Friday, July 8, 2016

"সমাধান"
""""""""                                                             রতন আজ খুব খুশী l  তার মনে হচ্ছে সে তার বাবা আর মামনির জন্য কিছু একটা কোরতে পেরেছে l  এতদিন দুহাত পেতে শুধু বাবা আর মামনির কাছ থেকে নিয়েই গেছে l  বিনিময়ে কিছুই সে কোরতে পারেনি- আর করবেই বা কেমন করে ?  তার তো কোনো উপায় ও ছিলো না l পাচ বছর বয়সে মাকে হারিয়ে মামাবাড়িতে মানুষ l  দাদু, দিদিমা, আর মাসি l মাকে হারিয়ে বাবার হাত ধরে যেদিন ছোট রতন কনিকার সামনে এসে দাড়ায়; তখন কনিকা দুহাত বাড়িয়ে রতনকে বুকে চেপে ধোরে ডুকরে কেদে  ওঠে l দিদির মৃতুর শোক যেনো ছোট রতনকে দেখে দিগুন হোয়ে বুকে চেপে বসে l দিদির মুখটা যেনো কেঁটে রতনের মুখে বসিয়ে দিয়েছে l দাদু দিদিমা বেচে থাকতেই মাসির পড়াশুনা শেষ হোয়ে যায় l  তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন কণিকার  বিয়ে দেয়ার l কিন্তু কণিকা নাছোরবান্দা l সে চলে গেলে রতনকে কে দেখবে ? রতনও তার মামনিকে পেয়ে মায়ের কষ্টটা আস্তে আস্তে ভুলে যায় l কণিকা রতনকে তাকে মামনি বলে ডাকতে শিখিয়েছে l রতনকে কণিকা চোখে হারায় l হারাধনবাবু কণিকার বাবা অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কেরানী l খুব  স্বচ্ছলতা না থাকার কারণে জামাই অর্থ্যাত রতনের বাবা মানস রায়ের কাছ থেকে তাকে টাকা নিতেই হয় l কারণ কণিকা রতনকে বড়ো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ ভর্ত্তি করেছে l টিউসন ফি ও অন্যান্য খরচ দিয়ে বেশ কয়েক হাজার টাকা বেড়িয়ে যায় l যেটা হারাধন বাবুর পেনসনের টাকায় সংকুলান হয়না l তাই ইচ্ছা না হলেও জামাই এর কাছ থেকে তাকে টাকাটা নিতেই  হয় l কণিকাও গুটিকয়েক ছেলেমেয়েকে বাড়িতে পড়ায় l মানস বাবুও আর বিয়ে করেন না l বড়ো কোম্পানির সেলস ম্যানেজার এর হোম ডেলিভারে ই চলে যায় l লতিকার ব্যবহৃত জিনিস পরতো আজও তিনি যত্ন কোরে আগের মতন ই গুছিয়ে রেখেছেন l কণিকার তত্ত্বাবধানে রতন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক রেকর্ড মার্কস নিয়ে পাশ করে l মানসবাবুর ইচ্ছা ছিলো ছেলেকে ইন্জিনিয়ারিং পড়ানোর l  কিন্তু কণিকার ইচ্ছা রতন ডাক্তারি পড়ুক l মানস বাবু কণিকার ইচ্ছাকেই সম্মান জানান l কালের নিয়মে দিন মাস বছর ঘুরতে ঘুরতে কনিকারও বিয়ের বয়স পার হয়ে যায় রতন ডাক্তারী পাশ করে প্রাকটিস শুরু করে l দাদুর মৃতুর এক বছরের মধ্যে দিদিমাও গত হয়েছেন l এখন কণিকা  ও রতনের ছোট সংসার l মাঝে মাঝে মানস বাবু আসেন l দু একদিন থেকে আবার ফিরে যান l কণিকা চায়, এবার রতনের বিয়ে দিতে l মানসবাবুর ও এতে সম্মতি আছে l কিন্তু রতন ভাবে যে মানুষ দুটি তাকে মানুষ কোরতে নিজেদের সুখ- স্বছন্দ বিসর্জন দিয়েছেন; তাদের এই ঋণ সে তো কোনদিনও শোধ করতে পারবে না  l তাদের জন্য সে কি কিছুই করতে পারে না ? অনেক ভেবে চিন্তে সে ঠিক করে- মামনির সাথে সে বাবার বিয়ে দেবে l তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে l কেউ ই তো রাজী হবে না l কিন্তু যে ভাবেই হোক রাজী তাদের করাতেই হবে l সে উভয়ের সাথেই আলাদা আলাদা কথা বললো l যথারীতি উভয়েই এটা অসম্ভব বলে জানিয়ে দেয় l এবার শুরু হয় রতনের খেলা l প্রথমে রতন তার মামনির সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলা বন্ধ কোরে দিলো l কণিকাও বুঝতে পারছে ছেলে তার রাগ করেছে l কিন্তু সে যা বলছে সেটাও বা কিকরে সম্ভব ? এর ই মাঝে রতন একদিন ব্রেকফাস্ট না করেই চেম্বার এ চলে যায় l সে জানতো তার মামনিও না খেয়ে থাকবে l মনেও খুব কষ্ট পাবে l কিন্তু কি করবে সে ? সে তো কোনো সমাধানের রাস্তা খুঁজে পারছে না l কণিকা ছেলের মনের অবস্তা বুঝতে পেরে দুজনের ই খাবার নিয়ে সটান চেম্বার এ যেয়ে হাজিরহয়  যথারীতি রতন খেতে চায়না l বার বার রতনকে পিড়াপিড়ি করার পর ছল ছল চোখে কণিকা রতনকে বলে,  "তুই কি চাস বলতো "? রতন তখন বলে, "যতদিন না তোমরা বিয়েতে রাজী হচ্ছো ততদিন আমি কিছুই খাবো না "l "তুই তো জানিস বাবা তোর খাওয়া না হোলে আমি খেতে পারিনা l" "তুমিও তো জানো আমি খিদে সহ্য কোরতে পারিনা l এখন আমার প্রচন্ড খিদেতে কষ্ট হচ্ছে l আর তা ছাড়া আমি তোমায় ছেড়ে থাকতে পারবোনা - সেটা তুমি জানো l আর আমিও জানি তুমি আমায় ছেড়ে থাকতে পারবে না l সারাটা জীবন একা একা কাটিয়েছেন আমরা সবাই মিলে একজায়গায় থাকব l" কণিকা চুপ কোরে কথাগুলি শুনে বলে, "সে হবেক্ষণ আমি তোদের সাথেই যেয়ে থাকবো এখন খেয়ে নে বাবা l" "না তাহবেনা, তুমি তোমার যোগ্য সম্মান নিয়েই ঐ বাড়িতে থাকবে যাতে কেউ কোনদিন তোমায় কিছু বলতে না পারে l তোমায় কেউ কিছু বললে আমি তা মেনে নিতে পারবো না l" কণিকা  বুঝতে পারে এটা রতন কার উদেশ্যে বললো l সে বিয়ে কোরলে যদি তার বৌ তার মামনিকে কিছু বলে সে মেনে নিতে পারবে না l                                                                                            অনেক জোড়া জুড়ির পর কণিকা ও মানসবাবু বিয়েতে রাজী হন l তবে পুরোহিত ডেকে মন্ত্র  উচ্চারণের  মধ্য দিয়ে নয় l রেজিস্ট্রি কোরে কয়েকজন নিকট আত্মীয়র সামনে বিয়ে হয়ে গেল l কণিকা তার রতনকে নিয়ে স্বামীর সংসারে চলে গেল l বিয়ের কয়েকদিন আগে রতন এসে তার বাবার সম্মতি নিয়ে তার মায়ের জিনিস পত্র যেগুলি মানসবাবু এতোকাল আগলে ছিলেন, একটা ট্রান্ক ভর্তি করে স্টোরে রেখে যায় l তার মামনিকে যোগ্য সম্মান দিয়ে নিজের বাড়িতে এনে খুব খুশি l তার মনে হচ্ছে যে সে বিশ্ব জয় করে ফেলেছে l                                                                       এর ঠিক মাস ছয়েক পরে কণিকা নিজে পছন্দ কোরে তার রতনের বৌ সুমনাকে বরণ কোরে ঘরে তোলে l সুমনা ও খুব লক্ষী মন্ত মেয়ে l শ্বসুর শ্বাশুড়ি কে যথেষ্ট শ্রদ্ধা ভক্তি করে l শ্বাশুড়ি যেনো তার বন্ধুর মত l রতন মনে মনে ভাবে ভাগ্য কোরে সে জম্মগ্রহণ করেছিল l কণিকার সংসার সুখে আনন্দে নুতন ছন্দে কালের গতিতে এগিয়ে চলে l দুবছরের মাথায় রতন ও সুমনার একটি ফুটফুটে ছেলে হয় l কণিকা সংসারের সকল দায়িত্ব সুমনাকে দিয়ে তার দাদুভাই কে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে l                                           ২০ ৯ ১৫

No comments:

Post a Comment