সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
শিক্ষিত ,সুন্দরী মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে হওয়া সত্বেও এইরূপ একটা পরিবারে বৌ হয়ে আসবে ছন্দা কোনোদিনও ভাবেনি । তবু ভাগ্যকে সে মেনে নিয়ে মানিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে । সম্ভব করতে পেরেছে বেশ কয়েকটা বছর পরে । বাড়িতে ঢুকেই প্রথম যেটা সে টের পেয়েছিলো তা হোল উপার্জন একমাত্র তার স্বামী করে বাকী তিন ভাই কিছুই করেনা । ছোটটি তখনও পড়াশুনা করছে । মেঝটি গ্রাজুয়েশান কমপ্লিট করে আড্ডাবাজ । সেঝটি
উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে পড়ার পাট চুকিয়েছে । স্বামী তার নিরীহ গোবেচারা ! সংসার চালাতে যেয়ে নাজেহাল ! সামান্য রাজ্য সরকারী কর্মচারী বীরেশ এই সংসারের জন্য ধার দেনায় তলানো । অবশ্য এক দিনেই ছন্দা এটা বুঝতে পারেনি । এর জন্য তাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ।
বছর খানেকের মধ্যেই বীরেশের বন্ধুদের অনেকেরই সাথে ছন্দারও বন্ধুত্ব হয়ে যায় । তাদের কাছ থেকেই ছন্দা এসব জানতে পারে । শুরু হয় ছন্দার লড়াই ।
প্রথম প্রথম স্বামী ,শ্বাশুড়ীর আপত্তি থাকলেও পরে তারা মত দেন ছন্দাকে বাড়িতেই টিউশনি করার । সকাল ,সন্ধ্যায় ছাত্র পড়িয়ে মাসের শেষে বেশ কয়েক হাজার টাকা সে তার শ্বাশুড়ী মায়ের হাতে তুলে দিতে লাগলো । বীরেশকে জানালো কিছু কিছু করে তার ধারের টাকা যাতে সে শোধ করতে লাগে । বেশ কয়েক মাস এভাবে চলার পর শ্বাশুড়ী নিজেই তার সংসারের চাবীকাঠি তার বৌয়ের হাতে দিয়ে দিলেন । এতে সুবিধা হোল ছন্দার বীরেশের মাইনের টাকাটা হাতে পাওয়ার পর সে তার থেকে একটু মোটা অংকের টাকা ধার শোধ করার জন্য বীরেশের হাতে তুলে দিতে পারতো । দু'বছরের মধ্যে সব ধার এভাবেই ছন্দার সহযোগিতায় বীরেশ শোধ করতে সক্ষম হয় ।
অন্যদিকে সে মেঝদেওর টিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে একটা কমপিউটার সেন্টারে ছোট একটা কোর্স করায় ,ঈশ্বরের অপার কৃপায় সে সামান্য মাইনের এক চাকরীও জুটিয়ে ফেলে । সেঝটিকে অনেক বুঝিয়েও কোন ফল পায়না । অবশেষে নিজের পরিচিত একটা বড় কাপড়ের দোকানে অনেক কষ্টে সেলস ম্যানের কাজ জুঠিয়ে দেয় । সংসারের অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয় । পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় -সংসারের সব ব্যাপারেই বৃদ্ধা শোভাদেবী ছন্দার উপরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েন । কোন ব্যপারে মতামতের দরকার পড়লে তা ছন্দার উপরেই ন্যস্ত হয় ।
ছোট দেওরটির পড়ার ব্যপারটা ছন্দা দেখতো , মাথাটাও তার খুব ভালো ,সঠিক গাইড পাওয়াতে সে স্টার মার্কস নিয়ে মাধ্যমিক আর প্রথম বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরই ছন্দা তাকে পলিটেকনিকে বসায় । এখন সে ইঞ্জিনিয়ার , মোটা মাইনের চাকুরে ।
অভাব আর সংসারের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেনা । বৌদি সকলের প্রাণ ! বৌদির কথা সকলের কাছে যেন বেদবাক্য ! শোভাদেবীও সব কিছু ছন্দার উপর ছেড়ে দিয়ে ঠাকুর সেবায় ব্যস্ত ।
সময় এগিয়ে চলে ঝড়ের গতিতে । মেঝদেওরের আয় বাড়ার সাথে সাথেই ছন্দা বাড়ির সকলের মত নিয়ে নিজে পছন্দ করে তার বিয়ে দেয় । হাঁড়িও তাদের আলাদা করে দেয় নিজে থেকে মায়ের মত নিয়েই । তার বক্তব্য ,এক হাঁড়িতে থাকতে গেলে ঝামেলা হবেই ,তার থেকে এক বাড়িতে থাকি সবাই একসাথে হাঁড়ি আলাদা থাক । শোভাদেবী কথাটাই সম্মতি জানিয়েছেন ছন্দা নিজেই সব কেনাকাটা করে এনেছে । ছোট বোনকে হাতে ধরে রান্না শিখিয়েছে । ভালো ,মন্দ যাই রান্না করুকনা কেন ছন্দা তার জা আর দেওরকে না দিয়ে খায়না । নামেই হাঁড়ি আলাদা ।
শোভাদেবীর শেষ সময়ে ছন্দাকে ডেকে তিনি বলেন , "বড় বৌমা , আগের জনমে অনেক পুর্ণির ফলে তোমাকে আমি ছেলের বৌ হিসাবে পেয়েছি । পরের জন্মেও আমি তোমাকেই ছেলের বৌ হিসাবে চাই । মেয়ে হিসাবে নয় , তাহলে তো আমার লক্ষ্মী আমায় ছেড়ে চলে যাবে । তুমি প্রমাণ করে দিয়েছো ঘরের বৌয়ের গুণেই সংসারে সুখ , সমৃদ্ধি বিরাজ করে । জম্ম জম্মান্তরে আমি তোমাকেই আমার ঘরের লক্ষ্মী হিসাবে চাই ।
@ নন্দা 18-7-17 1 AM
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
শিক্ষিত ,সুন্দরী মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে হওয়া সত্বেও এইরূপ একটা পরিবারে বৌ হয়ে আসবে ছন্দা কোনোদিনও ভাবেনি । তবু ভাগ্যকে সে মেনে নিয়ে মানিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে । সম্ভব করতে পেরেছে বেশ কয়েকটা বছর পরে । বাড়িতে ঢুকেই প্রথম যেটা সে টের পেয়েছিলো তা হোল উপার্জন একমাত্র তার স্বামী করে বাকী তিন ভাই কিছুই করেনা । ছোটটি তখনও পড়াশুনা করছে । মেঝটি গ্রাজুয়েশান কমপ্লিট করে আড্ডাবাজ । সেঝটি
উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে পড়ার পাট চুকিয়েছে । স্বামী তার নিরীহ গোবেচারা ! সংসার চালাতে যেয়ে নাজেহাল ! সামান্য রাজ্য সরকারী কর্মচারী বীরেশ এই সংসারের জন্য ধার দেনায় তলানো । অবশ্য এক দিনেই ছন্দা এটা বুঝতে পারেনি । এর জন্য তাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ।
বছর খানেকের মধ্যেই বীরেশের বন্ধুদের অনেকেরই সাথে ছন্দারও বন্ধুত্ব হয়ে যায় । তাদের কাছ থেকেই ছন্দা এসব জানতে পারে । শুরু হয় ছন্দার লড়াই ।
প্রথম প্রথম স্বামী ,শ্বাশুড়ীর আপত্তি থাকলেও পরে তারা মত দেন ছন্দাকে বাড়িতেই টিউশনি করার । সকাল ,সন্ধ্যায় ছাত্র পড়িয়ে মাসের শেষে বেশ কয়েক হাজার টাকা সে তার শ্বাশুড়ী মায়ের হাতে তুলে দিতে লাগলো । বীরেশকে জানালো কিছু কিছু করে তার ধারের টাকা যাতে সে শোধ করতে লাগে । বেশ কয়েক মাস এভাবে চলার পর শ্বাশুড়ী নিজেই তার সংসারের চাবীকাঠি তার বৌয়ের হাতে দিয়ে দিলেন । এতে সুবিধা হোল ছন্দার বীরেশের মাইনের টাকাটা হাতে পাওয়ার পর সে তার থেকে একটু মোটা অংকের টাকা ধার শোধ করার জন্য বীরেশের হাতে তুলে দিতে পারতো । দু'বছরের মধ্যে সব ধার এভাবেই ছন্দার সহযোগিতায় বীরেশ শোধ করতে সক্ষম হয় ।
অন্যদিকে সে মেঝদেওর টিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে একটা কমপিউটার সেন্টারে ছোট একটা কোর্স করায় ,ঈশ্বরের অপার কৃপায় সে সামান্য মাইনের এক চাকরীও জুটিয়ে ফেলে । সেঝটিকে অনেক বুঝিয়েও কোন ফল পায়না । অবশেষে নিজের পরিচিত একটা বড় কাপড়ের দোকানে অনেক কষ্টে সেলস ম্যানের কাজ জুঠিয়ে দেয় । সংসারের অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয় । পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় -সংসারের সব ব্যাপারেই বৃদ্ধা শোভাদেবী ছন্দার উপরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েন । কোন ব্যপারে মতামতের দরকার পড়লে তা ছন্দার উপরেই ন্যস্ত হয় ।
ছোট দেওরটির পড়ার ব্যপারটা ছন্দা দেখতো , মাথাটাও তার খুব ভালো ,সঠিক গাইড পাওয়াতে সে স্টার মার্কস নিয়ে মাধ্যমিক আর প্রথম বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরই ছন্দা তাকে পলিটেকনিকে বসায় । এখন সে ইঞ্জিনিয়ার , মোটা মাইনের চাকুরে ।
অভাব আর সংসারের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেনা । বৌদি সকলের প্রাণ ! বৌদির কথা সকলের কাছে যেন বেদবাক্য ! শোভাদেবীও সব কিছু ছন্দার উপর ছেড়ে দিয়ে ঠাকুর সেবায় ব্যস্ত ।
সময় এগিয়ে চলে ঝড়ের গতিতে । মেঝদেওরের আয় বাড়ার সাথে সাথেই ছন্দা বাড়ির সকলের মত নিয়ে নিজে পছন্দ করে তার বিয়ে দেয় । হাঁড়িও তাদের আলাদা করে দেয় নিজে থেকে মায়ের মত নিয়েই । তার বক্তব্য ,এক হাঁড়িতে থাকতে গেলে ঝামেলা হবেই ,তার থেকে এক বাড়িতে থাকি সবাই একসাথে হাঁড়ি আলাদা থাক । শোভাদেবী কথাটাই সম্মতি জানিয়েছেন ছন্দা নিজেই সব কেনাকাটা করে এনেছে । ছোট বোনকে হাতে ধরে রান্না শিখিয়েছে । ভালো ,মন্দ যাই রান্না করুকনা কেন ছন্দা তার জা আর দেওরকে না দিয়ে খায়না । নামেই হাঁড়ি আলাদা ।
শোভাদেবীর শেষ সময়ে ছন্দাকে ডেকে তিনি বলেন , "বড় বৌমা , আগের জনমে অনেক পুর্ণির ফলে তোমাকে আমি ছেলের বৌ হিসাবে পেয়েছি । পরের জন্মেও আমি তোমাকেই ছেলের বৌ হিসাবে চাই । মেয়ে হিসাবে নয় , তাহলে তো আমার লক্ষ্মী আমায় ছেড়ে চলে যাবে । তুমি প্রমাণ করে দিয়েছো ঘরের বৌয়ের গুণেই সংসারে সুখ , সমৃদ্ধি বিরাজ করে । জম্ম জম্মান্তরে আমি তোমাকেই আমার ঘরের লক্ষ্মী হিসাবে চাই ।
@ নন্দা 18-7-17 1 AM
No comments:
Post a Comment