Monday, March 27, 2023

একদিন ভালোবাসবে (৫০ পর্ব)

 একদিন ভালোবাসবে (৫০ পর্ব)

  রাত তখন গভীর। হঠাৎ অসিতের ঘুম ভেঙে যায়। অসিত তখনও শ্রাবণীর কোলের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে। তাকিয়ে দেখে শ্রাবণী সেই একইভাবে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে। অসিতের নিজের উপর নিজেরই রাগ হল। 'ইসস মেয়েটাও তো সুস্থ্য নয়। এতটা জীদ করা তার উচিত হয়নি। শ্রাবণী ওর এই অসুস্থতার জন্য সম্পূর্ণ আবদার মেনে নিয়েছে। কতটা ভালো বাসলে মানুষ এটা করতে পারে?' অসিত শ্রাবণীর কোলের উপর থেকে উঠে পড়ে। শ্রাবণী জেগে গিয়েই অসিতের কপালে হাত দিয়ে দেখতে যায় আর ঠিক তখনই অসিত শ্রাবণীর হাতটা তার কপালের উপর চেপে ধরে বলে,
-- এত চিন্তা তোমার আমাকে নিয়ে কেন আমি বুঝি না ভাবো? না আমার আর জ্বর আসেনি। আসবেও না আর। এবার তুমি নিজের বিছানায় গিয়ে শোও।
 শ্রাবণী উঠে দাঁড়াতে গিয়ে হঠাৎ করেই পড়ে যেতে যায়। বসা অবস্থাতেই অসিত ওকে ধরে ফেলে। শ্রাবণী অসিতের বুকের উপর গিয়ে পড়ে। অসিত ওকে দু'হাতে ঝাপটে ধরে খাটের উপর শুয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে শ্রাবণী উঠতে গেলে অসিত বলে,
-- একবার মুখে বলো না ভালোবাসো আমায়!
 শ্রাবণী ওর দিকে তাকিয়ে আছে গভীর দৃষ্টিতে। অসিত ওকে আরও জোড়ে বুকের সাথে চেপে ধরে। হঠাৎ শ্রাবণীকে বুকের উপর থেকে নিচুতে নামিয়ে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দেয়। শ্রাবণী ওকে বাঁধা দেয় না। শ্রাবণীর বুকের ভিতর তখন তোলপাল করছে। তার শরীর মন তখন অন্যকিছু চাইছে। অসিত পাগলের মত শ্রাবণীর ঠোঁটদুটি নিয়ে তখন খেলছে। শ্রাবণীও অসিতের শরীরের পরিবর্তনের স্পর্শ নিজের শরীরে টের পাচ্ছে। বেশ কয়েক মিনিট পর অসিত বলে,
-- আমাকে একটুও আদর করতে তোমার ইচ্ছা করছে না? তুমি কি পাথর?
 শ্রাবণীর দৃষ্টি তখন আরও গভীর হয়। সে অসিতের গভীর দৃষ্টির সাথে নিজের দৃষ্টি মিলিয়ে হঠাৎ করেই অসিতের বুকের উপর ছোট্ট একটা চুমু করে বলে,
-- এত কিছু বোঝেন আর এটা বোঝেন না আপনার উপরে আমার যতই রাগ থাকুক না কেন যতবার আমায় কাছে টেনেছেন কোনোবার আমি বাঁধা দিইনি কেন? মুখে যাই বলি না কেন এই কাছে টানা,এই ভালোবাসা কিংবা আদর করা যদি আমার ভালো না লাগতো আমি কি এটা এলাও করতাম? 
 অসিত এ কথা শুনে নিজের দু'হাত শ্রাবণীর গলার নিচে থেকে দিয়ে ওকে উচু করে টেনে নিজের ঠোঁটের কাছে ওর ঠোঁট নিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে শ্রাবণী দু'হাতে ওর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু করে। অসিত তখন ওর চোখ,নাক, কপাল,গলা সমস্ত জায়গায় চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেয়।
-- পাগলী একটা! ভালোবাসো এত অথচ মুখে বলতে পারোনি। আমায় শুধু কষ্টই দিয়েছো। আজ ঠিক যেভাবে আমায় তুমি জড়িয়ে আছো আর আমিও তোমায় জড়িয়ে আছি এইভাবেই আমরা সারাজীবন দু'জন দু'জনকে জড়িয়ে রাখবো।
-- কিন্তু বাকি রাতটুকু তো একটু ঘুমাতে হবে। এখন ছাড়লে হত না।
 অসিত পুণরায় ওকে মুখের সর্বত্র পাগলের মত চুমু করতে করতে বলে,
-- একদম ছাড়তে ইচ্ছা করছে না তোমায়। কোনদিন যদি এই রাত আর ভোর না হত তাহলেই ভালো হতো।
 -- বুঝলাম। এবার তো ছাড়ুন।
-- ছাড়ুন নয় ছাড়ো বলো।-
শ্রাবণী হাসতে হাসতে বলে,
-- হু ছাড়ো। এতক্ষণ পরে মনে পড়লো আমার তো হাতে ব্যথা ছিল। কিন্তু --
-- ম্যাজিকের মত ভ্যানিশ হয়ে গেছে আমায় জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে।
-- সত্যিই পাগল একটা!
 অসিত হাসতে হাসতে ওকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু শ্রাবণীরও কি অসিতের বাহুবন্ধন ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছে? না, মোটেই না। তবুও সে উঠতে চেষ্টা করতেই অসিত পুণরায় তাকে বুকের উপর চেপে ধরে বলে,
-- আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একবার বলো 'ভালোবাসো আমায়।'
-- এর পরেও -
-- হ্যাঁ একদম এর পরেও - । আমি তো অনেকবার বলেছি তোমায় ভালোবাসি। কিন্তু শুনতে কেমন লাগে সেটা তো জানি না। তাই একবার শুনতে চাইছি -।
 শ্রাবণী অসিতের চুলগুলো নাড়িয়ে দিয়ে সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-- ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি অনেক আগে থেকেই । কিন্তু নিজেই বুঝতে পারিনি। বুঝলাম নিজে অসুস্থ্য হওয়ার পর। প্রতিদিন রাতে ঘরে গিয়ে একটা অপেক্ষা কখন আপনি আসবেন, আমার সাথে কথা বলবেন, আপনার ভালোবাসার কথা আমায় জানাবেন।
-- আবার আপনি ?
-- সরি,সরি 
-- সত্যি বলছো?
--- সত্যি,সত্যি,সত্যি। এক একটা সেকেন্ড,মিনিট আমার কাছে ঘণ্টার পর ঘন্টা মনে হত। তখনই বুঝতে পেরেছি ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। গতকাল রাতে যখন তুমি আমার ঘরে এলে না খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। চোখের থেকে জল পড়ে গেছিলো অভিমানে নিজের অজান্তেই। সারাটা রাত ঘুমাইনি। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি তোমার দরজা বন্ধ। তুমি তো শুধু আমার মুখের কথাই শুনতে। মনের কথা বুঝতে না -
-- না,বললে কী করে বুঝবো পাগলী?
-- অনেক হয়েছে। এবার ছাড়ো। কিন্তু যতদিন মা নিজের থেকে কিছু না বলছেন আমি কিন্তু বাবা,মায়ের সামনে আপনিই বলবো। 
-- আবার কবে বাড়ি যাবে তুমি ? এবার তো আরও বেশি কষ্ট হবে আমার।
-- না, রোজ ফোনে কথা বলবো। আর কষ্টের কথা বলছো? ওটা বুঝি তোমার একার হবে? আমার হবে না?
 শ্রাবণী অসিতের কপালে একটা গাঢ় চুম্বন করে বলে,
-- রাত শেষ হতে চললো। এবার শুয়ে পরও। সকাল আটটায় ওষুধ আছে।
 অসিত শ্রাবণীকে ছেড়ে দিলো। শ্রাবণী উঠে তার খাটের উপর গিয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণের মধ্যে দু'জনেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

ক্রমশ 
 

    

No comments:

Post a Comment