Wednesday, March 8, 2023

একদিন ভালোবাসবে (২৪ পর্ব)

একদিন হঠাৎ অসিত অফিস থেকে ফেরার পথে শ্রাবণীর জন্য একটা ফোন কিনে আনে। নিজে দিতে সাহস পায় না। সে ফোনটা নিয়ে বাবার ঘরে ঢোকে। বাবাকে গিয়ে বলে,
-- বাবা, এই ফোনটা কিনে আনলাম। ওকে দিয়ে দিও কিন্তু আমার নাম বোলো না। তুমি কিনে এনেছো বোলো।
 অরুণাভ আজ কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছেন তার ছেলের ভিতর পরিবর্তন। এখন আর যখন তখন কুহুর উপর চড়াও হয় না। বরং তিনি লক্ষ্য করছেন সে কুহুর প্রতি খুব কেয়ারিং হয়ে উঠেছে। তিনি মনেমনে একটু হাসলেন এবং বেশ গম্ভীর হয়ে ছেলেকে বললেন,
-- আমি কেন? তুই এনেছিস তুইই দিয়ে দে। তবে ও ফোন নেবে বলে আমার মনেহয় না। এর আগে ওকে আমি অনেকবার বলেছি ফোনের কথা কিন্তু ওর সেই এক কথা।'তোমরা ছাড়া আমার কেউ নেই সুতরাং ফোনের দরকার আমার নেই।'
-- নানান প্রয়োজনে বাইরে যায় এখন ফোন একটা ভীষণ দরকার সকলের।
-- ওতো ঘরেই আছে যা তুই গিয়ে দিয়ে দে -
-- ওরে বাবা! তুমি গিয়ে দাও। আমার নাম কোরো না। যা মেজাজ ওর।
 অরুণাভ একটু হাসলেন। তারপর বললেন,
-- মেজাজটা হওয়া কী স্বাভাবিক নয়? ওর কথা শোনার থেকে তুই যে সব কটূক্তি করেছিস ওর সম্মন্ধে আর সামনাসামনি যা দুর্ব্যবহার করেছিস তা কি এত সহজে ও ভুলতে পারবে? আর কেনই বা তোর কিনে দেওয়া ফোন নেবে ও? তুই কি ওর পছন্দ করে কেনা জামাটা আজও গায়ে দিয়েছিস?
-- ওঃ ওটা তো আমি ভুলেই গেছি তাই পারিনি। ও একদিন মনে থাকলে ঠিক পরে নেবো। তোমার কথা শুনে আমার মনেহচ্ছে তারমানে আমি ফোনে তোমায় যে সব কথা বলতাম তুমি সব কথা ওর সাথে শেয়ার করতে?
-- সব কথা না হলেও কিছু কিছু তো আমাকে বলতেই হত। কারণ তুমি এসে কোন মূর্তি ধারণ করবে সেটা তো তাকে একটু হিনস দিয়ে রাখতে হবে।

 বাবার কথায় অসিত ঠিক খুশি হতে পারলো না। কিন্তু অরুণাভর তা চোখ এড়িয়ে গেলো না। কারণ এই বয়সটা তিনিও পার করে এসেছেন।তিনি বেশ মজা পাচ্ছেন ছেলের এই পরিবর্তনে। তিনি বুঝতে পারছেন ছেলে একটু একটু করে তাদের কুহুর প্রতি দুর্বল হচ্ছে। তিনিও তো তাই চান। এত ভালো একটি মেয়ে যদি তার পুত্রবধূ হয় তাহলে মন্দ হবে না। 
--- আচ্ছা মোবাইলে নতুন সিম ভরে রেডি করে দিয়েছিস?
-- হ্যাঁ আমি সব রেডি করে দিয়েছি। বাড়ির ল্যান্ড লাইন সহ আমাদের সকলের নম্বর সেভ করে দিয়েছি।
-- তোরটাও সেভ করেছিস?
-- হ্যাঁ করেছি
-- তোরটা না করলেও পারতিস। তোকে ও কোন প্রয়োজনেই ফোন করবে না।
 অরুণাভ ইচ্ছা করেই কথাটা বললেন ছেলের রিপারকেশনটা দেখার জন্য।
 অসিত বাবার এই কথাটাতে খুশি হতে পারলো না। কিন্তু বাবাকে বললো,
-- আমি অফিসে থাকি যদি কখনো তোমাদের কারো শরীর খারাপ হয় তখন প্রয়োজন হতে পারে সেই মনে করে আমার নম্বরটা সেভ করেছি।
-- আমি ওকে যতদূর এ কটাদিনে চিনেছি ও ভাঙবে তবু মচকাবে না।
 অসিত ফোনটা বাবার সামনে রেখে বললো,
-- দিয়ে দিও তোমার নাম করে।

  রাতে খাবার টেবিলে অরুণাভ ফোনটা কুহুর হাতে দিয়ে বললেন,
-- এটা তোর। দেখ তো কেমন হয়েছে?
-- কিন্তু বাবা আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম আমার কেউ নেই যার সাথে আমি ফোনে কথা বলবো।
 হঠাৎ করেই অসিত বলে উঠলো,
-- কেউ নেই আমরা তো আছি। আমাদের সাথে কথা বলবে।
 কথাটা বলেই অসিত বুঝতে পারলো এই কথাটা বলা বোধহয় উচিত হল না। তাই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
-- না,আমি বলছিলাম তুমি তো এখন নানান কারণে বাইরে বাইরে থাকো। বাবা,মায়ের তো একটা চিন্তা হয়। তারা প্রয়োজনে তোমার সাথে কথা বলতে পারবেন।
 অরুণাভ বুঝতে পারেন ছেলের প্রেস্টিজ বানচাল হচ্ছে কুহুর সামনে। তিনি ছেলেকে সমর্থন করে বলে ওঠেন,
-- একদম ঠিক বলেছিস খোকা। তোর সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। সত্যিই তো তুই বাইরে গেলে আমাদের তো চিন্তা হয়। অথচ যোগাযোগ করার কোন পথ থাকে না। তোর মা চিন্তায় ঘর , উঠোন করে। ফোনটা তোকে রাখতেই হবে। কী বলিস খোকা?
 অরুণাভর চোখে মুখে দুষ্টু হাসি। অসিত ক্যাবলার মত বাবার দিকে তাকিয়ে মুখে কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নাড়িয়ে 'হ্যাঁ' জানালো।
 শেষমেস অঞ্জলীর হস্তক্ষেপে শ্রাবণী ফোনটা নিতে বাধ্য হয়। অসিত আস্তে আস্তে শ্রাবণীর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে সে নিজেও বুঝতে পারছে। তার পূর্বের ব্যবহারের জন্য এখন সে অনুতপ্ত। কিন্তু সে কথা বলতে গেলে শ্রাবণী সব সময় যেন খড়গ হস্ত। এখন মাঝে মাঝেই আসা যাওয়ার পথে পর্দার ফাঁক দিয়ে সে শ্রাবণীকে লক্ষ্য করে দেখে হয় সে তার পড়ার টেবিলে নতুবা জানলা দিয়ে আনমনা হয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। এখন দেখলে তাকে খুব মায়া হয় আগে যেটা রাগ হত।
 শ্রাবণী সেই লোডশেডিংয়ের ঘটনার পর থেকে পারতপক্ষে অসিতের সামনে আসে না। নানান ছুতো করে সে অসিতকে এড়িয়েই চলে। কিন্তু ডিনার টেবিলে তো দেখা হবেই। যদিও অসিত এখন তাকে কিছু বলে না কিন্তু তবুও সে অসিতকে এড়িয়ে চলতেই ভালোবাসে। কিন্তু অরুণাভ ছেলের আড়চোখে তাকানো দেখে ঠিক বুঝতে পারেন তার খোকা প্রেমে পড়েছে।আর এতে তিনি বেশ খুশিই হন। নিজের জীবনের ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।মনেহয় যেন এইতো সেদিনের কথা। মায়ের কথামত অঞ্জলীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া। আর খোকা আর কুহু যদি পরস্পরকে পছন্দ করে তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু অঞ্জলী কুহুকে তো তার নিজের মেয়ে বলেই জানে। সেক্ষেত্রে তার উপরই নির্ভর করছে ঘটনা কোন দিকে গড়াবে।

ক্রমশ 

No comments:

Post a Comment