Friday, March 17, 2023

একদিন ভালোবাসবে (৩৯ পর্ব)

পরদিন সকালে অসিত চা খেতে নিচুতে নামলে অঞ্জলী বললেন,
-- হ্যাঁরে অতু, আজ কি তোকে অফিসে যেতেই হবে?
-- কেন মা ?
-- কালই তো কুহু চলে যাবে। তাই ভাবছিলাম আজ সবাই মিলে একটু ঘোরাঘুরি করে হোটেলে খেয়ে ফিরবো। 
-- হ্যাঁ মা, আজকে আমাকে যেতেই হবে। তোমরা ঘুরতে যাও না সবাই।
  অসিতের আজ অফিসে না গেলেই নয়। ইচ্ছা তো করছে আগামীকাল শ্রাবণী চলে যাবে তার সাথে কিছুটা সময় কাটাতে। কিন্তু উপায় নেই।
-- তাহলে ঘোরাটা বাদ থাক। তুই ফিরে আসার পর সবাই মিলে চল বাইরে খেয়ে আসি।
-- হ্যাঁ এটা হলে আমার অসুবিধা হবে না।
-- তাহলে একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরোস। বাড়িতে এসে ফ্রেস হয়ে সবাই মিলে যাবো।
   অসিত টিশার্টটা অফিসে পরে যাবে বলে বের করে রেখেছিল। কিন্তু বাইরে যখন খেতে যাবে তখন পরবে মনে করে আর সেটা পরে না। অফিস থেকে সে বিকেলের মধ্যেই চলে আসে। শ্রাবণীকে ডেকে অঞ্জলী একটা ভাগলপুরী সিল্কের শাড়ি দিয়ে বলেন,
-- তুই আজকে এটা পরবি আর এটা আমার ব্লাউজ। দেখতো গায়ে দিয়ে। আমার একসময় তোর মতই স্বাস্থ্য ছিল। আশাকরি তোর হয়ে যাবে। এখন থেকে মাঝে মধ্যে একটু শাড়ি পরার অভ্যাস করতে হবে। কিছু ব্লাউজ বানিয়ে নিবি।
-- মা, আমি তো শাড়ি পরে হাঁটতেই পারি না। হাসপাতালে অনেক উঁচু করে শাড়ি পরি। সবাই হাসাহাসি করে তা দেখে।
-- আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে।
 অঞ্জলী শাড়ি,ব্লাউজ,সায়া দিয়ে মেয়েকে বললেন,
-- যা রেডি হয়ে নে। আজ আর কেউ টিফিন করবো না।অসিতও চা খেয়ে উপরে চলে গেছে। সেও বললো 'কিছু খাবে না' -।
 শ্রাবণী মায়ের দেওয়া জিনিসগুলি নিয়ে উপরে চলে গেলো। যখন সে প্রস্তুত হয়ে নিচুতে এলো অন্য তিনজন তার দিকেই তাকিয়ে। অঞ্জলী বললেন,
-- শাড়ি পরে তোকে পুরো লক্ষী প্রতিমার মত লাগছে।
-- কী যে বলো না মা
-- তোর মা ঠিক কথাই বলেছেন রে কুহু। সত্যিই তোকে দেখতে লক্ষী প্রতিমার মতই লাগছে।
 কথাটা বলেই তিনি ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখেন সে একদৃষ্টিতে শ্রাবণীর দিকেই তাকিয়ে আছে। বাবার কথা তার কানেও গেলো না। অরুণাভ ছেলের কাঁধটা ধরে বললেন,
-- চল এবার দেরি হয়ে যাচ্ছে তো
 সম্বিৎ ফিরে অসিত গাড়ির চাবিটা নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। ওর মনেহল বাবা সবটাই যেন টের পেয়ে গেছেন। অঞ্জলী ও অরুণাভ গাড়ির পিছন সিটে বসে পড়লেন। শ্রাবণীও পিছনে উঠতে গেলো। কিন্তু অরুণাভ ওকে বললেন,
-- ওরে মা তুই সামনে বোস। পিছনে গাদাগাদি করে যাওয়ার কোন মানে হয় না। 
-- না আমি সামনে বসবো না বাবা। তুমি এসে সামনে বসো! আমি আর মা পিছনে বসছি।
-- এই বুড়ো ছেলেটাকে আবার নামাবি? ঠিক আছে এখন বোস আসবার সময় আমি সামনেই বসবো।
  কিন্তু শ্রাবণী সামনে বসার পর অসিত যখন তাকে সিট বেল্টটা বাঁধতে বললো শ্রাবণী পড়লো অস্বস্তিতে। প্রথমে সে বেলটটাকে অনেক টেনেও সামনে আনতে পারলো না। অসিত তাকে সাহায্য করলো। তারপর সেতো সেটা লাগাতেই পারে না। পিছন থেকে অরুণাভ বিষয়টা লক্ষ্য করে বললেন
-- অসিত গাড়িটা একটু সাইড করে বেল্টটা ঠিক করে লাগিয়ে দে।
 বাবার বলতে দেরি হল তো অসিতের গাড়ি সাইড করতে এক সেকেন্ডও সময় লাগলো না। নিজের সিটবেল্টটা খুলে শ্রাবণীর দিকে এগিয়ে আসলো। প্রথমেই সে শ্রাবণীর মুখের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলো। শ্রাবণী মুখটা সঙ্গে সঙ্গেই ঘুরিয়ে নিলো। শ্রাবণীর সিটবেল্টটা লাগিয়ে নিজেরটা ঠিক করে আবার গাড়িতে স্টার্ট দিলো।
 অসিত মনেমনে বেশ খুশিই হল। যাক বাবা ব্যাপারটা বুঝেই এটা ম্যানেজ করলেন বোধহয়।  অসিত গাড়ি চালাতে চালাতে বারবার আড়চোখে শ্রাবণীকে দেখছে। অসিতের এই আড়চোখে দেখাটাই শ্রাবনীকে অস্বস্তিতে ফেলছে বারবার। নানানভাবে অসিতকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও সে বারবার হেরে যাচ্ছে। আর এখন তো বাবাও মনেহচ্ছে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। তাই ছেলের হয়ে কিছু কাজ তিনিও করছেন। কিন্তু শ্রাবণী কিছুতেই অসিতকে মেনে নিতে পারছে না।
   গাড়ি এসে একটি বড় হোটেলের সামনে থামলো। কিন্তু আবার সেই সমস্যা। টানাটানি করেও শ্রাবণী বেল্ট খুলতে অপারগ হয়। অসিত এবারও ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি নিয়ে শ্রাবণীর গা ঘেঁষে বেল্ট খুলে দিয়ে খুব আস্তে করে বলে,
-- এবার তো এগুলো শিখে নিতে হবে আস্তে আস্তে।
-- এগুলো আমার জীবনে কোন কাজে আসবে না। তাই শিখেও কোন লাভ নেই।
-- কে বললো কাজে আসবে না? সব কাজে আসবে। 
 শ্রাবণী কোন উত্তর না দিয়ে এগিয়ে গেলো বাবা,মাকে jঅনুসরণ করে।
 অসিত গাড়ি পার্ক করে সকলের সাথে গিয়ে বসলো। অরুণাভ এবং অঞ্জলী তখন দু'জনেই বেসিনের কাছে হাত ধুতে গেছেন। এই ফাঁকে অসিত শ্রাবণীর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
-- তোমায় আজ খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। আচ্ছা আমি যে তোমার দেওয়া টিশার্টটা পরেছি কেমন লাগছে বললে না তো?
-- আচ্ছা আপনি এত কথা আমার সাথে কেন বলেন? আর আপনার এই কথাগুলোর উত্তর আমার দিতেও ইচ্ছা করে না।
 -- আগে বলো তুমি কেন আমার সাথে এরকম ব্যবহার করো?
-- সত্যিটা জানলে আপনার ভালো লাগবে না।
-- কী সত্যি? ভালো না লাগলেও শুনতে চাই। বলো কী সেই সত্যি?

ক্রমশ
    

No comments:

Post a Comment