ভালো কথাগুলিই ভাবি
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
বিয়ের পর বারটা বছর কেটে গেলেও অতসী ও সুনীলের সংসার আলো করে কোন সন্তান না আসায় তারা শেষ পর্যন্ত একটা পুত্রসন্তান দত্তক নেয় ।প্রাইভেট কোম্পানীর চাকরী সুনীল বেশ মোটা অঙ্কের টাকা মাস গেলে হাতে পায় ।
অতসীর হাতে ছিলো এক সময় প্রচুর সময় ।এখন সে রাতে ঘুমানোর সময়টুকুও পায়না ।ছোট্ট নীল সারাটারাত কাঁদে ।মাঝে মাঝেই তাকে ফিডিং বোতলে পাতলা দুধ করে খাওয়াতে হয় ।দুধের শিশু ,তিনমাস মাত্র বয়স ।যদিও ডক্টর বলেছেন , রাত দশটার পর কৌটার দুধ আর দেবেননা ; কিণ্তু কি করবে অতসী ?তার আদরের নীল খিদেতে যে কাঁদতেই থাকে ।সব সময় ফ্লাক্সে জল ফোটানোই থাকে ।ঘড়ি ধরে কুড়ি মিনিট করে ফিডিংবোতল ,চামচ ,বাটি ফুটতে থাকে ।আবার জলও ঠিক তাই ।
সকালে সুনীলের অফিস থাকে ।নীল যেদিন সারারাত কাঁদে সেদিন জোর করে অতসী সুনীলকে অন্যঘরে ঘুমাতে পাঠায় । অনিচ্ছা সর্ত্বেও সুনীল যেতে বাধ্য হয় । আস্তে আস্তে দিন গড়িয়ে যেতে থাকে । নীল যেদিন প্রথম মা বলে অতসীকে ডাকে -অতসী সেদিন আনন্দে আত্মহারা ! সুনীল অফিস থেকে ফিরবার সাথে সাথেই দরজা খুলেই তার এই খুশির খবরটা দেয় । সুনীলও খুব খুশি হয় । সে হাত ,মুখ ধুয়েই নীলকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে বলে ,"কিরে আমায় কবে বাবা বলে ডাকবি?" অতসী তার ছেলের দিকে তাঁকিয়ে বলে ,"দেখলি তো নীল তোর বাবা কত হিংসুটে !"
নীলের ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে সারা ঘরময় দৌড়ত্ব , মাঝে মাঝে কোন জিনিস ভেঙ্গে ফেলা -দিনগুলি যেন ঝড়ের গতিতে শেষ হয়ে গেলো । মাধ্যমিক ,উচ্চমাধমিক , গ্রাজুয়েশান কমপ্লিট করেই নীল এস.এস.সি. তে বসে ব্যাঙ্কে চাকরী পেয়ে যায় । ঠিক তার দুমাসের মাথায় সুনীল স্ট্রোকে মারা যান ! এ সময় অফিস ছাড়া যেটুকু সময় নীল বাড়িতে থাকতো সে তার মায়ের কাছে কাছেই থাকতো ।
এখন অতসীর বয়স প্রায় সত্তর বছর ।চোখে খুব একটা ভালো দেখেননা, কানেও কম শোনেন । বৃদ্ধাশ্রমের অনেকের মধ্যে তিনিও একজন ! নীলের বিয়ের কয়েকমাস যেতে না যেতেই অতসীর অনেক দোষত্রুটির কথা নীলের কানে উঠতে উঠতে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো যে নীল তার মাকে আর সহ্যই করতে পারতোনা । অধিকাংশ সময়ই অতসী চুপ করেই থাকতেন । কিণ্তু এক হাতেও যে তালি বাজানো সম্ভব নীল এবং তার বৌ সেটা প্রমাণ করেই ছাড়লো । স্বইচ্ছাই অতসী তাদের বাড়িটি লিখে দেন , কারন তার মনে হয়েছিলো বাড়িটি লিখে দিলে হয়তো অশান্তির হাত থেকে রেহাই পাবেন । কিণ্তু তার ধারনা ভুল প্রমাণ করে ছেলে, বৌ তার ঠিকানা করে দিলো বৃদ্ধাশ্রম ।
অতসী কোন আপত্তিই করেননি । আর করলেও বা শুনতো কে ? অতসী শেষ জীবনে একটু স্বস্তি চেয়েছিলেন ;জীবনের প্রথম থেকে ভাবলে তার সবকিছুই কেমন গুলিয়ে যায় ! মাঝে মাঝে মনের কোণে উঁকি দেয় একটি প্রশ্ন -নীলের গর্ভধারিণী হলেও কি নীল তার সাথে এইরূপ আচরণ করতে পারতো ? পরক্ষণেই ভাবেন হয়তো এর থেকেও খারাপ কিছু হতে পারতো ! মনকে প্রবোধ দেন এই বলে আর ক'টা দিনই বা বাঁচবো ? একসময় এই নীলকে বুকে জড়িয়েই তো অনেক সুখের সময় কেটেছে । সেগুলি তো মিথ্যা ছিলোনা ।আজকের কথাগুলি না ভেবে সেগুলিই ভাবি আর সেগুলি ভাবতে ভাবতেই জীবনের বাকী দিনগুলি কাটিয়ে দিই ।
@নন্দা 1-11-17
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
বিয়ের পর বারটা বছর কেটে গেলেও অতসী ও সুনীলের সংসার আলো করে কোন সন্তান না আসায় তারা শেষ পর্যন্ত একটা পুত্রসন্তান দত্তক নেয় ।প্রাইভেট কোম্পানীর চাকরী সুনীল বেশ মোটা অঙ্কের টাকা মাস গেলে হাতে পায় ।
অতসীর হাতে ছিলো এক সময় প্রচুর সময় ।এখন সে রাতে ঘুমানোর সময়টুকুও পায়না ।ছোট্ট নীল সারাটারাত কাঁদে ।মাঝে মাঝেই তাকে ফিডিং বোতলে পাতলা দুধ করে খাওয়াতে হয় ।দুধের শিশু ,তিনমাস মাত্র বয়স ।যদিও ডক্টর বলেছেন , রাত দশটার পর কৌটার দুধ আর দেবেননা ; কিণ্তু কি করবে অতসী ?তার আদরের নীল খিদেতে যে কাঁদতেই থাকে ।সব সময় ফ্লাক্সে জল ফোটানোই থাকে ।ঘড়ি ধরে কুড়ি মিনিট করে ফিডিংবোতল ,চামচ ,বাটি ফুটতে থাকে ।আবার জলও ঠিক তাই ।
সকালে সুনীলের অফিস থাকে ।নীল যেদিন সারারাত কাঁদে সেদিন জোর করে অতসী সুনীলকে অন্যঘরে ঘুমাতে পাঠায় । অনিচ্ছা সর্ত্বেও সুনীল যেতে বাধ্য হয় । আস্তে আস্তে দিন গড়িয়ে যেতে থাকে । নীল যেদিন প্রথম মা বলে অতসীকে ডাকে -অতসী সেদিন আনন্দে আত্মহারা ! সুনীল অফিস থেকে ফিরবার সাথে সাথেই দরজা খুলেই তার এই খুশির খবরটা দেয় । সুনীলও খুব খুশি হয় । সে হাত ,মুখ ধুয়েই নীলকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে বলে ,"কিরে আমায় কবে বাবা বলে ডাকবি?" অতসী তার ছেলের দিকে তাঁকিয়ে বলে ,"দেখলি তো নীল তোর বাবা কত হিংসুটে !"
নীলের ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে সারা ঘরময় দৌড়ত্ব , মাঝে মাঝে কোন জিনিস ভেঙ্গে ফেলা -দিনগুলি যেন ঝড়ের গতিতে শেষ হয়ে গেলো । মাধ্যমিক ,উচ্চমাধমিক , গ্রাজুয়েশান কমপ্লিট করেই নীল এস.এস.সি. তে বসে ব্যাঙ্কে চাকরী পেয়ে যায় । ঠিক তার দুমাসের মাথায় সুনীল স্ট্রোকে মারা যান ! এ সময় অফিস ছাড়া যেটুকু সময় নীল বাড়িতে থাকতো সে তার মায়ের কাছে কাছেই থাকতো ।
এখন অতসীর বয়স প্রায় সত্তর বছর ।চোখে খুব একটা ভালো দেখেননা, কানেও কম শোনেন । বৃদ্ধাশ্রমের অনেকের মধ্যে তিনিও একজন ! নীলের বিয়ের কয়েকমাস যেতে না যেতেই অতসীর অনেক দোষত্রুটির কথা নীলের কানে উঠতে উঠতে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো যে নীল তার মাকে আর সহ্যই করতে পারতোনা । অধিকাংশ সময়ই অতসী চুপ করেই থাকতেন । কিণ্তু এক হাতেও যে তালি বাজানো সম্ভব নীল এবং তার বৌ সেটা প্রমাণ করেই ছাড়লো । স্বইচ্ছাই অতসী তাদের বাড়িটি লিখে দেন , কারন তার মনে হয়েছিলো বাড়িটি লিখে দিলে হয়তো অশান্তির হাত থেকে রেহাই পাবেন । কিণ্তু তার ধারনা ভুল প্রমাণ করে ছেলে, বৌ তার ঠিকানা করে দিলো বৃদ্ধাশ্রম ।
অতসী কোন আপত্তিই করেননি । আর করলেও বা শুনতো কে ? অতসী শেষ জীবনে একটু স্বস্তি চেয়েছিলেন ;জীবনের প্রথম থেকে ভাবলে তার সবকিছুই কেমন গুলিয়ে যায় ! মাঝে মাঝে মনের কোণে উঁকি দেয় একটি প্রশ্ন -নীলের গর্ভধারিণী হলেও কি নীল তার সাথে এইরূপ আচরণ করতে পারতো ? পরক্ষণেই ভাবেন হয়তো এর থেকেও খারাপ কিছু হতে পারতো ! মনকে প্রবোধ দেন এই বলে আর ক'টা দিনই বা বাঁচবো ? একসময় এই নীলকে বুকে জড়িয়েই তো অনেক সুখের সময় কেটেছে । সেগুলি তো মিথ্যা ছিলোনা ।আজকের কথাগুলি না ভেবে সেগুলিই ভাবি আর সেগুলি ভাবতে ভাবতেই জীবনের বাকী দিনগুলি কাটিয়ে দিই ।
@নন্দা 1-11-17
No comments:
Post a Comment