নির্মম নিয়তি" নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
দাউ, দাউ করে চিতা জ্বলছে- অধিরবাবু এক দৃষ্টিতে চিতার দিকে তাকিয়ে, অপুর ছেলেবেলার কথা ভাবছেন । চোখ থেকে অবিরাম জলধারা বয়ে চলেছে
মুখে কোনো কথা নেই । সন্ধ্যা থেকেই তিনি যেনো বোবা হয়ে গেছেন ।অনেক পরিশ্রম কোরে, অনেক আশা নিয়ে তিনি ছেলেকে ডাক্তারী পড়িয়েছিলেন। চিরদিনের মেধাবী ছাত্র অপূর্ব, অধিরবাবুর একমাত্র সন্তান। স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে তার বছর পাঁচেক আগে । অপু তখন সবে ডাক্তারী পাশ করেছে ।শোভাদেবির হঠাৎ মৃত্যু। ব্রেন স্ট্রক। সাজানো, গুছানো সংসারটা অগোছালো হয়ে গেছিল। আস্তে আস্তে সেই শোক কাটিয়েও উঠেছিলেন। আনাড়ি হাতে বাপ, ছেলে সংসারটাকে মোটামুটি গুছিয়ে ও ফেলেছিলেন। অপুর বিয়ে দেওয়ার জন্য মেয়ে দেখতেও শুরু করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ একি হলো?? সকালে খেয়ে দেয়ে রোজ যেমন নার্সিং হোম যায় ঠিক তেমন তাই তো বেড়িয়েছিল- বাবার নিজের হাতে করে দেওয়া ডিম , আলু সেদ্ধ, ভাত খেয়ে। বিনা মেঘে বজ্র পাতের মতো অকসাৎ পাড়ার একটি ছেলে এসে সন্ধ্যায় খবর দিলো, "অপুদার এক্সিডেন্ট হয়েছে, নার্সিং হোমে আছে।" ছুটে গেলেন অধিরবাবু l কিন্তু ডাক্তারদের সব চেষ্টা , অধিরবাবুর ঈশ্বরের কাছে মাথা কোটা সবই নিস্ফল হলো l অধিরবাবুর কথাও বন্ধ হোলো l আত্মীয় স্বজনেরা যে যা বলছে তিনি মাথা নেড়ে সম্মতি দিচ্ছেন l অধিরবাবু ছেলেকে নিয়ে থাকতেন ছোট একটা মফসল শহরে l রাত তখন প্রায় দশটা l সকলে মিলে অপুকে নিয়ে পায়ে হেটেই শ্বশান এর দিকে রওনা দিলো l অধিরবাবু সকলের পিছনে তার বন্ধু রমেশ বাবুর সাথে তাদের অনুসরণ করলেন l কেউ একজন হাতে ধরিয়ে দিলো মুখাগ্নির পাঠকাঠি l ধরে নিয়েই তিনি দাড়িয়ে রইলেন l সেই ব্যক্তি ই তার হাত ধরে তাকে চিতার কাছে নিয়ে গেলেন l তিনি অপলক দৃষ্টিতেই তার কাজ সম্পন্ন করলেন l কি করছেন, কেনো কোরছেন কোনো জ্ঞান ই তার যেনো নেই l বন্ধুটি তার হাত ধরে নিয়ে একটি জায়গায় বসিয়ে দিলেন l বাধ্য শিশুর মত তিনি সেখানে বসে থাকলেন l মাত্র কয়েক মিনিট lহঠ্য়াত তার শরীরটা নুইয়ে মাটিতে পোরে গেলো l শ্বশান বন্ধুরা সব ছুটে এলেন l সকলে ভাবলেন, বুঝি বা জ্ঞান হারিয়েছেন l জ্ঞান ফেরাবার জন্য যার যে টুকু শিক্ষা ছিলো, সকলেই টা প্রয়োগ করলেন l কিন্তু জ্ঞান ফিরছে না দেখে তাদের ই মধ্যে কেউ একজন, পাশের এক ডাক্তার কে ডেকে নিয়ে আসলেন l ডাক্তার পরীক্ষা কোরে বললেন, "সব শেষ l আর কিছু করার নেই"l একটু আগে যে চিতায় অধিরবাবুর ছেলেকে দাহ করা হয়েছে, তাঁকে ও সেই চিতায় তুলে দেওয়া হোলো l সকলে এক দৃষ্টিতে চিতার দিকে তাকিয়ে l তার মধ্যে থেকে অধিরবাবুর অভিন্ন হৃদয় বন্ধু রমেশবাবু বললেন, "ভালোই হোলো- ছেলের মৃত্যু শোক অধিরকে সইতে হোলো না; এবার বাপ বেটা একসঙ্গে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে l"
No comments:
Post a Comment