Saturday, March 18, 2023

একদিন ভালোবাসবে (৪০ পর্ব)

আগে বলো তুমি কেন আমার সাথে এরকম ব্যবহার করো?
-- সত্যিটা জানলে আপনার ভালো লাগবে না।
-- কী সত্যি? ভালো না লাগলেও শুনতে চাই। বলো কী সেই সত্যি?
-- কিছু মানুষ আছে যারা অপ্রিয় সত্যিটা নিতে পারে না।আর আপনি ঠিক সেই দলের।
 অসিতের এবার রাগ হতে থাকে। কিসের এত দেমাক এই মেয়েটার? তবুও নিজের রাগকে সংবরণ করে যতটা পোলাইটলি বলা যায় সেইভাবেই বলে,
--- এত ভনিতা না করে সত্যিটা বলো। আর ধৈর্য্য ধরতে পারছি না।
-- আপনার ভিতর দুটি স্বর্তা কাজ করে। প্রতিটা মানুষেরই দুটি  স্বর্তা থাকে। কিন্তু একটিকে মানুষ লুকিয়ে রাখতে জানে। আপনি সেটা পারেন না। যে মানুষটার প্রতি আপনার রাগ হয় আপনি তার সামনেই সেটা উগড়ে দেন। একবারও ভাবেন না অপরদিকের মানুষটি তাতে কত কষ্ট পায়, আঘাত পায়। আবার অপর  স্বর্তাটি সম্পূর্ণ একটি অন্য মানুষ। প্রত্যেকটা মানুষেরই রাগ,অভিমান, দুঃখ,কষ্ট,ভালোবাসা থাকে। কিন্তু সব সময় সেটাকে টেনে বাইরে আনা ঠিক নয়।
-- তোমার কথার মানে দাঁড়াচ্ছে মানুষের কোন কিছুই মানুষ তার মন থেকে বাইরে বের করে আনবে না। নিজে গুমরে গুমরে মরবে। সে রাগ হোক কিংবা ভালোবাসা।
-- দেখুন এত তত্ত্ব কথা আমি বুঝি না। তবে এই ধরণের মানুষকে আমি একদম পছন্দ করি না।
-- মোদ্দা কথা তুমি আমায় পছন্দ করো না। কী তাই তো? তবুও বেহায়ার মত বলবো আমি তোমায় ভালোবাসি। আর আমার এই ভালোবাসার মধ্যে কোন খাদ নেই। আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবো। বাকিটা সময় বলবে।
 শ্রাবণী কোন কথার উত্তর দেওয়ার আগেই অরুণাভ,অঞ্জলী এসে গেলেন। ওদের কথা আর শেষ হল না। হোটেলে খেয়ে বাড়িতে ফিরতে প্রায় রাত সাড়ে দশটা বেজে গেলো। শ্রাবণীর কথাগুলো শোনার পর থেকেই অসিত গুম মেরে থাকলো। কথা প্রয়োজন না হলে বাড়ি ফেরবার পূর্ব পর্যন্ত সে বলেনি। গাড়িতে উঠবার সময় বললো,
--- বাবা,তুমি সামনে বসো।
 অরুণাভও বুঝলেন দু'জনের মধ্যে মান-অভিমানের পালা চলছে। তাই তিনিও কোন কথা না বলে চুপচাপ গিয়ে ছেলের পাশে বসে পড়লেন।
 বাড়িতে এসে অরুণাভ ও অঞ্জলী নিজেদের ঘরে ঢুকে গেলেন। অসিত গাড়ি গ্যারেজ করে নিজের ঘরে চলে গেলো কোনদিকে না তাকিয়ে। শ্রাবণী বাবা,মাকে ওষুধ দিয়ে যখন উপরে উঠতে গেলো সে কাপড়ের কোণায় বেঁধে সিঁড়িতে দরাম করে পড়ে গেলো। হাতে ছিল তার জলের বোতল সেটা শব্দ করে গড়াতে গড়াতে ঘরের মেঝেতে এসে থামলো। শব্দ পেয়ে সকলে ছুটে এসে দেখে শ্রাবণী পড়ে আছে সিঁড়িতে। অসিত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে উপরেই দাঁড়িয়ে।এমনিতেই তার মন ছিলো খারাপ, ছিলো সে একটু অন্যমনস্কও।অরুণাভ চেষ্টা করলেন শ্রাবণীকে তোলার। কিন্তু তিনি পারলেন না। শ্রাবণী তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। উপরে ছেলেকে দাঁড়ানো দেখে অঞ্জলী বললেন,
-- ওখানে দাঁড়িয়ে হাদার মত কী দেখছিস? ওকে এসে তোল।
অসিত এসে শ্রাবণীকে তুলতে গেলে প্রথমে সে বাঁধা দিলো। কিন্তু অঞ্জলীর কথায় চুপ হয়ে গেলো। শ্রাবণী যন্ত্রণায় ছটফট করছে দেখে অসিত বললো,
-- মা ওকে তোমাদের ঘরে নিয়ে যাই। আমার মনেহচ্ছে ওর কনুইয়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে। হাসপাতাল নিয়ে যেতে হবে।সবাই তাকিয়ে দেখেন শ্রাবণীর কনুইয়ের হাড় ভেঙ্গে রীতিমত ঝুলছে। শ্রাবণীকে দু'হাতে তুলে নিয়ে অসিত মায়ের ঘরে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিয়ে বললো,
-- আমি রেডি হয়ে আসছি। এক্ষুণি নিয়ে হাসপাতাল যেতে হবে। বাবা,রেডি হয়ে নাও।
 অঞ্জলী শুনে বললেন,
-- আমিও সাথে যাবো।
 শ্রাবণী তখন দাঁতে দাঁত দিয়ে যন্ত্রণা সহ্য করার চেষ্টা করছে। চোখ থেকে সমানে জল পড়ে যাচ্ছে।অঞ্জলী তার মাথায় হাত বুলিয়ে চলেছেন। মা যেতে চাইছেন শুনে অসিত বলে,
-- না,এত রাতে তোমার গিয়ে আর কাজ নেই। আমি আর বাবা যাচ্ছি।
 কয়েক মিনিটের মধ্যেই অসিত পুণরায় নিচুতে নেমে এলো। বাপ,ছেলে দু'জনে মিলে শ্রাবণীকে নার্সিংহোম নিয়ে গেলেন। অসিত শ্রাবণীকে ধরতে গেলে সে বললো
-- আমি হেঁটেই যেতে পারবো। ধরতে হবে না।
 যন্ত্রণায় চোখ,মুখ শ্রাবণীর তখন কালো হয়ে গেছে। অসিত শ্রাবণীর কথার কোন পাত্তা না দিয়ে তাকে ধরেই গাড়িতে তুললো। গাড়িতে বসিয়ে নিজে সরে আসার সময় আস্তে করে বললো,
-- রাগটা পরে দেখাবে। আগে প্লাস্টারটা করে আসি।
    তাকে বসিয়ে বাবাকে বসার কথা বলেই নিজে এসে ড্রাইভিং সিটে বসেই গাড়ি ছেড়ে দিলো। অঞ্জলীর বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও তাকে কেউ নিতে রাজি হল না। তিনি কাঁদতে কাঁদতে গেট থেকেই ঘরে ফিরে গেলেন। নার্সিংহোম পৌঁছেই দৌড়াদৌড়ি,ছুটাছুটি সবই অসিত। অরুণাভ শ্রাবণীকে নিয়ে বসে থাকলেন। যদিও অসিতরা ভেবেছিল তারা শ্রাবণীকে নিয়েই ফিরবে কিন্তু ডক্টরবাবুরা সেদিন কিছুতেই ছাড়লেন না। প্লাস্টার করিয়ে রাতটা নার্সিংহোমেই রেখে দিলেন। ভোররাতের দিকে বাবা আর ছেলে বাড়িতে ফিরলেন। সকাল আটটার মধ্যেই আবার অসিত বেরিয়ে গেলো শ্রাবণীকে আনতে। সারাটা রাত জাগার ফলে অরুণাভ তখনো ঘুম থেকে উঠতে পারেননি। 
   হাসপাতাল পৌঁছে অসিত জানতে পারে দশটার সময় ডাক্তার এসে দেখে প্রেসক্রাইব করে তবে ছাড়বেন। অগত্যা অসিত বাইরেই অপেক্ষা করতে লাগলো। পেষ্ট,ব্রাশ কিনে সিস্টারের হাতে দিয়ে দিলো। শ্রাবণী জানতে চাইলো,
-- কে এসেছেন আমায় নিতে?
 সিস্টার একটু মজা করেই উত্তর দিলেন হেসে,
-- একজন হ্যান্ডসাম।
 শ্রাবণীর বুঝতে একটুও অসুবিধা হল না তাকে কে নিতে এসেছে। সিস্টার অসিতকে ভিতরে যাওয়ার পারমিশন দিলেও অসিত ইচ্ছা করেই ভিতরে ঢোকে না। ফর্মালিটিগুলো সেরে বাইরেই অপেক্ষা করতে থাকে।

ক্রমশ 

No comments:

Post a Comment