Thursday, March 9, 2023

একদিন ভালোবাসবে (২৬ পর্ব)

অসিতের জন্মদিনে সন্ধ্যায় বসে গানের আসর। শ্রাবণী,অঞ্জলী দু'জনে বেশ কয়েকটা গান করেন। সেখানেই ঠিক হয় অনেকদিন বাইরে ঘুরতে যাওয়া হয় না এবার চারজন মিলে ঘুরতে যাওয়া হবে। প্রথমেই আপত্তি করে শ্রাবণী
-- তোমরা সবাই যাও মা। আমি বাড়িতেই থাকবো।আমার কোন অসুবিধা হবে না। লতিকামাসী আছে তো
অঞ্জলী সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠেন
-- তাই হয় নাকি? তোকে রেখে আমরা তিনজনে ঘুরতে যেতে পারি?
বাবা,মায়ের জোরাজুরিতে শ্রাবণী যেতে বাধ্য হয়। তবে বেশি দূর নয়। পুরীতে দিন সাতেকের জন্য তারা বেরিয়ে পরে। শ্রাবণী জীবনে কোনদিন সমুদ্র দেখেনি। মনের ভিতর অনেক কষ্ট জমা থাকলেও সমুদ্রের কাছে এসে দাঁড়ালে কিছুক্ষণের জন্য হলেও তার মনটা ভালো হয়ে যায়। 
 সেদিন সন্ধ্যায় সি বীচে একাই বসেছিল। বাবা, মা আজ আসেননি। অসিতও তার রুম থেকে কখন বেরিয়েছে কেউ জানে না। আজ এই সমুদ্রের পারে বসে বাবার জন্য মনটা হুহু করে উঠছে। কেমন আছেন এখন বাবা? বেঁচে আছেন কিনা তাও সে জানে না। এক একবার ইচ্ছা করে একবার গিয়ে বাবার সাথে দেখা করে আসবে। কিন্তু পরক্ষণেই মনের ভিতরে একটা ভয় কাজ করে। ওখানে গেলে যদি বাবা তাকে আটকে দেয়? আবার তো সেই অত্যাচার সহ্য করতে হবে। সমুদ্রের পাড়ে বসে যখন শ্রাবণী ফেলে আসা অতীতে বারবার ফিরে যাচ্ছে ঠিক তখনই তার গা ঘেঁষে কেউ একজন বসে। শ্রাবণী তাকিয়ে দেখে অসিত। সঙ্গে সঙ্গে সে একটু দূরে সরে বসে বলে,
-- কী ব্যাপার বলুন তো আপনার? আজ কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছি আপনার সেই আগের তেজ নেই। কী চান আপনি আমার কাছে?
-- বেশি কিছু চাওয়ার নেই। চাই শুধু বন্ধুত্ব। তুমি আমার বন্ধু হবে?
-- আপনি বড়লোক,দেখতে সুন্দর। আমার মত একজন আশ্রিতার কাছে বন্ধুত্বের দাবি রাখবেন না। হতেও তো পারে এই বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে আমি আপনাদের পরিবারের কোন ক্ষতি করে দিলাম।
-- কেন বারবার পুরনো কথা টেনে আনো?আর কতবার ,কিভাবে তোমার কাছে ক্ষমা চাইলে তুমি খুশি হবে?
শ্রাবণী কোন কথার উত্তর না দিয়ে উঠে দাঁড়ায় হোটেলে ফেরার জন্য। অসিত হাত ধরে টেনে ওকে আবার বসিয়ে দেয় পাশে।
-- কথা না বলতে ইচ্ছা করলে বলবে না। কিন্তু আর কিছুক্ষন পাশে বসে থাকো চুপচাপ।
-- কেন বলুন তো? এক সময় তো খুব চিৎকার করতেন 'আমার সামনের থেকে চলে যাও,তোমায় আমি সহ্য করতে পারছি না,তোমায় দেখলে আমার ইরিটেশন হয় '
হঠাৎ কী হল আপনার?
-- আচ্ছা তুমি কি পুরনো কথা কিছুতেই ভুলতে পারো না?
-- পুরনো কথা ভুলে গেলে মানুষ বাঁচবে কী করে? এই যে আমি আপনাদের বাড়িতে আশ্রিতা হয়ে ভালোমন্দ খেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি - আমি কি আমার অতীতটা ভুলতে পেরেছি? আবার যখন আমি ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়াবো তখন কি আজকের কথাগুলো ভুলতে পারবো?
-- বেশ গুছিয়ে কথা বলতে পারো, মানুষের রাগটা বুঝতে পারো কিন্তু ভালোবাসাটা বোঝার ক্ষমতা ঈশ্বর তোমায় দেননি।
 অসিতের কথা শুনে শ্রাবণী প্রথমে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। কারণ কিছুদিন ধরেই সে বুঝতে পারছে অসিত তাকে কী বলতে চায়। কিন্তু সে না বোঝার ভান করে বললো,
-- মানুষের ভালোবাসা না বুঝলে আমি কী আপনাদের বাড়িতে থাকতে পারতাম? বাবা,মা আমায় কত ভালোবাসেন। তারা যদি আমায় ভালো না বাসতেন আমার ঠাঁই হত গাছতলায়। শেয়াল কুকুরের মত সবাই ছিঁড়ে খেতো। কথাটা শুনেই অসিত শ্রাবনীকে একহাত দিয়ে বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলে,
-- এইসব কথা কখনো আমার সামনে বলবে না
 শ্রাবণী এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-- আপনাদের বাড়িতে থাকি বলে আপনি যখন তখন এভাবে আমায় নিজের কাছে টানবেন না। কারণ আমার একটা আত্মসম্মান বোধ আছে। আর যদি মনে করেন আমি আশ্রিতা বলে আপনি যা খুশি করতে পারেন তাহলে আমার বলার কিছু নেই।
  কথাটা শুনে অসিত প্রচণ্ড ধাক্কা খেলো। সে ভাবতেই পারেনি শ্রাবণী এই ধরণের কথা পুনরায় তাকে বলতে পারে। নিজেকে সামলে নিয়ে খুব আস্তে করে বলল,
-- সরি আর কখনো এই ভুল হবে না।

  শ্রাবণী হোটেলে ফিরে আসলেও অসিত ওখানেই বসে থাকে। অনেক রাতেও যখন সে হোটেলে ফেরেনি তখন অরুণাভ বারবার করে তাকে ফোন করতে থাকেন। শেষমেস ফোন রিসিভ করে অসিত। হোটেলে তিনটে রুম বুক করা হয়েছিল। অরুণাভ,অঞ্জলী একটাতে,অসিত একটাতে,শ্রাবণী আর একটাতে। অত রাতেও অসিত ফেরেনি জানতে পেরে মায়ের ঘর থেকে খাবারটা এনে সে অসিতের ঘরে রেখে গিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে। দোতলার ব্যালকনি থেকে হোটেলের মেইন গেটের থেকে হোটেলের ভিতরে কেউ ঢুকলে দেখা যায়। শ্রাবণী, অসিত গেট থেকে ঢুকছে দেখেই বাবা,মায়ের রুমে গিয়ে বসে। অসিত হোটেলে ফিরে বাবা,মায়ের রুমের দরজা থেকেই 'আমি ফিরেছি' - কথাটা বলেই চলে গেলো। অঞ্জলী চেঁচিয়ে বললেন,
-- ঘরে খাবার রেখে দিয়ে এসেছে কুহু খেয়ে নিস।
 অসিতের কথাটা কানে গেলো কিনা বোঝা গেলো না। তবে অসিতের মন খারাপের কারণটা শ্রাবণী খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারলো।

 অসিত তার রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ না করে পরনের পোশাক না খুলেই খাটের উপর নিজেকে এলিয়ে দিলো। শ্রাবণী অনেকক্ষণ বাবা,মায়ের সাথে গল্প করে যখন নিজের রুমে ঢুকতে যাবে দেখে অসিতের রুমের দরজা খোলা। কৌতূহল বশত উঁকি দিয়ে দেখলো বাইরের পোশাক না খুলেই খাটের উপর থেকে পা ঝুলিয়ে অসিত চিৎ হয়ে খাটের উপর শুয়ে আছে। 
শ্রাবণী নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। কিন্তু ঘন্টাখানেক এপাশ ওপাশ করেও তার ঘুম এলো না। কী মনে হতে দরজা খুলে বেরিয়ে দেখে অসিতের দরজা সেইভাবেই খোলা আর সেই একইভাবে অসিত খাটের উপর শোয়া। সে আস্তে আস্তে অসিতের ঘরের ভিতর গিয়ে ঢুকলো।

ক্রমশ 
    

No comments:

Post a Comment