Thursday, March 16, 2023

একদিন ভালোবাসবে (৩৮ পর্ব)

শ্রাবণী তার ঘরে আর যায় না। সে নিচুতেই বাবা,মা আর লতিকামাসীর সাথে গল্প করে সময় কাটাচ্ছে। আগে পড়াশুনার জন্য অধিকাংশ সময় সে উপরেই থাকতো। কিন্তু এখন সে পাঠ চুকেছে। তাই যখন তখন উপরে ওঠারও তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আর সে ভালোভাবেই জানে উপরে গেলেই অসিতের মুখোমুখি তাকে হতে হবে। 

  আজ রাতে বাড়িতে বিশাল খাওয়ার আয়োজন। যেন ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে এসেছে ; হোক না সে
 দু'একদিনের জন্য। অসিত খেতে বসেই বললো,
-- বাব্বা! এই একমাস বাড়িতে না থাকার জন্য একমাসের খাবার এক বেলাতেই খাইয়ে দেবে নাকি তোমাদের মেয়েকে?
-- কেন তোর হিংসা হচ্ছে নাকি?
অঞ্জলী হাসতে হাসতে বলেন।
-- না,না হিংসা হবে কেন? তোমাদের মেয়ের অনারে আমার কপালেও ভালো খাবার জুটলো।
 অরুণাভ ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-- এটা তুই ঠিক বললি না খোকা। তোর মা কিন্তু রান্নার ব্যাপারে কখনো কঞ্জুসি করে না। যে যা পছন্দ করে তোর মা কিন্তু রোজই তাই কিছু না কিছু করার চেষ্টা করে। লতিকা রান্না করে বেশিরভাগটাই ঠিকই কিন্তু তোর মা কিন্তু রান্নাঘরেই থাকে।
-- বাবা ,মায়ের বিরুদ্ধে কিছু বললেই তুমি সেই আগের মতই ফোঁস করে ওঠো।
 অরুণাভ হাসতে হাসতে বললেন,
-- সেটাই স্বাভাবিক নয় কি? একেই বলে দাম্পত্য। শিখে রাখ তোরও ভবিষ্যতে কাজে আসবে।
 অসিত আড়চোখে শ্রাবণীর দিকে একটু তাকালো। অরুণাভর তা চোখ এড়ালো না। কিন্তু শ্রাবণী চুপচাপ।


 রাতে খাওয়ার পর শ্রাবণী যখন উপরে ওঠে তখন অনেকটাই রাত হয়ে গেছে। শ্রাবণী ভালোভাবেই জানে সে উপরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অসিত তার কাছে আসবে। তার ধারণা যে ভুল না সে তার ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই প্রমাণ পেলো। আজ শ্রাবণী ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেনি। কারণটা হল অসিত এই ঘরে আসলে ওর জিনিসটা ওকে দিতে হবে।
-- ভিতরে আসতে পারি?
 অসিতের কথা শুনে শ্রাবণী আজ আর বাঁকাভাবে উত্তর না দিয়ে বললো,
-- হ্যাঁ আসুন।
-- কী সৌভাগ্য আমার! আজ সূর্য্য কোন দিক থেকে উঠেছে ভাবতে হচ্ছে।
 অসিত ঢোকার সাথে সাথেই শ্রাবণী বললো,
--- না,আসলে আপনার সাথে আমার একটু দরকার আছে।
-- তোমার দরকার? তাও আবার আমার কাছে? কিন্তু তার আগে আমার একটা কথার উত্তর দাও তো?
-- বলুন কী জানতে চান?
-- এই যে তুমি মাইনে পেয়ে বাড়ির প্রতিটা লোকের জন্য কিছু না কিছু কিনে এনেছো। তোমার কি একবারও মনে হয়নি আমিও এই বাড়ির সদস্য। আমার জন্যও কিছু আনতে কি তোমার মন সায় দেয়নি? এত অপরাধ করে ফেলেছি আমি?
-- আর কিছু?
-- হ্যাঁ বলছি - আমি নাহয় খুব খারাপ মানুষ! কিন্তু তুমি তো খুব ভালো মেয়ে --
-- কে বললো আপনাকে এ কথা?
-- কে আবার বলবে? আমি তো চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। 
-- কী দেখতে পাচ্ছেন?
-- সে থাক কী দেখতে পাচ্ছি তা বলে কোন লাভ নেই। কিন্তু তুমি কী করে পারলে আমার জন্য কিছু না এনে?
-- কী করে ভাবলেন আমি এত অকৃতজ্ঞ? আপনার বাবার দয়ায় আজ এখানে পৌঁছেছি --
-- আবার শুরু হল। ভেবেছিলাম আজ মনেহয় শুধু ভালো ভালো কথাই বলবে। আচ্ছা আমায় বলো তো তোমার এই 'দয়া,আশ্রিতা' - এই কথাগুলো আমি কী করলে তুমি বন্ধ করবে?
-- আমাকে অকৃতজ্ঞ হতে বলছেন?
-- বারবার এই কথাগুলো বললেই কী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়? শুধু তো এই কথাগুলো আমাকেই বলো।কই বাবা,মাকে তো কখনো বলতে শুনিনি।
-- আপনার সাথে দয়া করে বাবা,মার তুলনা টেনে আনবেন না।
-- তারমানে বাবা,মা খুব ভালো আর আমি তোমার কাছে খুব খারাপ?
-- সে কথা আমি তো বলিনি। আপনাকে খারাপ কখন বললাম? বাবা,মা আমাকে প্রথম থেকে যেভাবে বুকে টেনে নিয়েছেন আর আপনি প্রথম থেকেই আমার এই বাড়িতে থাকা নিয়ে বিরোধিতা করে গেছেন।
-- বাবা,মা প্রথমেই বুকে টেনে নিয়েছেন -
 ঠোঁটের কোণায় একটু মুচকি হাসি রেখে অসিত শ্রাবণীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-- কিন্তু আমি তো প্রথম দিকে না হলেও তারপর অনেকবার বুকে টানতে চেয়েছি। তুমিই তো ধরা দিতে চাও না।
 শ্রাবণী অসিতের কথা শুনে একটু থমকে গেলো। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে প্যাকেটটা  অসিতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
-- না, আমি এতটা খারাপ নই। আমি আপনার জন্যও কিছু এনেছি। তবে আমি হয়ত আপনার মত অত দামী জিনিস কিনতে পারিনি আমার ক্ষমতা অনুযায়ী এনেছি। পছন্দ হলে পরবেন।
-- আর পছন্দ না হলে ?
-- কাউকে দিয়ে দেবেন।
-- তুমি যতটা খারাপ আমাকে ভাবো ততটা খারাপ আমি নই। আমি তো ভাবতেই পারিনি তুমি আমার জন্য কিছু কিনে এনেছো। সকলের কথা জেনে আমার জন্য কিছু আনোনি দেখে প্রথমে রাগ হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই রাগ কষ্ট আর অভিমানে পরিণত হয়েছিল। আর জানো তো অভিমান হয় সেই মানুষটার প্রতি যার প্রতি থাকে ভালোবাসা। 
 অসিত প্যাকেট খুলে টিশার্টটা দেখে বলে,
-- তোমার পছন্দ আছে! আগের জামাটাও আমার খুব পছন্দ হয়েছে। অফিসের সবাই বলেছে জামাটা নাকি আমায় খুব মানিয়েছে। 
 তারপর বাচ্চাদের মত বলে,
-- আমি কালই এটা পরবো। আচ্ছা শ্রাবণী আমি যদি তোমায় কিছু গিফট করি তুমি নেবে তো?
-- আবার তো সেই পুরোনো কথাই বলতে হয় আমার এই নতুন জীবনে যা কিছু পেয়েছি তা তো সবই আপনাদেরই দান। নতুন করে আমায় আর কিছু গিফট করতে হবে না।
-- যদি তাই বলো সে জীবনে আমার কোন দান নেই। ওগুলো সবই বাবা,মা দিয়েছেন তোমায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে শুধু আমার কথা বলছি।
-- না, আমি আর কিছু চাই না কারও কাছ থেকে। মা এখন ভালো আছেন। আমিও এখান থেকে চলে গেছি। আপনিও আমাকে দিনরাত দেখার থেকে মুক্তি পেয়েছেন -- তাই
 অসিত একটু জোরেই বলে উঠলো,
-- তুমি কিছুতেই আমায় ক্ষমা করতে পাচ্ছো না এখনো? ভুলতে পারছো না আমার বলা কথাগুলো? কিন্তু আমি জানি একদিন তুমি আমায় ঠিক চিনতে পারবে। বুঝতে পারবে আমার ভালোবাসা। 
একটু চুপ থেকে পুণরায় বলে,
অনেক রাত হল এবার শুয়ে পরও। আমি যাই। আর হ্যাঁ
 প্যাকেটটা দেখিয়ে বললো,
-- এটার জন্য থ্যাংকস -

ক্রমশ 

   

No comments:

Post a Comment