Wednesday, December 26, 2018

দেখতে যদি পাই
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

সেই বিকেলটা হারিয়ে গেছে জীবন থেকে,
সেই সন্ধ্যাটা আসবেনা আর কখনো ফিরে।
জীবন নামক নৌকাটাতে ছিলাম যখন দু'জন,
সকাল, বিকাল, সাঁঝবেলা হিসাব ছিলোনা তখন-
ময়ুরপঙ্গী ভাসিয়ে ছিলাম শুক্লাতিথির পঞ্চমীতে,
হঠাৎ করেই ডুবিয়ে দিলো কোন ডাইনী এক ছদ্মবেশে।
ভাসিয়ে দিলো স্বপ্ন আমার কেড়ে নিলো তোমায়,
পারে বসেই ঢেউ গুনি তোমায় দেখতে যদি পাই।

Thursday, December 20, 2018

সাদা পাতা
                নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
তোমার সাথে শেষ দেখা,
ইতিহাস হয়ে রয়েছে বুকে,
হৃদয়ে জমা রয়েছে ব্যথা,
যা একান্ত নিজেরই থাকে।

হয়তো হয়েছে চাক্ষুস শেষ দেখা,
মনেমনে দেখি তোমায় রোজ,
যে ইতিহাস বুকেতে জমা,
খুলি তাকে হররোজ।

জীবনখাতার শেষ পাতাগুলি,
রয়েছে আজও সাদা পরে,
জানিনা কবে লেখা হবে সেসব, 
অন্যের কাছে যা ইতিহাস হবে।

Monday, December 17, 2018

সুখি কে
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

'কেমন আছো' জানতে চাইলে-
হেসে বলি ভালো আছি।
দুখের মাঝেও ভালো থাকার,
অভিনয়েই সব বাঁচি।
মুখে হাসি চাপা কষ্ট,
জীবনের মূল উপাদান,
দুঃখটা বুকে রেখে
সুখটা আদানপ্রদান।
পরিপূর্ণ মানুষ খুঁজে,
যায়না পাওয়া ধরাতে,
প্রতিবেশী পরস্পর ভাবে,
সুখটা বুঝি পাশের বাড়িতে।

#নন্দা

Sunday, December 9, 2018

পাবোনা ফিরে
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

স্বপ্ন দেখা সেই শৈশব,
ফেলে এসেছি কবে,
আজও তারা প্রতিনিয়ত,
আমায় ঘিরে থাকে।

স্বর্ণালী দিনের স্বপ্ন আবেশে,
আজও বেঁচে আছি,
পাওয়া না পাওয়ার হিসাব করিনা,
অতীত বড্ড ভালোবাসি।

দুষ্টুমীভরা সে সব দিন,
আজও যখন মনেপড়ে,
হারিয়ে যাই সে সব দিনে,
যা ফিরে পাবোনা কোনকালে।

9-12-18

Saturday, December 8, 2018

শীতের গীত
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

কুয়াশায় ঢাকা চারিদিক,
আহা!উহু!কি শীত!
পিঠে আর পায়েসের গন্ধ,
জয়নগরের মোয়া,খেঁজুরগুড়,
খেয়েদেয়ে কি আনন্দ!
একবার ঢুকলে লেপের তলায়,
বেরোবার আর নাম নাই।
যত গন্ডগোল স্নানের সময়,
জল দেখলেই পিলে চমকায়।
খাওয়াতে সুখ,ঘুমোনোতেও তাই,
বেড়ানোর কথা নাই বললাম ভাই। 😂😂

Friday, December 7, 2018

    বিধাতার বিচার
           নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
নীচু জাতের মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করার ফলে ছেলে আর বৌকে ঘরে ঠাঁই দেননি অপর্ণাদেবী।বলেছিলেন, "ওর হাতে আমি জলস্পর্শ করবোনা।"ছোট ছেলেকে বিয়ে দিয়েছিলেন নিজে পছন্দ করে।শেষ বয়সে এসে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর উদ্দোগ নেওয়ায় তিনি বড় ছেলের শরণাপন্ন হন।বড় বৌ তাকে মাতৃসম্মানে সাদরে গ্রহণ করে। 
হায়রে বিবেক
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

রাত্রির নিস্তব্ধতায়-
ঘড়ির টিকটিক আওয়াজ,
কানে ভেসে আসে
কারও করুন আর্তনাদ!

অসহায় সে-
বাঁচার শেষ চেষ্টা,
অসহায় আমি
দরজা জানলা বন্ধ রাখি।

ভোরের আলোতে ভুলে যাই সব-
বাঁচতে হবে বাঁচাতে হবে সবাইকে,
পুলিশের সামনে খুলিনা মুখ
বলিনা শুনেছি কোন চিৎকার।

মোমবাতি হাতে নিয়ে-
মিছিলে সামিল হই,
কলম তুলে নিই হাতে
প্রতিবাদের ঝড় তুলি কবিতায়!

মনুষ্যত্বের গান গাই-
বিবেককে নিজ হাতে খুন করি,
তবুও খুলিনা মুখ
বাঁচতে হবে বাঁচাতে হবে সবাইকে।

   ৬-১২-১৮

Thursday, December 6, 2018

তোমার আলো
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

অনেকটা পথ হেঁটে এসে,
তোমার মাঝে পেলাম আলো,
কষ্ট হলেও একটু নাহয়,
আমায় বেসো ভালো।

তোমার সাথে হাঁটলে পরে,
মিলবে  পথের দিশা,
যত্ন করে জ্বালিয়ে রেখো,
তোমার আলোর শিখা।

চলতে পথে আসলে বাঁধা,
ভাঙ্গবো দু'জন মিলে,
হেসে খেলে বন্ধুর পথে,
জীবন যাবে চলে।

  #নন্দা   5-12-18 
পাল্টে যায়
         নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

   পথের মাঝখানে বাপ ছেলের চিৎকারে গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে ছন্দা হাফাতে হাফাতে তাদের কাছে পৌঁছালো।সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা ছেলে রিন্টু বাবার হাত ধরে বলছে,
---এতো বড় রাস্তা আমি কিছুতেই তোমায় একা পার হতে দেবোনা।
আমাকে দেখতে পেয়ে আবারও চিৎকার, 
--তুমি বলে দাও বাবাকে এতো ভিড়ে বাবা আমার হাত ধরেই ঠাকুর দেখবে।
       চোখের সামনে ভেষে উঠলো ফেলে আসা পনের বছর আগের দিনগুলি।সেদিন ঠিক যেমন করে ওর বাবা আমায় বলেছিলো,
---তোমার ছেলেকে বলে দাও ও যেন এতো ভিড়ে আমার হাত না ছাড়ে।
    সময় কত দ্রুত পাল্টে যায়!

Saturday, December 1, 2018

স্মৃতি রোমন্থন
     
স্মৃতি রোমন্থনে হাতড়াই আলমারি
ক্লান্ত শরীর অবসন্ন মন,
যা কিছু পাই খুলে খুলে দেখি,
নিজের অজান্তেই পৌঁছে যাই
কয়েক যুগ পিছনে।
কখনো সুখস্মৃতি কখনো বা দুখস্মৃতি
সবকিছুই আজ আমার একার!
কি চেয়েছি আর কি পাইনি
তার হিসাব আজ আর করিনা।
জীবনে পেয়ে যা হারিয়েছি-
সেই বেদনায় প্রতিমুহূর্তে আমায় দগ্ধ করে। 

Wednesday, November 28, 2018

জীবনের হিসাব
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ফুলের মাঝে কাঁটা থাকে,
তবুও ভালোবাসি।
জম্ম নিলেই মরতে হবে,
জেনেই ধরায় আসি।
বাসলে ভালো আসবে আঘাত,
তবুও বাসি ভালো
সত্য-মিথ্যার দোলাচলে,
জীবন কাটে ভালো।
দুঃখ-সুখের মাঝ বরাবর,
চলছে জীবনতরী,
পাপ-পূর্ণ্যের করিনা হিসাব,
টাকার জোরে চলি। 

Saturday, November 24, 2018

পথ চেয়ে থাকি
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

চারিপাশে শুধু হারানোর স্মৃতি,
ভুলে গেছি করতে যোগ,
গুণ ভাগ হিসাবের বাইরে,
করি শুধু আজ বিয়োগ।
ছেলেবেলা সেতো হারিয়েছি কবে, হারিয়েছি বাবা মাকে ,
গড়েছি নূতন সম্পর্ক যত,
হারিয়ে ফেলেছি তাদেরকে।
আপন হয়ে যে এসেছিলো কাছে, 
বেসেছিলাম তাকে ভালো,
বিধাতার লিখনে হারালো সে,
আমায় একা ফেলে পালালো।
আমি একা বসে,
স্মৃতির মালা পরে,
সাগরের পাড়ে ঢেউ গুনি,
নক্সীকাঁথা গায়ে জড়িয়ে,
বৃথা পথ চেয়ে থাকি।

#নন্দা

Wednesday, November 21, 2018

পথে হোল দেরি
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

      ক'দিন ধরেই অতসীর মনটা তোলপাড় করছে।বারবার মনেহচ্ছে এ বুঝি সেই রবীন।যাকে ছাড়া কয়েক যুগ আগেও বেঁচে থাকাটা অর্থহীন মনেহত।অথচ সেই মানুষটাকেই একদিন সে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলো পরিস্থিতির চাপে পড়ে।সেদিন অবশ্য এই ছাড়া কোন উপায়ও ছিলোনা।অর্থ সমস্যা পরিবারে কোনদিনও ছিলোনা।ছিলো বাহুবলের অভাব।বাবা ছিলেন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারী।তখনও বাবা চাকরী  করছেন।অতসী এবং তার দাদাও ভালো মাইনের চাকুরীরত।দাদা বিয়ের পরেই বাইরে সেই যে চলে গেলো আর কোন যোগাযোগই রাখলোনা।পরিস্থিতি আজ এমন দাঁড়িয়েছে দাদা বেঁচে আছে কিনা তাপসী তাও জানে না।
    দাদা চলে যাওয়ার দু'বছরের মধ্যে বাবার কিডনীর সমস্যা ধরা পরে।লাষ্ট স্টেজ।তড়িঘড়ি মা একটা কিডনী দান করেন।রবীন তখন বাইরে অফিসের কাজে।অতসী তাকে এই ব্যপারে কিছুই জানায়না।কারন তাকে সেই সময় এই কথাগুলো বললে সে অফিসের কাজ ফেলে আসতে পারবেনা বরং টেনশান করবে।দাদাকে সেই সময় ফোনে বাবার শারীরিক অবস্থার কথা জানালে সে জানায় টাকার দরকার হলে সে পাঠাতে পারবে কিন্তু অফিসের কাজ ফেলে দেশে ফিরতে পারবেনা।অতসী তারপর আর কখনোই দাদার সাথে যোগাযোগ করেনি।
      রবীন দেশে ফিরে অতসীর সাথে দেখা করে সব জানতে পেরে অতসীর উপর বড্ড অভিমান করে।বাবা,মায়ের জন্য সর্বক্ষনের এক আয়ার ব্যবস্থা করে অফিস যাওয়া শুরু করে অতসী।কিন্তু অফিসে যেয়ে কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারেনা।সবসময় মা বাবার জন্য একটা দুশ্চিন্তা তার থেকেই যায়।কাজে ভুলভাল করতে শুরু করে।এরই মাঝে হঠাৎ করে একদিন বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় আয়ার ফোন পেয়ে পড়িমরি অফিস থেকে বাড়িতে চলে এসে বাবাকে নিয়ে নার্সিংহোম যেতে হয়।সেদিনই মায়ের ব্লাডপ্রেসার মারত্মকভাবে বেড়ে যায়।রবীন এসে তার পাশে দাঁড়ায়।বিধস্ত অতসী চাকরী ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।রবীনের নিষেধ সে কানে নেয়না।বিনা অপরাধে সে রবীনের সাথে দুর্ব্যবহার করতে থাকে।রবীনকে সে সত্যিই খুব ভালাবাসতো।কিন্তু তার এই পরিস্থিতিতে সে তার বাবা-মাকে ছেড়ে কোনদিনও রবীনকে বিয়ে করে তাদের ছেড়ে যেতে পারবেনা বুঝতে পেরেই সে রবীনের সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে।আর রবীন সবসময়ই তার এই ব্যবহারের কারন বুঝতে পেরে সবকিছু হেসেই উড়িয়ে দেয়।শেষে একদিন সরাসরি অতসী রবীনকে বলে যে তার পক্ষে রবীনকে বিয়ে করা কিছুতেই সম্ভব নয়।রবীন তাকে জানায় প্রয়োজনে সে সারাজীবন তার জন্য অপেক্ষা করবে কিন্তু দেখা সাক্ষাৎটা বন্ধ যেন না করে অতসী। কিন্তু অতসী অনড়।সে কোন সম্পর্কই রাখতে চায়না তার সাথে।অতসী মনেমনে ভাবে তার জন্য কেন সারাটা জীবন রবীন নষ্ট করবে।সে নাছোড়বান্দা হয়ে রবীনকে ফিরিয়ে দেয়।
     অতসী চাকরী ছেড়ে দিয়ে বাবা-মায়ের সেবায় নিজেকে সর্বক্ষণ ব্যস্ত রাখে।মনটা মাঝে মাঝে হু হু করে উঠলেও নিজের বুকে নিজেই পাথর চাপা দেয়।কেটে গেছে বহু বছর।প্রথমে মা পরে বাবাও অতসীকে ছেড়ে চলে যান।তখন তার বয়স আটচল্লিশ বৎসর।ঘরে বসে বসে অতসীর আর সময় কাটেনা।সে একটা এন.জি.ও.গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত হয়।
    এখন এই চুয়ান্ন বছর বয়সে এসে তার বারবার মনেহচ্ছে ফেলে আসা অতীত আবার তার সামনে আসতে চলেছে।যে এন.জি.ও.সংস্থার সাথে সে যুক্ত পনেরই আগষ্টের দিন প্রতিবার বেশ কিছু গন্যমান্য ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হন মূলত তাদের ডোনেশনের ভিত্তিতেই সংস্থাটি চলে।এবার একজন নূতন অতিথি যুক্ত হয়েছেন রবীন মুখার্জী।একই নামের তো অনেক মানুষই পৃথিবীতে থাকে।কিন্তু অতসীর যে ওই নামটার প্রতিই দুর্বলতা।তার মন বলছে এ
 তার সেই রবীন।এতদিন পরে দেখা হলে রবীনের সুখি দাম্পত্য জীবনে কোন ঝড় উঠবে নাতো।পরক্ষণেই ভাবছে ছি ছি সে এ কি ভাবছে একজন পরপুরুষ সম্পর্কে।
    পনেরই আগষ্টের সকালে অতসী যেন নিজের অজান্তেই একটু বেশি সাজলো।সাদা-কালোতে একটা জামদানী শাড়ি তার সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ।হালকা করে একটা হাত খোঁপা করে একটা সাদা গোলাপ।আহামরি সুন্দরী কোনদিনও অতসী নয়।কিন্তু একটা আলগা শ্রী আছে।সাজলে তাকে খুব সুন্দরই লাগে।
     অতসীর অনুমান ভুল নয়।এ রবীন মুখার্জী তার সেই ভালোবাসার মানুষটিই।আজও যাকে সে ভুলতে পারেনি। দু'জন দু'জনকে দেখলো।কিন্তু কথা হলনা।কিছুক্ষন স্থির দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলো।দু' জনেই হয়তো তখন ফিরে গেছিলো কয়েক যুগ আগে।অনুষ্টান শেষে যে যার বাড়ির পথে।অব্যক্ত কথাগুলি বলার জন্য দু'জনেই মুখিয়ে ছিলো কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি তাদের সে সুযোগ দিলোনা।
     রাত তখন আটটা হবে।অতসী এককাপ চা করে নিয়ে বারান্দায় বসে।ফেলে আসা দিনগুলি আবার তোলপাড় করছে তার মনের আঙ্গিনায়।হঠাৎ একটা গাড়ির শব্দ।তাকিয়ে দেখে রবীন ঢুকছে গেট দিয়ে।দ্রুত ঘরে ঢুকে চাবি এনে বারান্দার গ্রীল খুলে বলে,
---এসো।কেমন আছো তুমি?
---আমি ভালো আছি।তুমি?
---আমিও ভালো আছি।বেশ কেটে যাচ্ছে এন.জি.ও. সংস্থার সাথে দিনগুলি।এভাবেই বাকি জীবনটাও কেটে যাবে।তোমার বাড়ির সবাই কেমন আছে?
---আমার বাড়িতে আমি একা।আর তো কেউ নেই।বাবা মা দু' জনেই গত হয়েছেন।
---বিয়ে করনি ?
---আনুষ্ঠানিক বিয়ে আমার হয়নি।যাকে বিয়ে করবো ভেবেছিলাম সে আমায় ফিরিয়ে দিয়েছে।তার কর্তব্যের কাছে আমার ভালাবাসা হেরে গেছে।পরিনামে আমার তার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালাবাসা দুই ই বেড়েছে।আজও তার জন্যই অপেক্ষা করে আছি যদি এবার সে আমার ডাকে সারা দেয়।
     হঠাৎ করেই অতসী উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
---একটু বোস।আমি দু'কাপ কফি করে নিয়ে আসি।অনেক কথা বলার আছে।শোনারও আছে অনেককিছু।সারারাত বসে আজ দু'জনে দু'জনার কথা শুনবো।
   রবীন উঠে যেয়ে অতসীর হাতদুটো ধরে বলে, "এখন তোমার একটাই কর্তব্য আমার সাথে থাকা।"
   অতসী মুচকি হেসে বলে,"হু কফিটা করে নিয়ে এক্ষুণি আসছি।"

#নন্দা

Tuesday, November 20, 2018

প্রথম প্রেম
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

অনেকদিন পর তোমায় দেখলাম,
কেমন আছো বল।
ও!আমায় চিনতে পারোনি বুঝি?
আমি হলাম সেই মেয়ে
যাকে তুমি প্রথম প্রেমপত্র লিখেছিলে ।
খুব মার খেয়েছিলে ধরা পড়ে যাওয়ায়।
আমাদের কোএড স্কুল ছিলো,
হেডস্যার সেদিন খুব মেরেছিলেন তোমায়
আমার কিছু করার ছিলোনা
শুধু দূরে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া!
তারপর থেকে স্কুলে আসা বন্ধ করলে,
ভর্তি হলে অন্য স্কুলে।
কয়েক যুগ কেটে গেছে,
আমি কিন্তু আজও ভুলিনি তোমায়।
আমার জীবনের প্রথম প্রেমপত্র-
আজও মনে শিহরণ জাগায়।

#নন্দা 

Monday, November 19, 2018

 হারাধন
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

      বিদিতা আজও এই সংসারটাতে মুখ বুজে সকল দুঃখ-যন্ত্রণা সহ্য করে পরে আছে শুধুমাত্র কৌশিকের জন্য।কৌশিক তাকে নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসে।ভালোবেসে কৌশিককে বিয়ে করেছিলো। মা,বাবারও এই বিয়েতে কোন আপত্তি ছিলোনা।কৌশিক ভালো চাকরী করে নিজেদের বাড়ি মেয়ে নিজে পছন্দ করেছে তাই তারা বেশ ধুমধাম করেই একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন।

    একবুক স্বপ্ন নিয়ে বিদিতা কৌশিকের হাত ধরে শ্বশুরবাড়িতে পা রেখেই বুঝতে পারে এ সংসারে শ্বাশুড়ী মায়ের কথায় শেষ কথা।শ্বশুরমশাই খুবই নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় মানুষ।কোন ঝুটঝামেলা তিনি পছন্দ করেননা।তাই পারতপক্ষে তিনি তার স্ত্রীকে এড়িয়েই চলেন শান্তি রক্ষার্থে।
        বিয়ের পরপরই বিদিতার শ্বাশুড়ী বিদিতার  সবকিছুতেই দোষ ধরতে শুরু করেন।প্রথম প্রথম বিদিতা কথার কোন উত্তর করতোনা শুধু চোখের জল ফেলতো।কৌশিককে বললে সে বলেছিলো,
---আমাদের সংসারে মায়ের কথায় শেষ কথা।এইসব কথা নিয়ে আমি মায়ের সাথে ঝামেলা করতে পারবোনা।তবে হ্যাঁ তোমার যদি এখানে থাকতে খুব অসুবিধা হয় আমি তোমায় নিয়ে অন্যত্র ঘরভাড়া করে থাকতে রাজি আছি।তবে সেটাও তোমার কথা ভেবে।মা বাবার একমাত্র সন্তান আমি।আমার মা যেমনই হোননা কেন সন্তান হিসাবে আমার কিছু দায়িত্ব থেকেই যায় যেমন স্বামী হিসাবে তোমায় ভালো রাখা আমার দায়িত্ব।"
       না,এ কথার পরে আর কোনদিন বিদিতা কৌশিককে তার মায়ের কথা নিয়ে কিছুই বলেনি।দু'বছর পরে বিদিতার কোল আলো করে এক পুত্র সন্তান আসে।এই দু'বছরে এমন কোন দিন যায়নি বিদিতা চোখের জল ফেলেনি।এটাকেই সে তার ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছে।শ্বশুরমশাই এর সাথে তার খুবই ভালো সম্পর্ক।কৌশিক বাড়িতে না থাকলে বিদিতা সংসারের কাজ সেরে তার সাথেই সময় কাটাতো।
        দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস কোনদিন তার ছিলোনা।গল্পের বই ছিলো তার দুপুরের সঙ্গী।শ্বশুরবাড়িতে এসে শ্বশুরমশাই এর আলমারি ঠাসা গল্পের বই দেখে সে খুব খুশি হয়েছিলো।সম্পূর্ণ একটি আলাদা ঘর ঠিক যেন একটা ছোটখাটো লাইব্রেরী।একমাত্র রাতে শুতে যাওয়ার সময়টুকু ছাড়া তিনি এখানেই থাকতেন।বই পড়তে পড়তে কতদিন তিনি তার প্রিয় ইজিচেয়ারটাতেই ঘুমিয়ে পড়েছেন।বিদিতা তার শ্বশুরের সাথে নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করতো।তারমধ্যে বড় বড় লেখক লেখিকাদের লেখা গল্পগুলির চারিত্রিক বিশ্লেষণই ছিলো প্রধান।একদম ছিলো বাবা আর মেয়ের সম্পর্ক।কতদিন এমন হয়েছে গল্প করতে করতে দু'জনের কেউই খেয়াল করেনি যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।শ্বাশুড়ী মায়ের মুখ ঝামটা খেয়ে তবে চা করতে ছুটেছে বিদিতা।কষ্টগুলোকে বুকে ভারি পাথর চাপা দিয়ে এইভাবেই দু'বছর কেটে যায়।
       পুত্রসন্তানের মা হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসার পর সে তার শ্বাশুড়ীর মধ্যে এক আমূল পরিবর্তন দেখতে পায়।সর্বদা তিনি তার নাতী নিয়েই ব্যস্ত থাকেন সংসারের খুঁটিনাটি বিষয়ে আর মাথা ঘামাননা।একমাত্র ছেলেকে খাওয়ানো ছাড়া ছেলের কিছুই তার করতে হয়না।সে সংসারটাকে তখন আঁকড়ে ধরে।এতদিন সংসারের কাজকর্মে তার কোন স্বাধীনতা ছিলোনা-ছিলো কিছু করতে গেলে সবকিছুতেই একটা ভয়।এখন এতদিন পরে সে যেন বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারছে।রাতে শুধুমাত্র শোয়ার সময়টুকু ছাড়া তিনি তার নাতিকে কাছছাড়া করতেননা।
        কৌশিককে একদিন রাতে বিদিতা বলে,
---আচ্ছা একটা জিনিস খেয়াল করেছো মা এখন আমাদের ছেলেকে ছাড়া অন্য কোনদিকেই মন দেননা।সবসময় ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকেন।মা আগের মত আর চেঁচামেচিও করেননা।
---হু দেখেছি।আসলে মা ভাবেন আমার ভাই আমার ছেলে হয়ে আবার মায়ের কাছে ফিরে এসেছে।
---মানে?তোমার আর একটা ভাই ছিলো নাকি?বলোনি তো আমায় কোনদিন।কি হয়েছিলো তার?
---ভাই আমার থেকে বছর তিনেকের ছোট ছিলো।হঠাৎ একদিন অজ্ঞান হয়ে যায়।হাসপাতাল নিয়ে গেলে বলে ব্লাড ক্যান্সার লাষ্ট স্টেজ।কিন্তু আমরা আগে কিছুই জানতে পারিনি।দিব্যি সুস্থ্য ও সবল ছিলো।খুব ভালো ফুটবল খেলতো। খেলতে খেলতেই মাঠের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল।ওর বন্ধুরাই আমাদের খবর দেয়।তারপর দু'মাস বেঁচে ছিলো।আর ওই ঘটনার পর মা প্রায় উন্মাদ হয়ে পড়েছিলেন।অনেক চিকিৎসা করিয়ে মাকে এই পর্যন্ত আনতে পেরেছি।মা আগে খুব শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।কিন্তু ভাই চলে যাওয়ার পর মা কেমন খিটখিটে হয়ে পড়েন।সবকিছুই যেন তার মনের মত হয়না।তাই আমি ও বাবা মায়ের এই আচরণ মুখ বুজে মেনে নিই কারন আমরা জানি মায়ের এই আচরণ তার মানষিক রোগের ফল।কোনকিছু তার মনমতো না হলে তিনি চিৎকার করে বাড়ি মাথায় করেন এই ঘটনার পর থেকে।তাই আমি ও বাবা সবসময় চুপ থাকতাম।আমার মা খুব ভালো মানুষ।কিন্তু ওই আঘাতে মানুষটা কেমন যেন হয়ে গেছিলেন।
       বিদিতা পাথর।মনেমনে তখন সে খুব কষ্ট পাচ্ছে।পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে শ্বাশুড়ী মায়ের দরজার কাছে যেয়ে 'মা' 'মা' করে ডেকে তুলে ছেলেকে তার কোলে দিয়ে বলে,
---মা আজ থেকে ও তোমার ঘরেই থাকবে।শুধু খাওয়ানোর সময় হলে আমি ওকে খাইয়ে দিয়ে যাবো।আপনাকে যেয়ে আমার ঘরে ওকে নিয়ে থাকতে হবেনা।ছেলেকে আপনি সামলান আর আপনার সংসার আমি সামলাবো।বলেই ঢিপ করে এক প্রণাম করে।বিদিতার শ্বাশুড়ী চোখ ভর্তি জল নিয়ে ছেলের বৌকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন,
---তুই তো আমার ঘরের লক্ষ্মী মা,আমার হারানো মানিক আমার বুকে তুলে দিয়েছিস।খুব সুখি হ মা।খুব ভালো থাক।
       স্নান করে চা নিয়ে শ্বশুরকে দিতে গিয়ে দেখে তিনি তার লাইব্রেরীতে নেই।কাপ দুটো হাতে করে তাদের শোয়ার ঘরে ঢুকে দেখে দু'জনেই ওই অবোধ শিশুটার সাথে অনর্গল বকে চলেছেন হাসি মুখে।

                     শেষ
   

Sunday, November 18, 2018

 
বাঁধন
          নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

    আজ অরূপের কথা খুব মনে পড়ছে মহুয়ার।কিন্তু একদিন তো এই অরূপকেই মহুয়া প্রত্যাখান করেছিলো।দেয়নি তার ভালোবাসার মর্যাদা।তখন মহুয়া প্রেমে পাগল রাহুলের।ভালোবাসার আকাশে মুক্ত বিহঙ্গের মত তখন মহুয়া ও রাহুল উড়ছে।বড়লোকের একমাত্র ছেলে,বাবার অঢেল টাকা।মহুয়া সারাজীবনই উচ্চাকাঙ্খী।গরীবের ছেলে অরূপের  ভালোবাসাকে সে কোনদিনও পাত্তা দেয়নি।
    রাহুলের বাড়িতে মহুয়াকে মেনে না নেওয়ায় মহুয়া ঘর ছাড়ে রাহুলের সাথে।ভেবেছিল পরবর্তীতে সবকিছু বুঝি ঠিক হয়ে যাবে।রাহুল তখন বেকার।একাউন্টে যা টাকা ছিলো কোনরকমে ছ'মাস চলে।তারপরই শুরু হয় চরম দারিদ্র যা রাহুলের কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে।চরম বিলাসিতার মধ্যে অতিবাহিত জীবনে হঠাৎ এ ছন্দপতনের জন্য সে মহুয়াকেই দায়ী করতে থাকে।অবশেষে সে মহুয়াকে ছেড়ে নিজের বাড়িতে বিলাসিতার মধ্যেই ফিরে যায়।
    মহুয়া অথই সমুদ্রে পড়ে।বাবার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার মুখ তার নেই।সে ভালোভাবেই জানতো তারা তাকে আর গ্রহণ করবেননা।একমাত্র যদি অরূপের কাছে গেলে  কিছু সুরাহা সে করতে পারে।
    রাহুলের চলে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে সে অরূপদের বাড়িতে এসে জানতে পারে অরূপ চাকরী পেয়ে চেন্নাই চলে গেছে।মাথায় তখন তার আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।কি করবে এখন সে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা।কয়েকদিনের মধ্যেই সে টের পায় এখন সে আর একা নয়।নূতন একটা প্রাণের সঞ্চার তার মধ্যে জানান দিচ্ছে।দিশেহারা মহুয়া বাবার বাড়িতেই ফিরে যাওয়া মনস্থির করে।
      মহুয়ার যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখে সে একটি অজানা বাড়িতে শুয়ে।অনেক কষ্টে মনে পড়ে তার বাবা,মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য সে একটি বাসে উঠে বসেছিলো।হঠাৎ করেই শরীরটা খুব খারাপ লাগছিলো তার।তারপর আর কিছু তার মনে নেই।
     আস্তে আস্তে মহুয়া উঠে বসলো।ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলো যে বাড়িতে সে এখন আছে তারা খুবই ধনী।চুপচাপ বসে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে।আর ঠিক তখনই মাঝবয়সী এক ভদ্রমহিলা এসে ঘরে ঢোকেন।মহুয়া খাট থেকে নামতে যায়।ভদ্রমহিলা তাকে বাঁধা দেন।তিনি একটি চেয়ার টেনে নিয়ে মহুয়ার কাছাকাছি বসে সরাসরি জানতে চান,
----কোথায় যাচ্ছিলে এই অবস্থায়?
----আপনি আমায় চেনেন?
----হ্যাঁ চিনি আর তোমার সব কথাও আমি জানি।
    মহুয়া অবাক হয়।সে জানতে চায়,
----কে আপনি?
----আমি কে সে পরিচয় তো আমি নিশ্চয় দেবো।কিন্তু তুমি কোথায় যাচ্ছিলে বললে না তো?
----ভালোবেসে বিয়ে করে ঘর ছেড়েছিলাম।দুই বাড়ির কেউই মেনে নেয়নি।এখন আমি প্রেগন্যান্ট।আমার স্বামী আমায় ছেড়ে তার মা,বাবার কাছে চলে গেছে।শুনেছি তারা খুব বড়লোক।আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।একা হলে নিজেকে শেষ করে দিতাম।কিন্তু আমার ভিতরে যে আর একটা প্রাণের সঞ্চার হয়েছে তাকে কি করে মেরে ফেলি?তাই একবার শেষ চেষ্টা করতে সেই বাবা,মায়ের কাছেই যাচ্ছিলাম যদিও জানি তারা আমাকে হয়তো বাড়িতেই ঢুকতে দেবেননা। কিন্তু এই ছাড়া আমার কাছে অন্যকোন  পথও খোলা ছিলোনা । কিন্তু আপনি কে বললেন নাতো?
---আমি কে শুনলে তুমি অবাক হবে আরও অবাক হবে এখানে কিভাবে এসেছো শুনলে।
---আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।আপনি পরিষ্কার করে বলুন কে আপনি আর কি করেই বা আমি এখানে এলাম?
---আমি রাহুলের মা।
---সেকি?আপনি আমাকে কি করে চিনলেন?
---তোমাদের বিয়েতে রাহুলের বাবার কোন মত ছিলোনা।আমি অনেক করে ওর বাবাকে বুঝিয়েছিলাম।কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি হননি।ছেলেও হটকারীতা বশত বাড়ির থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলো।ফোন করলেও ধরতো না।সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো।অনেক কষ্টে যখন তোমাদের ঠিকানা জোগাড় করি সেই লোক আমায় জানান কয়েকদিন আগেই রাহুল ওই বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে।কিন্তু সে প্রথমে বাড়িতে আসেনি।কয়েকদিন বন্ধুর বাড়িতে ছিলো।আমি একজন নারী হয়ে আর একজন নারীর কষ্ট-দুঃখ মর্মে মর্মে অনুভব করেছিলাম।তাই লোক মারফৎ তোমার উপর নজর রাখতাম।তুমি যখন বাসে যাচ্ছিলে সেখানেও আমার লোক ছিলো।তুমি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারাই তোমাকে আমার বাড়ি পৌঁছে দেয়।কটাদিন বন্ধুর বাড়িতে কাটিয়ে রাহুল বাড়ি ফিরে আসলেই ওর বাবা ওকে নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যান।এখন তারা কেউই বাড়িতে নেই।হয়তো তিনি ফিরে এসে আমার সাথে এমনকি তোমার সাথেও চরম ঝামেলা করবেন।কিন্তু মনে রেখো এ বাড়ির ছেলে তোমায় বিয়ে করেছে তাই এই বাড়িতে আছে তোমার ন্যায্য অধিকার।কোন পরিস্থিতিতেই তোমার অধিকার তুমি ছাড়বেনা।বাকিটা আমি দেখবো।
    মহুয়া অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছে।তার মুখে কোন কথা নেই।মনেমনে ভাবছে এ কোন দেবীর দর্শন সে পেলো।এ তো সে স্বপ্নেও কোনদিন কল্পনা করেনি।

অপবাদ
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

শীতকালের সকাল।কুয়াশায় চারিপাশ ঢাকা।এতোটাই কুয়াশা যে সামনের মানুষ টাকেও ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না।  অনিলবাবু চললেন ব্যাগ হাতে বাজার কোরতে।সংসার বলে কথা !এই কুয়াশার মধ্যে ও তাঁকে বেড়োতে হোলো।হঠাৎ  পাড়ার একটি ছেলে তাঁকে ডেকে বললো ,"মেশোমশাই ,খবরটা শুনেছেন "?অনিলবাবু জানতে চাইলেন ,"কি খবর "? "নীরাদি কাল সুইসাইড করেছে।" অনিলবাবু হতভম্বের মত বললেন ," নীরা "?অনিলবাবু আর কিছু জিজ্ঞাসা না করেই আনমনাভাবেই বাজারের উদেশ্যে রওনা দিলেন।বাড়িতে এসে স্ত্রী কে সব বললেন।ভাবতে লাগলেন ,নীরা তো খুব ভালো মেয়ে।বয়স ও এখন অনেক।  বিয়ে-  থা করেনি।সমাজ সেবা করেই তার দিন চলে।বাড়িতে কোনো অভাব নেই।কিছু বাচ্চাকে বিনা পয়সায় পড়ায় ; ঠিক স্কুল এর মত নিয়ম করে।যে যখন বিপদে পড়ে তার বিপদেই সে ছুটে যায়।  কি এমন হলো ? হাসি ,খুশি ,প্রানবন্ত মেয়েটার ; যার জন্য তাকে জীবনের এই চরম পথ বেছে নিতে হলো ? সন্ধ্যার দিকে অনিলবাবুর স্ত্রী পাড়ার থেকে শুনে এসে তাঁকে আসল ঘটনাটা জানালেন।
কয়েকদিন ধরেই একটি অল্প বয়সী ছেলে তাকে নানান ভাবে উত্যক্ত করছিল।সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাওয়াতে একদিন রাস্তার মাঝ খানে দাঁড়িয়ে তাকে একটা চড় ও মেরেছিলো।তাতে ছেলেটা আরও বেশী করে ক্ষেপে যায়।দলবল নিয়ে একদিন বাড়িতেও চড়াও হয়।  অকথ্য - কুকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ।নীরা তার শিক্ষা এবং রুচির অবমাননা করে না। সে প্রতিবাদ করে ঠিক ই কিন্তু কু- কথায় নয়।তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করে।পরে না পেরে পুলিশ ডেকে তাদেরকে ধরিয়েও দেয়।
   কিন্তু নেতা - নেত্রীর ছত্র ছায়ায় থাকার ফলে রাতেই তারা ছাড়া পেয়ে যায়। এ অপমান ,এ লজ্জা সে কিছুতেই মানতে পারে না।ভিতরে ভিতরে ক্ষয় হয়ে যেতে থাকে।সারাজীবন মানুষের জন্য সে করেই এসছে ।বিনিময়ে সম্মান টুকু ছাড়া কারও কাছে তার কিছু প্রত্যাশা ছিলো না ।ঘর বন্ধী অবস্থায় দিন কাটাতে কাটাতে হঠাৎ ই তার এই চরম সিদ্ধান্ত।অনিলবাবু সব শুনে  শুধু বললেন ," যে মেয়েটা সারা জীবন শুধু অন্যের কথা ভেবে গেলো ,অন্যের সমস্যার সমাধান কোরে গেলো - আর আমরা তার এই বিপদের দিনে কিছুই কোরতে পারলাম না।বড্ড অভিমান নিয়ে চলে গেলো মেয়েটা।ছি !!আমরা কি মানুষ!নিজেদের আমরা মানুষ বলে জাহির করি !নিজের প্রতি নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছা কোরছে "! 
যে ছবি এঁকেছি মনেমনে,
এতদিন পরে দিলে দেখা,
লুকিয়ে ছিলে সঙ্গোপনে।
সারাটা জীবন পাশেই থেকো,
আমার যন্ত্রণা ধুয়েমুছে দিও,
অকারণ ব্যথা দিওনা আমায়,
ভালোবাসায় আমায় বেঁধে রেখো। 

Thursday, November 15, 2018

একা আমি
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

যদি মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়
আমায় মনে কোর,
আঁধারের মাঝে তাকিয়ে তুমি
আমার পরশ নিও।
চোখ বুজে চুপিচুপি বোলো
তোমার মনের কথা,
নীরবে শুনবো সকলকিছু
দেবোনা আর ব্যথা।
সুখ-দুঃখের স্মৃতিরা সব
রয়েছে ঘরে ছড়িয়ে, 
তাদের সাথেই কাটিও সময়
আমি থাকবো বুকে জড়িয়ে।
তোমার কাছে অনেকেই আছে
আমি যে বড্ড একা।
পরজনমের আশায় থাকবো
হয় যদি আবার দেখা।

#নন্দা 

Wednesday, November 14, 2018

বহুরুপী
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

রং বদলের চলছে পালা
সবাই রং বদলায়।
দিচ্ছে একে অপরকে ধোঁকা
ভাবছে মনে বোকা।
হাসাতে কেউ পারুক বা না পারুক
কাঁদাতে পায় মজা।
হারিয়ে যাবে কাছের মানুষ সব
চলবে ভালোবাসা খোঁজা।
আজকে যাকে ভালোবেসে
নিচ্ছ কাছে টেনে,
স্বার্থের কারনে ঠেলছো তাকেই
নর্দমা বা ড্রেনে।
মানুষ তুমি বহুরুপী
গিরগিটিও মানে হার,
মুখোশ তোমার খুললে পরে
থাকবেনা কেউ কাছে তোমার।

#নন্দা  ১৫-১১-১৮

Monday, November 12, 2018

#চিরকুট

সময়ের সাথে বাড়ছে বয়স
সঞ্চয় অভিজ্ঞতা। 
ভালোবেসে নিলে কাছে
দেয় ব্যথা।
চতুরতার হচ্ছে জয়
ভাঙ্গছে সম্পর্ক। 
সরল জীবনকে করছে সবাই
জটিল অঙ্ক।

#নন্দা 

Sunday, November 4, 2018

#চিঠি
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

   নীল,
      হয়তো অবাক হচ্ছিস এতদিন পর কেন তোকে চিঠি লিখছি।কেন লিখছি এটা হয়তো আমি নিজেও জানিনা।তবে জীবনের এই শেষবেলায় এসে আমার না বলা কিছু কথা তোকে জানাতে ইচ্ছা করলো বলতে পারিস।
        তোকে আমি খুব ভালবাসতাম এটা তুই ভালোভাবেই জানিস।আর তুই ও আমকে....... ভাবছিস হয়তো কেন তোকে বিয়ে করতে রাজি হলামনা তখন।আমার কোন উপায় ছিলোনা রে....।আমি ছিলাম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।কার কাছে,কেন সেটাই তোকে আজ বলবো।
        আমরা দু'জনে যখন মুক্ত বিহঙ্গের মত ডানা মেলে ভালোবাসার আকাশে উড়ছি ঠিক তখনই একদিন মাসিমা,মেশোমশাই অথাৎ তোর বাবা, মা আমাদের বাড়িতে এসে আমার বাবা, মা কে চরম অপমান করেন।নানান ধরনের কটুক্তি করেন।সে ভাষাগুলো না হয় নাই বললাম কারন সেগুলি শুনতে তোর ভালো লাগবেনা জানি।সেদিন তারা বেরিয়ে যাওয়ার পর বাবা , মা আমার সাথে আর কথা বলেননি।বলাবাহুল্য সেদিন রাতে কারও খাওয়াও হয়েছিলো না।অদ্ভুত এক অস্থিরতায় অন্ধকার বারান্দার এক কোণে বসে ছিলাম।হঠাৎ দেখলাম বাবা বারান্দার গ্রীল খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলেন হাতে কিছু একটা নিয়ে।অন্ধকারের ভিতর ঠিক বুঝতে পারলামনা হাতে কি রয়েছে।আমিও বাবার পিছু নিলাম।
       কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।দেখলাম বাবা উঠানের বড় আম গাছটায়.......দৌড়ে যেয়ে বাবার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।ততক্ষণে মা সেখানে এসে গেছেন।বাবা আমায় শুধু একটা কথায় বললেন "সারাজীবন মাথা উঁচু করে বেঁচেছি আজ এই অপমানের পর আর এ মুখ আমি কাউকে দেখাতে পারবোনা।তোমাকে আমি বাঁধা দেবোনা।আমার মৃত্যুর পর তোমার যা মন চায় কোর।"সেদিন বাবাকে কথা দিয়েছিলাম তোকে আমি ফিরিয়ে দেবো।তুই আমাকে ভুল বুঝেছিলি আমি জানি।কিন্তু এই ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলো কি?সন্তান হয়ে বাবার মৃত্যুর কারন হবো এটা আমি ভাবতেও পারিনা।
      তোকে ফিরিয়ে দিয়ে বাবা, মায়ের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে কলকাতা পারি দিলাম।ভেবেছিলাম মানিয়ে নিয়ে সুখি হওয়ার চেষ্টা করবো।তোকে ভুলতে পারবোনা জানতাম।তাই বুকের এক কোণায় তোকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু যখনই আমি একা থাকতাম তুই ঘুম থেকে জেগে উঠে আমায় জ্বালাতন ......।
আমিও চোখ বন্ধ করে তোর সাথেই সময় কাটাতাম।
      যে মানুষটার হাত ধরে নূতন জীবনে প্রবেশ করেছিলাম সে আমাকে কোনদিনও ভালোইবাসেনি।কিন্তু তবুও আমি দুই সন্তানের মা।আমি ছিলাম শুধুমাত্র লোকটির রাতের শয্যাসঙ্গীনী।কোনদিন এ নিয়ে অশান্তি তার সাথে আমি করিনি কারন মন থেকে আমিও তাকে কোনদিনও.........কিন্তু কি করবো বল?তোকে যে আমি আজও ভুলতে পারিনি।ত্রিশটা বছর অভিনয় করে ঘোরের মধ্যেই যেন কেটে গেলো।বিশ্বাস করবি কিনা জানিনা , আমি কিন্তু কোনদিনও আমার দায়িত্ব-কর্তব্য থেকে বিন্দুমাত্র সরিনি বা বলতে পারিস আমার বিবেক আমাকে সরতে দেয়নি।মন থেকে ভালবাসতে পারিনি ঠিকই কিন্তু অবহেলাও কোনদিন তাকে করিনি।একটা যন্ত্রের মত পুরো জীবনটা কাটিয়ে দিলাম।সে যেদিন আমায় ছেড়ে চিরদিনের মত চলে গেলো সেদিন হাউ হাউ করে কেঁদেছিলাম।কিন্তু কেন বলতে পারিস?আমি জানি মানুষটিকে কোনদিন ভালবাসতে পারিনি .....সেদিনের কান্না তো সে কথা বলেনা....হয়তো মনের কোথাও তার জন্য তিল তিল করে অজান্তেই একটা জায়গা তৈরি হয়ে গেছিলো।বলতে পারিস নীল,একটা মানুষ একই সাথে দু'জনকে ভালবাসতে পারে?
           কি পেলাম আর কি পেলামনা জীবনে তার হিসাব আজ আর করিনা।হিসাবের খাতা আমার শূণ্য।যা পেয়েছিলাম আর যা পাইনি দুটোতেই ছিলো আমার আক্ষেপ!তাই হিসাবটা মিলাতে পারিনা।
        আজ আমি সম্পূর্ণ একা।ছেলেমেয়ে উভয়ই বিদেশে।খুব ইচ্ছা করে তোকে একবার দেখতে......ইচ্ছা করে একবার তোকে ছুঁতে.....একবার তোকে জ......।কিন্তু আমি জানি তা আমি আর পারবো না কেননা আমাদের মাঝে থাকবে ওই লোকটি ....আমার স্বামী.... যেমন তার আর আমার মাঝে সর্বদা তুই থাকতিস ....।
                                       ইতি 
                                           তোর আমি

Tuesday, October 30, 2018

নাইবা পেলাম
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

নাইবা পেলাম তোমায় আমি
নিজের করে কাছে,
সারাজীবন কাটবে আমার
তোমায় ভালোবেসে।
তোমার পরশ পড়লে মনে
লজ্জায় আজও লাল,
সেই ছোঁয়া রেখে মনে
কাটবে আমার কাল।
ভালোবাসা মানে কি আর
শুধুই কাছে পাওয়া?
প্রিয় আমার থাকবে সুখে
এটাই শুধু চাওয়া।


#   নন্দা 

Monday, October 22, 2018

চিরকুট 
তোমার কাছে আমি পরাজিত, 
ভেঙ্গেছ আমার অহংকার, 
তোমার দুর্বার ভালোবাসার কাছে, 
আমি নতজানু। 
আমার ক্ষুদ্রতা সব ঢেকে, 
আমকে করেছো রাজরানী, 
তোমার কাছে আমি চিরঋণী। 

NMRC   মানবী 

Sunday, October 21, 2018

বাঁচাটাই অর্থহীন
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

জীবনের ঝড়-ঝাপটাগুলি মোকাবেলা করেছি দু'জনে,
আজ আমি একা,
চার দেয়ালের মধ্যে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়।
সবকিছু আজ স্মৃতি!
পুজোর দিনগুলিও ঘরে থাকি বন্ধি,
চারিদিকের এতো কোলাহলের মাঝেও-
মন থাকে উদাসীন।
ঘরের প্রতিটা কোণায় স্মৃতিরা দৌড়ে বেড়ায়।
চেতন-অবচেতনে স্মৃতিরাই ঘিরে থাকে।
আলমারী ভর্তি ঠাসা জামা কাপড়,
কোনটা এখনও নূতন, খোলা হয়নি ভাজ।
তোমার কলম,তোমার ঘড়ি নিত্য ব্যবহার্য জিনিস-
সবকিছুই আছে সেই আগের মতই-
চোখের সম্মুখেই শুধু তুমি নেই!
এভাবে কি বাঁচা যায়?

# নন্দা 

বন্ধন 
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 

---এই মেজদি তুই কি করছিস এতক্ষণ বাথরুমে?মেয়েটার ক্ষিদে পেয়েছে তো!
     বাথরুমের কাছে দাঁড়িয়ে রেখা চিৎকার করতে থাকে।কিন্তু ভিতর থেকে কোন সারা না পেয়ে সে ভয় পেয়ে যায়।কাল রাত থেকেই মেজদি শরীরটা খারাপ বলছিলো।জোরে জোরে বাথরুমের দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে রেখা।না,কোন সারা নেই।দুই বোনই বাপের বাড়ি এসছে এক আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে।দুজনেরই দুটি মেয়ে।রেখা ছোট হলেও রেখার মেয়েটি তার মেজদি শিখার মেয়ের থেকে একবছরের বড়।বড়দির শ্বশুরবাড়ি চেন্নাই।বড়দির কোন ছেলেমেয়ে হয়নি।রেখা ও শিখার শ্বশুরবাড়ি কলকাতাতেই।যখন বাপের বাড়িতে তারা আসে দুজনে একসাথেই আসে যাতে দেখা হয়।কথায় বলে,"গাঙ্গে গাঙ্গে দেখা হয় তো বোনে বোনে দেখা হয়না।"কিন্তু ছোটবেলা থেকেই এই দুই বোনের খুব মিল।তারা সবসময় ফোন করে একদিনেই আসে।আর এর ফলে ওই দুটি বাচ্চার মধ্যেও খুব মিল।একজনের বয়স চার আর একজনের পাঁচ।  
    সেই মুহূর্তে বাড়িতে অন্য কেউই ছিলোনা।রেখাদের বাড়ির সামনেই রাস্তার ওপারে ছিলো ক্লাব।সে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে যেয়ে ক্লাবের ছেলেদের ডেকে আনে।ছেলেগুলো এসে বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে ফেলে।কিন্তু ততক্ষণে যা অঘটন ঘটা ঘটে গেছে। 
       সঙ্গে সঙ্গেই শিখাকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়।কিন্তু ডাক্তার জানান প্রায় ঘন্টা খানেক আগেই শিখার মৃত্যু হয়েছে।
        রেখার বাবা নেই।বৃদ্ধা মা ও অবিবাহিত ভায়ের সংসার।বাচ্চাটিকে নিয়ে রেখা অথই সমুদ্রে পড়ে।এদিকে ভগ্নিপতিও একা মানুষ।তার ওফিস রয়েছে।সেও বাচ্চাটিকে নিয়ে যেতে পারবেনা।বাড়িতে কে দেখবে তাকে?শেষমেষ রেখা ঠিক করে সেই ওকে মানুষ করবে।আজ থেকে না হয় ভাববে তার দুটি মেয়ে।ছোট্ট রিয়া বুঝতেও পারলোনা সে জীবনে কি হারিয়ে ফেললো।খবর পেয়েই চেন্নাই থেকে চলে আসেন ওদের বড়দি বিশাখা।তিনি এসেই মা হারা মেয়েটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,"ঈশ্বর তোমার কাছে আমি যে ভাবেই হোক একটি সন্তান চেয়েছিলাম কিন্তু আমি তো এভাবে মা হতে চাইনি।এটা তুমি কেন করলে?তুমি সব আগে থাকতেই ঠিক করে রাখো সবাই বলে।তাই কি তুমি আমার কোল এতদিন রিয়ার জন্যই ফাঁকা রেখেছিলে?কেন করলে এটা?এই ছোট্ট বয়সে কেন ওকে মাতৃহারা করলে?"বিশাখা জ্ঞান হারালো।নানানভাবে তখন সবাই চেষ্টা করে তার জ্ঞান ফেরালো।রিয়াকে কোলে নিয়ে সে তার মেজ ভগ্নিপতিকে ডেকে বললো,"অনল তোমার বয়স কম। পুরো জীবন তোমার পড়ে রয়েছে। কিছুদিন পড় তুমি পূনরায় বিয়ে করবে হয়তো। তখন এই মা হারা শিশুটির কি হবে বলতে পারো?মেয়েটিকে দেখাশুনা করারও কেউ নেই তোমার বাড়িতে এখন ।বিয়ের পর ওর সৎমা ওকে দেখবে কিনা তারও কোন নিশ্চয়তা নেই । আমি ওকে দত্তক নিতে চাই।তোমার কোন আপত্তি নেই তো?"        
           বিশাখা রিয়াকে দত্তক নিয়ে পূনরায় তার শ্বশুরবাড়ি ফিরে গেলো।বিশাখার সংসারে অর্থের কোন অভাব নেই অভাব ছিলো শুধু একটি বাচ্চার।রিয়া তার ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে সারা বাড়ি দাপিয়ে বেড়ায় আর বিশাখার চোখের থেকে অশ্রু ঝরে পড়ে তা আনন্দ আর ছোট বোনকে হারানোর বেদনার।রিয়ার সবকিছুতেই সে খুঁজে পায় তার বোন শিখাকে।
       নিজের মনের মত করে সে রিয়াকে মানুষ করে।আজ রিয়ার বিয়ে।রিয়া জানে সে বিশাখার মেয়ে নয়।কিন্তু মায়ের অভাব সে কোনদিনও অনুভব করেনি। 
        হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী মেয়েকে প্রথম শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় কাঁধের উপর থেকে চাল দিয়ে মাতৃ ঋণ শোধ করতে হয়।কিন্তু রিয়া তা করেনি।সে বলেছে,"যে ঋণ বুকের তাজা রক্ত দিয়েও শোধ করা যায়না সে ঋণ আমি কিছুতেই এভাবে লোক দেখানো কথা বলে নাটক করতে পারবোনা।"
        বিশাখার এখন অনেক বয়স।স্বামী বেশ কয়েক বছর গত হয়েছেন।এখন তিনি তার আদরের রিয়ার বাড়িতে তার দুই নাতি নাতনীকে নিয়ে সবসময় আনন্দে মেতে থাকেন।কারন মাকে রিয়া একা রাখতে ভয় পায়।জামাই বাড়িতে থাকতে না চেয়ে যতবারই নিজের ঘরে বিশাখা ফিরতে চেয়েছেন রিয়া তার কোন আপত্তিই কানে তোলেনি। 
                                 (শেষ)



  একটি সত্য ঘটনা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

   সেদিনটি ছিলো কুয়াশাচ্ছন্ন শরতের সকাল।পূর্বদিকের জানলাটা আমি খুলেই ঘুমাই।আমার বাড়ির ঠিক পূর্বদিকেই মন্দিরার নিজ হাতে লাগানো শিউলি গাছটি বেশ বড়সড় হয়ে উঠেছে।সারাবছরই গাছটাতে দু'চারটি ফুল ফুটলেও পুজোর সময় শিউলিতলা ফুলে ভর্তি হয়ে থাকে।আর তার মিষ্টি সুবাস  পুবের জানলা দিয়ে আমার ঘরে ঢুকে রোজ সকলে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়।
      সেদিন ছিলো অষ্টমীর সকাল।ঘুম ভেঙ্গে আমি এসে আমার সাধের ছোট্ট ব্যালকনিতাতে দাঁড়ালাম।রাস্তার পারে প্রাচীরের গা গেষে একটি নারকেল গাছে বেশ কয়েকটি পাখি বসে আপনমনে তাদের নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় মগ্ন।ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েই এই সময়টা আমি একটু প্রাণায়াম করি।আমি আমার নিত্য কর্মে মন দিলাম।হঠাৎ একটি কোলাহল কানে এলো।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি সামনের রাস্তা দিয়ে একটি শববাহী গাড়ি আসছে আর তার পিছনে পরিচিত মানুষের ঢল।মুহূর্তে সবকিছু ভুলে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসি।কে চলে গেলো?অকালেই কি অঘটন ঘটে গেলো?এই কোলাহল আনন্দউৎসবের দিনে কার বাড়িতে এতো বড় অঘটন ঘটলো?শরীর মন শিউরে উঠলো।মৃত্যু মানুষের জীবনে এমন একটা পরিণতি মানুষ সেখানে দম দেওয়া পুতুল মাত্র।প্রেমপ্রীতি দিয়ে গড়া এই সংসার,সবথেকে কাছের মানুষগুলো,আত্মীয়স্বজন সব কিছু ছেড়ে একদিন চিরতরে চলে যেতেই হবে।এটাই বিধাতার লিখন।যাওয়ার সময় হলে কেউ তাকে ধরে রাখতে পারবেনা।সংসার সমুদ্রের একপাড়ে জীবন অপর পাড়ে মৃত্যু।বিশ্বজয়ী শক্তি,অতুল সম্পদ আকাশচুম্বী কীর্তি -কোনকিছুই মৃত্যুকে জয় করতে পারেনি।কবি তো বলেই গেছেন,
"মরণ কি টেনে দেবে আঁখিকোণে অন্ধ আবরণ,
এপার ওপার মাঝে রবেনাকো' স্মৃতির বন্ধন।
      পরিচিত একজনকে দেখে জানতে চাইলাম ঘটনার বিবরণ।যা শুনলাম তাতে মাথাটা ভনভন করে ঘুরতে লাগলো।এতো অল্প বয়সে এমন দুটি তাজা প্রাণ চলে গেলো?নিজের অজান্তেই চোখের থেকে জল বেরিয়ে আসলো।
   'পরিবার মানবজীবনে সব চাইতে বড় শিক্ষাকেন্দ্র আর মাতাপিতা সবচাইতে বড় শিক্ষক,-কিন্তু সত্যিই কি আজকের যুগে সে কথা খাটে? পরিবারের সব শিক্ষা কি সব সন্তানেরা নিতে পারে?দেখা যায় একই পরিবারের তিনটি সন্তান একই শিক্ষা পেয়েও তিন রকম ভাবে বেরে ওঠে।কোনটি খুব ভালো আবার কোনটি খুব খারাপ।বাবা মায়ের শিক্ষা কি সব সময় কাজে আসে?কোনো বাবা মা কি চান তার সন্তান কূপথে যাক?অল্প বয়সী ছেলেমেয়ের মধ্যে দোষ দেখলেই আমরা অধিকাংশই বাবা মায়ের কোন শিক্ষা নেই বলে চেঁচাতে শুরু করি।কিন্তু কেন করি?নিজের সন্তানটিকেই কি নিজের মনের মত করে মানুষ করতে পারি?তবে অন্যের সন্তানের ক্ষেত্রে তার মাতা পিতাকে কেন টেনে আনি?
      রবীন সেনের দুই ছেলে।বড়টি ইঞ্জিনিয়ার।ছোটটিও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।বাড়ির থেকেই কলেজে যাতায়াত করে।একটু ত্যাঁদড় গোছের।কিন্তু বড় ছেলেটি খুবই ভালো।ভদ্র, বিনয়ী এবং অমায়িক।ছোট ছেলে অসিত এই পুজোর সময়ে সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত বন্ধুদের সাথেই রোজ কাটাচ্ছে।বাড়িতে এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও পুজোর সময় বিশেষ কোন বাঁধা ছিলোনা।অষ্টমী পুজোর রাতে পাড়ার প্যান্ডেলেই ছিলো।কয়েকজন বন্ধু এসে পড়ায় ছ সাতজন মিলে তিনটি বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।রাতে সেদিন একটু বৃষ্টিও হয়েছিলো।চাকা পিছলে যেয়ে অসিত সহ বাকি দুটি ছেলে বাইক থেকে পড়ে যায়।ঘটনাস্থলেই অসিত সহ আর একটি ছেলের মাথা পুরো থেঁতলে যায়।স্পট ডেড।ভোর রাতেই বাড়িতে খবর আসে।জানা যায় প্রত্যেকটি ছেলে ড্রিংক করেছিলো।অল্প বয়সে অধঃপতন যাওয়ার ফল ভুগতে হোল বাবা মা ও পরিবারের বাকি সদস্যদের।
     মৃত্যু অবধারিত।কিন্তু এ কেমন মৃত্যু?ফুল ফোঁটবার আগেই যে ঝরে যায়!তাকে কি মেনে নেওয়া যায়?এটা একটা দুর্ঘটনা ঠিক কিন্তু তাই বলে এই অল্প বয়সী ছেলেটির মৃত্যুর পরেও তার বাবা মায়ের কষ্টের কথা না ভেবে তাদের শিক্ষা নিয়ে কথা বলতে হবে?আর যারা সেটা করেন বা এই ঘটনার পর করছেন তাদের মানুষ ভাবতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।বেশিক্ষণ আর পথের মধ্যে দাঁড়িয়ে ওইসব কথা শোনার মত মনের অবস্থা আমার ছিলোনা।আস্তে আস্তে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।হঠাৎ করেই শরতের নীলাকাশটা আমার কাছে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠলো।
   

Wednesday, October 17, 2018

চিরকুট
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

পুজোর দিনেও মন যদি থাকে বিষন্ন,
নিরিবিলি জানলার কাছে বসেও-
শব্দমালা গাঁথা হয়ে ওঠেনা।
চারিদিকে কোলাহল,ঢাকের আওয়াজ,
মনকে শান্ত করতে পারেনা!
ফিরে যাই বারবার সেই অতীতে,
যেখানে তুমি ছিলে আমার পাশে।

  # নন্দা 

Monday, October 15, 2018

তুমি নেই


মাধবীর লড়ায়
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     মাধবীর যখন অনিন্দ্যর সাথে বিয়ের কথা হচ্ছিলো তখন অনেকেই মাধবীর ভাগ্যকে হিংসার চোখে দেখেছিলো।পাড়াপ্রতিবেশী মুখে কেউ কিছু না বললেও যাদের ঘরে বিবাহযোগ্যা মেয়ে আছে তাদের অনেকেই ঘটনাটিকে ভালো চোখে মেনে নেননি।
     দুর্গাপদ সাহার মেয়ের বিয়েতে শহরের এক আত্মীয়ের আগমন ঘটেছিলো।সেখানেই মাধবীকে দেখে ওই আত্মীয়ের পছন্দ হয়।তিনি তার একমাত্র ডক্টর ছেলের জন্য একটি ঘরোয়া মেয়ে খুঁজছিলেন।বাপ আর ছেলের সংসারে প্রয়োজন ছিলো একটি লক্ষীমন্ত মেয়ের।মাধবীকে দেখে নীলকান্তবাবুর খুব পছন্দ হয়।মাধবীর বাবা-মাকে সে কথা জানাতে তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন।তারা যে স্বপ্নেও কল্পনা করেননি এমন একটি ছেলের সাথে তাদের মেয়ের বিয়ে হতে পারে।গ্রামের স্কুল থেকে মাধবী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে।সে কথা নীলকান্তবাবুকে জানাতে তিনি বলেন,"আমার ঘরের লক্ষ্মী তো চাকরী করতে যাবেনা।ওই টুকুতেই আমার চলবে।"
         শুভ দিন দেখে মাধবী ও অনিন্দ্যর বিয়ে হয়ে গেলো।কিন্তু মাধবীর ভাগ্যকে লোকে হিংসা করলেও বিধাতা পুরুষ তার কপালে লিখেছিলেন অন্যকিছু।খুব ধুমধাম করে বৌভাত মিটে গেলো।শুধু অনিন্দ্যর ঘরটিকেই নয় পুরো বাড়িটাই নীলকান্তবাবু সাজিয়েছিলেন টাটকা ফুল দিয়ে।কোন কাগজের বা প্লাস্টিকের ফুল নয়। তাজা ফুলের গন্ধে বাড়িটা ম ম করছিলো।ফুলশয্যার ঘরে আনুসঙ্গিক কাজ মিটিয়ে আত্মীয়স্বজনেরা যে যার ঘরে চলে যান।অনিন্দ্যও দরজা বন্ধ করে খাটে এসে বসে।নানান কথাবার্তার মাঝে সে মাধবীকে বোঝাতে চাইলো বাবা ই তার জীবনের সব।বাবাকে সে ঈশ্বর জ্ঞানে ভক্তি করে।মাধবীর ব্যবহারে তিনি যেন কোনদিন কখনোই কোন কষ্ট না পান।মাধবীও ফুলশয্যার রাতে তার স্বামীকে কথা দেয় তার জীবন থাকতে সে কোনদিন তার শ্বশুরমশাইকে কষ্ট দেবেনা।
                        (2)
     ঘটনার দশ বছর পর আবারও সে রোগশয্যায় শায়িত শ্বশুরমশাই এর হাতদুটো ধরে কথা দেয় সে তার জীবনটাকে নূতনভাবে শুরু করবে।ফুলশয্যার রাতেই নিওরো সার্জন অনিন্দ্য হাসপাতালের ইমার্জেন্সি কলে সদ্য বিবাহিতাকে ছেড়ে ছুটে যেতে বাধ্য হয়েছিলো সরকারী দায়িত্ব পালনের জন্য।কিন্তু রোগীকে সে বাঁচাতে পারলেও নিজেকে সে বাঁচাতে পারেনি।নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছিলো।হাসপাতালে সেদিন তার আন্ডারে থাকা রোগীর জরুরী অপারেশান করতে হয়েছিলো।সারাদিনে বাড়িতে অথিতি সমাগমের ধকল,হাসপাতালের রোগীকে নিয়ে টেনশান, অপারেশান -সব মিলিয়ে সে ছিলো প্রচন্ড টায়ার্ড।সেই অবস্থায় ড্রাইভিং সিটে বসে একটা পাঞ্জাব লরির সাথে প্রচন্ড ধাক্কায় পূরো শরীরটা তার পিষে যায়।আর পরিণতি ঘটনাস্থলেই মৃত্যু।
                      (3)
আত্মীয়স্বজনেরা মাধবীকে অপয়া আখ্যা দিলেও নীলকান্তবাবু কিন্তু তাকে বুকের ভিতর চেপে রেখে শান্তনা দিয়ে গেছেন।মাধবীর জন্য তিনি তার ছেলেকে হারিয়েছেন এ কথা তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করেন না।তিনি তার ভবিতব্যকে মেনে নিয়েছেন।তিনি মেনে নিয়েছেন তার অনিন্দ্যর ওই পর্যন্ত আয়ু ছিলো।মাধবীকে ভালো রাখতে তিনি আস্তে আস্তে আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ পর্যন্ত করেন।কারন সকলেই মাধবীকে কুনজরে দেখে;অলক্ষ্মী,অপয়া বলে।মাধবী নীলকান্তবাবুর পরিবারে ছেলের বৌ নয় আদরের কন্যা।মাধবীর বাবা মা তাকে জানিয়েই দিয়েছিলেন ওই অ  লক্ষ্মী মেয়েকে গ্রামে তারা আর ফিরিয়ে নেবেননা।
      নীলকান্তবাবু মাধবীকে পূণরায় পড়াশুনা শুরু করান।বছর পাঁচেকের মধ্যে মাধবী কলেজে ইংরাজীর প্রফেসার পদে নিযুক্ত হয়।তিনি মেয়েকে বারবার বিয়ের কথা বললেও মাধবীর সেই এক কথা,
---তোমায় ছেড়ে আমি কোথাও যাবোনা।
---কিন্তু মা আমি যখন থাকবোনা তখন তোকে দেখবে কে ?
---তখনকার কথা নাহয় তখন ভাববো বাবা।এখন এসব ভেবে তুমি তোমার শরীর খারাপ কোরনা।আমার ভাগ্যকে পরাজিত করে তুমি আমায় বাঁচার রাস্তা দেখিয়েছ।তুমি আমার কাছে ঈশ্বর।সেই ঈশ্বরকে ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারবোনা।
                       (5)
      মাধবী তার ঈশ্বরকে ছেড়ে না গেলেও মাধবীর ঈশ্বর মাধবীকে ছেড়ে চিরদিনের মত পরপারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তাকে সম্পূর্ণ একা করে দিয়ে।মাধবীর তখন পঁয়ত্রিশ বছর বয়স।আজ পর্যন্ত সে কোন ছেলের সন্ধান সে পায়নি যাকে সে ভালবাসতে পারে।একটা রাতের জন্য হলেও স্বামীকে সে কোনদিনও ভুলতে পারেনি।ফুল শয্যার রাতে তার মনে হয়েছিলো বহু জনমের তপস্যার পূণ্যফলে সে অনিন্দ্যর মত স্বামী পেয়েছে।কিন্তু নিয়তি বুঝি তার এই ভাবনা বুঝতে পেরে অলক্ষ্যে হেসেছিলেন।মাত্র কয়েকটা ঘন্টা অনিন্দ্যর সাথে কাটিয়ে সে তার সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলো।কিন্তু তার কপালে ভালোবাসা সইলোনা।অনিন্দ্যকে দেওয়া কথা সে পালন করতে পেরেছে কিন্তু তার শ্বশুরকে দেওয়া কথা সে এই বয়সে এসে রাখবে কেমন করে?চাকরী আর শ্বশুরের মস্তবড় বাড়ি এই হোল আজ মাধবীর জীবন।

    # নন্দা

Friday, October 5, 2018

সবই ভুল
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

অধিক রাতের স্বপ্নগুলো বড্ড বেদনাময়,
ঘুমের মাঝেও বারবার আর্তনাদ করে উঠি,
কল্পনায় তুমি এসে সামনে দাঁড়াও!
একবুক জ্বালা নিয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি,
বুকের পাঁজরে তখন কুঠারাঘাত হয়!
বাস্তবের সাথে যার কোন মিল নেই।
দম বন্ধ হয়ে আসে,
চিৎকার করে বলতে চাই-
'এই তো তুমি আছো
তুমি তো হারিয়ে যাওনি।'
মুখ থেকে আওয়াজ বের হয়না,
গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।
হাত-পা অসার হয়ে পরে।

ঘুম ভেঙ্গে বাস্তবে ফিরে আসি;
যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকি।
তোমার ভালোবাসার স্বপ্নগুলো-
পূণরায় বাক্সবন্ধি করে একসময় ঘুমিয়ে পড়ি।

    # নন্দা 

Thursday, October 4, 2018

খোকার পুজো
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ঢ্যাংকুড়কুড় বাদ্য বাজে,
ঢাকের মিষ্টি বোল-
বাজছে কাঁসর বাজছে শাঁখ,
বাজছে ঢুলির ঢোল।
আনন্দে সবাই নাচছে পুজোয়,
সাজছে নানান সাজে,
ব্যস্ত সবাই প্যান্ডেলেতে,
পুজোর নানান কাজে।
ঢুলি এসেছে গ্রাম থেকে,
সাথে ছোট্ট ছেলে ,
ছেঁড়া জামা গায়ে দিয়ে-
পুজো দেখবে বলে।
নিত্য নূতন পড়ছে জামা,
ছোট বড় সবাই,
নিজের দিকে তাকিয়ে ভাবে,
আমরা পয়সা কামাই!
মায়ের সামনে দু'হাত জোড়ে,
দাঁড়িয়ে ঢুলির ছেলে,
মনেমনে ভাবে শুধু,
তার দুখিনী মায়ের যদি,
একটি কাপড় মেলে।
কত কাপড় মায়ের পায়ে,
দিচ্ছে জমা সবাই!
চোখের জলে ভাবে ছেলে,
মায়ের একটি কাপড় চাই।
'থাকনা আমার ছেঁড়া জামা,
কিবা এসে যায়?
মাকে যেন একটি কাপড়,
মা দুর্গা দেয়।'

# নন্দা

Tuesday, October 2, 2018

দাম্পত্য
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
😁😁😁😁😁😁😁😁😁
ভালোবাসি ভীষন ভাবে,
তুমিও নও কম;
একটু দূরে সরলেই-
মন করে আনচান।
তুমি ছাড়া সবই তুচ্ছ,
ভালোবাসায় পুরে হই ভস্ম,
পানের থেকে খসলে চুন-
রেগে দুজনেই আগুন।

রাত যত গভীর হয়,
রাগ তত পড়তে থাকে,
পাশ ফিরে দু'জনেই-
কে কাকে আগে ডাকে। 😁

Saturday, September 29, 2018

হায় রে মানুষ
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

বিশ্বাস নেই,ভালোবাসা নেই,
ঘোড়দৌড় আছে রোজ!
মানবতা বিবেক হারিয়ে যাচ্ছে,
হৃদয় ক্ষয়ে হচ্ছে ন্যুজ।
স্বার্থ বিনা চলেনা কেউই,
আখের গুছাতে সব ব্যস্ত!
ছাড় দেয়না কেউ কাউকেই,
দোষারোপ অপরের উপর ন্যস্ত।
মানুষ নামের উপাধিধারী,
বন্য প্রাণীরও অধম-
লাভ আর অর্থ ছাড়া,
চলেনা এক কদম।

@ নন্দা    29-9-18

Friday, September 28, 2018

মায়ের ভালোবাসা
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     বিধান চৌধুরী যখন মারা যান তখন ছেলের উচ্চমাধ্যমিক চলছে।স্বভাবতই পড়াশুনার ক্ষতি হয়।দীর্ঘ দুবছর রোগভোগের পরে তার মৃত্যু সংসারে বিনামেঘে বজ্রপাতের মত হয়ে দাঁড়ায় । চিকিৎসা চলছিল কিন্তু কেউই ভাবেনি এরূপ একটি ঘটনা ঘটবে !সরকারী চাকরির সুবাদে ফ্যামিলি পেনশনের কারনে খাওয়া পরায় মা, ছেলের কোনই অসুবিধা হয়না।মেয়েটির বিয়ে তিনি অসুস্থ্য অবস্থায়ই দিয়ে গেছিলেন।ছেলের রেজাল্ট খুব একটা ভালো না হওয়ায় ছন্দাদেবী বেশ মনঃকষ্ট পেলেন কিন্তু ছেলেকে কিছুই বুঝতে দিলেননা ।
        কিন্তু সুখের বিষয় তার ছেলে রাহুল সরকারী সুযোগেই হোটেল ম্যানেজমেন্টে  পড়ার সুযোগ পেলো।ছেলেকে ছেড়ে থাকতে পারবেননা বলে তিনি নিজের বিশাল বাড়িঘর ছেড়ে ইনস্টিটিউশনের কাছেই দুকামরা ঘর নিয়ে থাকতে শুরু করেন।দেখতে দেখতে তিনটি বছর কেটে গেলো।ক্যাম্পাস থেকেই ছেলে চাকরি পেলো কিন্তু পোষ্টিং বাইরে।ছেলে বেঁকে বসলো মাকে ছাড়া সে কিছুতেই যাবেনা।বিপদে পড়লেন ছন্দাদেবী।স্বামীর ভিটে বিক্রি করতে তার যেমন মত নেই ছেলেও চায়না বাবার সাথে তার ছেলেবেলার স্মৃতি জড়িত এই বাড়ি বিক্রি হোক।অনেক বুঝিয়েও তিনি ছেলেকে রাজি করাতে পারলেননা।ছেলে মাকে বললো,"আমায় ছেড়ে কষ্ট করে হলেও আমার ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে তুমি থাকতে পারলেও আমি পারবোনা তোমায় ছেড়ে থাকতে , আমায় তুমি আর বোলোনা মা।আমার মা একাএকা থাকবে আমি তার কাছে থাকবোনা এটা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনা।রোজ সকালে উঠে তোমার মুখটা দেখতে পাবোনা এটা ভাবলে আমার বুকের ভিতরটা ফাঁকা হয়ে যায় মা।আগেও এটা ছিলো কিন্তু বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে এটা বেশি করে মনেহয়।আমার মন বলে বাবা যেন প্রতিটা মুহূর্তেই আমায় বলেন 'তুই কিন্তু তোর মাকে ছেড়ে কোথাও যাসনা।"ছন্দাদেবী কাঁদতে কাঁদতে দুহাতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন।ছেলেও কাঁদে, মাও কাঁদে!একসময় ঠিক হয় পূণরায় সেই বাড়িভাড়া করেই মা ও ছেলে চাকরির স্থলে থাকবেন।
 
        দুমাস হোল তারা বাড়ির বাইরে।রাহুল প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে মায়ের পায়ের উপর শুয়ে থাকে আর মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।আসলে কি জানো মা,"তোমার হাতের খাবার শুধু নয় তোমার এই আদর, এখনও তোমার হাতের কানমলা এগুলো না পেলে আমার ঠিক ভালো লাগেনা।তাই তো তোমায় ছেড়ে থাকতে পারিনা।"ছন্দাদেবী বলেন, "মা কি কারও সারাজীবন বেঁচে থাকে রে! " রাহুল দুই হাতে ছেলেবেলার মত মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,"আমার মা আমি যতদিন বাঁচবো ঠিক ততদিনই বাঁচবেন।"স্বামীর ছবির দিকে তাকিয়ে দু'চোখ বেয়ে ছন্দাদেবীর জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। ছেলে দেখতে পেয়ে বলে,"মা, আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু তোমার চোখের জল কিছুতেই মানতে পারিনা।বাবার মৃত্যুর পর আমি তোমার সামনে কোনদিনও কাঁদিনি শুধুমাত্র তুমি আমার চোখের জল সইতে পারবেনা বলে।তাই বলে কি বাবার জন্য আমার কষ্ট হয়নি?বুকের ভিতরটা ফাঁকা হয়ে গেছে, সারাটা রাত চোখের জলে বালিশ ভিজেছে কিন্তু তোমাকে ও দিদিকে বুঝতে দিইনি।শুধু তোমরা যাতে শক্ত থাকো।মাগো,তোমার ছেলে সেই আগের মত আর ছোট্টটি নেই সে এখন অনেক বড় হয়ে গেছে ,বলতে পারো বাবা চলে যাবার পর আমার বোধশক্তিটাকে তাড়াতাড়ি বাড়িয়ে দিয়েছেন।" মা স্তব্ধ তার বাইশ বছরের ছেলের কথা শুনে।সেদিনই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন আর কখনোই ছেলের সম্মুখে তিনি স্বামীর জন্য চোখের জল ফেলবেন না।

# নন্দা

Wednesday, September 19, 2018

গন্তব্যহীন ছোটা
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

যন্ত্রের সাথে তাল মিলিয়ে,
অতিবাহিত যান্ত্রিক জীবন!
ইচ্ছাগুলোকে অজান্তেই-
গলা টিপে মেরে ফেলা।
আত্মীয়-স্বজনের কাছে-
অহংকারী তকমা পাওয়া।
যন্ত্র কেড়ে নিয়েছে-
বিবেক আর মনুষ্যত্ববোধ।
জীবনের একটাই লক্ষ্য-
শুধু ছোটা যার গন্তব্য জানা নেই।

Sunday, September 16, 2018

কিবা পেলাম
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

সুন্দর দিন কেটেছে,দেখে স্বপ্ন,
স্বপ্নের জাল বুনেছি,হয়ে মগ্ন।
নূতন সূর্য্যের আগমনে, হয়েছিলো প্রভাত,
স্বপ্নে হয়ে বিভোর,রেখেছিলাম হাতে হাত। 
হৃদয়ে হৃদয় জুড়ে,ফেলেছিলো সাড়া,
সবকিছু কেড়ে নিলো,ফূসেছিলো যারা।

স্বর্ণালী দিন গেলো ভেসে,বুঝলাম যখন,
চলে গেছো অনেক দূরে,তুমি তখন।

#  নন্দা    ১৫-৯-১৮

Wednesday, September 12, 2018

বুঝিনি
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

তুমি আমায় ডেকেছিলে,
তোমার অবসরে-
ছিলোনা সময় তখন আমার,
ছিলাম খেলার ঘোরে।
এখন আছে হাতে আমার,
অফুরান সময়;
ডাকো আবার সেই সুরে,
যতই থাকো দূরে।
ছুটে যাবো তোমার কাছে,
কথা দিলাম আজ;
অবুঝ ছিলাম সেদিন আমি,
হয়তো ছিলো লাজ।

# নন্দা 12-9-18

Tuesday, September 4, 2018

জীবনের পরাজয়
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

কেন আসো বারবার আমার দরজায়?
অসহায় আমি,পারবোনা খুলতে!
জানি আমি রোজ রাতে দরজার বাইরে তুমি থাকো,
তোমার নিঃশ্বাষের আওয়াজ আমি পাই,
কিন্তু দরজার ভিতরে তখন অন্য পুরুষ।
এদের টাকা আছে,এরা চায় আমার শরীর,
আর তুমি চাও আমার ভালোবাসা,
এই অপবিত্র শরীরে মন বলে কিছু থাকে?
আমার যে টাকা চাই,সংসারটাকে বাঁচিয়ে রাখতে।
তোমার সে ক্ষমতা নেই।
হয়তো আমায় খাইয়ে-পড়িয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে,
কিন্তু আমার পরিবারের বাকি সদস্যদের?
না,সে ক্ষমতা তোমার নেই!
তোমার কাছে আছে আমার জন্য বুকভরা ভালোবাসা,
যা আমার পরিবারের অন্যদের বাঁচাতে পারবেনা।
সমাজের চোখে আমরা বেশ্যা-
আর যারা আমাদের কাছে আসে,
যারা আমাদের বেশ্যা বানায়-
তারা সমাজের নামী-দামী ভদ্রলোক!
অনেক নারী এভাবেই তার পরিবারকে রক্ষা করে চলে।
সংসার বাঁচাতে এ দেহব্যবসা চলতেই থাকবে,
তুমি ফিরে যাও তোমার আলয়ে,
আমায় স্বপ্ন দেখিয়ে আমার পরিবারকে মেরে ফেলনা।
পরিবার বাঁচাতে তোমার ভালোবাসা আমার কাছে অর্থহীন।

Friday, August 31, 2018

একটি মালা
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

কতদিন পরে দেখলাম তোমায়,
ঠিক সেই আগের মতই আছো,
হাসিটা আছে আজও অমলিন।
কাছে থাকতে কোনদিনই বুঝিনি-
কতটা ভালবেসেছি তোমায়,
দূরে সরে গিয়ে বুঝতে শেখালে।
কতবার বলতে চেয়েছো মনের কথা,
আমি হেসেই উড়িয়ে দিয়েছি প্রতিবার।
তোমার অনুপস্থিতিই আমায় বুঝিয়েছিলো,
তুমি আমার কে? 
লতা দিয়ে শিউলির মালা গেঁথে-
শরতের সকালে আমায় পরিয়ে
 দিয়েছিলে,
খুব রেগে মালাটা ছিড়ে ফেলেছিলাম,
একটুও রাগ না করে বলেছিলে,
"একদিন আমার হাতে মালা পরার জন্য
তুই ব্যাকুল হবি!"
তারপরই হঠাৎ নিরুদ্দেশ-

আজ চাইছি তোমার হাতে পরতে ফুলমালা,
দেবে কি? ওই হাতে আমায় পরিয়ে-
একটি রজনীগন্ধার মালা।

# নন্দা

Tuesday, August 28, 2018

ভুগতে হবে
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

কত কতদিন চলে গেলো,
ফিরে তো এলেনা আর,
তোমার ব্যথায় কাঁদে হৃদয়,
জীবনে আসে না ভোর।

তোমাকে ছাড়ায় এগিয়ে চলেছি,
সাথে আছে সন্তানেরা,
মনের মাঝে শুধুই হাহাকার,
অভাগা সব আমরা।

এ প্রতীক্ষা হবেনা শেষ-
সময়ের সাথে জীবনও এগোবে,
স্মৃতিরা সব জমাট বাঁধা,
সারাজীবন আমাদের ভোগাবে। 

Sunday, August 26, 2018


      সঙ্গী
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

         বাস থেকে নামার সাথে সাথেই লোডশেডিং হয়ে গেলো।গলির ভিতর থেকে অনেকটাই হেঁটে তবে সুচরিতাকে বাড়ি পৌঁছাতে হয়।বাড়ি বলতে যা বোঝায় ঠিক তা নয়।একটা বাড়িতে সে পেয়িংগেষ্ট থাকে।তবু আস্তানা যখন ওটাই ওটাকেই বাড়ি তো বলতেই হবে।
        দ্রুত একমনে হাঁটতে থাকে।শীতকালের রাত।রাত ন'টাতেই রাস্তা শুনশান।পিছনে কেউ একজন আসছে বুঝতে পারে।কিছুটা হলেও ভয় পেয়ে যায় সুচরিতা।আরও দ্রুত পা চালায়।বাড়ির সামনে এসে পিছন ফিরে দেখে ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে।সরাসরি প্রশ্ন ছোড়ে,
---কি চায় আপনার?
---আমার?আপনার কাছে কিছুই চাইনা। 
---মানে?
---মানে আর কিছুনা;এটা আমার বাড়ি। তা আপনি এই বাড়িতে কি জন্য?
     সুচরিতা আমতা আমতা করে বলে,
---না মানে আমি এই বাড়িতে .....
       কথা শেষ হয়না।বারান্দার লাইট জ্বলে ওঠে।অঙ্কুরের মা হাসি মুখে ছেলেকে বলেন,
---তোর এতো দেরি হোল বাবা?ট্রেন কি লেট ছিলো? 
     সুচরিতা এবার পিছনে চলে যায় অঙ্কুর গিয়ে মাকে প্রনাম করে।সুচরিতা পাশ কেটে তার ঘরের তালা খুলতে ব্যস্ত।একই বারান্দা দিয়ে তার রুমে ঢুকতে হয়।তিনি বলেন,
---তুই রাগ করবি বলে তুতুন তোকে জানাইনি।এ সুচরিতা,তুই বাইরে বাইরে থাকিস।ওকে আমি পেয়িংগেষ্ট রেখেছি।একটু কথা তো বলতে পারি।ও ভালো চাকরী করে রে! খুব ভালো মেয়ে।যতক্ষণ ঘরে থাকে আমার কাছেই থাকে।হাতে হাতে কত কাজ করে দেয় আমায়,একদম মেয়ের মত।
---তা উনি কি পুলিশে চাকরী করেন?
    মা একগাল হেসে দেন আর সুচরিতা লজ্জায় মুখ নিচু করে থাকে।
---না না ও পুলিশে চাকরী করেনা।ও একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরী করে।ভালো রান্নাও করে।কোথায় আমি ওকে রেঁধে খেতে দেবো উল্টে ও আমার সব কাজ সেরে রান্না করে আমার খাবার গুছিয়ে রেখে তবে অফিসে বেরোয়।মনেহয় ও আমার মা।
     মায়ের কথা শেষ হতে না হতেই অঙ্কুর বলে,
---মা, আমি কয়েকদিন থাকবো।আজই বাইরে দাঁড় করিয়েই সব বলে ফেলবে?
        সকালে মা এসে বিছানার ভিতরেই কফি দিয়ে যান।সেটা খেয়েই অঙ্কুর আবার শুয়ে পড়ে।ন'টা নাগাদ উঠে মুখ হাত ধুয়ে পেপারটা হাতে করে রান্নাঘরে উঁকি মেরে মাকে বলে,
---মা,সকালবেলার মত সুন্দর করে এককাপ কফি দাও তো।
      অন্নদাদেবী কফি এনে ছেলের সামনে রেখে বললেন,
---তুতুন সকালের কফিটা সুচরিতা করেছিলো।এখন তো ও বেরিয়ে গেছে তাই আমার হাতের করা কফিটুকুই খা।
---তুমি পেয়িংগেষ্ট রেখেছো নাকি কাজের লোক রেখেছো মা।
---ছি!এ কি কথা?এভাবে বলতে হয়?আমি কি ওকে এসব করতে বলেছি।আমারই তো দু'বেলা ওকে রান্না করে খাবার দেওয়ার কথা।কিন্তু ও কিছুতেই শোনেনা।নিজে যতটুকু সময় পায় আমারই কাজ করে।আমার দরকার ছিলো একজন সঙ্গীর;যার সাথে আমি একটু কথা বলে সময় কাটাতে পারি।তোর বাবার বন্ধু রবিনকাকুকে বলেছিলাম সেই কথা।উনি এসে অনুরোধ করলেন মেয়েটিকে ঘর ভাড়া দেওয়ার জন্য।আমি না বলে দেবো ভেবেছিলাম।কিন্তু খুব করে বললেন উনি।গ্রামে বাড়ি।সকাল পাঁচটায় উঠে ট্রেন ধরে আর বাড়িতে পৌঁছাতে রাত দশটা হয়ে যায় কোন কোন দিন।দিনকাল ভালোনা।তাই একটা ভালো ঘর খুঁজছিলো শুধু থাকার জন্য।প্রথম প্রথম ও হোটেল থেকেই খাবার নিয়ে ঢুকতো।আর দুপুরে অফিস ক্যান্টিনে খেতো।কিন্তু এতো মিষ্টি স্বভাব মেয়েটার ভালো না বেসে পারা যায়না।তখনও ও আমার কাছে এসে টুকটাক কাজ করতো।আমি না বললেও শুনতোনা।তখন আমিই বললাম আমার কাছেই খাওয়ার জন্য।তুই কি ভাবছিস আমি এই খাবারের জন্য ওর কাছ থেকে কোন টাকা নেবো।কেন আমার ছেলে কি কম রোজগার করে নাকি?আমার তো শুধু একজন সঙ্গীর দরকার ছিলো।তুই বিয়ে করলে আমি কি ঘর ভাড়া দিয়ে সঙ্গী খুঁজতাম?
---আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।পুরো রামায়ন শুনিয়ে গেলে।তা রবিনকাকু কি বললো?মেয়েটি ভালো তো?আজকাল কাউকেই বিশ্বাস করা যায়না।যা দিনকাল পড়েছে!
---হ্যাঁ সে সব আমি শুনে নিয়েছি।উনাদের গায়েরই মেয়ে।শুধু মা আছেন।মেয়েটি পড়াশুনায় খুব ভালো ছিলো।তাই চাকরী পেতে খুব অসুবিধা হয়নি।একটু গুছিয়ে নিয়ে মাকেও নিয়ে আসবে বলেছে।আর আমি নিজেও তো দেখছি সত্যিই মেয়েটি খুব ভালো।
---হ্যাঁ -ওই মেয়ে মেয়ে করে নিজের ছেলেটাকে ফেলে দিওনা।
     অন্নদা দেবী ছেলের কানটা ধরে বললেন,"তাই বল তোর হিংসা হচ্ছে!"

    সেদিন সন্ধ্যা-
      অফিস থেকে ফিরে আসলে অঙ্কুরই গেট খুলে দিয়ে একটু পাশে সরে দাঁড়ায়।এর আগে বার কয়েক মা বলে গেছেন,"কিরে তুই তো বাড়িতে এসে সন্ধ্যা হলেই বেরিয়ে পড়িস।আজ বেরোবি না?"
       কিন্তু মায়ের তুতুন কোন উত্তর করেনি।হয়তো সে নিজেও জানেনা কেন আজ সে বেরোল না।বাস্তব এটাই কিছুতেই আজ তার মন সায় দিলোনা,ভিতর থেকে কোন তাগিদ সে অনুভব করলোনা বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারার।সুচরিতা চুপচাপ ঘরে ঢুকে গেলো। অঙ্কুরও এসে নিজের ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়লো।সুচরিতা ফ্রেস হয়ে মাসিমার কাছে এসে বসে জানতে চায়,
---চা খেয়েছেন?
---কোথায় আর খেলাম!তোর দেরি হচ্ছে এই নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ---তুই বরং তিনকাপ কফি কর।
---কিন্তু তুমি তো এখন চা খাও।আমি তুমি চা ই খাবো।
---এতো পরিশ্রম তোকে করতে হবেনা।
---এমন কি পরিশ্রম?দু'কাপ চা আর এককাপ কফি করতে।তুমি এখানেই বসো আমি করে দিচ্ছি।আর হ্যাঁ আজ রাতে রুটির তরকারি কি হবে?নলিনী রুটি করে দিয়ে গেছে?
---রাতে ভাবছি ঢোকার ডালনা করবো।তুতুন রুটি দিয়ে ভালো খায়।আমিই করবো,তোকে আজ করতে হবেনা।সারাদিন পরিশ্রম করে সবে তো আসলি।আর হ্যাঁ নলিনী রুটি করে দিয়ে গেছে।
      দু'কাপ চা আর এককাপ কফি করে সুচরিতা।কফি নিয়ে মা ছেলেকে দিয়ে আসেন।সুচরিতা ঢোকার ডালনার আলু কুটতে কুটতে বলে, "তুমি আমায় দেখিয়ে দাও আমি করছি।সে কোন নিষেধই শোনেনা।"অন্নদাদেবী কৃতিম রাগ দেখিয়ে বলেন,
---তুই একটা কথা আমার শুনিসনা।তোর মায়ের সাথে আমার দেখা হোক;দু'জনে মিলে তোকে শাষন করবো।
---মাসিমা একটা কথা বলার ছিলো।
---হ্যাঁ বলনা কি বলবি !
     কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সুচরিতা বলে,
---কাল তো শনিবার, আমি অফিসের পথেই বাড়ি চলে যাবো।সোমবার ছুটি নিয়েছি।ভালো একটা ঘর ভাড়া পেয়েছি।এবার মাকে নিয়েই ফিরবো।
    অন্নদাদেবী আকাশ থেকে পড়েন।এই তো একমাসও হয়নি।এর মধ্যেই চলে যাবি?অবশ্য কিছু বলারও নেই।তোর মা ও তো একা রয়েছেন।
---আসলে সবাইকেই বলছিলাম তাই খোঁজটা একটু তাড়াতাড়ি পেলাম।তোমার এখানে আলাদা একটা রান্নাঘর থাকলে তো যেতামই না।
---তুতুনকে বলি ওদিকে একটা রান্নাঘর করে দিতে।
---সেটা তো অনেক দেরি হয়ে যাবে।এতদিন মা একাএকা থাকবেন?তুমি রান্নাঘর শুরু করো আমি আবার চলে আসবো।
---কি বলবো বলতো?মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো।
    রাতের খাবারটা আজ সুচরিতা ঘরে নিয়ে যায়।এক'টাদিন সে মাসিমার সাথে গল্প করতে করতে খেয়েছে।অন্নদাদেবী বুঝতে পারলেন সুচরিতা তুতুননের সামনে বসে খেতে চায়না।মার মুখটা গম্ভীর দেখে অঙ্কুর জানতে চায়,
---তোমার কি হয়েছে মা?
---মেয়েটা খাবারটা নিয়ে ঘরে চলে গেলো।আগামীকাল বাড়ি যাবে।একটা ভালো বাড়ি পেয়েছে,মাকে নিয়ে সোমবার ফিরবে।
     বিদুৎ এর সক খেলে যেমন হয় অঙ্কুরের বুকের ভিতরটা ঠিক তেমন করে উঠলো।কিন্তু কতটুকু জানে বা চেনে সে সুচরিতাকে যার চলে যাওয়ার খবরে সে এতটা আঘাত পেলো।'তবে কি আমি সুচরিতাকে ......।কিন্তু প্রেম কি জীবনে এভাবে হঠাৎ করেই আসে? '

   পরদিন সকাল-
     খুব ভোরে অঙ্কুর নিজেই  এককাপ কফি করে খেয়ে বেরিয়ে যায়।খুব তাড়াতাড়ি করে বাইরের কাজগুলো সেরে সুচরিতার অফিস বেরোনোর আগেই ফিরে আসার ইচ্ছা থাকলেও দশটার আগে কিছুতেই সে ফিরতে পারেনা।সুচরিতা অফিস বেরোয় সাড়ে ন'টায়।মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়।এই আঠাশ বছর জীবনে কোনদিন যা হয়নি আজ কেন সেটা হচ্ছে অঙ্কুরের বুঝতে আর বাকি নেই।সে যে সুচরিতার প্রেমে পড়েছে এটা তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।কিন্তু সে তো সুচরিতা সম্পর্কে কিছুই জানেনা।যে টুকু সে তার মায়ের কাছে শুনেছে।এ দুদিন কোন কথাও হয়নি।সুচরিতার কথা মনে পড়লেই বুকের ভিতর কেমন যেন করছে।এ অনুভূতি ব্যক্ত করার ক্ষমতা তার নেই।সবসময় তার কথা ভাবতে ভালো লাগছে।বন্ধুরা কেউ কেউ রাস্তায় দেখে কত টিটকারি করলো এবার এসে রাস্তায় বেরোয়নি কেন মাসিমার পেয়িংগেস্টের কারনে কিনা জানতে চেয়ে হাসাহাসি করলো।কিন্তু তার যেন কোন কিছুই ভালো লাগছিলোনা।কতক্ষণে সে বাড়িতে ফিরবে!কিন্তু তাড়াহুড়ো করে এসেও সে সুচরিতার দেখা পেলোনা।অনেকক্ষণ আগেই সে বেরিয়ে গেছে।সে যে অফিস থেকে আজ বাড়ি ফিরবেনা এটা সে মায়ের কাছেই জেনেছে।আপাতত যে কাজটা তার করতে হবে তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো।মাকে ডেকে বললো,
---মা, চলো একটু ফাঁকা জমিটা গিয়ে দেখি।তুমি মোটামুটি আমায় একটা আইডিয়া দাও কোথায় কি করতে হবে।
---কি ব্যপারে?ঘরের কথা বলছিস?এবারই শুরু করবি?
---হ্যাঁ,তুমি যখন করতে বললে আর আমি বেশ কিছুদিন ছুটি নিয়ে এসেছি এবারই শুরু করি।একটু পরেই মিস্ত্রী আসবে সন্ধ্যার আগেই ইঁট,বালি, সিমেন্ট চলে আসবে।
---ওরে বাবা! তোর তো দেখছি প্রচন্ড তাড়া।
---তাড়া আর কিসের?তুমি বললে কথাটা;বাড়িতে আছি তাই শুরু করে দিলাম।
   কিন্তু অঙ্কুর মনেমনে বললো, 'তাড়া তো আছেই মা।পারলে আমি আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের ন্যায় আজই ঘরটা তুলে দিতাম।'আনুসঙ্গিক সব কাজ মিটিয়ে পরেরদিন থেকেই শুরু হোল সুচরিতার থাকা ঘর লাগোয়া একটি রান্নাঘর।
     দু'দিন মায়ের সাথে গ্রামে কাটিয়ে সোমবার মাকে নিয়ে দুপুরের দিকে সুচরিতা অঙ্কুরদের বাড়িতে আসে।গেট বারান্দার গ্রিল খোলায় ছিলো।সারা বাড়ি বালি আর বালি।বারান্দায় সিমেন্টের বস্তা জড়ো করা।বাড়িতে ঢুকেই সে মাকে নিয়ে সোজা মাসিমার ঘরে ঢোকে।বেলা তখন তিনটে হবে।টেবিলে মা ও ছেলে খাচ্ছে।সুচরিতা ঢুকেই বললো,
---এতো বেলায় খেতে বসেছেন মাসিমা?
 ---ওমা চলে এসেছিস?
---হ্যাঁ মাসিমা।সন্ধ্যার আগেই বেরিয়ে যাবো যা সামান্য জিনিসপত্র আছে টা নিয়ে।
---কিন্তু তোর তো যাওয়া হবেনা মা।তুতুনকে বলেছিলাম একটা রান্নাঘর থাকলে তুই আর দিদি এখানেই থাকতে পারতিস।ও ভালো কথা দিদি কোথায়?
---মা ড্রয়িংরুমে বসে আছেন।
    অন্নদাদেবী তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে হাত মুখ ধুয়ে বসবার ঘরে এলেন।অঙ্কুরের মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে হাত জোর করে নমস্কার করে বললেন,
---আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে।
---আমারও আপনাকে খুব চেনা লাগছে, কেন বলুন তো?
---আপনার নাম টা যদি জানতে পারতাম।
---আমার নাম অন্নদা বসু।
        সোফা ছেলে লাফিয়ে উঠলেন সুচরিতার মা।
---অনু? আমি ঠিকই ধরেছিলাম সই!
---তুই আমার সেই রাধা?দেখ কি কান্ড!
কত যুগ পরে দু'জনের দেখা।বয়সের ভারে ছেলেবেলার সব স্মৃতি ভুলে গেলেও তোর কথা এখনও মাঝে মাঝেই মনে পড়ে।এখনও মাঝে মধ্যে তোকে স্বপ্ন দেখি।
---এইভাবে যে আবার কোনদিন দেখা হবে স্বপ্নেও ভাবিনি।
   দুই সখি পুরনো দিনের গল্পে মেতে উঠলেন।সুচরিতা 'থ'।সে দুই বন্ধুর মিলনের দৃশ্য দেখছে আর ভাবছে বাইরেই বুঝি মানুষের বয়স বারে ভিতরে তারা সেই কিশোর কিশোরীই থাকে।অন্নদাদেবী সুচরিতাকে বললেন,
---ওরে ও সুচরিতা যা না মা ফ্রিজ থেকে মাকে একটু মিষ্টি আর জল এনে দে।অনুরাধাদেবীর দিকে মুখ করে বললেন,"মেয়েটা বড্ড লক্ষ্মী রে তোর।এই তোর মনে আছে আমাদের পুতুলের ছেলেমেয়ের বিয়ের কথা?এবার আমরা এ কথা রাখবো কি বলিস?"
     অঙ্কুর খেয়ে ঘরে চলে গেছিলো।সুচরিতাকে রান্নাঘরে যেতে দেখে সেও তড়িঘড়ি রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকলো।সুচরিতা তখন ফ্রিজ থেকে মিষ্টি বের করছে।অঙ্কুর তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো যেন ফ্রিজের ভিতরেই তার কাজ।
---কিছু বলবেন?
---না মানে একটু জল খেতাম।
---কিন্তু এখন ঠান্ডা জল খেলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।
---তাহলে এমনি জলই খাই।
   কথাটা বলে জল ভরা বোতলের দিকে এগিয়ে গেলো।পূণরায় ফিরে এসে বললো,
---একটা কথা ছিলো।
---হ্যাঁ বলুন।
---ঘরটা পুরো শেষ হতে দিন পনের লাগবে।
---তো ?
---না -তাই বলছিলাম আর কি!
    সুচরিতা হেসে দিয়ে মিষ্টির প্লেট নিয়ে বেরিয়ে গেলো।কিন্তু সে হাসি যে একজনের বুকে সেল হয়ে ঢুকলো তা কি অপরজন বিন্দুমাত্র বুঝতে পারলো?

     সেদিন সন্ধ্যায় -
      মা মেয়েকে বললেন,
---দেখা সূচী আজ তো ওই বাড়িতে যাওয়া আর হলনা।তুই ওখানে ফোন করে বলে দে আমরা ওই বাড়ি নেবোনা।আমরা এখানেই থাকবো।
---তা কি করে হয় মা?আমি কথা দিয়েছি।
  "হয় হয় খুব হয়"।বলতে বলতে অন্নদাদেবী ওদের ঘরে ঢুকলেন।
---তুই ফোন করে বলে দে তোরা যাচ্ছিস না।সই চল আমরা একটু ঘুরে আসি পাশের বাড়ি থেকে।
  কথাকটি বলে তিনি তার সইকে যে চোখ টিপলেন তা সুচরিতার নজর এড়ালোনা। বেরিয়ে গেলেন দুই সখি যেন সদ্য দুই কিশোরী।
    এ ঘরে সুচরিতা একা আর ওদিকে অঙ্কুর ঘরে একা।কিছুক্ষণ পরে অঙ্কুর দরজার এপাশ থেকে বললো,
---ভিতরে আসতে পারি?
---হ্যাঁ আসুন।
---একটা কথা ছিলো।বলছিলাম কি কয়েকদিনের মধ্যেই তো ঘরটা হয়ে যাবে যদি এখানেই আপনারা থেকে .......
   চুপ করে গেলো অঙ্কুর।সুচরিতা বললো,
---যাওয়া তো হচ্ছেনা বুঝতে পারছি।তা আর কিছু বলবেন?
    অঙ্কুর আমতা আমতা করছে দেখে সুচরিতা একটা খাম বের করে অঙ্কুরের হাতে দিয়ে বলে,
---ঘরটা করতে আপনার তো অনেক টাকা খরচ হচ্ছে তাই এটা রাখুন।
---আমি কি আপনার কাছে এটা চাইতে এসেছি?
---তা আপনি তো বললেন না কি জন্য এসেছেন।তাই আমি ভাবলাম...
---আপনার ভাবনার তারিফ না করে পারছিনা।
  রাগে গজগজ করতে করতে অঙ্কুর বেরিয়ে গেলো।মাথায় তখন তার আগুন জ্বলছে।খামটা এনে খাটের উপর রাগ করে ছুড়ে ফেলে দিলো।সেটি খুলে দেখার প্রয়োজনও বোধ করলোনা।অন্নদাদেবী সুচরিতাকে ডেকে বললেন,
---আমি তোর মায়ের সাথে একটু গল্প করি।দুজনে একসাথেই খাবো।তুই একটু কষ্ট করে তুতুনকে খাবারটা দিয়ে দিবি মা?
---ঠিক আছে,খাবারটা দিয়ে দিচ্ছি কিন্তু আমিও তোমাদের সাথেই খাবো।
   অঙ্কুর গিয়ে খাবার টেবিলে বসলো।সুচরিতা অঙ্কুরের গম্ভীর মুখ দেখে অবলীলায় জানতে চাইলো-
---কি হয়েছে আপনার?খামটা দিয়েছি বলে রাগ করেছেন আমার উপর?খুলে দেখেছেন?
---না খুলিনি।মায়ের বাড়ি ওটা আমি মাকেই দিয়ে দেবো রাতে।
   সুচরিতা আঁতকে উঠে বললো,
---না-ওটা আপনার।মাসিমাকে দেবেননা। আপনিই খুলে দেখবেন খেয়ে গিয়ে।
     অঙ্কুর কোন কথা না বলে গম্ভীর মুখে খেয়ে উঠে গেলো।তবে বারকয়েক সুচরিতার সাথে চোখাচোখি হওয়াতে প্রতিবারই সে দেখেছে সুচরিতা মুচকি মুচকি হাসছে।ঘরে ঢুকেই সে খামটা নিয়ে খুলে দেখলো তার মধ্যে একটা চিঠি।পড়তে শুরু করলো ----
অঙ্কুর,
        তুমি যে মুখে কথাটা বলতে পারবেনা আমি জানতাম।মা আর মাসিমা যে আমাদের সুযোগ করে দিলেন এবং সেই সুযোগে তুমি আমার কাছে আসবে এটাও আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। সেটা বুঝতে পেরেই আমি চিঠিটা লেখা শুরু করলাম।তোমার ভাবনাটা মা আর মাসিমার পরে ছেড়ে দাও।তোমার আর আমার মনের ইচ্ছাটা তাদেরও মনের ইচ্ছা।এতো লাজুক তুমি?এতো সুযোগ পেয়েও 'ভালোবাসো' কথাটা মুখে বলতেই পারলেনা?তোমার সমস্যাটা আমি সলভ করে দিলাম।হ্যাঁ-আমিও তোমায় ভালোবাসি।এতো তাড়াতাড়ি ঘটনাটা ঘটে গেলো নিজেও বুঝতে পারলামনা।তাই তো পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আজ এসে যখন দেখলাম ঘর শুরু হয়েছে তখন বুঝতে পারলাম-ভালোবাসাটা আমার একতরফা নয়।কাল অফিস ছুটির পর কথা হবে।
                                    ইতি
                                       সুচরিতা
    নীচুতে একটা ঠিকানা দেওয়া।অঙ্কুর চিঠিটা পড়েই দরজা খুলে বেরিয়ে এসে দেখে সুচরিতারা দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে।অগত্যা সেও ঘরে এসে প্রসন্নমনে সকালের কফির অপেক্ষায় শুয়ে পড়ে। 
                     (ইতি)

 
 


       

Saturday, August 18, 2018

আমার খোকা
 নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

খোকারে তোকে,বহু যতন করে,
মানুষ করেছি যে ওরে,
এত কটুকথা কেন শোনাস বাবা?
চোখ ভরে শুধু জলে।

আদরে যতনে কোলে কোলে তোরে,
ঘুরে বেরিয়েছি সদা,
সারারাত বুকে জড়িয়ে রেখেছি,
বুজিনি চোখের পাতা।

দুষ্টুমি ভরা দিনগুলি তোর,
ছিলো বড়ই ভালো,
গায়ে কখনও হাত তুলিনি,
মুখ করিনি কালো।

শরীর খারাপে রাত জেগেছি,
তোর বাবা আমি একসাথে,
একমুহূর্ত করিনি আড়াল,
জড়িয়ে রেখেছি দুইহাতে।

কত ঝড়-ঝাপটা এসেছে জীবনে,
এতটুকু লাগাতে দিইনি আঁচড়,
খোকা তুই আজ কত বড় হলি?
কথায় কথায় বসাস কামড়!

তোকে বুকে করে অনাহারে কেটেছে,
কত বিনিদ্র রাত,
কোনদিন তোকে দিইনি সামান্য কষ্ট,
মনেকরে দেখ বাপ।

আমরা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা হয়েছি,
বড় হয়েছিস তুই ওরে,
বড়ই করতে পেরেছি শুধু,
মানুষ করতে পারিনি তোরে।

# নন্দা  17-8-18  
উর্দেশ্য এক
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

পথের ধারে ফুঁটে থাকে,
নাম হারা কত ফুল,
দেবতার চরন পায়না তারা,
তারাও কি করেছে ভুল?

জীবনের প্রতি পাতায় পাতায়,
হিসাবের ফল শূ্ন্য,
দুস্থের সেবা করলে পরে-
হয় কি কিছু পুণ্য?

নদী ছুটে চলে সমুদ্র পথে,
পথ যে তাদের ভিন্ন,
মানবের স্বপ্ন ভালোভাবে বাঁচা,
কিছু পাপ কিছু পুণ্য।

#নন্দা


Friday, August 17, 2018

অনিচ্ছায়
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

মায়াবী রাতের স্বপ্নগুলো,
হারালো অন্ধকারে-
ফাগুন দিনের ভালোবাসা,
ডুবলো বুঝি ঝড়ে।

হেথায় হোথায় খুঁজি তারে,
যে ছিলো আমার পাশে;
হাতটি ছেড়ে পালালো কোথায়?
কাছে ছিলো যে ভালোবেসে।

পরশ তার আজও পাই আমি,
ভুলবো তারে কেমন করে?
আসেনা আর সেই রাত ফিরে-
তার কথায় পড়ে মনে বারেবারে।

আমি পাগলিনী তার বিরহে,
সেতো ফিরবেনা আর;
বিধাতার লিখনে ছেড়েছে আমায়,
দোষ কিছু নেই তার।

# নন্দা    17-8-18 1-40 AM

Thursday, August 16, 2018

   কেন করলে এমন
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     রক্তিমের পুরনো কাগজ পত্র ঘাটতে ঘাটতে অনেকদিন আগের একটা খাম পায় পূবালী।কিছুটা কৌতুহলবশত খামটা খুলেই হাতের লেখাটা খুব চেনা মনেহয় পূবালীর।আগেই ইতি টা দেখে নেয়। শরীরটা ঠকঠক করে তখন কাঁপছে তার ।তারমানে রক্তিমকে কিংশুক চিনতো।  চিঠিটা পড়তে শুরু করে।
      রক্তিম,
            বন্ধুর থেকেও তুই আমার কাছে আর বেশিকিছু।যে কথা তোকে আজ বলবো সে কথা আর কাউকে বলার আমার সাহস নেই।একমাত্র তুইই জানিস আমি পূবালীকে কতটা ভালোবাসি।বিয়ের দিনক্ষণ ও ঠিক হয়ে গেছে এটাও তোর অজানা নয়।কিন্তু যা তুই জানিসনা সেটাই তোকে আজ লিখে জানছি কারন মুখে বলার সাহস আজ আর আমার নেই।বাড়ির কেউই জানেনা আমার আয়ু আর মাস তিনেক।আমার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে।লাষ্ট স্টেজ।পূবালী আমার সন্তানের মা হতে চলেছে।আমি পূবালীকে আমার অসুখের কথা নিজ মুখে বলতে পারবোনা।আমি ওর সাথে খামোখা খুব খারাপ ব্যবহার করেছি যাতে ও আমায় ভুলে যেতে পারে।বন্ধু, আজ হাত জোর করে তোর কাছে একটা জিনিস চাইবো-আমায় ফিরিয়ে দিবিনা কিন্তু ভাই।আমি তো চললাম।কিন্তু যারা একটু ছায়া পেলে বেঁচে যেতে পারে তুই সেই চেষ্টাটা করিস। অন্যায় আবদার হলেও তোর কাছে ছাড়া পূবালী ও ওর সন্তানকে বাঁচানোর দাবি আর কার কাছে করবো বল?তুই পূবালীকে ওই তারিখেই বিয়ে করিস আর  আমার সন্তানের পিতৃপরিচয়টা দিস।এটা করতে না পারলে ওই জীবন দু' টিই শেষ হয়ে যাবে রে! অনেক আশা নিয়ে তোর কাছে এই কথাটা বললাম।আমি জানিনা আত্মা মানুষের মৃত্যুর পর থাকে কিনা।যদি সত্যিই থেকে থাকে আমার আত্মা শান্তি পাবে তোদের তিনজনকে দেখে।আর একটা কথা কোনদিন তুই এ কথা পূবালীকে জানাবিনা।
                            ইতি হতভাগ্য
                                 কিংশুক
      চিঠিটা পড়া শেষ করে পূবালী সেখানেই বসে থাকে।মনে পড়তে থাকে কিংশুকের বলা শেষ কথাগুলো।এতো ভালোবাসতো কিংশুক আর সে কিনা ওই একদিনের কথাতেই তাকে এতো ঘৃণা করতে শুরু করেছিলো।কিংশুক ঠিকই বলেছিলো সত্যিই আমি ওর ভালোবাসার যোগ্য নই।ভাবতে থাকে পূবালী সাতপাঁচ।ভাবনায় ছেদ পড়ে পিতাপুত্রের হৈ হৈ করে আগমনে।রক্তিম এসে পূবালীকে জিজ্ঞাসা করে,"কি হয়েছে?"সে হাত বাড়িয়ে চিঠিটা তার হাতে দেয়।চিঠিটা হাতে নিয়ে রক্তিম পূবালীর মাথায় হাত রাখে।আর পূবালী রক্তিমকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। 
এই হয়
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

      প্রথম যেদিন সংসার চালানোর জন্য এই লাইনে ঢোকে বকুল তখন একটা ভয় একটা আতঙ্ক তার ভিতর ছিলো।বাবা এ্যাকসিডেন্ট করে পা হারালেন।জমানো কিছু ছিলোনা বললেই চলে।মায়ের একটা একটা গয়না বিক্রি হতে হতে অবশিষ্ট আর কিছুই থাকলোনা।পেট ভরে খাওয়ার সংস্থান শেষ হোল।ছোট দুটি ভাই বোন, মা,বাবার এই কষ্ট আর দেখতে পারছিলোনা আজকের বকুল মায়ের আদরের বনলতা।
        নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান বনলতা।তিন ভাইবোন।সেই বড় সন্তান।বাবা ছোটখাটো একটা কারখানায় চাকরী করেন।অভাব থাকলেও তিনবেলা পেট পুরে খাওয়ার সংস্থান তাদের ছিলো। দারিদ্রতা তাদের সুখের সংসারে কোন ছাপ ফেলতে পারেনি।কষ্ট করে হলেও  তিনজনেই পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছিল।কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত কারখানা থেকে ফেরার পথে বাসের পিছনের চাকায় বামপায়ের হাড় ভেঙ্গে গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে যায় হরিসাধনবাবুর।রাস্তার লোকেরায় তাকে কাছাকাছি একটা সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যায়।এমতাবস্থাতেও তিনি জ্ঞান হারাননি।পকেট থেকে ছোট্ট একটি ডায়রী বের করে তিনি একজনের হাতে দিয়ে বলেন যে রমেশ মজুমদারকে ফোন করতে  হরিসাধনবাবু এ্যাকসিডেন্ট করেছেন।হাসপাতালের নামটা জানিয়ে দিতে।
       বাড়িতে ফোন না থাকায় বাড়ীওয়ালার নম্বরটা তার কাছে থাকতো।সুবিধা-অসুবিধায় ফোন করলে তিনি ঠিক বনলতাদের ঘরে খবরটা পৌঁছে দিতেন।রমেশবাবু মানুষটাও খুব ভালো।ফোন পেয়েই তিনি কিছু টাকা নিয়ে বনলতার সাথে হাসপাতালে উপস্থিত হন।সরকারি নিয়ম-কানুনের ধাক্কায় তখনও হরিবাবু ভর্তি হতেই পারেননি।রমেশবাবুর সোর্সে যখন তিনি ভর্তি হলেন ততক্ষণে প্রচুর রক্তক্ষরনের ফলে তিনি জ্ঞান হারান।
      সারাটা রাত রমেশবাবু বনলতার সাথে দৌড়াদৌড়ি,ছুটোছুটি করে রক্তের জোগাড় করে ভোরের দিকে বাড়িতে আসেন।কিন্তু বনলতা হাসপাতালেই থেকে যায়।আর তখনই তার পরিচয় হয় আরশিমাসির সাথে।বয়স আনুমানিক পঁয়ত্রিশ থেকে আটত্রিশ বছর, খুব সুন্দর দেখতে।জাতিতে মুসলমান হলেও তিনি শাঁখা-সিঁদুর পড়েন।দীর্ঘসময় একজায়গায় বসে থাকার ফলে বনলতা ও আরশিমাসির মধ্যে অনেক কথায় হয়।
      আরশিমাসি ভালোবেসে সেলিমকে বিয়ে করেছিলো।সেলিমের একটা স্টেশনারি দোকান ছিলো।বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কোল আলো করে আসে তাদের ছেলে আশিক।এর কিছুদিনের মধ্যেই ধরা পড়ে সেলিমের দু'টো কিডনিই নষ্ট হয়ে।ঠিকভাবে দোকানে সময় দিতে না পারায় দোকানও আস্তে আস্তে অচল হয়ে পড়ে।এদিকে সেলিমের চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকার দরকার।দোকানটা নিজেই আবার দাঁড় করাবে ভেবে সে মাল আনতে সেলিমের পরিচিত সকলের কাছেই যায়।কিন্তু সেলিমের এই অবস্থার কথা জেনে কেউই বাকিতে মাল দিতে রাজি হয়না।কিন্তু একজনের কাছ থেকে কিছু টাকা সে পায় যার বিনিময়ে সে তার বহুমূল্যবান জিনিসটি খুইয়ে ফেলে।তাই টাকার দরকার পড়লেই সে তার শরীর বিক্রি করতে ছুটে যেত ওই পিশাচের কাছে।আর সেই শুরু।এখন শুরু হয়েছে ডায়ালাইসিস।সরকারি হাসপাতালে সব ওষুধ পাওয়া যায়না।প্রচুর দাম ওষুধের।এখন আর এক পুরুষ নয় নিত্য নূতন পুরুষসঙ্গ।সেই আদিকাল থেকে চলে আসছে অভাবী,অশিক্ষিত পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে,রোগের চিকিৎসা করতে নারীর দেহব্যবসা।
---কিন্তু বিশ্বাস করো বনলতা আমি এটা চাইনি।আমি তো সেলিমকে ভালোবেসে ওর সন্তানের মা হয়ে সুখি জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম।কিন্তু খোদা বাধ সাধলেন।তিনি এমন একটা রোগ আমার সেলিমকে দিলেন যা থেকে সে কোনদিন মুক্ত হতে পারবেনা।এই ডায়ালাইসিস করে যে কটাদিন বাঁচবে।ডাক্তার বলেছেন কিডনি পাল্টালে ও আরও কিছুদিন বাঁচবে।আমার সে সামর্থ্য কোথায়?নিজের কিডনি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ডাক্তারবাবু বললেন কি সব মেলেনি আমার শরীরের সাথে।
      কথাগুলো বলে খুব কাঁদতে থাকে আরশি।বনলতা তার মাথাটা নিজের কাঁধের উপর নিয়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করে,
---কিন্তু দিদি,তুমি এই শাঁখা,সিঁদুর কেন পর?
---যখন ওই নোংরা কাজগুলো করি স্বামী,সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে তখন আমি আরশি।আর যখন আমি সেলিমের বৌ আর আমার সন্তানের মা তখন আমি রাধা।এইগুলো পরি তার কারন কি জানো?তোমাদের ধর্মে আছে শাঁখা,সিঁদুর স্বামীর আয়ু বাড়ায়।যদি আমার সেলিম আরও কিছুদিন বেশি বাঁচে তার মঙ্গল কামনায় আমি এসব পরি।মসজিদে সিন্নি মানত করি,মন্দিরে যেয়ে পূজা দিই।যে যা বলে তাই করি।কিন্তু আমার সেলিম দিনকে দিন দূর্বল হয়ে পড়ছে।আমি জানিনা সত্যিই আমি জানিনা আমার কপালে খোদা এতো কষ্ট কেন লিখেছেন?আজ পর্যন্ত কাউকেই এসব বলতে পারিনি।আজ তোমায় মন খুলে সব বললাম।নিজেকে একটু হালকা মনে হচ্ছে।তুমি ভেবোনা তোমার আব্বু ভালো হয়ে যাবেন।
       সকাল দশটা নাগাদ বনলতার মা ও ছোট ভাই আসে।তখন আরশি চলে গেছে।হরিসাধনবাবুর অপারেশানও হয়ে গেছে।বাম পা টা মালায় চাকীর উপর থেকে কাটা গেছে।অনেকদিন এখন হাসপাতালে থাকতে হবে।অফিস থেকে সামান্যকিছু টাকা পাওয়া গেছিলো তাই দিয়ে কটাদিন চললো।বাড়ি ভাড়া বাকি পড়ে যাচ্ছে।মা, মেয়ে মিলে ঠিক করে একটা বস্তির মধ্যে কম টাকায় ঘর ভাড়া করে চলে এলো।সরকারী হাসপাতাল তাই চিকিৎসার জন্য কোন টাকা খরচ হচ্ছেনা।রমেশবাবু অবশ্য দু'মাসের ভাড়ায় মকুব করে দিয়েছেন।
      কিছুতেই আর সংসার চলেনা।লতা পড়া বন্ধ করে দেয়।টেষ্ট পরীক্ষা দিয়েও অভাবের তাড়নায় পড়ায় মন বসাতে পারেনা।লোকের বাড়ি কাজ করতে শুরু করে।সারাটাদিন অমানুষিক পরিশ্রম করে।মাস গেলে তবে তো মাইনে।কিন্তু টাকা তো নিত্য দরকার।নূতন কাজ ধরেছে কেউই আগাম দিতে রাজি নয়।বাবাও বাড়ি ফিরে এসেছেন।একটা ক্রাস কেনা একান্ত দরকার।বাথরুমে যেতে গেলে মায়ের কাঁধের উপর ভর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে হয় বাবাকে।মায়েরও খুব কষ্ট হয়।কিন্তু কোন উপায়ই লতা দেখতে পারছেনা।হঠাৎ মনেপড়ে আরশির কথা।কাজের বাড়িগুলোতে তাড়াতাড়ি কাজ সেরে বিকালে আর আসবেনা জানিয়ে সে মাকে এসে বলে,
---আমি একটা কারখানায় কাজের খোঁজ পেয়েছি।আজ কথা বলতে যেতে হবে।অনেক রাতে ফিরবো।
     নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়।জীবনে  দেখা স্বপ্নগুলিকে বাবা,মা আর ছোট দু'টি ভাইবোনের জন্য নিজের মনেই ঢেউএর সাথে ভাসিয়ে দেয়।সেদিন ভাগ্যিস আরশির বাড়িটা কোথায় জেনে নিয়েছিলো।মা যাওয়ার সময় বারবার করে বলে দিলেন, "দিনকাল ভালোনা সাবধানে যাস।"যে স্বেচ্ছায় বলিকাঠে মাথা দিতে চলেছে তার কাছে ভালো আর মন্দের কোন তফাৎ সত্যিই থাকেনা।
       সেই শুরু। বিকালের দিকের কাজের বাড়ির কাজগুলো ছেড়ে দিলো বনলতা।সকালের দিকে কাজ করেই বাড়িতে এসে নিজেকে একটু পরিপাটি করে বাড়িতে কারখানায় কাজে যাচ্ছি বলে বেরিয়ে পড়ে।কিছুটা হলেও সংসারের হাল ফেরে।মাঝে মাঝে বাবা,মা খুব দুঃখ করেন তার এই অসীম পরিশ্রম নিয়ে।বনলতার তাতে কোন অনুতাপ নেই।বরং বাড়ির মানুষগুলো পেট পুরে তিনবেলা খেতে পারছে এই শান্তিটা সে নিজের জীবনের সুখ শান্তির বিনিময়ে এনে দিতে পেরেছে তাতেই সে খুশি।
      এইভাবেই বনলতার জীবন এগিয়ে যেতে থাকে।সে আস্তে আস্তে ঝিয়ের কাজগুলো ছেড়ে দেয়।কয়েক বছরের মধ্যে বাবাও মারা যান।বোনটার আঠারো বছর বয়স হওয়ার সাথে সাথেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে।কারন বনলতা জানতো এ সত্য বেশিদিন চেপে রাখা যাবেনা।একটা ভালো ছেলের সন্ধানও পায়।ভাইটাও মাধ্যমিক পাশ করে একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হয়।মোটামুটি যেটুকু না করলে নয় ঠিক সেইভাবেই বোনটার বিয়ে দিয়ে দেয়।মায়ের শরীরও বেশি ভালো নয়।ডাক্তার ওষুধ লেগেই আছে।ইতিমধ্যে বোনের বিয়ের আগেই বস্তির বাড়িটা ছেড়ে একটা ঘর ভাড়া করে উঠে আসে।রোজ দুপুর একটা দেড়টা নাগাদ বেরোয় আর রাত দশটা এগারোটা বেজে যায় তার বাড়ি ফিরতে।মায়ের বা বাড়ির কারও কোনদিন কোনই সন্দেহ হয়নি কারন সময়টা তার সব সময় নির্দিষ্ট ছিলো।ভাই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেই চাকরির চেষ্টা শুরু করে।ঈশ্বরের অপার কৃপায় একটা চাকরী জুটিয়ে ফেলে।সরকারি না হলেও মা ও দিদি খুশি।বনলতা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।এবার সে তবে এই পথ থেকে সরে আসতে পারবে।কিন্তু ভগবান তার কপালে লিখেছেন অন্যকিছু।সে পৃথিবীতে এসেছে শুধু অন্যকে দিতে,নিজে কিছু পাওয়ার ভাগ্য নিয়ে সে জম্মায়নি। সপ্তাহ খানেক সে বেরোনো বন্ধ করে দিয়ে ঘরের কাজ আর মায়ের সেবা নিয়েই সময় কাটিয়ে দিতে লাগলো।
        একদিন সে লক্ষ্য করলো ভাই অফিস থেকে এসেই মায়ের ঘরে ঢুকে আস্তে আস্তে কথা বলছে।সে ভায়ের জলখাবার নিয়ে ঢুকলে দু'জনেই চুপ করে যায়।ভাই বেশ রাগত স্বরেই বলে,
---তোর হাতে খেতে আমার ঘৃনা হয়।আমি ভাবতেই পারিনা এতো পাপের কাজ তুই কি করে করতিস?তোর মুখ দেখাও পাপ।
---কি বলছিস তুই ভাই?মা তুমি কিছু বলবেনা?  সংসারটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই ছাড়া আমার আর কোন পথ ছিলোনা।
---তাই বলে এই পাপের পথে তোকে নামতে হোল?নাহয় না খেতে পেয়ে সব মারা যেতাম।কি এমন হত তাতে?আমার তো ভাবতেও গা ঘিনঘিন করছে এতদিন তোর ওই পাপের টাকায় আমরা খেয়েছি। ওই জন্যই মনেহয় তোদের বাবা এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলেন।
      বনলতা পাথর।তার জীবনের সুখের বিনিময়ে যাদের বাঁচিয়ে রেখেছে,যাদের এই ওবধি এনে দাঁড় করিয়েছে তাদের এ কোন রূপ?মানুষ স্বার্থপর হয় সে জানতো কিন্তু তাইবলে মা,ভাই?কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে যেয়ে সে মায়ের পাদু'টি জড়িয়ে ধরতে যায়।কিন্তু তার মা পা সরিয়ে নিয়ে বললেন,
---ওই পাপের হাতে তুই আমায় ছুবিনা।বেরিয়ে যা আমার সামনের থেকে।তোর মুখ দেখাও পাপ!
       সেলিম অনেকদিন আগেই মারা গেছে।সেই রাতেই বনলতা আবার বকুল হয়েই ফিরে আসে আরশির দোরগোড়ায়। বকুল,আরশি আর আশিক এখন এক বাড়িতেই থাকে।

                       শেষ 

Tuesday, August 14, 2018

একই রূপ
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     বাথরুমে যাওয়ার পথে মায়ের ঘর থেকে এতো রাতে কথা শুনে অতসী একটু চমকেই গেলো।মা কাকে যেন বলছেন,"এ বিয়ে যেভাবেই হোক তোমায় আটকাতে হবে।তুমি তোমার ছেলেকে যা বলার বলবে।এই ব্যপারে আমি মেয়ের সাথে কোন কথা বলতে পারবোনা।এটা কিছুতেই সম্ভব নয়।সম্পর্কে ওরা ভাই-বোন।এ বিয়ে হতে পারেনা।"এই কথা শুনে অতসী আর সেখানে দাঁড়ায়না। মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে।অরিন্দম সম্পর্কে তার দাদা?ভাবতেই পারছেনা।মা সধবার বেশে থাকেন ঠিকই কিন্তু ছেলেবেলা থেকেই শুনে আসছে তার বাবা অফিসের কাজে বাইরে যেয়ে আর ফিরে আসেননি।খোঁজ করা হয়েছে কিন্তু খবর পাওয়া যায়নি।আর এটাকেই সে সত্যি মনে করে বিশ্বাস করেছে।তারমানে মা তাকে মিথ্যা বলেছেন।বাবা এই শহরেই থাকেন তার ছেলের সাথে।
       অরিন্দমের সাথে মাত্র দু'বছরের আলাপ।ওরা পরস্পরকে ভালোবাসে।মাকে সবকিছু জানানোয় মা অরিন্দমকে দেখতে চেয়েছিলেন।অরিন্দমের সাথে আলাপচারিতায় মা তার বাবার নাম ও বাড়ি কোথায় জেনেই কেমন গুম মেরে যান। আর কোন কথা না বলে শরীর খারাপ লাগছে এই অজুহাতে ঘরে চলে যান।অরিন্দম চলে যাওয়ার পর সে মায়ের ঘরের কাছে এসে দেখে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ।কয়েকবার ডাকার পর তিনি সাড়া দিয়ে বলেন,"একটু ঘুমালেই শরীরটা ঠিক হয়ে যাবে।তুমি ডিনার সেরে নাও।আমি আজ আর কিছু খাবোনা।আর আমাকে বিরক্ত কোরোনা এসে।"
       নীতাদেবী ফিরে যান একুশ বছর আগের জীবনে।তখন ছেলে অরিন্দমের বয়স চার আর অতসীর ছ'মাস।সুখি সংসার।নীতাদেবী ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা আর তার স্বামী ছিলেন একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সেলস ডিপার্টমেন্টে।দূর সম্পর্কের এক বোন থাকতো দু'জন বাইরে বেরিয়ে গেলে বাচ্চাদু'টিকে সামলানোর জন্য।একদিন সকালে দু'জনে একসাথেই যে যার অফিসে বেরিয়ে যান।স্কুল থেকে ফিরে এসে বারবার বেল বাজিয়েও কোন লাভ না হওয়ায় ফ্লাটের ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে তিনি ঘরে ঢুকে সোজা দোতলায় নিজের ঘরে চলে যান।অরিন্দম ও অতসী তখন নিচের বেডরুমে ঘুমাচ্ছে।কিন্তু তিনি তার বেডরুমে ঢুকে যা দেখেন তা তিনি কোনদিন স্বপ্নেও কল্পনা করেননি।রূপা  তার খাটের উপর আর পাগলের মত আভাষ তাকে ইচ্ছেমত ছিড়ে খাওয়ার চেষ্টা করছে।আপ্রাণ চেষ্টা করছে রূপা নিজেকে রক্ষা করার ওই পশুটার হাত থেকে।কিন্তু পারছে কোথায়?নীতাকে দেখতে পেয়ে রূপা চিৎকার করে ওঠে, "দিদি তুমি আমাকে বাঁচাও।"হাতের কাছে একটা পিতলের ফুলদানী ছিলো।রাগে ঘেন্নায় সেটা দিয়ে সজোরে আভাষের পিঠে নীতা আঘাত করে।আভাষ আ-আ-আ-বলে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে।রূপা দৌড়ে এসে নীতাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,"দিদি, জামাইবাবু আজ এতো ড্রিংক করেছেন তার কোন জ্ঞানই নেয়।আমি অনেক কাকুতিমিনতি করেছি।উনি শোনেননি।জ্ঞান থাকলে তো শুনবেন!"
       সেই মুহূর্তে বাচ্চাদু'টিকে আর রুপাকে সাথে নিয়ে ঘর ছেড়েছে নীতা।পরে বহুবার আভাষ এসেছে ক্ষমা চেয়ে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।কিন্তু নীতা  যায়নি।অরিন্দমকে একটা ভালো বোডিং স্কুলে ভর্তি করিয়েছিল নীতা।কিন্তু আভাষ কেস করে সন্তানদের তার কাছে রাখার জন্য।রায় বেরোয় যেহেতু দুটি সন্তান তাই ছোটটি থাকবে মায়ের কাছে আর বড়টি তার বাবার কাছে।রায় বেরোনোর পর একবারই মাত্র নীতা ছেলেকে দেখতে বোডিং স্কুলে গেছিলো।তারপর আর কখনো যোগাযোগ রাখেনি।
         আজ এতোগুলো বছর বাদে নীতা  বাধ্য হলেন আভাষকে ফোন করতে। আর এদিকে সারাটা রাত ছটফট করতে করতে ভোর হওয়া মাত্র মায়ের ঘরের ল্যান্ডফোনে রিডায়াল করে নিজের পরিচয় গোপন রেখে আভাষ চৌধুরীর সাথে কথা বলে সকালেই পৌঁছে যায় অতসী তার বাবার বাড়ি।ঘরে ঢুকেই সে আভাষ চৌধুরীর সামনাসামনি হয়ে প্রথমেই যে কথাটা বললো তা হোল,
---আমি নীতা চৌধুরীর মেয়ে।কাল পর্যন্ত আমি জানতামনা আমার বাবা কে?শুধু নামটাই শুনেছিলাম।আপনাদের মধ্যে কি হয়েছিলো আমি বা আমার দাদা জানিনা।কিন্তু আমরা দু'জনেই কেউ পিতৃস্নেহ কেউবা মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি।পৃথিবীতে যা কখনোই সম্ভব নয় ঠিক তেমনই একটি ঘটনা আমার ও আমার দাদার জীবনে ঘটেছে।এসবকিছুর জন্য আপনি না মা দায়ী আমি জানিনা।মাকে যতটুকু জেনেছি তিনি তার সংসার জীবনে কখনোই কোন অন্যায় করেননি।আর বাকি থাকলেন আপনি!এখন আমরা বড় হয়েছি নিশ্চয় জানার আমার  অধিকার আছে কি এমন ঘটেছিলো যে মাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিলো?
       এতক্ষণ মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তার কথাগুলো তিনি শুনছিলেন।মেয়েটিকে দেখতে তার নিজের মত হলেও সাহস ও কথা বলার ভঙ্গিমাটা পুরো তার মায়ের মত।তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মেয়ের মুখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বললেন,
---একুশ বছর আগে যে ঘটনার জন্য তোমার মাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিলো তারজন্য সম্পূর্ণভাবেই আমি দায়ী।অনেকবার তোমার মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।কিন্তু অত্যন্ত জেদী তোমার মা।যা আমি জ্ঞানে করিনি তা জানা সত্বেও তিনি আমায় ক্ষমা করেননি।আমি অনুতপ্ত।কিন্তু সবকিছু আমার হাতের বাইরে ছিলো।পারলে আমায় ক্ষমা কোর।
---আমি এখানে এসেছিলাম মা যেন না জানেন।দাদাকে যা বলার আজই তাকে বলে দেবেন।সে ইচ্ছা করলে মাকে দেখতে যেতেই পারে।তবে আমার সাথে আর কখনোই আপনাদের দেখা হবেনা।কথাগুলো বলে অতসী গটগট করে হেঁটে চলে গেলো।আভাষ চৌধুরী একুশ বছর আগের জেদী,একরোখা নিতা কে যেন পূণরায় দেখতে পেলেন।

                  শেষ 

Sunday, August 12, 2018

আপনমনে
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আজ রাতে তারাদের মাঝে,
খুঁজবো তোমায় আমি,
দেখতে তোমায় পাবো কি ?
জানেন শুধুই অন্তর্যামী।

বদ্ধঘরে অন্ধকারে-
একলা আমি বসে,
জানলা দিয়ে ঢুকলো ঘরে,
জোনাকি কিছু এসে।

জোনাকির আলোয় আলোকিত ঘর,
সে আলো পৌঁছায়না মনে,
তারাদের মাঝে ডুবে আমি,
খুঁজি তোমায় সঙ্গোপনে।

# নন্দা   12-8-19

Tuesday, August 7, 2018

শেষ চিঠি
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

 কেমন আছো?
অনেকদিন হল,আমাদের ছেড়ে-
দূরে চলে গেছো!
বহুদিন তোমায় দেখিনা,
আমি তো এভাবে অভ্যস্ত নই,
ফিরে এসো কোন শিশুর বেশে।
তবেই পাবো আমি শান্তি!
আপনমনে অবোধ শিশুটির সনে-
বলবো না বলা সব কথা।

মন যে আমার কেবলই বলে,
আসবে তুমি আবার এই ঘরে,
এই পরিবারের কোন শিশু হয়ে।
সেই অপেক্ষাতেই তো বেঁচে থাকা।
তোমার ছেলেমেয়ের কোলে কোলে ঘুরবে,
পূনরায় তারা তোমায় বাবা বলে ডাকবে।

কত সাধ অপূর্ণ রেখে গেলে,
একবার শুধু ফিরে এসে দেখে যাও-
সবকিছু কেমন গুছিয়ে নিয়েছি,
খুব ভরসা ছিলো যে তোমার,
দেখে যাও অমর্যাদা করিনি তার।
মেয়ে তোমার সুখি আছে।
কত চিন্তা ছিলো ছেলেকে নিয়ে তোমার,
সে এখন ইন্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়েছে।
আমি জানি তোমার আশীর্বাদের হাত-
তার মাথার উপর আছে।
আর ভেবোনা,ওর জীবন ও ঠিক গড়ে নেবে।
শুধু তুমি ফিরে এসো কোন এক শিশুবেশে। 
ফিরে পাওয়া
         নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

      গরীবের ঘরে রূপবতী হয়ে জম্ম নিয়ে আসমানীর জীবনটা আরও বিষাক্ত হয়ে পরে।বস্তির ছোট্ট একটি ঘরে মা ও বাবার সাথে চৌদ্দ বছর ধরে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে ভ্যানচালক আসিকের সাথে প্রেম করে পনের বছরেই ঘর ছাড়ে।বাবা, মা-ও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।অন্তত মেয়ের বিয়েটা দিতে হলনা।
       ঘোর কাটে আসমানীর বিয়ের তিন মাসের মাথায়।তিনমাস বেশ ভালোই কাটে তার।তিনমাসের মাথায় এসে সে বুঝতে পারে আসিক একজন চোর।দিনে ভ্যান চালানো আর রাত হলেই অন্যের বাড়িতে চুরি-এটাই তার নিত্য রুটিন।খোদাতালাকে কখনোই সে দোষ দেয়না।দোষ তার কপালের।বাপের বাড়ির অভাবী সংসার ছেড়ে পেট ভরে দুবেলা দুমুঠো খাবারের আশায় সে আসিককে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছিলো।কিন্তু সুখ তো তার কপালে নেই।
      কয়েকদিন ধরে শরীরটাও ভালো না।কিছুই খেতে ইচ্ছা করছেনা ,বমি বমি পাচ্ছে।তার রীতিমত ভয়ই করছে। এর মধ্যে যদি একটা বাচ্চা-কাচ্চা পেটে এসে যায় তো আরও বিপদ।না সে মা হতে চায়না।সকলে বলবে চোরের বাচ্চা।মাত্র ষোল বছর বয়সেই আসমানী বাস্তব জীবনটাকে অনেক ভালোভাবে চিনেছে ।
     কিন্তু তার সন্দেহই ঠিক।সে মা হতে চলেছে।আসিককে খবরটা দিলে সে খুব খুশি হয়।আসমানী তাকে বলে,
---দেখো চুরি করাটা ছেড়ে দাও।বাচ্চা হলে সবাই বলবে চোরের বাচ্চা।তার থেকে বরং আমি লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ নিই।আমাদের ভালোভাবে চলে যাবে।ধরা পড়ে গেলে তো জেল হাজত হবে।তখন আমার আর বাচ্চাটার কি হবে ভেবে দেখেছো?
---আরে কিচ্ছু হবেনা।এতো বছর ধরে চুরি করছি আজ পর্যন্ত কোনদিন ধরা পড়িনি।তুই চিন্তা করিসনা বৌ,এখন আমাদের অনেক টাকার দরকার।বাচ্চাটাকে মানুষ করতে হবে তো।ওকে আমরা লেখাপড়া শিখিয়ে বড় মানুষ তৈরি করবো।
       আসমানীর মন কিছুতেই সায় দেয়না।এখন আসিক আরও দেরি করে বাড়ি ফেরে।কোনদিন কিছু আনতে পারে আর কোনদিন বা সারাটা রাত চেষ্টা করেও কিছুই নিয়ে ফিরতে পারেনা।এবার এক দলের সাথে মিশে শুরু করে ছিনতাই করা।যথারীতি একদিন পুলিশ ধরেও ফেলে।সারাটা রাত উৎকন্ঠা নিয়ে কাটিয়ে কোথাও আসিককের সন্ধান আসমানী পায়না।সপ্তাহ খানেক এভাবে কাটিয়ে আসমানী এক বাড়িতে খাওয়ার ও সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে কাজ নেয়।এইভাবে সে আস্তে আস্তে অনেকগুলো বাড়িতে ঝিয়ের কাজ পেয়ে যায়।মাস গেলে এখন তার হাতে আসে ছ' হাজার টাকা।তার কোনই খরচ নেই কারন সে তিন বেলার খাবার কাজের বাড়ির থেকেই পেয়ে যায়।দেখতে দেখতে সাত আটমাস এভাবেই কেটে যায়।একদিন এক বাড়িতে কাজের সময় তার প্রসব যন্ত্রনা ওঠে।ওই বাড়ির লোকেরাই তাকে হাসপাতাল নিয়ে যায়।হাসপাতালে তার একটি সুন্দর ফুটফুটে ছেলে হয়।আসমানী মুনীবের বাড়ির লোকের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আসিকের জন্য।তখনই সে তার জীবনের করুন পরিণতি ওই বাড়ির লোকের কাছে জানায়।
        ঘটনাচক্রে ওই বাড়ির দিদি ছিলেন উকিল।তিনি আসমানীকে কথা দেন আসিককে তিনি খুঁজে বের করবেন।আর আসমানীকে বলেন,"হয়তো সে কোন জেলে বিচার হীন অবস্থায় পড়ে আছে।
         হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কিছুদিন পর সে ওই ছোট্ট বাচ্চাটিকে নিয়েই কাজে বের হয়।সুন্দর চেহারা আর শান্তশিষ্ট ভদ্র আসমানীকে এই অবস্থায় সব বাড়ির থেকেই কাজের ব্যপারে ছাড় দেয়।একদিন ওই উকিল দিদির সাহায্যে আসিকের খবর পেয়ে দিদির সাথেই বাচ্চাটিকে সাথে নিয়ে স্বামীর সাথে দেখা করতে যায়।আসিক এবং আসমানী দুজনেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
---তুই ঠিকই বলেছিলি বৌ,তোর কথা যদি শুনতাম আজ এতোগুলো দিন এই জেলে পড়ে থাকতে হতনা।বাচ্চাটা পুরো তোর মতই সুন্দর হয়েছে।একবার যদি জেল থেকে ছাড়া পাই তাহলে আর কোনদিনও ওই সব খারাপ কাজ করবো না।তুই তোর দিদিকে বলে দেখনা আমায় ছাড়াতে পারে কিনা?
---দিদি তোমায় ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবে।কিন্তু দিদি বলেছে তোমায় চুরি,ছিনতাই এগুলো করা বন্ধ করতে হবে।
---বলছি তো আমি আর কোনদিনও ওমুখো হবোনা।আমাদের এই ফুটফুটে ছেলেটাকে নিয়ে কূলিগিরি করে জীবন কাটিয়ে দেবো।ছেলেটাকে ভালোভাবে মানুষ করবো।
       এর কয়েক মাসের মাথায় আসিক জেল থেকে ছাড়া পায় সাথে আরও দুজন।কারন সকলেই ছিলো একই অপরাধে অপরাধী।উকিল দিদির পা ছুঁয়ে শপথ করে আর কোনদিন সে খারাপ কোন কাজ করবেনা।ফিরে আসে তারা তাদের কুঁড়েঘরে।উকিল দিদির সহায়তায় সে একটি প্লাবিং দোকানে কাজ নেয়।মাস গেলে সামান্য যা কিছু সে পায় এনে তুলে দেয় তার আসমানীর হাতে।আস্তে আস্তে সে দোকান মালিকের খুব বিশ্বত্ব হয়ে ওঠে।আসমানী লোকের বাড়ির কাজ আরও বাড়িয়ে দেয়।আগের থেকে অনেক ভালোভাবেই তাদের সংসার চলতে থাকে।আর্থিক অভাব থাকলে সুখ আর স্বস্তির কোন অভাব ছিলোনা।দুঃখের দিনে খোদাতালাকে দোষ না দিলেও সুখের দিনে আসমানী তাকে সুখর জানাতে ভোলেনা।
      আস্তে আস্তে এভাবেই দরিদ্র আসমানীর জীবন এগিয়ে চলে।আসমানী এতেই খুব খুশি।ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছে,স্বামীকে সৎ মানুষ হিসাবে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।দুবেলা পেট ভরে খেতে পারছে।আর কি চাই তার জীবনে?জীবনে যা কিছু সে চেয়েছিলো সব কিছুই সে ফিরে পেয়েছে।খোদাতালার কাছে তার আর কোন চাহিদা নেই।
                     শেষ  

Sunday, August 5, 2018

Follow my writings on https://www.yourquote.in/nanda_mukherjee #yourquote

অটুট বন্ধন 
            নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 

         মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে বেরিয়ে পাড়ার দোকানে না পেয়ে কৌশিকি হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে আসে।শ্রাবণ মাস।যখন তখন বৃষ্টি নামে।ছাতাটা সাথে ছিলো তাই রক্ষে।ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী সন্ধ্যাও তখন হয়নি।কিন্তু কালো মেঘের আবির্ভাবে বিকেল বেলাতেই রাত্রি নেমে এসেছে।ভিজে একসার।হঠাৎ তার নজরে পড়ে বাসরাস্তা থেকে একটু দূরে একটা বেড়া দেওয়া চায়ের দোকানের কাছে একটা ছাতা খোলা অবস্থায় পড়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে ছাতার তলে একটা বড় ঝুড়িতে কিছু আচ্ছাদন দেওয়া।কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে যেয়ে ছাতাটা সরাতেই সে চমকে ওঠে।সদ্যোজাত একটি শিশু।কৌশিকি এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই।ইচ্ছাকৃত যে কেউ বাচ্চাটিকে ফেলে গেছে এটা তার বুঝতে একটুও সময় নিলোনা।কিন্তু সে এখন কি করবে?তার যে মন সায় দিচ্ছেনা বাচ্চাটিকে ফেলে যেতে।পরম যত্নে কৌশিকি ওকে বুকে চেপে ধরে। 
         অসুস্থ্য মায়ের কাছে এসে সব জানায়।মা তাকে রাগ করলেও মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,"তোর তো কিছু ওই সময় করারও ছিলোনা।কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা।পার্থ তো কিছুতেই বাচ্চাটিকে মেনে নেবেনা।আর পার্থ একা তো নয়।ওদের একান্নবর্তী পরিবার।কেউ না কেউ আপত্তি তুলবেই।"
---এখন কি করবো তাহলে মা?বাচ্চাটিকে তো মেরে ফেলতে পারিনা। 
---না তা কেন?পার্থর সাথে কথা বলে ওকে কোন অনাথ আশ্রমে দেওয়ার ব্যবস্থা কর। 
---দেখি তাহলে রাতে ওর সাথে কথা বলি। এখন ওকে একটু চামচে করে দুধ খাওয়ায়।ও তো অকাতরে ঘুমিয়ে চলেছে ওর মনেহয় ক্ষিদে পেয়েছে। 
     পার্থ আর কৌশিকির প্রেম পাঁচ বছরের।দু'পক্ষের মত থাকায় ওদের রেজিস্ট্রিও হয়ে গেছে।এখন বাকি অগ্নি স্বাক্ষী করে বিয়ে।সময় হাতে পনেরদিন।রাতেই কৌশিকি পার্থকে ফোন করে সব জানায়।পার্থ কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা।পরিশেষে সে বলে,"আগামীকাল আমি তোমাদের বাড়িতে গিয়ে সামনাসামনি কথা বলবো।তবে আমারও মনেহয় মাসিমা যেটা বলেছেন সেটাই ভালো হবে বাচ্চাটির পক্ষে"।
         রাতে বাচ্চাটির গা গরম হওয়ায় কৌশিকি যেয়ে মাকে ডেকে আনে।কামিনীদেবী বলেন,"অনেকক্ষণ বৃষ্টির মধ্যে থাকায় ওর ঠান্ডা লেগে জ্বর হয়েছে।রাতে যদি জ্বর বারে মাথায় জলপট্টি দিস।এতো টুকুন বাচ্চা কিছু করতেও তো ভয় লাগে।কি থেকে আবার কি হয়ে যায়।"
     বাইরে বৃষ্টি হলেও ঘরের ভিতর গুমোট গরম।কিন্তু বাচ্চাটির ক্ষতি হবে চিন্তা করে গলদ ঘামে ঘামতে থাকলেও কৌশিকি পাখা চালায় না। সকালের দিকেই পার্থ এসে হাজির হয়।তখন বাচ্চাটির জ্বর অনেকটাই কম।কৌশিকি ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যেতে চাইলে পার্থ বাঁধা দিয়ে বলে, 
---নানান রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।তার থেকে বরং আমার এক ডাক্তার বন্ধু আছে তাকে ফোন করে জেনে নিই ওকে কি ওষুধ দেওয়া যাবে। 
---তাই কর।খুব খারাপ লাগছে বাচ্চাটির জন্য।কেমন বাবা,মা সন্তান জম্মের পরেই ফেলে দিয়ে যায়।ওর মুখটা দেখেও কি ওদের মায়া হয়নি?আমার তো বাবা ওর প্রতি মায়া পড়ে গেছে।ওর একটা নামও ঠিক করে ফেলেছি। 
---এই মরেছে এর মধ্যে নামও ঠিক হয়ে গেছে?কিন্তু ওর তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে। 
---এই শোনোনা-ওকে যদি আমরাই দত্তক নিই। 
---পাগলী!আমাদের তো এখনও বিয়েই হয়নি।দত্তকটা নেবো কি করে।তাছাড়া দত্তক নিতে গেলেও ওকে একটা ঠিকানা আমাদের জোগাড় করে দিতে হবে।আগে দেখি কি করা যায়।আমি এখান থেকেই অফিস বেরোবো। 
      পার্থ একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরী করে।কৌশিকির কথা মত গ্রামের দিকে একটা অনাথ আশ্রমে শিশুটিকে ওরা দিয়ে আসে।তাদের সাথে কথা হয় ছ'মাস পর ওরা বাচ্চাটিকে দত্তক নেবে।কারন কিছুতেই কৌশিকি বাচ্চাটিকে ছাড়তেই রাজি হচ্ছিলোনা।তাকে এই শর্তে পার্থ রাজি করিয়েছে বিয়ের পর তারা ছ'মাসের মাথায় বাচ্চাটিকে দত্তক নেবে আর এখান থেকে দূরে বদলি হয়ে যাবে।এই শিশুটিকে সে মানুষ করবেই।বাড়ির লোককে দত্তক নেওয়ার পর জানাবে যে ওরা ওকে কুড়িয়ে পেয়েছে। 
         ওরা দুজনে মিলে গ্রামের দিকে একটি এতিমখানায় শিশুটিকে রেখে আসে।ছ'মাসের মাথায় বাড়ির সকলকে রাজি করিয়ে শিশুটিকে দত্তকও নেয়।দু'বছরের মধ্যে ওদের একটি ছেলে হয়।ওরা এবং ওদের বাড়ির লোক কখনোই দুই ছেলেকে আলাদা করে দেখেনি।দুজনকেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে।দুজনেই বাইরে চাকরী পায়।কিন্তু বড়ছেলে কৌশিক মা,বাবাকে ছেড়ে বাইরে যেতে রাজি হয়না।কৌশিক মা ছাড়া কিছুই জানেনা।মাকে ছেড়ে দূরে যাওয়ার কথা সে ভাবতেই পারেনা।সে জানেনা এরা কেউই তার আসল মা,বাবা, দাদু,ঠাকুমা নয়।বাড়ির প্রতিটা মানুষের প্রতি তার অসম্ভব একটা টান যা ছোট ছেলে কিংশুকের মধ্যে দেখা যায়না।সে রাগী,বদমেজাজী কিন্তু তাইবলে সে কিন্তু উশৃঙ্খল নয়।অপরদিকে কৌশিক ধীর,শান্ত একটু গম্ভীর প্রকৃতির।দুটি ছেলেই দুই মেরুর বাসিন্দা।কিন্তু ভায়ে ভায়ে খুব মিল।রেগে গেলে কিংশুক একমাত্র তার দাদাভায়ের কথা ছাড়া অন্য কারও কথা সেই মুহূর্তে সে শোনেনা।সবাই বলে আদরটা একটু বেশি পাওয়াতে কিংশুকটা এরূপ হয়েছে।কিন্তু কৌশিকি একথা মানতে নারাজ।সে দুই ছেলের মধ্যে কোনদিন কোন পার্থক্য করেনি।মা হিসাবে সে গর্বিত।দুই ছেলেই তার মনের মত হয়েছে।কৌশিক এখনও মাঝে মাঝে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,"আমি জম্ম-জম্মান্তর ধরে তোমায় মা হিসাবে পেতে চাই।তোমার মত মা পাওয়া ভাগ্যের কথা"।আনন্দে কৌশিকির চোখ থেকে জল পড়তে থাকে।আর মনেমনে ভাবে ভাগ্যিস সেদিন ওকে বুকে তুলে নিয়েছিলো।তাই তো আজ সে এতো সুখি।নিজের পেটের সন্তান চলে গেলো বিদেশে বেশি অর্থ উপার্জনের আশায়।অথচ তার কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে তাকে এক মুহূর্ত চোখের আড়াল করতে চায়না অফিসের সময়টুকু ছাড়া।কিংশুক বছরে একবার করে আসে।বিয়ে-থা করলে হয়তো তাও আসবেনা।কিন্তু তার কৌশিক এখনও মায়ের পায়ের উপর শুয়ে আদর খায়।বাবা পার্থ দেখে আর হাসতে হাসতে বলে,"তোমার বড় ছেলে তো এখনও বড় হতেই পারলোনা।ওকে বড় হওয়ার একটু সুযোগ দাও।এর পরে বৌ ঘরে আসলে বলবে,মায়ের আঁচল ধরা ছেলে।"
---বাবা আমি তো বিয়ে করবোনা।আমি সারাজীবন মায়ের ছেলে হয়েই থাকবো। 
    কৌশিকি ওদের কথার মাঝখানে বলে ওঠে, 
---দূর বোকা বিয়ে করবিনা এ কি কথা।আমি ঠাকুমা হবো কি করে?দেখবি তোর বৌ খুব ভালো হবে।তুই আমার এতো ভালো ছেলে আর তোর বৌ ও খুব ভালো হবে।
     শুরু হয় কৌশিকের জন্য মেয়ে দেখা। কিন্তু হঠাৎই কৌশিকির সংসারে ছন্দপতন!ধরা যখন পড়লো কৌশিকির দুটো কিডনিই পুরো নষ্ট।একমাসের মধ্যে কিডনি ট্রান্সফার করতে হবে তার মধ্যে প্রতি সপ্তাহে ডায়ালাইসিস।বারবার পেপারে দিয়েও কিডনি পাওয়া যায়না।কিংশুক বিদেশ থেকে মায়ের অপারেশান হবে শুনে চলে এসছে।
        আজ অপারেশান।কিংশুকই ছুটোছুটি করছে।ধারেকাছে কৌশিককে দেখা যাচ্ছেনা।কিংশুককে দেখে মনেহচ্ছে সে খুবই চাপের মধ্যে আছে।চুল উস্কোখূস্কো চোখের পাতা ভেজা।সকলেই ভাবছে মায়ের জন্য।তারকাছে তার দাদার কথা জানতে চাইলে সবসময়ই সে বলছে দাদা ডাক্তারের সাথে কথা বলছে। 
       অপারেশান ভালোভাবেই হয়ে যায়।আবার খোঁজ পরে কৌশিকের।এবার আর কিংশুক নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,"বাবা টাকার বিনিময়ে মায়ের জন্য কিডনি জোগাড় করতে দাদা পারেনি।ওই অল্প সময়ের মধ্যে কাউকেই পাওয়া যায়নি।দাদাভাই তার একটা কিডনি দিয়ে মাকে বাঁচিয়েছে।আমাকে দিয়ে দিব্যি করিয়ে নিয়েছিলো অপারেশনের আগে আমি যদি মুখ খুলি তাহলে তার মরা মুখ দেখবো।তাই আমি তোমাদের কিছু বলতে পারিনি।বাবা চলো, দাদাভাইকে দেখতে যাই।"
        পার্থ মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলেন।কিংশুক ধরে ফেলে।তখনও কৌশিকির জ্ঞান ফেরেনি।কৌশিক ভালো আছে।বাবা,ভাই যেয়ে তার বেডের কাছে দাঁড়ালে সে বলে,"মায়ের দুধের ঋণ কোনদিন শোধ করা যায়না বাবা।তবুও একটু তো কিছু মায়ের জন্য করতে পারলাম।তোমরা মাকে কিছু বোলোনা।আমি কাল সকালেই মায়ের সাথে গিয়ে দেখা করে আসবো।"
     পার্থর চোখ থেকে অবিরাম ধারায় জল পড়তে থাকে।আর মনেমনে বলতে থাকেন,"তোর যে তোর মায়ের কাছে কোন দুধের ঋণ নেই রে।ভগবান সব আগে থাকতেই ঠিক করে রাখেন।তোর মাকে তুই বাঁচাবি বলেই হয়তো এতো প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও তোকে সেদিন বুকে করে তোর মা বাড়িতে নিয়ে এসেছিলো।তুই পরের জম্মে তোর মায়ের গর্ভেই আসিস বাবা।"পার্থ কাঁদতে কাঁদতে তার আদরের বড় ছেলের মাথায় হাত বুলাতে থাকেন। 
                             শেষ