Monday, November 29, 2021

পরজনমে হইও রাধা

পরজনমে হোয়ও রাধা
সব প্রয়োজনে আমায় দরকার অথচ কাজ ফুরোলে যেন আমায় চেনেই না!!বুঝতে পারিনা আমার সাথে কেন উনি এটা করেন।
  হঠাৎ করেই শেখরের সাথে বিয়েটা ঠিক হয় অনিন্দিতার।বিয়ের আগে পর্যন্ত আমি জানতাম না যে আমাদেরই কলেজের বাংলার প্রফেসর অনিরুদ্ধর ভাই শেখর।যেহেতু আমার সাবজেক্ট ছিল বাংলা তাই স্যারের সাথে আমার নিত্য দেখা হওয়াটাই স্বাভাবিক।শেখরের সাথে বিয়ের সন্মন্ধ  হওয়ার আগে আমার একটা সম্মন্ধ এসেছিল।চাকরীটা তার সরকারি ছিল কিন্তু বাবা রাজি হয়েছিলেন না তার কারণ সে ছেলেবেলা থেকেই মাসীর কাছে মানুষ।নিজের বাড়ি নেই।তার যখন ছ'মাস বয়স তার মা,বাবা তাকে তার মাসীর কাছে রেখে বাইরে বিশেষ প্রয়োজনে বেরিয়েছিল।কিন্তু বাইক অক্সিডেন্ট করে দুজনেই মারা যায়।সেই থেকে সে মাসীর কাছেই বড় হয়েছে।যেহেতু সরকারি চাকরি মা রাজী থাকলেও বাবা তার নিজের বাড়ি নেই বলে রাজি হলেন না।সে কে কি তার নাম,কোন কলেজে চাকরি করে আমি কিছুই জানতাম না।কিছুদিনের মধ্যেই শেখরের সাথে বিয়ে ঠিক হয়।
 বিয়েতে স্যার বরযাত্রী গেলেও আমার সাথে দেখা হয়নি।তাকে দেখি বৌভাতের দিনে।আর সেদিনই জানতে পারি স্যার শেখরের মাসতুত দাদা।আমার সাথে পূর্বে সম্মন্ধ হওয়া ছেলেটির ঘটনা মায়ের কাছে জেনেছিলাম।আর বিয়ের কিছুদিন পর স্যারের জীবন বৃত্তান্ত শুনি শেখরের কাছে। দুয়ে দুয়ে তখন চার করি নিজেই।কিন্তু শেখর বা তার মাকে ঘটনাটা লুকিয়ে যাই।
 স্যার কলেজ আর বাড়ি।বাড়ি ঢুকেই বইয়ে পাতায় মুখ গুঁজে থাকা।পরবর্তীতে আমার শ্বাশুড়ী মা অনেক চেষ্টা করেছেন স্যারের বিয়ে দেওয়ার।কিন্তু তিনি রাজি হননি।কখনোই আমার সামনে আসা বা আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেননি।তার সমস্ত কাজই আমার শ্বাশুড়ি মা করতেন।বলা ভালো স্যার আমাকে তার কোন কাজ করতে দিতেন না।শুধু বিয়ের পড়ে একদিন আমায় বলেছিলেন,
--- শেখর আমায় দাদা বলে ডাকে।তুমিও তাই বলবে।
 যদিও কোনদিন ডাকার দরকার পড়েনি তবুও কারো সামনে তার প্রসঙ্গ উঠলে দাদা করেই কথা বলতাম।শেখর একদিন আমার কাছে জানতে চেয়েছিল,
--- তুমি তো দাদার কলেজেই পড়তে।আগে থাকতে পরিচয় ছিলনা?
 পুরো অস্বীকার করে গেছিলাম অনিরুদ্ধ স্যারের কোন ক্লাস আমার ছিলনা।মুখ ফস্কে কেন যে মিথ্যা বেরিয়েছিল নিজেই বুঝতে পারিনি।
 তারপর শ্বাশুড়ী মা মারা গেলেন।একসাথেই হবিষ্যি করতাম। আমি তখন সাত মাসের প্রেগন্যান্ট।দাদা রান্না করে গুছিয়ে আমাদের ডাকতেন।কারণ শেখর কিছুই পারেনা ওই অফিসের কাজ ছাড়া।মেয়ে হল আমার।দাদা দুরাত হাসপাতালের বাইরে বসে।কারণ শেখর তখন অফিসের কাজে বাইরে।ওর ছিল রেলে চাকরি।মাঝে মধ্যে ওকে অডিট করতে বাইরে ছুটতে হত।
 স্যার রিটায়ার করলেন।একটা মানুষ সব সময়ের জন্য বাড়িতে অথচ তার মুখে কোন কথা নেই শুধুমাত্র আমার সাথে।মেয়ে অদিতি তার প্রাণ।তার সাথে অনর্গল কথা বলে চলেন স্যার।আমি সামনে দাঁড়ালেই চুপ।মেয়ের যখন আঠারো বছর বয়স হল বেশ কয়েকদিন তাকে সাথে নিয়ে ব্যাংকে গেলেন।জানতে চাইনি কেন?অদিতি এসে জানিয়েছে জেঠু সবকিছুর নমিনি করলো আমায়।
 হঠাৎ করে বুকে সর্দি বসে বেশ অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন।কিছুতেই হাসপাতালে ভর্তি করা গেলো না তাকে।বাড়িতে আর কতটুকু চিকিৎসা হয়।হাসপাতাল ভর্তির জন্য জোর জবরদস্তি করতে লাগলে করুণভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
--- শুধুমাত্র দুটো রান্না করে দিও আমায়।আর কিছু করতে হবেনা।অদিতি আছে তো।
 সে দৃষ্টিতে কি ছিল আমি জানিনা। বুকটার ভিতর ধড়াস করে উঠেছিল তখন।তারপর আস্তে আস্তে অবস্থার অবনতি।তখন তার সব কাজেই আমাকে তলব।কিন্তু কাজ হয়ে যাওয়ার পরই বলতেন,
--- তুমি এবার ঘরে যাও।
 শেষদিনে আমি তার গালে জল দেওয়ার পরেই তিনি চোখ বোজেন।
 মাসখানেক পরে দাদার আলমারি খুলে তার ডাইরিটা হাতে পাই।
 "আমি যেন পরজনমে তোমায় পাই অনিন্দিতা।"



No comments:

Post a Comment