Wednesday, March 29, 2023

সংসার নীতি (moms)

সংসার নীতি

  'মনে যাই থাকুক মুখে ভারি মিষ্টি' - কথাটা বলেই অঞ্জনা মুখটা একটু ভেংচি কাটলেন।
-- আর কী চাই দিদি আমরা তো আর ছেলের বউয়ের কাছ থেকে এর বেশি আশা করতেও পারি না। আজকালকার মেয়েরা কী আর সংসারের যাবতীয় কাজ করে শ্বশুর,শ্বাশুড়ীর যত্নআত্তি করে? করে না দিদি । তারা ঘর বার সমানতালে পা মেলায়। এটা তো তোমাকে স্বীকার করতেই হবে তোমার ছেলের বউ আমার ছেলের বউ অপেক্ষা অনেক ভালো। সে তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।আমার ছেলের বউ সপ্তাহে চারদিন থাকে বাপেরবাড়ি আর তিনদিন আমার বাড়ি। রান্না কিংবা কোন কাজই করে না বললেই চলে। সংসারে শান্তি বজায় রাখতে আর এখনো শরীর চলছে বলেই আমিও কিছু বলি না। আর আমার ছেলেটাও তো তোমার ছেলের মত নয়। সে বউ যা বলবে তাইই বিশ্বাস করে।
-- কী যে বলো না তুমি দিদি? ওই মুখের মিষ্টতাই ! স্কুল থেকে এসেই ঘরে দরজা বন্ধ করে দু'ঘন্টা বিশ্রাম। তখন তাকে ডাকলেই তার মুখ হাড়ি হয়ে যায়।
-- কিন্তু আমরা তো জানি তোমার বউ সকালে রান্না করে রেখে স্কুল যায়, আবার রাতে ফিরেও রান্নাবান্না করে।
-- ওই আর কী? যখন তিনি ঘুমান তখন চায়ের জন্য গলা শুকিয়ে গেলেও তাকে ডাকা যাবে না। তিনি যখন উঠবেন সেই সময় চা করবেন।
-- তা এককাপ চা তো তুমিও করে খেতে পারো।
 সমবয়সী প্রতিবেশী রুবির কথা শুনে অঞ্জনা পুণরায় মুখ ব্যাকান।
 অঞ্জনা এবং রুবির পাশাপাশি বাস প্রায় চল্লিশ বছর ধরে। দুজনে খুব ভালো বন্ধুও বটে! দুজনের দুটি ছেলে। তারাও প্রায় সমবয়সী। ছেলেবেলার থেকেই দু'জনের এক সাথেই বেড়ে ওঠা। অঞ্জনার ছেলে ধীর, স্থীর ,সাংসারিক জ্ঞানবুদ্ধি প্রবল। মায়ের পছন্দ করা চাকুরীজীবী মেয়েকে বিয়ে করেছে। কিন্তু বিয়ের আগে সে মেয়ের সাথে কথা বলে নিয়েছিলো তার মায়ের সাথে কখনোই দুর্ব্যবহার করা যাবে না। ভালোমন্দ মিশিয়ে প্রত্যেকটা মানুষ। মায়ের মধ্যে যেমন মন্দ দিক আছে ঠিক তেমনই অনেক ভালো দিক আছে। মায়ের ভালো দিকগুলি তাকে বললে মা খুশি হবেন কিন্তু খারাপ দিকগুলি যদি তাকে বলা হয় তাতে ঝামেলা বাড়বে বৈ কমবে না। তাই সেক্ষেত্রে সেগুলি যদি আমাকে বলা হয় তাহলে আমি বুঝিয়ে বলতে পারবো মাকে। তাতে ঝামেলা হবে না আর হলেও তা আমার আর মায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সেক্ষেত্রে তিনি পরবর্তীতে নিজেকে সংশোধন করেও নিতে পারবেন।
  শুভদীপের স্ত্রী যথেষ্ঠ বুদ্ধিমতী। সে এসবের ভিতর না গিয়ে একজন দায়িত্বশীল পুত্রবধূর মত রান্নাটা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। কারণ এর থেকে অনেক ঝামেলায় এড়ানো যায় সংসারে। মুখে মিষ্টতা দিয়েই সে শ্বাশুড়ীকে বশ করে ফেলে। মাইনে পেয়ে শ্বাশুড়ীর হাত খরচের জন্য কিছু টাকা তার হাতে গুঁজে দেয়। মনে মনে এতে তিনি ভীষণ খুশি হন। কখনোই শ্বাশুড়ীর নামে স্বামী কিংবা পাড়া প্রতিবেশীর কাছে নিন্দা করে না। উল্টে প্রশংসায় ভরিয়ে দেয়। আর অঞ্জনার এগুলিই কানে আসে। তাই তিনিও আস্তে আস্তে বউয়ের নামে নিন্দা করার স্বভাবটা অনেকটাই কমিয়ে ফেলেন। কারণ তিনি পাড়ায় যেখানেই যান শোনেন তার বৌমা তার নামে সর্বত্র প্রশংসা করে বেরিয়েছে। নিজের প্রশংসা শুনতে কে না ভালোবাসে?
   সংসারটা হচ্ছে একটা বড় রাজনীতির জায়গা। দেশ চালনার মত এখানেও রাজার নীতি চলে। নিজের বুদ্ধি,বিবেক দিয়ে সংসারের নীতি চালাতে পারলে সংসারে কোনোই অশান্তি থাকে না। সে ক্ষেত্রে একটু ত্যাগ স্বীকার করতেই হয়।

No comments:

Post a Comment