Saturday, September 24, 2016

"ভুতুড়ে কান্ড" ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী ) ^^^^^^^^^^^^^^^^^
  বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে কলেজে পড়াকালীন সময়ে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্যহীন ভাবেই বেড়িয়ে পড়লাম | সবাই মিলে প্রথমে আসলাম হুগলি | সেখানে আমার এক কাকার বাড়ি আছে | বাড়িটা একটু ভিতরের দিকে | পাঁচজন যেয়ে সেখানে উপস্থিত হলাম | নানান ধরণের গল্প ,গুজব হতে হতে আমার খুড়তুতো ভাই বললো ওখানেই একটি রাজবাড়ী আছে ; যেখানে শুধুমাত্র  ভুতেরই বাস | অনেকেই নাকি নানান ভাবে তাদের অস্তিত্ব টের পেয়েছেন | সকলেরই বয়স কম , প্রত্যেকেই নিজেদের অসীম সাহসী ভাবি | ঠিক করলাম সকালেই ওই রাজবাড়িতে যাবো |    উঠতে উঠতে একটু বেলায় হয়ে গেলো | কাকিমা বললেন স্নান , খাওয়া ,দাওয়া করে যাতে আমরা বেড়োই | এ সব সারতে সারতে আমাদের প্রায় বারোটা বেজে গেলো | খুড়তুতো ভাইটি আমাদের সাথে গেলো না , পথনির্দেশটা দিয়ে দিলো | অনেকটা পথ পেড়িয়ে আমরা এসে রাজবাড়ীর সিংহদুয়ারে পৌঁছলাম | বিশাল লোহার গেট | খুব বড়ও তালের মতো এক তালা ঝুলছে | ঢোকার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছি না , এমনকি আশেপাশেও কাউকেই দেখতে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না | খুব মন খারাপ নিয়ে ওখানে দাঁড়িয়েই সকলে নানান পোজে ছবি তুলতে লাগলাম | হঠ্যাৎ আমাদের সকলকে অবাক করে দিয়ে বেশ মোটা কালো মতো একজন লোক সেখানে এসে হাজির হলেন | ভিতরে ঢোকার চাবি কোথায় পাবো তার কাছে জানতে ছায়ায় তিনি অত্যন্ত মিহি শুরে আমাদের বললেন ,"ওটা আমার কাছেই থাকে |" খুশিতে ডগমগ সব গেটটা খুলে দিতে বললাম | গেট খুলতে খুলতেই উনি আমাদের সতর্ক করে দিলেন যাতে পুরো রাজবাড়ী আমরা বাইরে থেকেই দেখি এবং সন্ধ্যার আগেই যেনো ওই রাজবাড়ী ছেড়ে বেড়িয়ে আসি | পরে রাতে এসে উনি তালা দিয়ে যাবেন | আমরা সম্মত হয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম | রাজবাড়ীর ভিতরে কিছু কিছু জায়গা আগাছায় পূর্ণ | আবার অবাক করে দেওয়ার মতো কিছু জায়গা দেখলে মনেহয় সেখানে যেন নিত্য লোকের আনাগোনা | বিশেষত যে সব জায়গা গুলিতে বসবার মতো ব্যবস্থা রয়েছে |  মনের আনন্দে সকলে সবকিছু ঘুরে দেখছি | হঠ্যাৎ খেয়াল হলো আবার ছবি তোলার | মোবাইল ফোনের তখনও চল হয়নি | ছবি তোলার জন্য আমার দামী ক্যামেরা ইয়াসিকা | পোজ নিয়ে সকলে দাঁড়িয়ে পড়লো | আমি ক্যামেরার পিছনে | কিন্তু একি ? চোখের সামনে যে মানুষগুলিকে দেখতে পাচ্ছি ,ক্যামেরার লেন্সে তাদের দেখতে পাচ্ছি না কেন ? শুধুই কালো আর কালো | সাধের ক্যামেরা আমার নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে নিয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো | নষ্ট ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে আবার ঘুরতে লাগলাম | এত বড় রাজবাড়ী যেন শেষই হয়নি ঘোরা | সন্ধ্যা হয় হয় ; এমন সময় ওই লোকের কথা মনে পড়লো | বেড়িয়ে আসতে হবে | পুরোটা ঘুরে দেখা হোলোনা বলে মনটা সকলের খুব খারাপ হয়ে গেলো | আমরা বাইরে বেড়োনোর জন্য পিছন ঘুরে হাটতে লাগলাম | কিন্তু কোথায় বাইরে বেড়োনোর পথ ? যে পথ দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম সে পথই তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না | হঠ্যাৎ কানে এলো ঘুঙঘুর এর আওয়াজ | অতি বড় সাহসী আমি -আমার বুকের মধ্যেও ধুকধুকানি শুরু হোলো | হঠাৎ করেই আমাদের সামনে একজন মহিলা এসে উপস্থিত হলেন | তিনি বললেন ,"আপনারা এত দেরি করলেন কেন ? ঢোকার আগে আমার স্বামী তো আপনাদের বলেই দিলো সন্ধ্যার আগেই এখান থেকে বেড়িয়ে যেতে | আমার পিছন পিছন তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে আসুন |মহিলার সহায়তায় আমরা রাজ্ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলাম | চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার |কিছুদূর এগিয়ে  তারই মাঝে দেখতে পেলাম একটি ছোট চায়ের দোকান | সেখানে কিছু লোক বসে চা খাচ্ছে ; ওই মানুষগুলির মধ্যে যে আমাদের গেটের তালা খুলে দিয়েছিলেন তিনিও আছেন |আমরা সকলে যেয়ে চায়ের দোকানে চায়ের অর্ডারটা দিয়ে বাইরে বেঞ্চে বসে দাড়োয়ান ভদ্রলোককে  বললাম ,"আপনার স্ত্রী যদি ওই সময় আমাদের কাছে না আসতেন আমরা তো বেড়োতেই পারতাম না | কিন্তু সন্ধ্যার সময় ওখান থেকে ঘুঙঘুরের আওয়াজ কোথা থেকে আসছিলো ?"হঠ্যাৎ চা বিক্রেতা আমাদের দিকে তাঁকিয়ে বললেন ,"আপনারা রাজবাড়িতে গেছিলেন ? আর একটাও কথা ওর কাছে জিজ্ঞেস করবেন না | আপনারা এদিকে উঠে আসুন |" যার সাথে এতক্ষন কথা বলছিলাম মুহূর্তে দেখি সে উধাও | দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম ,"এত তাড়াতাড়ি ভদ্রলোক উঠে কোথায় চলে গেলেন ?"  " উনাকে শুধু আপনারাই দেখতে পারছিলেন এখানে আমরা কেউই তাকে দেখতে পাইনি | উনি মানুষ না | তবে কখনোই কারও ক্ষতি করেন না | কেউ রাজবাড়ী দেখতে আসলে উনি গেট খুলে দেন ; রাত হয়ে গেলে উনার স্ত্রী বাইরে বেড়োনোর পথ দেখিয়েও দেন | দুজনেই ছিলেন রাজার বিশ্বস্ত কর্মচারী | বেঁচে থাকতে তারা যে কাজ করেছেন মরে যেয়ে ভুত হয়েও একই কাজ করে চলেছেন | আর ওই যে ঘুঙঘুরের আওয়াজের কথা বললেন না - সন্ধ্যা হলেই ওখানে মাহফিল বসে | রাজপ্রাসাদের ভিতরে  নানান প্রকারের আলোর রোশনাই, অনেক দূর থেকে সে আলো দেখা গেলেও কাছে গেলে তা ক্রমশ কমতে থাকে | অদ্ভুত একটা গা ছম্ছমে ভাব আসে | যারা দাঁড়োয়ানকে বা তার স্ত্রীকে  একবার দেখেছে পরে তারা আর কখনোই তাকে দেখতে পায় না | কেউ সেখানে গেলে সেদিন দাঁড়োয়ান এখানে আসবেই |" আমরা সকলে হা করে কথাগুলি শুনছিলাম | হঠ্যাৎ আমার বন্ধু বিজন বলে উঠলো , তার মানে আমরা পুরোদিনটা ভুতের সাথেই কাটালাম ?"  "হ্যা আপনারা  রাজপ্রাসাদের কোনো কামরায় ঢোকেননি বলে বেঁচে এসেছেন ; যদি কোনো কামরায় ঢোকার চেষ্টা করতেন তাহলে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারতেন না | ওরা কিন্তু আপনাদের সাথে  সাথেই ছিলেন | ওখানে কেউ ছবি তুলতে গেলে কোনো ছবি উঠে না ,কারণ ওরা সাথে থাকে |
অদ্ভুত ব্যাপার হলো সারাদিন আমরা ভুতের সাথে থেকেও কেউ কোনো ভয় পেলাম না | খুশি হলাম এই ভেবে যাক বাবা ! ক্যামেরাটা তাহলে নষ্ট হয়নি | ভুতের ছবি না উঠুক মানুষের ছবি তো উঠবে !!
""""""
নন্দা  24.9.16

No comments:

Post a Comment