ফিরে পাওয়া
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
গরীবের ঘরে রূপবতী হয়ে জম্ম নিয়ে আসমানীর জীবনটা আরও বিষাক্ত হয়ে পরে।বস্তির ছোট্ট একটি ঘরে মা ও বাবার সাথে চৌদ্দ বছর ধরে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে ভ্যানচালক আসিকের সাথে প্রেম করে পনের বছরেই ঘর ছাড়ে।বাবা, মা-ও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।অন্তত মেয়ের বিয়েটা দিতে হলনা।
ঘোর কাটে আসমানীর বিয়ের তিন মাসের মাথায়।তিনমাস বেশ ভালোই কাটে তার।তিনমাসের মাথায় এসে সে বুঝতে পারে আসিক একজন চোর।দিনে ভ্যান চালানো আর রাত হলেই অন্যের বাড়িতে চুরি-এটাই তার নিত্য রুটিন।খোদাতালাকে কখনোই সে দোষ দেয়না।দোষ তার কপালের।বাপের বাড়ির অভাবী সংসার ছেড়ে পেট ভরে দুবেলা দুমুঠো খাবারের আশায় সে আসিককে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছিলো।কিন্তু সুখ তো তার কপালে নেই।
কয়েকদিন ধরে শরীরটাও ভালো না।কিছুই খেতে ইচ্ছা করছেনা ,বমি বমি পাচ্ছে।তার রীতিমত ভয়ই করছে। এর মধ্যে যদি একটা বাচ্চা-কাচ্চা পেটে এসে যায় তো আরও বিপদ।না সে মা হতে চায়না।সকলে বলবে চোরের বাচ্চা।মাত্র ষোল বছর বয়সেই আসমানী বাস্তব জীবনটাকে অনেক ভালোভাবে চিনেছে ।
কিন্তু তার সন্দেহই ঠিক।সে মা হতে চলেছে।আসিককে খবরটা দিলে সে খুব খুশি হয়।আসমানী তাকে বলে,
---দেখো চুরি করাটা ছেড়ে দাও।বাচ্চা হলে সবাই বলবে চোরের বাচ্চা।তার থেকে বরং আমি লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ নিই।আমাদের ভালোভাবে চলে যাবে।ধরা পড়ে গেলে তো জেল হাজত হবে।তখন আমার আর বাচ্চাটার কি হবে ভেবে দেখেছো?
---আরে কিচ্ছু হবেনা।এতো বছর ধরে চুরি করছি আজ পর্যন্ত কোনদিন ধরা পড়িনি।তুই চিন্তা করিসনা বৌ,এখন আমাদের অনেক টাকার দরকার।বাচ্চাটাকে মানুষ করতে হবে তো।ওকে আমরা লেখাপড়া শিখিয়ে বড় মানুষ তৈরি করবো।
আসমানীর মন কিছুতেই সায় দেয়না।এখন আসিক আরও দেরি করে বাড়ি ফেরে।কোনদিন কিছু আনতে পারে আর কোনদিন বা সারাটা রাত চেষ্টা করেও কিছুই নিয়ে ফিরতে পারেনা।এবার এক দলের সাথে মিশে শুরু করে ছিনতাই করা।যথারীতি একদিন পুলিশ ধরেও ফেলে।সারাটা রাত উৎকন্ঠা নিয়ে কাটিয়ে কোথাও আসিককের সন্ধান আসমানী পায়না।সপ্তাহ খানেক এভাবে কাটিয়ে আসমানী এক বাড়িতে খাওয়ার ও সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে কাজ নেয়।এইভাবে সে আস্তে আস্তে অনেকগুলো বাড়িতে ঝিয়ের কাজ পেয়ে যায়।মাস গেলে এখন তার হাতে আসে ছ' হাজার টাকা।তার কোনই খরচ নেই কারন সে তিন বেলার খাবার কাজের বাড়ির থেকেই পেয়ে যায়।দেখতে দেখতে সাত আটমাস এভাবেই কেটে যায়।একদিন এক বাড়িতে কাজের সময় তার প্রসব যন্ত্রনা ওঠে।ওই বাড়ির লোকেরাই তাকে হাসপাতাল নিয়ে যায়।হাসপাতালে তার একটি সুন্দর ফুটফুটে ছেলে হয়।আসমানী মুনীবের বাড়ির লোকের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আসিকের জন্য।তখনই সে তার জীবনের করুন পরিণতি ওই বাড়ির লোকের কাছে জানায়।
ঘটনাচক্রে ওই বাড়ির দিদি ছিলেন উকিল।তিনি আসমানীকে কথা দেন আসিককে তিনি খুঁজে বের করবেন।আর আসমানীকে বলেন,"হয়তো সে কোন জেলে বিচার হীন অবস্থায় পড়ে আছে।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কিছুদিন পর সে ওই ছোট্ট বাচ্চাটিকে নিয়েই কাজে বের হয়।সুন্দর চেহারা আর শান্তশিষ্ট ভদ্র আসমানীকে এই অবস্থায় সব বাড়ির থেকেই কাজের ব্যপারে ছাড় দেয়।একদিন ওই উকিল দিদির সাহায্যে আসিকের খবর পেয়ে দিদির সাথেই বাচ্চাটিকে সাথে নিয়ে স্বামীর সাথে দেখা করতে যায়।আসিক এবং আসমানী দুজনেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
---তুই ঠিকই বলেছিলি বৌ,তোর কথা যদি শুনতাম আজ এতোগুলো দিন এই জেলে পড়ে থাকতে হতনা।বাচ্চাটা পুরো তোর মতই সুন্দর হয়েছে।একবার যদি জেল থেকে ছাড়া পাই তাহলে আর কোনদিনও ওই সব খারাপ কাজ করবো না।তুই তোর দিদিকে বলে দেখনা আমায় ছাড়াতে পারে কিনা?
---দিদি তোমায় ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবে।কিন্তু দিদি বলেছে তোমায় চুরি,ছিনতাই এগুলো করা বন্ধ করতে হবে।
---বলছি তো আমি আর কোনদিনও ওমুখো হবোনা।আমাদের এই ফুটফুটে ছেলেটাকে নিয়ে কূলিগিরি করে জীবন কাটিয়ে দেবো।ছেলেটাকে ভালোভাবে মানুষ করবো।
এর কয়েক মাসের মাথায় আসিক জেল থেকে ছাড়া পায় সাথে আরও দুজন।কারন সকলেই ছিলো একই অপরাধে অপরাধী।উকিল দিদির পা ছুঁয়ে শপথ করে আর কোনদিন সে খারাপ কোন কাজ করবেনা।ফিরে আসে তারা তাদের কুঁড়েঘরে।উকিল দিদির সহায়তায় সে একটি প্লাবিং দোকানে কাজ নেয়।মাস গেলে সামান্য যা কিছু সে পায় এনে তুলে দেয় তার আসমানীর হাতে।আস্তে আস্তে সে দোকান মালিকের খুব বিশ্বত্ব হয়ে ওঠে।আসমানী লোকের বাড়ির কাজ আরও বাড়িয়ে দেয়।আগের থেকে অনেক ভালোভাবেই তাদের সংসার চলতে থাকে।আর্থিক অভাব থাকলে সুখ আর স্বস্তির কোন অভাব ছিলোনা।দুঃখের দিনে খোদাতালাকে দোষ না দিলেও সুখের দিনে আসমানী তাকে সুখর জানাতে ভোলেনা।
আস্তে আস্তে এভাবেই দরিদ্র আসমানীর জীবন এগিয়ে চলে।আসমানী এতেই খুব খুশি।ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছে,স্বামীকে সৎ মানুষ হিসাবে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।দুবেলা পেট ভরে খেতে পারছে।আর কি চাই তার জীবনে?জীবনে যা কিছু সে চেয়েছিলো সব কিছুই সে ফিরে পেয়েছে।খোদাতালার কাছে তার আর কোন চাহিদা নেই।
শেষ
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
গরীবের ঘরে রূপবতী হয়ে জম্ম নিয়ে আসমানীর জীবনটা আরও বিষাক্ত হয়ে পরে।বস্তির ছোট্ট একটি ঘরে মা ও বাবার সাথে চৌদ্দ বছর ধরে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে ভ্যানচালক আসিকের সাথে প্রেম করে পনের বছরেই ঘর ছাড়ে।বাবা, মা-ও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।অন্তত মেয়ের বিয়েটা দিতে হলনা।
ঘোর কাটে আসমানীর বিয়ের তিন মাসের মাথায়।তিনমাস বেশ ভালোই কাটে তার।তিনমাসের মাথায় এসে সে বুঝতে পারে আসিক একজন চোর।দিনে ভ্যান চালানো আর রাত হলেই অন্যের বাড়িতে চুরি-এটাই তার নিত্য রুটিন।খোদাতালাকে কখনোই সে দোষ দেয়না।দোষ তার কপালের।বাপের বাড়ির অভাবী সংসার ছেড়ে পেট ভরে দুবেলা দুমুঠো খাবারের আশায় সে আসিককে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছিলো।কিন্তু সুখ তো তার কপালে নেই।
কয়েকদিন ধরে শরীরটাও ভালো না।কিছুই খেতে ইচ্ছা করছেনা ,বমি বমি পাচ্ছে।তার রীতিমত ভয়ই করছে। এর মধ্যে যদি একটা বাচ্চা-কাচ্চা পেটে এসে যায় তো আরও বিপদ।না সে মা হতে চায়না।সকলে বলবে চোরের বাচ্চা।মাত্র ষোল বছর বয়সেই আসমানী বাস্তব জীবনটাকে অনেক ভালোভাবে চিনেছে ।
কিন্তু তার সন্দেহই ঠিক।সে মা হতে চলেছে।আসিককে খবরটা দিলে সে খুব খুশি হয়।আসমানী তাকে বলে,
---দেখো চুরি করাটা ছেড়ে দাও।বাচ্চা হলে সবাই বলবে চোরের বাচ্চা।তার থেকে বরং আমি লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ নিই।আমাদের ভালোভাবে চলে যাবে।ধরা পড়ে গেলে তো জেল হাজত হবে।তখন আমার আর বাচ্চাটার কি হবে ভেবে দেখেছো?
---আরে কিচ্ছু হবেনা।এতো বছর ধরে চুরি করছি আজ পর্যন্ত কোনদিন ধরা পড়িনি।তুই চিন্তা করিসনা বৌ,এখন আমাদের অনেক টাকার দরকার।বাচ্চাটাকে মানুষ করতে হবে তো।ওকে আমরা লেখাপড়া শিখিয়ে বড় মানুষ তৈরি করবো।
আসমানীর মন কিছুতেই সায় দেয়না।এখন আসিক আরও দেরি করে বাড়ি ফেরে।কোনদিন কিছু আনতে পারে আর কোনদিন বা সারাটা রাত চেষ্টা করেও কিছুই নিয়ে ফিরতে পারেনা।এবার এক দলের সাথে মিশে শুরু করে ছিনতাই করা।যথারীতি একদিন পুলিশ ধরেও ফেলে।সারাটা রাত উৎকন্ঠা নিয়ে কাটিয়ে কোথাও আসিককের সন্ধান আসমানী পায়না।সপ্তাহ খানেক এভাবে কাটিয়ে আসমানী এক বাড়িতে খাওয়ার ও সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে কাজ নেয়।এইভাবে সে আস্তে আস্তে অনেকগুলো বাড়িতে ঝিয়ের কাজ পেয়ে যায়।মাস গেলে এখন তার হাতে আসে ছ' হাজার টাকা।তার কোনই খরচ নেই কারন সে তিন বেলার খাবার কাজের বাড়ির থেকেই পেয়ে যায়।দেখতে দেখতে সাত আটমাস এভাবেই কেটে যায়।একদিন এক বাড়িতে কাজের সময় তার প্রসব যন্ত্রনা ওঠে।ওই বাড়ির লোকেরাই তাকে হাসপাতাল নিয়ে যায়।হাসপাতালে তার একটি সুন্দর ফুটফুটে ছেলে হয়।আসমানী মুনীবের বাড়ির লোকের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আসিকের জন্য।তখনই সে তার জীবনের করুন পরিণতি ওই বাড়ির লোকের কাছে জানায়।
ঘটনাচক্রে ওই বাড়ির দিদি ছিলেন উকিল।তিনি আসমানীকে কথা দেন আসিককে তিনি খুঁজে বের করবেন।আর আসমানীকে বলেন,"হয়তো সে কোন জেলে বিচার হীন অবস্থায় পড়ে আছে।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কিছুদিন পর সে ওই ছোট্ট বাচ্চাটিকে নিয়েই কাজে বের হয়।সুন্দর চেহারা আর শান্তশিষ্ট ভদ্র আসমানীকে এই অবস্থায় সব বাড়ির থেকেই কাজের ব্যপারে ছাড় দেয়।একদিন ওই উকিল দিদির সাহায্যে আসিকের খবর পেয়ে দিদির সাথেই বাচ্চাটিকে সাথে নিয়ে স্বামীর সাথে দেখা করতে যায়।আসিক এবং আসমানী দুজনেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
---তুই ঠিকই বলেছিলি বৌ,তোর কথা যদি শুনতাম আজ এতোগুলো দিন এই জেলে পড়ে থাকতে হতনা।বাচ্চাটা পুরো তোর মতই সুন্দর হয়েছে।একবার যদি জেল থেকে ছাড়া পাই তাহলে আর কোনদিনও ওই সব খারাপ কাজ করবো না।তুই তোর দিদিকে বলে দেখনা আমায় ছাড়াতে পারে কিনা?
---দিদি তোমায় ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবে।কিন্তু দিদি বলেছে তোমায় চুরি,ছিনতাই এগুলো করা বন্ধ করতে হবে।
---বলছি তো আমি আর কোনদিনও ওমুখো হবোনা।আমাদের এই ফুটফুটে ছেলেটাকে নিয়ে কূলিগিরি করে জীবন কাটিয়ে দেবো।ছেলেটাকে ভালোভাবে মানুষ করবো।
এর কয়েক মাসের মাথায় আসিক জেল থেকে ছাড়া পায় সাথে আরও দুজন।কারন সকলেই ছিলো একই অপরাধে অপরাধী।উকিল দিদির পা ছুঁয়ে শপথ করে আর কোনদিন সে খারাপ কোন কাজ করবেনা।ফিরে আসে তারা তাদের কুঁড়েঘরে।উকিল দিদির সহায়তায় সে একটি প্লাবিং দোকানে কাজ নেয়।মাস গেলে সামান্য যা কিছু সে পায় এনে তুলে দেয় তার আসমানীর হাতে।আস্তে আস্তে সে দোকান মালিকের খুব বিশ্বত্ব হয়ে ওঠে।আসমানী লোকের বাড়ির কাজ আরও বাড়িয়ে দেয়।আগের থেকে অনেক ভালোভাবেই তাদের সংসার চলতে থাকে।আর্থিক অভাব থাকলে সুখ আর স্বস্তির কোন অভাব ছিলোনা।দুঃখের দিনে খোদাতালাকে দোষ না দিলেও সুখের দিনে আসমানী তাকে সুখর জানাতে ভোলেনা।
আস্তে আস্তে এভাবেই দরিদ্র আসমানীর জীবন এগিয়ে চলে।আসমানী এতেই খুব খুশি।ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছে,স্বামীকে সৎ মানুষ হিসাবে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।দুবেলা পেট ভরে খেতে পারছে।আর কি চাই তার জীবনে?জীবনে যা কিছু সে চেয়েছিলো সব কিছুই সে ফিরে পেয়েছে।খোদাতালার কাছে তার আর কোন চাহিদা নেই।
শেষ
No comments:
Post a Comment