Wednesday, March 1, 2023

একদিন ভালোবাসবে (১৫ তম পর্ব)

একদিন ভালোবাসবে (১৫ তম পর্ব)

  নিলয় তিয়াসার পায়ে চুন,হলুদ গরম করে লাগিয়ে দেওয়ার পর ঘন ঘন জানতে চাইছে,
--- তোমার ব্যথা কমেছে?
 তিয়াসা প্রতিবারই একই উত্তর দিচ্ছে " হ্যাঁ কম এখন একটু "। নিলয়ের এই উদ্বিগ্নতা দেখে মনেমনে সে হেসেই চলেছে। যতবারই নিলয়ের সাথে চোখাচোখি হয়েছে ঠিক ততবারই তিয়াসাই চোখ সরিয়ে নিয়েছে। আড়চোখে খেয়াল করছে নিলয় কখনো তার মুখের দিকে আবার কখনো বা তার পায়ের গোড়ালির দিকে তাকিয়ে। নিলয় সেই থেকে তিয়াসার পায়ের কাছেই বসে। ভীষণ একটা ভালোলাগা কাজ করতে থাকে তিয়াসার মধ্যে। সে বালিশ থেকে মাথাটা একটু উঁচু করে উঠে বসতে গেলে নিলয় সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে ওকে ধরে বসিয়ে দেয়। তিয়াসা বলে ওঠে,
-- এগুলো কী হচ্ছে কী? আমার সেবা করা দেখে মনে হচ্ছে আমি হাত,পা ভেঙ্গে পরে আছি। সবাই কী ভাবছে বলো তো?
নিলয় ধমকের সুরে বলে ওঠে,
-- একদম উল্টোপাল্টা কথা বলবে না। কী ভাববে? এতে ভাবার কী আছে? মানুষ অসুস্থ্য হলে এগুলো বাড়ির লোকে করেই থাকে। এটা আমি না করলে অন্য কেউ করতো।
 তারপর একটু গাম্ভীর্য এনে বলে,
--  তুমি কী ভাবছো বলো তো? তুমি বলে আমি এসব করছি? তোমার জায়গায় অন্য যে কেউ হলেই আমি এটা করতাম।
-- হ্যাঁ এ ক'টাদিনে সে আমি বুঝে গেছি। আমি বলি কী সেই থেকে বাবা,মায়ের ঘর আটকে পরে আছি এবার একটু একটু করে নিজের ঘরের দিকে যাই। তারা দু'জনেই তো সেই থেকে ড্রয়িংরুমে রয়েছেন। পিয়াটা আর না পেরে উপরে চলে গেছে। এই সবকিছুর জন্য তুমিই দায়ী।
 নিলয় চোখ বড় বড় করে তিয়াসার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
--- এইজন্যই বলে মানুষের ভালো করতে নেই। ঠিক আছে আমিই তবে বেরিয়ে যাচ্ছি। 
 নিলয় বেরিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিতেই তিয়াসা খাট থেকে একটা পা নামাতে গিয়েই "আহ্" বলে আর্তনাদ করে উঠে। শুনতে পেয়েই নিলয় দৌড়ে এসে ওর পা টা সাবধানে ধরে খাটের উপরে তুলে দিয়ে বলে,
--- সরি,সরি - পা টা ধরে তুলে দেওয়া একদম আমার উচিত হল না। 
 ব্যথা লাগা পায়ের উপর একটা হাত রেখে বলে ওঠে,
-- নিচুতে নামিয়ে দিই কি বলো ?
 তিয়াসা যন্ত্রণাকাতর মুখটা নিলয়ের দিকে তুলে খুব গাঢ়ভাবে বলে,
-- আমি ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছি আর তুমি ইয়ার্কি মারছো আমার সাথে?
 নিলয় দুইপাশে মাথা নাড়িয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলে ওঠে,
-- ইয়ার্কি? ধ্যাৎ! তাও আবার তোমার সাথে?  সে সম্পর্কটাই তো এখনো গড়ে ওঠেনি।
 তিয়াসা মুখটা গোমড়া করে বসে আছে দেখে নিলয় এগিয়ে গিয়ে তার দু'পায়ের তলে একটি হাত আর একটি হাত কাঁধের কাছ থেকে দিয়ে তিয়াসাকে কোলে তুলে নিয়ে শ্বশুর, শ্বাশুড়ীর সামনে থেকে উপরে উঠতে শুরু করে। আচমকা নিলয়ের এই এই কাজ দেখে তারাও থ হয়ে তাকিয়ে থাকেন। আর তিয়াসা লজ্জায় নিজের মুখটি নিলয়ের বুকের সাথে চেপে থাকে। পড়ে যাওয়ার পরে নিলয় যখন তাকে কোলে তুলে নিয়েছিল তার ভিতর তখন কোন অনুভূতি আসেনি। তখন ছিল সে ব্যথায় কাতর।কিন্তু এখন হঠাৎ করে নিলয়ের বুকের কাছে নিজেকে সপে দিয়ে তার মধ্যে অদ্ভুত একটা অনুভূতি কাজ করছে। মুখটা বুকের মধ্যে গুজে দিয়ে চোখ বন্ধ রেখে দু'হাতে নিলয়কে সে জড়িয়ে আছে।

 নিলয় উপরে উঠে গিয়ে ভেজানো দরজা নিজের কাঁধের সাহায্যে মৃদু ধাক্কা দিয়ে খুলে ভিতরে ঢুকে দেখে পিয়া ঘুমাচ্ছে। তিয়াসাকে কোলে রেখেই সে পিয়াসাকে ডাকতে থাকে। পিয়াসা ঘুম জড়ানো চোখে ধড়মড় করে উঠে দিদিকে শোয়ার জায়গা করে দেয়। হাসতে হাসতে বলে,
-- দিদি, তোর বরটা বেশ রোমান্টিক। মনেহচ্ছে সিনেমার হিরো।যখন তখন তোকে কোলে তুলে নিচ্ছে। আহা রে!আমার কপালেও যেন এরূপ একটা বর জোঠে। 
  হাসতে থাকে পিয়া।
 নিলয় তখন খাটের এককোণে বসে প্রচণ্ড হাঁপাচ্ছে 
হাঁপাতে হাঁপাতেই বললো,
--- শুধু তোমার দিদিই নয় তুমি পড়ে গেলেও তোমায় এইভাবেই কোলে তুলে নেবো। তোমার দিদিকে জানিয়ে দাও রাস্তাঘাটে যত মেয়ে আছে তারা পড়ে গেলেও এইভাবেই অতি যত্নে তাদের আমি বুকের সাথে চেপে ধরে হাঁটাচলা করি। 
 কথাটা বলে আড়চোখে সে তিয়াসার দিকে তাকিয়ে দেখে। তাকে দেখে নিলয়ের মনেহল সে যেন অন্য কোন ভাব রাজ্যে বিরাজ করছে 
 পিয়া তো হো হো করে হেসেই চলেছে আর তিয়াসা মনেহয় কোন কথা ভালোভাবে শুনতেই পায়নি।কারণ নিলয় যেভাবে তাকে বুকের সাথে চেপে ধরে উপরে নিয়ে এসেছে তার আবেশ থেকে সে এখনো বেরোতেই পারেনি। তাই একটু অন্যমনস্ক ভাবেই বলে উঠলো,
-- হূ ঠিক বলেছিস।
 পিয়া আর নিলয় দু'জন দু'জনের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে  হেসে দেয়। তাদের হাসি দেখে তিয়াসার সম্বিৎ ফিরে আসায় সে ওদের দিকে তাকিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো,
-- ক্যাবলার মত হাসছিস কেন তোরা?
 একথা শুনে তারা আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো। তিয়াসা ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসির কারণ বুঝতে না পেরে নিজেই এবার ক্যাবলার মত একবার পিয়া আর একবার নিলয়ের দিকে তাকিয়ে শুয়ে পড়ার উদ্যোগ করতেই ঝটপট নিলয় এগিয়ে গিয়ে তাকে শোয়ার জন্য সাহায্য করলো। পিয়া খাট থেকে নেমে চলে যেতে যেতে বলতে লাগলো,
--- বাবা! এখানে আর থাকা মানে পরে আমাকে শুনতে হবে "বড্ড বেরসিক" - কাজ নেই বাবা আমার এইসব বিশেষণে বিশেষিত হওয়া। তার থেকে আমি কেটে পড়ি।
 পিয়া যাওয়ার সময় দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে যায়। তিয়াসা তার চোখ আধবোজা অবস্থায় নিলয়কে দেখে চলেছে। তিয়াসা তো দুপুরে ঘুমায় না কিন্তু নিলয় যদি সুযোগ পায় তাহলে দুপুরে একটু ঘুমিয়ে নেয়। অফিস থাকলে কাজের মধ্যে থাকে তখন আর ঘুম পায় না। কিন্তু আজ তার বড্ড ঘুম পাচ্ছে। সকালে তিয়াসাকে দেখে যে পাগল পাগল অবস্থা তার হয়েছিল এখন তার সেই ফিলিংসটা অবশ্য নেই। হয়ত সেটা তিয়াসা আঘাত পাওয়ার ফলেই । নিলয়কে বসে ঝিমুতে দেখে তিয়াসা তাকে বললো,
-- আমাদের ঘরে কিন্তু কোন সোফা নেই।।শুতে গেলে আমার পাশেই শুয়ে পড়তে হবে। জাত না গেলে বসে না থেকে পাশেই শুয়ে পরো।
 নিলয় কোন উত্তর না দিয়ে একটা বালিশ টেনে নিয়ে তিয়াসার পাশে শুয়েই ঘুমিয়ে পরে। কিন্তু তিয়াসার তো দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস নেই সে একদৃষ্টিতে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে নানান কথা ভাবতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের ঘোরেই মধ্যেই নিলয় একটি হাত তিয়াসার গায়ের উপর তুলে দেয়। তিয়াসা চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকে।

ক্রমশ 
    

No comments:

Post a Comment