Friday, November 19, 2021

ধর্যের ফল হয় মিঠা

ধর্য্যের ফল হয় মিঠা
" সন্তান আমার অথচ তার ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা নাকি আমার নেই!!আমার বাবা,মা আমায় কোন শিক্ষা দিতে পারেননি তাই আমিও নাকি আমার সন্তানকে কোন শিক্ষা দিতে পারবো না।তাই সাহেবের জন্মের পর আতুর উঠে যাওয়ার সাথে সাথেই তাকে আমার ঘর থেকে নিয়ে যাওয়া হল আমার একমাত্র বিধবা নিঃসন্তান ননদের ঘরে।সেখানেই আমার শ্বাশুড়ি এবং ননদ মিলে তাকে দেখাশুনা করে।"
--- এ আবার কি ধরনের কথা!তুই ওকে বুকের দুধ খাওয়াসনি?
--- ওই যখন ও খিদেতে কান্নাকাটি করতো তখন কেউ একজন নিয়ে আমার কাছে আসতো।আমি ওকে দুধ খাওয়ানোর সাথে সাথে কাকের মত ছো মেরে ওকে নিয়ে চলে যেত।আর আমি চোখের জলে ভাসতাম।
--- তোর স্বামী কিছু বলতেন না?
--- না,বলতো না।সে তো মায়ের ভয়ে জবুথবু।একদিন তার মায়ের সাথে অন্য কোন বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কিতে আমার কানে আসলো তার মা তাকে চেঁচিয়ে বলছে,
--- আমার কথার অবাধ্য হলে আমি আমার সবকিছু তোর বোনকে দিয়ে যাবো।ওই তো কটা মাইনে পাস;মাথার উপর ছাদ না থাকলে ঘরভাড়া দিয়ে খাবি কি?ব্যাস আমার বীরপুরুষ স্বামী ফুটো বেলুনের মত চুপসে গেলো।
--- এরূপ করার কারণটা কি তোর শ্বাশুড়ির?
  মা মরা গরীবের মেয়ে রেখার চেহারা দেখে পছন্দ করে বাড়ির ছেলের বউ করে নিয়ে এসেছিলেন সুপ্রিয়াদেবী।বিধবা সুপ্রিয়াদেবীর এক ছেলে ও এক মেয়ে। বাপের বাড়ির একমাত্র মেয়ে হওয়ার ফলে সেখানকার সমস্ত সম্পত্তি আর টাকাপয়সার মালিক বনে যান তিনি।আর এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চাকরি করা স্বামীর মোটা অঙ্কের পেনশন।মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন মেয়েরই পছন্দ করা ছেলের সাথে।জামাই এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো।পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলে হওয়ার কারণে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এ বিয়ে মানতে বাধ্য হয়েছিল।বিয়ের একবছরের মাথায় রমলা প্রেগন্যান্ট হয়।রমলার যখন তিনমাস চলছে তখন জামাই তপন রোড অ্যাকসিডেন্ট করে মারা যায়।শুরু হয় রমলার প্রতি অত্যাচার।এই অত্যাচারের ফলেই তার গর্ভস্থ শিশুটি নষ্ট হয়ে যায়।চলে আসে সে তার মা, দাদার কাছে।সেই থেকে সে এখানেই থাকে।এগুলি সবই বিয়ের আগে থাকতেই জেনে এসেছে রেখা।কিন্তু কখনো এটা সে ভাবতে পারেনি তার সন্তান তার বুক থেকে কেড়ে নিয়ে শ্বাশুড়ী তার নিজের মেয়ের কোল ভরাবেন।
 রেখা ভাবে একই সাথে তো দুজনেই ছেলেটিকে নিয়ে থাকতে পারতাম।কিন্তু তার যেন কোন অধিকারই নেই নিজের সন্তানকে কাছে রাখার।নিজের মেয়ের মন ভালো রাখতে পরের মেয়ের কোল থেকে তার সন্তানকে কেড়ে নিলেন।
 রেখার স্বামী সবকিছু বুঝেও নিজ স্বার্থের জন্য চুপ করে থাকলো ঠিকই কিন্তু অফিস কলিগের সাথে আলোচনা করে সুন্দর একটি উপায়ও বের করলো।অফিসেরই একটি ছেলে সদ্য বাবা হয়েছে।কিন্তু সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে সে তার স্ত্রীকে হারিয়েছে।তাকে গিয়ে বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।সদ্য স্ত্রী হারা ছেলেটি প্রথমে আপত্তি জানালেও পরে বাড়ির লোকের সাথে পরামর্শ করে সে বিয়েতে মত দেয়।বাড়িতে এসে মা বোনকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করে।রমলা ছেলে নিয়ে যেতে চাইলে তার হবু স্বামী আপত্তি জানায়।
 রমলা চলে যায় তার শ্বশুরবাড়ি রেজিস্ট্রি বিয়ে করে।আর ছেলে ফিরে আসে তার মায়ের কোলে।
 অনেকদিন পর বন্ধু বিশাখার সাথে মন খুলে গত দুবছরের ঘটনা বলতে পেরে রেখাও অনেকটা হালকা হয়।
    

No comments:

Post a Comment