Sunday, March 26, 2023

একদিন ভালোবাসবে (৪৮ পর্ব)

অসিত তার ঘরে রেডি হচ্ছে শ্রাবণীকে নিয়ে বেরোবে বলে আর শ্রাবণী তার ঘরে রেডি হতে হতে কান খাড়া করে রেখেছে অসিতের পায়ের শব্দ শুনবার জন্য। কিন্তু কেন এরকম হচ্ছে তার সে নিজেই বুঝতে পারে না। গতকাল থেকে অসিত কেন এত চুপচাপ হয়ে গেলো শ্রাবণী কিছুতেই বুঝতে পারছে না। তবে অসিতের এই চুপ থাকাটাও শ্রাবণীর মোটেই ভালো লাগছে না। 

  অসিত রেডি হয়ে নিজের ঘরে অপেক্ষা করতে থাকে। আর শ্রাবণী নিশ্চিত অসিত ব্যাগ নেওয়ার জন্য তার ঘরে ঢুকবেই। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন অসিত আসে না তখন শ্রাবণী এক হাতেই ব্যাগটা নিয়ে  সিঁড়ির কাছে আসতেই অসিত পিছন দিক থেকে ব্যাগটা ধরে বলে,
-- ছাড়ো আমি নিচ্ছি।
-- আমি নিজেই নিতে পারবো। এ হাতে তো আর ব্যথা নেই।
-- সেটা আমিও জানি। এটা নিয়েই তুমি নামতে পারবে। এমন কী ট্রেন কিংবা বাস জার্নিও করতে পারবে। একাই তো যেতে চেয়েছিলে। নেহাত বাবা,মায়ের কথা ফেলতে পারোনি তাই আমার সাথে যেতে বাধ্য হচ্ছ। 
-- আপনার কোন অসুবিধা থাকলে তো তখনই বলতে পারতেন। আপনিই তো বললেন 'কোন  অসুবিধা নেই।'
-- হ্যাঁ আমি জানি আমার সাথে যেতে তোমার ভালো লাগবে না। কিন্তু এই অবস্থায় বাড়ির লোকও তোমায় একা ছাড়তে পারবে না। অগত্যা আর কয়েক ঘন্টা এই খারাপ মানুষটাকে একটু সহ্য করো।
   শ্রাবণী অসিতের এই ধরনের ভারী কথায় অভ্যস্ত নয়। তাই সে অসিতের দিকে তাকিয়ে পড়লো। অসিতের চোখ,মুখের চেহারা তার স্বাভাবিক লাগলো না। সে উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলো,
-- আপনার কি শরীর খারাপ? 
-- কই না তো?
-- কিন্তু আপনার চোখ,মুখ তো স্বাভাবিক লাগছে না।
-- আমার ভালোমন্দ তোমার কিছু নজরে পড়ে?
 শ্রাবণী সে কথার উত্তর না দিয়ে নামতে থাকে।
   ওরা নিচুতে নেমে আসে। অসিত শুধু চেঁচিয়ে বলে,
-- মা,বাবা আমরা বেরোচ্ছি।
 শ্রাবণী বাবা,মাকে প্রণাম করে বেরিয়ে পরে। অসিত আজও শ্রাবণীর সিটবেল্ট বেঁধে দেয়। 
 অঞ্জলী ,অরুণাভ ওদের টা টা করে ঘরে এসে বসেন। অসিত একমনে গাড়ি চালিয়ে চলেছে। আজ একটা কথাও সে বলছে না। অসিতের এই নীরবতা শ্রাবণীর একদম ভালো লাগছে না। সে চাইছে অসিত ওর সাথে কথা বলুক। নিজেও কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না যে অসিতকে কিছু সে বলবে। এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর শ্রাবণী আর না পেরে বললো,
-- আপনার কি শরীর খারাপ? আপনি এত চুপচাপ কেন আজ?
-- আমি বেশি কথা বলি বলে তুমি বোর হও। তাই চুপ আছি। কেন আমার এই চুপ থাকাটাও তোমার পছন্দ হচ্ছে না? মোদ্দা কথা আমার কোনকিছুই তোমার পছন্দ হয় না। আমি কথা বললেও দোষ আবার কথা না বললেও দোষ।
--- কিন্তু আমার মনেহচ্ছে আপনার শরীর খারাপ। আরে সমস্যাটা তো বলবেন।
-- কোন সমস্যা নেই। আমার কথা বলতে আজ ইচ্ছা করছে না।
 শ্রাবণী কোন উত্তর দেয় না সে কথার। কিন্তু সে লক্ষ্য করে অসিত এই সামান্য কথাগুলো বলে বেশ হাপাচ্ছে। বেশ কয়েকবার বোতল খুলে জলও খেলো। শ্রাবণী বুঝতে পারছে অসিতের শরীর ভালো নেই। এইভাবে আরও বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর ওরা একটা জনবহুল রাস্তায় ঢোকে। আর ঠিক তখনই শ্রাবণী বলে,
-- গাড়িটা একটু থামাবেন?
খুব ক্ষীণস্বরে অসিত বলে,
-- কেন?
-- একটু দরকার আছে।
 অসিত গাড়িটা একটু সাইড করে শ্রাবণীর বেল্টটা খুলে দেয়। শ্রাবণী অসিতের কপালে হাত দিয়ে দেখে তার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
-- একি! আপনার গায়ে এত জ্বর। আর বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে আপনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন?
-- এখানে যদি তোমার কোন কাজ না থাকে তাহলে গাড়িটা পুণরায় স্টার্ট দিই। আর ঘণ্টা দু'য়েক পরেই আমরা পৌঁছে যাবো। তানাহলে খুব বিপদে পড়ে যাবো।
-- না, এখন আর গাড়ি চলবে না। জ্বরের ওষুধ আছে সাথে? 
-- সকালেই খেয়েছি একটা। হ্যাঁ আরও সাথে আছে।নিয়ে এসেছি। কিন্তু প্লিজ গাড়িটা স্টার্ট করতে দাও।
-- না, গাড়ি এখন চলবে না। আপনি গাড়ির মধ্যেই বসুন। আমি আসছি।
 শ্রাবণী গাড়ি থেকে নেমে গেলো। কিন্তু আশেপাশে কোথাও মোটামুটি থাকা যায় একটা রাত এমন কোন হোটেলের সন্ধান না পেয়ে পুণরায় গাড়ির কাছে ফিরে এসে দেখে অসিত স্টিয়ারিংয়ে উপর হাত রেখে সেখানেই মাথা দিয়ে আছে। তখন তার জ্বর আরো বেশি। কিন্তু এই অবস্থায় শ্রাবণী কী করবে কিছুই ভেবে উঠতে পারছে না। ওখানেই লোকজনের কাছে শোনে আরও কিছুটা এগিয়ে গেলে হোটেল পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এখন যা অসিতের শারীরিক অবস্থা তাতে সে কী করেই বা স্টিয়ারিং ধরবে?
 -- আপনার ওষুধ কোথায়? ওষুধটা নিয়ে নেমে আসুন
-- কী হবে এখানে নেমে?
-- এখন অন্তত আমার কথা শুনুন।
 অসিত ওষুধ হাতে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসে। শ্রাবণী পিছনের দিকে উঠে গিয়ে একদম গাড়ির জানলার কাছে গিয়ে বসে বলে,
-- এবার উঠে আসুন।ওষুধটা খেয়ে কষ্ট হলেও আমার কোলে মাথা দিয়ে একটু সময় শুয়ে থাকুন পা ভাঁজ করে। জানি এভাবে শুতে আপনার কষ্ট হবে কিন্তু কিছু করার নেই তো।
-- তুমি যে আমার জন্য এটা ভেবেছো এটাই আমার জন্য অনেক। আমি বসেই থাকবো হেলান দিয়ে। এইটুকুন সিটে আমি শুতেই পারবো না।
-- তবে তাই করুন। উঠে আসুন ভিতরে।
 অসিত গাড়ির মধ্যে গিয়ে ওষুধটা খেয়ে সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বুজে থাকে। শ্রাবণী তখন কিছুটা এগিয়ে যায় অসিতের দিকে। অসিত চোখ মেলে সেটা দেখতে পেয়ে বলে,
-- ভেবো না। এক্ষুণি জ্বর রেমিশন হয়ে যাবে। তুমি এই খারাপ মানুষটাকে নিয়ে এত ভাবছোই বা কেন?
-- আপনি খুব অন্যায় করেছেন এই অবস্থায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে।
-- আরও কিছুটা সময় তোমার সাথে থাকতে চেয়েছিলাম। তাই কাউকে কিছুই বলিনি। ওখানে গিয়ে বাবা,মাকে ফোন করলেও আমার সাথে তো কথা বলবে না। আমার তো খারাপ লাগে এতে। জানি তাতে তোমার কিছুই যায় আসে না। রাত থেকেই জ্বরটা এসেছে। 
 
 এবার শ্রাবণী বুঝতে পারে কেন গতকাল রাতে অসিত ঘুমানোর আগে তার কাছে আসেনি।

ক্রমশ 



No comments:

Post a Comment