Tuesday, July 5, 2016

সত্যি কারের ভুতের গল্প"...                          
1971 সাল / সবে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে / সমরেশ রায় চৌধুরী তার স্ত্রী ,ছেলেমেয়েকে নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি ফিরে গেছেন / শুধু ভিটেটাই আছে / পাকিস্থানি মিলিটারী তাঁর বাড়ি ঘর - এমন কি বছর মাইনে করা বাড়ির কাজের লোক বীরেন  মান্না কেও মেরে ফেলেছে / শুধু মাত্র নামেই ছিলো তাঁর বাড়ির কাজের লোক / সন্তান সম দেখতেন তাকে / মিলিটারীরা যখন গ্রাম আক্রমন কোরে ,একের পর এক ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে ,যাকেই সামনে পাচ্ছে তাকেই গুলি কোরে মারছে ; তখন সমরেশ বাবু তাঁর বউ ,বাচ্চা ,বৃদ্ধা মা,আর তাঁর বীরেন কে নিয়ে বাড়ির ই একটি জঙ্গলে আশ্রয় নেন / কিন্তু হতভাগ্য বীরেন হঠ্য়াত করেই" আস্ছি "বলেই বেড়িয়ে গেলো / জঙ্গলের মধ্যে বসেই সকলে দেখতে পেলো ,তাদের বাড়ি দাউ ,দাউ কোরে জ্বলছে / কিন্তু বীরেন ফিরছে না দেখে সমরেশবাবু ও তাঁর স্ত্রী অস্থির হোয়ে পড়েন / সন্ধ্যার দিকে সকল ধব্ংস স্তূপের সামনে এসে দাড়ান  অন্ধকার হোয়ে আসছে / ভালো কোরে কিছু দেখা যাচ্ছে না / তবুও তাঁরা বীরেনের নাম ধরে বেশ কয়েকবার ডাকাডাকি করলেন / কিন্তু বীরেনের কোনো সাড়া পেলেন না / গ্রামের সন্ধ্যা ; আজকের দিনের মত কোনো আলো ও ছিলো না / বাসস্থান তো শ্বশান / তাই তাঁরা সময় নষ্ট না  কোরে অনির্দিষ্ট পথের যাত্রা শুরু করলেন / হঠ্য়াত করেই ঈশ্বরের আশীর্বাদের মত একটি পরিচিত মুসলমান ছেলের সাথে দেখা হলো / সেই রাতের মত তাঁরা সেই ছেলেটির বাড়িতেই আশ্রয় নিলেন / কিন্তু বীরেনের চিন্তায় ভোর হতে না হতেই সমরেশবাবু আবার নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন / হঠ্য়াত ই দেখেন বীরেন একটা টিনের কৌটা বুকের সাথে চেপে ধরে উঠান থেকে কিছুটা দুরত্বে আম গাছের তলায় মৃত অবস্থায় পড়ে আছে / সমরেশ বাবু হতভম্ব হয়ে গেলেন / কিন্তু ভেঙ্গে পড়লেন না / এই মুহুত্বে তাঁর করণীয় কাজটা স্থির কোরে ফেললেন / আশে -পাশের বাড়ি থেকে কিছু লোক যোগার কোরে ,তাকে মাটির তলায় চাপা দিলেন / কারণ সেই মুহুত্বে এই ছাড়া তার অন্য কোনো উপায়ও ছিলো না /             পাক্কা দশ মাস / তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে এখানে - ওখানে ঘুরে বেড়ান / দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছোট একটা বেড়ার ঘর কোরে তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে নিজের ভিটে ই ফিরে আসেন / কাহিনীর সূত্রপাত সেখান থেকেই / প্রথম রাত থেকেই শুধু সমরেশবাবু নন ,বাড়ির সকলেই বীরেনের অস্তিত্ব টের পান /একটা কৌটার মধ্যে কিছু খুচরা পয়সা থাকলে সেটা ঝাঁকালে যেমন আওয়াজ হয় ; ঠিক তেমন কোরেই কেউ যেনো কৌটা ঝাকাচ্ছে / প্রথম অবস্থায় কেউ কিছুই পাত্তা দেন না / কিন্তু রাত যতো বারে পয়সা ঝাকানির আওয়াজ ও ততো বাড়ে / বীরেন যখন সমরেশ বাবুর বাড়িতে কাজ করতো ; তখন তিনি মাঝে ,মাঝে বীরেনকে বছর মাইনে ছাড়াও -হাত খরচ বাবদ কিছু টাকা দিতেন / তার থেকে যেটা বাঁচত ,সে সেটা টিনের কৌটার মধ্যে জমিয়ে রাখত / মিলিটারীর আক্রমনের জঙ্গলে লুকিয়ে থাকার সময় হঠ্য়াত তার ওই পয়সার কথাগুলি মনে পড়ে / আর সেটা নিতে এসেই অকালে প্রাণ হারায় / কিন্তু তার আত্মা বাড়ি ছেড়ে বেড়োতে পারে না / দশ মাস পরে বাড়ি ফিরে তিনি যখন বাগানে বীরেনকে যেখানে পোতা হয়েছিলো ; সেখানে দেখতে যান / তখন দেখেন ,তার হাড় ,মাথার খুলি নানান জায়গায় ইতস্তত ছড়ানো / প্রথম দিন রাতে বীরেনের অত্যাচারের পরে তিনি লোক দিয়ে ওই সব হাড় - গোর ,মাথার খুলি একটা বড়ো গর্ত কোরে তার নীচে পুতে দেন / কিন্তু সেদিন রাতে বীরেনের অত্যাচার আরও কয়েকগুন বেড়ে যায় / সকলের মনে হয় যেনো ,বারান্দার উপর কেউ নাচছে / সঙ্গে কৌটার ভিতর পয়সা ঝাকানোর শব্দ / ঘরের ভিতর সকলে ভয়ে সিটিয়ে থাকে / সকালে আবার তিনি বাগানে যেয়ে দেখেন ,সেই হাড় ,মাথার খুলি আগের মতোই ছড়ানো / আবার তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন / গ্রামের বন্ধুদের পরামর্শে তিনি ডেকে আনেন একজন বড়ো ওঝাকে / ওঝা গণনা কোরে বলেন ," আত্মা বাড়ির ভিতরেই আছে / কিছুতেই মায়া কাটাতে পারছে না" / উপায় হিসাবে বলেন ,"যে আম গাছের কাছে বীরেন মারা যায় ,আজ রাতেই যদি সেই আম গাছের একটা ডাল ভেঙ্গে পড়ে ,তাহলে বুঝতে হবে - আত্মা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে "/ তার জন্য তিনি কি সব মন্ত্র ও পড়েন ,জলও ছিটান / অ -বিস্বস্য় হলেও সত্য - সেদিন মাঝ রাতে আম গাছের একটা ডাল হঠ্য়াত ই ভেঙ্গে পড়ে / সেদিন থেকে বীরেনের অত্যাচার ও বন্ধ হয় / এর বেশ কয়েক বছর পর সমরেশ বাবু গয়ায় যেয়ে বীরেনের পিন্ড দান কোরে আসেন /            6.12.15

No comments:

Post a Comment