Thursday, March 2, 2023

একদিন ভালোবাসবে ( ১৬ তম পর্ব)

একদিন ভালোবাসবে (১৬ পর্ব)

 নিলয় ঘুমের ঘোরেই আরও একটু কাছে চলে আসে তিয়াসার। তিয়াসা সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখদুটো বন্ধ করে নেয়। বুকের মাঝে অদ্ভুত একটা অনুরণন শুরু হয়। ফুলশয্যার রাতে নিলয়ের ব্যবহারে নিজের ভাগ্যকে নিজেই দোষারোপ করেছিলো। কিন্তু মাত্র কটাদিনেই সে বুঝে গেছে মানুষটা ভীষণ ভীষণ ভালো। কিন্তু এত সহজে তো তিয়াসা নিলয়কে তাকে পেতে দেবে না। মাছ তো বড়শিতে গেঁথেই আছে শুধু একটু খেলিয়ে তুলতে হবে। বিয়ের পরে হুট করে একরাতে একটা অচেনা পুরুষের কাছে নিজেকে সমর্পণ করার চেয়ে প্রতিদিনের এই রোমান্টিকতা যেন আরও বেশি ভালো লাগছে তিয়াসার। তিয়াসার বারবার কেন জানি মনেহয় ফুলশয্যার রাতের ব্যবহারটা যে ঠিক হয়নি এটা নিলয়ও হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে। এবার সে নিলয়ের সাথে প্রেম করে তারপর সে ধরা দেবে। বিয়ে তাতো হয়েই গেছে।লোকের মুখও বন্ধ থাকবে।
  
  সন্ধার দিকে পিয়া চা নিয়ে উপরে উঠে দরজার বাইরে থেকেই দিদিকে ডাকে। তখনও নিলয় ঘুমাচ্ছে। পিয়ার গলার আওয়াজ পেয়ে নিলয় উঠে পরে। তিয়াসার পায়ের ব্যথা তখন অনেকটাই কম। নিলয় খাটের উপরেই চা নিয়ে খেতে শুরু করলে তিয়াসা বলে ওঠে,
--- মুখ ধুলে না? চা খেতে শুরু করে দিলে?
--- এটা আমার সকালের মতই বেড টি। আমি দুপুরে ঘুমালে যতক্ষণ না আমার চা আসে আমি ঘুমিয়েই যাই। আবার সকালেও তাই। মা এসে আমায় চা দেওয়ার পর আমি উঠি। হ্যাঁ এই ক'টাদিন সব তালগোল পাকিয়ে গেছে। আবার আস্তে আস্তে ফর্মে ফিরছি।
-- তারপরে বিকালে আর মুখ ধুয়ে আসা হবে না?
-- কে বললো হবে না? কম করে পাক্কা পনের মিনিট পর। কারণ গরম খাওয়ার পরে ঠান্ডা জিনিস খেলে দাঁতের ক্ষতি হয়। ওসব সবাই বোঝে না।
 ওদের কথার মাঝে তিয়াসার বাবা,মা এসে মেয়ের খবর নেন। মা তাকে বলেন,
--- তুই আজকে আর নিচুতে নামবি না। উপরেই তোর খাবার পাঠিয়ে দেবো। কী একটা কান্ড ঘটালী বলতো?
 পিয়া মায়ের কথা শুনে বলে উঠলো,
-- নিচুতে নামলেও তো দিদির পায়ে ব্যথা লাগবে না মা।নিলয়দা কোলে করেই নিয়ে যাবে।
 বাবা,মায়ের সামনে পিয়ার এই বোকা বোকা কথা শুনে নিলয়, তিয়াসা দু'জনেই খুব লজ্জা পেলো। আর তাদের মা চোখ বড় বড় করে পিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
-- তুই চুপ কর।তোকে কিছু বুঝতে হবে না। 
পিয়ার বাবা,মা বেরিয়ে যাওযার পর পিয়া নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
-- আমি বাবা সহজ,সরল মানুষ সাদা মনে কাদা নেই। তাহলে আর কী হবে। আমি তো চেষ্টা করেছিলাম দিদি তোকে যাতে আর একবার নিলয়দা কোলে তুলতে পারে।কিন্তু বিধি বাম! আমার কোন দোষ নেই।
 কথাগুলো বলেই মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।। তিয়াসা তার বোনের দিকে একটা চর উঠিয়ে বলে,
-- বড্ড পেকেছিস তুই? এক থাপ্পর মারবো তোকে।
পিয়ার এবার আক্রমণ নিলয়ের দিকে।
-- তাহলে নিলয়দা তোমার খাবারটাও কী উপরে দিয়ে যাবো। আমার হয়েছে যত জ্বালা।কতদিক ম্যানেজ করতে হয়।
 বলেই হাসতে থাকে। এবার নিলয় পিয়ার মাথাটা ধরে নিচু করে পিঠে বেশ কয়েকটা আলতো চাপড় দেয়। তারপর খাট থেকে নেমে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,
-- আর একবার চুন, হলুদটা গরম করে নিয়ে এসো পিয়া। তাহলে তাড়াতাড়ি ব্যথা কমবে।
 পিয়া দিদিকে কনুই দিয়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে ওঠে,
-- দেখ দিদি, তোর বরের তোর প্রতি কত দরদ!
 এবারও তিয়াসা আবারও একটা হাত তোলে বোনের দিকে। পিয়া হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায়।

  রাতে সকলে খেতে বসার আগেই পিয়া দিদির খাবারটা উপরে দিয়ে যায়। নিলয় খেয়ে যখন উপরে আসে তখন ওর সাথে পিয়াও আসে। এসে দেখে তিয়াসা তখনও খায়নি। এটা দেখেই পিয়া বলে ওঠে,
-- কি রে দিদি, এখনো খাসনি কেন? তুই কী জন্য বসে আছিস আমি জানি।
 ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি পিয়ার। 
-- আরে খিদে পায়নি আমার। কী জন্য আর বসে থাকবো?
-- বসে আছিস তুই ভেবেছিস নিলয়দা এসে যদি দেখে তুই খাসনি তাহলে তোকে খাইয়ে দেবে বলে।
-- পিয়া তুই কিন্তু বড্ড বেরেছিস! যা মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছিস কিন্তু। তুই সত্যি সত্যিই কিন্তু এবার মার খাবি আমার কাছে।
পিয়া কাঁধ দুটো একটু উঁচু করে বললো,
-- সত্যি কথা শোনার সৎ সাহস অনেকের থাকে না। তোরও নেই। যাহোক তোর বরকে দিয়ে গেলাম , বন্ধ দরজার ভিতর যা খুশি কর।
 পিয়া হাসতে হাসতে চলে গেলো। নিলয় সেই সময় ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু দু'বোনের সব কথাই তার কানে গেছে। তার ভিতরও একটা ঝড় চলছে। আজ তো সেই পাশাপাশি শুতে হবে। ঘরে তো আলাদা করে শোবার কোন ব্যবস্থাও নেই। অন্ধকারে নিজেকে যদি কন্ট্রোল করতে না পারে তাহলে তো তিয়াসা তাকে সারাজীবন খেপাবে। নিজেকে মনেমনে শান্তনা দেয় আজ তো তিয়াসা অসুস্থ। আজ যেভাবেই হোক নিজেকে সামলে নিতে হবে।
 
 ঘরে ঢুকে নিলয় দরজার ছিটকনিটা দিয়ে দিয়ে খাটের উপর পা ঝুলিয়ে বসে বলে,
--- অনেক রাত হল। এবার খেয়ে নাও। নাকি পিয়ার কথাটাই ঠিক আমাকেই খাইয়ে দিতে হবে।
হাসতে থাকে নিলয়। হাসতে হাসতেই উঠে গিয়ে খাবারের থালাটা নিয়ে এসে বলে,
--- কী নিজে খাবে নাকি খাইয়ে দেবো?
-- খাইয়ে দিলে মন্দ হয় না। কিন্তু ---
--- কী কিন্তু --
না কিছু না। দাও থালাটা আমি খেয়ে নিচ্ছি।
--- পায়ের ব্যাথাটা কেমন আছে?
-- অনেকটাই কম। 
 তিয়াসার খাওয়ার পর পা টা আস্তে আস্তে নিচুতে নামিয়ে খাট থেকে নামবার চেষ্টা করতেই নিলয় জিজ্ঞাসা করে,
-- ওয়াশ রুমে যাবে? চলো আমি নিয়ে যাই।
-- না না এখন অনেকটাই ঠিক আছি। একাই যেতে পারবো। 
তবুও নিলয় গিয়ে ওকে ধরে বাথরুমের দরজা পর্যন্ত নিয়ে যায়। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। তিয়াসা বেরোলে পুনরায় ওকে ধরে এনে খাটের উপর বসিয়ে দেয়। তিয়াসা ভাবে যে মানুষটা এত কেয়ারিং সে কী কারণে ফুলশয্যার রাতে তাকে কাছে টানতে পারলো না? আজ নিলয়ের কাছে সেই কথাটাই সে জানতে চাইবে। 

ক্রমশ 

 

No comments:

Post a Comment