Friday, September 28, 2018

মায়ের ভালোবাসা
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     বিধান চৌধুরী যখন মারা যান তখন ছেলের উচ্চমাধ্যমিক চলছে।স্বভাবতই পড়াশুনার ক্ষতি হয়।দীর্ঘ দুবছর রোগভোগের পরে তার মৃত্যু সংসারে বিনামেঘে বজ্রপাতের মত হয়ে দাঁড়ায় । চিকিৎসা চলছিল কিন্তু কেউই ভাবেনি এরূপ একটি ঘটনা ঘটবে !সরকারী চাকরির সুবাদে ফ্যামিলি পেনশনের কারনে খাওয়া পরায় মা, ছেলের কোনই অসুবিধা হয়না।মেয়েটির বিয়ে তিনি অসুস্থ্য অবস্থায়ই দিয়ে গেছিলেন।ছেলের রেজাল্ট খুব একটা ভালো না হওয়ায় ছন্দাদেবী বেশ মনঃকষ্ট পেলেন কিন্তু ছেলেকে কিছুই বুঝতে দিলেননা ।
        কিন্তু সুখের বিষয় তার ছেলে রাহুল সরকারী সুযোগেই হোটেল ম্যানেজমেন্টে  পড়ার সুযোগ পেলো।ছেলেকে ছেড়ে থাকতে পারবেননা বলে তিনি নিজের বিশাল বাড়িঘর ছেড়ে ইনস্টিটিউশনের কাছেই দুকামরা ঘর নিয়ে থাকতে শুরু করেন।দেখতে দেখতে তিনটি বছর কেটে গেলো।ক্যাম্পাস থেকেই ছেলে চাকরি পেলো কিন্তু পোষ্টিং বাইরে।ছেলে বেঁকে বসলো মাকে ছাড়া সে কিছুতেই যাবেনা।বিপদে পড়লেন ছন্দাদেবী।স্বামীর ভিটে বিক্রি করতে তার যেমন মত নেই ছেলেও চায়না বাবার সাথে তার ছেলেবেলার স্মৃতি জড়িত এই বাড়ি বিক্রি হোক।অনেক বুঝিয়েও তিনি ছেলেকে রাজি করাতে পারলেননা।ছেলে মাকে বললো,"আমায় ছেড়ে কষ্ট করে হলেও আমার ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে তুমি থাকতে পারলেও আমি পারবোনা তোমায় ছেড়ে থাকতে , আমায় তুমি আর বোলোনা মা।আমার মা একাএকা থাকবে আমি তার কাছে থাকবোনা এটা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনা।রোজ সকালে উঠে তোমার মুখটা দেখতে পাবোনা এটা ভাবলে আমার বুকের ভিতরটা ফাঁকা হয়ে যায় মা।আগেও এটা ছিলো কিন্তু বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে এটা বেশি করে মনেহয়।আমার মন বলে বাবা যেন প্রতিটা মুহূর্তেই আমায় বলেন 'তুই কিন্তু তোর মাকে ছেড়ে কোথাও যাসনা।"ছন্দাদেবী কাঁদতে কাঁদতে দুহাতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন।ছেলেও কাঁদে, মাও কাঁদে!একসময় ঠিক হয় পূণরায় সেই বাড়িভাড়া করেই মা ও ছেলে চাকরির স্থলে থাকবেন।
 
        দুমাস হোল তারা বাড়ির বাইরে।রাহুল প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে মায়ের পায়ের উপর শুয়ে থাকে আর মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।আসলে কি জানো মা,"তোমার হাতের খাবার শুধু নয় তোমার এই আদর, এখনও তোমার হাতের কানমলা এগুলো না পেলে আমার ঠিক ভালো লাগেনা।তাই তো তোমায় ছেড়ে থাকতে পারিনা।"ছন্দাদেবী বলেন, "মা কি কারও সারাজীবন বেঁচে থাকে রে! " রাহুল দুই হাতে ছেলেবেলার মত মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,"আমার মা আমি যতদিন বাঁচবো ঠিক ততদিনই বাঁচবেন।"স্বামীর ছবির দিকে তাকিয়ে দু'চোখ বেয়ে ছন্দাদেবীর জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। ছেলে দেখতে পেয়ে বলে,"মা, আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু তোমার চোখের জল কিছুতেই মানতে পারিনা।বাবার মৃত্যুর পর আমি তোমার সামনে কোনদিনও কাঁদিনি শুধুমাত্র তুমি আমার চোখের জল সইতে পারবেনা বলে।তাই বলে কি বাবার জন্য আমার কষ্ট হয়নি?বুকের ভিতরটা ফাঁকা হয়ে গেছে, সারাটা রাত চোখের জলে বালিশ ভিজেছে কিন্তু তোমাকে ও দিদিকে বুঝতে দিইনি।শুধু তোমরা যাতে শক্ত থাকো।মাগো,তোমার ছেলে সেই আগের মত আর ছোট্টটি নেই সে এখন অনেক বড় হয়ে গেছে ,বলতে পারো বাবা চলে যাবার পর আমার বোধশক্তিটাকে তাড়াতাড়ি বাড়িয়ে দিয়েছেন।" মা স্তব্ধ তার বাইশ বছরের ছেলের কথা শুনে।সেদিনই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন আর কখনোই ছেলের সম্মুখে তিনি স্বামীর জন্য চোখের জল ফেলবেন না।

# নন্দা

No comments:

Post a Comment