিয়ে সবকিছু কেনা গেলেও পদ্মপত্রে নীরের ন্যায় আয়ু- কেনা যায়না ।

           অফুরন্ত কামনা , বাসনা নিয়ে আমরা পৃথিবীতে আসি । সকলকিছু পূরণ হবার আগেই সংসার রঙ্গমঞ্চ থেকে অনেককেই বিদায় নিতে বাধ্য হতে হয় ! আর এখানেই লুকিয়ে থাকে চরম অসহায়তা ! জীবনের সব কলরোল , আনন্দোৎসব , রোগ , শোক , যন্ত্রনার পরিসমাপ্তি --'মৃত্যু'  ! মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই থাকেনা ! প্রিয়জনকে হারানো রক্তবিহীন গভীর ক্ষত ! যা আজীবন শুকাইনা ! 
মাতৃহারা হলাম
         নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

হারিয়ে গেলো মা যে আমার,
দূর অজানার গাঁয় ;
কোথায় গেলে পাবো তোমায়,
দেখতে আবার চাই !

ছেলেবেলার কথাগুলি পড়ছে মনে বেশী,
বিশ্ব জানে তোমায় আমি কত ভালবাসি!

হারালাম তোমার শ্রীচরণ,জানি আছে আশীর্বাদের হাত,
তোমার স্মৃতি বুকে নিয়ে কাটে মাগো বিনিদ্র রাত!

ডাকবোনা আর মা বলে নিলে তুমি বিদায় !
চোখের জলে ভাসছি মাগো শূণ্য করলে হৃদয় !

@ নন্দা          12-10-17

Monday, December 11, 2017

মায়ের আসন শূণ্য আজিকে ,
হলাম মাতৃহারা আজ -
পিতাকে হারিয়েছি চৌত্রিশ বছর ,
ভাঙ্গলো পারিবারিক এজলাস ! (10-12-17)

Sunday, December 10, 2017

জীবন্মৃত
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

তোমায় নিয়ে বিরহের কবিতা লিখবো,
কখনোই ভাবিনি !
তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবো ,
স্বপ্নেরও অতীত ছিলো !
কিণ্তু দেখো, দিব্যি বেঁচে আছি !
সত্যিই কি আমি বেঁচে আছি ?
একে কি বাঁচা বলে ?
???????????????????????
আমি আঁটকে আছি-সংসার মাঝে ,
বা এখনো যাওয়ার সময় হয়নি !

একেই কি তবে বলে জীবন্মৃত ?
মানুষ এখন মনুষ্যত্বহীন
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

মনের মাঝে জমছে মেঘ ,
হৃদয় শুধু দিচ্ছে মোচড় ,
প্রতিবাদ কি শুধুই কলমে ?
ফিরে যাচ্ছি আদিমযুগে !
পশুর মধ্যেও আছে মায়া ,
মানুষের মাঝে শুধুই ছল !
যৌন ক্ষুদায় মাতাল সব ,
ছাড়ছেনা কেউ বৃদ্ধা, শিশুকে !
ভাব প্রকাশের নেই ভাষা ,
কলম শুধুই যাচ্ছে কেঁদে !
বিবেক হারিয়ে হচ্ছি ন্যুজ !
মসির চেয়ে অর্থ বড় !
অন্যায় তাই যাচ্ছে উড়ে ,
রাস্ট্র চলছে শুধুই ঘুসে !

@ নন্দা 

Wednesday, December 6, 2017

পাশে আছ
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

হারিয়ে গেছে জীবন থেকে,
  অনেকটা সময়;
অতল সমুদ্রে কাটছি সাঁতার,
  যদি দেখা পাই।

হাসির ভিতরে বেদনা থাকে,
  তবু হেসে যাই;
ব্যথাভরা আঁখি কেঁদে সারা,
  দেখা নাহি পাই!

এখনো বাকি অনেকটা সময়,
  হাঁটতে হবে একাই;
জানি ফিরবেনা আর কখনো ,
  ভাবনায় পাশে পাই।

@ নন্দা  7-12-17 

Friday, December 1, 2017

কষ্টগুলি হয় যদি মেঘ,
বুকটা সেথায় আকাশ,
অশ্রু যদি হয় বৃষ্টি, 
মনটা থাকে উদাস! @ নন্দা

Thursday, November 30, 2017

নুতন সকালের অপেক্ষায়
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

একটা সুন্দর সকালের অপেক্ষায় বসে,
যে সকাল বলবে, আমরা সবাই মানুষ;
থাকবেনা কোন জাতিভেদ ;
এনে দেবে প্রত্যেক ক্ষুদার্তের জন্য অন্ন ;
অসুস্থ্য মানুষের চিকিৎসার সুব্যবস্থা, 
ঘরে ঘরে বেকারের মুখে ফুটবে হাসি,
যে যার যোগ্যতা অনুসারে পাবে চাকরী,
যেখানে থাকবেনা কোন কোটাসংরক্ষণ! 
ভয়ার্ত অন্ধকার, জীবন থেকে চলে যেয়ে,
নূতন সূর্যের মত সব হাসবে;
চারিদিকে বিরাজ করবে সাম্যবাদ আর শান্তি,
পারবে কি এমন একটা সকাল দিতে ?

@ নন্দা

Saturday, November 25, 2017

তুমি নেই
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

স্মৃতিগুলি এখনো কাঁদায়,
বিকেল হলেই মন খারাপ,
একা থাকতেই ভালোলাগে,
হৃদয়েই হয় আলাপ!
নিশুতি রাত ঘুমহীন চোখ,
মনেহয় আছো পাশে,
দগদগে ঘা প্রলেপ দিতে -
একটুখানি পরশ !
তাতেই খুশি আমি,
নিদ্রায় এলিয়ে পড়ি,
ঘুমের মাঝেও তুমি,
শুধু বাস্তবে অস্তিত্বহীন! 

@ নন্দা                            মানবী


Wednesday, November 22, 2017

একটু ভেবো
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আমি সেই মেয়ে -
ভ্রুণেই হত্যা করতে চেয়েছিলো পরিবার ,
তিনমাসের অন্তসত্ত্বা মা অত্যাচার সইতে না পেরে-
রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়েছিলো ,
এক ভ্যানচালক তাকে আশ্রয় দিয়েছিলো
তার বস্তির বেড়ার ঘরেই আমার জম্ম !
মা লোকের বাড়ি কাজ করে আমায় মানুষ করার চেষ্টা করেছেন ।
ভ্যানচালক দাদুও আমার জন্য অনেক করেছেন ,
ঈশ্বর আমার সবকিছু কেড়ে নিলেও -
সাথে জিদটা দিয়েছিলেন একটু বেশী !

আজ আমি ডাক্তার -
আমর অপারেশান টেবিলে যে পুরুষ শায়িত -
মায়ের লুকিয়ে রাখা বাক্সে তার ছবি আমি দেখেছি ,  প্রাণভিক্ষা চাইছে !
আমি নাকি তার কাছে ভগবান !
ঈশ্বর কি অপরাধে তাকে আমার মত একটি মেয়ে দিলেন না !
এটাই তার আক্ষেপ !
ঘরে ঘরে আমার মত কন্যা কেনো থাকেনা -
 তিনি বারবার  ঈশ্বরের কাছে জানতে চান ! !

@ নন্দা
অশ্রু দিয়ে লেখা
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

অতীতের কিছু কিছু কথা ,
হয়ে যায় কখনো কবিতা ,
বেদনার অশ্রু ঝরে পরে ,
রূপ নেয় ভাষাক্ষরে ,
কলমের কালি দিয়ে নয় ,
এ লেখা অশ্রু দিয়ে হয় ।
বারবার ফিরি অতীতে আমি ,
নুড়ি , পাথর কুড়িয়ে আনি ,
ছিলে অতীতে সঙ্গে আমার !
বর্তমানে খুলে রাখি দ্বার !

@নন্দা   22-11-17 

Tuesday, November 21, 2017


তবু মনে রেখো
                নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

জীবনের দীপ নিবু নিবু প্রায় ,
পৌঁছে গেছি বুঝি  তীরে ,
হিসাবের খাতা ভুলে ভরা শুধু ,
মিলাতে পারিনি আমি যে তারে !

হয়তো জীবনে চেয়েছি যা -
পাইনি তারই কিছু ;
যা পেয়েছি- চাওয়া থেকে বেশি ,
ফিরে গেছি তবু বারে বার পিছু |

অভিনয় তাই সাঙ্গ হল প্রায় ,
চলে যেতে শুধু চাই -
আমি চলে গেলে হিসাবের খাতা ,
আমারই সাথে পুঁড়ে  হবে ছাঁই ।

আমার অপরাধ ভুলে যেও সব ,
কিছু মনে রেখো না ,
যদি কিছু করে থাকি তোমাদের জন্য ,
আমার নামটি কিন্তু ভুলো না |

নন্দা   2.12.17   6-30 PM.
সুখে থেকো

    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

           বেকার অসীমের জীবনে ভালোবাসার পরিনতি বিয়ে পর্যন্ত গড়ালোনা ! কুড়িতেই তা ঝরে গেলো । বিয়ে হয়ে গেলো তার প্রেমিকা বনানীর । বনানী তার প্রেমিককে অনেক বুঝিয়েছিলো -আজ না হোক কাল সে তো চাকরী পাবেই ;সে অপেক্ষায় থাকবে । কিণ্তু চাকরীর বাজারের আকালের কারনে কবে সে চাকরী পাবে সেই কারনে বনানীর জন্য আসা এতো সুন্দর সম্মন্ধ সে ভেঙ্গে দিতে পারেনি ; পারেনি তার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সাথে বনানীর জীবনকে বেঁধে রাখতে । আপ্রান চেষ্টায় নিজের চোখের জলকে বাঁধ দিয়ে বনানীর চোখের জল নিজ হাতে মুছিয়ে বলেছিলো ,"ভাগ্যকে কেউ খন্ডন করতে পারেনা ! তোমার জীবনে এতো সুখ লেখা রয়েছে , তুমি কেনো আমার মত বেকার , গরীব এক মানুষের জীবনের সাথে নিজেকে জড়াবে ? আমাকে ভুলে যেও এ কথা আমি বলবোনা তবে ভুলে থাকার চেষ্টা কোরো ।"

                সময়ের সাথে সাথে দিন , মাস , বছর গড়িয়ে গেছে । বনানীর সাথে অসীম আর কোনোই যোগাযোগ রাখেনি । অসীম ভেবেছে সংসার জীবনে বনানী তার কথা আস্তে আস্তে ভুলে যাবে বা স্মৃতির পাতায় একটা আস্তরণ পড়বে যা বনানীকে সামনের দিনগুলিতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে । বনানীর বিয়ের তিন বছর পরে অসীম এক সরকারী হাসপাতালে আউটডোর ডিপার্টমেন্টে ক্লারিক্যাল পদে ছোট একটি চাকরী পায় । মাইনে সামান্য হলেও ভরসা একটিই সেটি সরকারী চাকরী ।

               হাসপাতালের বহিঃবিভাগে টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইন । একে একে রোগীরা আসছেন নাম , বয়স , ঠিকানা ডিপার্টমেন্ট লিখে টিকিট অসীম রোগীর হাতে দিয়ে দিচ্ছে । হঠাৎ একটি মেয়ের গলা ও নাম শুনেই অসীম মেয়েটির দিকে তাকায় । সেকি ভুল দেখছে ? বনানী না ? হ্যাঁ বনানীই তো ! গাইনী ডিপার্টমেন্টে দেখাতে এসছে । কিণ্তু এ কি চেহারা হয়েছে বনানীর ? বনানী আমার সাথে কথা বললনা কেনো ? নাকি ভুলেই গেছে !

              বনানীর টিকিটের ঠিকানা ছিলো ওর বাপের বাড়ির । সন্ধ্যাতেই অসীম হাজির হলো সেখানে । হাসপাতালে একটা রঙ্গীন শাড়ি পড়ে গেলেও বাড়িতে এসে বনানী একটা সাদা ছাপা শাড়ি পড়েছে যা অসীমের নজর এড়ায়না ।

              অসীম বনানীর মায়ের কাছ থেকে যা জানতে পারলো তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায় -তিন মাসের সন্তান পেটে থাকতে তার জামাই অরূপ স্ট্রোকে মারা যায় । শ্বশুর,  শ্বাশুড়ী বনানীর ছিলোনা । পৈতৃক ব্যবসাতেই অরূপ ও তার ভাই নিয়োজিত । অরূপের মৃত্যুর দু'মাসের মধ্যে চরিত্রের বদনাম দিয়ে তারা বনানীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় । কিণ্তু সেই থেকেই বনানী চুপচাপ হয়ে যায় । প্রয়োজন না হলে সে কারও সাথেই কথা বলেনা ।

             অসীমকে বনানীর মা আগে থাকতেই চিনতেন । আর এটাও জানতেন অসীম তার বনানীকে পছন্দ করে ।  কিণ্তু বেকার ছেলের সাথে তো আর মেয়ের বিয়ে দিতে পারেননা ;তাই জেনেশুনেও মুখ বন্ধ রেখেছিলেন । এখন ঘটনা জানানোর সময় কিছুটা ক্ষীণ আশা নিয়েই অসীমকে প্রাণ খুলে বনানীর বিবাহিত জীবনের তিন বছরের সব কথা খুলে বলেন । আর তার যে এই ক্ষীণ আশা যে অমূলক ছিলোনা সেটা তিনি সাতদিনের মধ্যেই টের পেয়েছিলেন ।

           বনানী , অসীম , তাদের তিন বছরের ছেলে আর দু'বছরের মেয়েকে নিয়ে আজ ভরা সুখের সংসার ।

                    শেষ

নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 

Sunday, November 19, 2017

ভাগ্যকে মানতেই হয়
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

                     (1)

         পাঁচ ব্যাটারীর টর্চের আলোতে পুলিশ ইন্সপেক্টর বাইরের গেট , ঘরের বাইরে কোলাপ্সীবেল গেট ও সর্বশেষে ঘরে ঢোকার দরজার তালা একের পর এক ভাঙ্গার পরে চারজন পুলিশ কর্মীকে নিয়ে দোতলার বিশাল ড্রয়িংরুমের ভিতর এসে দাঁড়ালেন ।  অন্ধকার ঘরের লাইটের সুইচ পেতে তাদের বিশেষ বেগ পেতে হলোনা কারন পাঁচ ব্যাটারীর দু'দুটি টর্চ তাদের সাথে ছিলো । সন্ধ্যা তখন প্রায় হয় হয় । পাড়ার জনৈক ব্যক্তির ফোনে তাদের এখানে আসা ।  জনৈক ব্যক্তি পুলিসকে জানান,  বাংলোসম বিশাল দোতলা বাড়ি থেকে  কয়েকদিন ধরেই পঁচা দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে ! ঘরের ভিতর ঢুকেই প্রত্যেকেই নাকে রুমাল চাপা দেন । অগ্রহায়ণের শীতের সন্ধ্যা ;বেশ জাঁকিয়ে ঠান্ডাও পড়েছে ।  সকাল থেকেই কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়েছে প্রকৃতি । এই ঠান্ডার মাঝেও ওই বাড়ির বাইরে পুরুষ ও মহিলা গিজগিজ করছে ।  সকলের ভিতরই একটি চাপা ফিসফিসানি !  এখানে তো পারমান্যান্টলি কেউ থাকেনা ;মাঝে মাঝে রাতের দিকে লাইট জ্বলতে দেখা যায় !  কিণ্তু সেভাবে কাউকে কোনদিনও দেখা যায়নি ।  চারিদিকে উঁচু প্রাচীরে ঘেরা ।  সামনে অনেকটা জায়গা জুড়ে ফুলের বাগান ।  মাঝে মাঝে এক বৃদ্ধকে ওই বাড়িতে দেখা যায় বটে কিণ্তু সে নিজেকে ওই ফুল বাগানের মালি বলেই পরিচয় দেয় । বাড়ির বাইরেও বিশাল পুলিশ বাহিনী দাঁড়িয়ে ;যাতে করে কোন পাড়ার লোক ভিতরে ঢুকতে সাহস না পায় ।

                ইন্সপেক্টর উত্তম মজুমদার ও তার সহকর্মীরা ঘরে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে বিভৎস দৃশ্য দেখে কয়েক সেকেন্ড কেউই কথা বলতে পারেননি । সারাঘর রক্তে ভেসে গেছে যদিও সেই রক্ত এখন শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে । মধ্য বয়স্ক দুই ভদ্রলোক -একজন সোফার কাছে আর একজন বাথরুমের দরজার কাছে পরে আছেন । দুজনকেই ছুরিকাঘাত করে মারা হয়েছে । ঘরের মধ্যে ইতস্তত মদের বোতল , গ্লাস , নানান ধরনের খাবার দাবার ছড়ানো ছিটানো । বোঝায় যাচ্ছে মৃত দুই ব্যক্তির সাথে আরও এক বা একাধিক লোক ছিলো । যে বা যারা বচসার জেড়ে এদের দু'জনকে খুন করে সকলের অলক্ষ্যে এই বাড়ি থেকে ধীর স্থির ভাবেই বেরিয়ে গেছে ।  সমস্ত ঘর সার্চ করে সন্ধেহজনক কিছুই চোখে পরেনা কারও । বডি দুটিকে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়ে বাড়িটা সিল করে ইন্সপেক্টর তার দলবল নিয়ে থানার উদ্দেশ্যে রওনা দেন ।

                      (2)

                ছোটবেলা থেকেই চন্দন পড়াশুনায় খুব ভালো । প্রতি বছরই সে প্রথম হয়ে উপরের ক্লাসে ওঠে । স্কুলের শিক্ষকেরা প্রত্যেকেই চন্দন সম্পর্কে উচ্চ ধারনা পোষণ করেন ও তার উজ্জ্বল ভবিষৎ চোখের সম্মুখে দেখতে পান । মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সে 90% নম্বর নিয়ে পাশ করে বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয় । কিণ্তু উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে সে রেলের চাকরীর পরীক্ষা দিয়ে রেলে চাকরী পেলেও তার বাবা তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হতে বলেন ।  বাধ্য চন্দন বাবার ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেয় । ফলে তার জীবনে স্বইচ্ছায় লক্ষ্মী এসে ধরা দিলেও ভাগ্যের পরিহাসে তাকে তা খোয়াতে হোলো । তিন ভাই বোনের বড় চন্দন ।  বড় ছেলের উজ্জ্বল ভবিষৎ বাবাও কল্পনা করেছিলেন । ছোট ছেলে ও মেজ মেয়েটি পড়াশুনায় ছিলো মোটামুটি । হুগলির প্রত্যন্ত গ্রামে সামান্য যা কিছু জমিজমা ছিলো তিনি সকলের অজান্তেই ছোট ছেলের নামে উইল করে রাখেন ।  তার ধারনা অনুযায়ী চন্দন পাশ করে বেরিয়েই চাকরী পাবে আর তখন সে গ্রামে থাকবেও না ;নিজেরটা নিজে চালিয়ে নিতে পারবে ।  তাই অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছোট ছেলেকেই তিনি তার সম্পত্তির পুরোটা লিখে দেন । যেহেতু সরকারী খরচে চন্দন  পড়াশুনা করতো তাই তাকে নিয়ে তার বাবার কোন চিন্তা ছিলোনা । টুকটাক হাত খরচ সে টিউশনি করেই জোগাড় করতো ।  চন্দনের ইঞ্জিনিয়ারিং এ যখন তৃতীয়বর্ষ তখন তার বোন চারুলতার বেশ অবস্থাপন্ন ঘরেই বিবাহ হয়ে যায় ।  চন্দনের স্কুল শিক্ষক বাবা মেয়ের বিয়ের ঠিক এক বছরের মধ্যেই মারা যান । চন্দন ভালভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পাশ করে চাকরীর জন্য হন্যে হয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে যেতে লাগলো ।  কিণ্তু কোথায় চাকরী ? চাকরীর চাবীতো সব নেতাদের হাতে ! সরকারী থেকে বেসরকারী ! গ্রামের ছেলে চন্দনের তো কিছু ভালো সর্টিফিকেট ছাড়া আর কিছুই নেই । তাই চাকরীও তার মেলেনা । সাথে আলোচনা করে ঠিক করে ভায়ের মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেই গ্রামের জমিজমা বিক্রি করে তারা কলকাতায় ছোটখাটো একটা ভাড়া বাড়িতে এসে উঠবে । ভাইকে কলকাতার কলেজেই ভর্তি করবে ;নিত্য সে প্রাইভেট কোম্পানীগুলিতে চাকরীর চেষ্টা করার সাথে সাথে কিছু টিউশনি করতেও পারবে । মাকে দিয়ে বাড়ির দলিল বের করিয়ে উইল দেখে সে হতভম্ব ! বাবা তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছেন !  কিণ্তু কেনো ?  কি তার অপরাধ ছিলো ? বাবা কেনো এটা করলেন ?

                  ভয়ানক অভিমান থেকে চন্দন পরদিন সকালেই মা , ভাইকে কিচ্ছুটি না জানিয়েই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরে ।  সে কলকাতা শহরে নানান জায়গায় চাকরীর চেষ্টা করতে লাগে । বলা বাহুল্য তার এই মনের ইচ্ছা পূরণ হয়না । একদিন রাতের আঁধারে স্টেশনে নিজের অজান্তেই একটি খুনের স্বাক্ষী থেকে যায় ।  খুনীদের  সেটা নজর এড়ায় না ।  চন্দনকেও তারা মেরে ফেলতে যায় । চন্দনের কাকুতি মিনতিতে দয়াপরোবশ হয়ে তারা চন্দনের চোখ বেঁধে তাদের বসের কাছে নিয়ে যায় । চন্দনের কাছে তাদের পারিবারিক ঘটনা জেনে ও তার কোন পিছুটান নেই শুনে তিনি বস তাদের দলে ওকে ভিড়িয়ে নেন ; নাহলে খুনের ঘটনার স্বাক্ষী থাকার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড !
চন্দন আস্তে আস্তে হয়ে উঠে কুখ্যাত ডাকাত শমশের খান ।

                          (3)

          ক'দিন আগেই বেলেঘাটার জনবহুল এলাকায় ব্যাঙ্ক ডাকাতির সূত্র ধরে প্রশাসন জানতে পারেন সেদিনের বিলাসবহুল ওই বাড়ির দুই ব্যক্তির খুনের সাথে ব্যাঙ্ক ডাকাতির সংযোগ রয়েছে । ব্যাঙ্কের গোপন সি.সি.ভি. টিভির মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে যে দুই ব্যক্তি খুন হয়েছেন তারা ওই ব্যাঙ্ক ডাকাতির তিন মূল মাথার দুই মাথা । মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা থাকলেও দুঁদে পুলিশ অফিসারদের মৃত দুই  ব্যক্তির মুখের সাথে তাদের মিল খুঁজে পেতে একটুও অসুবিধা হয়না  ! সাথে আর যে তিন চারজন ছিলো তাদের খুঁজতে খুঁজতেই প্রসাশনের কালঘাম ছুটে যায় ।


                  (4)

          কর্তব্যনিষ্ঠ পুলিশ অফিসার তার সমস্ত রকম সোর্স কাজে লাগিয়ে জানতে পারেন ওই ব্যাঙ্ক ডাকাতির সাথে কুখ্যাত সমাজ বিরোধী শমসের খানের যোগসাজোগের কথা ।  সেদিন ব্যাঙ্ক ডাকাতির পর ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে প্রাসাদোপম ওই বাঙ্গলো বাড়িতে যার মালিক আমেরিকায় থাকেন ;বাড়িটি দেখভালের জন্য ওই মৃত এক ব্যক্তির নিকট  বাড়ির চাবী ন্যস্ত থাকে । সমস্ত খবরাখবর নিয়ে বিশেষ সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে এস্প্লানেডের নামকরা বার থেকে শমসের খানকে গ্রেপ্তার করতে যেয়ে হতভম্ব হয়ে যান ! এ কাকে দেখছেন তিনি ? শমসের খান নামে পরিচিত কুখ্যাত সমাজ বিরোধী , খুন , রাহাজানি , ব্যাঙ্ক ডাকাতি , প্রশাষনের সন্ত্রাস , ধনীব্যক্তির রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মূল ব্যক্তি -একদা মেধাবী ছাত্র , সকলের প্রিয় , ইঞ্জিনিয়রিং এ ফাস্ট ক্লাস পাওয়া তার দাদা চন্দন মজুমদার ? সামান্য অভিমান থেকে দাদার আজ এই চরম পরিনতি ? কিণ্তু কেন ?  কি কারনে দাদা এই অন্ধকার পথ বেছে নিলো ?  তবে কি বেকারত্বের জ্বালা ? কিণ্তু কিছুই জিগ্গাসা করতে সে পারলোনা ! পুলিশকে অ্যারেস্ট করার অর্ডার দিয়ে দাদার চোখ ভর্তি জলের দিক থেকে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলেন যাতে তার নিজের চোখের জল তার অতি প্রিয় দাদার চোখে ধরা পরে না যায় । তিনি ভালোভাবেই জানেন শমসের খান বা তার দাদার কি চরম শাস্তি হতে পারে । দু'জনের মনেই নানান প্রশ্ন !  কিণ্তু জিগ্গাসা করার অধিকার আজ আর কারও নেই কারন একজন আইনের রক্ষক আর একজন আইনের ভক্ষক !

গাড়ি ছুটলো থানার উদ্দেশ্য ।


নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

Friday, November 17, 2017

পরিবর্তন
        নন্দা  মুখার্জী রায় চৌধুরী

চারিপাশের বাতাস আজ দুষিত ,
নিশ্বাসে বিষ ঢোকে শরীরে -
ধর্ষিতার আত্মচিৎকার , পঁচাগলা লাশের গন্ধ -
ছোপ ছোপ রক্তের দাগ ,
মাটিতে পা দেওয়ায় দায় !
মর্গে মৃত শরীর রাখার জায়গা নেই ,
সেখানেও চলছে রাজার নীতি !
চলছে কন্যাভ্রূণ হত্যা !
বাকী জম্মের পরে অত্যাচারিতা হয়ে মৃত্যুবরণ !
সুন্দর পৃথিবীর মানুষগুলো যেন -
মানুষরুপী কিছু নরপশু !
স্বার্থের তাগিদে সবাই অন্ধ !

জীবনের মূল্য যে সব থেকে বেশী !

 @ নন্দা   17-11-17

Thursday, November 16, 2017

আমার মিনতি
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আমি চাতক হয়ে মেঘের কাছে ,
চাই একটু জল -
আমি চাঁদের কাছে আপন হয়ে ,
হাসবো অনর্গল !
আমি মেঘের কাছে দু'হাত জুড়ে ,
একটু রোদ চাই -
হৃদয় মাঝের জমানো ক্ষত  ,
রোদেই  শুকাই   !
কালবৈশাখী ঝড়ের কাছে -
মিনতি করে বলি ,
ফিরিয়ে দে  স্বপ্নগুলো ,
নুতন ভাবে চলি !

নন্দা   16-11-17 

Wednesday, November 15, 2017

শিউলি ফুটেছে শিশিরের ছোঁয়ায় ,
গাছের ডালে পাখির কূজন ,
পথের দিকে তাঁকিয়ে আছি -
সুপ্রভাত-বলবে কখন সুজন !
শুভ সকাল বন্ধুরা
@নন্দা 

Sunday, November 12, 2017

সকালবেলা সূর্য্য উঠে ,
বলছে আমায় হেসে ,
আমার মতই জেগে ওঠ ,
জীবন কাটা হাওয়ায় ভেসে  ।
সকালবেলা মধুর থাকি ,
দুপুরবেলা রাগী -
সন্ধ্যা হলে নেতিয়ে পড়ি ,
পশ্চিমেতে ভাগি !
                             শুভ সকাল বন্ধুরা 
অর্থহীন জীবন
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

জীবন সীমানার খুব কাছে ,
তবুও মায়া কাটাতে পারিনা ,
ব্যথার চাদর গায়ে জড়ানো ,
যেতে চাই তার কাছে !
ছোট্ট হাতগুলি আঁচল ধরে টানে -
মায়ায় জড়ানো এই সংসার ,
প্রতিটা কোণায় কোণায় স্মৃতি !
অনুভবে থাকে সাথে সাথে -
ছুঁতে মন চায় অবিরত !
অভিমানে দূরে সরে যায়
বন্ধ চোখের সামনে  অনুভব করি !
চোখ খুললেই হারিয়ে যায় !
ভাবনায় মন থাকে উদাসীন -
বেঁচে থাকাটাই অর্থহীন মনেহয় !

@ নন্দা  26-10-17

Friday, November 10, 2017

কেন হলো
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

তুমি চলে গেছো অনেকদিন ,
তোমার লাগানো শিউলীগাছে ,
আগের মতই ফুল ফোটে ,
যে ফুল সকাল হলেই -
দু 'হাত ভরে তুলে আনতে আমার জন্য ।
তোমার সাধের ছাদের বাগান ,
খাদ্যের অভাবে আজ মৃতপ্রায় !
কোন গাছই আজ আর হাসেনা ;
সবাই তোমার শোকে পাথর ।
ছেলের ফেলে দেওয়া খাতাগুলির -
সাদাপাতা কেউ আর যত্নকরে -
আমার কবিতা লেখার জন্য ছিড়ে রাখেনা -
পাতাগুলি বিবর্ণ হয়ে কেজি দরে বিক্রি হয়ে যায় -
লিখতে লিখতে কলমের কালি শেষ হলে-
আশ্চর্য প্রদীপের মত আর একটা সামনে পাইনা,
টেবিলের উপর সবকিছু ছড়িয়ে থাকে -
সেগুলো গুছানো আর দেখতে পাইনা !
কাজের শেষে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়লে ,
শিয়রে এসে কেউ আর বসেনা -
"শরীর খারাপ লাগছে ? ওষুধগুলি খেয়েছো-"
কেউ আর জানতে চায়না -

জীবনের চলার পথটা হঠাৎ করেই থমকে গেলো !

@নন্দা     10th নভেম্বর 17

Wednesday, November 8, 2017

ভালো কথাগুলিই ভাবি
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

    বিয়ের পর বারটা বছর কেটে গেলেও অতসী ও সুনীলের সংসার আলো করে কোন সন্তান না আসায় তারা শেষ পর্যন্ত একটা পুত্রসন্তান দত্তক নেয় ।প্রাইভেট কোম্পানীর চাকরী সুনীল বেশ মোটা অঙ্কের টাকা মাস গেলে হাতে পায় ।

            অতসীর হাতে ছিলো এক সময় প্রচুর সময় ।এখন সে রাতে ঘুমানোর সময়টুকুও পায়না ।ছোট্ট নীল সারাটারাত কাঁদে ।মাঝে মাঝেই তাকে ফিডিং বোতলে পাতলা দুধ করে খাওয়াতে হয় ।দুধের শিশু ,তিনমাস মাত্র বয়স ।যদিও ডক্টর বলেছেন , রাত দশটার পর কৌটার দুধ আর দেবেননা ; কিণ্তু কি করবে অতসী ?তার আদরের নীল খিদেতে যে কাঁদতেই থাকে ।সব সময় ফ্লাক্সে জল ফোটানোই থাকে ।ঘড়ি ধরে কুড়ি মিনিট করে ফিডিংবোতল ,চামচ ,বাটি ফুটতে থাকে  ।আবার জলও ঠিক তাই ।

         সকালে সুনীলের অফিস থাকে ।নীল যেদিন সারারাত কাঁদে সেদিন জোর করে অতসী সুনীলকে অন্যঘরে ঘুমাতে পাঠায় । অনিচ্ছা সর্ত্বেও সুনীল যেতে বাধ্য হয় । আস্তে আস্তে দিন গড়িয়ে যেতে থাকে । নীল যেদিন প্রথম মা বলে অতসীকে ডাকে -অতসী সেদিন আনন্দে আত্মহারা ! সুনীল অফিস থেকে ফিরবার সাথে সাথেই দরজা খুলেই তার এই খুশির খবরটা দেয় । সুনীলও খুব খুশি হয় । সে হাত ,মুখ ধুয়েই নীলকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে বলে ,"কিরে আমায় কবে বাবা বলে ডাকবি?" অতসী তার ছেলের দিকে তাঁকিয়ে বলে ,"দেখলি তো নীল তোর বাবা কত হিংসুটে !"

        নীলের ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে সারা ঘরময় দৌড়ত্ব , মাঝে মাঝে কোন জিনিস ভেঙ্গে ফেলা -দিনগুলি যেন ঝড়ের গতিতে শেষ হয়ে গেলো । মাধ্যমিক ,উচ্চমাধমিক , গ্রাজুয়েশান কমপ্লিট করেই নীল এস.এস.সি. তে বসে ব্যাঙ্কে চাকরী পেয়ে যায় । ঠিক তার দুমাসের মাথায় সুনীল স্ট্রোকে মারা যান ! এ সময় অফিস ছাড়া যেটুকু সময় নীল বাড়িতে থাকতো সে তার মায়ের কাছে কাছেই থাকতো ।

       এখন অতসীর বয়স প্রায় সত্তর বছর ।চোখে খুব একটা ভালো দেখেননা, কানেও কম শোনেন । বৃদ্ধাশ্রমের অনেকের মধ্যে তিনিও একজন ! নীলের বিয়ের কয়েকমাস যেতে না যেতেই অতসীর অনেক দোষত্রুটির কথা নীলের কানে উঠতে উঠতে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো যে নীল তার মাকে আর সহ্যই করতে পারতোনা । অধিকাংশ সময়ই অতসী চুপ করেই থাকতেন । কিণ্তু এক হাতেও যে তালি বাজানো সম্ভব নীল এবং তার বৌ সেটা প্রমাণ করেই ছাড়লো । স্বইচ্ছাই অতসী তাদের বাড়িটি লিখে দেন , কারন তার মনে হয়েছিলো বাড়িটি লিখে দিলে হয়তো অশান্তির হাত থেকে রেহাই পাবেন । কিণ্তু তার ধারনা ভুল প্রমাণ করে ছেলে, বৌ তার ঠিকানা করে  দিলো বৃদ্ধাশ্রম ।

         অতসী কোন আপত্তিই করেননি । আর করলেও বা শুনতো কে ? অতসী শেষ জীবনে একটু স্বস্তি চেয়েছিলেন ;জীবনের  প্রথম থেকে ভাবলে তার সবকিছুই কেমন গুলিয়ে যায় ! মাঝে মাঝে মনের কোণে উঁকি দেয় একটি প্রশ্ন -নীলের গর্ভধারিণী হলেও কি নীল তার সাথে এইরূপ আচরণ করতে পারতো ? পরক্ষণেই ভাবেন হয়তো এর থেকেও খারাপ কিছু হতে পারতো ! মনকে প্রবোধ দেন এই বলে আর ক'টা দিনই বা বাঁচবো ? একসময় এই নীলকে বুকে জড়িয়েই তো অনেক সুখের সময় কেটেছে । সেগুলি তো মিথ্যা ছিলোনা ।আজকের কথাগুলি না ভেবে সেগুলিই ভাবি আর সেগুলি ভাবতে ভাবতেই জীবনের বাকী দিনগুলি কাটিয়ে দিই ।

@নন্দা   1-11-17 
ভিন্নতা
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

পথেঘাটে, অলিগলিতে শয়েশয়ে লোক চলে ,
কেউ কারও মনের খবর রাখেনা ,
রোগশোকে, দুঃখে কাতর -
কারও খুশির মাত্রা ছাড়িয়ে যায় সীমানা ,
রাতের আঁধারে শুধু টাকার ফোয়ারা !
অভাবের তাড়নায় নারী তার সুখ বিক্রি করে ,
কেউ ফেরে অট্টালিকায় ,কেউ কুঁড়েঘরে,
কারও ঠিকানা ফুটপাথ বা স্টেশনে -
রাতদিনের খাবারে কারও টেবিল ভর্তি ,
কেউ খায় শুকনো রুটি ,
কারওবা তাও জোঠেনা !
দিনরাত ক্ষিদের যন্ত্রনা, জলই একমাএ সম্বল ,
সৃষ্টির একই রূপ !
সৃষ্টিতে নেই ভেদাভেদ !
শুধু জম্মের পরেই ধনি দরিদ্রতার ভিন্ন রূপ !

এই ভিন্নতাকেই মানুষ দেয় কপালের দোহাই !
নাকি পূর্ব জম্মের ফল !!
পূর্বজম্ম বলে সত্যিই কি কিছু আছে ?

***নন্দা*** 6-11-17 

Saturday, November 4, 2017

জারজ সন্তান কেনো বলে
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

তোর ভালোবাসার অর্থ আমি খুঁজে পেলাম না,
কিণ্তু শরীরের প্রতিটা ভাঁজে স্মৃতিচিন্হ একে দিয়েছিস !
তোর ক্ষুদা মেটাতে আমার শরীরটাকে নিয়ে খেলেছিস !
কয়েক মাস পরে আমি হবো কুমারী মা !
আমার গর্ভে তিলতিল করে বড় হচ্ছে তোর সন্তান ,
তোর স্বীকারোক্তি নেই বলে-
সমাজের চোখে কেনো সে জারজ হবে বলতে পারিস ?
আমি তো জানি কে তার পিতা ,
সমাজ কি তাকে খেতে পড়তে দেবে ?
কিণ্তু কথা শুনাতে সমাজ ছাড়বেনা !
সমাজের কাছে যথেষ্ট নয় কি ও আমার ভালোবাসার ফসল !
পুরুষটির স্বীকারোক্তিই সব ?
নারীর কষ্ট ,নারীর ভালোবাসার কোনই মূল্য নেই সমাজের কাছে ?
একজন পুরুষ ব্যতীত একজন নারী মা হতে পারেনা ,
পুরুষটি যদি হয় ধোয়া তুলসীপাতা -
নারী কেনো তবে নষ্টামেয়ে ?
সমাজ কেনো ভাবেনা কে তাকে নষ্ট করলো ?
আর ওই সন্তান ?
শুধু পুরুষটি স্বীকার করলোনা বলেই সে জারজ !
মানিনা আমি এই সমাজ কে -
যে সমাজ শুধু নারীর দোষ দেখে পুরুষের নয় !

@নন্দা 31-10-17
কে দেবে উত্তর
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

গুণীর কদর আজ আর নেই ,
উপকৃত না হলে তোলে বদনামের ঢেউ !

গাছের ফুল ভালবাসে সবাই ,
গন্ধ না থাকলে সে ফুলের কদরও নেই !

সম্পর্কগুলি ততক্ষণই সুন্দর -
যতক্ষণ অর্থ আর চাহিদা মাথা চাড়া না দেয় !

আঘাত সইতে সইতে মানুষ পাথর হয় ,
তারপরও আঘাত পেলে সে কি কষ্ট পায়না ?

@নন্দা

Sunday, October 29, 2017

শ্মশানসম হৃদয়
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

হৃদয় আজ হয়েছে নীরব ,
অভাব সেথায় তোমার পরশ ,
হৃদয় হলো শ্মশানবৎ ,
নির্জন শূণ্যতার বসত !

হাহাকার করা এ বুক ,
চোখ বুজে দেখি ওই মুখ ,
ভরে থাকে মন স্মৃতিতে ,
ব্যথা জমে পাহাড়, হৃদয়েতে !

হারিয়েছো তুমি অজানার মাঝে ,
হৃদয় হলো মরুসম তাই -
তোমার স্মৃতির সিঞ্চনতায় ,
তোমায় দেখতে আমি পাই !

@নন্দা  27-10-17 

Saturday, October 28, 2017

নিঠুর পৃথিবী
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

 আমার চারিদিকেই ঘর ,
 তবুও আমি ঘরেরই কাঙ্গাল !
 হৃদয়ে ভালবাসা অফুরান ,
 ভালবাসা পেতে ছোটে কালঘাম !

আমার সকল ,ভালবাসা,ইচ্ছা,কামনা -
বিনিময়ে পাই আপনজনের শুধুই ভৎর্সনা
আমার আজীবন পরিশ্রমের ফল ,
নির্মম বাস্তবতায় হলো বিফল !

@নন্দা    28-10-17  

Thursday, October 26, 2017

জীবনের সাদা পাতা
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

অনেকটা পথ একসাথে হাঁটার পড় -
হয়ে গেলাম একা !

যে কাজগুলি অতি সহজেই করতে পারতাম ,
আজ আর পারিনা ।

আমার কল্পনার রংতুলিতে যে ছবি আঁকতাম ,
ক্যানভাসটাই খুঁজে পাইনা !

নর,নারী সংসার গড়ে তোলে ,
প্রকৃতির নিয়মে আসে সন্তান ;

জীবন হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ -
অকসাৎ একজনের বিদায় !

মণ্ডবে প্রতিমা থাকলে হৈ,হট্টগোল লেগে থাকে ,
নিরঞ্জনের পর সব শান্ত !

আনন্দ,হাসি সব চলে যায় পিছনে -
সামনে অন্ধকার আর শূণ্যতা !

@ নন্দা    

Wednesday, October 25, 2017

নেভেনা আগুন
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

কতটুকু দিলে সবটুকু দেওয়া হয় ,
বুঝলামনা আজও আমি !
কতটা ভালবাসলে ভালবাসা পূর্ণতা পায় ,
জানালোনা অন্তর্যামী !

বিরহ যন্ত্রনায় পুড়ে অঙ্গার হলে ,
যন্ত্রনা বারে দ্বিগুণ -
কতটা সময় দিলে যন্ত্রনা কমে ,
নিভে বুকের আগুন !

ছাইচাপা আগুন ধিকিধিকি জ্বলে ,
সেতো সময়ে হয় শেষ ,
বুকের আগুন শুরু হলে জ্বলা -
আজীবন থাকে তার রেশ !

@নন্দা     24-10-17 

Monday, October 23, 2017


অব্যক্ত যন্ত্রণা 
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 

     অফিস থেকে বেরিয়ে বাস থেকে নেমেই বৃষ্টির সম্মুখীন ! ছাতাটা আজ আনতে ভুলে গেছে রেখা ।গতকাল বৃষ্টিতে ভেজা ছাতাটা ব্যালকনিতে শুকাতে দিয়েছিলো আজ আর আসবার সময় ব্যাগে পুড়তে মনে নেই । এতো তাড়া থাকে অফিসে বেরোনোর সময় ! ছেলে স্কুলে বেরোবে তার খাবার ,টিফিন ,নীলয়ের টিফিন ,দুপুরের খাবার ,ওষুধ সব গুছিয়ে অচলাকে বুঝিয়ে দেওয়া । তারপর নাকে মুখে দু'টি গুঁজেই অফিস ছোটা ।

     আজ প্রায় একবছর হোল নিলয়ের বাম অঙ্গটা পুরো অসার ।প্রথমে সামান্য জ্বর ,গায়ে ব্যথা । কিছুতেই জ্বর কমেনা ;আস্তে আস্তে শরীরের বাম অঙ্গে অসারতা ।আর কিছুই করার নেই ।ফিজিওথেরাপিষ্ট নিয়মিত এসে এক্সারসাইজ করিয়ে যাচেছন । কিনতু উন্নতির কিছুই দেখা যাচেছনা ।শ্বাশুড়ী মাস ছ'য়েক আগে মারা গেছেন । আর শ্বশুরমশাই তো বিয়ের আগেই চলে গেছেন । এখন বাড়িতে মানুষ বলতে সে নিজে ,পঙ্গু স্বামী ,দশ বছরের ছেলে নীলাদ্রী আর সর্বক্ষনের কাজের মেয়ে অচলা । অচলা ভীষণ ভালো মেয়ে ।রেখা যখন বাড়িতে থাকেনা তখন ছেলে স্কুল থেকে ফিরলে বড় রাস্তার মোড় থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে এসে যত্ন সহকারে খাওয়ানো ,তাকে দেখে রাখা ,বড়বাবুর সমস্ত দায়িত্ব পালন করা ,ঘড়ি ধরে তাকে সময়মত ওষুধ খাওয়ানো -সব সবকিছুই  সে করে । রেখা বাড়িতে ফেরার সাথে সাথে তার চা ,জল খাবার এমনকি রাতের রান্না পর্যন্ত সব রেডি থাকে । শুধু সকালের দিকটাই রেখার একটু তাড়া থাকে । দুপুরের রান্নাটা সে নিজের হাতেই করে বাটিতে বাটিতে ঢেলে রেখে যায় ।

            বাসটা এসে এমন জায়গায় দাঁড়ালো সামনে জল আর কাদায় পরিপূর্ণ । পড়ে যাচ্ছিলো । হঠাৎ এক ভদ্রলোক ধরে ফেলেন । মুখের দিকে না তাকিয়েই রেখা তাকে "থ্যাংক্স" বলে । বৃষ্টিটা বেশ জোরেই পড়ছে ।শেডের নীচে ছাতাবিহীন অবস্থায় যারা দাঁড়ানো তারা প্রত্যেকেই ভিজে যাচ্ছেন । আর যাদের কাছে ছাতা আছে তারা সকলেই ছাতা খুলে বৃষ্টির হাত থেকে নিজেদের পোশাক বাঁচাতে সামনের দিকে ছাতা খুলে ধরে আছেন ।রেখা আস্তে আস্তে পিছনদিকটাতে চলে যায় । অন্যমনস্ক ভাবেই চোখ পরে যে ভদ্রলোক তাকে পড়ে যাওয়ার থেকে বাঁচিয়েছিলেন তার দিকে ।
---সৌগত তুমি ? 
সৌগতও এতোক্ষন পরে রেখাকে খেয়াল করে ।
----অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা হোল !
----বার বছর , একযুগ পর । 
----কেমন আছ ? সেই আগের মতই দেখতে আছ , কোন পরিবর্তন হয়নি । বয়স একটুও বাড়েনি ,,,,
----ওসব কথা ছাড়ো । আছি ,ভালোই আছি । তুমি কেমন আছ ? মাসিমা ,মেশোমশাই ,তোমার বৌ ,বাচ্চা আর দেবী ? দেবী কেমন আছে ? নিশ্চয় ওর বিয়ে হয়ে গেছে ? কেমন আছে ও এখন ? ওর শ্বশুরবাড়ি কোথায় ?
----আরে দাঁড়াও ,দাঁড়াও ;এতো প্রশ্নের একবারে উত্তর দেবো কি করে ? এক একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে পরের প্রশ্নটাতো ভুলে যাবো । মা ভালো আছেন ,বাবা আজ দু'বছর হোল আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ।" তারপর হাসতে হাসতে বললো ,"বিয়ে করলে তো বৌ,বাচ্চা ? বিয়ের ফুলই তো ফুটলো না । আর দেবী ?"
            কথা বলতে বলতে বৃষ্টিটা কমে আসলো । এক এক করে সকলে শেডের নীচ থেকে বাস ধরার জন্য বাইরে এসে দাঁড়ালো । সৌগত রেখাকে বলে , "চল ,সামনেই একটা কফিবার আছে ,ওখানে কফি খেতে খেতে কথা হবে ।" 

         বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে রেখা সৌগতর মুখের দিকে তাকালো !
----সে সময় আজ আর আমার হাতে নেই ।বাড়িতে দু'টি প্রাণী হা করে ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে বসে আছে কখন আমি বাড়ি ফিরবো ।একদিন তোমাকে দেওয়ার জন্য আমার হাতে প্রচুর সময় ছিলো ।সেদিন তোমাকে কফিহাউসে আসতে বলে সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও তিনঘন্টা অপেক্ষা করেছিলাম তোমার জন্য ।আমার সাথে দেখা করবার তোমার সময় সেদিন হয়নি । ভীষণ ভেঙ্গে পড়েছিলাম । সেই সময় জীবনটাকে মূল্যহীন মনে হত ! ভেসেই যাচ্ছিলাম । বাবা ,মা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিলেন । নিলয় জীবনে না আসলে বুঝতেই পারতামনা ভালবাসার প্রকৃত মর্ম ।কেনো ,কিসের জন্য তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছিলে জানিনা, আজ আর জানারও কোন ইচ্ছা নেই ।শুধু এটুকুই জানি নিলয় ছাড়া আর কাউকে একান্তে সময় দেওয়ার মত সময় আমার হাতে নেই । আমি আজ সুখী ,খুব সুখী । ওই যে আমার বাস এসে গেছে ।আমি আসি । ভালো থেকো তুমি ।"
         রেখা দৌড়ে যেয়ে বাসে উঠলো ।সৌগত সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের মনেই বললো ,"সেদিন কেনো আসতে পারিনি তা যদি জানতে নিজেই কেঁদে আকুল হতে । তারথেকে এই ভালো হোল -আমার নামটা চিরদিনের মত তোমার মন থেকে মুছে ফেলতে পেরেছো ।আমায় ঠক ,জোচ্চর ,প্রতারক ভাবতে পেরেছো । তুমিও খুব খুব ভালো থেকো ।"

         সৌগত একাই যেয়ে কফিবারে বসে কফি খেতে খেতে ফিরে যায় বার বছর আগের দিনগুলিতে  --
       সেদিন সৌগত কফিহাউজে যাবে বলে তৈরী হচ্ছে ;হঠাৎ লান্ডলাইনে একটা ফোনে জীবনের সব স্বপ্ন হঠাৎ আসা কালবৈশাখীর মত সবকিছু ভেঙ্গে চুরে তচনচ করে দিলো ।একমাত্র আদরের ছোট বোন দেবীকা কলেজ থেকে ফেরার পথে কিছু সমাজ বিরোধী তাকে তুলে নিয়ে যায় ।সমবয়সী অনেক বন্ধুদের সাথে সেও ফিরছিলো ।বন্ধুরা বাঁধা দিতে গেলে সমাজ বিরোধীরা ভোজালী বের করে তাদের দিকে তেড়ে আসে ।সকলেই ভয়ে জড়সড় হয়ে যায় । সমাজ বিরোধীরা দেবীকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর ফোন করে তারা দেবীর বাড়িতে খবর দেয় ।সঙ্গে সঙ্গেই সৌগত দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ।থানা ,পুলিশ সারারাত ছুটাছুটি দেবীর সন্ধান সেদিন আর পাওয়া যায়না ।রেখার কথা ভাববার সময় তখন সৌগতর নেই । কাক ডাকা ভোরে যখন সৌগত বাড়ির অভিমুখে রওনা দিয়েছে ঠিক তখনই পুলিশের একটা ভ্যান ঘ্যাচ করে সৌগতর সামনে এসে দাঁড়ায় ।পুলিশ অফিসার গাড়ি থেকে নেমে সৌগতকে বলেন ,"এখান থেকে কিছুটা দূরে রেললাইনের উপরে আঠার ,উনিশ বছরের একটি মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে ।মর্গে যেয়ে আপনাকে বডি শনাক্ত করতে হবে ।" সৌগত নিজের মাথাটা ধরে রাস্তাতেই বসে পড়ে হাউ ,হাউ করে কাঁদতে লাগে ।বয়স্ক এক পুলিশ অফিসার তার হাত ধরে উঠিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেন । 

               লাশ শনাক্তকরণ ,দাহ ,শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান সব মিটে যাওয়ার পর চিরশান্ত সৌগত অন্য মূর্তি ধারণ করে ।যে ভাবেই হোক বোনের প্রতি এই নারকীয় হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতেই হবে ।থানা ,পুলিশের দরজায় ,দরজায় ঘুরে এক বছরের মধ্যেও কোন সুরাহা সে করতে পারেনা ।সব অপরাধী অধরাই থেকে যায় ।কিনতু এই একবছরে সে এটুকু বুঝতে পারে ধর্ষণকারী বা খুনীরা রাজনৈতিক নেতাদের আত্মীয় আবার কেউ তাদের ছত্রছায়ায় পালিত গুন্ডা । সোজা আঙ্গুলে ঘি কিছুতেই উঠবেনা । কিনতু আইনের ছাত্র সৌগত আইনের বিরুদ্ধচারণও করতে চায়না ।

            সৌগতর সাথে রেখার যখন প্রেম চলছে সৌগতর তখন উকালতির ফাইনাল ইয়ার ।এই এক বছরে তার পড়াশুনার খুব ক্ষতি হয় । শুরু করে সে দিনরাত এককরে পড়াশুনা করতে । উকালতি পাশ করে সে নামজাদা উকিল অমরেশ রায় চৌধুরীর জুনিয়র হিসাবে কাজ শুরু করে । কথায় কথায় সে অমরেশবাবুকে তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য তার বোনের ধর্ষণকারী ও খুনিদের শাস্তি দেওয়ার কথা জানায় । অমরেশবাবু সৌগতকে খুব স্নেহ করতেন । তিনি তাকে কথা দেন এরজন্য  সর্বরকম সাহায্য করতে তিনি প্রস্তুত । 

             নূতন করে আবার কেস ফাইল করা হয় । ফোনে হুমকি দেওয়া ,ভয় দেখানো -অমরেশবাবু ও সৌগতর উপর চলতে থাকে ।কিনতু জাদরেল উকিল অমরেশবাবু কিছুতেই দমে যাওয়ার পাত্র নন ।তার সাথও প্রশাসনিক উপর মহলের উঠাবসা ।স্বাক্ষ্য,সাবুদ প্রমাণসহ তিনজন ধরা পরে । বাকী একজন ওই ঘটনার দু'বছরের  মাথায় মদ্যপ অবস্থায় বাইক এ্যাকসিডেন্টে মারা যায় । এই তিনজনের যাব্বজীবন কারাদণ্ড হয় ।

           সৌগত তার বোনের মৃত্যুর দশ বছরের মাথায় যেয়ে সুবিচার পায় ।এরমধ্যে তার যে রেখার কথা মনে পড়েনি তা  নয় ।  কিনতু ইচ্ছা করেই কোন যোগাযোগ রাখেনি । প্রাণপ্রিয় ছোট্ট বোনটির মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়াটাই তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় ।তাই নিজের হাতেই সে তার ভালবাসাকে গলাটিপে হত্যা করে ।কারণ ভালবাসায় আবদ্ধ হতে গেলে পিছুটান থাকবে আর এই পিছুটানই তাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করবে ।

            বারবছর ধরে সে রেখার কোন খোঁজ করেনি । কারণ সে বুঝতে পেরেছিল বছর একটি মেয়ের পক্ষে কারও অপেক্ষায় বসে থাকা কিছুতেই সম্ভব নয় ।রেখা যে তাকে ভুল বুঝেছে এবং তাকে যে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবেনা এই ব্যপারেও সে নিশ্চিত ছিলো ।

          আজ যখন তার রেখার সাথে দেখা হোল ,সৌগত ভেবেছিলো সব শোনার পর রেখা তার অসহায়তা বুঝতে পারবে -পারবে তাকে ক্ষমা করে দিতে । কিনতু রেখা তো তাকে কোন সুযোগই দিলোনা !

@নন্দা    22-7-17

Sunday, October 22, 2017

"মনের কথা"
                  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী                            আমি জানি তোমার প্রেমের গভীরতা,
 কিন্তু আমি যে অসহায়-                                       সংসার আমাকে আস্ঠে   পৃষ্ঠে বেধেছে --                                                                                             তোমার ডাক আমি শুনতে  চাইনা -                                তুমি যে অনেক দেরী কোরে ফেলেছ,            
আমি এখন রাজরানী-            
অন্য কারও ঘরণী ,                                                      সংসার আমার সুখের ছন্দে ,                                       নৃত্যের তালে চলে ।                                                   বাইরের সব বিসর্জন দিয়ে                                           আজ আমি খুব সুখী ।                                  
 পিছন ফিরে তাকানোর                                          কোনো সময় আমার নেই ।                                          তুমি চলে যাও---                                                        দূরে--  আরও দূরে -বহূ  দূরে--                                     যেখান থেকে তোমার ডাক -                                         আমার কানে এসে  পৌঁছাবে না ।                              
জীবন সন্ধ্যা
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ঘন আবীরে নেমেছে সন্ধ্যা ,
 জীবন ভরেছে আঁধারে ,
দৃষ্টি বুঝি হারিয়েছে আমার ,
 আঁধার ঢেকেছে চারিধারে ।

সীমাহীন যন্ত্রনা বুকের মাঝারে ,
 হৃদয়ের স্পন্দন গতিহীন ,
পাপড়ির মত ঝরলো আশা ,
 বাঁচার ইচ্ছা ক্ষীন !

উচ্ছল জীবনে হঠাৎ ঝড় ,
 সাধের জীবন করলো অচল ,
ভেঙ্গেচুরে সব তচনচ হোলো ,
 জীবন হবেনা আর সচল !

@ নন্দা      20-10-17 

Saturday, October 21, 2017

মৃতের আত্মকথা
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

(সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত একটি গল্প )

          আগে আমাকে সবাই সাতাশ নম্বর বেডের পেশেন্ট বলছিলো ।যে মুহুর্তে আমার মৃত্যু হলো আমি হয়ে গেলাম 'ডেডবডি'। অনেকে আবার সংক্ষিপ্ত করে বডিই বলছিলো ।আগেরদিন সন্ধ্যায় আমার স্ত্রী আমার সাথে দেখা করে গেছে ।তখন আমার খুব তেষ্টা পেয়েছিলো ।ওর কাছে ইশারায় জল খেতে চাইলাম ।যেহেতু আমি ভেন্টিলেশন পেশেন্ট ছিলাম তাই ওরা আমাকে জল দিতে চাইছিলোনা ।আমার স্ত্রী অনেক কাকুতিমিনতি করে তুলো ভিজিয়ে এনে আমার মুখে দু'ফোঁটা জল দিলো । আমি গিলে নিলাম জলটুকুন । সে যেমন ভাবেনি ,আমিও ঠিক তেমনই ভাবিনি এটাই আমাদের শেষ দেখা । সেই মুহুর্তে ছেলেমেয়ে দুটিকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছিলো । ইশারায় স্ত্রীকে বললামও ওদের একটু দেখবো ,ওদের পাঠিয়ে দাও । ও  বললো হাসপাতলের নিয়মানুসারে একজনই ঢুকতে পারবে , ওরা বাইরে আছে ;আগামীকাল এসে দেখা করবে । এদিকে ভিজিটিং আওয়ার শেষ । স্ত্রী চলে গেলো পরেরদিন আসবে বলে । কত কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো কিণ্তু কিছুই বলতে পারছিলাম না । ভেন্টিলেশনে থাকার ফলে মুখে ঢুকানো ছিলো অজস্র নল ; কথা কিছুতেই বলতে পারিনি বিগত ষোলোদিন ধরে । ইশারায় যেটুকু বুঝাতে পেরেছি সকলকে । একবেলা স্ত্রী না আসলে মনেহত কতদিন তাকে দেখিনি । একদিন সে বিশেষ কোন কাজের জন্য সকালে আসতে পারেনি । আমি তো জামাইকেই জিগ্গেস করে বসলাম ইশারায় ,"তোমার মা কোথায় ?"আসলে আমার স্ত্রী এমন একজন মহিলা যে ঘরে বাইরে সমান পারদর্শী । তার উপর আমি সারাজীবন সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে থেকেছি ।

           যাহোক আবার আমার কথায় ফিরে আসি ।রাত তখন অনেক । কটা বাজে ঠিক বলতে পারবোনা ।আমার শরীর আস্তে আস্তে খারাপ হতে লাগলো । চোখের সম্মুখে নিজের পরিবারের সকলের মুখ এক এক করে ভেসে উঠতে লাগলো । ঠিক সেই মুহূর্তেই স্ত্রী ,ছেলে ,মেয়ে , জামাই প্রত্যেককে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিলো । বুঝতে পারছিলাম আমার শেষ সময় এসে গেছে ! গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে । একটু জল পেলে ভালো হত ! কিণ্তু কে দেবে আমায় জল ? এখানে তো আমার নিজের কেউ নেই । সেই সন্ধায় স্ত্রী তিন ফোঁটা জল খাইয়ে গেছে । সারারাত প্রায় সারারাতই কষ্টে ছটফট করেছি । ভোরের দিকে সিস্টর্স ,নার্সদের নজরে আসি । তখনই তারা তৎপর হয় । কিণ্তু ততক্ষনে আমার কার্ডিও এট্যাক করে ফেলেছে । একের পর এক ইঞ্জেকশন তারা পুস করে চলেছে কিণ্তু আমার শরীর আর নিতে কিছুই পারছে না ;সব ওষুধই মুখ দিয়ে বের হয়ে যাচেছ ! পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আমি চলে গেলাম ।

         প্রায় চার ঘন্টা পরে আমার বাড়ির লোককে খবর দিলো ,"আমি মারা গেছি ।"আমার সেজভাই আমায় দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো । সিস্টার তাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বললেন আরও বললেন বাড়ির পুরুষ ছেলেদের খবর দিতে । আমার বডি পরে রইলো সাতাশ নম্বর বেডে । আমি আমার ভাই বেড়োনোর আগেই বেড়িয়ে আসলাম সি.সি.ইউ. থেকে । ভাই এসে একটি বেঞ্চের উপর বসে কাঁদতে লাগলো । আমার আত্মা পাশের এক ভদ্রলোকের ভিতর ঢুকে গেলো । ওই ভদ্রলোক হয়েই আমি নিজেই ভাইকে শান্তনা দিতে লাগলাম । অনেক বুঝালাম তাকে ।

   ইতিমধ্যে আমার বাড়ির প্রচুর লোকজন সেখানে হাজির হয়ে গেলো । আত্মীয়স্বজন , বন্ধুবান্ধব, অন্য ভায়েরা ,আমার স্ত্রীর দিদিরা ,ভাই বৌয়েরা ,স্ত্রীর অনেক বন্ধুবান্ধব -যাদে প্রত্যেককে আমি চিনি ।কিণ্তু আমার চোখদুটি খুঁজছিলো আমার ছেলেকে ।কিছুক্ষনের মধ্যে সেও হন্তদন্ত হয়ে হাজির হয়ে গেলো । আমার মেজভাই তাকে আমার মৃত্যুর খবর জানালো । আমি নেই শুনেই সে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করে । আমার মেজভাই তাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে নিজেও  অঝোরে কেঁদে  চলেছে । ভাই আমার ছেলেকে কোন রকমে একটা জায়গায় বসায় ।আমিও জায়গা পেয়ে ছেলের পাশে বসি । ইচ্ছা করছিলো ছেলেটাকে বলি , "বাবা তুই এভাবে কান্নাকাটি করলে আমি যে খুব কষ্ট পাচ্ছি । তুই তো এখন অনেক ছোট ;ভালো করে লেখাপড়া শিখে মানুষ হ । তুই মানুষ হলেই আমার আত্মা শান্তি পাবে । তোর মা যে একা হয়ে গেলো । মায়ের দিকে খেয়াল রাখিস । তোর মা যে নিজের ওষুধটাও কিনে আনতে ভুলে যায় ;এটা এখন থেকে তোর দায়িত্ব । দিদি , জামাইবাবুর কাছে সারাজীবনই আদরের ভাই হয়েই থাকিস । ওরা মনে কষ্ট পায় এমন কোন কাজ কখনই করবিনা । আরও অনেক কথায় ওর পাশে বসেই বললাম ;কিণ্তু আমি জানি ও কিছুই শুনতে পায়নি । কি করে শুনবে ও আমি যে আর বেঁচে নেই !"

            জামাই ,ভায়েরা ,স্ত্রীর বন্ধুরা সবাই ছুটোছুটি করছে আমার বডি বের করার সরকারী নিয়মকানুন পূরণ করতে । আমি জানি আমার জামাই আমায় খুব ভালবাসে ,শ্রদ্ধা করে । বেচারা নিজের কষ্ট লাঘব করার জন্য একটু কান্নারও সময় পেলোনা । ওর জন্য আমার বুকের ভিতরটা ফেঁটে যাচ্ছে । কিণ্তু কি করবো ? আমি যে অসহায় !

    আমাকে নিয়ে ওরা রাত এগারোটা নাগাদ আমার বাড়িতে আসলো । আত্মীয়স্বজন , পাড়াপ্রতিবেশীতে বাড়ি ,রাস্তা ভর্তি । আমার স্ত্রীকে ঘিরে  মহিলাদের সমাবেশ । সকলেই তার কাছের লোক ! স্বপ্নে পাওয়া দেবতার অবস্থান আমার বাড়িতে । আমি উপরে উঠতে পারছিনা । নীচ থেকেই শুনতে পাচ্ছি আমার স্ত্রী আর মেয়েরা কান্নার আওয়াজ । আমি অসহায় !! কি করবো আমি ? মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি ওর মাসির সাথে নীচে নেমে এসে আমার বুকের পরে পড়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে । কিছুই করার  ক্ষমতা নেই আমার ! কিণ্তু তাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য আমি অনেক কথাই বলে যাচ্ছি , তার সন্তান হয়ে আসবো কথা দিচ্ছি কিণ্তু নিষ্ঠুর পরিহাস !! তার কানে কোন কিছুই যাচ্ছেনা আমি জানি ।

   হঠাৎ করে মনে হচ্ছে আমার সতের বছরের ছেলেটা কয়েক ঘন্টায় বেশ বড় হয়ে গেছে । দৌড়ে যেয়ে ওর মায়ের কাছ থেকে জামা লুঙ্গি নিয়ে এলো । ওর মা আমার সব থেকে প্রিয় লুঙ্গি ও ফতুয়াটা বের করে কাঁদতে কাঁদতে ছেলের হাতে দিলো । ওই টুকুন ছেলে আমার কি সুন্দরভাবে আমায় লুঙ্গিটা পড়িয়ে দিলো । নানান কাজে হাসপাতাল থাকতেই এদিকে ওদিকে ছুটাছুটি করছে দেখেছি ।

         ফতুয়াটা পড়াতে সকলে আমাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করতে লাগলো । মেয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো , "বাবার লাগছে তো ! তোমরা এইভাবে কেনো জামা পড়াচ্ছ ?" আমারও চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছিলো , নারে মা আমার লাগছে না ; আমি এখন সব কষ্ট সব ব্যথার উর্ধে । পারলাম না বলতে ! মেয়ে সযত্নে আমায় জামা পড়িয়ে কপালে চন্দনের টিপ একে দিলো । ছেলে তুলসীপাতা এনে আমার চোখের উপর রাখলো ।

         সকলের শেষে দু'তিনজন ধরে আমার স্ত্রীকে নীচুতে নিয়ে এলো । সে কিছুতেই আমার ওই মৃত মুখ দেখবেনা । আমার পাদুটি ধরে বিড়বিড় করে কি সব বলে যাচ্ছিল । আগেরদিন সে আমার সাথে ইশারায় কথা বলে এসছে ;তাই সে আমার ওই জীবন্ত মুখটাই মনে রাখতে চায় । আমার এই মৃত মুখটা দেখলে তার আরও কষ্ট হবে । আমিও চাইছিলাম না সে আমার ওই মরা মুখটা দেখুক । আমি তো তাকে জানি সে কষ্টে কষ্টে পাগল হয়ে যাবে । এমনিতেই সে অসুস্থ্য । ওষুধগুলো খেতেও তার মনে থাকেনা । আমাকেই মনে করে দিতে হত । দুজনের মধ্যে একটা অদ্ভুত বন্ডিং ছিলো ;ছিড়ে গেলো ,চিরদিনের মত ছিড়ে গেলো ! কারও দোষে নয় ,বিধাতার লিখনে । সুন্দর সাজানো গুছানো সংসারটা আমার তচনচ হয়ে গেলো !আমি তো শুধু টাকা রোজগার করে বৌ এর হাতে তুলে দিয়েছি । কি অদ্ভুত বুদ্ধিমত্তায় সে এই সংসারটিকে সোনার সংসার করে গড়ে তুলেছিল । আমার তো চলে যাওয়ার ইচ্ছা ছিলোনা , তবুও যেতে হলো ! আয়ু শেষ ! কত আশা অপূর্ণ থেকে গেলো ! ভীষন কষ্ট হচ্ছে ! আর কোনদিন এদের কারও সাথে আমার দেখা হবেনা ! একটু পরেই এরা আমাকে নিয়ে চলে যাবে ।এই বাড়ি ,আমার ছেলে ,মেয়ে ,জামাই ,আমার স্ত্রী সব্বাইকে ছেড়ে চিরবিদায় !

      আমি চললাম কাঁচ ঢাকা গাড়িতে আমার পরিচিত পথ ,ঘাট ,লোকজন ,প্রিয়জন সবাইকে ছেড়ে এ জীবনের মত !কিণ্তু আমি আবার আসবো -আসবো ঠিক এই পরিবারেই । কারন এই পরিবারের লোকেরা যে ভালবাসা দিতে জানে পরজম্মে অন্য কোথাও গেলে এই ভালবাসা থেকে আমি বঞ্চিত হবো ;এদের মত কেউ ভালবাসতে জানেনা ! আর এদের ছেড়েও আমি থাকতে পারবনা । তাই আজকের মত আমি চলে গেলেও আবার আসবো এদেরই কাছে । তোমরা কেউ আমার জন্য কেঁদোনা । যে শিশু জম্ম নেবে এই পরিবারে তোমরা জেনে রাখ- সে আমি, আমি আবার আসবো , আসবোই আমি , আসতে আমাকে হবেই তোমাদের কাছে ! অপেক্ষা কর,ধর্য্য ধর -আমি পুনরায় আসছি !!

 @নন্দা         10-9-17

Friday, October 20, 2017

......................"অপবাদ"..............
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

                 শীতকালের সকাল । কুয়াশায় চারপাশ ঢাকা । এতোটাই কুয়াশা যে সামনের মানুষ টাকেও ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না । অনিলবাবু চললেন ব্যাগ হাতে বাজার কোরতে । সংসার বলে কথা !! এই কুয়াশার মধ্যে ও তাঁকে বেড়োতে হোলো । হঠ্য়াত পাড়ার একটি ছেলে তাঁকে ডেকে বললো ,"মেশোমশাই ,খবরটা শুনেছেন "?অনিলবাবু জানতে চাইলেন ,"কি খবর "? "নীরাদী  কাল সুইসাইড করেছে "। অনিলবাবু হতভম্বের মত বললেন ," নীরা "?অনিলবাবু আর কিছু জিগ্গেস না করেই অনমনাভাবেই বাজারের উদেশ্যে রওনা দিলেন । বাড়িতে এসে স্ত্রী কে সব বললেন । ভাবতে লাগলেন ,নীরা তো খুব ভালো মেয়ে । বয়স ও এখন অনেক । বিয়ে-  থা করেনি । সমাজ সেবা করেই তার দিন চলে । বাড়িতে কোনো অভাব নেই । কিছু বাচ্চাকে বিনা পয়সায় পড়ায় ; ঠিক স্কুল এর মত নিয়ম করে । যে যখন বিপদে পড়ে তার বিপদেই সে ছুটে যায় । কি এমন হলো ? হাসি ,খুশি ,প্রানবন্ত মেয়েটার ; যার জন্য তাকে জীবনের এই চরম পথ বেছে নিতে হলো ? সন্ধ্যার দিকে অনিলবাবুর স্ত্রী পাড়ার থেকে শুনে এসে তাঁকে আসল ঘটনাটা জানালেন । কয়েকদিন ধরেই একটি অল্প বয়সী ছেলে তাকে নানান ভাবে উত্যক্ত করছিল । সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাওয়াতে একদিন রাস্তার মাঝ খানে দাড়িয়ে তাকে একটা চড় ও মেরেছিলো । তাতে কোরে ছেলেটা আরও বেশী কোরে ক্ষেপে যায় । দলবল নিয়ে একদিন বাড়িতেও চড়াও হয় । অকথ্য - কুকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে । নীরা তার শিক্ষা এবং রুচির অবমাননা করে না । সে প্রতিবাদ করে ঠিক ই কিন্তু কু- কথায় নয় । তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করে । পরে না পেরে পুলিশ ডেকে তাদেরকে ধরিয়েও দেয় । কিন্তু নেতা - নেত্রীর ছত্র ছায়ায় থাকার ফলে  ,রাতেই তারা ছাড়া পেয়ে যায় । এ অপমান ,এ লজ্জা সে কিছুতেই মানতে পারে না । ভিতরে ভিতরে ক্ষয় হয়ে যেতে থাকে । সারাজীবন মানুষের জন্য সে করেই এসছে । বিনিময়ে সম্মান টুকু ছাড়া কারও কাছে তার কিছু প্রত্যাশা ছিলো না । এ অপমানটা কিছুতেই সে মেনে নিতে পারে না । ঘর বন্ধী অবস্থায় দিন কাটাতে কাটাতে হঠ্য়াত ই তার এই চরম সিদ্ধান্ত । অনিলবাবু সব শুনে  শুধু বললেন ," যে মেয়েটা সারা জীবন শুধু অন্যের কথা ভেবে গেলো ,অন্যের সমস্যার সমাধান কোরে গেলো - আর আমরা তার এই বিপদের দিনে কিছুই কোরতে পারলাম না । বড্ড অভিমান নিয়ে চলে গেলো মেয়েটা । ছি !!আমরা কি মানুষ !! নিজেদের আমরা মানুষ বলে জাহির করি !!নিজের প্রতি নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছা কোরছে "!!! আসলে আমরা বাইরেটা যতই চাকচিক্য রাখিনা কেনো আমাদের সকলেরই ভিতরটা অত্যন্ত কালো !!!

Thursday, October 19, 2017

আকাল
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আলোয় ভরেছে পৃথিবীব্যপী ,
 কোথাও নেই আঁধার ,
আঁধারে ঢেকেছে মানুষের মন !
 মনেই তারআঁধার !

লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ,
 সেজেছে সব নগর-ই ,
দারিদ্রের সাথে পাল্লা দিয়ে ,
 গরীব থাকছে অনাহারী ।

আছে টাকা অনেক যাদের ,
আনন্দ তাদের ঘরে ঘরে
ক্ষুদার জ্বালায় ঢুকছে কেউ
অভাব ,শোকে অকালেই ঝরে !

নন্দা 
কেনো হারালো
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

 হারিয়ে গেছো অনেক দূরে ,
 পাবোনা খুঁজে আর ,
তোমার সাথে হবে দেখা ,
 জীবন তরীর ওপার !

পরে মনে কত কথা ,
 ঝরা ফুলের মালা গাথা ,
শিউলী তলায় সকালবেলা ,
 খেললো বিধাতা নিঠুর খেলা !

হঠাৎ করেই দমকা হাওয়ায়,
 উড়ে গেলো গাঁথা মালা ,
খুঁজে মরি সকলখানে ,
 কোথায় ভিড়লো সেই ভেলা ?

@ নন্দা    17-10 17 

Sunday, October 15, 2017

কল্পনা
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

শোবার ঘরের জানলার ফাঁকে ,
দেখতে আমি পাইযে তাকে ,
যখন থাকি একলা ঘরে ,
সে থাকে জানলার ওপারে ।
তাঁকিয়ে থাকে মুখের দিকে ,
বাস্তবের অনেক দূর থেকে -
আমার সব কল্পনার আলোকে ।
আছে সে অজানা দেশে ,
ভালবাসবে না আর কাছে এসে !
জানি সবই বুঝিও আমি ,
তবুও হৃদয় কাঁপে বারবার ,
নারী মন যে আমার !

13-10-17 

Friday, October 13, 2017

সবাই দুখী
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

 নদী তুমি থমকে কেনো ?
  আমার দুখে কাতর ?
কোথায় তোমার কুলুকুলু ধ্বনি ?
  চঞ্চলতা কোথায় তোমার ভিতর ?

আকাশ এতো ঝরছো কেনো ?
  আমার কান্না দেখে ?
আমার চোখের অশ্রুধারা ,
  যাক তোমার জলে ভেসে ।

বাতাস তুমি স্তব্ধ কেনো ?
  দামাল বেগে আসো ,
আমার দুঃখগুলি উড়িয়ে নিয়ে -
  আমায় হাওয়ায় নিয়ে ভাসো ।

@ নন্দা    12-10-17 

Thursday, October 12, 2017

লক্ষ্য
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

চলতে চলতে ,
জীবন পথে ,
থমকে দাঁড়াতে,
হবেই সবাইকে !
                        ভয় না করে ,
                        ঠিক পথ ধরে ,
                        এগোতেই হবে -
                        ধর্য্য ও নীরবে ।
লক্ষ্য ঠিক রেখে ,
কিঞ্চিতও না সরে ,
দুঃখকে সঙ্গী করে ,
পৌঁছাতেই হবে লক্ষ্যে ।
                           নিঃসঙ্গ সেইক্ষনে ,
                           সাহস থাকলে সনে,
                           হবেনা বিফল মনোরথ,
                            হোকনা বন্ধুর পথ !

@নন্দা    12-10-17  

Wednesday, October 11, 2017

কি যায় আসে
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আমায় তুমি ডাকলে যখন ,
 থাকবো কেনো, আর ঘরে ?
চলো দুজন বেড়িয়ে পড়ি  ,
 হাতে হাত রেখে সুদূরে ।

দুঃখ,যন্ত্রনা পিছনে থাক ,
 এগিয়ে চলি সামনে -
একটু নাহয় নিন্দিতই হবো !
 কি এসে যায় জীবনে ?

লোকলজ্জার ভয় করে তো ,
 কাটালাম সারাজীবন ;
এখন নাহয় সে সব কথা ,
 ভুলে থাকি সর্বক্ষন ।

জীবন নামের এই তরীটি -
 বাইবো আর কতকাল ?
মনের সুখটাই খুঁজি নাহয় ,
 বাঁচবো যতকাল !

@ নন্দা   10-10-17

Tuesday, October 10, 2017

বুঝতে পারিনা
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

বিধাতা লিখলেন অন্যের আয়ু ,
 শাস্তি পেলাম আমি !
তারই সাথে জুড়েছিলো আমার জীবন !
 হলো আমার কপালের লিখন !

কিছু কি ভুল ছিলো আমার ?
 নাকি এটাই ছিলো ভবিতব্য ?
জীবনে যা কিছু ঘটে -
 সেটাই অবশ্যম্ভাবী নাকি ভাগ্য ?

@নন্দা      10-9-17

Monday, October 9, 2017

সদা সত্য
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
                   (1)

সকালের মিষ্টি ওই রোদ ,
দুপুরে দেখায় তার ক্রোধ ,
শৈশবের সব ধর্য্য ,
যৌবনে হয় অসহ্য !

                   (2)

দুঃখ যে ভীষন বেদনাময় ,
জীবনটা অচল করে দেয় ,
সহ্যই বাড়ায় মনের বল ,
দুর্গমকে করে সুগম-স্বচ্ছল ।

                     (3)
ইচ্ছাশক্তির ভীষন গুন ,
অসাধ্যকে করে সাধন ,
দুর্গম পথ হতে পার ,
এশক্তির জুড়ি মেলা ভার ।

@ নন্দা   7-9-17

Friday, October 6, 2017

কবিতা আমার মা
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

কবিরা কি সবকিছুই মনের কথা লেখেন?
তার বেদনা,খুশি কাগজের পাতায় থাকে?
   হয়তো কিছু থাকে সেথায় !
   কিছু থাকে তার অভিজ্ঞতায় ,
   যা থাকে সবই মনে সুপ্ত ,
   খারাপ আর ভাললাগায় হয় জাগ্রত ।
কল্পনা আর বাস্তবে লেখেন কবি সকল কথা ,
পাঠক সমাজ পড়ে বলেন ,"সুন্দর এক কবিতা" ।

কবিতারা কথা বলে মানুষকে জাগায় ,
কখনো সে আবেগে মানুষকে কাঁদায় ,
কবিতা এনে দেয় মানুষকে প্রেম ,
বিরহীনীকে করে তোলে কখনও প্রেমময়ী
বাঁচতে সাহায্য করে স্বপ্ন দেখিয়ে ,
স্বপ্নকে বাস্তবে আনতে শক্তি জোগায় ।

কবিতা আমার গর্ভধারিণীর মত ,
বেদনায় শান্তনা পাই অবিরত ,
জীবন থাকতে মা ছাড়েনা সন্তানকে ,
কবিতাও  ছাড়বেনা কখনো আমাকে ।

@নন্দা          6-9-17   2AM.
অনুকবিতা
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

উদাস মনকে খুশি করতে -
আকাশের দিকে চেয়ে থাকি ,
     সেথায় মুগ্ধতার পরিবেশে ,
      থাকি সুখের আবেশে  ।
শূন্য থেকে পেতে চাই সুখ ,
ঘুচাতে চাই কিছু জীবনের দুখ,
        বিষাদময় এই জীবনে ,
         খুঁজি সুখ আবেশে  !

@নন্দা    5-9-17 

Wednesday, October 4, 2017

জীবন কিসের জন্য
          নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ছোট্ট জীবন, স্বপ্ন অনেক -
ছুটছি সবাই প্রতিকূলে ,
এসেছি একা ,যাবোও একা ,
তবুও হিংসা, বিদ্বেষ মনে !
সেরা হওয়ার দৌড়ে সবাই ,
সারা দিনরাত শুধু ছুটছি -
ছুটতে ছুটতেই জীবন শেষ ,
অকালেই কেউ ঝরে পড়ছি !
কর্ম দ্বারা মানুষকে মানুষেরা ,
যদিবা একটু মনে রাখে ,
সুকর্মের চেয়ে দুষ্কর্মই বেশী ,
তাই হানাহানি,মারামরি করছি ।
আজ মরলে কালকে দু'দিন ,
কেউ রাখে নাগো মনে ,
সকলেই আমার, আমার করে ,
কিছুই যায়না সনে !
টাকার লোভ যে বড় লোভ ,
সবাই ছুঁতে চায় নাগাল ,
টাকার লোভেই চলছে বিশ্ব ,
টাকার লোভেই সব গন্ডগোল !

#  নন্দা        28-9-17


Saturday, September 30, 2017

সুখ
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ছেলেবেলাতেই বিয়ে দিয়ে ,
করলো বাপে পর !
একটুখানি সুখের আশায় ,
বাঁধলাম সেই ঘর ।

সুখী আমি হলাম ভীষন ,
এক ছেলে এক মেয়ে যখন ,
স্বামী আমার বড্ড ভালো ,
একদম শিবের মতন ।

হঠাৎ এলো দুরন্ত ঝড় ,
এক ডাইনী ছদ্মবেশে ,
ডুবিয়ে দিলো সুখের তরী ,
সুখ গেলো ভেসে !

সুখ হারালো জীবন থেকে ,
বুক ভরালো স্মৃতিতে ,
জীবন সংগ্রাম কঠিন হল ,
ডুবে গেলো মাঝি যে !

আবার হয়তো পাবো খুঁজে ,
নতুন কোন সুখ ,
সেই আশাতেই আজকে আমি -
বেঁধে রাখি বুক ।

@ নন্দা  21-9-17

প্রার্থনা
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

শিউলি ঝরা সকালবেলা ,
 তোমার হোলো বোধন ,
কাশফুল আর নীলআকাশ বলে ,
তোমার মর্ত্যে আগমন ।

সকালবেলা ঘাসের আগায় -
শিশিরবিন্দু মুক্ত হয়ে ঝরে ,
শিউলির গন্ধে মাতাল ভুবন ,
মর্ত্যে হোলো তোমার আগমন ।

অসুর বিনাশকারী, শান্তিদায়িনী,
অন্তর কর বিকশিত ,
নারী লাঞ্ছনা, নারী বঞ্চনা-
নারীর মধ্যে হও প্রকাশিত ।

সেই চোখ তুমি উপরে ফেলো ,
নারীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি যাদের ,
নারীর ভিতর সেই শক্তি জোগাও ,
নারীই শাস্তি দিক তাদের ।

@নন্দা
26-9-17    

Thursday, September 28, 2017

অনুভবে
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

তোমার সাথে আমার বিচ্ছেদ,
ভুলে থাকার ব্যর্থ প্রয়াস !

আনমনে একাকী বসি প্রিয় জানালায় ,
অন্তরে নানান কথা উঁকি দেয় ।

তুমি অনুভবে ছায়া ,
তবুও আমি পলক-হারা !

হঠাৎ করেই চলে যাও !
কিছু কি বলতে চাও ?

ছবি তোমার জীবন্ত !
তবে কেনো নীরব ?

আমাদের শোবার ঘরের খাট ,
তোমার পরশ দেয় আমায় !  

রাতে সকলে ঘুমায় সুখে ,
 রজনী কাটে ছবি দেখে !

@নন্দা    22-9-17 

Wednesday, September 27, 2017

আমার দুর্গা
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

                          (1)
আমার দুর্গা কাজ করে খায় ,
লোকের বাড়ি বাড়ি ,
কাজের ভুল হলে পরেই -
কপালে জোঠে গালি ।

দুর্গার ঘরে চাল বাড়ন্ত ,
অনাহারে কাটে দিন ,
এভাবেই তাকে বাঁচতে হবে,
আমার দুর্গার চিরদিন !
 
                         (2)
কোটি টাকার দুর্গা --
সোনার শাড়ি পড়া ,
খাবার সামনে অফুরন্ত,  
যায়না কিছুই ধরা ।  

লক্ষ লক্ষ টাকার খেলা ,
আজীবন-আমার দুর্গা ফুটপথে,
চারদিনে কোটি ,কোটি ব্যয় !
সারাজীবন অন্যায়-দুর্গার সাথে !    

@ নন্দা         27-9-17   

Friday, September 22, 2017

অতি বাস্তব
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

অশ্রুভেজা দু'টি নয়নও রাতে ,
ঘুমায় না যে বেদনাতে ,
ক্লান্ত শরীর ,অবসন্ন মন ,
আছ জুড়ে সমস্ত মনপ্রাণ !
দিবালোকে জানি আছ সাথে ,
রাতের আঁধারেও থাকো পাশেপাশে ,
তবুও নয়ন ভেজে অশ্রুতে ,
হৃদয় কেঁদে ওঠে বেদনাতে ,
চোখ বুজে- পাই পরশ ,
ছোঁয়ার চেষ্টা -মিছেই আশ !
মন বলে ,আছ কাছে -
বাস্তব বোঝায়,স্বপ্ন মিছে !

@ নন্দা  19-9-17  

Wednesday, September 20, 2017

কেমন আছ এখন

     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

অন্ধকার ঘর -
বাড়িতে আমি একা ,
সারাবাড়ি নিস্তব্ধ ,
পারোনা কি একবার -
দিতে তুমি দেখা ?

এতো অভিমান !
কোথায় জমা ছিলো ?
বুঝিনিতো আমি ,
বলোনিতো একবারও কখনো ?
সবকিছু কেনো হারালো ?

কেমন আছ ?
আছ কি তুমি -
মা ,বাবার সাথে ?
তাঁদের কাছেই পৌঁছেছো কি -
সাতাশে আগস্ট ( সতের ) রাতে ?

    19-9-17    10-30PM ,,

Thursday, September 14, 2017

নীরব স্মৃতি
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

তোমার ভাললাগার ওই জানলাটি -
আজ নীরব এক স্মৃতি !
জানলা দিয়ে আসে বাতাস ,
তোমার নিঃশ্বাসের পাই আভাস ।

এ বাতাস ,এ জানলা -
ওরা সদা প্রাণখোলা ,
পাশাপাশি দু'জনে মুখোমুখি ,
সবকিছুই নীরব স্মৃতি !

ওরা সবাই সেদিন পেয়েছিলো ,
ভালবাসার স্বাদ !
আজ আমারই মত তাদেরও ,
মন বিষাদ !

# নন্দা    14-9-17   
সব মিথ্যে
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

   আমার বুকের স্পন্দন ,
 করে শুধু ক্রন্দন -
  আনন্দে ভাসি বাইরেতে ,
 অন্তর পোড়ে বিরহেতে ।

  পৃথিবীতে যা নয় স্বাভাবিক ,
 মন যেতে চায় সেইদিক -
  জীবনের এপার ওপার ,
 মন ভেঙ্গে তোলপাড় !

  ভালবাসা , মায়ার সংসার !
 গেলে ফিরবেনা আর !
  চারিপাশে শুধু স্মৃতি ,
 হারালো জীবনের সুখগীতি !

# নন্দা   13-9-17     2PM.

Wednesday, September 13, 2017

আসছি আমি
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

বেঁচে আছি থাকবো বেঁচে ,
তুমি ছাড়া সকলের সাথে ,
চলে যাবে বছর বছর ,
পাবোনা দেখতে তোমাকে আর !
চলে যাবো তোমারই কাছে ,
এ বিশ্বাস আমার আছে ,
তোমার খেলা হয়েছে সাঙ্গ ,
অল্প কাজ রয়েছে বাকী ,
একাই আমি করবো শেষ ,
ও-পারেতে অপেক্ষায় থেকো ,
আসছি আমি ------------------
দু'জনে একসাথে থাকবো বেশ !!!

13-9-17             12-25 PM.



Tuesday, September 12, 2017

সময় দাও
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আবার এলো শিউলিঝরা সকাল ,
 শিশিরে ভেজা ঘাস ,
হাওয়ায় দুলছে কাশফুলের মাঠ-প্রান্তর,
 দেখে মেটেনা আশ !

প্রতিবছর মায়ের আগমনে ভবে ,
 মিলি সকলে আনন্দে ,
মনপ্রাণ দিয়ে পুঁজি তাকে ,
 কটাদিন চলি ছন্দে ।

গতবারেও পুজোর সময় ,
 তুমি ছিলে সাথে ,
আনন্দ ছিলো ঘরে ,
 ঠাকুর দেখেছি একসাথে ।

শিউলি ঝরা এই শরৎকালে ,
 এলো হঠাৎ কালবৈশাখী -
ঝড় এসে খবর দিলো ,
 চলে গেলে চিরসাথী !

দিয়ে গেলে শুধু স্মৃতিগুলি আমায় ,
আরও দিলে চোখের জল ,
রেখে গেলে ব্যবহৃত জিনিস ,
আঁকড়ে ধরেও পাবোনা কোন ফল !

তোমার আশা সব করবো পূরণ ,
কথা দিলাম তোমায় আজ ,
ছেলে তোমার হবে মানুষ  ,
সোনার সংসারে মেয়ে করবে রাজ ।

শুধু ধর্য্য ধরে অপেক্ষা করো ,
সবকিছু পাবে দেখতে ,
আমাকেও পাবে কাছে ,
সময় দাও, অসমাপ্ত কাজ সারতে ।

# নন্দা   11-9-17    9PM,,,,''''

Sunday, September 3, 2017

একটি জিজ্ঞাসা
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ব্যথা ভরা মনটি নিয়ে ,
লিখতে চাই এক কবিতা ,
শত ব্যথার ফুলের মালায় ,
গাঁথি আমি সবই তা !

অন্ধকারের মাঝেও খুঁজি ,
একটু আলোর উৎস ,
এগিয়ে যাবো জীবনপথে ,
হোকনা যতই কষ্ট !

বাস্তব বড়ই কঠিন হয় ,
তবুও হয় মানতে ;
জীবন যে এগিয়েই চলে ,
জানেনা সে থামতে ।

টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলি সব ,
মালা হয়েই  থাকে সাথে  ,
তার পড়ানো ফুলের মালা ,
ঝরে হলো স্মৃতির মালা !

আর হবেনা জীবনে দেখা ,
স্বপ্নে যদি দেখি ,
জানতে চাইবো একটি কথা ,
কেনো দিলে ফাঁকি ?

# নন্দা  03-09-17     5PM ,,


Thursday, August 31, 2017

শূণ্যতা
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

পূর্ণিমার আকাশ অন্ধকার আজ ,
গলি থেকে রাজপথ ,
জোনাকিরাও যেন ভুলেছে পথ !
বুকে শুধু হাহাকার !

কোথায় হারালে ব্ন্ধু আমার ,
দৃষ্টিতে তুমি নেই !
বুকেতেও অন্ধকার বেঁধেছে বাসা ,
জমেছে সীমাহীন যন্ত্রনা !

আমার শূণ্যতা , আমার রিক্ততা -
কখনও বুঝবেনা আর তুমি ,
সামনে,পিছনে কোথাও তুমি নেই ,
অসীম হাহাকারে বেঁচে আছি আমি !

# নন্দা     31-08 17 
বিচ্ছেদ
            নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ভালবাসা দিয়ে গড়া রাজপ্রাসাদে ,
বিচ্ছেদ হবেই একদিন নিশ্চিত !
পরস্পরকে যতই ধরি আঁকড়ে ,
যেতেই হবে ছেড়ে অপরকে !

ভুলে থাকার ব্যর্থ প্রয়াসে -
মনকে বোঝাতে হবে অবশেষে ,
এটাই যে দুনিয়ার রীতি !
বেঁচে থাকা -আঁকড়ে স্মৃতি !

চোখের জলও যাবে শুকিয়ে ,
কিছু স্মৃতি হবে মলিন ,
শূণ্যতা হবেনা কখনও পূর্ণ  ,
চাইবেনা আর কোন প্রতিদান !

@নন্দা  30-8-17
বেলা শেষে আঁধার হলো,
আঁধার আমার সঙ্গী,
জীবনের কিছু অপূর্ণ রইলো ,
খেয়াতরী প্রতিকূলে বইলো !
মানবোনা হার,ছাড়বোনা আমি বৈঠা,
যতই আসুক বিপদ আমার ,
ভয়ে হটবো না পিছু -
বন্ধুর পথে এগিয়ে চলবো ,
পৃথিবীতে এক নূতন নজির গড়বো !

@নন্দা  31-8 17  1-39 AM.

Wednesday, August 30, 2017

বেদনাভরা একরাশ শূন্যতা,শূন্যতার মাঝেও বুকে জ্বলছে দাউদাউ আগুন ! সবকিছু পুড়ে খাঁক হয়ে যাচ্ছে ! তবুও আমি বেঁচে আছি ! আমি আমার পরিবারের জন্য , আমায় ঘিরে থাকা আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের জন্য বেঁচে আছি ! এ শূন্যতা নিয়েই বাকি জীবনটা বাঁচতে হবে ! এ বিরহ কাটবে না কোনদিন , এ শূন্যতা পূরণ হবেনা কখনও  ! সবকিছুই সেই আগের মতই ;শুধু নেই আমার সব থেকে কাছের সেই মানুষটি ! আমার ছেলেমেয়ে এই বয়সেই হারালো তাদের বাবাকে , হারালো মাথার উপর থেকে বটগাছের ছায়া আর আমি হলাম নিঃসঙ্গ , একাকী ,অসহায় !

@নন্দা   29-8-17 

Friday, August 25, 2017

চারিপাশ অন্ধকার ,
শূণ্যতা গ্রাস করছে ,
বুকের ভিতরেও -
অদ্ভুত এক শূণ্যতা !
দৃষ্টিশক্তি থাকা স্বর্তেও -
সবকিছুই যেন দৃষ্টিহীন ,
বৃহস্পতির নেই দেখা ,
শুরু হয়েছে শনিরদশা !

@নন্দা    পিজি হসপিটাল 25-8-17

Monday, August 14, 2017

 শক্তি দাও মা
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

 রক্তস্নাত ভোরে--
নূতন সূর্য উদয় হলো,
পনেরই  আগস্ট উনিশ শ সাতচল্লিশ সালে ।

স্রোতের কলতানে --
সাগরও বুঝি উঠেছে মেতে,
বাঁজিয়ে শাঁখ, স্বাধীনতা বরণ করে ।

হটেছে ইংরেজ--
আজ শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছে ভারত,
নব আনন্দে তাই গান গাই ।

আমার ভারতমাতা--
রক্ত ঝরানো সোনার হিন্দুস্তান ,
অন্তরে আজ তোমার অবস্থান ।

আমার সোনার দেশ--
শস্য,শ্যামলা সবুজে মোড়া ,
রূপের ছটায়-হই পাগলপারা ।

মীরজাফর হয়নি শেষ ,
আজও ছাড়েনি পিছু আমাদের,
কিভাবে বাঁচাবো সোনার দেশ !

@ নন্দা 
কি চেয়ে কি পেলাম
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

এই স্বাধীনতায় কি চেয়েছিলো ভারতবাসী?
এতো রক্ত ঝড়িয়ে মায়ের বুক খালি করে-
বোনের, দিদির সিঁথির সিঁদুর মুছে ,
প্রিয়ার বুক হতে প্রিয়তমকে কেড়ে নিয়ে,
এক সমুদ্র রক্তের বিনিময়ে -
যে স্বাধীনতা তারা ছিনিয়ে এনেছিলো -
পরবর্তী প্রজম্মের জন্য -
পারলাম কি তাকে আমরা ধরে রাখতে ?
"সকল দেশের সেরা আমার জম্মভূমি"-
বিশ্বের দরবারে সফলতা পেলাম কি ?

যে দেশের অধিকাংশ মানুষের পেটে -
দুবেলা পেট ভরে অন্ন জোঠেনা ,
যে দেশে দুবছরের শিশু থেকে -
আশি বছরের বৃদ্ধা ধর্ষিতা হয়-
যে দেশে নেতা,আমলারা গরীবকে ঠকিয়ে
কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ,
বিচারের নামে বছরের পর বছর ,
মানুষকে অপেক্ষা করতে হয় ,
সাধারন মানুষের কথা না ভেবে,
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম,
বাড়তে বাড়তে আকাশ ছোঁয়া হয় -
সেই স্বাধীনতায় কি ছিলো কাম্য ?

@ নন্দা 

Thursday, August 10, 2017

ঠিকানা পেয়েছি
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

সময়ের কাছে হেরেছি আমি ,
তবু পেয়েছি আশ্রয় ,
নূতন করে ছেলে দিয়েছে ,
ঠিকানা আমার বৃদ্ধাশ্রম ।


দশমাস , দশদিন কষ্ট করে ,
প্রসব যন্ত্রনা সয়ে ,
এনেছি তোকে পৃথিবীতে আমি ,
থাকলিনা আমায় নিয়ে !

শিক্ষা,দীক্ষায় বড় হলি তুই ,
বড় চাকরী,গাড়ি,বাড়ি হলো ,
বড়লোকের মেয়ে বৌ হয়ে এলো -
মা তোর আজ জঞ্জাল হোলো ।

ভাল আছি বাবা এইখানে আমি ,
দিনরাত নেই কোন আর কাজ ,
কষ্ট শুধু একটাই আমার ,
তুই কাছে নেই আজ ।

শুনেছি এক ফুটফুটে খোকা ,
এসেছে সেদিন বৌমার কোলে ,
ভালকরে তাকে করিস মানুষ ,
দেয়না তোদের যেন ফেলে !

@ নন্দা  10-7-17 
জগতের রীতি
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

চলে যাবো একদিন চিরতরে,
রেখে যাবো কিছু স্মৃতি,
পারবেনা ভুলতে আমায়,
এটাই যে মানবের নীতি ।

সুখ ,দুঃখের অনেক স্মৃতি,
হাসি,আনন্দ ব্যথাভরা গীতি,
থাকবে সবকিছু তোমাদের ঘিরে,
আমিই থাকবোনা শুধু এই নীড়ে !

যদি কখনও থাকো একাকী,
ভাববে কিছুক্ষণ আমার কথা,
পড়বে মনে ওই সময় ,
দিয়ে থাকো যদি ব্যথা !

সময়ের সাথে ভুলবে কিছু ,
ধূসর হবে অনেক স্মৃতি,
মেতে উঠবে নব আনন্দে ,
জগতের এটাই যে রীতি ।

@ নন্দা



Tuesday, August 8, 2017

                ব্ন্ধু শব্দের প্রথম অক্ষর 'ব'-ধরে নিতে পারি ব থেকেই আসে বিশ্বাস , আবার ইংরাজী faith কথাটার ।st letter F ; friend কথাটা F দিয়েই শুরু হয় , তাহলে ব্ন্ধু হতে গেলে আগে দরকার পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস । যা আজকের যুগে কারও মধ্যেই দেখা যায়না বলে মনেহয় । ঘরের বাইরে তো নয়ই , ঘরের
ভিতরেও কি এই বিশ্বাস কাউকেই করা যায় ? বাবা , মা ছিলেন(?) সন্তানের কাছে সব থেকে বিশ্বাসস্থল -ছিলেন বললাম এই কারণেই আজকের দিনের কিছু বাবা ,মা তাদের কার্যকারিতা দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তারাও সেই জায়গাগুলি হারাচ্ছেন ! এর প্রধান কারন ভালো থাকা ,ভালো খাওয়ার ইচ্ছা । অর্থাৎ অর্থ ।  নিজের শিশু সন্তানকেও রেহাই দেননা , একের অপরাধে অন্যে অপরাধীর মত সমষ্টিগত বদনাম হচ্ছে । আস্তে আস্তে বিশ্বাস শব্দটাই হারিয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ  ব্ন্ধু বলেই কেউ থাকছেনা ! ব্ন্ধু দিবস পালন করার চাইতে বিশ্বাস দিবস পালন করাই উচিত ! কে ব্ন্ধু ? কাকে বিশ্বাস করবো ? বিশ্বাসের ভীত যেখানে নড়বড়ে তাকে কি ব্ন্ধু ভাবা যায় ? সন্তান তার বাবা, মায়ের কাছে মিথ্যা বলছে , বাবা, মা সন্তানের কাছে মিথ্যা বলছে (সবাই হয়ত নয় ) ! বিশ্বাস শব্দটাই যে বিলুপ্তির পথে !

@ নন্দা 

Saturday, August 5, 2017

দাঁড়াও আসছি
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

সন্ধ্যার আকাশে -দু'একটি তারা ,
তাকিয়ে থাকি -হয়ে আনমনা ।

পাশে নেই -ভাবি, আছো বুঝি পাশে ,
নিঃশ্বাস ঘন হয় -অনুভবে পাশে পাই ।

রাত বারে -আসেনা যে পোড়া চোখে ঘুম ,
নিস্তব্ধ পথঘাট চারিপাশ নিঝুম ।

মনেপড়ে কত কথা ,ফেলে আসা দিন ,
ফুরিয়ে এসেছে আমার,জীবনও  প্রদীপ ।

অপেক্ষা হবে শেষ ,আর নেই দেরী ,
তাড়াতাড়ি হবো পার এই বৈতরনী ।

সুখে,দুখে একসাথে -ছিলাম দু'জনাতে ,
আবার হবে মিলন-রইবো একই সাথে ।

@নন্দা   5-4-17 12AM ,,

Friday, August 4, 2017

স্মৃতি যখন মালা
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আমার চোখের জলে আমি ,
তোর জীবনের দুঃখ ধোবো,
তোর কষ্টগুলি আমার থাক ,
তোকে আমি নাইবা পাবো ।

প্রেম দিলিনা দিসনা -
আমায় নিয়ে গল্প লিখিস ,
চরিত্র হোক- যা চায় মন  ,
তবুও পেনে জড়িয়ে রাখিস ।

নিজের লেখা পড়বি যখন ,
পড়বে আমায় মনে ,
এইটুকুই -হবে অনেক পাওয়া ,
ভালো থাকবো জীবনে ।

আমায় তুই বুঝলি ভুল ,
এলাম আমি তাইতো চলে ,
স্মৃতি দিয়ে গেঁথে মালা ,
পড়ে নিলাম নিজের গলে ।

স্মৃতিরা সব থাকবে কাছে ,
নাইবা থাকলি তুই পাশে ,
তোকে ঘিরেই স্মৃতি যখন ,
ভাববো আমি আছিস কাছে ।

 @ নন্দা   3-8-17   11-30PM ,,

Wednesday, August 2, 2017

জানি আছিস
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

তুই চলে গেছিস অনেকদিন আগে ,
এখনও যেন ঘোরের মধ্যেই আছি !
একা চলা জীবনে খুব কঠিন ,
ভালোবাসার অনুভবটুকু নিয়ে বেঁচে আছি ,
সেতো চার দেওয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ !
পথে ,ঘাটে সর্বত্র হায়েনার দল !
একা লড়াই করা খুবই দুঃসাধ্য !

কেনো যেন সব সময় মনেহয়,
তুই আমার সাথে সাথেই থাকিস -
তোর ভালোবাসার অনুভবটুকুই  আজ ,
আমার বেঁচে থাকার একমাত্র দিশা ।

@  নন্দা   21-7-17  12-20AM 

Sunday, July 30, 2017

আশা  জেগে থাকে
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

 যখন পশ্চিমআকাশে
সুর্য্য লুকায় মেঘের মাঝে ,
একটু একটু করে সবে -
সন্ধ্যা নেমে আসে ;
ঠিক তখনই সন্ধ্যাপ্রদীপ হাতে ,
আমি দাঁড়াই তুলসীমঞ্চের কাছে ,
সদর দরজা থাকে খোলা ,
চোখ বুজে তোমার মঙ্গলকামী ,
বুকের ভিতর জাগে শিহরণ !
চোখ খুলে যদি তোমায় দেখতে পারি !

আমার ভাবনা ভাবনায় থেকে যায় ,
আসবেনা কখনও তাও জানি ,
চোখের কোল ভেজা সব সময় ,
শিহরণ ও তখন যায় মিলিয়ে ,
বাসা বাঁধে সেথায় বিরহ যন্ত্রণা !
বুকের ভিতর দাবানল জ্বলে ,
একা একাই পুড়ি আমি ,
তবুও আশা থাকে এককোণে ,
আগুন ছুঁতে পারেনা তারে ,
মনকে বোঝাই  ,শান্তনা পাই ,
একদিন নিশ্চয় ফিরবে তুমি !

@নন্দা 28-7-17  11-50

Friday, July 28, 2017

স্নেহ,শ্রদ্ধা,ভালবাসা -
সবকিছু আজ দুরাশা -
ভেসে গেছে সুখ ,
মনের সব আশা ।

@নন্দা
সহজ নয়
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ইঁটের উপর ইঁট সাজিয়ে ,
বাড়ি তৈরী হয় ,
ফুল দিয়ে গাঁথলে মালা ,
ফুলমালা হয় ,
শব্দের পর শব্দ বসিয়ে ,
কবিতা লেখা হয় ?

শব্দগুলো যদি হয় এলোমেলো ,
বাক্যগুলি বেমানান ,
মনের ভাষা স্পষ্ট নয় ,
যদি হয় ভুল বানান ,
এসব জানার  পরেই তবে
কবিতা লেখা হয় ।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য -এর কোনটার জ্ঞানই  আমার নেই !! তাই আমার লেখাগুলি আজও কবিতা হয়ে উঠলোনা ,,😭😭কবি বললে লজ্জা পাই

@ নন্দা


Thursday, July 27, 2017

চেনোনি আমায়
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

কি জানি কি দেখেছিলাম ,
তোমার মধ্যে !
নিবিড় করে ভালবেসেছিলাম ,
নিজেরই অজান্তে ।

সাদামাটা জীবনে আমার ,
দিয়েছিলে দোলা ,
স্মৃতিগুলো এতো মধুর ,
যায়কি ভুলা ?

তুমি ছিলে মন্দ মানুষ ,
চিনতে পারিনি ,
দুঃখ শুধু একটাই আমার ,
আমায় বুঝতে পারোনি ।

@নন্দা   26-7-17

রূপসী কলকাতা
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

শ্রাবণধারা সারাদিন ঝরছে ,
পথঘাট সব নদীনালা ভরছে ,
পথের জল উঠছে ঘরে ,
রূপসী কলকাতা লাজে মরে !

বর্ষা এলেই রাস্তা খোড়া ,
পথচারী সব নাজেহাল ,
রিক্সা ,অটো সব হয় বন্ধ ,
নিত্যযাত্রী হয় বেসামাল !

গরমের সময় চলে হাপিত্যেশ ,
আসবে কখন বরষা ,
ফুটপথবাসীর হয় যে দুর্ভোগ ,
ট্রিপল বা প্লাস্টিকই ভরসা ।

@নন্দা  26-7-17  2AM ,

অব্যক্ত যন্ত্রণা
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     অফিস থেকে বেরিয়ে বাস থেকে নেমেই বৃষ্টির সম্মুখীন ! ছাতাটা আজ আনতে ভুলে গেছে রেখা ।গতকাল বৃষ্টিতে ভেজা ছাতাটা ব্যালকনিতে শুকাতে দিয়েছিলো আজ আর আসবার সময় ব্যাগে পুড়তে মনে নেই । এতো তাড়া থাকে অফিসে বেরোনোর সময় ! ছেলে স্কুলে বেরোবে তার খাবার ,টিফিন ,নীলয়ের টিফিন ,দুপুরের খাবার ,ওষুধ সব গুছিয়ে অচলাকে বুঝিয়ে দেওয়া । তারপর নাকে মুখে দু'টি গুঁজেই অফিস ছোটা ।

     আজ প্রায় একবছর হোল নিলয়ের বাম অঙ্গটা পুরো অসার ।প্রথমে সামান্য জ্বর ,গায়ে ব্যথা । কিছুতেই জ্বর কমেনা ;আস্তে আস্তে শরীরের বাম অঙ্গে অসারতা ।আর কিছুই করার নেই ।ফিজিওথেরাপিষ্ট নিয়মিত এসে এক্সারসাইজ করিয়ে যাচেছন । কিনতু উন্নতির কিছুই দেখা যাচেছনা ।শ্বাশুড়ী মাস ছ'য়েক আগে মারা গেছেন । আর শ্বশুরমশাই তো বিয়ের আগেই চলে গেছেন । এখন বাড়িতে মানুষ বলতে সে নিজে ,পঙ্গু স্বামী ,দশ বছরের ছেলে নীলাদ্রী আর সর্বক্ষনের কাজের মেয়ে অচলা । অচলা ভীষণ ভালো মেয়ে ।রেখা যখন বাড়িতে থাকেনা তখন ছেলে স্কুল থেকে ফিরলে বড় রাস্তার মোড় থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে এসে যত্ন সহকারে খাওয়ানো ,তাকে দেখে রাখা ,বড়বাবুর সমস্ত দায়িত্ব পালন করা ,ঘড়ি ধরে তাকে সময়মত ওষুধ খাওয়ানো -সব সবকিছুই  সে করে । রেখা বাড়িতে ফেরার সাথে সাথে তার চা ,জল খাবার এমনকি রাতের রান্না পর্যন্ত সব রেডি থাকে । শুধু সকালের দিকটাই রেখার একটু তাড়া থাকে । দুপুরের রান্নাটা সে নিজের হাতেই করে বাটিতে বাটিতে ঢেলে রেখে যায় ।

            বাসটা এসে এমন জায়গায় দাঁড়ালো সামনে জল আর কাদায় পরিপূর্ণ । পড়ে যাচ্ছিলো । হঠাৎ এক ভদ্রলোক ধরে ফেলেন । মুখের দিকে না তাকিয়েই রেখা তাকে "থ্যাংক্স" বলে । বৃষ্টিটা বেশ জোরেই পড়ছে ।শেডের নীচে ছাতাবিহীন অবস্থায় যারা দাঁড়ানো তারা প্রত্যেকেই ভিজে যাচ্ছেন । আর যাদের কাছে ছাতা আছে তারা সকলেই ছাতা খুলে বৃষ্টির হাত থেকে নিজেদের পোশাক বাঁচাতে সামনের দিকে ছাতা খুলে ধরে আছেন ।রেখা আস্তে আস্তে পিছনদিকটাতে চলে যায় । অন্যমনস্ক ভাবেই চোখ পরে যে ভদ্রলোক তাকে পড়ে যাওয়ার থেকে বাঁচিয়েছিলেন তার দিকে ।
---সৌগত তুমি ?
সৌগতও এতোক্ষন পরে রেখাকে খেয়াল করে ।
----অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা হোল !
----বার বছর , একযুগ পর ।
----কেমন আছ ? সেই আগের মতই দেখতে আছ , কোন পরিবর্তন হয়নি । বয়স একটুও বাড়েনি ,,,,
----ওসব কথা ছাড়ো । আছি ,ভালোই আছি । তুমি কেমন আছ ? মাসিমা ,মেশোমশাই ,তোমার বৌ ,বাচ্চা আর দেবী ? দেবী কেমন আছে ? নিশ্চয় ওর বিয়ে হয়ে গেছে ? কেমন আছে ও এখন ? ওর শ্বশুরবাড়ি কোথায় ?
----আরে দাঁড়াও ,দাঁড়াও ;এতো প্রশ্নের একবারে উত্তর দেবো কি করে ? এক একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে পরের প্রশ্নটাতো ভুলে যাবো । মা ভালো আছেন ,বাবা আজ দু'বছর হোল আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ।" তারপর হাসতে হাসতে বললো ,"বিয়ে করলে তো বৌ,বাচ্চা ? বিয়ের ফুলই তো ফুটলো না । আর দেবী ?"
            কথা বলতে বলতে বৃষ্টিটা কমে আসলো । এক এক করে সকলে শেডের নীচ থেকে বাস ধরার জন্য বাইরে এসে দাঁড়ালো । সৌগত রেখাকে বলে , "চল ,সামনেই একটা কফিবার আছে ,ওখানে কফি খেতে খেতে কথা হবে ।"

         বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে রেখা সৌগতর মুখের দিকে তাকালো !
----সে সময় আজ আর আমার হাতে নেই ।বাড়িতে দু'টি প্রাণী হা করে ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে বসে আছে কখন আমি বাড়ি ফিরবো ।একদিন তোমাকে দেওয়ার জন্য আমার হাতে প্রচুর সময় ছিলো ।সেদিন তোমাকে কফিহাউসে আসতে বলে সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও তিনঘন্টা অপেক্ষা করেছিলাম তোমার জন্য ।আমার সাথে দেখা করবার তোমার সময় সেদিন হয়নি । ভীষণ ভেঙ্গে পড়েছিলাম । সেই সময় জীবনটাকে মূল্যহীন মনে হত ! ভেসেই যাচ্ছিলাম । বাবা ,মা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিলেন । নিলয় জীবনে না আসলে বুঝতেই পারতামনা ভালবাসার প্রকৃত মর্ম ।কেনো ,কিসের জন্য তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছিলে জানিনা, আজ আর জানারও কোন ইচ্ছা নেই ।শুধু এটুকুই জানি নিলয় ছাড়া আর কাউকে একান্তে সময় দেওয়ার মত সময় আমার হাতে নেই । আমি আজ সুখী ,খুব সুখী । ওই যে আমার বাস এসে গেছে ।আমি আসি । ভালো থেকো তুমি ।"
         রেখা দৌড়ে যেয়ে বাসে উঠলো ।সৌগত সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের মনেই বললো ,"সেদিন কেনো আসতে পারিনি তা যদি জানতে নিজেই কেঁদে আকুল হতে । তারথেকে এই ভালো হোল -আমার নামটা চিরদিনের মত তোমার মন থেকে মুছে ফেলতে পেরেছো ।আমায় ঠক ,জোচ্চর ,প্রতারক ভাবতে পেরেছো । তুমিও খুব খুব ভালো থেকো ।"

         সৌগত একাই যেয়ে কফিবারে বসে কফি খেতে খেতে ফিরে যায় বার বছর আগের দিনগুলিতে  --
       সেদিন সৌগত কফিহাউজে যাবে বলে তৈরী হচ্ছে ;হঠাৎ লান্ডলাইনে একটা ফোনে জীবনের সব স্বপ্ন হঠাৎ আসা কালবৈশাখীর মত সবকিছু ভেঙ্গে চুরে তচনচ করে দিলো ।একমাত্র আদরের ছোট বোন দেবীকা কলেজ থেকে ফেরার পথে কিছু সমাজ বিরোধী তাকে তুলে নিয়ে যায় ।সমবয়সী অনেক বন্ধুদের সাথে সেও ফিরছিলো ।বন্ধুরা বাঁধা দিতে গেলে সমাজ বিরোধীরা ভোজালী বের করে তাদের দিকে তেড়ে আসে ।সকলেই ভয়ে জড়সড় হয়ে যায় । সমাজ বিরোধীরা দেবীকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর ফোন করে তারা দেবীর বাড়িতে খবর দেয় ।সঙ্গে সঙ্গেই সৌগত দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ।থানা ,পুলিশ সারারাত ছুটাছুটি দেবীর সন্ধান সেদিন আর পাওয়া যায়না ।রেখার কথা ভাববার সময় তখন সৌগতর নেই । কাক ডাকা ভোরে যখন সৌগত বাড়ির অভিমুখে রওনা দিয়েছে ঠিক তখনই পুলিশের একটা ভ্যান ঘ্যাচ করে সৌগতর সামনে এসে দাঁড়ায় ।পুলিশ অফিসার গাড়ি থেকে নেমে সৌগতকে বলেন ,"এখান থেকে কিছুটা দূরে রেললাইনের উপরে আঠার ,উনিশ বছরের একটি মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে ।মর্গে যেয়ে আপনাকে বডি শনাক্ত করতে হবে ।" সৌগত নিজের মাথাটা ধরে রাস্তাতেই বসে পড়ে হাউ ,হাউ করে কাঁদতে লাগে ।বয়স্ক এক পুলিশ অফিসার তার হাত ধরে উঠিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেন ।

               লাশ শনাক্তকরণ ,দাহ ,শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান সব মিটে যাওয়ার পর চিরশান্ত সৌগত অন্য মূর্তি ধারণ করে ।যে ভাবেই হোক বোনের প্রতি এই নারকীয় হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতেই হবে ।থানা ,পুলিশের দরজায় ,দরজায় ঘুরে এক বছরের মধ্যেও কোন সুরাহা সে করতে পারেনা ।সব অপরাধী অধরাই থেকে যায় ।কিনতু এই একবছরে সে এটুকু বুঝতে পারে ধর্ষণকারী বা খুনীরা রাজনৈতিক নেতাদের আত্মীয় আবার কেউ তাদের ছত্রছায়ায় পালিত গুন্ডা । সোজা আঙ্গুলে ঘি কিছুতেই উঠবেনা । কিনতু আইনের ছাত্র সৌগত আইনের বিরুদ্ধচারণও করতে চায়না ।

            সৌগতর সাথে রেখার যখন প্রেম চলছে সৌগতর তখন উকালতির ফাইনাল ইয়ার ।এই এক বছরে তার পড়াশুনার খুব ক্ষতি হয় । শুরু করে সে দিনরাত এককরে পড়াশুনা করতে । উকালতি পাশ করে সে নামজাদা উকিল অমরেশ রায় চৌধুরীর জুনিয়র হিসাবে কাজ শুরু করে । কথায় কথায় সে অমরেশবাবুকে তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য তার বোনের ধর্ষণকারী ও খুনিদের শাস্তি দেওয়ার কথা জানায় । অমরেশবাবু সৌগতকে খুব স্নেহ করতেন । তিনি তাকে কথা দেন এরজন্য  সর্বরকম সাহায্য করতে তিনি প্রস্তুত ।

             নূতন করে আবার কেস ফাইল করা হয় । ফোনে হুমকি দেওয়া ,ভয় দেখানো -অমরেশবাবু ও সৌগতর উপর চলতে থাকে ।কিনতু জাদরেল উকিল অমরেশবাবু কিছুতেই দমে যাওয়ার পাত্র নন ।তার সাথও প্রশাসনিক উপর মহলের উঠাবসা ।স্বাক্ষ্য,সাবুদ প্রমাণসহ তিনজন ধরা পরে । বাকী একজন ওই ঘটনার দু'বছরের  মাথায় মদ্যপ অবস্থায় বাইক এ্যাকসিডেন্টে মারা যায় । এই তিনজনের যাব্বজীবন কারাদণ্ড হয় ।

           সৌগত তার বোনের মৃত্যুর দশ বছরের মাথায় যেয়ে সুবিচার পায় ।এরমধ্যে তার যে রেখার কথা মনে পড়েনি তা  নয় ।  কিনতু ইচ্ছা করেই কোন যোগাযোগ রাখেনি । প্রাণপ্রিয় ছোট্ট বোনটির মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়াটাই তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় ।তাই নিজের হাতেই সে তার ভালবাসাকে গলাটিপে হত্যা করে ।কারণ ভালবাসায় আবদ্ধ হতে গেলে পিছুটান থাকবে আর এই পিছুটানই তাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করবে ।

 এতগুলো            বারবছর ধরে সে রেখার কোন খোঁজ করেনি । কারণ সে বুঝতে পেরেছিল বছর একটি মেয়ের পক্ষে কারও অপেক্ষায় বসে থাকা কিছুতেই সম্ভব নয় ।রেখা যে তাকে ভুল বুঝেছে এবং তাকে যে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবেনা এই ব্যপারেও সে নিশ্চিত ছিলো ।

          আজ যখন তার রেখার সাথে দেখা হোল ,সৌগত ভেবেছিলো সব শোনার পর রেখা তার অসহায়তা বুঝতে পারবে -পারবে তাকে ক্ষমা করে দিতে । কিনতু রেখা তো তাকে কোন সুযোগই দিলোনা !

@নন্দা    22-7-17

Wednesday, July 26, 2017

ইতিহাস হোক
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

সব জায়গায় হেরে গিয়ে ,
নিজের কাছেই এসেছি ফিরে ,
পুরোনোকে আবার আঁকড়ে ধরেছি ,
সঙ্গী সেই কলম আর ডাইরী ।
এতদিনের সব হিসাব নিকাশ ,
না পাওয়ার তীব্র যন্ত্রণা -
একএক করে লিখে চলেছি ,
মৃত্যুর পর হোক রচনা !
আমার জীবনের এক ইতিহাস ।
যুগযুগান্তর ধরে থাকতে চাই ,
লেখনীর দ্বারা সকলের অন্তরে ।

@নন্দা







Tuesday, July 25, 2017

বিপন্ন মান
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

স্বাধীন দেশের মানুষ তুমি ,
হতে পেরেছো কি স্বাধীন ?
সন্ধ্যায় পথে বেরোলে তুমি ,
হতে হবে নরপশুর অধীন !

অশান্ত ,উত্তাল আমার দেশ ,
পথেঘাটে পায়না নারী সম্মান ,
এক সমুদ্র রক্তের বিনিময়ে ,
এলোনা আজও নারীর মান ।
নিশ্চিত যা
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

মৃত্যু মানুষের অনিবার্য !
এটা নিশ্চিত জানা স্বর্তেও ,
এতো হিংসা ,মারামারি কেন ?
মৃতব্যক্তির গায়ের উপর -
একটি মশা পড়লেও
প্রিয়জন মশাটি উড়িয়ে দেয় ,
মারেনা-যদি লাগে ব্যথা !
তবে তার বুকের উপর -
এতো ফুল ,এতো মালা কেনো ?
বুকের উপর এতো চাপ ,
কি করে সে সইবে ?
সংসার জীবনে সে অনেক ভার সয়েছে,
আর তার উপর বোঝা চাপানো কেনো ?
সে ঘুমাক চির শান্তিতে ,নিরিবিলিতে ।

@নন্দা   24-7-17

Saturday, July 22, 2017

মানুষ নয় এরা
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

শোন রমলা বলছি তোকে ,
একটু দাঁড়িয়ে যা -
মেয়েটাকে যেখানে সেখানে রেখে ,
কাজে বেরোস না ।

দিনকাল আজ ভালো নয় ,
একরত্তি মেয়ে তোর ,
এখনও যে দুধের দাঁতই ,
সব ওঠেনি ওর ।

রমলা বলে শোনো দিদি ,
"ওপাড়ার ওই ঘোষকাকুর  ,
সকাল ,সন্ধ্যায় মেয়েকে নিয়েই   ,
সময় কাটে তার ।"

ওরে মূর্খ বলি শোন ,
পেপার টেপার পড়িস নাতো ,
পুরুষের বয়স যতই বাড়ুক ,
কিছু জানোয়ারের মত !

এইতো সেদিন ফুলের মত ,
ছোট্ট মেয়ে গুড়িয়াটাকে ,
সূঁচ ফুঁটিয়ে ,ধর্ষণ (?)করে ,
মেরে ফেললো অকালে !

মানুষ আর মানুষ নেইরে ,
হয়েছে যেন জানোয়ার ,
শিশু থেকে বৃদ্ধা অবধি ,
ছাড়েনা কাউকে আর !

@ নন্দা  22-7-17

কত নিষ্ঠুর এ মানব সমাজ !
প্রমানিত হোল আবার আজ !
ছোট্ট শিশুর প্রতি এ অত্যাচার !
নেই কি কোনই প্রতিকার ?
কুড়িতেই ঝরে গেলো পৃথিবীতে সে !
চাই  অপরাধীর বিচার যে !!

Friday, July 21, 2017

এখনও খুঁজি
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী


রাত্রি গভীর, নিস্তব্ধ চারিদিক ,
বিরহযন্ত্রনা বুকে আছে চাপা ,
শ্রাবণের এই বরষার রাতে ,
একা একা রাত জাগা ।

হৃদয়মাঝে উত্তাল সমুদ্র ,
বারেবারে মুছি আঁখি ,
অপেক্ষায় কাটে রাত ,
আজও তোমায় খুঁজি ।

আসবেনা তুমি আর কখনো ,
মানেনা  যে এ মন ,
অপেক্ষার দ্বার হবেনা বন্ধ ,
কেমনে কাটাবো এ জীবন ?

@নন্দা   21-7-17  12-30AM 

Wednesday, July 19, 2017

 সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     শিক্ষিত ,সুন্দরী মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে হওয়া সত্বেও এইরূপ একটা পরিবারে বৌ হয়ে আসবে ছন্দা কোনোদিনও ভাবেনি । তবু ভাগ্যকে সে মেনে নিয়ে মানিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে । সম্ভব করতে পেরেছে বেশ কয়েকটা বছর পরে । বাড়িতে ঢুকেই প্রথম যেটা সে টের পেয়েছিলো তা হোল উপার্জন একমাত্র তার স্বামী করে বাকী তিন ভাই কিছুই করেনা । ছোটটি তখনও পড়াশুনা করছে । মেঝটি গ্রাজুয়েশান কমপ্লিট করে আড্ডাবাজ । সেঝটি
উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে পড়ার পাট চুকিয়েছে । স্বামী তার নিরীহ গোবেচারা ! সংসার চালাতে যেয়ে নাজেহাল ! সামান্য রাজ্য সরকারী কর্মচারী বীরেশ এই সংসারের জন্য ধার দেনায় তলানো । অবশ্য এক দিনেই ছন্দা এটা বুঝতে পারেনি । এর জন্য তাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ।

      বছর খানেকের মধ্যেই  বীরেশের বন্ধুদের অনেকেরই সাথে ছন্দারও বন্ধুত্ব হয়ে যায় । তাদের কাছ থেকেই ছন্দা এসব জানতে পারে । শুরু হয় ছন্দার লড়াই ।

        প্রথম প্রথম স্বামী ,শ্বাশুড়ীর আপত্তি থাকলেও পরে তারা মত দেন ছন্দাকে বাড়িতেই টিউশনি করার । সকাল ,সন্ধ্যায় ছাত্র পড়িয়ে মাসের শেষে বেশ কয়েক হাজার টাকা সে তার শ্বাশুড়ী মায়ের হাতে তুলে দিতে লাগলো । বীরেশকে জানালো কিছু কিছু করে তার ধারের টাকা যাতে সে শোধ করতে লাগে । বেশ কয়েক মাস এভাবে চলার পর শ্বাশুড়ী নিজেই তার সংসারের চাবীকাঠি তার বৌয়ের হাতে দিয়ে দিলেন । এতে সুবিধা হোল ছন্দার বীরেশের মাইনের টাকাটা হাতে পাওয়ার পর সে তার থেকে একটু মোটা অংকের টাকা ধার শোধ করার জন্য বীরেশের হাতে তুলে দিতে পারতো । দু'বছরের মধ্যে সব ধার এভাবেই ছন্দার সহযোগিতায় বীরেশ শোধ করতে সক্ষম হয় ।

     অন্যদিকে সে মেঝদেওর টিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে একটা কমপিউটার সেন্টারে ছোট একটা কোর্স করায় ,ঈশ্বরের অপার কৃপায় সে সামান্য মাইনের এক চাকরীও জুটিয়ে ফেলে । সেঝটিকে অনেক বুঝিয়েও কোন ফল পায়না । অবশেষে নিজের পরিচিত একটা বড় কাপড়ের দোকানে অনেক কষ্টে সেলস ম্যানের কাজ জুঠিয়ে দেয় । সংসারের অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয় । পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় -সংসারের সব  ব্যাপারেই বৃদ্ধা শোভাদেবী ছন্দার উপরেই  নির্ভরশীল হয়ে পড়েন । কোন ব্যপারে মতামতের দরকার পড়লে তা ছন্দার উপরেই ন্যস্ত হয় ।

        ছোট দেওরটির পড়ার ব্যপারটা ছন্দা দেখতো , মাথাটাও তার খুব ভালো ,সঠিক গাইড পাওয়াতে সে স্টার মার্কস নিয়ে মাধ্যমিক আর প্রথম বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরই ছন্দা তাকে পলিটেকনিকে বসায় । এখন সে ইঞ্জিনিয়ার , মোটা মাইনের চাকুরে ।

   অভাব আর সংসারের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেনা । বৌদি সকলের প্রাণ ! বৌদির কথা সকলের কাছে যেন বেদবাক্য ! শোভাদেবীও সব কিছু ছন্দার উপর ছেড়ে দিয়ে ঠাকুর সেবায় ব্যস্ত ।
 
       সময় এগিয়ে চলে ঝড়ের গতিতে । মেঝদেওরের আয় বাড়ার সাথে সাথেই ছন্দা বাড়ির সকলের মত নিয়ে নিজে পছন্দ করে তার বিয়ে দেয় । হাঁড়িও তাদের আলাদা করে দেয় নিজে থেকে মায়ের মত নিয়েই । তার বক্তব্য ,এক হাঁড়িতে থাকতে গেলে ঝামেলা হবেই ,তার থেকে এক বাড়িতে থাকি সবাই একসাথে হাঁড়ি আলাদা থাক । শোভাদেবী কথাটাই সম্মতি জানিয়েছেন ছন্দা নিজেই সব কেনাকাটা করে এনেছে । ছোট বোনকে হাতে ধরে রান্না শিখিয়েছে । ভালো ,মন্দ যাই রান্না করুকনা কেন ছন্দা তার জা আর দেওরকে না দিয়ে খায়না । নামেই হাঁড়ি আলাদা ।

     শোভাদেবীর শেষ সময়ে ছন্দাকে ডেকে তিনি বলেন , "বড় বৌমা , আগের জনমে অনেক পুর্ণির ফলে তোমাকে আমি ছেলের বৌ হিসাবে পেয়েছি । পরের জন্মেও আমি তোমাকেই ছেলের বৌ হিসাবে চাই । মেয়ে হিসাবে নয় , তাহলে তো আমার লক্ষ্মী আমায় ছেড়ে চলে যাবে । তুমি প্রমাণ করে দিয়েছো ঘরের বৌয়ের গুণেই সংসারে সুখ , সমৃদ্ধি বিরাজ করে । জম্ম জম্মান্তরে আমি তোমাকেই আমার ঘরের লক্ষ্মী হিসাবে  চাই ।

@ নন্দা   18-7-17  1 AM

Tuesday, July 18, 2017

ভালো আছি
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

অন্ধকার চারিদিকে ,
সম্পর্কগুলি বালির বাঁধ ,
টাকাপয়সা সম্পত্তি ,
মন কষাকষি সর্বদা ,
সম্পত্তি ভাগাভাগি ,
মা ,বাবা বোঝাস্বরূপ !
পরিণাম বৃদ্ধাশ্রম !
ভালোথাকা ,ভালোখাওয়া ,
নিরিবিলি পাড়ি ফ্লাটে ,
প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্কহীন ,
ভালবাসা দরজার মধ্যেই ,
কেউ কারও নয় !
ভালো আছি সবাই !

@নন্দা    18-7-17

Monday, July 17, 2017

ভুলিনি তোকে
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আজও আছিস অন্তর জুড়ে ,
ভুলিনি তোকে এখনও !
আস্তে আস্তে স্মৃতি হবে ধূসর ,
পড়বেনা মনে আর কখনও ।

আমার চাওয়া সকলই হোল বিফল ,
চলে গেলি কোন সুদূরে ?
দিনান্তের শেষে একবারও কি তোর ,
মনে পড়েনা আমারে ?

ভুলিনি আজও সেই সব দিন ,
যা কাটিয়েছি দু'জনে -
সময় আমায় ভুলিয়ে দেবে সব ,
পড়বেনা মনে আর কোনক্ষনে ।

@নন্দা   17-7-17

কে আপনজন
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

চেনা মানুষ হঠাৎ করেই ,
হয় কেন গো অচেনা ?
একই সাথে উঠাবসা ,
মনে হয় অজানা !

কোন বারতা ছাড়াই যেন -
হঠাৎ পাল্টে যায় ,
একই ছাদের তলায় থেকেও -
হারিয়ে কেন যায় ?

স্মৃতিভ্রংশ মানুষ যেমন ,
পুরোনোকে ভুলে যায় ,
কাছের মানুষ ইচ্ছা করেই ,
ভুলে থাকতে চায় !

হারিয়ে যায় স্বপ্নগুলি ,
ভেঙ্গে যায় মন ,
বুঝা তখন কঠিন হয় ,
কে আসল আপনজন !

 @ নন্দা  17-717 

Sunday, July 16, 2017

আবার এসো কাছে
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

নয়ন তোমার ছলছল কেন ?
এসেছি আমি ফিরে ,
দূরে কেন আছ ওগো ?
কাছে এসো ধীরে ।

সয়েছো তুমি বিরহ-বেদন ,
কত  আমি জানি ,
আজও শুকায়নি তেমনই আছে -
গাঁথা বকুলের মালাখানি ।

হয়ত ক'দিন দূরেই ছিলাম ,
এতো অভিমান কেন ?
একটু হেসে কাছে এসো ,
হাতদু'টি ধরো ।

যেমন আমি ছিলাম আগে ,
এখনও আছি তেমন ,
সব কাজ আমি এসেছি সেরে ,
ভালবাসা দেবো উজাড় করে ।

@নন্দা     11-7-17  10PM ,, 

Friday, July 14, 2017

মা তোকেই চাই
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

এক এক করে আমায় ছেড়ে ,
গেলো সবাই চলে ,
আমি একাই সাঁঝবেলাতে -
আছি শুধু পরে ।

সময় হলেই যায় যে সবাই ,
আসে কেন তবে ?
একা থাকার বড়ই জ্বালা -
মাগো এই ভবে ।

এক জনমে সব সাধ যে ,
পূরন হয়না মা ,
তোর কোলেতেই আবার চাই ঠাঁই ,
তুই আমায় ভুলিসনা ।

বাংলার এই সবুজদেশে ,
আবার আসতে চাই ,
এ জনমে যারা ছিলো -
 সবাইকে যেন পাই ।

মনে করিয়ে দিস মাগো তুই ,
সবুজ মাঠ ,প্রান্তর ,আর ধানক্ষেত ,
বাউল বেশে ঘুরবো আমি ,
থাকবেনা মনে  আর কোন খেদ !

@নন্দা
দিন চলে যায় ,
তার নিজের মত ,
কত স্মৃতি পরে মনে ,
রেখে যায় ক্ষত !
কথা সব নীরব হয় ,
মন গাঁথে মালা ,
হৃদয়ে মালার বাহার ,
বাড়ে শুধু  জ্বালা !

@নন্দা  

Wednesday, July 12, 2017

অনুগল্প
রক্তের কোন জাত নেই
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
           "আব্বাস চাচা,অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা । সেই যে তুমি রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলে ,তারপর আর দেখা হয়নি । কেমন আছ ?কোথায় থাকো এখন ?" একনাগাড়ে কথাগুলি বলে গেলো সুজন ।

   আব্বাস আলীর বয়স চল্লিশের কোঠায় এখন । ভাই ,ভাইবৌয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি যখন ঘর ছাড়েন তখন তার বয়স বছর আঠাস । বিয়ে থা করেননি । ড্রাইভিংটা ভালোই জানতেন । একটা কাজও পেয়ে যান সোমেন মুখার্জীর বাড়িতে । আব্বাস আলীর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে , থাকার কোন জায়গা নেই জানতে পেরে সোমেনবাবু তারই বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন । সোমেনবাবুর ছেলে ,মেয়ে দুটিকে আব্বাস আলী নিজের প্রাণের থেকে বেশী ভালবাসেন । মেয়ে বড় ,ছেলে ছোট । আজ স্কুলে  মেয়েটি সিঁড়ি দিয়ে নামতে-  পরে গিয়ে  মাথায় মারত্মক ভাবে আঘাত পায় ,প্রচুর রক্ত ক্ষরনও হয় । বেশ কয়েকটি সেলাইও পরে । রক্তও দিতে হয় । রক্তের গ্রুপ এ  নেগেটিভ । বাড়ির কারও সাথেই তার রক্ত মেলেনা । ব্লাড ব্যাংকে তখন এ নেগেটিভ গ্রুপের কোন রক্ত ছিলোনা । তখন আব্বাস আলী এসে সোমেনবাবুকে বলেন ," ভাইজান ,সব জাতীর রক্তই তো লাল । দেখেন না মামনির রক্তের সাথে আমার রক্ত মেলে কিনা ।" সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পরীক্ষা হয় -দেখা যায় আব্বাস আলীর রক্তের গ্রুপ আর সোমেনবাবুর মেয়ের রক্তের গ্রুপ এক ।

   ফিরে পায় সোমেনবাবুর মেয়ে জীবন । আর আব্বাস আলী টানা দু'দিন নারর্সিং হোমে  বসে । সে তার মামনিকে না নিয়ে বাড়ি ফিরবে না । সোমেনবাবুর শত অনুরোধও তাকে টলাতে পারেনি ।

     সুজনকে কথাগুলি বলতে বলতে আব্বাস আলী হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকেন ।  সুমন তাকে বলে,"সব জাতীর  মানুষের রক্তই তো লাল । মানুষের বিচার হয় তার মনুষ্যত্ব আর মানবিকতা দিয়ে । চাচা, জাত দেখে তো মানুষের বিচার হয়না । তোমার  রক্ত নিয়ে  তোমার মামনি দেখো ঠিক সুস্থ্য হয়ে যাবে ।তুমি চিন্তা করনা । আব্বাস আলী দু'হাত উপরে তুলে তার খোদাতালার কাছে তার মামনির জন্য মোনাজাত করতে লাগে ।

@নন্দা  12-7-17  1-20AM