Sunday, July 10, 2016

দায়িত্ব
 ( Nanda Mukherjee)
**************                                                                                    হঠ্য়াত কোরে এতদিনপরে লিপির সাথে দেখা হয়ে যাবে  বিপুল এটা কোনদিন ও ভাবে নি l  বিপুল হাওড়া স্টেশন এ দিল্লীগামী ট্রেন এর জন্য অপেক্ষা করছিল l  একটা ছোট মেয়ে ছুটাছুটি কোরতে কোরতে হঠ্য়াত পড়ে যায় l  বিপুল দেখতে পেয়ে দৌড়ে যেয়ে মেয়েটিকে তোলে l  তার কাছে প্রশ্ন কোরে জানতে পারে  সে তার মায়ের সাথে এসেছে  মেয়েটির সাথে বসে বিপুল গল্প কোরতে থাকে l  ট্রেন কিছুটা লেট ছিলো l  হঠ্য়াত মেয়েটির মা হন্তদন্ত হোয়ে এসেই ছোট মেয়েটিকে বলতে শুরু করেন -  "তোকে যে বললাম  চুপচাপ বসে থাকতে l  একটু অন্যমনস্ক হয়েছি  আর সঙ্গে সঙ্গে তুই চলে আসছিস-  সেই থেকে তোকে খুজছি-  চল-"  হঠ্য়াত করে বিপুলের দিকে চোখ যেতেই মেয়েটির মা বলে ওঠে-  "বিপুলদা  তুমি এখানে"-  বিপুল ও এতক্ষণ পরে তাকে চিনতে পারে l  কি চেহারা হয়েছে লিপিকার l  সেই সুন্দর মুখখানার সাথে এখনকার লিপিকার চেহারার কোনো মিল নেই l  এই কি সেই লিপিকা l  বিপুল ভাবে এটা কি করে সম্ভব ?  কোথায় যাচ্ছে লিপিকা  একা মেয়েকে নিয়ে ?  ওর স্বামী ই বা কোথায় ?  কালো মেঘের মতো একরাশ ঘন চুল;  সুন্দর টানা টানা দুটি চোখ ,  দুধে আলতা গায়ের রং-  কোথায় গেলো সে সব ?  একি সেই লিপিকা ?  যে কিনা একদিন বিপুল কে ভিসন ভালবেসেছিল l  বলেছিলো "বিপুলদা  আমি তোমায় ভালবাসি"-  শুনে  বিপুল চমকে  উঠেছিল l  বিপুল ও লিপিকাকে ভালোবাসত l  কিন্তু বুঝতে পারেনি লিপিও তাকে ভালোবাসে l  লিপি ছিল বড়লোকের একমাত্র মেয়ে l  বিপুল ভেবেছিল ভালোবাসাটা বুঝি তার একতরফা l  লিপির আচরনে কোনদিনও সেটা  প্রকাশ পায়নি l  বিপুল ছিলো গরীব ঘরের সন্তান l  চার ভাই বোন তারা l  বিপুল ই বড় l  বাবা বেসরকারী অফিস এর একজন সাধারণ কর্মচারী l  সংসারে অভাব নিত্য  সঙ্গী l  বিপুল পড়াশুনার ফাঁকে টিউসনি কোরে মাস শেষে যা পেতো মায়ের হাতে তুলে দিত l  এমন অনেক দিন ও তাদের গেছে পেট ভরে দুবেলা খেতে পারেনি l  এহেন পরিবারের সন্তান সে কিনা বলবে  এক্জিকেউতিভ ইন্জিনীয়র এর একমাত্র মেয়েকে ভালবাসে l  না  কিছুতেই না l  তার সামনে এখন অনেক দায়িত্ব l  মা বাবার অনেক আশা তাকে নিয়ে l  পাশ কোরে বেড়িয়েই যেভাবে হোক একটা চাকরির ব্যবস্থা তাকে করতেই হবে l  ছোটভাইবোন গুলিকে মানুষ কোরতে হবে l  তাই তার নীরব ভালবাসার কথাটা নীরবেই বুকের ভিতর রেখে দেয় l  কিন্তু কলেজ এ রবীন্দ্র জয়ন্তীর দিনে লিপিকার মুখে ওই কথাটি শুনে  কিছুক্ষণের জন্য বিপুল বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিল l  সম্বিত ফিরে পেয়ে সে লিপিকার কথার উত্তর না দিয়েই যখন চলে যাছিল;  লিপিকা তাকে বলেছিলো-  "বিপুলদা কিছু বললে না ?"  বিপুল সে কথার ও কিছু উত্তর দেয়নি l  লিপিকা তখন আবার ও বলল-  "কাল  টিফিন আওযার এর মধ্যে তোমার উত্তরটা আমার চাই"l  বিপুল পরদিন টিফিন পিরিয়ড এ সুযোগ বুঝে লিপিকার হাতে একটি খাম ধরিয়ে দিয়ে বলল-  "গতকাল তুমি আমাকে যে কথাগুলি বলেছিলে তার উত্তরটা দিলাম"l  লিপিকা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি বিপুল তাকে  প্রত্যখান করবে l  তার উত্তরটা যা ছিল  তার সার সংক্ষেপ কোরলে দাড়ায়-  বিপুল গরিবের সন্তান l  তার কাধে অনেক দায়িত্ব l লিপিকার মতো বড়লোকের মেয়েকে তার জীবনে এনে তাকে দারিদ্যের অভিশাপের ভিতর ফেলতে পারবে না l  লিপিকা সেদিন কষ্ট পেলেও বিপুলের পরিস্থিতিটা বুঝতে পেরেছিল l  বিপুলের প্রতি তার সম্মান ও ভালবাসা দুই ই বেড়ে গেছিল l  দুবছরের সিনিয়র বিপুল যতদিন কলেজ এ ছিল তাকে কোনদিনও লিপিকা একথা নিয়ে কিছু আর বলেনি l   লিপিকাও  দেখেছে বিপুল ও তাকে পারতপক্ষে এড়িয়ে চলত l  উভয়য়ের ই ভিতরে একটা চাপা কষ্ট ছিল l   কিন্তু কেউ কোনদিনও পরস্পরকে  সেটা বুঝতে দেয়নি l  চিরদিনের মেধাবী ছাত্র বিপুল গ্রাজুয়েট হয়েই ব্যাঙ্ক এর উচ্চ পদে চাকরি পেয়ে যায়  l  দুটি বোনের পড়াশুনা শেষের পরে ভালো ঘরে বিয়েও দিয়ে দেয় l   ছোট ভাইটি এখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে l  বাবা বছর দুই আগে গত হয়েছেন l  মায়ের বহু পিড়াপিড়ি সর্তেও সে বিয়ে কোরতে রাজী হয়নি l  কিন্তু চাকরী পাওয়ার পর সে লিপিকাদের অনেক খোজ করেছে l  পুরানো বান্ধবদের কাছ থেকে ঠিকানা জোগার করে সে লিপিকাদের বাড়িতে গেছে l  যেয়ে শুনেছে তারা বাড়ী বিক্রি কোরে অন্যত্র চলে গেছেন l  কিন্তু বিপুলের মন থেকে লিপিকার ভালবাসা, লিপিকার চেহারা, লিপিকার প্রথম তাকে ভালোবাসার কথা জানানো কোনটাই মুছে যায়নি l  লিপিকাকে সে ভালোবেসেছিল সমস্ত মন প্রাণ দিয়ে l  জীবনে প্রথম এবং শেষ ভালবাসা তার l  কিন্তু বিশাল কর্ত্যবের সামনে ভালোবাসার বলিদান দিতে হয়েছিল তাকে l   কিন্তু আজ সে কোন লিপিকাকে দেখছে ?  "বিপুলদা, তুমি আমায় চিনতে পারছ না ?"  লিপিকার কথায় বিপুলের সম্বিত ফিরলো l  "তোমার এ রকম চেহারা হয়েছে কেন ?  তুমি একা মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ ?  তোমার স্বামী কোথায় ?"   "আচ্ছা তুমি এতগুলি প্রশ্ন কোরলে আমায় ?  দাড়াও -একটা একটা করে উত্তর দি  এই যে বললেনা -একা একা,  দুকা কোথায় পাব ?  তুমিকি আমায়  দেখেও কিছু বুঝতে পারছ না ?"  এতক্ষনে বিপুল ভালোভাবে লিপিকার  মুখের দিকে তাকালো l না-         কোথাও কোনো সিদুরের রেখা দেখতে  পেলোনা l   হাত দুটিও তো ফাকা l  লিপিকার কাছে - যেটুকু জানতে পারল পাশ করে বেরোবার পরে বাবার হঠ্য়াত স্ট্রোক হয় l হাসপাতাল থেকে তিনি আর বাড়ি ফিরে আসেন না l   বাবার মৃত্যুর বছর খানেক পর তার বিয়ে হয় একজন বড়ো ব্যবসায়ী র সাথে l দুবছর বাদে তার এই ফুটফুটে মেয়েটির জন্ম l  এর কিছুদিনের মধ্যেই স্বামীর ক্যান্সার ধরা পরে l  তিন বছর চিকিত্সার পর মাসখানেক আগে  মেয়েকে ও তাকে রেখে সঞ্জয় চিরদিনের মতো চলে গেছে l  তারপর থেকে সে কিছুদিন দেওর ও জায়ের সাথে শ্বসুর বাড়িতে ছিলো l  শ্বসুর শ্বাশুড়ি আগেই গত হয়েছেন l  এখন সে চিরকালের জন্য নিজের মায়ের কাছে ফিরে যাচ্ছে l  বিপুল অবাক হয়ে লিপিকার কথা শোনে l  বুকের ভিতরটা তার যন্ত্রনায় ফেটে যাচ্ছে l  এ কি শুনছে সে !!!!  এতদিন সে ভাবতো লিপিকা সুখে সংসার কোরছে l শুধু লিপিকাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা টা ছিল l  কিন্তু আজকের পর থেকে যে হাজার গুন যন্ত্রনাটা বেড়ে গেল l  "বিপুলদা, আমার ট্রেন এসে গেছে-  আমরা আসি, আজকে তোমায় দেখে খুব ভালো লাগলো, খুব শান্তি পেলাম l"  "এখন তোমরা কোথায় থাকো"?  বিপুল জিগ্ঘাসা করলো l "বাবার মৃত্যুর পর কটকে মামা বাড়ির কাছে ওই আগের বাড়িটা বিক্রি কোরে মা ছোট একটা বাড়ি কিনেছেন l  এখন থেকে বাকি জীবনটা মেয়েকে নিয়ে সেখানেই থাকব l  আসি-"  মেয়ের হাত ধরে লিপিকা ট্রেন এর দিকে এগিয়ে গেল l  কিছুক্ষণ পরে বিপুলের খেয়াল হোলো লিপিকার ঠিকানাটা তো রাখা হোলো না l  দৌড়ে সে এগিয়ে গেলো l  কিন্তু অত ভিড়ের মাঝে বিপুল লিপিকা বা তার মেয়ে কাউকেই সে দেখতে পেলো না l  বোবা একটা যন্ত্রণা তার ভেতরটা তখন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে l  তার মনে হোতে লাগলো -লিপিকার এই ভয়াবহ পরিণতির জন্য সেই দায়ীl.                                           ১৩ ৯ ১৫

No comments:

Post a Comment