Monday, March 27, 2023

একদিন ভালোবাসবে (৪৯ পর্ব)

 একদিন ভালোবাসবে (৪৯ পর্ব)

    অনেকটা সময় ওরা গাড়ির মধ্যে বসে থাকে। মাঝে একবার শ্রাবণী গাড়ি থেকে নেমে বিস্কুটের প্যাকেট কিনে আনে। অসিত ওইভাবেই অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে ঘাড়ে ব্যথা করতে লাগলে মাথাটা এপাশ ওপাশ করছে দেখতে পেয়ে শ্রাবণী আস্তে করে ধরে ওর মাথাটা নিজের কাঁধের উপর রাখে। রক্তবর্ণ চোখ তুলে শ্রাবণীর দিকে যখন ও তাকায় অসিতের চোখ থেকে দুফোঁটা জ্বরের ফলে জল গড়িয়ে পড়ে। শ্রাবণী হাত দিয়ে মুছিয়ে দেয়। ঘাম হতে শুরু করলে জামার বোতাম খুলে নিজের ওড়না দিয়ে ঘাম মুছতে শুরু করে। অসিতের শরীরের সমস্ত লোমকূপ তখন দাঁড়িয়ে যায়। সে এক দৃষ্টে শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে থাকে। শ্রাবণী ওর দিকে না তাকিয়েই সেটা বুঝতে পেরে বলে,
-- ওভাবে আমার দিকে তাকাবেন না।
 অসিত ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি এনে বলে,
-- এর পরেও বলবে তুমি আমায় ভালোবাসো না?
-- আপনি অসুস্থ্য, এখন বেশি কথা বলবেন না।
 অসিত দু'হাত দিয়ে শ্রাবণীকে বুকের সাথে চেপে ধরে নিজের মাথাটা শ্রাবণীর মাথার উপর রেখে বলে,
-- বুকে কান পেতে শোনো ওখানে একটি নামই বারবার ধ্বনিত হচ্ছে সে শ্রাবণী শুধু শ্রাবণী।
 শ্রাবণী আজ অসিতকে কোন বাঁধা দেয় না। নিজেকেই যেন সে আজ অসিতের কাছে সমর্পণ করেছে। যতক্ষণ অসিত তাকে বুকে জড়িয়ে থাকে শ্রাবণী কোন বাঁধা না দিয়েই পরম নিশ্চিন্তে অসিতের বুকে মাথা দিয়ে থাকে।

  অসিত একটু ধাতস্থ হলে শ্রাবণী ওকে জোর করে দুটো বিস্কুট আর জল খাওয়ায়। অসিত তখন বলে,
-- এখন ঠিক আছি আমি। এবার রওনা হই।
-- রওনা হবো ঠিকই কিন্তু একটু এগিয়ে হোটেল পাওয়া যাবে এখনকার লোকেরা বললো। আমরা আজ কোন একটা হোটেলে থাকবো। কাল আমার নাইট ডিউটি। তাই তার আগে পৌঁছলেই হবে। আমি আজ আপনাকে একা ছাড়বো না।
-- আমি তো তোমার কেউ না, আমায় নিয়ে তুমি কেন এত ভাবছো?
-- এসব কথার উত্তর আমার কাছে এখন নেই। সময় মত সব কথার উত্তর দেবো। এখন আপনি সুস্থ বোধ করলে স্টিয়ারিংটা ধরুন।
-- সে যাচ্ছি কিন্তু আমার সাথে তুমি হোটেলে কিভাবে থাকবে একঘরে? তাহলে আলাদা দুটো রুম নেবো।
-- তাহলে আমার হোস্টেলে গেলেই বা কী অসুবিধা হত?
আপনি না সত্যিই বেশি কথা বলেন।
  অসিত দুর্বল বোধ করলেও কিছুটা এগিয়ে মিনিট কুড়ির মধ্যেই মোটামুটি থাকার মত একটা হোটেল পেয়ে গেলো। সেখানে গিয়ে দোতলায় একটা রুম ভাড়া করে রূমের ভিতরে গিয়ে ঢুকলো দু'জনে। রিসেপশনেই কথা বলে নিয়েছিল দুটো সিঙ্গেল খাট যাতে থাকে। কিন্তু সমস্যা হল অসিতের তো কোন জামাকাপড় নেই। ওই অবস্থাতেই অসিতকে একটা খাটে জোর করে শ্রাবণী শুইয়ে দিয়ে কাজ আছে বলে সন্ধ্যার দিকে একটু বাইরে বেরোয়। ওখানে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে আশেপাশে কোন মেডিসিন দোকান নেই। হোটেলের লোকের সহয়তায় একজনকে কিছু টাকা দিয়ে সে অসিতের জন্য ওষুধ আনতে পাঠায়। এ জ্বর এন্টিবায়োটিক না খেলে যে কমবে না এটা সে বুঝতে পারে। তাই পুণরায় জ্বর আসার আগেই তাকে ওষুধ দিতে হবে। ওষুধ নিয়ে রুটি,সবজি কিনে যখন সে তালা খুলে হোটেলের রুমে এসে পৌঁছায় তখন অসিত ঘুমিয়ে। সে তার একটা নাইটি নিয়ে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে অসিত উঠে পরেছে। কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর নেই। জোর করে তাকে দুটো রুটি খাইয়ে ওষুধ দেয়। তারপর সে বলে,
-- যদি কিছু মনে না করেন আমার টিশার্ট আর ট্রাউজার পরতে পারেন।
অসিত হেসে দিয়ে বলে,
-- উপায় কী? সেটাই দাও। টেনেটুনে ঢোকাই গায়ে। এই জামাপ্যান্ট পরে থাকতে আর ভালো লাগছে না। বাড়িতে একটা ফোন করে জানিয়ে দিই।
-- আমি বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছি আপনি কাল ফিরবেন।
-- বাহ্! দায়িত্ব,কর্তব্য সম্পর্কে তোমাকে কেউ হারাতে পারবে না।
 শ্রাবণীর দেওয়া টিশার্ট আর ট্রাউজার পরে অসিত যখন ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো শ্রাবণী তখন হেসেই খুন। তা দেখে অসিত বলে উঠলো,
-- বেশ প্রতিশোধ নিলে কিন্তু! একদিন আমার শার্ট পরতে হয়েছিল বলে আজ দেখো ভগবান এমন একটা কান্ড করলেন তোমার জিনিস আমায় পরতে হল। একেই বলে কপাল!
অসিত একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে।
শ্রাবণী অসিতের বালিশটা ঠিক করে দিয়ে বলে,
-- এবার আপনি শুয়ে পড়ুন। কাল আমরা দুপুরে এখান থেকে খেয়ে তবে বেরোব।
-- কিন্তু এখন তো কিছুক্ষণ আমরা গল্প করতেই পারি।
-- না,পারি না। আপনার শরীর খারাপ আপনি এখনি ঘুমাবেন।
-- দশ মিনিট। এখানে আমার কাছে এসে বসো।
-- আমি তো এখান থেকেই আপনার কথা শুনতে পাচ্ছি ।আপনি বলুন আমি শুনছি।
-- না,এখানে এসো। এই তো একটু আগে আমার বুকের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে ছিলে; তখন তো এত জীদ করোনি। তুমি কী জানো?ওই কয়েকটা মিনিটের জন্যই আমার আর জ্বর আসেনি। ওটাই আমার জ্বরের এন্টিবায়োটিক!
-- ওহ্ এত কথা কেন বলেন? আপনি এখন ঘুমাবেন কিনা বলুন।
-- ঘুমাবো। একবার এসে আমার কাছে দু'মিনিটের জন্য বসো।
 শ্রাবণী আর কথা না বাড়িয়ে অসিতের খাটের উপর গিয়ে বসে। অসিত তখন ঠিক ছেলেমানুষের মত শ্রাবণীর কোলে শুয়ে পড়ে বলে,
-- গাড়ির ভিতর যখন তোমার কোলের উপর শুতে বলেছিলে খুব ইচ্ছা করছিলো শুতে।কিন্তু এই ছ'ফুট হাইটের মানুষটা কিভাবে ওই ছোট্ট জায়গাটার উপর শোবে বল? তাই এখন শুয়ে পড়লাম।
-- আচ্ছা ঠিক আছে। এটাও মেনে নিলাম। এবার তো ঘুমাবেন?
অসিত শ্রাবণীর একটা হাত নিয়ে নিজের মাথার উপর দিয়ে বললো,
-- মাথায় হাত বুলিয়ে দাও আমি এখুনি ঘুমিয়ে পড়বো।
 -- আপনি পুরো একটা বাচ্চা! আচ্ছা তাই হবে। আপনি যেটা বলবেন আমি সেটাই করছি। তবে প্লিজ আর কথা বলবেন না। এবার ঘুমান।
-- ভাগ্যিস আমার জ্বর হয়েছিলো। তাই তো আজ আমি এভাবে তোমায় অনেকক্ষণ কাছে পেলাম।
-- কাছে পাওয়ার এই পলিসিটা আপনার মোটেই ভালো না। তবে এবার কলকাতা ফিরে গিয়ে ডাক্তার দেখাবেন। ব্লাড টেষ্ট করতে হবে। খুব কম সময়ের মধ্যে এই 
দু'দুবার জ্বর আসা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়।
-- তুমি এইভাবে পাশে থাকলে আমি তোমার সব কথা শুনবো সারাজীবন।
-- সারাজীবনের কথা থাক। আপাতত এখনকার মত শুনে একটু ঘুমান। আর একটাও কথা বললে আমি কিন্তু মাথা কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে নিজের বিছানায় চলে যাবো।
-- না,না, ঠিক আছে। আর কথা বলছি না। ঘুমিয়ে
 পড়ছি এবার।
অসিত চোখ বন্ধ করে আর শ্রাবণী দেওয়ালে পিঠটা হেলান দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগে।

ক্রমশ

No comments:

Post a Comment