Thursday, August 16, 2018

   কেন করলে এমন
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     রক্তিমের পুরনো কাগজ পত্র ঘাটতে ঘাটতে অনেকদিন আগের একটা খাম পায় পূবালী।কিছুটা কৌতুহলবশত খামটা খুলেই হাতের লেখাটা খুব চেনা মনেহয় পূবালীর।আগেই ইতি টা দেখে নেয়। শরীরটা ঠকঠক করে তখন কাঁপছে তার ।তারমানে রক্তিমকে কিংশুক চিনতো।  চিঠিটা পড়তে শুরু করে।
      রক্তিম,
            বন্ধুর থেকেও তুই আমার কাছে আর বেশিকিছু।যে কথা তোকে আজ বলবো সে কথা আর কাউকে বলার আমার সাহস নেই।একমাত্র তুইই জানিস আমি পূবালীকে কতটা ভালোবাসি।বিয়ের দিনক্ষণ ও ঠিক হয়ে গেছে এটাও তোর অজানা নয়।কিন্তু যা তুই জানিসনা সেটাই তোকে আজ লিখে জানছি কারন মুখে বলার সাহস আজ আর আমার নেই।বাড়ির কেউই জানেনা আমার আয়ু আর মাস তিনেক।আমার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে।লাষ্ট স্টেজ।পূবালী আমার সন্তানের মা হতে চলেছে।আমি পূবালীকে আমার অসুখের কথা নিজ মুখে বলতে পারবোনা।আমি ওর সাথে খামোখা খুব খারাপ ব্যবহার করেছি যাতে ও আমায় ভুলে যেতে পারে।বন্ধু, আজ হাত জোর করে তোর কাছে একটা জিনিস চাইবো-আমায় ফিরিয়ে দিবিনা কিন্তু ভাই।আমি তো চললাম।কিন্তু যারা একটু ছায়া পেলে বেঁচে যেতে পারে তুই সেই চেষ্টাটা করিস। অন্যায় আবদার হলেও তোর কাছে ছাড়া পূবালী ও ওর সন্তানকে বাঁচানোর দাবি আর কার কাছে করবো বল?তুই পূবালীকে ওই তারিখেই বিয়ে করিস আর  আমার সন্তানের পিতৃপরিচয়টা দিস।এটা করতে না পারলে ওই জীবন দু' টিই শেষ হয়ে যাবে রে! অনেক আশা নিয়ে তোর কাছে এই কথাটা বললাম।আমি জানিনা আত্মা মানুষের মৃত্যুর পর থাকে কিনা।যদি সত্যিই থেকে থাকে আমার আত্মা শান্তি পাবে তোদের তিনজনকে দেখে।আর একটা কথা কোনদিন তুই এ কথা পূবালীকে জানাবিনা।
                            ইতি হতভাগ্য
                                 কিংশুক
      চিঠিটা পড়া শেষ করে পূবালী সেখানেই বসে থাকে।মনে পড়তে থাকে কিংশুকের বলা শেষ কথাগুলো।এতো ভালোবাসতো কিংশুক আর সে কিনা ওই একদিনের কথাতেই তাকে এতো ঘৃণা করতে শুরু করেছিলো।কিংশুক ঠিকই বলেছিলো সত্যিই আমি ওর ভালোবাসার যোগ্য নই।ভাবতে থাকে পূবালী সাতপাঁচ।ভাবনায় ছেদ পড়ে পিতাপুত্রের হৈ হৈ করে আগমনে।রক্তিম এসে পূবালীকে জিজ্ঞাসা করে,"কি হয়েছে?"সে হাত বাড়িয়ে চিঠিটা তার হাতে দেয়।চিঠিটা হাতে নিয়ে রক্তিম পূবালীর মাথায় হাত রাখে।আর পূবালী রক্তিমকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। 

No comments:

Post a Comment