Friday, March 24, 2023

একদিন ভালোবাসবে (৪৭ পর্ব)

 একদিন ভালোবাসবে (৪৭ পর্ব)

   এর ঠিক দিন তিনেক পরে শ্রাবণী তার কর্মস্থলে চলে যাবে ঠিক হল। আগেরদিন রাতে অরুণাভ জানালেন অসিত গাড়ি নিয়ে গিয়ে তাকে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে আসবে। তাই রবিবার করে তিনি দিন ঠিক করেছেন। শুনেই শ্রাবণী বললো,
-- বাবা,কোন দরকার নেই। আমি একাই চলে যেতে পারবো।
 সঙ্গে সঙ্গে অঞ্জলী বলে উঠলেন,
-- পাগলের মত কথা বলিস না। একা কী করে ব্যাগ নিয়ে যাবি। এখনো তো হাতটা গলায় ঝুলছে। একদম কথা বলবি না। অসিতই তোকে পৌঁছে দিয়ে আসবে। 
  অসিত চুপচাপ বাবা,মা আর শ্রাবণীর কথা শুনে যাচ্ছে। আর যে যখন কথা বলছে তার মুখের দিকে তাকাচ্ছে। অরুণাভ অসিতকে বললেন,
-- কী রে তুই কোন কথা বলছিস না কেন? তোর কোন অসুবিধা নেই তো?
-- না,না আমার আবার কিসের অসুবিধা? রবিবার তো সেদিন।
 শ্রাবণী মনেমনে বলে, 'আবার কাল বেশ কয়েক ঘণ্টা চলবে বকবকানি।'
 খাওয়াদাওয়ার শেষে অঞ্জলী গিয়ে শ্রাবণীর ছোট্ট ব্যাগটা গুছিয়ে দিয়ে বললেন,
-- কোন রকম অসুবিধা হলে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করবি। শরীরের যত্ন নিবি। আর যে ভিটামিনটা দিয়েছেন রোজ নিয়ম করে খাবি।
-- এত কেন চিন্তা করো তুমি? একদম চিন্তা করবে না। এখন তো অনেকদিন আসতে পারবো না তুমি আর বাবা ওখানে ঘুরতে যেও। আমরা একসাথে ঘুরবো।
-- শুধু আমি আর তোর বাবা কেন? আমরা গেলে অসিতও যাবে। ঘুরতে হলে চারজনেই ঘুরবো।
 শ্রাবণী সে কথার কোন উত্তর দিলো না। শ্রাবণী বুঝতেই পারছে মা ঘর থেকে বেরোনোর সাথে সাথে অসিত এসে ঘরে ঢুকবে। অঞ্জলী চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরেও অসিত শ্রাবণীর ঘরে আসে না দেখে শ্রাবণী ভিতরে ভিতরে কেমন যেন একটা অস্বস্তি বোধ করছে। ও যেন মনেমনে চাইছে অসিত আসুক আবার ওর ভালোবাসার কথা বলে পাগলামী করুক। একজন সুঠাম,সুন্দর পুরুষের মুখ থেকে ভালোবাসার কথা শুনতে বেশ লাগে রোজ। কিন্তু অসিতকে তো শ্রাবণী ভালো বাসে না। তবে কেন রোজ ওর মুখ থেকে এই কথাগুলো শুনতে ওর ভালো লাগে। তবে কি অসিতকে ভালোবেসে ফেলেছে? কী সব উল্টোপাল্টা ভাবছে! আসেনি বাঁচা গেছে আজ বকবকানির হাত থেকে। কেনই বা ভাবছে ওর কথা? শ্রাবণী দরজার ছিটকনিটা দিতে গিয়েও দরজাটা খুলেই রাখে। তবে কি সত্যিই সে চাইছে অসিত তার ঘরে আসুক তার সাথে বসে গল্প করুক। কিন্তু কেন? মনটা এত আনচান করছে কেন? এই ক'দিনে কি এটা ওর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে নাকি অন্য কিছু? 

  শ্রাবণী লাইট অফ করে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু কিছুতেই ওর ঘুম আসে না। এপাশ ওপাশ করতে থাকে। কেন মনের মধ্যে এরূপ তোলপাল করছে। কেন মন চাইছে অসিত এ ঘরে আসুক। নাহ্ ঘুম হবে না। ভেজানো দরজা খুলে বাইরে আসে। অসিতের দরজার কাছে এসে দেখে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। তারমানে অসিত ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক আগেই। কিন্তু কেন এত কষ্ট হচ্ছে বুকের মধ্যে? কার প্রতি এত অভিমানে কষ্টে চোখে জল এসে গেল? নিজেকে নিজের কাছে এত অচেনা লাগছে কেন?

  সারাটা রাত না ঘুমানোর ফলে খুব ভোরে উঠে পড়লো শ্রাবণী। তখন বাড়ির কেউই ওঠেনি। অসিতের দরজা তখনও ভিতর থেকেই বন্ধ। অত ভোরেই শ্রাবণী স্নান করে ঠাকুর ঘরে যায়। আজ মালী বাগানে আসার আগেই শ্রাবণী বাগান থেকে সব ফুল তুলে এনেছে। পুজো দিতে দিতেই নিজের মনে গুনগুন করে গান করে শ্রাবণী। অসিত ঘুম থেকে উঠে শ্রাবণীর দরজা খোলা দেখে ভাবে সে নিচুতে। কিন্তু নিচেই গিয়ে তাকে দেখতে পায় না। মা ,বাবা সবাই উঠে গেছেন তখন ঘুম থেকে। অঞ্জলী অসিতকে জিজ্ঞাসা করেন,
-- শ্রাবণী উঠেছে?
-- দরজা তো খোলা দেখলাম মা। কিন্তু সে কোথায় আমি জানি না।
-- কোথায় গেলো? দেখ তো বাগানে গেলো কিনা? মাঝে মাঝে তো আমাকে ফুল তুলে এনে দেয় পুজো করতে।
 ওদের কথার মাঝেই ঠাকুরঘর থেকে শঙ্খ'র আওয়াজ ভেসে আসে। তখন সকলেই বুঝতে পারে শ্রাবণী আজ পুজো করছে। সকলে তাকিয়ে দেখে ভিজে চুল ছেড়ে দিয়ে পুজো করে শ্রাবণী নিচেই নামছে। সকলের চোখ তার দিকে। সে নেমেই প্রথমে পুজোর ফুল বাবার কপালে ছোঁয়ালো। তারপর মাকে দিয়েই আবার সিঁড়ির দিকে রওনা দিয়েছে দেখে অঞ্জলী বললেন,
-- ওরে কুহু পুজোর ফুল অসিতের মাথায় ছোঁয়ালি না?
 একথা শুনে শ্রাবণী পড়লো মহা ফ্যাসাদে। সে পুজোর থালা নিয়ে এসে অসিতের সামনে দাঁড়িয়ে একটু ইতস্তত করে ফুলটা তার মাথায় ছুঁইয়ে প্রসাদ হাতে দিলো। শ্রাবণী মনে ভেবেছিল নিশ্চয় অসিত কিছু তাকে বলবে। কিন্তু সে কিছুই বললো না উপরন্তু চোখ নিচের দিকে রেখে আশীর্বাদী ফুলের ছোঁয়া নিলো দেখে শ্রাবণী বেশ অবাক হল। গতকাল রাত থেকেই অসিতের এই পরিবর্তনে শ্রাবণী বেশ অবাকই হয়েছে। অথচ এই মানুষটাই যখন তার কাছে থাকে, তার সাথে কথা বলে সে মোটেই পছন্দ করে না। কিন্তু কাল রাত থেকে অসিতের এই পরিবর্তনও তার মোটেই ভালো লাগছে না। শ্রাবণী মনেমনে ভাবে কী অদ্ভুত মানুষের মন! অনেক সময় তার নিজের মন কী চায় তা সে নিজেই বুঝতে পারে না। কিন্তু যে মানুষটাকে সে পছন্দই করে না তার এরূপ ব্যবহারে কেন তার এতটা খারাপ লাগছে? তবে কি সে অসিতকে ---।

ক্রমশ 

No comments:

Post a Comment