Monday, November 22, 2021

বড্ড ভালোবাসি

বড্ড ভালোবাসি
" মানুষটা যে এভাবে বদলে যাবে চিন্তাও করে উঠতে পারিনি - সবই ঠিক ছিল।কি যে হঠাৎ করে ওর হল কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না সেই মুহূর্তে।"
  প্রথম দেখাতেই প্রেম।কালিম্পং বেড়াতে গিয়ে রাতুল আর রণিতার প্রথম দেখা।রণিতারা পাঁচ বন্ধু মিলে কালিম্পং ঘুরতে গেছিলো।সবাই স্কুল শিক্ষিকা।আর এদিকে রাতুল তার বাবা,মায়ের সাথে গেছে।এখন কোথাও ঘুরতে যাওয়া মানেই তো শুধু ছবি তোলা।পাঁচ বন্ধু মিলে অনেক সেলফি তোলা হলেও একসময় রণিতা অপরিচিত রাতুলকে দেখে বলে,
-- কাইন্ডলি আমাদের একটা ছবি তুলে দেবেন?
--- ও সিওর।
 গলায় ঝুলানো ডিএসএলআর টা রেডি করতেই রণিতা বলে ওঠে,
__না,না আমার মোবাইলে তুলে দিন।
 রাতুল হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা নেয়।বেশ কয়েকটা ছবি তুলে দেয় রণিতাদের 
 নিজের ক্যামেরায় ওদের কিছু ছবি তুলতে চায়।রণিতা আপত্তি জানালেও অন্য বন্ধুরা সম্মতি জানায়।ফলে রণিতাকে রাজি হতেই হয়।হোটেলে ফিরে ওদের ছবিগুলি পাঠিয়ে দেবে বলে রণিতার কাছ থেকে ফোন নম্বরটা চেয়ে নেয়।অনিচ্ছা সত্বেও দিতে বাধ্য হয় সে কারণ রাতুল তার কাছেই নম্বরটা চায়।
 সেদিন রণিতার সব বন্ধুরা তার খুব পিছনে লেগেছিলো।ওদের দুজনের নামের মিল দেখে।রণিতারও প্রথম দেখাতেই রাতুলকে খুব ভালো লেগেছিলো।সেই শুরু।
 কাছাকাছি আসতে খুব একটা বেশি সময় নেয়নি দুজনেই।রাতুল ব্যবসায়ী।ছবি তোলা তার নেশা।নানান জায়গায় ঘুরতে যায়।কখনো একা আবার কখনো বা বাবা,মাকে সঙ্গে করেই।নানান জায়গায় তার ছবি পুরস্কৃত হয়।
 দুই বাড়ির সম্মতিক্রমে ছ'মাসের মধ্যেই ওরা বিয়ে করে।বিয়ের পরেই প্রথম ট্যুর আবার সেই কালিম্পং।পনেরটা দিন ওদের যেন ঘোরের মধ্যেই কেটে গেলো 
 শ্বশুর,শ্বাশুড়ী রণিতাকে নিজেদের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন।কিন্তু রাতুলের মধ্যে পরিবর্তন দেখা দিল এক বছরের মাথায় রণিতার এক বন্ধুকে কেন্দ্র করে।ছেলেবেলায় একই পাড়ায় থাকতো।এখন সেই বন্ধু শাহীন আমেরিকা থাকে।ফেসবুকের সৌজন্যে পুনরায় নূতন করে আবার দুজনের পরিচয়। লাঞ্চ টেবিলে সকলের সামনে বসেই রণিতা হাসতে হাসতে শাহীনের গল্প করছিলো।রণিতা ছেলেবেলার বন্ধুকে খুঁজে পেয়ে খুবই এক্সসাইটেড ছিল তা তার গল্প বলার ধরণেই সকলে বুঝতে পারছিল।হঠাৎ রাতুল প্রশ্ন করে,
--- নাম শুনে তো বোঝার উপায় নেই ছেলে না মেয়ে বন্ধু।
 রাতুলের কথা বলার ধরনে খেতে খেতে সকলেই তার মুখের দিকে তাকায়।ছেলের কথা শুনে তার বাবা বলে ওঠেন,
--- সে যে ওর বন্ধু এটাই যথেষ্ঠ নয় কি?সে ছেলে না মেয়ে তা জানার দরকার আছে কি?বন্ধু তো বন্ধুই হয়।সেখানে ছেলেমেয়ে,ছোট-বড়,বয়সের পার্থক্য কোনটাই ম্যাটার করে না।
 কোন কথা না বলে রাতুল খাওয়া শেষের আগেই উঠে চলে যায়।রণিতা সব কাজ সেরে ঘরে ঢুকে দেখে রাতুল ঘুমিয়েই পড়েছে।যা বিয়ের পর এই প্রথম ঘটলো।বিয়ের পর থেকেই ছুটির দিনে দুপুরে খেয়েদেয়ে দুজনে প্লান করতে বসে সন্ধ্যায় তারা কোথায় ঘুরতে যাবে।রণিতা ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত রাতুলকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলে,
--- বাব্বা আমার ছেলেবেলার বন্ধুর কথা শুনে এত্ত রাগ হয়েছে?
 এরপর থেকেই রাতুলের মধ্যে পরিবর্তন আসতে থাকে।রাতুল যখনই দেখেছে রণিতা ফোন নিয়ে খুটখুট করছে তখনই রাতুলের কাছ থেকে শুনতে হয়েছে
--- কি শাহীনের সাথে কথা হচ্ছে?
 অনেক বুঝিয়েছে রণিতা রাতুলকে।কিন্তু দিনকে দিন নানান কারণে রাতুল তাকে অপমান করতে থাকে।শেষে রণিতা একদিন রাতুলকে বলে,
--- আসলে তুমি একজন সাইকো পেসেন্ট।ডাক্তার দেখানো উচিত তোমার।
 সুখের সংসারে যখন তখন যেন আগুন জ্বলে ওঠে।রাতুলের মধ্যে এই পরিবর্তন তার বাবা,মাও মেনে নিতে পারে না।শ্বশুর,শ্বাশুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে আরও দুটি বছর কেটে যায় মাঝিহীন নৌকার মত।রাতুল ডাক্তারও দেখাবে না, বুঝালেও বুঝবে না।
 সহকর্মী সুস্মিতার সাথে গল্প প্রসঙ্গে রণিতা বলে,
--- ওর কাছ থেকে চলে এসেছি ঠিকই কিন্তু ওর বাবা,মায়ের সাথে আমার যোগাযোগ রয়েছে।ওকে আমি ডিভোর্স দিইনি; দেবোও না কোনদিন আর ও নিজেও চায়নি।ওর বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রেখে ওকে কাউন্সিলিং করিয়েছি।ট্রিটমেন্ট চলছে।ওর বাবা,মা সব জানেন।কিন্তু রাতুল জানে না এগুলো আমিই করাচ্ছি।একদিন ও পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠবে।আর সেদিন ও ওর নিজের ভুল বুঝতেও পারবে।আর সেদিনই ও ছুটে আসবে আমার কাছে।আমি যে ওকে বড্ড ভালোবাসি।



    

No comments:

Post a Comment