Tuesday, March 21, 2023

একদিন ভালোবাসবে (৪৩ পর্ব)

একদিন ভালোবাসবে (৪৩ পর্ব)

  রাতের খাবার খেয়ে শ্রাবণী যখন উপরে উঠে অসিত তখন তার ঘরে।শ্রাবণী ঘরে ঢুকেছে বুঝতে পেরেই অসিত শ্রাবণীর ঘরে গিয়ে দেখে ওষুধের স্ট্রিপ দাঁতে চেপে সে ট্যাবলেট বের করার চেষ্টা করছে। সঙ্গে সঙ্গে সে এগিয়ে গিয়ে বলে,
-- সবটাতেই এত পাকামো কেন করো? ডাকলেই তো পারতে আমাকে। দাও দেখি আমি খুলে দিচ্ছি।
  শ্রাবণী ওষুধটা খোলার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেখে অসিত ওর মুখ থেকে ওটা টেনে নিয়ে ওষুধটা বের করে হাতে দিয়ে বলে,
-- কী ধাতুতে তুমি গড়া আমার জানা নেই। আরে বাবা! আমি মানুষটা তোমার কাছে খুব খারাপ আমি জানি। কিন্তু এখন তো তুমি অসুস্থ্য। বাড়িতে যখন আছি এটুকু সাহায্য তো করতেই পারি তোমাকে।
-- আপনি কাল থেকে আমার জন্য অনেক করেছেন। দয়া করে এসব করতে এসে আমাকে আর বিব্রত করবেন না।
-- তুমি দেখতে যত সুন্দর তোমার মুখের কথাগুলো ঠিক ততটাই খারাপ। কই আমার সাথে ছাড়া আর কারও সাথে তো এরকম ভাবে কথা বলো না।
-- এসব কথার উত্তর দিতে গেলে আবার সেই পুরোনো কথা টেনে আনতে হবে। 
-- তোমায় একটা অনুরোধ করি। যতদিন তোমার প্লাস্টার না খুলছে ততদিন আমি বাড়ি থাকাকালীন সময়ে তোমার এই ছোটখাটো কাজগুলি আমায় করতে দিও।
-- কিন্তু কেন? এগুলো আমি নিজেই করে নিতে পারবো। আপনাকে করে দিতে হবে না।
-- তুমি করে নিতে পারবে সেটা আমিও জানি। মনে কর এটা আমার তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা -
-- বুঝলাম না , আমার প্রতি আপনার কিসের কৃতজ্ঞতা? আপনি যদি মনে করেন এসব করে আমার কাছাকাছি আসতে পারবেন তাহলে বলবো - আপনার এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল 
-- আমার সম্পর্কে তোমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল! বাবার কথা বলবো না কারণ তিনি তোমাকে মেয়ের জায়গাটাই দিয়েছেন। আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ তার কারণ হচ্ছে আমার মায়ের সুস্থতা। আমরা কলকাতা শহরের অনেক বড় বড় ডাক্তার মাকে দেখয়েছিলাম। ভেলোর, চেন্নাই কোথাও বাদ দিইনি। কিন্তু মাকে সুস্থ করতে পারিনি। আমরা তাকে সুস্থ করার আশা ছেড়েও দিয়েছিলাম। এখন মনেহয় তোমার আমাদের বাড়িতে আসা ঈশ্বরের আশীর্বাদ। হয়ত তাকে সুস্থ করতে তোমাকে কোন পরিশ্রম করতে হয়নি কিন্তু তোমার উপস্থিতিই আমার মাকে আগের মত করে আবার ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ।
-- বাব্বা! অনেক কিছু ভেবেছেন তো?
-- আসলে এই যে তুমি সব সময় এই বাড়ির প্রতি তোমার কৃতজ্ঞতা জানাও এটা শুনতে আমার একদম ভালো লাগে না। এইটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তোমার প্রতি আমাদেরও যে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত সেটা মাথায় আসলো। কোনদিন কোন ব্যাপার নিয়ে আমি এত মাথা ঘামায়নি। ছোটবেলার থেকে মাকে খুব কম সময়ই কাছে পেয়েছি। প্রথম দিকে তো সবই ঠিক ছিল। কিন্তু দিদির মৃত্যুর পর সবকিছুই বদলে গেলো। পড়াশুনার জন্য অধিকাংশ সময় বাইরে কাটিয়েছি। বাড়িতে ফিরে সেই আগের মত মাকে কখনোই পাইনি। কিন্তু তুমি এসে এই বদলে যাওয়া বাড়িটাকে ঠিক আগের মত করে দিয়েছো। মানে তোমার উপস্থিতিই সবকিছু ঠিক করে দিয়েছে। হ্যাঁ প্রথম দিকে তোমার সাথে আমি খুব দুর্ব্যবহার করেছি। বলতে একটুও বাঁধা নেই আস্তে আস্তে তোমায় আমি ভালোও বেসে ফেলেছি। আমার মনে যা মুখেও আমি তাই প্রকাশ করি। আমি মনের কথা চেপে রাখতে পারি না সকলের মত।
-- আজ কেন বলছেন এসব কথা? আমার এগুলো শুনে কী হবে?
-- না, এ কথাগুলো শুনে তোমার কিছু হবে না সেটা আমিও জানি। কিন্তু এই কারণেই বলা তোমার অজান্তেই তুমি আমাদের অনেক উপকার করেছো। তাই কথায় কথায় ওই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাটা বন্ধ করো। ভালো লাগে না শুনতে আর। তোমার এই অসুস্থতার সময়ে তোমার জন্য কিছু করতে পারলে অন্তত কিছুটা ঋণ তো শোধ হবে। 
 শ্রাবণী সে কথার কোন উত্তর খুঁজে পেলো না। তাই সে চুপ করেই থাকলো। অসিত আবারও বললো,
-- কথা বলতে বলতে অনেকটা রাত হয়ে গেলো। এবার ঘুমিয়ে পরও। তবে দরজাটা বন্ধ কোরো না। না,না ভয় নেই। আমি অতটা অমানুষ নই। আসলে তোমার এই অবস্থায় কখন কী দরকার পড়ে তাই বললাম। আর আমি যতদূর জানি এই ওষুধগুলোর মধ্যে তোমার ঘুমের ওষুধও আছে। স্বভাবতই সকালে ঘুম ভাঙতে দেরি হবে। মা তো উঠেই উপরে চলে আসবেন তোমার খবর নিতে। ডাকলে তোমার ঘুমের ব্যাঘাত হবে আর তুমি না উঠলে মায়ের টেনশন হবে। তাই বলছি দরজাটা খোলা থাক। 
 অসিত 'শুভ রাত্রি' জানিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। শ্রাবণী আজ এক অন্য অসিতকে দেখতে পেলো।
 
  সকালে সত্যিই শ্রাবণীর ঘুম ভাঙতে দেরি হল। অসিত ঠিকই বলেছিল ভোরবেলা উঠেই অঞ্জলী উপরে শ্রাবণীর ঘরে ঢুকে দেখলেন সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তিনি তাকে না ডেকেই ছেলের ঘরে গিয়ে দেখলেন সে উঠে পরেছে। অঞ্জলী জানতে চাইলেন,
-- আজ অফিস বেরোবি তো?
-- হ্যাঁ মা। এখন একদম কামাই করতে পারবো না। গতকাল অনেক বুঝিয়ে ছুটি ম্যানেজ করেছি। 
-- না,না আমি তোকে অফিসে যেতে বারণ করেছি না। বলছি কী মেয়েটার শরীর তো খারাপ তুই আর ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করিস না। 
 অসিত অবাক হয়ে মায়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
-- এখন তো আমি ওকে আর কিছু বলি না। কিন্তু তুমি একথা কেন বলছো?
-- না,এমনিই বললাম। তুই তো খুব কাটকাট কথা বলিস তাই বললাম আর কী!
 অসিত অবাক হয় মায়ের এই কথায়। ও এখনো ধন্ধে রয়েছে মায়ের পুরনো কথা সব মনেপড়ে গেছে কিনা। কিন্তু যতদিন না মা নিজের মুখ থেকে কিছু বলছেন ততদিন পর্যন্ত ওকে আর বাবাকে চুপ থাকতেই হবে।

 গতকাল রাত থেকেই শ্রাবণীর বারবার মনে পড়ছিল আজ তার জন্মদিন। কয়েক বছর ধরে এই দিনটার কথা সে ভুলেই বসে ছিল। মা কিছু না করলেও একবাটি পায়েস করে তাকে দিতেন। আর আসনে বসিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে আশীর্বাদ - ব্যাস এটুকুই ছিলো শ্রাবণীর জন্মদিন পালন। কিছুক্ষণ পুরনো কথা মনে করে নিজের চোখ দু'টি মুছে সে নিচুতে নেমে গিয়ে দেখলো অসিত অফিসের যাবে বলে রেডি হয়ে টেবিলে খেতে বসেছে। শ্রাবণী নামার সাথে সাথে অঞ্জলী লতিকাকে তার চা ও ব্রেকফাস্ট দিতে বললেন। শুনেই শ্রাবণী বললো,
-- মা,আগে চা টা খাই একটু পরে ব্রেকফাস্ট করছি।
 অসিত খেতে খেতে মুখটা তুলে বললো,
-- ওষুধটা খেতে তাহলে দেরি হয়ে যাবে। চায়ের সাথে অন্তত একটা পাউরুটির পিস খেয়ে ওষুধটা খেয়ে নাও। বলেই পকেট থেকে সকালের তিনটি ওষুধ বের করে টেবিলের উপর রাখলো। সেই মুহূর্তে অঞ্জলী ওখানে না থাকায় শ্রাবণী খুব আস্তে আস্তে বললো,
-- এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?
 অসিত হেসে পড়ে উত্তর দিলো,
-- হলে হচ্ছে আমার কিছু করার নেই।
 শ্রাবণী রাগে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু সেই মুহূর্তে সেখানে অঞ্জলী চলে আসেন চা ,পাউরুটি টোস্ট,ডিম কলা নিয়ে। শ্রাবণী চুপ করে যায়। অসিতের দিকে তাকিয়ে দেখে সে মুচকি মুচকি হাসছে।এটা দেখে শ্রাবণীর রাগে সর্বশরীর জ্বলে যাচ্ছে তখন।

ক্রমশ 
    

No comments:

Post a Comment