Saturday, December 31, 2016

"অনুকবিতা"
  আমরা বেঁচে আছি
            নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
ঘর নেই ,বাড়ি নেই -
আছি ফুটপথে  ,
নুতন বছর বলে কিছু নেই ,
থাকি পথে ঘাটে |
অনাহারে থাকি সব ,
ক্ষুদার জ্বালায় কাঁদি ,
শীতের পোশাক বলে কিছু নেই ,
স্বপ্ন  ছাড়াই বাঁচি |
নন্দা   31-12-16  

Thursday, December 29, 2016

সময় নিলো না
                  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
আমি তো গড়তে চেয়েছিলাম ,
তবে কেন সব ,ভেঙেচুরে  গেলো ?
ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা চেয়েছিলাম ,
সবকিছু কেন তবে ঘৃনায় পূর্ণ হোলো ?
ভুলবুঝাবুঝি ,মানাভিমান ,
জড়ো হতে হতে পাহাড় সমান হোল !
কেউ পারলাম না টপকাতে তাকে ,
ভেঙেচুরে খানখান হয়ে গেলো |
একই ছাদের তলে দু'টি প্রাণী ,
ঠিক যেন অচেনা প্রতিবেশী !
সব কিছু কেমন এলোমেলো আজ ,
কথা নেই কারও ভাবি যেন বেশি |
হয়তো বিশ্বাসে ভুল কিছু ছিলো ,
তাই ভুলের মাসুল গুনতে হোলো !
নন্দা   29.12.16  12-5AM.



Wednesday, December 28, 2016

জীবন মানেই কি পরাজয়
                   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
বিচিত্র মোদের জীবনের রং ,
লাল ,সাদা ,নীল ,
অন্ধকারের পরেই যেমন -
আসে আলোয় ভরা দিন |
শীত ,গ্রীষ্ম ,বর্ষা যেমন -
ঘুরে ,ঘুরে আসে ,
জীবনের রং ও পাল্টে যায় ,
কোনো এক মাসে |
শিশুকাল কাটে একভাবে ,
কৈশোর আনন্দময় ,
যৌবনদ্বারে পৌঁছে বুঝি ,
জীবনটা খুব সহজ নয় |
সংসার জীবনের জটিলতায় ,
মাঝে ,মাঝে মন ভেঙ্গে যায় ,
সব কিছু থেকেও মনেহয় ,
জীবনের মানে কিছুই নাই |
তবুও বাঁচার অদম্য ইচ্ছা ,
সংসারেরই মায়া মমতায় ,
নিজ হাতে গড়া সংসারেই ,
 মানতে হয় অন্তিমলগ্নে পরাজয় |
নন্দা    27.12.16   12-30am.

Monday, December 26, 2016

উত্তর দাও
               নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
কেনো গো বিধাতা ,
          তুমি এমন কেন ?
শ্রদ্ধা ,ভালোবাসার মাঝে ,
            জটিলতা আনো ?
আজন্ম লালিত শ্রদ্ধার আসন ,
           হয়ে যায় টলমলে !
বুকের মাঝে দগ্ধ করো -
           ছাঁই করে দেওয়া অনলে !
তুমি তো দেখো ,
              তুমিই গড়ে দাও -
কেন তবে তুমি ?
            নিজেই ভেঙ্গে সব -
তছনছ করে দাও !
তোমার সৃষ্টি সকল কিছু ,
          সম্পর্কগুলিও বাইরে নয় ,
তবুও কেন মেনে নিতে হয় ?
         সম্পর্কের পরাজয় !
নন্দা    26.12.16  6-20পাম

Friday, December 23, 2016

শুণ্য জীবন
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
গানের খাতায় ভর্তি শুধু ,
    স্বরলিপি লেখা ,
সুর কণ্ঠে নেই যে আমার ,
    পাইনা সুরের দেখা |
তুমি ছিলে ,সুর ছিলো ,
    ছিলো সাথে গান ,
বেহিসাবী হয়ে আজ -
     শুণ্য হলো জীবন !
আছে যত মনের ক্ষত ,
    সারবে না তা কোনো কালে ,
সুরের মাঝেই ডুবতে গিয়ে -
    হারালাম সব অকালে !
নন্দা   23.12.16  11pm.
গ্রাম্য জীবন
             নন্দা মুখাৰ্জী রায় চৌধুরী
শীতের সকালে হিমের পরশ ,
    শিশিরে ভেজা ঘাস -
সোনালী রোদের উষ্ণতা নিয়ে ,
    চাষী করে মাঠের কাজ |
মাটির উঠানে করে গর্ত ,
    দুই মুখ করে চুলা ,
খেজুঁর ,তালের রস জ্বালে ,
    হাসি ,আনন্দে গল্প বলা |
বাগান কুড়িয়ে জ্বালানী আনা ,
    উনুনের পাশে জমা করে রাখা ,
জমি থেকে তুলে টাটকা সব্জী ,
    খায় সবে মিলে জমিয়ে কব্জি |
সন্ধ্যা হলে উঠানের মাঝে ,
    আগুন জ্বেলে উষ্ণতা নেওয়া ,
গ্রামের সরল জীবন যাত্রা -
    দারিদ্রের সাথে জীবন পাড়ি দেওয়া |
নন্দা   21.12 .16   6.15 PM.

Wednesday, December 21, 2016

তোমার উপহার
                 নন্দা মুখাৰ্জী রায় চৌধুরী
স্বপ্ন যখন ভেঙ্গেই গেলো ,
তাকাবো  কেন পিছু ?
বাঁচার রাস্তা আছে অনেক -
খুঁজে নেবো কিছু |
অনেক আশা ছিলো মনে ,
সব অচেনা মনের সনে ,
নুতন করে রচবো আশা ,
খুঁজবো নতুন ভালোবাসা |
মাথা তুলেই বাঁচবো আমি ,
মানবো নাতো হার ,
তোর আঘাত মোর জীবনে ,
ভালোভাবে বাঁচার উপহার |
এখনও আমি দেখি স্বপন ,
তবে তোকে নিয়ে নয় !
খুঁজবো আমি এমন আপন ,
যাকে বিশ্বাস করা যায় |
নন্দা   17.12.16  9-30

Saturday, December 17, 2016


আমরা সরল
              নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
তোমরা থাকো অট্টালিকায় ,
    আমরা ফুটপাথে ,
তোমরা কিন্তু বোঝো নাকো -
     শীত পেলে কেমন লাগে |
কপাল নিয়ে জন্মেছ তোমরা ,
    আমাদের কপাল মন্দ ,
একই ভাবেই এসেছি আমরা ,
    তোমাদের - জীবনভরা আনন্দ |
তোমাদের আছে অনেক টাকা ,
    দামী গাড়ি ,বাড়ি ,
কোনোকিছুই নেই যে মোদের ,
    দারিদ্রের সাথেই জীবন দিই পাড়ি |
আমাদের আছে এক অমূল্য ধন ,
    যা তোমাদের নেই !
মনটা মোদের সহজ ,সরল ,
    কালোটাকার অহংকারে মোটেই নয় গরল |
নন্দা   ১৭.১২.১৬ রাত ১০-২০ ,,,

মন
         নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
মন , এমন একটা বস্তু ,
যা হাসতে জানে ,কাঁদতে জানে ,
বেদনা লুকিয়ে রাখতে জানে ,
কিন্তু সে বোবা -
কথা বলতে জানে না |
অনেক সময় সেও -
তার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে ,
পারিপার্শ্বিক নানান ঘটনাপ্রবাহের কারণে ,
তখন মন যা সায় দেয়না ,
এমন কোনো কাজ -
করতেও বাধ্য হতে হয় |
এই মন-ই আবেগে ভাসে ,
অপমান ,অপবাদে কাঁদে ,
     সব- ই নীরবে ,
মনের খবর অন্য কেউ জানে না !
নন্দা   13.11.16   2AM.

Thursday, December 15, 2016

ঐক্য ,দৃঢ়তা ,বিশ্বাস আর ভালোবাসায় একটা পরিবার গড়ে ওঠে | ছোটখাটো দুঃখ ,কষ্ট আর ভুলবুঝাবুঝিগুলিকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে নিলে সমস্যাটা বিশেষ আকার নেয়না |
বয়সের ভারে মানুষ অনেক কিছু ভুলে যায় |
'ভুলে গেছি'- বলতে অনেক সময় ইগোতে বাঁধে |
এতে সম্পর্ক আর ভালোবাসায় ফাঁটল ধরে |
তৃতীয় পক্ষ যদি ব্যাপারটা নিয়ে জলঘোলা না করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে ,
তাহলে শুধুমাত্র  একটা 'সরি' -তেই সমাধান হয়ে যায় | তানাহলে শত চেষ্টা করেও সেই আগের সম্পর্কটা আর ফিরে আসে না |
ভালো থেকো বন্ধুরা ,,শুভ রাত্রি ,,,,,

Wednesday, December 14, 2016


"ভুতুড়ে কান্ড" ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী ) ^^^^^^^^^^^^^^^^^
  বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে কলেজে পড়াকালীন সময়ে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্যহীন ভাবেই বেড়িয়ে পড়লাম | সবাই মিলে প্রথমে আসলাম হুগলি | সেখানে আমার এক কাকার বাড়ি আছে | বাড়িটা একটু ভিতরের দিকে | পাঁচজন যেয়ে সেখানে উপস্থিত হলাম | নানান ধরণের গল্প ,গুজব হতে হতে আমার খুড়তুতো ভাই বললো ওখানেই একটি রাজবাড়ী আছে ; যেখানে শুধুমাত্র  ভুতেরই বাস | অনেকেই নাকি নানান ভাবে তাদের অস্তিত্ব টের পেয়েছেন | সকলেরই বয়স কম , প্রত্যেকেই নিজেদের অসীম সাহসী ভাবি | ঠিক করলাম সকালেই ওই রাজবাড়িতে যাবো |    উঠতে উঠতে একটু বেলায় হয়ে গেলো | কাকিমা বললেন স্নান , খাওয়া ,দাওয়া করে যাতে আমরা বেড়োই | এ সব সারতে সারতে আমাদের প্রায় বারোটা বেজে গেলো | খুড়তুতো ভাইটি আমাদের সাথে গেলো না , পথনির্দেশটা দিয়ে দিলো | অনেকটা পথ পেড়িয়ে আমরা এসে রাজবাড়ীর সিংহদুয়ারে পৌঁছলাম | বিশাল লোহার গেট | খুব বড়ও তালের মতো এক তালা ঝুলছে | ঢোকার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছি না , এমনকি আশেপাশেও কাউকেই দেখতে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না | খুব মন খারাপ নিয়ে ওখানে দাঁড়িয়েই সকলে নানান পোজে ছবি তুলতে লাগলাম | হঠ্যাৎ আমাদের সকলকে অবাক করে দিয়ে বেশ মোটা কালো মতো একজন লোক সেখানে এসে হাজির হলেন | ভিতরে ঢোকার চাবি কোথায় পাবো তার কাছে জানতে ছায়ায় তিনি অত্যন্ত মিহি শুরে আমাদের বললেন ,"ওটা আমার কাছেই থাকে |" খুশিতে ডগমগ সব গেটটা খুলে দিতে বললাম | গেট খুলতে খুলতেই উনি আমাদের সতর্ক করে দিলেন যাতে পুরো রাজবাড়ী আমরা বাইরে থেকেই দেখি এবং সন্ধ্যার আগেই যেনো ওই রাজবাড়ী ছেড়ে বেড়িয়ে আসি | পরে রাতে এসে উনি তালা দিয়ে যাবেন | আমরা সম্মত হয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম | রাজবাড়ীর ভিতরে কিছু কিছু জায়গা আগাছায় পূর্ণ | আবার অবাক করে দেওয়ার মতো কিছু জায়গা দেখলে মনেহয় সেখানে যেন নিত্য লোকের আনাগোনা | বিশেষত যে সব জায়গা গুলিতে বসবার মতো ব্যবস্থা রয়েছে |  মনের আনন্দে সকলে সবকিছু ঘুরে দেখছি | হঠ্যাৎ খেয়াল হলো আবার ছবি তোলার | মোবাইল ফোনের তখনও চল হয়নি | ছবি তোলার জন্য আমার দামী ক্যামেরা ইয়াসিকা | পোজ নিয়ে সকলে দাঁড়িয়ে পড়লো | আমি ক্যামেরার পিছনে | কিন্তু একি ? চোখের সামনে যে মানুষগুলিকে দেখতে পাচ্ছি ,ক্যামেরার লেন্সে তাদের দেখতে পাচ্ছি না কেন ? শুধুই কালো আর কালো | সাধের ক্যামেরা আমার নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে নিয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো | নষ্ট ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে আবার ঘুরতে লাগলাম | এত বড় রাজবাড়ী যেন শেষই হয়নি ঘোরা | সন্ধ্যা হয় হয় ; এমন সময় ওই লোকের কথা মনে পড়লো | বেড়িয়ে আসতে হবে | পুরোটা ঘুরে দেখা হোলোনা বলে মনটা সকলের খুব খারাপ হয়ে গেলো | আমরা বাইরে বেড়োনোর জন্য পিছন ঘুরে হাটতে লাগলাম | কিন্তু কোথায় বাইরে বেড়োনোর পথ ? যে পথ দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম সে পথই তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না | হঠ্যাৎ কানে এলো ঘুঙঘুর এর আওয়াজ | অতি বড় সাহসী আমি -আমার বুকের মধ্যেও ধুকধুকানি শুরু হোলো | হঠাৎ করেই আমাদের সামনে একজন মহিলা এসে উপস্থিত হলেন | তিনি বললেন ,"আপনারা এত দেরি করলেন কেন ? ঢোকার আগে আমার স্বামী তো আপনাদের বলেই দিলো সন্ধ্যার আগেই এখান থেকে বেড়িয়ে যেতে | আমার পিছন পিছন তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে আসুন |মহিলার সহায়তায় আমরা রাজ্ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলাম | চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার |কিছুদূর এগিয়ে  তারই মাঝে দেখতে পেলাম একটি ছোট চায়ের দোকান | সেখানে কিছু লোক বসে চা খাচ্ছে ; ওই মানুষগুলির মধ্যে যে আমাদের গেটের তালা খুলে দিয়েছিলেন তিনিও আছেন |আমরা সকলে যেয়ে চায়ের দোকানে চায়ের অর্ডারটা দিয়ে বাইরে বেঞ্চে বসে দাড়োয়ান ভদ্রলোককে  বললাম ,"আপনার স্ত্রী যদি ওই সময় আমাদের কাছে না আসতেন আমরা তো বেড়োতেই পারতাম না | কিন্তু সন্ধ্যার সময় ওখান থেকে ঘুঙঘুরের আওয়াজ কোথা থেকে আসছিলো ?"হঠ্যাৎ চা বিক্রেতা আমাদের দিকে তাঁকিয়ে বললেন ,"আপনারা রাজবাড়িতে গেছিলেন ? আর একটাও কথা ওর কাছে জিজ্ঞেস করবেন না | আপনারা এদিকে উঠে আসুন |" যার সাথে এতক্ষন কথা বলছিলাম মুহূর্তে দেখি সে উধাও | দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম ,"এত তাড়াতাড়ি ভদ্রলোক উঠে কোথায় চলে গেলেন ?"  " উনাকে শুধু আপনারাই দেখতে পারছিলেন এখানে আমরা কেউই তাকে দেখতে পাইনি | উনি মানুষ না | তবে কখনোই কারও ক্ষতি করেন না | কেউ রাজবাড়ী দেখতে আসলে উনি গেট খুলে দেন ; রাত হয়ে গেলে উনার স্ত্রী বাইরে বেড়োনোর পথ দেখিয়েও দেন | দুজনেই ছিলেন রাজার বিশ্বস্ত কর্মচারী | বেঁচে থাকতে তারা যে কাজ করেছেন মরে যেয়ে ভুত হয়েও একই কাজ করে চলেছেন | আর ওই যে ঘুঙঘুরের আওয়াজের কথা বললেন না - সন্ধ্যা হলেই ওখানে মাহফিল বসে | রাজপ্রাসাদের ভিতরে  নানান প্রকারের আলোর রোশনাই, অনেক দূর থেকে সে আলো দেখা গেলেও কাছে গেলে তা ক্রমশ কমতে থাকে | অদ্ভুত একটা গা ছম্ছমে ভাব আসে | যারা দাঁড়োয়ানকে বা তার স্ত্রীকে  একবার দেখেছে পরে তারা আর কখনোই তাকে দেখতে পায় না | কেউ সেখানে গেলে সেদিন দাঁড়োয়ান এখানে আসবেই |" আমরা সকলে হা করে কথাগুলি শুনছিলাম | হঠ্যাৎ আমার বন্ধু বিজন বলে উঠলো , তার মানে আমরা পুরোদিনটা ভুতের সাথেই কাটালাম ?"  "হ্যা আপনারা  রাজপ্রাসাদের কোনো কামরায় ঢোকেননি বলে বেঁচে এসেছেন ; যদি কোনো কামরায় ঢোকার চেষ্টা করতেন তাহলে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারতেন না | ওরা কিন্তু আপনাদের সাথে  সাথেই ছিলেন | ওখানে কেউ ছবি তুলতে গেলে কোনো ছবি উঠে না ,কারণ ওরা সাথে থাকে |
অদ্ভুত ব্যাপার হলো সারাদিন আমরা ভুতের সাথে থেকেও কেউ কোনো ভয় পেলাম না | খুশি হলাম এই ভেবে যাক বাবা ! ক্যামেরাটা তাহলে নষ্ট হয়নি | ভুতের ছবি না উঠুক মানুষের ছবি তো উঠবে !!
""""""
নন্দা  24.9.16

Sunday, December 11, 2016

কেন এমন হয়
              নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
কিছুটা শ্রদ্ধা ,অনেকটা বিশ্বাস ,
এই নিয়ে গড়ে ওঠে ভালোবাসা ,
শুধু প্রেমিক ,প্রেমিকার নয় ,
জীবনে ঘিরে থাকা ,
প্রত্যেকটা মানুষের ক্ষেত্রে |
সব সম্পর্কগুলিই -
কাঁচের মত স্বচ্ছ অথচ ঠুনকো ,
একবার বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে ,
শ্রদ্ধার আসনটা হয়ে যায় টলমলে ,
ভালোবাসাটা তখন কোথায় যেন হারিয়ে যায় ;
যা পড়ে  থাকে -
সেটা শুধু মুখোশপড়া অভিনয় |
হঠ্যাৎ করেই চিরপরিচিত-
মানুষগুলি অচেনা হয়ে যায় ।


নন্দা    11.12.16

Saturday, December 10, 2016

দিলে উপহার
                   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
আমি তো শুধু তোমায় ভালোবেসে ,
  ছেড়েছিলাম মোর ঘর ,
বাবা ,মা আর আপনজন ;
  বুঝতে আমি পারিনি গো ,
তোমার মনের কথা ,
  দুঃখের সাগরে তাঁদের ভাসিয়ে -
দিয়েছি প্রাণে ব্যথা |
তুমি আমায় তুললে এনে ,
  রাজপ্রাসাদ সম বাড়িতে ,
প্রথম রাতটিই কাটালে শুধু ,
  তুমি আমার সাথে |
নিত্য রাতে নুতন সঙ্গী ,
  দিলে ভালোবাসার উপহার -
হারিয়ে গেলো তোমার জন্য ,
  ঘর বাঁধার স্বপ্ন আমার |
ফিরতে আর পারবো নাতো ,
  যেথায় ছিলো বাড়ি -
সারাজীবন থাকতে হবে ,
  আমায় এই বেশ্যাপুরী |

নন্দা    12.11.16   9PM.

Friday, December 9, 2016

কাগজের ফুল
             নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

যদি তুমি ছিঁড়ে গেলে আমার ভালোবাসা ,
দম্কা হওয়ার মত কেন জাগিয়েছিলে আশা ?
ভালোবাসো যদি তুমি দেখতে দাবানল ,
কেন তবে ঝড়ালে আমার চোখে জল |
যে ভালোবাসা দিলো আমায় শুধুই ছলনা ,
কেন তারই লাগি বাজে বুকে শুধু বেদনা ,
ভুলতে চেয়েও কেন তারে ভুলতে পারিনা ,
চোখের জল আমার কেন বাঁধ মানেনা ।
গন্ধ যেটুকু ছিলো ফুলের  ,
নিয়ে  গেলে তুমি ,
কাগজের ফুল হয়ে ,
থাকবো বেঁচে আমি ।
নন্দা  ২৬.১১.১৬   ১-৩০AM

Thursday, December 8, 2016

গান
          নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
অমন করে কাতর স্বরে -
আমায় ডেকো না ,
দূরেই আমি আছি ভালো ,
থাকুক যতই বেদনা ।
যদি আমার ভুবন ,
যায় কালো মেঘে ছেঁয়ে -
তবুও আমি বলবো- বারেবার -
যেখানে আছো তুমি সুখে থাকো ,
তোমার কাছে যাওয়ার নেই যে অধিকার ।
ভুলে যেও সবকিছু ,
তাঁকিয়ো না আর পিছু ,
কখনো আমায় মনে কোরো না ...,
আমায় আর ডেকোনা ... ।
ছেড়েই যদি যেতে হোলো সব অধিকার ,
কি হবে পিছু ডেকে আর ...?
আমায় আর ডেকো না ,
মনে রেখো না ...
  নন্দা ৬.১২.১৬

Monday, December 5, 2016

ভয় পেয়োনা
            নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
জীবনটা খুব কষ্টর ,
বাঁচার রাস্তা অনেক -
আয়ুটা স্বল্প কালের ,
চলার পথটা দীর্ঘ ।
এই বন্ধুর পথে শুধু দরকার ,
একজন প্রকৃত বন্ধুর ;
সুখে,দুঃখে সকল কাজে ,
পরস্পরের বাঁচার লড়াইটাকে-
 যে নিজের ভাববে ।
ভালবাসার মুখোশ পড়ে ,
অনেকেই সামনে আসে ,
কিছু লড়াইয়ের মাঝপথেই -
পালিয়ে যেয়ে অন্যভাবে বাঁচে ।
   যে থেকে যায় -
তাকে পেয়ে বসে একাকিত্বে ,
এই একাকিত্বকে যে জয় কোরতে পারে -
সেই মাথা তুলে জীবনের স্বাদ গ্রহন করে ।
১২.১১.১৬    ৬-৩০ সন্ধ্যা ,,

Sunday, December 4, 2016

রিক্ত
           নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
এখনো তোকে ভূলিনিরে !
রোজ তোর কথা মনে পরে ,
অনেক রাতে হোটেল থেকে,
গান গেয়ে যখন বাড়ি ফিরি ,
গাড়িতে তোর কথায় শুধু ভাবি ,
আমার নিজের গাড়ি নয় ,
হোটেল মালিকের গাড়ি |
আমি এখন অনেক রোজগার করি ,
ছোট বোন দু'টির বিয়ে দিয়েছি ,
ভাইকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করেছি ,
সে ভালো রোজগার করছে দেখে ,
তারও বিয়ে দিলাম |
মাস খানেকের মধ্যেই -
বৌকে নিয়ে আলাদা হয়ে গেলো ;
আমি নাকি চরিত্রহীনা ;
হোটেলে গান করি যে ,
আর কেউ বিশ্বাস করেও না ,
কিন্তু তুই বিশ্বাস কর ,
গান আমি হোটেলে গাই ঠিকই ,
কিন্তু শরীর আমি বিক্রি করিনি |
যেদিন তুই চাকরি পেয়ে এসে -
আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলি ,
আমি তোকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম ,
কারণটাও তুই জানিস ;
তার কয়েকদিন আগেই ,
মায়ের ক্যান্সার ধরা পরে ,
বাবা তো অনেক আগেই -
আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন |
গানের গলাটা আমার ভালো ছিলো ,
তাকেই আশ্রয় করে ,
নিজের জীবনের বিনিময়ে -
ভাইবোনদের মানুষ করে -
তাদের সুখ দিতে চেয়েছিলাম ,
তাই নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়েছিলাম -
তোকে ফিরিয়ে দিয়ে |
মানুষ করতে  হয়তো পারিনি ,
কিন্তু ওদের সুখ দিতে পেরেছি ;
মাকেও অনেক বছর -
বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছিলাম ।
বোনেরা কোনো সম্পর্ক রাখেনি ,
আমি যে হোটেল সিঙ্গার !
শ্বশুড় বাড়ির লোকেরা নিষেধ করেছে !
আমি এখন সম্পুর্ণ একা ,
সব কিছু সবাইকে দিয়ে ,
তোকে ফিরিয়ে দিয়ে আমি নিঃস্ব !!
নন্দা   2.12.16  1.10

Saturday, December 3, 2016


মনে পড়ে
                নন্দা মুখার্জী রায় চেধুরী
 মনে পড়ে তোমার কথা ,
যখন থাকি একলা ঘরে ,
স্মৃতিরা সব ভিড় করে ,
বুকে বাজে না পাওয়ার ব্যথা |
স্বপ্ন দেখা কিশোরবেলা -
আজও আছে অন্তরালে ,
নাইবা পেলাম তোমায় আমি !
নিজের করে কোনো কালে |
একলা যখন থাকি আমি ,
সেই স্বপ্ন রঙ্গিন করি -
নেই সেখানে কোনো বাঁধা ,
থাকনা  জমে বুকে ব্যথা !
শেষ বয়সে ভাবি বসে ,
সারাজীবন দিলাম পাড়ি, শুধুই হেসে ,
বুকের মাঝেই থাকলে ঘুমিয়ে ,
এই বয়সেও দেখি স্বপন, তোমায় নিয়ে |
আর হবেনা মোদের দেখা ,
তোমার ভালোবাসা থাকবে মনে ,
মন যে আমার আজও চায় ,
কিছুটা সময় কাটাতে তোমার সনে |
নন্দা  27.11.16  10.40pm.

Thursday, December 1, 2016

সময়ের সঙ্গী  
              নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
     বেঁচে আছি-
মৃত্যু এখনো কাছে টানেনি তাই !
বাঁচার তাগিদে বেঁচে আছি |
        ভালো আছি-
কেউ জানতে চাইলে হেসে বলছি ,
সত্যিই কি ভালো আছি ?
রোগ ,যন্ত্রনা ,অভাব ,চাহিদা -
সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে আছে !
সময়ের গতি যে থামে না ,
তাই সর্বসঙ্গীকে সঙ্গে নিয়েই ,
এগিয়ে চলেছি মৃত্যুর কাছাকাছি |
যে সময়টা পিছনে ফেলে চলেছি -
সেই সময়টাকেই স্বর্ণযুগ বলছি ,
তখন কি সঙ্গীরা সাথে ছিলোনা ?
আসলে হারিয়ে যাওয়া সবকিছুর,
আমরা কদর করি বেশী !
নন্দা   1.12.16    12.40AM.                


             

Friday, November 25, 2016

"বিরহের রাত কাটে না "( অনু কবিতা )
                    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
বিরহের রাত কাটে  নাগো কাটেনা -
সব কিছু যে ভুলে থাকা যায় না ,
রাত যত গভীর হয় ,
স্মৃতিগুলি জেগে যায় ,
চোখেতে ঘুম যে আসেনা আসেনা ,
জানালারও ফাঁক দিয়ে ,
দেখা যায় চাঁদ একফালি ,
সেও বুঝি বিরহে -
রাত জাগে একাকী ,
ভালোবাসার বিনিময়ে পদাঘাত পেয়েছি ,
স্মৃতিগুলি নিয়ে শুধু ,
আমি বেঁচে রয়েছি |
নন্দা  13.11.16  1.30am

Thursday, November 24, 2016

"শুভ দৃষ্টি"                                  
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী   
রাত পোহালেই বিয়ে | সোমা অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই তার কাকা ,কাকিমাকে বলতে পারলো না ,তার আর অরুনের সম্পর্কের কথা | আর কি করেই বা বলবে ? মা ,বাবা মারা যাওয়ার পর কাকু ,কাকিমা যদি তাঁদের কাছে  সোমাকে না নিয়ে আসতেন তাহলে তো তার কোনো অস্তিত্বই আজ আর থাকতো না | এত বড় অকৃতজ্ঞ সে কি করে হবে ? ভুলেই তো গেছিলো সে অরুনের কথা | অনেক বছর আগে যখন মা ,বাবা দু'জনেই বেঁচে তখন অরুনেরা থাকতো সোমাদের বাড়ির কাছে | কতই বা  বয়স হবে সোমার তখন | নবম শ্রেণীর ছাত্রী সে | বাবার হঠ্যাৎ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর পর মা বছর খানেকের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন | বিছানা ছেড়ে আর ওঠেননি | কাকু ,কাকিমা তখন দেশের বাইরে | ফোন করে অরুনই সোমার কাকুকে জানিয়েছিলো সোমার মায়ের অসুস্থ্যতার কথা ; সেটা সোমার মায়ের নির্দেশেই | লন্ডন থেকে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসা চারটিখানি কথা নয় | দেওরকে ফোন করার দিন সাতেকের মধ্যেই সোমার মা মারা যান | সোমা তখন সম্পূর্ণ একা | অরুনের মায়ের সাথে সোমার মায়ের একটা সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো পাশাপাশি বাস করার সুবাদে | তিনি সোমাকে তার নিজের কাছেই নিয়ে রাখেন , ছেলেকে দিয়ে দুষসংবাদটি সোমার কাকুকে ফোন করে জানিয়ে দেন | সোমার মা মারা যাওয়ার আট ,ন দিন বাদে তার কাকু ,কাকিমা এসে সোমাকে নিয়ে যান | এই ক'দিনে সোমার সাথে অরুনের একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে | সেটা সম্পূর্ণ ভাবেই একটা সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক |সদ্য মা হারা সোমা সব সময় মন খারাপ করে থাকতো বলে অরুন সব সময় চেষ্টা করতো তাকে নানান ধরণের গল্পের মাঝে ডুবিয়ে রাখতে ; যাতে তার কষ্ট কিছুটা অন্তত কমে | সোমার চলে যাওয়ার আগেরদিন অরুন তাকে বলেছিলো ," যেখানেই থাকিনা কেনো - তোমার কথা আমার সারাজীবন মনে থাকবে | আমি ছেলেবেলা থেকেই খুব আশাবাদী মানুষ | পৃথিবীটাতো গোল ; একদিন না একদিন তোমার সাথে আমার আবার দেখা হবেই "|সোমা সে কথার কোনো উত্তর দিয়েছিলো না ; শুধু চলে আসার সময় সকলের সামনে অরুনের দিকে তাঁকিয়ে বলেছিলো ,"আসি" |    এরপর দীর্ঘ দশ বছর পর তাদের দেখা | কাকু রিটায়ার করে লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন | সল্টলেকে একটি সুন্দর ফ্লাট ও কিনেছেন | তাদের একমাত্র ছেলে লন্ডনই থেকে গেছে | তার মেমবৌ কলকাতা আসতে চায়নি | তাই সোমাকে নিয়েই তারা দেশে ফিরে এসেছেন | একদিন সন্ধ্যায় সোমা নিউ মার্কেট থেকে কিছু মার্কেটিং করে ফিরছিলো , হঠ্যাৎ একটি সুদর্শন ছেলে সোমার দিকে এগিয়ে এসে বললো ," আপনাকে খুব চেনা মনে হচ্ছে কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিনা |" সোমার ছেলেটিকে গায়ে পড়া মনে হলো | সে ছেলেটির দিকে কটাক্ষ দৃষ্টিপাত করে বললো ," তাহলে যেদিন মনে পড়বে আর আবার আমার সাথে দেখা হবে সেদিনই বলবেন |" মেয়েটির এরূপ ব্যবহার পাবে অরুন তা বুঝতে পারেনি | সে কোনো কথা না বলে সোমার পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে যায় |   তারপর হঠ্যাৎ একদিন সেই নিদৃষ্ট জায়গাতেই দেখা | প্রথমে সোমাই দেখে অরুনকে | ভাবে অরুন বুঝি তাকে ফলো করছে | সে দ্রুত দোকান থেকে বেড়িয়ে যেতে যায় ; আর ঠিক তখনই সোমাকে অরুনের চোখে পরে | সে সরাসরি সোমাকে প্রশ্ন করে , "আপনার নাম সুমনা না ? ডাক নাম সোমা বাড়ি ছিল বালিগঞ্জে , পরে কাকুর সাথে লন্ডন চলে যাওয়া , কি আমি সব ঠিক বলছিতো ?"  -- হ্যাঁ ,সব কিছু ঠিকঠাক |  কিন্তু আপনি কি করে জানলেন ?--- সেটা তো ছেলেবেলা থেকেই জানি | মাঝে মনে করতে একটু সময় লেগেছে | আসলে কি জানেন ? পৃথিবীটা তো গোল ,আমরা ঠিক ঘুরতে ঘুরতেই পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে যাই |         অনেকদিন আগের কথা | কিন্তু এই কথাটাই সোমার মনে পড়েছে বারবার | ভেবেছেও একদিন না একদিন হয়তো অরুনের সাথে হয়তো দেখা হবে | কলকাতায় এসে অনেক পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে | আজ অরুনের সাথে দেখা হয়ে সোমার এই প্রথম মনে হলো মনের কোনো একটি জায়গায় যেন অরুনের জন্য একটু জায়গা ছিলো ; যেটা হয়তো তার নিজেরও অজান্তেই ছিলো | তানাহলে অরুনকে দেখে সোমার এতটা আনন্দ হচ্ছে কেন ?-- আপনি ,মানে তুমি অরুন ?                অরুন হাসতে লাগে | আর হাসতে হাসতেই বলে ,"সেদিনই মনে পড়েছিলো কিন্তু ততক্ষনে বাড়িতে পৌঁছে গেছি |                  ব্যস সেই শুরু | তারপর প্রায়  রোজই দেখা ,গল্প করা ,এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ানো ,ফোনে যখন তখন কথা চলতেই থাকে | অরুনের কাছ থেকেই সোমা জানে অরুনের মা বছর দুই আগে মারা যান | তিনি চেয়েছিলেন তার বৌ দেখে যেতে ,চেষ্টাও করেছিলেন - দু ,একটি মেয়ে দেখেছিলেনও কিন্তু অরুন দেখে সব 'পছন্দ হয়নি '-বলে মাকে জানিয়ে দিয়েছে | বেশ হাসি ,খুশিতেই দিনগুলি চলে যাচ্ছিলো | কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো অরুনের হঠ্যাৎ "বাইরে যাচ্ছি ,কাজ আছে কদিন দেখা করতে পারবোনা ,ফোনে কথা হবে -" বলে অন্তর্ধান আজ নিয়ে পনেরদিন সোমা অরুনের কোনো খবর জানে না | অরুনের এই ব্যবহার সোমার কাছে কেমন হেঁয়ালী লাগে | দু ,একদিন ফোনে কথা হলেও এখন ফোন সব সময় 'নট রিচেবেল' | আর এই কদিনের মধ্যেই সোমার কাকু ,কাকিমা তাড়াহুড়ো করে  তার বিয়ের সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলেছেন | কিন্তু সোমা কাকু ,কাকিমার ভালোবাসার প্রতি অকৃতজ্ঞ হতে পারেনি | জানাতে পারেনি অরুনের কথা | বুক ফেঁটে চৌচির হয়ে গেলেও মুখে জোড়করে হাসি এনে কাকু ,কাকিমার সর্ব কাজে সম্মতি দিয়েছে |   বর বিয়েবাড়ি পৌঁছে গেছে | শাঁখ ,উলুধ্বনি সব কিছুই সোমার কানে আসছে | কনে সাজে আত্মীয় পরিবিষ্ট হয়ে আপ্রাণ চোখের জল আটকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে |  সাতপাঁক ঘুরে শেষ | এবার  শুভদৃষ্টি |সোমা পানপাতা কিছুতেই মুখ থেকে সরাচ্ছে না দেখে স্বয়ং কাকুই যেয়ে সোমার কানে কানে বললেন ,
--- মা রে একটু ছেলেটার মুখটার দিকে তাকিঁয়ে দেখ মা ,আমি কি তোকে কষ্ট দিতে পারি ? ওর মুখটা দেখলেই তোর সব কষ্ট কর্পূরের মতো উবে যাবে মা |
                     সোমা পানপাতা সরিয়ে  দেখে অরুন তার দিকে তাকিঁয়ে মিটিমিটি হাসছে | তখন সোমার কষ্ট চলে যেয়ে রাগে সর্বশরীর জ্বলে যাচ্ছে | মনে হচ্ছে একটা লাঠি দিয়ে অরুনকে বেশ করে কয়েক ঘা বসিয়ে দেয় আর কি ! কিন্তু ফুলশয্যার আগে অরুনকে একাকী পাওয়া কিছুতেই সম্ভব নয় | অগত্যা নিজের রাগ নিজের মনের মধ্যে পুষিয়ে রাখা | মাঝে মাঝে তার সাথে চোখাচোখি হতেই অরুন দুস্টুমির হাসি হাসছে আর সোমার রাগ দ্বিগুন বেড়ে যাচ্ছে |
                  ফুলশয্যার রাত | অরুন ঘরে ঢুকে যেইনা দরজা বন্ধ করেছে ,অমনি সোমা বাঘিনীর মতো অরুনের হাত ধরে টেনে নিয়ে খাঁটের উপর বসিয়ে বলে ,"বল ,কেনও আমায় কষ্ট দিলে এত ?"
                অরুন দু'হাত দিয়ে সোমাকে বুকের সাথে চেঁপে ধরে বলে ," আর কখনো কোনোদিন যাতে তোমাকে ,আমাকে কষ্ট পেতে না হয় ; সেই জন্যই এই ব্যবস্থা | তুমি কাকুর সাথে চলে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারি তোমায় আমি ভালোবেসে ফেলেছিলাম | যারফলে মার পছন্দ করা কোনো মেয়ে আমার পছন্দ হত না | তোমার কাছ থেকে তোমাদের ঠিকানা জেনে একদিন তোমার অনুপস্থিতিতে সোজা তোমার কাকুর কাছে যেয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে তোমাকে  নিজের  করে পেতে চাইলাম |তোমার মত আছে জেনে কাকু ,কাকিমাও রাজি হয়ে গেলেন | ভাবলাম তোমার কাছে কথাটা গোপন রাখি ,কাকুকেও তাই বললাম | আর একটা কথা ভেবেছি - এই কারণে তুমি আমায় আজ খুব আদর করবে !
                সোমা অরুনের দু'বাহু থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অরুনের বুকে ,পিঠে কিল ,ঘুষি মারতে মারতে বললো ," আদর ? তোমাকে আমি আজ এত মারবো -- এত মারবো ----"অরুন হোহো করে হাসতে হাসতে সোমাকে আবার বুকের সাথে চেঁপে ধরে |
নন্দা  21.3.2010

"থাকে না সে"
                নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
শুকনো পাতা উড়ছে ধূলায় ,
কাঁপছি সবাই উত্তুরে হাওয়ায় ,
ভড়বে ধান চাষীর গোলায় ,
আনন্দে চাষীর মন যে দোলায় |
সব্জি ভরা ক্ষেতের পাশে ,
যাচ্ছে বধূ হেসে হেসে ,
তুলবে স্বামী সব্জি এসে ,
খাওয়াবে রেঁধে সকলকে সে |
অভাব রবে না ক'টাদিন ঘরে ,
আসবে মেয়ে বহুদিন পরে ,
হবে নবান্ন হাঁড়ি ভড়ে ,
খাবে সবাই পেটটি পুড়ে |
খুশির এই দিনগুলি ও-রে
সুখপাখির মতই আসে উড়ে ,
যায় যে চলে ফুড়ুৎ করে ,
সারাবছর কেনো থাকে নারে ?
নন্দা 21.11.16

Monday, November 21, 2016

"বিশ্বাসে ভালোবাসা"
                        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
প্রজাপ্রতি রঙ্গিন পাখায় ,
               ভরটি দিয়ে উড়ে -
মানুষ আমরা বেঁচে আছি ,
                স্বপ্ন নিয়ে মনে |
দূর দিগন্তে হারিয়ে যেতে ,
                 পাখির নেইকো মানা -
মনের মানুষ পেলে কাছে ,
                  স্বপ্নের জাল বোনা |
নন্দা   17.11.16  9-15 AM.

Saturday, November 19, 2016

""কি পেলাম"                      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী   বিকালের দিকে   মমির ফোন পেয়ে রাহুল একটু অবাকই হয় | হঠ্যাৎ করেই.মমি বলে ," রাহুল , আমার সাথে তুমি আজই দেখা করবে |রাত যতই হোকনা কেনো ,অফিস থেকে ফেরার পথে আমাদের বাড়ি আসবে | " বিয়ের সব কেনা কাটা শেষ | চারদিন মাত্র বিয়ের বাকি | মমির সাথে কথা হয়েছে এই চারদিন দেখা ,সাক্ষ্যাৎ হবেনা ,শুধু ফোনে কথা হবে | মমি একজন বেশ বড় সংগীত শিল্পী | বেশ নামডাক তার | মনামী মজুমদার - এক ডাকেই সকলে তাকে চেনে | কিছুদিন ধরেই নুতন করে রেকডিং এর কোনো ডেট নিচ্ছে না , বিয়ের আগে বেশ কিছুটা সময় বাবা ,মায়ের সাথে কাটানো আর বিয়ের পরে হানিমুনের প্রোগ্রামটাও রেডি হয়ে আছে - সে কাউকে কোনো বিপদে ফেলতে চায়না বলেই সব কাজ একবারে শেষ করে আবার ফিরবে তার প্রিয় গানের জগতে | মমি তার বাবামায়ের একমাত্র সন্তান | রাহুল ভেবেই পাইনা কি এমন হলো যে জরুরী তলব ! রাহুল রাত আটটা নাগাদ মমিদের বাড়ি গেলো | ড্রয়িংরুম পার হয়েই মমির মাবাবার ঘর ,ঠিক তার পরের ঘরটা মমির | সে ড্রয়িংরুমের ভিতর ঢুকে "মাসিমা"- বলে জোড়ে ডাক দিলো | মমির মা তার ভেজানো দরজার ঘরের ভিতর থেকেই বললেন ,"যাও  বাবা ,মমি ঘরেই আছে | রাহুল মমির ঘরে ঢুকে দেখলো জিনিসপত্র একটু অগোছালো , কিন্তু বেশ বড় ,বড় দুটি ব্যাগ গুছানো | " কি ব্যাপার বলো তো ?" মমি পিছন ফিরে কি একটা করছিলো- রাহুলের গলা শুনে বললো ," ও এসে গেছো তুমি ?তোমার সাথে খুব দরকারি একটা কথা আছে | "  "হ্যা- বলো , তোমার জরুরি তলব পেয়ে শুনতেই তো আসলাম |"রাহুল ,আমার জীবনে এত বড় সুযোগ কোনোদিন আসবে আমি তা স্বপ্নেও ভাবিনি | আমি খুব বড় একটা বিদেশী  কোম্পানি থেকে রেকডিং এর অর্ডার পেয়েছি | তারজন্য আমায় আমেরিকায় যেতেই হচ্ছে | তুমি আমাকে ক্ষমা কোরো | এই বিয়েটা আমি করতে পারছি না | তুমি অনায়াসে অন্যকোনো ভালো মেয়ে পেয়ে যাবে | ওই তারিখেই বিয়েটা সেরে ফেলো | তাহলে --মমির কথার মাঝেই রাহুল চিৎকার করে ওঠে  -  " কি পাগলামি হচ্ছে এগুলি ? বাড়িতে ডেকে এনে ইয়ার্কি হচ্ছে ? "  " এটা পাগলামি বা ইয়ার্কি নয় ,যা সত্যি তাই বলছি | আমার কথা শেষ এবার তুমি আসতে পারো |" রাহুল হতভম্ব | দীর্ঘ চার বছরের সম্পর্ক ওদের | এ ভাবে সবকিছু কিভাবে শেষ হয়ে যায় ? সে উঠে যেয়ে মমিকে ধরতে যায় | মমি একটু সরে যেয়ে বলে ," আসলে কি জানো রাহুল ? আমি আগে বুঝতে পারিনি আমার জীবনে গান ছাড়া অন্য কাউকেই ভালোবাসতেই পারিনা | গানই আমার প্রথম ও শেষ প্রেম | অনেকদিন ধরেই আমি বুঝতে পারছিলাম বিয়ে করে গুছিয়ে সংসার আমার দ্বারা হবে না | আমি গান পাগল মানুষ | গানই আমার জীবনে সব | বলবো ,বলবো করেও কথাগুলি বলতে অনেক দেরী করে ফেললাম | তারজন্য আমাকে ক্ষমা কোরো | নাও - অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে | প্রচুর গোজগাছ   বাকী | তুমি এবার বেড়িয়ে পর |"    প্রেমে প্রত্যাখ্যাত ,অপমান ,লজ্জা ,আবেগ - সব কিছু মিলেমিশে রাহুল বাকরুদ্ধ | কিছুক্ষন পরে রাহুল খেয়াল করে মমি ঘরে নেই | এত বড় অপমান ! কি করে করলো মমি ? এইতো সেদিন দু'জনে মিলে কত প্লান করলো তাদের নুতন জীবন নিয়ে | কোথায় হানিমুনে যাবে তাও পর্যন্ত ঠিক করে ফেললো দু'জনে| কত স্বপ্ন দু'জনের অন্তর জুড়ে | মমির ভিতর সে স্বপ্নের কোনো কৃপণতা কখনোই রাহুলের চোখে পড়েনি | প্রায় ত্রিশ মিনিট রাহুল একা ঘরে বসে | মমি ফিরছে না দেখে রাহুলের নিজেকে খুব ছোট মনে হতে লাগলো | সে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো | মাসিমাদের ঘরের কাছে এসে বুঝতে পারলো এবার দরজা ভিতর থেকে বন্ধ | কি ঘটে গেলো কিছুই বুঝতে পারলো না সে | শুধু আশাহত অবস্থায় বাড়ি ফিরে এলো | কিন্তু কেন জানি তার মনে হতে লাগলো ,মমি যা বলছে তা ঠিক নয় | এটা কিছুতেই সত্যি হতে পারেনা | ও মিথ্যা বলছে সব | সারারাত ছটফট করতে করতে ভোর হতেই সে বেড়িয়ে পড়লো মমিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে | সেখানে পৌঁছে সে অবাক হয়ে গেলো | মমিদের বাড়িতে বাইরে থেকে তালাবন্ধ | কিন্তু কেন ? কোথায় গেলো সবাই  ? আশেপাশে জিজ্ঞাসা করেও কোনো সদুত্তর সে পেলোনা | সব কিছুই রহস্যের আবরণে ঢাকা পরে থাকলো | মন থেকে এক মুহূর্তের জন্যও মমির প্রতি কোনো খারাপ ধারণা তার আসছে না | কিন্তু কি এমন হলো যা মমি তাকে জানাতে পারলোনা !অফিস ,বাড়ি আর মমির এই অসংলগ্ন কথাবার্তা সব মিলেমিশে একাকী জীবনে রাহুল উদভ্রান্তের মতো হয়ে গেলো | কোনো বন্ধুবান্ধব ,আত্মীয়স্বজন কেউই মমিদের কোনো খবর রাহুলকে দিতে পারলোনা |

এইভাবে প্রায় ছ'মাস কেটে গেলো | হঠ্যাৎ একদিন অফিসে এক বন্ধুর ফোন ; বন্ধুটি তাকে জানালো আজকের খবরের কাগজটা যেন সে দেখে | " কেন কি আছে কাগজে ?" "তুই দেখ ,আমি পরে তোকে ফোন করছি |" বলেই ফোনটা কেটে দিলো | রাহুল খেয়াল করেছে আজ অফিসে আসার পর থেকে সকলে তার আঁড়ালে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে | পেপারটা চাওয়াতে একজন অনিচ্ছা সমেত তার হাতে পেপারটা ধরিয়ে দিলো | রাহুল কাগজটা ধরেই প্রথম পৃষ্টায় খবরটা দেখে চমকে ওঠে | "বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী মনামী মজুমদার দীর্ঘ ছমাস রোগভোগের পর মুম্বাই ক্যান্সার হাসপাতালে আজ ভোর চারটে নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন |"বিস্তারিত পড়বার ক্ষমতা রাহুলের আর থাকে না | চশমার কাঁচ চোখের জলে ঝাপসা হয়ে যায় | আর পরিষ্কার হয়ে যায় মমির ছমাস আগের অসংলগ্ন কথাবার্তা | সব পুরানো স্মৃতি আবার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করতে থাকে | কিন্তু মমি এটা কি করলো ? এই ছ'টা মাস তো একসাথেই আমরা থাকতে পারতাম ! সেই হারানোর কষ্টটা তো আমাকে পেতেই হলো | এত বড় সঙ্গীত শিল্পী তুমি ,তোমার মৃত্যুতে শুধু আমি কেনো -সারাদেশ জানবে এটা তুমি একবারও ভাবলেনা ? তুমি কি ভেবেছিলে মমি ? আমাকে আঘাত করলে ,অপমান করলেই আমি তোমাকে ভুলে যাবো ? তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হবো ? আমার সমস্ত মন ,প্রাণ জুড়ে একটাই নাম -'মমি' ; যাকে ছাড়া আমার কল্পনার জগতও অন্ধকার | আমার ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে না পেরে দীর্ঘ ছ'মাস আমার কাছ থেকে দূরে থাকলে --আর এখন তো সারা জীবন !! কিন্তু আমি কি পেলাম ?

নন্দা   12.1.15

Thursday, November 17, 2016

"ছিলাম-থাকবো"
                    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যদি দেখো -
পাশে আমি নেই ,
জ্বালাবে না আলো, চোখ বুজে তুমি ,
আমার পরশ নিও |
দুরগগনে ঘন আবীরে ,
সন্ধ্যা যখন নামবে ,
ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে তুমি ,
মন খারাপে একা একা বসে থাকবে ,
প্রদীপের দিকে চোখ রেখে দেখো -
হাসিমুখ আমার দেখতে তুমি পাবে |
সোহাগ তোমার ছেড়ে এসেছি ,
সময় আমার ফুরিয়েছে তাই ,
ভালোবাসা মোদের আজও রয়েছে ,
মনে রেখো তুমি সদাই |
আমার তরেতে কেঁদে তুমি ওগো ,
হোয়োনা যেন আকুল ,
আঁখিজল তোমার মুছাতে পারবোনা ,
আত্মা মোর হবে যে ব্যাকুল |
পড়পারে আবার হবে যে মিলন ,
থাকবো দু'জনে একসাথে -
সুখ ,দুঃখের উপরে গিয়ে ,
রাখবো হাত অপরের হাতে |
নন্দা   17.11.16   10-10PM.

Monday, November 14, 2016

"যা বাস্তব"
             নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
এই দুনিয়া এক রঙ্গশালা ,
  ভালোমন্দ মিশিয়ে এক মিলনমেলা |
ভালোর চেয়ে মন্দ বেশী ,
  হোকনা সে দেশী বা বিদেশী |
সামনে কথা বলছে হেসে ,
  পিছনে যেয়েই হাসির সাথে নিন্দা মেশে  ,
কথা যে সব হাওয়ায় ভাসে ,
  পরক্ষনেই সে সব কানে আসে |
জীবনটা এক কঠিন অঙ্ক ,
  এখানে চলে শুধুই রঙ্গ ,
হবেনা কখনো এ রণে ভঙ্গ ,
  যতই উঠুক জীবনে  তরঙ্গ |
সময় হলেই যেতে হবে ,
  নেই হাতে ক্ষমতা সময়কে রুখবে ,
উপর থেকে যখনই ডাক আসবে ,
   নূতনকে ফেলে পুরানরা পালাবে |
নন্দা  12.11.16  9-30 PM.

Friday, November 11, 2016

"কেন"
              নন্দা মুখাৰ্জী রায় চৌধুরী
কত প্রতিজ্ঞা করেছি দু'জনে ,
ছেড়ে যাবোনা কেউ কাউকে ,
তবুও কেন এতগুলো বছর বাদে -
ছেড়ে গেলাম পরস্পরকে ?

    ক্ষমা করো মোরে -
কেউ একবার, বলতাম যদি অপরকে ,
   কোনো ক্ষতি হোতো না ,
দু'জনেই বাঁচতাম একে অপরকে আঁকড়ে |
অনেকটা পথ দু'জনে হেঁটেছি একসাথে ,
সরলপথে হাঁটতে হাঁটতেই পথ যেন গেলো বেঁকে ,
সামান্য ভুল বোঝাবুঝি এতদূর গড়ালো -
মিমাংসা করতে পৌঁছাতে হোলো আদালতকক্ষে |
পড়ন্ত বিকেল ,জীবনের শেষ অধ্যায় ,
কেমন আছো তুমি জানিনা ,
হয়তো কখনো নির্জনে একাকী ,
ভাবছো আমারই কথা,নিয়ে একরাশ বেদনা |
নন্দা    11.11.16   12-30AM.

Wednesday, November 9, 2016

"বন্ধি জীবন"
                নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
বনের পাখি বনে বনে ,
তোর নেইকো উড়ায় মানা ,
যেথায় খুশি সেথায় তুই ,
মেলতে পারিস ডানা |
আমার তো বন্ধি জীবন ,
অট্টালিকায় করি বাস ,
পায়ে শুধু নেইকো বেড়ি ;
দুখী আমি বারোমাস |
অলিখিত চুক্তি আমার ,
থাকবো শুধু সংসার নিয়ে ,
নিজের কষ্ট বুকে চেপে ,
অন্যের সেবা কোরবো গিয়ে |
একটু উড়ে আয়না কাছে ,
বসনা আমার পাশটি ঘেঁষে ,
তোকেই বলি সকল কথা ,
যা আছে মোর মনে ব্যথা |
নন্দা   9.11.16  10PM.
             



 
"জাগিও না"
                    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

রাত যতই গভীর হয় ,
 ততই তোমায় মনে পড়ে ,
নিস্তব্ধ অন্ধকার ঘরে -
টের পাই তোমার উপস্থিতি
চোখ বন্ধ করলে নি:শ্বাসে তোমার গায়ের গন্ধ পাই।
তবু তোমায় ছুঁতে পারিনা , চোখ মেললে দেখতে পাইনা |
সারাদিন অপেক্ষায় থাকি -
মধ্যরাতের গভীরতার আশায়
কখন সবাই ডুব দেবে ঘুমে,
আর তুমি আসবে কাছে!
প্রতিটা নিঃশ্বাসে তোমার গায়ের গন্ধ পেতে পেতে -
একসময় নিজে ঘুমিয়ে পড়ি ,
ঘুমেই তোমার সাথে গল্প বুনি
বেড়াই, হাসি, মান অভিমান
সব চলে |

হোক সে স্বপ্ন ! তবু তোমায়
আমি তো নিজের করে পাই |

নন্দা   7.11.16  1.20AM.

Monday, November 7, 2016

"বাঁচতে চাই"                 (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী)                বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে বাদল যেদিন প্রাইমারী স্কুলে যেদিন যোগদান করতে যায় সেদিন মা দু'হাত কপালে ঠেকিয়ে বলেছিলেন ,"এবার সুন্দর লক্ষ্মীমন্ত দেখে একটা বৌ আনবো | ব্যস তাহলেই আমার ছুটি |" বাদল মাকে জড়িয়ে ধরে হাসতে হাসতে বলেছিলো ,"তোমায় ছুটি আমি কোনোদিনও দেবো না | তুমি ছুটি নিলে আমায় কে দেখবে ? তোমার আগে যেন আমি ছুটি পাই এই পৃথিবী থেকে |"  সরলাদেবী ছেলেকে বুকের সাথে চেঁপে ধরে বলেছিলেন ,"বালাই ষাট !! একথা আর কখনো মুখে আনবি না বাবা |"             আজ বড্ড মনে পড়ছে মায়ের কথা |সত্যিই মা তো আগেই ছুটি নিয়ে চলে গেলেন সারাজীবের জন্য | হাসপাতালের বেডে শুয়ে বাদল হিসাব কষতে থাকে তার জীবনের পাওয়া না পাওয়া গুলিকে নিয়ে | তার জীবনের আয়ু মাত্র কয়েকমাস | কয়েক মাসই বা কেন ? হয়তো যেকোনো সময়ই সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পারে |        গ্রামের অতি সাধারণ সরল ছেলে বাদল | অভাবের সংসার | মা ,বাবা , আর সে | গ্রাজুয়েট হওয়ার পর তাকে বেশিদিন বসে থাকতে হয়নি | গ্রামেরই একটা স্কুলে শিক্ষতায় সে নিযুক্ত হয় | মায়ের জোড়াজুড়িতে চাকরীর দু'মাসের মাথায় সে বিয়েতে মত দেয় | মা নিজে পছন্দ করে তার বাদলের বৌকে বরণ করে ঘরে তোলেন | মীনা খুব সংসারী না হলেও বাদলের   মা যথাসম্ভব চেষ্টা করতেন ঝামেলা যাতে না হয় | তাই তিনি সংসারের কোনো কাজের দায়িত্ব মীনার উপর ছাড়েন না | নিজে হাতে রান্নাবান্না করা , খেতে দেওয়া সব করতেন | বাদলের বাবা ছিলেন অসুস্থ | তারএ্যাজমা ছিলো ;তাই সর্বদায় শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে  কষ্ট পেতেন | বাদলের বিয়ের প্রায় আটমাস বাদে তিনি মারা যান | তখন বাদলের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা | নির্দিষ্ট সময়ে তাদের একটি সুন্দর ফুটফুটে কন্যা সন্তান হয় | সুখে ,দুঃখে ,অভাব ,অনটনের মধ্য দিয়ে বছর চারেক কেটে যায় বাদলের বিবাহিত জীবন | এরই মাঝে বাদলের মাতৃ বিয়োগ হয় | সে শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই হঠ্যাৎ করেই বাদলের শরীরটা খারাপ যেতে থাকে | গ্রামের ডাক্তারের হেফাজতে থেকে দিন পনের বাদেও যখন অবস্থার কোনো  উন্নতি সে দেখতে পায় না , তখন সে শহরে এসে বড় ডাক্তার দেখায় | নানান পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পরে বাদলের ব্লাড ক্যান্সার | সে বাড়িতে ফিরে এসে তার বৌ মীনাকে বলে ,"যে ক'কাঠা ধানীজমি আছে তার থেকে দু'কাঠা জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করাবো ভাবছি |" শুনেই মীনা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে | সে চিৎকার করে তার স্বামীকে জানিয়ে দেয় ,"যে রোগ কোনোদিনও ভালো হবে না ,তার জন্য ভিটামাটি বিক্রি করে দিলে মেয়েকে নিয়ে তো আমাকে পথে বসতে হবে |" চিরশান্ত বাদল ঝগড়ার ভয়ে একথার কোনো উত্তর দেয় না |          বাদল তার স্কুলে যেয়েসহকর্মীদের তার অসুস্থতার কথা জানায় | স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা মিলে বেশ কয়েক হাজার টাকা চাঁদা তুলে তারা বাদলের হাতে তুলে দেয় | বাদল তার গ্রামের কাউন্সিলারের সহায়তায় কোলকাতার এক কাউন্সিলারের মাধ্যমে কলকাতায় এক সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় | সমস্ত চেষ্টা ,তদ্বির সে ওই অসুস্থ্য শরীর নিয়েই করে | মাঝে মধ্যে কখনো সখনো স্কুলের কোনো সহকর্মী তাকে সঙ্গ দেন | কিন্তু মীনা একবারের জন্যও তার অসুস্থ্যতা সম্পর্কে কোনো খোঁজ নেওয়া বা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় তার সাথে যাওয়া কোনোটাই কখনোই সে করে না | উল্টে সে মেয়েকে বাদলের কাছে আসতে নিষেধ করে দেয়  | মেয়েও মায়ের বকুনি এবং মার খাওয়ার ভয়ে মা থাকতে বাদলের কাছে ঘেঁষতে সাহস পেতো না |                                   হাসপাতালের বেডে শুয়ে নানান সময়ে নানান কথা ভাবতে ভাবতে তার দু'চোখের কোল বেয়ে জল পড়তে থাকে | সেই যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তদ্বির করতে এসে ভর্তি হয়ে সেখানেই থেকে যায় - আজ এক মাসেরও বেশী হতে আসলো মীনা বা তার বাপের বাড়ির কেউই একবারের জন্যও দেখতে আসেনি | এখানে ভর্তি হওয়ার পরেই সে স্কুলে ফোন করে জানিয়েও দিয়েছিলো যাতে তার বাড়িতে খবর দিয়ে দেওয়া হয় ; সে কোন হাসপাতালে ভর্তি আছে | বাদল নিশ্চিত বাড়িতে স্কুল থেকে জানিয়ে গেছে | কিন্তু কেউই আসেনি |                                       মৃত্যু নিশ্চিত জেনে বাদল ভাবে যে কটাদিন বাঁচবে সে তার মেয়ের কাছেই যেয়ে থাকবে | মীনা তাকে না দেখুক অন্তঃত মেয়েকে তো সে সবসময় চোখের সামনে দেখতে পাবে | পালাবে - হাসপাতাল থেকে আজই সে পালাবে |কারণ তার যে শারীরিক অবস্থা তাতেকরে হাসপাতাল থেকে তাকে বাইরে বেড়োতে বা তারা কিছুতেই ছুটি দেবে না | রাত গভীর | সবাই ঘুমে অচেতন | বাদল বিছানা ছেড়ে আস্তে আস্তে বাইরে বেড়িয়ে আসে | হাপাতালের গেটের থেকে রাস্তায় বেড়িয়ে কিছুটা হেঁটে এসে সে খুব হাঁফিয়ে যেয়ে একটা ইটের পরে বসে পরে | আস্তে আস্তে দিনের আলো ফুটতে শুরু করলে সেও উঠে দাঁড়িয়ে একপা ,দু'পা করে বাস রাস্তায় এসে দাঁড়ায় | বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে এগোলেও দুর্বল শরীরে তার মাথার ভিতর ঝিমঝিম করতে থাকে ;মনেহচ্ছে এক্ষুনি বুঝি সে পড়ে  যাবে | হঠ্যাৎ তার নজরে আসে সুন্দর ফুঁটফুঁটে একটি মেয়ে ঠিক যেন তার মেয়ের বয়সী রাস্তার উপর থেকে ছুটে আসছে | সঙ্গে সঙ্গে তার যেন শিরদাঁড়া সোজা হয়ে যায় | মুহূর্তেই ভুলে যায় সে অসুস্থ্য | দৌড়ে যেয়ে মেয়েটাকে বুকে চেঁপে ধরে এপারে এসে বসে হাঁফাতে লাগে | বাচ্চা মেয়েটিও তার বুকের সাথে লেপটে থাকে | খুব সকাল , রাস্তায় বেশী একটা যানচলাচল ও লোকজনও নেই | পথচলতি দু'একজন আঁড়চোখে তাঁকিয়ে দেখে চলে যাচ্ছে | হঠ্যাৎ এক সাহেব এসে বাদলের কাঁধে হাত রেখে তাকে ধন্যবাদ জানান | এবং মেয়েটিকে কোলে তুলে নিয়ে বাদলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন | বাদলের কাঁপাকাঁপা হাতটি ধরে সাহেব ভদ্রলোক ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় জানতে চাইলেন  ,"তুমি কি অসুস্থ্য ?" বাদল তার অসুস্থ্যতার কথা জানাতেই তিনি তাকে বলেন ,"কোথায় ট্রিটমেন্ট করছো ? তোমার বাড়ি কোথায় ? কে ,কে আছেন তোমার ?"  বাদল কথাগুলির উত্তর দেওয়ার আগেই মাথাটা তার ঘুরে গেলো |সাহেব তাকে খপ করে ধরে ফেললেন | যখন বাদলের জ্ঞান ফেরে সে তখন একটা নার্সিংহোমে সাহেব গলায় স্টেথিস্কোপ ঝুলিয়ে তার নাড়ী দেখেছেন ,অন্য সকল ডক্টরেরা তাকে স্যার বলে সম্মোধন করছেন | বাদল হতভম্বের মত সাহেব ডাক্তারের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে দেখে সাহেব হেসে পরে বললেন ," কোনো ভয় নেই ,আমি ডক্টর এডওয়ার্ড পিটার ,এমেরিকায় থাকি , তোমার নামটা কি ?" সাহেবের এই অমায়িক ব্যবহারে বাদলের দু'চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো | বাদল সাহেবকে  তার নাম বলার পর তিনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বাদলকে যা বললেন তার সারমর্ম কললে দাঁড়ায় - প্রতিবছর তিনি কলকাতায় আসেন কারণ এখানে তার শ্বশুরবাড়ি | এই নার্সিংহোমের মালিক তার শ্বশুর ধনঞ্জয় ব্যানার্জীর | সাহেব ও তার স্ত্রী দু"জনেই ক্যান্সার স্পেশালিস্ট | কিন্তু বাদলের এখন যা শারীরিক অবস্থা তা এখানে থেকে ট্রিটমেন্ট করা সম্ভব নয় | বাদল তার একমাত্র মেয়েকে বাঁচিয়ে তাকে ঋণী করেছে | ঈশ্বর তাকে অনেক দিয়েছেন | মানব সেবায় তিনি তার জীবনের মূলমন্ত্র বলে মনে করেন | যদি বাদল তাকে একটা সুযোগ দেয় ,তাহলে তাকে সাথে করে এমেরিকায় নিয়ে যেয়ে তার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে তিনি রাজি আছেন | কারণ এখনো ঠিকভাবে চিকিৎসা করাতে পারলে সে আরও কয়েকবছর বেঁচে যেতে পারে |   জীবনের শেষ সূর্যাস্তযখন দোরগোড়ায় উপস্থিত তখন অকস্যাৎ নুতন করে সূর্য্য উদয়ের সম্ভাবনাকে সে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে তাকে চোখের জলে সানন্দে গ্রহণ করলো | তার মনেহলো যেন স্বয়ং ভগবান তার সামনে উপস্থিত |   বাদল পাড়ি দিলো আমেরিকায় ডক্টর পিটার ,তার স্ত্রী ও তার একমাত্র কন্যার সাথে | দীর্ঘ তিন বছর ডক্টর পিটার ও তার স্ত্রীর তত্বাবধানে থেকে বাদল নুতন করে বাঁচার দিশা পেলো | এই তিন বছরে ডক্টর পিটারের বাঙালি ব্রাহ্মণ ডক্টর স্ত্রী মধুরিমা বাদলকে ভায়ের আসনে বসিয়ে দিদির মতই তার সমস্ত দুঃখ ,কষ্টগুলি জেনে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে সেগুলিকে ভুলিয়ে রাখার | বাদলও অনেকদিন পর মায়ের জায়গায় কাউকে বসাতে পেরে নিজের জীবনের সমস্ত কষ্টগুলি উজাড় করে বলতে পেরেছে | যন্ত্রনাদায়ক ঘটনাগুলি ভুলে যেতে না পারলেও দিদির সামনে ভুলে থাকার অভিনয় সে করে গেছে | যাতে দিদি তার ভায়ের জন্য কষ্ট না পায় | ছোট্ট লিজা তার আঙ্কেলকে খুব ভালোবাসে | ধীরেধীরে বাদল অনেকটাই সুস্থ্য হয়ে উঠে | দেশে যখন সে আসতে চাইলো ডক্টর পিটার তাকে জানালেন , তাঁরা যখন কলকাতায় আসবেন তখন বাদলকে সঙ্গে নিয়েই আসবেন | কিন্তু বাদলকে কথা দিতে হবে আবার তাঁরা যখন ফিরবেন তখন তাকেও ফিরতে হবে কারণ এই রোগের চিকিৎসা বন্ধ করা যাবে না এবং এটা খুবই ব্যয়বহুল | প্রয়োজনে সে তার স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে তাদের সাথে ফিরতে পারে ,তিনি বাদলের জন্য রোজগারের কিছু একটা ব্যবস্থা করে দেবেন | ডক্টর পিটারকে যত দেখে বাদল তত যেন তার মনেহয় উনি মানুষরূপী ভগবান | পূর্বজন্মে কোনো পূর্ণের ফলে তার মতো মানুষের সাথে তার দেখা হয়েছে |বলা বাহুল্য এই তিনবছরে পিটার ফ্যামিলি মাত্র একবার কলকাতায় এসেছিলেন |

নুতন করে বাঁচার আশা নিয়ে বাদল যখন তার গ্রামে পা রাখলো ;সকলেই যেন ভুত দেখার মতো চমকে উঠে | তাদের ছোট খাটো কথার জবাব দিয়ে বাদল তার নিজের বাড়িতে পা রাখলো | কিন্তু একি ?বাড়ির চেহারা তো পুরোটাই পাল্টে গেছে | দারিদ্রের ছাপ কোথাও তো নেই ! হঠ্যাৎ চোখে পরে নিজের আট বছরের মেয়েকে | ইশারা করে কাছে ডাকে | কিছুটা সময় নিলেও বন্যা বাবাকে ঠিক চিনতে পারে | মেয়ের কাছেই সে জানতে পারে একজন কাকু তাদের সাথে থাকেন ,যাকে মা বহুবার বাবা ডাকতে  বলেছেন ,কিন্তু সেতো জানে এটা তার বাবা না - তাই সে তাকে কাকু বলেই ডাকে | কিন্তু স্কুলে বন্ধুরা মাকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করে |

সিদ্ধান্ত নিতে বাদলের মুহূর্ত সময় লাগলো না | সে তার মেয়ে বন্যাকে বললো ," তুই আমার সাথে যাবি মা ?"
"কোথায় যাবে বাবা -তুমি আমায় নিয়ে ?"
বাদল আকাশের দিকে তাঁকিয়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে একটা আঙ্গুল আকাশের দিকে তুলে বললো ,"ওই আকাশ পথে অনেক দূরে ....যেখানে আমি আর তুই থাকবো |"

নুতন করে বাঁচার স্বপ্ন  নিয়ে নিজের মেয়েকে সকলের অলক্ষে বলতে গেলে তাকে চুরি করে নিয়ে পিছন ফিরে আর না তাঁকিয়ে নুতন ঠিকানার উর্দ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো |

বি: দ্রঃ - একজনের অনুরোধে আমার এই গল্পটি লেখা | জানিনা আমার সেই ফেসবুক ভায়ের ভালো লাগবে কিনা | আমি বাদলকে মেরে ফেলতে পারিনি ; কারণ আমি চাই কাকতালীয়ভাবে হলেও আমার সেই ভাইটি সুস্থ্য হয়ে যাক | তোমরা সকলে তাকে আশীর্বাদ কোরো |
নন্দা  2.11.16  9-40pm.

Saturday, November 5, 2016

অনেকদিন আগের একটা লেখা খুঁজে পেলাম ..সেটাই তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম ...22.8.10  2PM.
"ফিরে পেতে চাই"
                            ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলি -
        চাই যে ফিরে পেতে ,
হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলি -
        চাই যে কাছে পেতে |
স্মৃতির খাতায় অক্ষরগুলো -
        পড়েছে ধুলোর তলে ,
ভাসছে যেন চোখের পরে ,
        যাচ্ছে ধুয়ে চোখের জলে |
কেমন করে চলে যায় ?
       কাছের মানুষ অন্যখানে ,
কেমন করে গড়ে সব -
       পুরানোকে ভুলে নুতন করে   ?
জীবনটা এক রঙ্গমঞ্চ ,
        হেথায় করে সবাই অভিনয় ,
ভালোবাসার নামটি নিয়ে ;
        মুখোশ পরে রায় |
অধিকার আর দাবী নিয়ে ,
       তোলে শুধুই আলোড়ন ,
ভুলেও কেউ ভাবেনা কিছু ,
       হারিয়ে যায় ভালোবাসার মান |
ভালোবাসার বিনিময়ে কষ্ট কেন দেয় ?
       মুখের ভাষা , মনের কথায় -
এত ফারাক হয় ?

নন্দা
"চলে যেতে চাই না"
                          ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
    মৃত্যু অনিবার্য -
তবুও বাঁচবার যে উদগ্র বাসনা ,
   সেটাই নয় কি আশ্চর্য ?
     সংসার যেন একটি সমুদ্র ,  
যার একপাড়ে  জীবন ,
     অপর পাড়ে আছে মৃত্যু |
      আবার বলা যায় -
সংসার একটি তাসের ঘর ,
যে ঘর ভেঙ্গে দেয় মহাকাল ;
এখানে সকলেই আপন ,প্রিয়জন ,
      অথচ কেউ কারও নয় |
তিলে তিলে গড়ে তোলা সম্পর্কগুলিকে -
মৃত্যু এসে ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায় ,
      তখন সকলেই অসহায় ,
প্রিয়জনের  বিয়োগ বেদনায় কাতর ,
কিন্তু তাকে ফিরিয়ে আনতে অপারগ |
জীবনকে যদি কল্পনা করি একটি পদ্মফুল ,
      আয়ুটা হলো পদ্মপত্রের নীর -
যে কোনো মুহূর্তেই ঝরে যেতে পারে ,
কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছা করে ,
"মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে ........"
নন্দা   4.11.16   1-30AM.

Thursday, November 3, 2016

"এটাই জীবন"
                    (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
প্রতিদিন জীবনে ঘটে কত ঘটনা ,
সব কিছু কি আর মনে রাখা যায় ?
বাঁচার তাগিদে নিয়ত লড়াই -
মাঝে মাঝে অকালেই কেউ হেরে যায় |
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ,
দাঁড়িয়ে আছি আমরা সবাই ,
একটুখানি পিঁছলে গেলেই ,
জীবন মোদের শেষ হয়ে যায় |
সরল জীবনের জটিল অঙ্ক ,
পারিনা মিলাতে কেউ -
করছি লড়াই বাঁচার তাগিদে ,
জীবনে যতই উঠুক সমুদ্রসম ঢেউ |
   কেউ কারও নয় -
তবুও বাঁচি একে অন্যের তরে ,
বিপদে কেউ পড়লে পরে ,
বোঝা যায়- কে কত ভালোবাসে কাহারে !
জীবনের সংগ্ৰাম থামেনাতো কখনো ,
আমৃত্যু চলছে , চলবে -
কোনো ফল পাবেনা হিসাব করে ,
কি পেলে আর কি পাবে |
নন্দা   3.11.16  4PM.

Tuesday, November 1, 2016

"পরোয়া করলে না"
                        ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )

লোকলজ্জা ,সমাজের ভয় ,
  নাইবা করলে মা ,
জানি ভালোবেসে বিয়ে করলেও বাবাকে ,
  সুখী তুমি ছিলেনা |
তোমার আকাশসম চাহিদা ছিলো -
 পূরণে ,বাবা ছিলো অক্ষম ,
কতবার তোমাকে বলতে শুনেছি ,
  চোখে কি দেখতে পারেনা তোমাকে যম ?
তোমার কথায় সত্যি হোল মাগো ,
  যমেই নিয়ে গেলো তাকে ,
কয়েক মাসের ব্যবধানে ,
 নুতন রূপে সাজালে তুমি নিজেকে |
সারাজীবন শুধু নিজের কথাই ,
 ভাবলে তুমি মা ,
আমরা তোমার দু 'টি সন্তান ,
  আমাদের কথা একটুও ভাবলে না |
জানি মাগো জানি সময়ের সাথে ,
  জীবনও কারও থেমে থাকে না ,
বছর খানেক যেতে দিলে মাগো ,
  খুব বেশী ক্ষতি হত না !
অল্প বয়সে ভালোবেসে নাকি ,
  বিয়ে করেছিলে বাবাকে -
তোমার কাছে ভালোবাসা মানে ,
  বাঁধা ছকে চিনেছো তুমি টাকাকে |
নন্দা   1.11.16  7PM.



 

Monday, October 31, 2016


"ভালোবাসার বেদনা"
                         ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )

অনেক আশার স্বপ্ন আমার ,
 ভেঙ্গে হোলো চুড়মার -
মনের দামটি দিলে না তুমি ,
 পথ হারিয়ে গেলো যে আমার |
ভালোবাসার মায়ায় আমায় ,
 জড়িয়ে কেনো ছিলে ?
স্বপ্ন ভরা বাসর আমার ,
 ভেঙ্গে  কেন  দিলে ?
ভালোবাসার অপর নাম ,
 শিখিয়ে দিলে বেদনা -
 আমার মনটি স্বপ্নে রাঙিয়ে ,
করলে শুধুই ছলনা |
নন্দা  15.10.16  1AM.

Friday, October 28, 2016

"বাঁধন খুলে গেলে"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
=================
স্বপন দেখেছিনু ভোর রাতে ,
তুমি এসে দাঁড়িয়েছো -
মোর দ্বারে খুব প্রভাতে ,
হাসিমুখে আছো দু'হাত বাড়িয়ে -
গেলাম আমি  দু'টি বাহুতে হারিয়ে |
ভোর রাতের স্বপন হয় বুঝি সফল !
তাই বাকি সময় শুধু প্রহর গোনা ,
মনে নিয়ে আশা, ভীরু ভালোবাসা ,
 কখন যাবে  রেলগাড়ির হুইসেল শোনা |
রেলগাড়ি ওই স্টেশনে ,
দাঁড়ালো বুঝি হায় -
তুমি আসবে এবার ,
ভেবেই আমি শরমে মরে যাই |
গেটের বাইরে আওয়াজ শুনে ,
দৌড়ে খুলি দরজা যেয়ে ,
পিওন এসে দাঁড়ালো দুয়ারে ,
চিঠি দিলো একখানি আমারে |
ভেবে হই সারা ,
তোমার আসার খবর আছে ওই- চিঠিতে ,
চিঠি খুলে পড়ে জ্ঞান হারালাম ,
পড়ে গেলাম আমি মাটিতে |
জঙ্গী দমনে গিয়েছিলে তুমি ,
ফিরতে পারোনি তাদের কবল থেকে ,
আমায় তুমি কার ভরসায় রেখে গেলে ?
কি হবে ? আর আমার বেঁচে থেকে ?
সরকার দিলো সম্মান তোমায় ,
অনেক মালা পড়লে গলে ,
আমার পড়ানো মালাটি শুধুই ,
তুমি ছিঁড়ে চলে গেলে !
নন্দা   27.10.16   2-30AM.

Thursday, October 27, 2016

"আকুতি" ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
++++++++++++++
বাবা ছেড়ে গেছেন ,
বহু আগে তাদের ,
মা-ই ছিলেন শুধু ভরসা ,
মৃত্যুর কোলে শায়িত তিনি ,
ছেলের চোখে নামে বরষা |
মা কেঁদে বলে ,"খোকারে আমার -
থাকিস ভালোভাবে ,
ঘরের তাকে রেখেছি তুলে ,
নারকেলের নাড়ু আর মোয়া বেঁধে |

জামা , প্যান্ট তোর কেঁচে রেখেছি ,
মাটির বড় জালাতে ওই ,
আমি চলে গেলে পৃথিবীতে তোর
থাকবে নাতো কেউ |"
কথা নেই কিছু ছেলের মুখে ,
চুপটি করে আছে পড়ে মায়ের বুকে ,
একটু একটু করে নিঃশ্বাস মায়ের ,
বন্ধ হবার পথে ,
ছেলে ভাবে মনে মনে ,
"ভগবান তুমি এত নিষ্ঠুর কেন ?
জম্মের পরেই বাবাকে নিলে ,
এখন মাকে কেন টানো ?
মায়ের সাথে আমাকেও নাও ,
বাঁচতে আমি চাই না ,
মা ছাড়া আমার ভুবন আঁধার ,
আমি যে আঁধারে পথ চিনি না |"
নন্দা   26.10.16  2AM.

Wednesday, October 26, 2016


"খোকা ও পাখির সংলাপ"
                                   (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
খোকা -- ছোট্ট পাখি খাঁচার ভিতর ,
              কেনো ঝাঁপটাস তোর ডানা ,
              কত সুখে রেখেছি তোকে ,
              শুধু উড়াই  তোর মানা |
পাখি ---এ সুখ আমি চাই না খোকা ,
             ছেড়ে আমায় দাও ;
             উড়বো আমি মনের সুখে ,
             আমায় স্বাধীন হতে দাও |
খোকা --কেন পাখি ?তোমায় আমি ,
              রোজ খেতে দেই সকাল বিকাল ,
              বাইরে আছে অনেক পাখি ,
             খাবারের যে বড়োই আকাল |
পাখি ---আমরা হলাম ছোট্ট জীব ,
                একটু পেলেই খুশি ,
               ভাগ করে খাই সবাই মিলে ,
              চাইনা কেউ একটুও যে বেশি |
                তোমরা হলে শ্রেষ্ঠ জীব ,
               তোমাদের চাই অনেক -
               আমরা থাকি মিলে মিশেই ,
               গাছের একটি ডালেই |
              দাওনা আমায় ছেড়ে খোকা ,
              শুধু উড়তে আমি চাই -
              যতই থাকুক খাবার কাছে ,
               বদ্ধ খাঁচায় সুখ মোটে নাই |
নন্দা  25.10.16   4pm.                                        

Tuesday, October 25, 2016

"হায়রে নারী জীবন"
                                ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )

ছেলেবেলার দিনগুলি সব ,
কাটলো যেন তাড়াতাড়ি ,
কৈশোর যেন দাঁড়ালোই না ,
দিলো পরের বাড়ি পাড়ি |
পরের  ঘরে অজানা সব ,
জানতে হবে নানান ভাবে ,
নিজের ব্যথা বুকে চেপে ,
তাদের ব্যথা ভুলাতে হবে |
যতই নারীর শিক্ষা থাক
হোকনা সে চাকুরীজীবী ,
স্বাধীনতায় তার না থাক বাঁধা !
সকল কাজে অনুমতিতেই সাধা |
বাপের দেওয়া পদবী তার ,
বিয়ের পরেই ছাড়তে হবে ,
পরের ঘরে থেকেই তবে ,
পরকে আপন করতেই হবে |
শ্বশুরবাড়ি যদি হয় ভালো ,
সম্পর্ক থাকবে বাপের ঘরের সাথে ,
তারা যদি না চায় তা ,
পারবেনা আসতে   কোনো মতে |
চাকুরীজীবি নারী তুমি ,
সরকার দিলো অবসর ,
সংসারে তোমার নেই কোনো ছুটি ,
সেবা যত্ন ,কাজের থাকবেনা কোনো ত্রুটি |
পুরুষ তুমি রাজা মানুষ ,
অফিস দিলো অবসর ,
মোবাইল আর রিমোট নিয়ে ,
খেয়ে, দেয়ে  কাটাও  সময় তোমার  |
নেই কোনো অবসর সব নারী জীবন !
মানো বা না মানো -
যুক্তি তর্ক যতই দেখাও ,
ফিরবেনা এই সমাজের চেতন |
জানি গো জানি ,বলবে সবে -
সব পুরুষ সমান নয় ,
তর্কের খাতিরে মেনেও নিলে ,
আদিকাল থেকে চলছে এটাই ভবে |
নন্দা   25.10.16  2AM.



Monday, October 24, 2016

"চিরকুট' 
                     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

তুমি আমার স্বপ্নের সারথি হবে ?
তোমার সাথে পাড়ি দেবো জীবনসাগর ,
তুমি আমার আশার কুঁড়ি হবে ?
সে কুড়ি আমরা দু'জনে মিলে ফুঁটিয়ে রাখবো আজীবন -
হবে কি তুমি আমার বিশ্বাস ?
চোখ বন্ধ করে -
যার হাত ধরে আমি সারাটা জীবন চলতে পারবো |
নন্দা   21.10.16   1-30 AM.

Thursday, October 20, 2016


শুনেছি তন্ত্রসাধনার মাধ্যমে মানুষ মানুষের ক্ষতি করে | সেটাও তো সেই মা কালির সাধনা করেই অন্য সন্তানের ক্ষতি করা | আচ্ছা এই ক্ষতি কি দীর্ঘস্থায়ী হয় ? জানি অনেকে বিজ্ঞানের যুগে এটা বিশ্বাস করবেন না ; কিন্তু আমি ভুক্তভুগি এবং বিশ্বাস ও করি | স্বয়ং দেবী মা সন্তানের ক্ষতি করছেন ; ভক্তের আকুল প্রার্থনা শুনে , সকলেই মায়ের সন্তান অথচ মা সন্তানের অমঙ্গল করছেন | বাস্তব ক্ষেত্রেও অনেক সময় দেখা যায় জম্মদাত্রী মা ও সন্তানের অমঙ্গল চান ; পৃথিবীতে অনেক মা-ই আছেন যারা সন্তানের অমঙ্গল কামনা করেন ,তাদের সুখ সহ্য করতে পারেন না | বিশেষতঃ ছেলের বিবাহের পর পরের মেয়েটাকে যখন সহ্য করতে পারেন না তখন তার আসল রূপ ধরা পরে | নানান ভাবে ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যাতে সে তার বৌয়ের কথা না শোনে | বুদ্ধিমান ছেলে হলে নিজ চোখে ও নিজ কানে  বৌ ও মায়ের কথোপকথন লুকিয়ে শুনেই বুঝতে পারে কে প্রকৃত দোষী | আর তখন বৌয়ের পক্ষ নিলেই ওই ছেলেটি পরিবারের চোখে বৌ ভেড়া হয়ে যায় | আবার অনেক মা নিজের সন্তানকে রেখে পরপুরুষের সাথে পালিয়েও যায় | মায়ের গোপন কিছু জেনে ফেলায় অনেক মা নিজ সন্তানকে সুপারি কিলার দিয়ে খুন ও করায় | যে মিথটা শত শত বছর ধরে চলে আসছে -"কু সন্তান অনেকের হয় , কু মাতা কখনোই নয় -" আজ এটা ভুল প্রমাণিত | নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বললাম ; সকল নারীর প্রতি সম্মান রেখেই কারণ আমিও এক নারী ...

"জীবন নাটক"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
~~~~~~~~~~~~~~~~~
জীবনের কিছু স্বপ্ন ,
  সমুদ্রের স্রোতের মত ভেসে যায় -
আর কিছু তার পূর্ণতা পায় |
কিছু সম্পর্ক বেঁচে থাকার তাগিদে ,
 মেনে নিতে হয় -
আর কিছু সম্পর্ক -
 মন না চাইলেও ভেঙ্গে দিতে হয় |
জীবনের খেলাঘরটা যোগ বিয়োগের রঙ্গমঞ্চ -
এখানে গুণ আর ভাগ বলে কিছু নেই ,
নাটকের এক একটি অংশ ,
দিনের এক একটি ঘটনা ,
মৃত্যুই জীবন নাটকের শেষ অঙ্ক |
নন্দা   19.10.16   12-15AM.

Wednesday, October 19, 2016


'কেবল আমার'  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
-------------------------
এক আকাশের নীচে ,
থাকি আমরা সবাই ,
রাখিনাতো খোঁজ ,
কি ভাবে চলে পরস্পরের রোজ |
একের কষ্টে অন্য়ে কাঁদি ,
কখনো বা তা দেখে হাসি ,
বিপদে পড়লে নিজের পিঠ বাঁচাতে ,
যে যার মতই  শুধু সরে পড়ি |
মানুষ আমরা খাতায় কলমে ,
সংবিধানে আছে অধিকার ,
নেই কারও মান, নেই কারও হুস ,
সব কিছুই কেবল-'আমার আমার'|
নন্দা  18.10.16.

Tuesday, October 18, 2016

"হৃদয়ের ক্যানভাস" ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
................
মনের মাঝের  স্বপ্ন নিয়ে ,
 রং তুলি ছাড়া এঁকেছি অনেক ছবি ;
ক্যানভাস সেখানে হৃদয় আমার ,
মনে মনে আমি হয়েছি শিল্পী বুঝি !
শিল্পীর ছবি বিকোয় চড়া দামে -
চাইনা আমি স্বপ্নের ছবি বেঁচতে ,
যাকে নিয়ে আমি রচেছি স্বপ্ন ;
দিতে চাই শুধুই যে তাকে |
জগৎ জানবেনা আমার রচনা ,
 জানবে শুধুই একজনা ,
আজও তাকে আমি খুঁজে খুঁজে ফিরি ;
জানিনা এখনো আমি তার ঠিকানা |
নন্দা
17.10.16  10-30pm.

Monday, October 17, 2016

আমার গান :-
সখা,আমি বসে একা -
কবে পাবো তব- দেখা ,
ভালোবাসায় দেবে ভরিয়ে ,
দু'হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নেবে ,
সব বেদনা দেবে ভুলিয়ে |
কতজনে বলে, ভালোবাসি ভালো-বাসি -
আমি পাই খুঁজে, শুধু লালসা ..
পেতে চাই আমি- তব দুটি চোখে ,
অহংকারে ভরা ভালোবাসা -
জানি সখা জানি ,
হবে না দেখা কভু -
এ জীবনে তোমার আমার -
তবু ছলনায় আমি ;ভুলিয়ে রাখবো মন -
সত্যিকারের প্রেমেরই আশায় ,
তোমার বিহনে কাটবে জীবন মোর ,
যতদিন বাঁচবো এই ভুবনে |

নন্দা   27.2.16
'অঙ্গার'  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
""""""""""
তোমার বিহনে পুড়ে পুড়ে আমি ,
   হয়েছি যে অঙ্গার -
কখনো তুমি চাওনি জানতে ,
    কি ব্যথা লুকানো বুকে যে আমার |
তোমার তরেতে গাঁথা বকুলের মালা ,
    শুকিয়ে গেছে যে হায় !
সুবাস তার হারায়নি আজও -
    তোমার ভালোবাসার গন্ধ যে  ,
আজও  সে আমায় বিলায় |
নন্দা   22.9.16   9-30pm.

Sunday, October 16, 2016

সত্য মাঝে মাঝে খুব কঠিন হয় -
তাই বাস্তবকে মেনে নিতে হয় -
একটা মিথ্যে সাময়িক আনন্দ দেয় -
সারাজীবন যার ভার বইতে হয় -
নন্দা    22.1.16.

Saturday, October 15, 2016

"ভাবনার ফসল"  (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
**********
ভাবনার ফসলগুলো হয়ে যায় এলোমেলো -
পায় না খুঁজে তারা ঠিকানা -
জীবন যুদ্ধের হার জিতের খেলায় -
হেরে গেলে মন ভরে যায় বেদনায় ;
অমানিশার পরে আসে পূর্ণিমার চাঁদ -
সকলে কেন তবে ভুলে যাই   ,
আঘাতের বিনিময়ে আঘাত দেওয়া -
হয়ে গেছে আজ যেন রীতি হায় !
আঘাতের বিনিময়ে কাছে যদি  টানো তাকে ,
ভালোবাসা পেলে দেখো ভালো মানুষ হবে সে |
নীচে যাকে ফেলছো আজ তুমি ,
কালকে সে টেনে নামবে তোমাকেই |
কিছু স্বার্থ ত্যাগ করে বাঁচা যদি যায় তবে -
সকলকে ভালোবেসে সুখী হবে তুমিই ভবে ;
সুখ পাখি ,সুখ পাখি করে যে সকলে ,
ধরা দেবে তখন সে নিজে থেকে |
নন্দা   14.10.16   2am.

Thursday, October 13, 2016

"কত স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়"  (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
+++++++++++
বাতাসের বুক চিরে -
    হাহাকার আজিকে -
অত্যাচারিতের  পাশে কেউ  নেই -
    চারিদিকে অন্ধকার কোথাও আলো নেই -
কালোমেঘ ছেঁয়ে রেখেছে আকাশকে |
ভালোবাসা দিয়ে গড়া ছোট্ট সংসার -
    মাতাল স্বামীর কাছে মেনেছে পরাজয় -
সুখে ,দুখে পাশে থাকার অঙ্গীকার -
    নেশার কাছে মানে সব হার |
কত স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় -
    নেশা করার আনন্দেতে -
কেউ তার কোনো খবর রাখে না |
    মিতাহীন হয়ে পড়ে কত বাপ্ ও মায় -
বোন হারা কত ভাই অসহায় |
    প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণার ঢেউগুলি -
আমরণ আর যে থামে না ;
    বিচারের নামে চলে শুধু যেন প্রহসন ,
সুবিচার আজ আর মেলে না !!
নন্দা   13.10.16   9pm.

Wednesday, October 12, 2016

"কেন ডাক আমায়"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
.............................
স্বপ্ন রাতে ডাকে আমায় -
  আয়রে চলে আয় ;
ফেলে আসা দিনগুলিতে -
  চলনা চলে যাই |
সেথায় বিকাল হলে ছুটাছুটি ,
  টিফিন বেলায় হুটোপুটি ,
ছুটির ঘন্টা পড়ার আগেই -
  বোগলে নিয়ে বই ;
এদিক ওদিক তাঁকিয়ে খুঁজি ,
  প্রিয় বন্ধুটি কই ?
ছুটির দিনে  পুকুরেতে সাঁতার কাটা -
  শাপলা তুলে জড়ো করা ,
হাঁসের সাথে পাল্লা দিয়ে ;
  ডুব সাঁতারে পুকুর পাড় |
ধানি জমির আলটি বেয়ে -
  অনেক দূরে হেঁটে যাওয়া ,
হাঁটতে হাঁটতে  নীচু হয়ে ,
  দুস্টুমিতে অন্যের জমির -
সিম আর কড়াই তোলা |
দিনগুলি সব ফেলে এসে -
  হয়ে গেছি আজ যে বড় ,
স্বপন মাঝেই আসে তারা ;
  বাস্তবেতে দেয়না  ধরা |
নন্দা   12.10.16.  10-30PM.
 

Monday, October 10, 2016

"পথ ভোলা"  (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )

আমি তো ঠিক তেমনই আছি -
    শুধু বদলে গিয়েছো তুমি ,
আজও তোমার কথা মনে হলে ,
    কাঁদি শুধু  একা আমি |
কথা দিয়েছিলে কাছে কাছে রবে ;
   হয়তো গিয়েছো ভুলে -
নীড় হারা পাখি সাথী খুঁজে ফেরে ;
    তোমারই মত সেও গেছে পথ ভুলে |

"নন্দা"    30.4.15.
'নীরব কেন তুই'  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
আর থাকিস না নীরব তুই -
   মুখর হ এবার ,
তোর নীরবতায় আমার স্বপ্ন সব ,
    ভেঙে -হবে যে চুড়মার |

আর থাকিস না শান্ত তুই ,
    উচ্ছাস হ এবার -
তোর শান্ত স্বভাব ;
    উঠবে আমার জীবনে যে ঝড় ,
আর ফেলিস না চোখের জল তুই ,
    তাকাস না আর ডাইনে বায় ,
বুক ফুলিয়ে সামনে তাঁকিয়ে -
    বলনা তুই -"ভালো-বাসিস আমায় |

নন্দা   17.1.14     

Saturday, October 8, 2016

"অবাক শহর" ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
.....................
সোঁদা মাটির গন্ধ ছেড়ে -  
   যেদিন আমি কোলকাতে এলাম -
গগনচুম্বি অট্টালিকার মাঝে -
   গরীবের রক্তের দাগ আমি দেখেছিলাম |
কাজের আশায় অফিসের -
    দ্বারে দ্বারে ঘুরে বুঝেছিলাম -
মানুষের মনটা এখানে নরম নয় -
    ইস্পাত কঠিন পাথরের মন এদের |
ভালোবাসা বলতে বোঝে দামি গাড়ি ,বাড়ি ;
    এদের কাছে বাবা ,মা জঞ্জাল স্বরূপ |
টাকা দিয়ে রাখে তাদের অন্যখানে ,
   সন্তান হয়ে পরিচয় দিতে লজ্জা পায় -
কথা দিয়ে কথা কেউ রাখে না ,
    কেউ কারও সম্মানের দাম দেয় না -
সব মানুষগুলি কেমন যেন বহুরূপী -
  স্বার্থ ছাড়া কেউ কিছু বোঝে না ,
রাস্তা-ঘাটে নারী শুধু অসহায় ,
    মানবরূপী দানবগুলির স্বীকার হয় ,
বিচারের নামে চলে শুধু প্রহসন ,
    যার যত টাকা আছে -
সেই শুধু পায় বড় আসন |

নন্দা   29.03.16   8PM.

Thursday, October 6, 2016

"বুঝবে সেদিন"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
{}{}{}{}{}{}{}{}{}{}{}{}{}{}{}{}{}{}
আঘাত দেওয়া স্মৃতিগুলি -
 বুকের মাঝে নিয়ে -
পাহাড় ,সাগর ,মরুভুমি -
 একাই বেড়াবে বয়ে |
চোখের জলে ভিজবে রুমাল -
 ভুলবে নাওয়া খাওয়া -
বুঝবে তখন তুমি সেদিন -
 ভালোবাসার দহন জ্বালা |
যতই তুমি খোঁজো আমায় -
 পাবে না আর দেখা -
চোখের জলে ভিজিয়ে বালিশ -
 বুঝবে - জীবন তোমার ফাঁকা |
"নন্দা"  25.8.16   10PM.

Wednesday, October 5, 2016

"মিছে নয়"  (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
.............
রাতের আঁধারে একা একা বসে -
    ভাবি কত কথা -
ফেলে আসা দিনের -
    স্মৃতিগুলি মনে হলে -
প্রাণে জাগে কত ব্যথা |
বকুলের মালা গেছে শুকিয়ে -
    তবু আছে গন্ধ তাতে -
ভালোবাসার মালা ঝরে গেছে -
    কথাগুলো হয়েছে মিছে |
ফুলে ভরা ছিলো বাসর আমার -
    ভেঙ্গে চুড়ে  হোলো চুরমার -
কি যে অপরাধ জানিনা আমি -
    স্বপন ভেঙ্গে হোলো খানখান |
আজও আশা জাগে মম প্রাণে -
    হয়তো ফিরবে তুমি -
ভালোবাসা মোর ছিলোনা মিছে -
    কি করে বোঝাবো আমি ?
নন্দা   26.9.16   1-30AM.
"জীবন নিয়ে খেলা"  (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
-------------
জীবনের কিছু পরাজয় -
 মেনে নিতে হয় -
আশায় আশায় দিন চলে যায় -
কিছু আশা অপূর্ণই থেকে যায় |
ভালোবাসা ,স্বপ্ন দেখা -
কিছু পাওয়া ,কিছুটা বা না পাওয়া -
এ ভাবেই ভেসে চলে জীবনতরী -
রোগ ,যন্ত্রনা ,দুঃখ সুখে -
চেষ্টা করি থাকতে পরম সুখে |
হঠ্যাৎ আসা ঝোড়ো হাওয়ায় -
মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়ায় -
বাঁচার জন্য শুধুই লড়াই -
মিছেই মোদের অহং-কারের বড়াই |

নন্দা 4.10.16   9-30PM.

Sunday, October 2, 2016


"খুশি শুধু খুশি"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )

সন্ধ্যা বেলায় সাঁঝের আকাশ ,
বললো আমায় ডেকে ,
ওই দেখনা   ফুটেছে শিউলি ,
আননা পেড়ে গাছ থেকে |
শিউলি বলে আমায় তুলে ,
দিও মায়ের চরণ তলে ,
ধন্য হবে জীবন আমার ,
গেলে মায়ের পদ  তলে |
আকাশ আমায় আবার বলে ,
জোস্না ভরা রাতে ,
কাশফুলগুলো নাচছে দেখো ,
তুলে এনো কাল প্রভাতে |
আসছে পুজো ,বাজছে ঢাক ,
মন সকলের খুশিতেই ভরে থাক,
রোগ,যন্ত্রনা, দুঃখ ব্যথা ,
সারাবছরই সাথী ,
এগুলি সব ভুলে যেয়ে ,
এ কটাদিন  খুশিতেই মেতে থাকি |
নন্দা  2.10.16  2am.
"কেনো গো কাঁদো"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
====================

হরিণ নয়না চোখ দু'টিতে ,
অশ্রু কেনো ঝরে ?
বলোগো তোমায় দিলো কে আঘাত ?
কাঁদছো কেন এমন করে ?
ও চোখে যখন  ঝরে জল ,
বুকেতে আমার উঠে ঝড় ,
সে ঝড় থামাতে তুমিই পারো ;
মুখে একটুখানি হাসি ধরো |
হাসিতে তোমার মুক্ত ঝরে ,
সে হাসি আমায় পাগল করে ,
আমি হতে চাই-তোমার চোখে পাগল ,
মানায় না ঐ চোখেতে একটুও যে জল |

নন্দা  02.10.16  1-45am.
"তোমাকেই চাই"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
হাতের কঙ্কন বাজে রিনিঝিনি -
মন বলে মোর তোমাকেই শুধু চিনি -
জানি জানি প্রিয় তুমি আসবে -
কানে কানে মোর ভালোবাসার কথা বলবে |
চোখ দু'টি খোঁজে ওই মুখখানি -
কান দু'টি সজাগ শুনতে তব পদধ্বনি -
ঠোঁট দু'টি মোর থর থর কাপে -
তোমারই পরশের লাগে |
জুঁই ফুলে মোর কবরী বেঁধেছি _
ভালোবাসো তুমি তাই -
ডাগর চোখে কাজল এঁকেছি -
শুধু তোমারই পরশ পেতে চাই |
শিহরিত বুক কাঁপে ঘন ঘন -
পথ চেয়ে বসে আছি -
তাড়াতাড়ি এসে দু'বাহুতে জড়িয়ে বলো -
"শুধু তোমাকেই ভালোবাসি" |
--------------
নন্দা   26.9.16  2AM.

Saturday, October 1, 2016

"তোমাদের জন্য"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )  ^^^^^^^^^^^       ছেলেকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে বার বার ঘড়ির কাটার দিকে চাইছে সুমিতা | আজ রাহুল বলে গেছিলো সন্ধ্যাতেই ফিরে আসে ফ্ল্যাটের শেষ কিস্তির টাকাটা দিয়ে দলিলটা নিয়ে আসবে | কিন্তু রাত বারোটা হতে চললো এখনো রাহুল ফিরলো না দেখে সুমিতা খুব চিন্তায় পরে গেলো | হঠ্যাৎ কলিং বেলের আওয়াজ | সুমিতা দৌড়ে যেয়ে দরজা খুলে দেখে রাহুল দাঁড়িয়ে কিন্তু তার সর্বশরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে | সুমিতা দেখতে পেয়ে চিৎকার করে উঠলো ,   --কি হয়েছে তোমার ?      এ কথার উত্তর না দিয়ে রাহুল তাকে বললো ,   --তুমি টাকাটা দাও | আজ ফ্ল্যাটের শেষ কিস্তির টাকাটা দিয়ে দলিলটা নিয়ে আসি | এর পর আর সময় পাবো না |    --কিন্তু এত রাতে এই অবস্থায় - তোমার কি হয়েছে বোলো ?   -- সব শুনতে পাবে | আগে টাকাটা নিয়ে আসো |        কিংকর্তব্যবিমূড় সুমিতা আলমারি খুলে টাকাটা নিয়ে গেলো কিন্তু রাহুল হাতে হাতে নিলো না |    -- নীচুতে রাখো আর একটা প্লাস্টিক ব্যাগ নিয়ে এসো | হাতে রক্ত লেগে আছে টাকার গায়ে লেগে যাবে |    সুমিতা টাকাটা নীচুতে রেখে ঘরে গেলো প্লাস্টিক আনতে | ফিরে যেয়ে দেখে টাকা নিয়ে রাহুল বেড়িয়ে গেছে | সুমিতা ভাবতে লাগলো তাহলে রাহুল প্লাস্টিক আনতে কেন বললো ? ভাবতে ভাবতে ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো | তিনতলা ফ্ল্যাটের এতগুলি সিঁড়ি ভেঙ্গে নামতে নিশ্চয়ই তার অনেক সময় লাগবে | কিন্তু ব্যালকনিতে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও সে রাহুলকে দেখতে পেলো না |সারারাত উৎকণ্ঠা আর দুঃচিন্তা করতে করতে ভোরের দিকে সুমিতার চোখ দু'টি ঘুমে জড়িয়ে আসলো | বেলের আওয়াজ পেয়ে রাহুল এসছে ভেবে ছুটে যেয়ে দরজা খুললো | কিন্তু না , তার রাহুল আসেনি | তার ফ্ল্যাটের আশেপাশের কিছু লোকজনকে দেখে সে জানতে চাইলো ,   -- কি ব্যাপার ? এত ভোরে আপনারা সবাই ?   --আপনি কিছু জানেন না ?কিছু শোনেননি এখনো ?   --আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না , আপনারা কি বলছেন ?     এক প্রতিবেশিনী সুমিতার দরজার সামনে পড়ে থাকা পেপারটা হাতে ধরিয়ে বলে ,"প্রথম পাতাতেই আছে |"সুমিতা কাগজটা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে প্রথম পাতায় চোখ রাখে - "তরুণ ট্রাফিক সার্জন রাহুল মজুমদারের অকাল মৃত্যু"-- এক নিঃশ্বাসে পুরো খবরটা সুমিতা পড়ে | সেদিন রাহুলের ডবল ডিউটি ছিল | একটা শেষ করে অন্যকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে ব্যক্তিগত কাজের জন্য দ্বিতীয় শিফটে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলো | কাজের তাড়ার কারণে সে ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়াই শহরের ব্যস্ততম রাস্তা কার্জন পার্কের কাছ থেকে দৌড়ে পাড়  হতে গিয়ে বিকাল পাঁচটার সময় এক্সসিডেন্ট করে এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান |  পড়তে পড়তে সুমিতা জ্ঞান হারায় | সকলের চেষ্টায় যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন প্রতিবেশী এক ভদ্রলোক প্লাস্টিকের কাগজে মোড়া একটি ব্যাগ এগিয়ে দেন তার দিকে | সুমিতা ব্যাগটি দেখে চমকে ওঠে | এই ব্যাগটিই তো কাল রাতে ঘরে ঢুকে রাহুল বলাতে সে নিতে এসছিল | হঠ্যাৎ তার মনে পড়ে যখন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সে রাহুলকে দেখার চেষ্টা করছিলো তখন হাতের থেকে প্লাস্টিক ব্যাগটা পড়ে গেছিলো | ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করে ,  --কোথায় পেলেন আপনি এটা ? --আপনাদের লেটার বক্সে ছিলো |   সুমিতা খুলে দেখে ফ্ল্যাটের দলিল | বিড়বিড় করে বলতে থাকে ," রাহুল ঈশ্বর তোমাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিলেন কিন্তু তুমি আমাদের মাথার উপর ছাদ টুকু কাউকেই কাড়তে দিলে না | শেষ মুহূর্তেও তুমি সেটা রক্ষা করেই গেলে |"  """"""""""""" নন্দা   28.9.16  9-30PM.

Friday, September 30, 2016

"মাতৃ বন্দনা"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
মহালয়ার এই পূর্ণ প্রভাতে -
আনন্দে নেচেছে মন -
শিউলিফুলের গন্ধে মাতাল -
হয়েছে আজ ত্রিভুবন |
পৃথিবীর এই দুর্যোগ ক্ষনে -
মত্যে আসছেন মা -
অসুররূপী জঙ্গিদের তুমি -
কিছুতেই ছেড়ো না |
দেবতাদের তুমি দিয়েছিলে সুখ -
অসুর বিনাশ করে -
মত্যে এবার হোক তোমার বন্দনা -
জঙ্গি দমন করে |
.......
নন্দা   30.9.16  1-30AM.

Thursday, September 29, 2016

"বিষাক্ত বাতাস"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
||||||||||||||||||||||||||||||||
বাতাসে পাই শুধু বারুদের গন্ধ ,
রোদ,বৃষ্টি,ঝড়ে অসহায় ফুটপথে শুয়ে ,
নিঃশ্বাসে বিষ ঢোকে -
ঘুমের মাঝেই মৃত্যুকে আহ্বান করে |
জীবনটা গোলমেলে বুঝে গেছে সকলে -
চারিদিকে আছে শুধু হাহাকার ;
পৃথিবীতে কেউ কারও নয় ,
অসহায়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে সমাজ |
খবরের কাগজে ভর্তি খবর ,
কেউ নেয় না কারও খোঁজ -
টাকার প্রয়োজনে খবর হয় বিক্রি ;
পড়ে থাকে অসহায় সেই তিমিরেই |
মানুষের জীবনে নেই কোনো মূল্য ,
টাকাটাই যেন আজ সব ;
টাকার পিছনে ছুটছে সবাই -
অসহায় মানুষকে ভাবে পশুতুল্য |
...........
নন্দা  29.9.16  2AM.
"ভালোবাসা কারে কয়" (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
++++++++
ভালোবাসা --
মিছে আশা সর্বনাশা ,
ভালোবাসা --
মুখে নয় বোঝো শুধু চোখের ভাষা ,
ভালোবাসা --
বিশ্বাসের ভীত গড় শক্ত করে ,
ভালোবাসা --
রাখো বেঁধে তাকে বাহুডোরে ,
ভালোবাসা --
সারাজীবন থাকো শুধু হাতটি ধরে ,
ভালোবাসা --
সুখ-দুঃখগুলি ভাগ করে নিও নিজেদের মত করে ,
ভালোবাসা --
শুধু পরস্পরের বোঝাপড়া -
সারাজীবন এক সাথে থাকার অঙ্গীকার করা ,
একে অপরের দোষ ত্রূটিগুলি শুধরে নেওয়া ,
জীবনে সকল কাজে ,সকল সময় পাশে থাকা |
এর ই নাম ভালোবাসা --
কি তাই তো ?
 'নন্দা'   28.9.16  2-30AM.

Monday, September 26, 2016


"কেমন মা তুমি"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
~~~~~~~~~~
বছর শেষে মা আসেন বেড়াতে -
একবার বাপের বাড়ি -
আমার বাপের নেই কোনো ঠিক -
আমি শুধু কেঁদে মরি !
নারী চরিত্র খারাপ হলে -
বেশ্যা তাকে বলে -
বেশ্যা আমায় বানিয়েছে যারা -
বলো মা, তাদের কি নামে ডাকে ?
যে বাবুরা আসে রাতের আঁধারে -
আমার গরীব ঘরে -
টাকার বিনিময়ে শরীর কেনে -
কখনো নেয় না নিজের করে  |
মায়ের জীবন যে ভাবে কেটেছে -
আমারও কাটছে তাই -
বাঁচাও মা আমাকে তুমি -
আমি পরিত্রান চাই |
অভাব আমায় করেছে বেশ্যা -
হয়নিকো নিজ থেকে -
আমিও চাই একটি সংসার -
জগৎজননী, একটু দাও সে অধিকার |
নন্দা   26.9.16  2AM.

Sunday, September 25, 2016


ঠিকানা ---(নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী ) ++++++++++===  হাসপাতালের বেডে শুয়ে পুলিসের উচ্চপদস্থ  অফিসারের কথার উত্তরদিতে বারবার হোঁচট  খাচ্ছিলেন প্রণববাৰু  বাবু। কি করে এটা সম্ভব? অজয় ছিল ক্লাসের ফাষ্ট বয় ।প্ৰতি  ক্লাসে সে প্রথম  হয়ে উঠতো। তারমেধা শক্তি নিয়ে  স্কুল  অফিস কক্ষে  কতবার আলোচনা হয়ছে। মাধ্যমিকে ৯৭ শতাংশ নম্বর নিয়েপাশ করেছিল ।উচ্চ মাধ্যমিকের   রেজাল্ট ও  সে খুব ভাল করেছিল ।শিক্ষকদের সম্মানকরা ,তাদের মান্য করা ধীর স্থির  ভাবে কথা বলা -অজয়ের আজ এই পরিনতি কেন?   হাসপাতালে ভর্তি  হওয়ার কিছু দিন আগেআবাসনের কিছু মানুষের    সাথে তিনি ডায়মন্ডহারবার কোন একটি জায়গায় পিকনিকে যান | কিছু কিশোর  কিশোরীও   তার মধ্যে ছিল। সামনেই ছিল গঙ্গা  নদীর পাড় ।খাওয়া দাওয়ার পর ছেলে মেয়েরা ওখানেই হৈচৈ করছিল । সন্ধ্যা হয়ে আসছে সকলকে ফিরতে হবে তিনিও তা্ঁরই মত বয়স্করা মিলে নদীর পাড়ে ওদের খোঁজে যান। হঠাৎ দেখতে পান একটি বাঁশঝাড়ের ভিতর একটি লোককে হাত,পা,মুখ বে্ঁধে কিছু যুবক ছেলে মিলে ধরে রেখেছে। আর এক জনে তার মাথায় পিস্তল ধরে রেখেছে। নির্ভীক প্রণব বাবু সামনে এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে বলে উঠেন "এই কি করছ তোমরা ?ওকে মারছোকেন "?সঙ্গে সঙ্গে  পিস্তলের মুখটা ঘুরে যায় প্রণববাবুর দিকে| তিনি আবারও বলেন, `তোমরা ওনাকে ছেড়ে দাও'। হঠাৎ তাদের মধ্যে থেকে একটি ছেলে বলে উঠে, আমাদের ঝামেলার মধ্যে আপনি আসবেন না, "মাষ্টারমশাই" । "মাষ্টারমশাই" তারমানে ছেলেটি আমাকে চেনে! তুমি আমাকে চেন? কেতুমি ? কিনাম তোমার? তাদেরযে মধ্য থেকে আর একটি ছেলে হঠাৎ করে কোমর থেকে পিস্তল বের করেই প্রণববাবুর দিকে তাক করে ট্রিগার  চাপতে চাপতেই বলে ,"বুড়োর অনেক কিছু জানতে ইচ্ছাকরছে। তাই সব জানিয়ে দিলাম।গুলি এসে প্রণববাবুর ডান কাঁধে বিঁধলো।যে ছেলেটি এক জনকে পিস্তল তাক করে দাঁড়িয়ে ছিল সে চিৎকার করে উঠলো ,"এটা কি করলি? "উনি আমার মাষ্টার মশাই" দৌড়ে এসে প্রণববাবুকে নীচ থেকে তুলে মাথাটা কোলের উপর নিয়ে বললো, "মাষ্টার মশাই" খুব কষ্ট হচেছ? কিছুই হবে না আপনার ।"আমি আছি তো" ।কোন রকমে তিনি বললেন, "তুমি কে বাবা"? তুমিকি আমার ছাত্র ? "আমি অজয় মাষ্টারমশাই। অজয় স্যানাল।মনেপড়ছে  ?" প্রণববাবুর আবছা  আবছা  সব মনে পড়তে লাগলো। পরক্ষেনেই তিনি জ্ঞান  হারালেন। তারপর তার যখন জ্ঞান ফিরলো  হাসপাতালের বেডে, তখন তিনি পুলিশ অফিসারের সামনে বসে।সে দিন অজয়েরা  দলেমোট চার জন ছিল। তিনজনই পালিয়ে গেছিল ।কিন্তুঅজয় তাদের টানাটানিতেও তার মাষ্টারমশাইকে ঐ অবস্থায় ফেলে যায় না ।প্রণববাবুর অন্য বন্ধুদের কাছ থেকে সব জেনে পুলিশ অজয়কে গ্রেফতার   করে ।পুলিশ অফিসারএর কথার জবাবে প্রণববাবু বিড়বিড় করতে থাকেন । অফিসার তাঁর কাছে জানতে চান ঘটনার বিবরণ এবং অজয় নামে একটি ছেলেকে যে গ্রেফতার   করা হয়েছে তাও তিনি প্রণববাবুকে জানান ।সে দিন অজয়েরা  দলেমোট চার জন ছিল। তিনজনই পালিয়ে গেছিল ।কিন্তুঅজয় তাদের টানাটানিতেও তার মাষ্টারমশাইকে ঐ অবস্থায় ফেলে যায় না ।প্রণববাবুর অন্য বন্ধুদের কাছ থেকে সব জেনে পুলিশ অজয়কে গ্রেফতার   করে ।পুলিশ অফিসারএর কথার জবাবে প্রণববাবু বিড়বিড় করতে থাকেন । অফিসার তাঁর কাছে জানতে চান ঘটনার বিবরণ এবং অজয় নামে একটি ছেলেকে যে গ্রেফতার   করা হয়েছে তাও তিনি প্রণববাবুকে জানান ।কিছুক্ষণচুপ করে থেকে প্রণববাবু বলেন,"ঐ ছেলেটি তো কোন দোষকরেনি ।ওতো আমাদের সাথে পিকনিকে গেছিল ।প্রণববাবু এক জন আদর্শবাদী, স্পষ্টভাষী, সত্যবাদী শিক্ষক। জীবনে এই প্রথমবার তিনিমিথ্যা বললেন এবং অন্যায়ের সাথে আপোস করলেন ।চল্লিশ বছরের শিক্ষকতাজীবন দিয়ে মানুষ গড়ার কারিগর প্রণববাবু বুঝেছিলেন ,অজয়ের মধ্যে এখনও কিছুটা মনুষ্যত্ববোধ লুকিয়ে আছে ।সুযোগ পেলে হয়তো সে তার ভুল টাকে সংশোধন করে নিতে পারবে। তাই দাঁতে দাঁত টিপে  তিনি  অফিসারের  সামনে মিথ্যার আশ্রয়  নিলেন।   প্রমাণাভাবে  অজয় বেকসুর খালাস পেয়ে গেল। প্রণববাবুর ধারনা যে মিথ্যা নয় তার প্রমান  তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়িতেফেরার মাসখানেকের মধ্যে টের পেলেন । একদিনঝড় জল মাথায় করেদুপুরের দিকে অজয়ঠিক তার মাষ্টারমশাইয়ের বাড়িতে উপস্থিত হলো। অকৃতদ্বার প্রণববাবু তার সর্বক্ষনের সঙ্গী  কন্যাসমা ,মা-বাবা মরা কাজের মেয়ে চঞ্চলা  বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে অজয়কে দেখে জানতে চায় সেকিচায় ।জবাবে অজয় তাকে জানায় মাষ্টারমশাইকে গিয়ে বলুন - "অজয়দেখা করতে এসেছে।" ঘরের ভিতর থেকে প্রণববাবু বললেন , "হ্যাঁ ভিতরে এসো আমি তোমার  অপেক্ষাতেই  আছি।ভিতরে ঢুকে অজয় তার মাষ্টারমশাইএর পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে তার  এপথে আসার সমস্ত ঘটনা জানায়। শুনতে শুনতে প্রণববাবুর চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে।            উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংএ যখন তার ফাইনাল ইয়ার তখন  সে এক দিন বাড়িতে আসে হোষ্টেল থেকে ।ঘটনা চক্রে সেদিনই বাড়িতে ডাকাত  পরে। বাঁধা দিতে গেলে তারা অজয়ের হাত পা বেঁধে দেয় ।মা বাবা এবংতার সামনে অজয়ের ছোট বোনের উপর অত্যাচার করে। চলন শক্তিহীন অসুস্থ বাবা সেই রাতেই হার্ট  এ্যাটাকে মারা যান ।মা , বোনের প্রতি  ঐরকম অত্যাচার দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে রাতের পরে বোন গুম মেরে  যায়। বাকশক্তি  হারিয়ে উন্মাদ বোন  এখন আছে                         এ্যাসাইলামে। কিছু দিনের মধ্যে মা ও মারা যান ।জীবনের প্রতি  বিতৃষ্ণায়, অন্ধ আইনের প্রতি  ঘৃণায় পড়া শুনা ছেড়েদিয়ে নিজের হাতেই আইন তুলে নেয় ।তিন বছর পর খুঁজতে খুঁজতে ঐ ঘটনার নাটের গুরুকে সেদিন নাগালের মধ্যে পেয়েছিল যে তার চোখের সামনে তার বোনের জীবনের চরম ক্ষতি  করেছিল।আস্তে আস্তে প্রণববাবু অজয়ের মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করেন , "এখন কোথাই আছো?"  "রাস্তায়।" "সেকি?"  "ওটা তো আমাদের ভাড়া বাড়িছিল । বোন কে এ্যাসাইলামে দেওয়ার পর আমার তো কোন ঠিকানার দরকার ছিল না মাষ্টারমশাই !"  "তুমি আমার কাছে থাকবে এখন থেকে । আমি তো একাই থাকি। গুটিকয়েক ছেলে -মেয়ে পড়তে আসে ।এখন থেকে তুমিই ওদের পড়াবে। জীবনটাকে নতুন করে শুরুকরো।বোনের ভালভাবে চিকিৎসা করে তাকে সুস্থকরে একটা সুন্দরজীবন দাও | আইন তার নিজের পথে চলুক | আমরা সুবিচারের আশায় থাকবো |  যা হয়ে গেছে পিছন ফিরে তাকে আর তাকিয়ে দেখ না। আমি তোমার সাথে আছি। আজ থেকে আমার বাড়িটাই তোমার বাড়ি। আর এটাই তোমার ঠিকানা | "
+++++++++=+=শেষ +++++++++==+
নন্দা

Saturday, September 24, 2016

"ভুতুড়ে কান্ড" ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী ) ^^^^^^^^^^^^^^^^^
  বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে কলেজে পড়াকালীন সময়ে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্যহীন ভাবেই বেড়িয়ে পড়লাম | সবাই মিলে প্রথমে আসলাম হুগলি | সেখানে আমার এক কাকার বাড়ি আছে | বাড়িটা একটু ভিতরের দিকে | পাঁচজন যেয়ে সেখানে উপস্থিত হলাম | নানান ধরণের গল্প ,গুজব হতে হতে আমার খুড়তুতো ভাই বললো ওখানেই একটি রাজবাড়ী আছে ; যেখানে শুধুমাত্র  ভুতেরই বাস | অনেকেই নাকি নানান ভাবে তাদের অস্তিত্ব টের পেয়েছেন | সকলেরই বয়স কম , প্রত্যেকেই নিজেদের অসীম সাহসী ভাবি | ঠিক করলাম সকালেই ওই রাজবাড়িতে যাবো |    উঠতে উঠতে একটু বেলায় হয়ে গেলো | কাকিমা বললেন স্নান , খাওয়া ,দাওয়া করে যাতে আমরা বেড়োই | এ সব সারতে সারতে আমাদের প্রায় বারোটা বেজে গেলো | খুড়তুতো ভাইটি আমাদের সাথে গেলো না , পথনির্দেশটা দিয়ে দিলো | অনেকটা পথ পেড়িয়ে আমরা এসে রাজবাড়ীর সিংহদুয়ারে পৌঁছলাম | বিশাল লোহার গেট | খুব বড়ও তালের মতো এক তালা ঝুলছে | ঢোকার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছি না , এমনকি আশেপাশেও কাউকেই দেখতে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না | খুব মন খারাপ নিয়ে ওখানে দাঁড়িয়েই সকলে নানান পোজে ছবি তুলতে লাগলাম | হঠ্যাৎ আমাদের সকলকে অবাক করে দিয়ে বেশ মোটা কালো মতো একজন লোক সেখানে এসে হাজির হলেন | ভিতরে ঢোকার চাবি কোথায় পাবো তার কাছে জানতে ছায়ায় তিনি অত্যন্ত মিহি শুরে আমাদের বললেন ,"ওটা আমার কাছেই থাকে |" খুশিতে ডগমগ সব গেটটা খুলে দিতে বললাম | গেট খুলতে খুলতেই উনি আমাদের সতর্ক করে দিলেন যাতে পুরো রাজবাড়ী আমরা বাইরে থেকেই দেখি এবং সন্ধ্যার আগেই যেনো ওই রাজবাড়ী ছেড়ে বেড়িয়ে আসি | পরে রাতে এসে উনি তালা দিয়ে যাবেন | আমরা সম্মত হয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম | রাজবাড়ীর ভিতরে কিছু কিছু জায়গা আগাছায় পূর্ণ | আবার অবাক করে দেওয়ার মতো কিছু জায়গা দেখলে মনেহয় সেখানে যেন নিত্য লোকের আনাগোনা | বিশেষত যে সব জায়গা গুলিতে বসবার মতো ব্যবস্থা রয়েছে |  মনের আনন্দে সকলে সবকিছু ঘুরে দেখছি | হঠ্যাৎ খেয়াল হলো আবার ছবি তোলার | মোবাইল ফোনের তখনও চল হয়নি | ছবি তোলার জন্য আমার দামী ক্যামেরা ইয়াসিকা | পোজ নিয়ে সকলে দাঁড়িয়ে পড়লো | আমি ক্যামেরার পিছনে | কিন্তু একি ? চোখের সামনে যে মানুষগুলিকে দেখতে পাচ্ছি ,ক্যামেরার লেন্সে তাদের দেখতে পাচ্ছি না কেন ? শুধুই কালো আর কালো | সাধের ক্যামেরা আমার নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে নিয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো | নষ্ট ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে আবার ঘুরতে লাগলাম | এত বড় রাজবাড়ী যেন শেষই হয়নি ঘোরা | সন্ধ্যা হয় হয় ; এমন সময় ওই লোকের কথা মনে পড়লো | বেড়িয়ে আসতে হবে | পুরোটা ঘুরে দেখা হোলোনা বলে মনটা সকলের খুব খারাপ হয়ে গেলো | আমরা বাইরে বেড়োনোর জন্য পিছন ঘুরে হাটতে লাগলাম | কিন্তু কোথায় বাইরে বেড়োনোর পথ ? যে পথ দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম সে পথই তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না | হঠ্যাৎ কানে এলো ঘুঙঘুর এর আওয়াজ | অতি বড় সাহসী আমি -আমার বুকের মধ্যেও ধুকধুকানি শুরু হোলো | হঠাৎ করেই আমাদের সামনে একজন মহিলা এসে উপস্থিত হলেন | তিনি বললেন ,"আপনারা এত দেরি করলেন কেন ? ঢোকার আগে আমার স্বামী তো আপনাদের বলেই দিলো সন্ধ্যার আগেই এখান থেকে বেড়িয়ে যেতে | আমার পিছন পিছন তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে আসুন |মহিলার সহায়তায় আমরা রাজ্ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলাম | চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার |কিছুদূর এগিয়ে  তারই মাঝে দেখতে পেলাম একটি ছোট চায়ের দোকান | সেখানে কিছু লোক বসে চা খাচ্ছে ; ওই মানুষগুলির মধ্যে যে আমাদের গেটের তালা খুলে দিয়েছিলেন তিনিও আছেন |আমরা সকলে যেয়ে চায়ের দোকানে চায়ের অর্ডারটা দিয়ে বাইরে বেঞ্চে বসে দাড়োয়ান ভদ্রলোককে  বললাম ,"আপনার স্ত্রী যদি ওই সময় আমাদের কাছে না আসতেন আমরা তো বেড়োতেই পারতাম না | কিন্তু সন্ধ্যার সময় ওখান থেকে ঘুঙঘুরের আওয়াজ কোথা থেকে আসছিলো ?"হঠ্যাৎ চা বিক্রেতা আমাদের দিকে তাঁকিয়ে বললেন ,"আপনারা রাজবাড়িতে গেছিলেন ? আর একটাও কথা ওর কাছে জিজ্ঞেস করবেন না | আপনারা এদিকে উঠে আসুন |" যার সাথে এতক্ষন কথা বলছিলাম মুহূর্তে দেখি সে উধাও | দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম ,"এত তাড়াতাড়ি ভদ্রলোক উঠে কোথায় চলে গেলেন ?"  " উনাকে শুধু আপনারাই দেখতে পারছিলেন এখানে আমরা কেউই তাকে দেখতে পাইনি | উনি মানুষ না | তবে কখনোই কারও ক্ষতি করেন না | কেউ রাজবাড়ী দেখতে আসলে উনি গেট খুলে দেন ; রাত হয়ে গেলে উনার স্ত্রী বাইরে বেড়োনোর পথ দেখিয়েও দেন | দুজনেই ছিলেন রাজার বিশ্বস্ত কর্মচারী | বেঁচে থাকতে তারা যে কাজ করেছেন মরে যেয়ে ভুত হয়েও একই কাজ করে চলেছেন | আর ওই যে ঘুঙঘুরের আওয়াজের কথা বললেন না - সন্ধ্যা হলেই ওখানে মাহফিল বসে | রাজপ্রাসাদের ভিতরে  নানান প্রকারের আলোর রোশনাই, অনেক দূর থেকে সে আলো দেখা গেলেও কাছে গেলে তা ক্রমশ কমতে থাকে | অদ্ভুত একটা গা ছম্ছমে ভাব আসে | যারা দাঁড়োয়ানকে বা তার স্ত্রীকে  একবার দেখেছে পরে তারা আর কখনোই তাকে দেখতে পায় না | কেউ সেখানে গেলে সেদিন দাঁড়োয়ান এখানে আসবেই |" আমরা সকলে হা করে কথাগুলি শুনছিলাম | হঠ্যাৎ আমার বন্ধু বিজন বলে উঠলো , তার মানে আমরা পুরোদিনটা ভুতের সাথেই কাটালাম ?"  "হ্যা আপনারা  রাজপ্রাসাদের কোনো কামরায় ঢোকেননি বলে বেঁচে এসেছেন ; যদি কোনো কামরায় ঢোকার চেষ্টা করতেন তাহলে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারতেন না | ওরা কিন্তু আপনাদের সাথে  সাথেই ছিলেন | ওখানে কেউ ছবি তুলতে গেলে কোনো ছবি উঠে না ,কারণ ওরা সাথে থাকে |
অদ্ভুত ব্যাপার হলো সারাদিন আমরা ভুতের সাথে থেকেও কেউ কোনো ভয় পেলাম না | খুশি হলাম এই ভেবে যাক বাবা ! ক্যামেরাটা তাহলে নষ্ট হয়নি | ভুতের ছবি না উঠুক মানুষের ছবি তো উঠবে !!
""""""
নন্দা  24.9.16

Monday, September 19, 2016


"আমার শরৎ"  (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
 [][][][][][][][][{[{[][]
শরতের আগমনে - 
শিউলির গন্ধে -
 মন মেতেছে - 
কাশফুলের ছন্দে | 
শরতের মাধুর্য -
মনকে দেয় দোলা -
প্রকৃতির অপরূপ শোভায় -
মানুষের অন্তর থাকে খোলা -
শিউলির সৌরভ আনে প্রাণে স্নিগ্ধতা -
শুভ্র- নীলাকাশ নববধূর ন্যায় ;
তাকিয়ে থাকে, মেঘের পর্দা সরিয়ে -
নিয়ে তার অতৃপ্ততা |
নদীর দুকূল উঠে ভরে ,
ধানের ক্ষেত মেলে তার সৌন্দর্যতা -
দোয়েল , কোয়েলের কাকলীতে মুখরিত সব ,
শরতের নীলাকাশে জ্যোস্না যেনো লুটিয়ে পরে |

নন্দা    17.9.16    1-30AP.
"যান্ত্রিক জীবন"
                   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
-----------------
অনেকদিন একসাথে থাকতে থাকতে -
দু'জনের মধ্যে একটা তিক্ততা -
চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে -
বাঁধা ছকে জীবন কাটাতে কাটাতে ,
যেন একটা অসার ক্লান্তি ঘিরে ধরেছে |
ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে -
সবাই যে যার জীবনে প্রতিষ্ঠিত ,
তোমার অবসর জীবনে টি .ভি .
আর আমার মোবাইল ফেসবুক -
একাকিত্বটাকে সঙ্গ দিয়ে ,
সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে |
ডাইনিং টেবিলেও আজ আর-
 কোনো কথা হয়না ,
যে কথা একদিন সারা রাতেও শেষ হত না ;
আজ যেন কারও কিছুই -
বলার বা শুনার নেই |
দিনে দিনে কেমন প্রযুক্তি ,
নির্ভর হয়ে পড়ছি -
সংসারের কাজগুলিও -
যন্ত্রের মতোই শেষ করছি ;
হয়তো এভাবেই কোনোদিন ,
একজন আর একজনকে ফেলে চলে যাবো ,
তখন কিন্তু কাছে না থাকার -
শূন্যতাটা ঠিক গ্রাস করবে !!
==========
নন্দা   18.9.16   1-45AM

Sunday, September 18, 2016

"সুখের আশায়"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী ) ########################### দু'টো  ধানক্ষেতের মাঝবরাবর যে সরু রাস্তাটা থাকে ,যাকে গ্রামের ভাষায় আল বলে ; সেই রাস্তা ধরে ধীরা জোড় পায়ে হাঁটতে লাগে | যে ভাবেই হোক বিমলকে স্কুল থেকে বেড়োনোর পরেই কথাটা বলতে হবে | আল বরাবর পনের থেকে কুড়ি মিনিট হাঁটার পর বড় রাস্তা | বিমলের স্কুল ছুটি হয় চারটে নাগাদ | বড় রাস্তার উপরেই একটা বেশ বড় বটগাছ | ওই অবধি আসতে ওর সময় লাগে মিনিট দশেক | তার মানে চারটে দশের মধ্যেই ধীরাকে ওই বট গাছের কাছে পৌঁছাতেই হবে | মা ,বাবা যে তার বিয়ের  একদম দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেছেন  আজকের মধ্যেই  এটা বিমলকে জানাতেই হবে | বিমলের সাথে পরিচয় সেই ছেলেবেলা থেকে | এক সাথে স্কুলে পড়া ,একসাথে বড় হওয়া | পাশাপাশি দু'টি গাঁয়ে দু'জনের বাস | কখন যে বন্ধুত্ব থেকে একে অপরকে ভালোবেসে ফেলে তা নিজেরাই  বোধকরি কখনো বুঝতে পারেনি | কেউ কোনোদিনও পরস্পরকে "আমি তোমাকে ভালোবাসি"- কথাটাও বলেনি |কিন্তু দু'জনের মনই জানে ওরা একে অপরকে ভালোবাসে |         বিমল খুবই শান্ত স্বভাবের ছেলে | মেধাবী ছাত্র | বি .কম .পাশ করেই গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক পদে নিয়োগ পত্র পেয়ে যায় |এদিকে ধীরারও ইচ্ছা বি.এ. পাশ করার পর স্কুল টিচার হওয়া | সেও চাকরীর চেষ্টা করতে থাকে | কিন্তু হঠ্যাৎ করেই তার বাবা ছেলেবেলার বন্ধুর ছেলের সাথে ধীরার  বিয়ের একদম পাকা কথা দিয়ে বাড়িতে এসে সব জানান | সুভাষ পুলিশে চাকরী করে ,কলকাতার বাইরে থাকে | একা রান্নাবান্না কোরে খেতে হয় বলে তার বাবা ,মা তাকে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে  দিতে চান | সন্ধ্যায় পাড়ার চায়ের আড্ডায় বাল্যবন্ধু সুশোভন চ্যাটার্জী এ কথা পারতেই ধীরার বাবা অখিলেশ বাবু তার নিজের মেয়েটির কথা বলেন | সঙ্গে সঙ্গেই সুশোভন বাবু রাজী হয়ে যান | হাতে মাত্র পনেরো দিন সময় | বাড়িতে এসে তিনি যখন ধীরার মাকে সব জানান ; আড়াল থেকে ধীরা সব শোনে | মাথায় তার বাজ ভেঙ্গে পড়ে | পরের দিনসে বাড়িতে কাউকে কিছুই না বলে বেড়িয়ে পড়ে যেভাবেই হোক বিমলকে সব জানাতে হবে |   বড় রাস্তায় উঠেই সে দেখতে পায় বিমল সাইকেল চালিয়ে আসছে | ধীরাকে দেখেই সে জানতে চায় , -- তুমি এখন এখানে ? --তোমার সাথে দরকারী একটা কথা আছে | ধীরা আস্তে আস্তে বিমলকে সব কথা জানায় শান্ত স্বভাবের বিমল সব শুনে বলে , --তুমি বাড়ি যাও  | আমি মাকে কালই তোমাদের বাড়ি পাঠাবো | --কিন্তু আমার বাবা যদি রাজী না হন ? উনি যে ভীষণ এক কথার মানুষ | --চিন্তা কোরো না | সব ঠিক হয়ে যাবে | --বাবা যদি রাজী না হন ,আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো | বিমল একগাল হেসে বলে , --মাথাটা একদম খারাপ হয়ে গেছে | আরে  জম্ম ,মৃত্যু ,বিয়ে -বিধাতায় ঠিক করে রাখেন | তিনি যদি আমাদের দুজনের মিলন লিখে থাকেন ; তাহলে যে ভাবেই হোক মিলন আমাদের হবেই | ভেবো না , বাড়ি যাও | মাকে আমি সকালেই তোমার বাবার কাছে পাঠাবো |    কিন্তু না ,অখিলেশ বাবু বিমলের মায়ের কথা রাখেন না | যেহেতু তিনি তার বাল্যবন্ধুকে কথা দিয়ে ফেলেছেন তাই তিনি অতি শান্তভাবে হাত জোড় করেই ফিরিয়ে দেন | তবে একথাও তিনি বলেন যে দু'দিন আগে যদি তিনি এ প্রস্তাব নিয়ে আসতেন তাহলে তাকে খালি হাতে ফিরতে হত না |   ধীরার মাকে তিনি বলে দেন ,মেয়েকে জানিয়ে দিতে যদি সে তার সম্মান ক্ষুন্ন করতে না চায় ; তাহলে সে যেন এই বিয়েতে আপত্তি না করে | সে যদি সুভাষের সাথে বিয়েতে  মত না দেয় তাহলে তার বাবাকে গলায় দড়ি দিয়ে মরতে হবে | জীবনে কোনোদিন কথার খেলাপ আমি করিনি ,গ্রামের ভিতর যেভাবে মাথা উঁচু করে আমি বেঁচে আছি বাকি জীবনটাও যেন সেই ভাবেই বাঁচতে পারি | আমার বাঁচা ,মরা এখন তোমার মেয়ের হাতে | ও যদি চায় বিমলকে বিয়ে করতে পারে তবে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়ে  | তবে সে ক্ষেত্রে তাকে তার বাপের মরা মুখ দেখতে হবে |   অসহায় ,নিরুপায় ধীরা বাপের কথাকেই মেনে নিয়ে ,ছেলেবেলার ভালোবাসাকে গলা টিপে মেরে ,আজম্ম লালিত স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে সুভাষের গলায় মালা পড়ায় |বিয়ের প্রায় মাস খানেক বাদে সুভাষ তার কর্মস্থলে চলে যায় ; টুকিটাকি সাংসারিক জিনিসপত্র কিনে সে সাতদিনের মধ্যেই ধীরাকে তার কাছে নিয়ে যাবে এই কথা বলে | কিন্তু নিত্য সে রাতে ফোন করে ধীরার সাথে কথা বলতো | মেয়েদের জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যেগুলি তারা মেনে নিতে বাধ্য হয় | বুকে পাথর চাপা দিয়ে , ছেলেবেলার ভালোবাসাকে গলা টিপে মেরে ,চোখের জল লুকিয়ে লুকিয়ে মুছে , বাবার মুখের দিকে তাঁকিয়ে - ধীরাও আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলো সুভাষকে মেনে নেওয়ার| কিন্তু সুভাষ যাওয়ার পর রাতে  যেদিন প্রথম তার ফোন আসে না ; সেদিন কিছুটা হলেও এক অজানা আশংখায় ধীরার বুকটা কেঁপে উঠেছিল | আর তার এই আশঙ্ক্ষাকে সত্যি প্রমান করে পরেরদিন সকালবেলাতেই ভয়ংকর  দুংসংবাদটি আসে | সুভাষ যেখানে থাকতো অথ্যাৎ গুয়াহাটিতে কোনো একটি শপিংমলে জঙ্গিহানার মোকাবেলা করতে যেয়ে সুভাষ জঙ্গি পুলিশের  সংঘর্ষে প্রাণ হারায় |তিনদিন পর সুভাষের লাশ বাড়িতে আসে | আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশী সকলেই ধীরাকে 'অপয়া' বলেই ভাবতে থাকে | এমনকি অনেকেই তাকে সামনাসামনিও একথা বলে | দেড় মাসের বৈবাহিক জীবন শেষ করে যে মেয়েটি ক'দিন আগেই লালবেনারসী শাড়ি , একমাথা সিঁদুর আর গা ভর্তি গয়না নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে গেছিলো -সেই মেয়েটিই আজ সাদা থান পড়ে নিরাভরণ হয়ে পুনরায় বাপের বাড়িতেই চলে আসে |   এই ঘটনার পনের ,বিশদিনের মাথায় ধীরা বুঝতে পারে সে সন্তান সম্ভাবা | নিজের জীবনের প্রতি বিতৃষ্নায় সে রাতের অন্ধকারে নিজেকে শেষ করে দিতে চায় | পুকুরপাড়ে যেয়ে সে যখন জলে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হয় তখন পিছন থেকে হঠ্যাৎ  কে যেন তাকে হাত ধরে টান দেয় | পিছন ফিরে বিমলকে দেখে সে চম্কে যায় | বিমল এত রাতে এখানে এলো কি করে ? তবে কি সে রোজই এখানে আসে ?  --তুমি এখানে ? এত রাতে ? সে কথার উত্তর না দিয়ে বিমল তার কাছে জানতে চায়, --এ কি করতে যাচ্ছিলে তুমি ? --আর তো আমার বেঁচে থাকার কোনো মানে হয়না | সব দরজায় আমার সামনে আজ বন্ধ | বাবার কথা অনুযায়ী  অসহায়ের মতো নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়েসব কিছু মানিয়ে নিতে চেয়েছিলাম | কিন্তু আমার কপাল মন্দ | তাই দেড় মাসের মধ্যেই আমি বিধবা হলাম | এই বেশেই হয়তো জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারতাম | কিন্তু সেখানেও ঈশ্বর বাঁধ সাধলেন ! আমি মা হতে চলেছি - এই ভাবে বাঁচার কোনো অধিকার নেই | সকলে বলে আমি নাকি অপয়া , প্রথম প্রথম এই কথায় খুব কষ্ট পেয়েছি কিন্তু এখন নিজেই নিজেকে অপয়া ভাবি | --তারমানে তুমি দু'দুটি জীবনকে একসাথে মারতে চলেছিল ? আমার প্রতি কি তোমার বিন্দুমাত্র ভরসা নেই ? একবারও তুমি আমার কথাটা ভাবলে না ? দুজনে মিলে এর একটা সমাধান তো আমরা বের করতেই পারি | বিমল খুব শান্তভাবে কথাগুলি ধীরাকে বলে | তারপর ধীরাকে অনেক বুঝিয়ে ভোররাতে ধীরাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়িতে আসে |   সকালবেলা সে তার মাকে বলে , --বাবা মারা যাওয়ার পর তুমি আমাকে অনেক কষ্ট করেই মানুষ করেছো | আমি কোনদিনও তোমার কথার অবাধ্য হয়নি | তুমি তো জানো মা , আমি সেই ছেলেবেলা থেকেই ধীরাকে ভালোবাসি | কিন্তু ধীরার বাবা অন্য জায়গায় কথা দেওয়াতে তোমায় খালি হাতে ফিরতে হয়েছিলো | দেড় মাসের মাথায় ধীরা স্বামী হারা হয় | আমরা কি পারিনা মা, ওর জীবনটাকে সুন্দর ভাবে গড়ে দিতে | --আমরা আর কিবা করতে পারি বাবা ! --আমি যদি ওকে বিয়ে করতে চাই ; তুমি কি আপত্তি করবে ? --তা কি করে সম্ভব ? একটা বিধবা মেয়েকে বিয়ে করলে পাড়ার লোক কি বলবে ?  -- কিন্তু মা তাহলে তো দু'টো জীবনই নষ্ট হয়ে যাবে | --দু'টো জীবন মানে ?  --ধীরার এই অবস্থায় আমি তো অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হতে পারবো না | সেদিক থেকে দেখতে গেলে আমার আর ধীরার দুজনের জীবনই শেষ হয়ে যাবে | পাড়ার লোকের কথা ভাবতে গেলে তোমার ছেলের জীবনটা যে নষ্ট হয়ে যাবে | আমি তোমার দুটি পায়ে পড়ি মা | তুমি আর একবার ধীরার বাবাকে যেয়ে বলো | এবার তোমাকে খালি হাতে ফিরতে হবে না |    অনেক অনুনয় বিনয়ের পরে বিমলের মা শোভাসিনীদেবী রাজী হন ধীরার বাবার কাছে যেতে |তিনি যেয়ে  অখিলেশ বাবুকে বলেন যে তার সদ্য বিধবা হওয়া কন্যাকে পুত্রবধূ হিসাবে পেতে চান | অবাধ্য অশ্রুতে অখিলেশবাবুর চোখ দু'টি ভোরে গেলো | তিনি শোভাদেবীকে বললেন ,
--বাবা হয়ে মেয়ের সুখ খুঁজতে গিয়ে তার জীবনে চরম দুর্ভোগ ডেকে এনেছি | আপনি আবার আমার অভাগী মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে চাইছেন ; এটা তো আমি স্বপ্নেও কখনো ভাবিনি | এ যে আমার জীবনে চরম পাওয়া | আমাকে আপনি সারাজীবনের জন্য ঋণী করলেন দিদি !

রেজিস্ট্রি করে বিমল ধীরাকে বিয়ে করলো | নিদৃষ্ট সময় মত ধীরার একটি কন্যা সন্তান হয় | বিমল আনন্দে ধীরাকে চুমায় ,চুমায় ভরিয়ে দেয় | কিন্তু ধীরার দু'চোখ বেয়ে জল পড়তে দেখে বিমল বললো ,
-- তুমি খুশি হওনি ?
--কিন্তু ওতো তোমার ----
ধীরার কথা শেষ হয়না | বিমল হাত দিয়ে ধীরার মুখ চেঁপে ধরে বলে ,
-- চুপ ,কখনো আর এ কথা বলবে না | ও তোমার আর আমার সন্তান | ও এসছে বলে আমাদের ভালোবাসার কোনো চিড় ধরেনি |  ওর জন্যই এত তাড়াতাড়ি আমি তোমায় পেয়েছি |
--তুমি মানুষ ? নাকি দেবতা ?
--আমি ?
বলেই হাসতে হাসতে বলে ,
--আমি তোমার স্বামী , আমাদের সন্তানের বাবা | আপাতত এটুকুই আমার পরিচয় |
===========শেষ=============
নন্দা    12.9.16   2AM.
"আমার শরৎ"  (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
[][][][][][][][][{[{[][]
শরতের আগমনে -
শিউলির গন্ধে -
মন মেতেছে -
কাশফুলের ছন্দে |
নন্দা

Saturday, September 17, 2016

"আগমনী বার্তা"
++++++++++
শরৎ তুমি এসেছো দ্বারে -
মা আসবেন বাপের ঘরে -
আকাশ সেজেছে নীল- সাদায় -
কাশবন যেনো চামর দোলায় |
সকালবেলা ঘাসের আগায় -
শিশির বিন্দু মন যে মাতায় -
শিউলি যেন উঠছে হেসে -
প্রকৃতি সেজেছে রানীর বেশে -
প্রবাসী সব ফিরছে ঘরে -
কাটাবে পুজো যে যার মতো করে |
নন্দা  15.9.16    9-30pm.

Thursday, September 15, 2016


"চিরকুট"
€£¥€£¥€£¥
সাগর সেঁচে মুক্ত আনে -
মানুষের মন পাওয়া যে দায় -
করবে তুমি যাদের তরে -
পিষবে তারাই যাঁতাকলে |
নন্দা

Wednesday, September 14, 2016

সমাধান"                                                             রতন আজ খুব খুশী l  তার মনে হচ্ছে সে তার বাবা আর মামনির জন্য কিছু একটা কোরতে পেরেছে l  এতদিন দুহাত পেতে শুধু বাবা আর মামনির কাছ থেকে নিয়েই গেছে l  বিনিময়ে কিছুই সে কোরতে পারেনি- আর করবেই বা কেমন করে ?  তার তো কোনো উপায় ও ছিলো না l পাচ বছর বয়সে মাকে হারিয়ে মামাবাড়িতে মানুষ l  দাদু, দিদিমা, আর মাসি l মাকে হারিয়ে বাবার হাত ধরে যেদিন ছোট রতন কনিকার সামনে এসে দাড়ায়; তখন কনিকা দুহাত বাড়িয়ে রতনকে বুকে চেপে ধোরে ডুকরে কেদে  ওঠে l দিদির মৃতুর শোক যেনো ছোট রতনকে দেখে দিগুন হোয়ে বুকে চেপে বসে l দিদির মুখটা যেনো কেঁটে রতনের মুখে বসিয়ে দিয়েছে l দাদু দিদিমা বেচে থাকতেই মাসির পড়াশুনা শেষ হোয়ে যায় l  তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন কণিকার  বিয়ে দেয়ার l কিন্তু কণিকা নাছোরবান্দা l সে চলে গেলে রতনকে কে দেখবে ? রতনও তার মামনিকে পেয়ে মায়ের কষ্টটা আস্তে আস্তে ভুলে যায় l কণিকা রতনকে তাকে মামনি বলে ডাকতে শিখিয়েছে l রতনকে কণিকা চোখে হারায় l হারাধনবাবু কণিকার বাবা অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কেরানী l খুব  স্বচ্ছলতা না থাকার কারণে জামাই অর্থ্যাত রতনের বাবা মানস রায়ের কাছ থেকে তাকে টাকা নিতেই হয় l কারণ কণিকা রতনকে বড়ো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ ভর্ত্তি করেছে l টিউসন ফি ও অন্যান্য খরচ দিয়ে বেশ কয়েক হাজার টাকা বেড়িয়ে যায় l যেটা হারাধন বাবুর পেনসনের টাকায় সংকুলান হয়না l তাই ইচ্ছা না হলেও জামাই এর কাছ থেকে তাকে টাকাটা নিতেই  হয় l কণিকাও গুটিকয়েক ছেলেমেয়েকে বাড়িতে পড়ায় l মানস বাবুও আর বিয়ে করেন না l বড়ো কোম্পানির সেলস ম্যানেজার এর হোম ডেলিভারে ই চলে যায় l লতিকার ব্যবহৃত জিনিস পরতো আজও তিনি যত্ন কোরে আগের মতন ই গুছিয়ে রেখেছেন l কণিকার তত্ত্বাবধানে রতন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক রেকর্ড মার্কস নিয়ে পাশ করে l মানসবাবুর ইচ্ছা ছিলো ছেলেকে ইন্জিনিয়ারিং পড়ানোর l  কিন্তু কণিকার ইচ্ছা রতন ডাক্তারি পড়ুক l মানস বাবু কণিকার ইচ্ছাকেই সম্মান জানান l কালের নিয়মে দিন মাস বছর ঘুরতে ঘুরতে কনিকারও বিয়ের বয়স পার হয়ে যায় রতন ডাক্তারী পাশ করে প্রাকটিস শুরু করে l দাদুর মৃতুর এক বছরের মধ্যে দিদিমাও গত হয়েছেন l এখন কণিকা  ও রতনের ছোট সংসার l মাঝে মাঝে মানস বাবু আসেন l দু একদিন থেকে আবার ফিরে যান l কণিকা চায়, এবার রতনের বিয়ে দিতে l মানসবাবুর ও এতে সম্মতি আছে l কিন্তু রতন ভাবে যে মানুষ দুটি তাকে মানুষ কোরতে নিজেদের সুখ- স্বছন্দ বিসর্জন দিয়েছেন; তাদের এই ঋণ সে তো কোনদিনও শোধ করতে পারবে না  l তাদের জন্য সে কি কিছুই করতে পারে না ? অনেক ভেবে চিন্তে সে ঠিক করে- মামনির সাথে সে বাবার বিয়ে দেবে l তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে l কেউ ই তো রাজী হবে না l কিন্তু যে ভাবেই হোক রাজী তাদের করাতেই হবে l সে উভয়ের সাথেই আলাদা আলাদা কথা বললো l যথারীতি উভয়েই এটা অসম্ভব বলে জানিয়ে দেয় l এবার শুরু হয় রতনের খেলা l প্রথমে রতন তার মামনির সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলা বন্ধ কোরে দিলো l কণিকাও বুঝতে পারছে ছেলে তার রাগ করেছে l কিন্তু সে যা বলছে সেটাও বা কিকরে সম্ভব ? এর ই মাঝে রতন একদিন ব্রেকফাস্ট না করেই চেম্বার এ চলে যায় l সে জানতো তার মামনিও না খেয়ে থাকবে l মনেও খুব কষ্ট পাবে l কিন্তু কি করবে সে ? সে তো কোনো সমাধানের রাস্তা খুঁজে পারছে না l কণিকা ছেলের মনের অবস্তা বুঝতে পেরে দুজনের ই খাবার নিয়ে সটান চেম্বার এ যেয়ে হাজিরহয়  যথারীতি রতন খেতে চায়না l বার বার রতনকে পিড়াপিড়ি করার পর ছল ছল চোখে কণিকা রতনকে বলে,  "তুই কি চাস বলতো "? রতন তখন বলে, "যতদিন না তোমরা বিয়েতে রাজী হচ্ছো ততদিন আমি কিছুই খাবো না "l "তুই তো জানিস বাবা তোর খাওয়া না হোলে আমি খেতে পারিনা l" "তুমিও তো জানো আমি খিদে সহ্য কোরতে পারিনা l এখন আমার প্রচন্ড খিদেতে কষ্ট হচ্ছে l আর তা ছাড়া আমি তোমায় ছেড়ে থাকতে পারবোনা - সেটা তুমি জানো l আর আমিও জানি তুমি আমায় ছেড়ে থাকতে পারবে না l সারাটা জীবন একা একা কাটিয়েছেন আমরা সবাই মিলে একজায়গায় থাকব l" কণিকা চুপ কোরে কথাগুলি শুনে বলে, "সে হবেক্ষণ আমি তোদের সাথেই যেয়ে থাকবো এখন খেয়ে নে বাবা l" "না তাহবেনা, তুমি তোমার যোগ্য সম্মান নিয়েই ঐ বাড়িতে থাকবে যাতে কেউ কোনদিন তোমায় কিছু বলতে না পারে l তোমায় কেউ কিছু বললে আমি তা মেনে নিতে পারবো না l" কণিকা  বুঝতে পারে এটা রতন কার উদেশ্যে বললো l সে বিয়ে কোরলে যদি তার বৌ তার মামনিকে কিছু বলে সে মেনে নিতে পারবে না l                                                                                            অনেক জোড়া জুড়ির পর কণিকা ও মানসবাবু বিয়েতে রাজী হন l তবে পুরোহিত ডেকে মন্ত্র  উচ্চারণের  মধ্য দিয়ে নয় l রেজিস্ট্রি কোরে কয়েকজন নিকট আত্মীয়র সামনে বিয়ে হয়ে গেল l কণিকা তার রতনকে নিয়ে স্বামীর সংসারে চলে গেল l বিয়ের কয়েকদিন আগে রতন এসে তার বাবার সম্মতি নিয়ে তার মায়ের জিনিস পত্র যেগুলি মানসবাবু এতোকাল আগলে ছিলেন, একটা ট্রান্ক ভর্তি করে স্টোরে রেখে যায় l তার মামনিকে যোগ্য সম্মান দিয়ে নিজের বাড়িতে এনে খুব খুশি l তার মনে হচ্ছে যে সে বিশ্ব জয় করে ফেলেছে l                                                                       এর ঠিক মাস ছয়েক পরে কণিকা নিজে পছন্দ কোরে তার রতনের বৌ সুমনাকে বরণ কোরে ঘরে তোলে l সুমনা ও খুব লক্ষী মন্ত মেয়ে l শ্বসুর শ্বাশুড়ি কে যথেষ্ট শ্রদ্ধা ভক্তি করে l শ্বাশুড়ি যেনো তার বন্ধুর মত l রতন মনে মনে ভাবে ভাগ্য কোরে সে জম্মগ্রহণ করেছিল l কণিকার সংসার সুখে আনন্দে নুতন ছন্দে কালের গতিতে এগিয়ে চলে l দুবছরের মাথায় রতন ও সুমনার একটি ফুটফুটে ছেলে হয় l কণিকা সংসারের সকল দায়িত্ব সুমনাকে দিয়ে তার দাদুভাই কে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে l                                           ২০ ৯ ১৫