*বঙ্গ নারী * ( নন্দা মুখার্জী ) ;;;;;;;:;;;;:;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;:;; আজ সুমনার গাড়ি হয়েছে ,দু'হাজার স্কোয়ার ফিটের ফ্লাট হয়েছে ,কিন্তু মাকে সে তার কাছে কিছুতেই আনতে পারেনি / ছেলের বয়স এখন তার পাঁচ বছর /ছেলের জম্মের পরেও এ সব তার কাছে দুঃস্বপ্ন ছিলো / নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময় থেকেই মলয়ের সাথে তার বন্ধুত্ব /এক পাড়াতে না হলেও রোজই তার সাথে সুমনার দেখা হতো / সুমনা খুবই সুন্দরী / সুন্দরীদের ভিতর যে একটা অহংকার বোধ চেহারার ভিতরই লুকিয়ে থাকে ;সুমনার ভিতর সেটা ছিলো না ,তার চেহারার ভিতর একটা লক্ষ্মী সুলভ ভাব ছিলো / তাই স্বভাবতই পাড়ার ছেলেদের তার উপর একটু অন্য নজর ছিলো / অবশ্য সুমনার সেদিকে কোনোই ভ্রূক্ষেপ ছিলো না / কিন্তু বে-পাড়ার ছেলে মলয়কে তার ভালো লাগতে শুরু করে /এই ভালোলাগা থেকেই মলয়কে সে ভালোবেসে ফেলে /মলয়ও ঠিক তাই /কিন্তু সুমনার ইস্পাত কঠিন মনের মানুষ বাবা এটাকে কিছুতেই মানতে পারেন না /পাড়ার তাসের আড্ডা থেকেই তিনি জানতে পারেন ,কোন বাড়ির ছেলের সাথে মেয়ে মেলামেশা করছে /তখন সুমনার সবে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে /প্রশান্ত বাবুকে তার নিত্যদিনের তাসের আড্ডা থেকে সময়ের আগেই ঘরে ফিরতে দেখে কমলাদেবী বুঝতেই পারেন -একটা কিছু ঘটেছে /বিশ বছরের বিবাহিত জীবন তার / বিয়ে হয়েছে ,সংসার করতে হয় তাই করছেন / মেয়ে হয়েছে ,ছেড়ে গেলে লোকে কি বলবে - তাই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি প্রশান্তবাবুর শারীরিক ও মানষিক অত্যাচার তিনি মুখ বুজে সহ্য় করে যাচ্ছেন /দাম্পত্য সুখ কি তিনি আগেও বুঝতে পারেননি ; সন্তান হবার পরেও না / স্বশুর ,শ্বাশুড়ি কেউই নেই / ঐ হীনমনা মানুষটির জন্য তিনি বিয়ের পর থেকে একদিনের জন্যও শান্তি পাননি /অ-কথ্য ,কু-কথ্য ভাষায় গালিগালাজ ,কথায় কথায় বাপ ,মাকে তুলে কথা বলা ;প্রতিবাদ করতে গেলে শারীরিক নির্যাতন / তাই মুখ বুজেই সব সহ্য করা / আজ যখন তিনি তার স্বামীকে তার ঘরে ফেরার আগেই ফিরতে দেখেছেন ;তখনি তিনি বুঝে গেছেন কিছু একটা ঝামেলা করতেই তিনি এই অসময়ে ফিরেছেন /ঘরে ফিরেই তিনি চিৎকার করে উঠলেন ,"কোথায় তোমার আদরিনী মেয়ে ? মুখ দেখাবার তো জো রইলো না ; ভবেশবাবুর ছেলের সাথে সে তো কেচ্ছা করে বেড়াচ্ছে "/ কমলাদেবী জানতেন যে মেয়ে মলয়কে ভালোবাসে / মাঝে মধ্যে তার নজরে পড়েছে তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছে / তিনি যে জানতে পেরেছেন তা তিনি মেয়েকে বলেননি / কারণ তিনি জানতেন মলয় ছেলেটি ভালো এবং ভালো ঘরের সন্তান /তিনি শান্ত সুরে স্বামীর কাছে জানতে চাইলেন ,"কি কেচ্ছা করেছে সেটা কি জেনেছো ?সারাজীবন আমাকে জ্বালাচ্ছ এবার আমার মেয়ের পিছনে লাগলে ?কি করেছে সে ?"এই নিয়ে দু'এক কথায় স্বামী ,স্ত্রীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া / সুমনা বাবাকে ছোট থেকেই খুব ভয় পায় / তাই বাপ ,মায়ের এই চিৎকার চেঁচামেচিতে সে ঘর থেকে বেড়োয় না /প্রশান্তবাবু হুকুম দিলেন ,"ওর আর পড়াশুনার দরকার নেই ,ও যেন বাড়ি থেকে এক পা ও না বেড়োয় /একবার যদি দেখি ও বাড়ি থেকে বেরিয়েছে তাহলে ওকে আমি আর বাড়িতে ঢুকতে দেবো না /এটা তোমার আদরিনীকে জানিয়ে দিও /" কথা ক'টি বলে আবার তিনি বাইরে বেড়িয়ে গেলেন /কমলাদেবী উঠে মেয়ের ঘরের কাছে যেয়ে তাকে ডেকে আনলেন নিজের কাছে / তার কাছে মলয়ের সম্মন্ধে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জানতে চাইলেন /মলয় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার / ছ মাস হলো একটা চাকরীতে ঢুকেছে / বড়োলোকের একমাত্র ছেলে / ওর বাবা এখনো চাকরী করেন /সব শুনে তিনি বললেন ,"তোর বাবা কিছুতেই ওকে মেনে নেবে না / তোরা পরস্পরকে যদি সত্যিই ভালোবাসিস আর বিয়ে করতে চাস তাহলে তোকে পালাতে হবে /হ্যা আমি মা হয়ে তোকে বলছি ও যদি রাজি থাকে তাহলে বুঝতে হবে ও তোকে সত্যিই ভালোবাসে /আমার জীবনটাতো নষ্ট হয়েই গেছে /তোর জীবনের প্রতি তোর বাবাকে আমি নাক গলাতে দেবো না /কাল যখন তোর বাবা কাজে বেড়োবে তখন তুই ওকে আসতে বলবি /তুই এক্ষুনি ওকে ফোন কোরে বল ; দেরি করিসনা / কোথার থেকে কি একটা ধরে এনে তোকে তার ঘাঁড়ে চাঁপিয়ে দেবে - তার ঠিক নেই / আমি মানুষটাকে একদম বিশ্বাস করি না / সুমনা মায়ের মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে / মনে মনে ভাবে - যে মা বাবার ভয়ে সব সময় ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে তার আজ এ কি রূপ ! মাকে বলে ," কিন্তু মা এমন হলে বাবা তো তোমায় ছাড়বে না ; খুব মারবে /" "তোর বাবার হাতে মার খেতে খেতে এখন আমার আর ব্যথা লাগে না / কিন্তু তোর কোনো ক্ষতি আমি তোর বাবাকে কিছুতেই কোরতে দেবোনা / যা- আমি যা বলছি তাই কর / তাড়াতাড়ি ফোনটা কর /"
এই ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই সুমনা মায়ের কথামতো মলয়ের সাথে পালিয়ে যেয়ে কালীঘাট মন্দিরে বিয়ে করে মলয়দের বাড়িতে যায় / কিন্তু মলয়ের বাবা ,মা কিছুতেই এ বিয়ে মেনে নেননা / সেই রাতে মলয় সুমনাকে নিয়ে তার এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেয় / পরেরদিন একটা ছোট ঘর ভাড়া করে আস্তে আস্তে নিজেদের সংসারটাকে গুছিয়ে নেয় / তিনটে বছর খুব কষ্ট করেছে ওরা / তার মধ্যেই ওদের ঘর আলো করে আসে সুমন / সুমনের জম্মের কিছু দিনের মধ্যেই মলয়ের বড়ো কোম্পানিতে ভালো মাইনের চাকরী /
মলয় যখন ফ্লাট কিনবে ঠিক করছে ; সুমনা যেয়ে সরাসরি তাকে বললো ,"আমার মায়ের জন্য যেন একটা বেডরুম থাকে / " মলয় কথাটা শুনে তার মুখের দিকে তাকিঁয়ে বলে ," একদম আমার মনের কথাটা বলেছো / আমিও কিন্তু এটা ভেবেছি /" সুমনার বড়ো ফ্লাট হোলো / মায়ের ঘরটা নিজের হাতে সাজালো / কিন্তু মাকে আসার কথা বললে মা বললেন ,"যাবো নিশ্চয় যাবো - আগে একটা গাড়ি কেন / তোর বাবার নাকের ডগা দিয়ে তোদের গাড়ি চড়ে দাদুভায়ের কাছে চলে যাবো /" বছর খানেকের মধ্যে গাড়িও কিনলো মলয় / এবার সে নিজেই শ্বাশুড়িমাকে তাদের কাছে যাওয়ার জন্য বললো / শুনে কমলাদেবী বললেন, "বাবা ,এই বয়সে উনাকে রেখে আমি কি তোমাদের কাছে যেয়ে নিঃশ্চিন্তে দিনের পর দিন থাকতে পারি ?মানুষটাতো নিজে কিছুই পারেনা ; শুধু রাগটাই তার সম্বল /এখন তো আমি তোমাদের কাছে আসছি ,যাচ্ছি - তা নিয়ে তো সে কিছুই বলেনা / আগের থেকে তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে / এখন আমার আর কোনো কষ্ট নেই /তোমরা ভালো আছো ,সুখী আছো - এর থেকে আমার জীবনে আর কি চাই বলো ? আমাকে নিয়ে তোমরা ভেবোনা / আমি এখন খুব ভালো আছি / একমাত্র মৃত্যু ছাড়া ঐ মানুষটাকে ছেড়ে যে আমি কোথাও যেয়ে থাকতে পারবো না বাবা !!"
নন্দা মুখার্জী 19.7..16 1AM.
এই ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই সুমনা মায়ের কথামতো মলয়ের সাথে পালিয়ে যেয়ে কালীঘাট মন্দিরে বিয়ে করে মলয়দের বাড়িতে যায় / কিন্তু মলয়ের বাবা ,মা কিছুতেই এ বিয়ে মেনে নেননা / সেই রাতে মলয় সুমনাকে নিয়ে তার এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেয় / পরেরদিন একটা ছোট ঘর ভাড়া করে আস্তে আস্তে নিজেদের সংসারটাকে গুছিয়ে নেয় / তিনটে বছর খুব কষ্ট করেছে ওরা / তার মধ্যেই ওদের ঘর আলো করে আসে সুমন / সুমনের জম্মের কিছু দিনের মধ্যেই মলয়ের বড়ো কোম্পানিতে ভালো মাইনের চাকরী /
মলয় যখন ফ্লাট কিনবে ঠিক করছে ; সুমনা যেয়ে সরাসরি তাকে বললো ,"আমার মায়ের জন্য যেন একটা বেডরুম থাকে / " মলয় কথাটা শুনে তার মুখের দিকে তাকিঁয়ে বলে ," একদম আমার মনের কথাটা বলেছো / আমিও কিন্তু এটা ভেবেছি /" সুমনার বড়ো ফ্লাট হোলো / মায়ের ঘরটা নিজের হাতে সাজালো / কিন্তু মাকে আসার কথা বললে মা বললেন ,"যাবো নিশ্চয় যাবো - আগে একটা গাড়ি কেন / তোর বাবার নাকের ডগা দিয়ে তোদের গাড়ি চড়ে দাদুভায়ের কাছে চলে যাবো /" বছর খানেকের মধ্যে গাড়িও কিনলো মলয় / এবার সে নিজেই শ্বাশুড়িমাকে তাদের কাছে যাওয়ার জন্য বললো / শুনে কমলাদেবী বললেন, "বাবা ,এই বয়সে উনাকে রেখে আমি কি তোমাদের কাছে যেয়ে নিঃশ্চিন্তে দিনের পর দিন থাকতে পারি ?মানুষটাতো নিজে কিছুই পারেনা ; শুধু রাগটাই তার সম্বল /এখন তো আমি তোমাদের কাছে আসছি ,যাচ্ছি - তা নিয়ে তো সে কিছুই বলেনা / আগের থেকে তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে / এখন আমার আর কোনো কষ্ট নেই /তোমরা ভালো আছো ,সুখী আছো - এর থেকে আমার জীবনে আর কি চাই বলো ? আমাকে নিয়ে তোমরা ভেবোনা / আমি এখন খুব ভালো আছি / একমাত্র মৃত্যু ছাড়া ঐ মানুষটাকে ছেড়ে যে আমি কোথাও যেয়ে থাকতে পারবো না বাবা !!"
নন্দা মুখার্জী 19.7..16 1AM.
No comments:
Post a Comment