Tuesday, March 7, 2023

একদিন ভালোবাসবে (২২ পর্ব)

একদিন ভালোবাসবে (২২ পর্ব)

  বলা বাহুল্য সেদিন শ্রাবণীকে ছাড়া অঞ্জলী ডাক্তার দেখাতে যাননি। বেরোনোর আগে অরুণাভ শ্রাবণীকে ডেকে বলেছিলেন,
-- তোকে ছাড়া আর কাকেই বলবো বল। নিজের সন্তানের প্রতি আমার সেই বিশ্বাস নেই। তুই একটু মাথাটা ঠান্ডা রাখিস। অসিত কিছু বললে তার উত্তর করিস না। আমি সব সময় তোর সাথে আছি।আজ আমাদের যাওয়া হল না। কাল পরশুর মধ্যে আমরা অবশ্যই বেরোব। 
 শ্রাবণী কোন কথার উত্তর দেয়নি সেদিন। কিন্তু ডাক্তার দেখিয়ে বেরোনোর পর অঞ্জলীর বায়নায় তারা একটা বড় শপিংমলে গিয়ে ঢুকতে বাধ্য হয়। বাড়ির সকলের জন্য হঠাৎ করেই অঞ্জলী কেনাকাটা শুরু করেন। বেশ কয়েক বছর বাদে মাকে সেই আগের মতই স্বতঃস্ফূর্ত দেখে অসিতের ভীষণ ভালো লাগে। ডাক্তারবাবুও আশ্বাস দিয়েছেন শারীরিক দিক থেকে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। এখনো ছোটখাটো যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলোও আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। উনি এখনো মন থেকে মানতে পারেননি যে উনার মেয়ে নেই। তাই তারই সমবয়সী একজনের মধ্যে নিজের মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছেন। এটা যে কোন সময় যে কোনদিন ঠিক হয়ে যাবে।
  মায়ের সাথে প্রখ্যাত সাইকিয়াট্রিস্ট অখিলেশ সান্যালের কথোপকথনের পর সে একাই ঢুকেছিল ডাক্তারের কাছ থেকে সবকিছু জানতে। আজ তারও মনটা বেশ খুশি। কিন্তু এই মেয়েটা তাদের সাথে ঘুরঘুর করছে এটা দেখলেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে তার। মায়ের জোরাজুরিতে শ্রাবণী দুটো চুড়িদার কেনে। তিনি বারবার বলা স্বর্তেও শ্রাবণী তারজন্য জিন্স টিশার্ট কেনে না। মায়ের শাড়ি, বাবার ট্রাওজার,পাঞ্জাবী সবই সে পছন্দ করে।কিন্তু চুপচাপ বসে থাকে অসিতের জন্য যখন শার্ট,টিশার্ট তাকে পছন্দ করতে বলা হয়।অসিত যত বলে আমার জিনিস আমি পছন্দ করবো আর ঠিক ততবারই তার মা বলেন 
-- সব যখন কুহু পছন্দ করেছে তোরটাও কুহুই পছন্দ করবে।
-- না,আমার জিনিস আমি পছন্দ করবো।
-- ঠিক আছে তুই একটা পছন্দ কর তারপর কুহুর পছন্দেরও একটা কিনবো।
 অসিত আর তর্কে না গিয়ে নিজের পছন্দের আকাশী রঙের একটা টিশার্ট কেনে। আর শ্রাবণী পছন্দ করে একটা মফ কালার অর্থাৎ কিছুটা বেগুনি রঙের একটি ফুলহাতা জামা। অসিত একটু টেরিয়ে জামাটা দেখে মনেমনে ভাবলো 'জামাটা খুবই সুন্দর কিন্তু আমি কোনদিনও পরবো না।'

  এরপর কেটে গেছে প্রায় ছ'মাস। সে জামা অসিত পরেনি আজও।শ্রাবণীর প্রতি অসিতের মনোভাবের বিন্দুমাত্র পরিবর্তনও হয়নি। কিন্তু এখন বাবা,মায়ের সামনে তাকে আর অপমান করে না। একাকী পেলেই তার মেজাজ সপ্তমে চড়ে যায়। শ্রাবণী এখন নার্সিং ট্রেনিং নিচ্ছে। অরুণাভ তাকে অনেক বুঝিয়েছিলেন কম্পিউটারের উপরে কোন কোর্স করার জন্য। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা হয়েই এটাতে ভর্তি হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই যদি ট্রেনিং শেষে বাইরে কোথাও চাকরি হয় তাহলে অন্তত অসিতের সামনাসামনি তাকে হতে হবে না। অসিতও চাকরিতে জয়েন করেছে মাস তিনেক। দু'জনের দেখা আর আগের মত হয় না। তবে ডিনারটা একসাথেই হয়। 

  এরই মাঝে একদিন ট্রেনিং শেষে বাড়িতে ফিরে শ্রাবণী নিজেই রান্নাঘরে ঢুকে নুডুলস তৈরি করে বাবা,মাকে দেয়।অঞ্জলী তখন তাকে বলেন ,
-- অতুও নুডুলস খুব ভালো খায়।ওর জন্য রেখেছিস তো?
শ্রাবণী মাথা নাড়িয়ে 'হ্যাঁ' জানায়।
অসিত যখন বাড়িতে ফেরে তখন শ্রাবণী তার রুমে। অঞ্জলী ক্যাসিরোল থেকে নুডুলস বের করে ছেলেকে খেতে দেন। অসিত খেতে খেতে মাকে বলে,
-- খুব সুন্দর হয়েছে মা ।আর আছে? আমায় আর একটু দেবে?
-- আর তো নেই বাবা।ঠিক আছে কুহুকে বলবো আবার একদিন করতে।
-- মানে? এটা তুমি করনি? না না কাওকে কিছু বলতে হবে না কারণ এসব বেশি খেতে নেই।গ্যাস হয়।
 যেটুকু প্লেটে ছিল চেটেপুটে খেয়ে অসিত নিজের রুমে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরেই লোডশেডিং হয়ে যাওয়াতে অসিত খুব বিরক্ত হয়ে ঘর থেকে বেরোলো ইনভার্টার কাজ করছে না কেন দেখতে। আর ঠিক তখনই শ্রাবণীও তার ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে বাবা,মা অন্ধকারে আছেন বলে। অসিত এগোতে গিয়ে শ্রাবণীর সাথে এক জোর ধাক্কা খায়। শ্রাবণী 'আহ্' - বলে পড়ে যেতে যায়। মুহূর্তে অসিত অন্ধকারেই ভিতর তাকে জাপটে ধরে। শ্রাবণী তাল সামলাতে না পেরে অসিতের বুকের সাথে একদম লেপ্টে যায়। কিছুক্ষণ! 
  অসিত মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে ওঠে,
-- চোরের মত অন্ধকারে কোথায় যাচ্ছিলে?
-- আমি নাহয় চোরের মত যাচ্ছিলাম আপনি কোথা থেকে দৌড়ে এসে ডাকাতের মত আমায় বুকে চেপে ধরলেন?
-- ওটা না করলে মাথা ফেটে চৌচির হয়ে যেত। হাসপাতালে ছুটতে হত সকলের।
-- আপনার তো শান্তি হত! আপদটা বিদেয় হত তবে।
-- আমার বাবা আমার বিরুদ্ধেই কেস করতেন ধাক্কা দিয়ে তোমায় মেরে ফেলার কারণে।
 কিছু একটা শ্রাবণী বলতে যাচ্ছিল। হঠাৎ লাইট এসে যাওয়াতে সে সিঁড়ি দিয়ে নামার আগে অসিতের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,
-- আর কোনদিনও আমার কোন উপকারে আপনাকে আসতে হবে না। আপনি যদি চোখের সামনেও দেখেন আমি মরে যাচ্ছি তাহলেও না। কারণ আমি যতদিন এ বাড়িতে আছি আপনি মানসিক শান্তি পাবেন না। আত্ম - হত্যা করার মত আমার মনের জোর নেই। তাহলে কবেই সে কাজ করতে পারতাম। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাড়াতাড়ি আমার মৃত্যু হোক সেই কামনায় করুন। কারণ আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই।
 শ্রাবণী এক পা সিঁড়িতে দেওয়ার সাথে সাথে অসিত এক হাত দিয়ে তাকে উপরে টেনে তুলে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে মুখের কাছে মুখটা নিয়ে বলে,
-- কী ভাবো নিজেকে? আমার সম্মন্ধেই বা তোমার ধারণা কী?
শ্রাবণী নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই পারে না। অসিতও কেমন ঘোরের মধ্যে শ্রাবণীর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। শ্রাবণী তখন অসিতকে জোরে একটা ধাক্কা মেরে খুব তাড়াতাড়ি নিচে নেমে যায়।
শ্রাবণী যখন অসিতকে ধাক্কা মারে তখন অসিতের পুরো শরীর ছেড়ে দিয়েছিল। সে নিজের মধ্যে ছিল না। সে এটা কী করে বসলো? ঘটনার আকস্মিকতায় সে নিজেও হতভম্ব!

ক্রমশ


    

No comments:

Post a Comment