Saturday, April 29, 2017

#অনুগল্প# পরিপূরক
                 নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
             মা ,বাবার পছন্দ করা ছেলেকে মেনে নিয়ে দুই পরিবারের মতামতের ভিত্তিতে একসাথে বেরিয়ে বিয়ের মার্কেটিং শুরু করে নিলয় ও সম্পূর্ণা । দু'জনেই অবস্থাপন্ন পরিবারের সন্তান । নিলয় নিজেই গাড়ি নিয়ে এসে সম্পূর্ণাকে নিয়ে মার্কেটিং এ বেরোয় । বিয়ের মাত্র তিনদিন বাকি । সেদিন কেনাকাটা শেষে দুজনে হোটেলে খেয়েদেয়ে সম্পূর্ণাদের বাড়ির উর্দ্যেশ্যে রওনা দেয় । সম্পূর্ণাকে পৌঁছে দিয়ে নিলয় নিজের বাড়ি যাবে । রাতটা একটু বেশিই হয়ে গেছিলো । হঠাৎ একটা বড় লড়ির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ ! ঘটনাস্থলেই নিলয়ের মৃত্যু । সম্পূর্ণাও মারাত্মকভাবে হাসপাতালে একমাস চিকিৎসাধীন থাকার পর বাড়িতে এসে জানতে পারে ,নিলয় সেদিনই মারা গেছে ; যা এতদিন তার বাড়ির লোকেরা নানা অছিলায় তাকে জানায়নি । স্তব্ধ হয়ে যায় সম্পূর্ণা । মাত্র দুমাসের আলাপ । খুব ভালোবেসে ফেলেছিলো   উভয় উভয়কে ।

                 কিছুদিন যেতে না যেতেই সম্পূর্ণা খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়ে । ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তিনি তাকে বেশকিছু পরীক্ষা করতে দেন । দুদিনের মাথায় রিপোর্ট দেখে ডাক্তার জানিয়ে দেন সম্পূর্ণার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে । বাড়ির লোকেরা খুব ভেঙ্গে পড়েন । সকলের অলক্ষ্যে সম্পূর্ণা দুহাত কপালে ঠেকিয়ে ঈশ্বরের উর্দ্যেশ্যে বলে ,"ভগবান তুমি আমার ডাক শুনেছ । নিলয় ,আমি আসছি - আর কতদিন অপেক্ষা করো । আমি জানি আমাকে ছেড়ে থাকতে তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে ! আমারও ভীষন কষ্ট হচ্ছে । একটু অপেক্ষা করো । খুব তাড়াতাড়ি আবার আমাদের দেখা হবে ।
***নন্দা***  28.4.17  10-30 PM.

Friday, April 28, 2017


বড় ক্লান্ত
           নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
অনেকটা পথ হেঁটেছি ,
আমি বড় ক্লান্ত ;
একটু বিশ্রাম চাই ,
দেবে কি আমায় বিশ্রাম ?
জীবনে অনেক ঠকেছি ,
আর ঠকতে চাইনা ;
একটু বিশ্বাস চাই ,
পারবে কি আমায় দিতে বিশ্বাস ?
অনেক আঘাত পেয়েছি ,
আঘাতে আঘাতে আমি জর্জরিত ;
অপমান ,অপবাদের পাহাড় গড়েছি ,
চাই একটু সম্মান আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ;
আছে কি তোমাদের কাছে তা ?
অনেক কেঁদেছি -
চাইনা আর কাঁদতে ,
এখন আমি শুধু হাসতে চাই ,
হাসিকে সযতনে নিজের কাছে রাখতে চাই ,
হাসি যে আমার সাথে আড়ি করেছে ,
পারবে কি হাসিকে খুঁজে এনে দিতে ?
***নন্দা***  30.03.17   12AM

Thursday, April 27, 2017


আমি সেই নারী
            নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
তোমরা আমাকে চেনো কি ?
আমি হলাম সেই নারী !
পথে ,ঘাটে কখনো বা বাড়িতেই ,
কাপুরুষের লোলুপ দৃষ্টির শিকার !
চিনতে পারছো আমাকে ?
দশ মাস ,দশদিন অসহনীয় কষ্ট সয়ে -
প্রসব যন্ত্রনা সহ্য় করে ,
একটি শিশুকে যে পৃথিবীর আলো দেখায় ।
আমি হলাম সেই নারী -
যার মুখের বুলি শুনে শিশুটি কথা শেখে -
যার হাত ধরে ,যার বক্ষ সুধা পান করে ,
সকলে একটি কুড়ি থেকে ফুলে পরিণত হয় !
তবে আজও আমি কেন অবহেলিতা ,অত্যাচারিতা ?
ঘরে,বাইরে গালমন্দ আর কাপুরুষের লোলুপ দৃষ্টির শিকার !
আমি কন্যা ,আমি বধূ ,আমিই মা জননী -
একই অঙ্গে এত রূপ আমার !
আমি ধর্ষিতার মা,আমি ধর্ষকেরই মা-
অকৃতজ্ঞ সমাজ ! উত্তর দাও -
বারবার আমি কেন কাপুরুষের কারনে  ধর্ষিতা হই ?
***নন্দা*** 26.4.17   6PM.
সবখানেই তুই
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
চেতন ,অবচেতনে -
আসিস কেন ক্ষনে ক্ষনে ?
ভুলতে আমি চাই যে তোকে ,
চাইনা রাখতে মনে ।
তুই তো এখন অনেক সুখী ,
অন্যকে কাছে পেয়ে -
আঁধার ঢেকেছে আমার জীবন ,
তাই স্মৃতি আসে ধেঁয়ে ।
পারবোনা তোকে ভুলতে আমি ,
আছিস যে তুই অন্তরে ;
ভিতর বাহির সবখানেই তুই ,
থাকনা যতই দূরে !
নন্দা    27.4.17    6PM.   

Tuesday, April 25, 2017

            ভক্তিতেই মুক্তি যখন , এত চড়া রোদে মন্দিরে লাইন দিয়ে অসুস্থ্য হওয়া কেন ? পূর্ণলাভের আশায় পদপিষ্ট হয়ে মরা কেন ? বেশি বেশি টাকা দিয়ে লাইন না দিয়ে দেব ,দেবী দর্শন করলে তাঁরা কি সত্যিই সন্তুষ্ট হন ? ভক্ত প্রহ্লাদ বলেছিলেন ,"তাঁদের অবস্থান সর্বএ"- তাহলে সারাদিন উপবাসী থেকে আমরা মন্দিরেই পূজা দিতে যাই কেন ? বাড়িতেই তো ঠাকুর ঘরে তাঁদের মূর্তি বা ছবি আছে । কোনো বাবা ,মা সন্তান উপবাসী থাকলে খুশি হন কি ?
#অনুকবিতা# ( ভালোবাসি আঁধার )
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
    আমি মরে গেলে ,
    প্রদীপ জ্বেলোনা কেউ সমাধির পরে -
    জোঁনাকীদের বলে দিও ,
    তারা যেন আসেনা ,
    আলো আমার যে ভালো লাগেনা ।
    সারাজীবন কাটিয়েছি -
    আঁধারেতে আমি ,
    আঁধার আমি যে -
    খুব ভালোবাসি ।
#নন্দা#   25.4.30  12.15PM..
দাও বিদায়
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
সন্ধ্যা আমার ঘনিয়ে এসেছে ,
যেতে দাও আমায় -
তব আঁখি কেন ছলছল ,
এবার জানাও বিদায় !
যদি কোনো অপরাধ ,
করে থাকি আমি -
ক্ষমা কোরো সবাই ,
দোষে ,গুনে মানুষ আমি ,
মনুষ্য আধারের ঊদ্ধে তো নয় !
থাকবোনা তোমাদের সঙ্গে আমি ,
রইবে অনেক স্মৃতি -
স্মৃতিকে আঁকড়ে কেঁদোনা তোমরা ,
দু'দিন আগে আর পরে ,
যাওয়ায় যে রীতি !
হয়তো কিছুদিন আগেই গেলাম ,
ছিলোনা যাওয়ার ইচ্ছা -
পূরণ হোলোনা অনেক সাধ মোর ,
বিধাতার যে এটাই সদিচ্ছা ।
চোখের জলে ভেসোনা তোমরা ,
ভুলবেনা জানি আমায় ,
অশ্রু কাঁদাবে আমার আত্মা -
এবার দাও  বিদায় ।
****#নন্দা#**** 21.4.17 10pm.

Monday, April 24, 2017

পাপ চাপা থাকেনা            নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী                                         রাতের শেষ ট্রেনটা ধরে অনল যখন স্টেশনে পৌঁছালো তখন তার শরীরে বিন্দুমাত্র হাঁটার আর ক্ষমতা ছিলোনা । সারাদিনের পরিশ্রম ,অনাহার -কোনোরকমে নিজেকে টেনে নিয়ে যেয়ে একটা  বেঞ্চির উপরে বসে । সেখানে আরও এক ভদ্রলোক আগে থাকতেই বসে ছিলেন । ক্লান্তিতে অনলের চোখ দু'টি তখন ঘুমে জড়িয়ে আসছে । হঠাৎ পাশের ভদ্রলোকের দিকে নজর যেতেই দেখেন ভদ্রলোক ঠকঠক করে কাঁপছেন । সে এগিয়ে যেয়ে ভদ্রলোকের গায়ে হাত দিয়ে বলে ,"আপনি এত কাপছেন কেন ?" কিন্তু গায়ে হাত দিয়েই বুঝতে পারে ভদ্রলোকের প্রচন্ড জ্বর । ভদ্রলোক করকমে তাকে বলেন ,"বাবা একটা ট্যাক্সি ডেকে দেবে ? আমার বাড়ি পলাশপুর গ্রামে । মিটারে ট্যাক্সি যাবেনা এত রাতে ,ভাড়া যা চাইবে তুমি রাজী হয়ে যাবে । পারবে বাবা ডেকে দিতে ?"                                         .                ট্যাক্সি নিয়ে এসে অনল ভদ্রলোককে তুলে দিয়ে নিজেও উঠে বসলো । ভদ্রলোক তার কাছে জানতে চাইলেন এত রাতে বাড়িতে না ফিরলে বাড়ির লোক তো তারজন্য চিন্তা করবে ! অনল জানালো তার বাড়ি বলে কিছু নেই , একটা দোকানের ভিতর সে ঘুমায় - বলা ভালো দোকানদারের দোকানে পাহারাদারের জন্য আলাদা করে কোনো টাকা খরচ করতে হয়না ।        দশ বছর পরের ঘটনা ;- ----------                                        ওই রাতের পর অনলের জীবনটা পাল্টে গেলো । এখন তার বিশাল ব্যবসা ,বড় বাড়ি ,তিনটে গাড়ি । যেন 'আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ' । যে অনল দু'বেলা দু'মুঠো অন্ন জোঠাতে হিমশিম খেত তার এখন বাড়িতে দু'তিনজন কাজের লোক । বিয়েও করেছে নিজে পছন্দ করে একটি গরীবের মেয়েকে । শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে নিজের বাড়িতেই তুলে এনেছে ; কারণ তারা এতটাই গরীব এবং তাছাড়া তার একার পক্ষে লোকজন রেখেও ব্যবসার সবদিক সে নজর রাখতে পারছিলোনা । এখন শালা ,শ্বশুর ,শ্বাশুড়ি সকলেই তার ব্যবসা দেখে । কিন্তু ঠাঁই হয়নি তার বৃদ্ধা বিধবা মা ও ভায়ের ।                        দারিদ্রের সাথে লড়াই করতে করতে অনল যখন পর্যুদস্ত ; তখনই সে সীদ্ধান্ত নেয় গ্রাম ছেড়ে শহর কোলকাতায়  আসার । বাড়িতে মাকে ও ভাইকে রেখে কলকাতায় আসে কাজের সন্ধানে । কিন্তু কোথায় কাজ ? কখনো স্টেশনে ছোট ছোট চায়ের দোকানে কাপ ,প্লেট ধুয়ে দেয় আবার কখনোবা কুলি হয়ে অন্যের ভারী জিনিস গাড়িতে তুলে দিয়ে সামান্য পয়সায় কিছু খেয়ে বেঁচে থাকা । বেশ কিছুদিন এইভাবে চলতে চলতে পি ডিভিশনে মাধ্যমিক পাশ করা অনল একটা বেসরকারি স্কুলে দাড়োয়ানের কাজ পায় সামান্য মাইনের বিনিময়ে । কিন্তু অনল ছিলো খুব সৎ ও পরিশ্রমী ।                           সেদিন রাতে ওই ভদ্রলোক অথাৎ রবীন পালকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিতে যেয়ে অনল দেখে -তার বাসস্থানকে বাড়ি না বলে গ্রামের ভিতর ওটাকে রাজপ্রাসাদই বলা ভালো । রবীনবাবুর স্ত্রী তাকে সেই রাতে খেতে দিয়ে তার কাছ থেকে সেই রাতের সমস্ত ঘটনা জেনে নেন । রবীনবাবুর বাড়িতেই একটি প্রকান্ড ঘরের মধ্যে সোনার গহনা তৈরী করার একটি কারখানা ছিলো । নেই নেই করেও পাঁচ থেকে সাতজন কর্মচারী কাজ করতেন ঠিকই কিন্তু শেষ তুলির টানটা তিনিই দিতেন । কলকাতার অধিকাংশ বড় বড় সোনার দোকানের অর্ডার তিনি পেতেন তার নিখুঁত কাজের জন্য । যা ছিলো খরিদ্দারদের প্রচন্ড চাহিদা । অনেকবারই ঐসব দোকানের মালিকেরা তাকে মোটা মাইনে দিয়ে রাখতে চেয়েছেন । কিন্তু তিনি কোনোদিনও রাজী হননি ।  সেদিন তিনি অর্ডারের গহনা দিয়ে আসার সময় হঠাৎই অসুস্থ্য হয়ে পড়েন ।                    অনলের কথা ,বার্তা ,ব্যবহার তার খুবই ভালো লাগে । হাতে ধরে তিনি অনলকে সুক্ষ সুক্ষ গহনা তৈরির কাজে পারদর্শী করে তোলেন । বুদ্ধিমান অনল অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বেশ ভালোই কাজ শিখে নেয় । রবীনবাবুর সাথে সে কলকাতার দোকানগুলোতেও যাতায়াত শুরু করে । ওই সব দোকানেও রবীনবাবুর অনলের প্রশংসার কারণে খুব বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে ।  বৃদ্ধ রবীনবাবু ও তার স্ত্রী আশাদেবী অনলকে কাছে পেয়ে ছেলে কাছে না থাকার যন্ত্রনাটা কিছুটা হলেও ভুলে যান । তাদের একমাত্র ছেলে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার । সেই যে দশ বছর আগে লন্ডন পাড়ি দেয় ; আর কোনো খবর সে মা ,বাবার রাখেনি । প্রথম প্রথম কিছুদিন ফোনে কথা বললেও এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই । ফোন নম্বর ও তার পাল্টে গেছে । অসহায়ের মতো বৃদ্ধ ,বৃদ্ধা দু'জনেই এটাকে তাদের দুর্ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছেন ।                          বছর সাতেক আগে রবীনবাবু একদিন অনলকে সাথে নিয়েই কলকাতা আসেন অর্ডার দেওয়া গহনাগুলি তৈরী করে দোকানগুলিতে  দিতে । সেগুলি দিয়ে তার প্রাপ্য টাকা ও নুতন গহনার জন্য বেশ কিছু সোনা যা তাকে ওই দোকানগুলি থেকেই দেওয়া হয়ে থাকে ; এগুলি গুছিয়ে ছোট একটি ব্যাগ ভর্তি করে তিনি পুত্রসম অনলের হাতে দিয়ে বাড়ির উর্দেশ্যে রওনা দেন | নির্দিষ্ট স্টেশনে এসে যখন তিনি নামতে যাবেন অনল উঠে রবীনবাবুর একটা হাত ধরেন । এটা সে প্রথম থেকেই করে যেহেতু তিনি বয়স্ক মানুষ । কিন্তু সেদিন যে কি হয় অনলের যার উত্তর সে আজও পায়নি । তার ভিতরের পশুটা হঠাৎ করেই যেন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে । এক ঝটকায় সেই পশুটা রবীনবাবুর ধরে থাকা হাতটি অনলের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয় । অনল একটা ধাক্কা মারে রবীনবাবুর পিছনে । বৃদ্ধ রবীনবাবু উপুড় হয়ে পরে যান । নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে । জনতার কোলাহলে সম্বিৎ ফিরে পায় অনল । সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে হাসপাতাল ছোটে । কিন্তু রবীনবাবু আর জ্ঞান ফিরে পান না । সকলের অগোচরেই থেকে যায় তার মৃত্যু রহস্য ।এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেন না আশাদেবী । ছ'মাসের মাথায় তিনিও মারা যান । একচ্ছত্র সাম্রাজ্যের রাজা হয়ে যায় অনল । কিন্তু শুধুমাত্র লোভের কারনে এই খুন হলেও সে নিজেকে নিজে ক্ষমা করতে পারেনা । যদিও কেবলমাত্র নিজেকে দোষী ভাবার অবস্থান তার অন্তরেই ।               রবীনবাবুদের আর কোনো আত্মীয়স্বজন না থাকায় নিজ নামে সম্মত্তি  কোরতে অনলকে কোনোই বেগ পেতে হয়না । মালিকানাস্বর্ত পেয়েই সে গ্রামের ওই রাজপ্রাসাদসম বাড়ি আসবাবপত্র সমেত বিক্রি করে দিয়ে কলকাতার একটু নিরিবিলি এলাকায় প্রচুর জমি সমেত পুরানো আমলের এক বাড়ি কিনে উঠে আসে । আর রবীনবাবুর নিজ হাতে করে শিখিয়ে দেওয়া ব্যবসাটি নিজের ব্যবসা হিসাবে দাঁড় করায় ।              কোনো একদিন গ্রামের পরিচিত এক ব্যক্তির সাথে দেখা হয়ে যায়  হঠাৎ করেই রাস্তাতে । বলাবাহুল্য কলকাতা আসার পরে সে তার মা ,ভায়ের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি । ওই ভদ্রলোক গ্রামে ফিরে যখন তার মা, ভায়ের কাছে তার বিশাল গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়ানোর গল্প করেন তখন তারাও অবাক হয়ে যায় । অবাক হয়ে যায় এই ভেবে -অনল যে এত টাকা ,গাড়ি,বাড়ি করেছে তাদেরও বিন্দু বিসর্গ কেনো জানায়নি ? তারা যে অভাবের মধ্যে রয়েছে সেটা তো অনলের অজানা নয় ! মা,ছেলে খোঁজ করতে করতে অনলের বাড়ি এসে উপস্থিত হন । অনল তাদের দেখে ভুত দেখার মত চমকে ওঠে ! কিন্তু মুখে কিছু বলেনা । সেদিন খাওয়া ,থাকার পর পরদিন সকালে মায়ের হাতে বেশ কিছু টাকা গুজে দিয়ে বলতে গেলে একপ্রকার বাড়ি থেকে বেড়-ই করে দেয় । তার ভয় হয় ,পিছে করা কৃতকর্মের কথা যদি সে আবেগতাড়িত হয়ে অতি আপনজনের কাছে বলে ফেলে !                          এই ঘটনার বছর খানেকের মধ্যে তার মা মারা যান । ভাই ধড়া গলায় যখন তার কাছে এসে মায়ের মৃত্যু সংবাদটি দেয় তখন সে প্রথম অবস্থায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে । ভাই এর সাথে নিজেও গলায় ধড়া পরে । শ্রাদ্ধের পূর্বপর্যন্ত ভাইকে সমাদরেই রাখে । বেশ ঘটা করে পুরোহিত মশাইকে প্রচুর দান সামগ্রী দিয়ে হাজার লোক নিমন্তন করে মায়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান পালন করে । কিন্তু শ্রাদ্ধের পরদিন ভাইয়ের শত অনুরোধ শর্তেও সে তার ভাইকে আর একটা দিনের জন্যওথাকতে দেয়না । সে আগের মতই বেশ কিছু টাকা ভায়ের হাতে দিয়ে তাকে ফিরে যেতে বলে । অভিমানী ভাই সেই টাকা নেয় না ।দাদাকে একটা প্রনাম করে বলে ,"জীবনে আর কোনোদিন তোর বাড়ি আসবো না । এটাই তোর আর আমার শেষ দেখা । আমার কি মনেহয় জানিস দাদা ?তুই অসৎপথে এই সব করেছিস ! তাই তোর মনে একটা ভয় যদি আমি সবকিছু জেনে যাই ! তুই ভালো থাকিস ।"               মায়ের মৃত্যুর এক বছর  পর সে মাতৃমন্দির নামে বাড়িতেই কালিমায়ের এক বিশাল মন্দির স্থাপন করে যেখানে নিজের মায়ের বড় করে এক ছবি বাধিঁয়ে নিত্যদিন স্নানের পর বেশ মোটা এক সাদা ফুলের মালা মায়ের ছবিতে পড়ায় ।                          এখানেই যদি অনলের কাহিনী শেষ হতো তাহলে হয়তো অনলের বাকি জীবনটা অনেক সুখী ও সুন্দর হতো । কেউই জানতে পারতোনা তার জীবনে করা একটি খুনের কাহিনী । কিন্তু বিধাতা পুরুষ যে তার অলক্ষেই তার কৃতকর্মের সাজা লিখে রেখেছিলেন । পুত্র সন্তানের আশায় পরপর তিনটি মেয়ে হয় অনলের । বড় ও মেজকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে বিয়েও দিয়ে দেন বেশ অবস্থাপন্ন ঘরেই । ছোট মেয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য যখন বাইরে যায় তখন তার সাথে পরিচয় হয় বিশিষ্ঠ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর রথীন মজুমদারের সঙ্গে । পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠতা, প্রেম এবং বিয়ে । বারবার বাবা এ বিয়েতে আপত্তি করা শর্তেও মেয়ে ঈশিতা তার কোনো কথায় শোনেনা । অনল মারত্মকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন । ডক্টর বাড়ির লোককে জানিয়ে দেন , অনতিবিলম্বে তার বুকে প্রেসমেকার বসাতে হবে । খবর যায় ঈশানীর কাছে । সে তার স্বামীর কাছে বাবার প্রাণভিক্ষা চায় । রথীন ও ঈশানী কলকাতায় এসে উপস্থিত হয় । নামকরা নার্সিংহোমে ডাক্তার রথীনের তত্ত্বাবধানে অনলের অপারেশান খুব ভালোভাবেই হয়ে যায় । তখনও অনলের ভালোভাবে জ্ঞান আসেনি । ডাক্তার রথীন অনল অথাৎ তার শ্বশুরমশাইকে দেখতে তার শিয়রের কাছে যেয়ে তার চিকিৎসার কাগজপত্রে চোখ বুলাচ্ছিলেন । "বিধাতার লিখন না যায় খণ্ডন"- অনল বেহুস অবস্থায় বলতে থাকে ,"আমায় ক্ষমা করে দাও মেসোমশাই ,আমি তোমাকে মারতে চাইনি । হঠাৎ কেন যে ঐসময় আমি তোমার হাতটা ছেড়ে দিয়েছিলাম ,তা আমি আজও কোনো উত্তর পায়নি । আমার ভিতরের পশুটা তোমার টাকা আর সম্পত্তির লোভে তোমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিলো । তোমার পলাশপুরের বাড়ি আমি বিক্রি করে দিয়েছি । কোনোদিন যদি তোমার ছেলে রমেন ফিরে আসে আমি তাকে সবকিছু দিয়ে দেবো । এই পাপের বোঝা আমি আর টেনে বেড়াতে পারছিনা ।" রথীনের বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়না তার শ্বশুর তার দাদুর খুনি ! ছেলেবেলা থেকেই সে তার বাবার কাছে কলকাতার বাড়ি ,ব্যবসা সম্পর্কে অনেকবার গল্প শুনেছে । রথীন পুরো কথাগুলি সকলের কাছে এমনকি ঈশানীর কাছেও চেপে যায় ।                                              পরদিন খুব ভোরে উঠে সে তার বাবার কাছ থেকে শোনা গল্পের কথা মনে রেখে পলাশপুর গ্রামে যায় । পিতৃ ভিটার কাছে দাঁড়িয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় । কিছু বয়স্ক মানুষের কাছ থেকে সে অনল সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারে । একটা পথের মানুষকে বাড়িতে তুলে এনে কিভাবে তাকে সন্তান স্নেহে রেখে নিজ সন্তানের দুঃখ ভুলতে চেয়েছিলেন । তার খুব রাগ হয় নিজের বাবা ,মায়ের প্রতি । মা কিছুতেই চাইতেন না বাবা তার কলকাতার বাড়ির সাথে কোনো সম্পর্ক রাখুক । প্রচন্ড অশান্তি করতেন এই নিয়ে তার বাবার সাথে তার বিদেশিনী মা । বাবা সংসারে শান্তি বজায় রাখতে মায়ের ইচ্ছাকেই মেনে নিয়েছিলেন । বিনিময়ে কষ্ট দিয়েছিলেন তার নিজের মা ,বাবাকে । আর তার শাস্তি মনেহয় ভগবান আমায় দিলেন আমার কাছ থেকে দু'জনকে গাড়ি এ্যাকসিডেন্ট একসাথে কেড়ে নিয়ে ।



                    দিন পনের বাদে অনল বাড়িতে আসেন । একদিন রথীনকে ডেকে অনল বলেন ,"তোমার সাথে তো সেভাবে আলাপই হলোনা বাবা । তোমার বাবার নাম কি , এদেশে কোথায় তোমাদের বাড়ি ছিলো ?" রথীন চুপ করে বসে আছে দেখে তিনি আবারও একই প্রশ্ন করেন । এবার রথীন আস্তে আস্তে বলে ," আমার বাবার নাম রমেশ পাল ,ঠাকুরদা রবীন পাল ,এদেশে আমাদের বাড়ি ছিলো হাওড়া জেলার পলাশপুর গ্রামে ।"


                           অনল এক হাতে বাঁদিকের বুকটা চেঁপে ধরে বলে ওঠেন ,"কি ,কি বললে তুমি ?" "আপনি উত্তেজিত হবেননা । যে  কথা এতদিন কেউ জানেনি সে কথাগুলি হাসপাতালে বেঘোরে আমার সামনেই বলে ফেলেছেন । একেই বলে মনেহয় - পাপ করলে তার  জীবদ্বশায় পাপের প্রকাশ হবেই । এ কথা কেউ কোনোদিন এমনকি ঈশানীও জানবে না । আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন । তবে আমি আর এখানে থাকবোনা । আমাদের টিকিট কাটা হয়ে গেছে ।আমরা কালই চলে যাবো ।" অনল যেভাবে শুয়ে ছিলেন সেই ভাবেই শুয়ে থাকেন । দু'চোখের কোল বেয়ে অবিরাম জল পড়তে লাগে । রথীন ঘর থেকে বেরিয়ে যান ।



               পরদিন যাবার সময় রথীন আর সে ঘরে ঢোকেননা । দরজার কাছ থেকেই 'আসছি'- বলে ঈশানীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ।

                প্লেন থেকে নেমেই ভাইরার ফোন পান ," বাবা শেষ সময় তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে গেছেন । কিন্তু কেন ?"

******নন্দা******  6.04.17   রাত 8.30

Friday, April 21, 2017

অন্তরে আছো
                    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
এখনো সাঁঝের আকাশ ,
আবীরে হয় লাল -
এখনো প্রভাতে পাখি গায় গান ;
এখনো আমি সন্ধ্যা হলে -
জানলা দিয়ে সুদীর্ঘ পথ দেখি অবিরাম |
পরদেশী তুমি ,ভুলে গেছো বুঝি ?
তাই ফিরলেনা আর !
কিশোরী মনে দোলা দিয়ে তুমি ,
হলে কেন দেশান্তর ?
জীবন কারও থেমে থাকেনা ,
থামবেনা আমারও জীবন ,
প্রথম ছোঁয়ার পরশ নিয়ে -
মনে রাখবো তোমায় আমরণ |
যখন আমি নিস্তব্ধ ঘরে -
থাকবো বসে একা ;
পড়বে মনে তোমার পরশ ,
নাইবা পেলাম এ জনমে আর দেখা |
সেদিনের সেই শিহরিত শরীর ,
পড়লে মনে আজও জাগে শিহরণ ;
ঠোঁট দু'টি তখন থরথর কাঁপে ,
বুকে ওঠে সেই একই আলোড়ন |
নন্দা  23.1.17

সবাই মুখোশ পড়া
              নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
গুচ্ছ গুচ্ছ স্মৃতির মালা -
ঝুলছে যেন গলায় !
দিব্যি আমি বেঁচে আছি ,
সকলের সাথে হাসি মস্করায় !
মনের কষ্ট মনেই আছে ,
জানে না তা কেউ ;
করছি অভিনয় অবিরত সব ,
রাতের আঁধারে বুকে ওঠে ঢেউ ।
নিজের সংসার ,নিজের মানুষ -
করি তবু অভিনয় !
সর্বদা সব মুখোশ পড়া ,
লুকাই কান্না হাসির আড়ালে -
দিইনা কারও কাছে ধরা !
****নন্দা****   21.4.17   12AM

Wednesday, April 19, 2017


#অনুকবিতা
  ছোট ছোট কথাগুলো ,
   স্মৃতি হয়ে জমে মনে ,
    স্মৃতি দিয়ে মালা গাঁথা ,
      বিনিসুতোই বাঁধি যে তা !
                                                নন্দা

Tuesday, April 18, 2017

সাগরই জানে
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
সমুদ্রের পার -
হাজার মানুষের কোলাহল ছাপিয়ে -
তার গর্জনই শুধু শোনা যায় ,
বহু প্রতীক্ষিত দু'টি মনের মিলন ;
সমুদ্রের ঢেউগুলি  সেভাবেই -
আছড়ে পরে বুকের উপর ,
স্থির থাকতে সে দেয়না ,
তার প্রেমের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ।
সে যখন এসে শরীরে আছড়ে পরে ,
চিরদুখিনীর মুখেও ফুটে ওঠে -
এক অনাবিল হাসি !
সে হাসি ক্ষনিকের হলেও -
সে দুখীকে হাসতে জানে -
আজকের দিনে যা অতি দুর্লভ !
নন্দা        12.04.17    11.45PM.        দীঘা

Monday, April 17, 2017

সাগরপাড়ে সারাজীবন শুধু ঝিনুক কুড়িয়েই গেলাম ,
মুক্তোর সন্ধান কোনোদিনও পেলাম না -
ঢেউ গোনার বৃথা চেষ্টা করলাম ,
শূন্যতেই দাঁড়িয়ে রইলাম !
দাও শক্তি
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
সাগর ,ঢেউ আর ঝাউ বন ,
তারই মাঝে আমার উদাসী মন ;
স্মৃতি রোমন্থনে সাগরের পাড়ে একাকী ,
কখনো সুখী ,কখনো বা হই দুখী  ।
মনের রঙ্গেতে রাঙ্গিয়ে ফেলি ,
কিছু পুরাতন স্মৃতি ,
সুখ ,দুঃখের উপরে গিয়ে -
স্রোত এনে দেয় নুতন দিনের গীতি ।
সমুদ্রের কানে কানে -
শুধু বলি আমি ,
আমাকে দাও- তোমার একটু শক্তি ,
হাজারও কথায় আপন খেয়ালে ,
চলি যেন শতত- হইনা যেন দগ্ধ !
****নন্দা****  14.4.17   দীঘা

Sunday, April 16, 2017

বড়দের আশীর্বাদ
           নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
পয়লা বৈশাখে বাঙ্গালী সমাজ -
নব আনন্দে মাতে ,
হরেক রকম মিষ্টি ছাড়াও ,
সিন্নী ,পায়েস রাঁধে ।
কৃষকের ঘরে খুশির আমেজ ,
নুতন চালের ভাতের গন্ধ ,
আজ যে সবাই উচ্ছল আনন্দে ,
ঝগড়া ,বিবাদ সব বন্ধ ।
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে ,
চলে প্রণাম পর্ব -
গুরুজনের আশীর্বাদ নিয়ে ,
ছোটরা হয় যে ধন্য ।
উচচশিক্ষায় শিক্ষিত শহুরে -
জানেনা এ সবের মাহাত্য !
নুতন বছরে বড়দের আশীর্বাদ ,
হয়না কখনো ব্যর্থ ।
 ****নন্দা****   15.4.17     10PM

Saturday, April 15, 2017

ভালোবাসায় বাঁচি
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
পয়লা বৈশাখ নিয়ে এলো ,
নুতন আশা নুতন দিনের গান ,
নিয়ে এলো সে সোনালী ঊষার -
সুখ ,ছন্দ আর আনন্দে ভরা প্রাণ ।
বিগত বছরে হারিয়েছি কিছু প্রিয় মানুষ ,
আরও হারিয়েছি অনেক বন্ধু স্বজন -
নুতন উষা দিতে এলো বিশ্বাস মনে ,
পাবো নূতন করে অনেক আপনজন ।
পুরাতন ,জীর্ণ যা কিছু-
তাকে বিদায় জানাতেই হয় ,
কালের অমোঘ নিয়মের বাইরে কেউ নয় -
মেনে নিয়ে জায়গা ছাড়তেই হয় ।
পয়লা বৈশাখের এই পুণ্য তিথিতে ,
এসো - সকলে করি পণ ,
হিংসা ,বিদ্বেষ ভুলে সকলে ,
ভালোবাসা দিয়ে ভরি অপরের মন ।
***নন্দা***   14.4.15  9.30PM.       দীঘা ....

Tuesday, April 11, 2017


সবাই বোকা
          নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
নাগরদোলা ছাড়াই আমরা ,
ঘুরছি যেন সবাই ,
ঘুরছি মোরা লাভের আশায় -
পাচ্ছি ঘড়া শুন্যই ।
লোভ ,লালসা ,হিংসা নিয়ে -
মেতে আছি সবাই ,
লাভের গুড় খাবে পিঁপড়েই -
যাবো যখন মারা-ই ।
দেখছি সবাই অন্যের দোষ -
"আমি মহান ব্যক্তি" !
নিজের ঢাক পেটাচ্ছি নিজে ,
বলছি মুখে মহান উক্তি !
 *** নন্দা***  11.4.17  2AM.

Monday, April 10, 2017


আমার সাথী
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
যখন আমি একলা ঘরে ,
থাকি বসে আপন মনে -
রাতেরবেলা সাথী অন্ধকার ,
দিনের আলোতে বাতাস সঙ্গ দেয় ।
নিঃসঙ্গ আমি নয়কো মোটেই ,
বন্ধু আছে অনেক -
তাদের সাথে একলা আমি ,
মনেমনে কথা বলি বেশ !
সকল বন্ধুর সেরা বন্ধু ,
ছেলেবেলার স্মৃতি -
আসলে পরে সে মনেতে ,
ভুলি এ জীবনের ব্যথাভরা গীতি ।
***নন্দা***   6.4.17  12.10AM
অনুকবিতা
 নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
          অবাধ্য মন -
         মানেনা শাসন বারণ ,
         ভুলে যেতে চাই -
         কিছু কথা,কিছু স্মৃতি ,
         এরাই যে মন খারাপের কারন !
.  ****নন্দা****   10.4.17    1.20AM

Saturday, April 8, 2017

কেন করো দুস্টুমি
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
   শব্দগুলো বড় পাজী ,
   আসে ঘুমের ঘোরে ,
   দিনের আলো ফুটলে পরে -
   উড়ে ফুড়ুৎ কোরে !
কলম নিয়ে বসে থাকি ,
মুখে দিয়ে হাত -
কিছুতেই তারা দেয়না ধরা ,
আমার কি বরাত !
   ভাবি বসে হবো কবি ,
   লিখবো অনেক কবিতা ,
   পড়বে সবাই,জানবে লোকে আমায় -
   লেখার শেষে পড়ে দেখি -
   লিখেছি আমি যা -তা  !
   ***নন্দা***     8.4.17    11.15 PM.

যদি সত্যি হত
             নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
  আমার হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে ,
  অনেক দূরে নয়,
  তোমার বুকের মাঝে ।
  আমার সাঁতার কাটতে মন চায় ,
  সমুদ্রের উথাল জলে নয় ,
  তোমার হৃদয় সৈকতে ।
  আমার কল্পনার স্বপ্নগুলিকে -
  সত্যি করতে চাই ,
  তোমায় নিয়ে স্বপ্নেগড়া ভালোবাসার নীড়ে  ।
  আমি ভিজতে চাই ,
  বৃষ্টির জলে নয় -
  তোমার ভালোবাসার গভীরতায় ।
  আমি বারবার, শত রূপে শত বার ,
  যুগে যুগে জম্মজমান্তরে -
  তোমাকেই শুধু পেতে চাই ।
 ***নন্দা***      6.2.17         11.55PM.
 

Friday, April 7, 2017

কেনো বুকে বাজে
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
 রাতের আঁধারে ঘুমায় সকলে ,
 ঘুম যে আসেনা আমার ;
 ঘুমের বদলে চোখে ভেসে ওঠে ,
 ফিরে যাই সেই ছেলেবেলা ।
 খুব ভোরে উঠে মাথায় হাত রেখে ,
 বাবা বলতেন ,"মা ওঠ ,
 অফিসের সময় হয়ে যাবে আমার ,
 এবার অঙ্কটা নিয়ে বোস ।"
 ঠাকুর ঘরের ধুপ ধুনোর গন্ধে ,
 ঘুম ভাঙ্গতো যে আমার -
 খোলা চুলে মা দাঁড়িয়ে কাছে ,
 পুজোরফুল মাথায় ছোয়াঁতেন বারবার !
 পাবোনা ফিরে সে সব দিন ,
 ভাবতে তবুও ভালোলাগে ,
 সময় কেনো স্রোতের মত -
 এত তাড়াতাড়ি চলে আগে ?
 হারিয়ে যায় এ দিনগুলি সকলের -
 ছবিগুলি চোখে ভাসে স্পষ্ট ,
 যত্নে থাকে এ স্মৃতিরমালা ,
 হয়না কখনোই অস্পষ্ট ।
***নন্দা***   7.4.17   2AM.

 

Thursday, April 6, 2017

মানুষ কত অসহায়
             নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
অসহায়ের হাহাকার ,
ভেসে আসে বাতাসে -
অন্ধকারে আছে চাপা কান্না !
ফুটপথে  হাজার লোকের বিছানা ,
কেউ কারও কথা ভাবেনা !
কালোবাজারিতে ছেয়ে গেছে দেশটা ,
অর্থ আর প্রাচুর্য্যে অন্ধ অনেকেই !
বস্তিতে আছে শুধু ক্ষুদার যন্ত্রনা ,
সময় কখনো থেমে থাকেনা  !
ধনীলোকের স্বপ্ন ভাঙ্গে প্রাচুর্য্যে ,
গরীব স্বপন কভু দেখেনা !
অর্থ চালিত করে ভুল পথে মানুষেরে   ,
টাকার এভাবে গরীব মরে অনাহারে ।
*** নন্দা***   6.4.17 3 am.

যোগ বিয়োগ
                   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
জীবনের হিসাব মিলছে না আর ,
ভুল হয়ে গেলো সব ,
আঁধারের কাছে নালিশ জানিয়ে ,
বলো কি হবে আর !
 আগুন জ্বললে পরে ,
দেখতে সকলে পায় ,
দহন জ্বালা কি -
বুক চিরে দেখানো যায় ?
জীবন মানে যোগ বিয়োগ শুধু ,
পাওয়া না পাওয়ার হিসাব ,
মনের কথা লিখি খাতার পাতায় ,
মরণের পরে ইতিহাস হবে তা !
***নন্দা***   6.3.17      6.55PM.

Wednesday, April 5, 2017

সুন্দর পৃথিবী
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
 বিশ্বাস ভেঙ্গেছে বারবার -
 নিজের বিশ্বাসে অটুট থেকে ,
 তাদের বিপদে ছুটেছি ,
 বহুবার- তাদেরই  দ্বার ।
 চাহিদার বেশিটাই দিয়েছি ,
 বিনিময়ে চাইনি কিছুই ,
 তারা আমায় খালি হাতে ফেরায়নি ;
 প্রতিবার আমি যা পেয়ে থাকি ,
 সেটাই আমি পেয়েছি ,
 সেই অপমান আর অপবাদ !
 এখন আর কষ্ট হয়না ,
 জানি এটাই আমার পাওনা -
 পৃথিবীতে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ,
 আর মনুষ্যত্বের দাম ক'জন দিতে পারে ?
***নন্দা***.            5.4.17     10PM.
 
                           বন্ধুত্বের বন্ধন        
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী                    
    অভিন্ন হৃদয় দুই বন্ধু । আনন্দ ও জসীম । সাতচলিশ সালের দেশভাগের পর আনন্দ চলে আসে তার পরিবারের সাথে ভারতবর্ষে আর জসীম পূর্বপাকিস্তানেই থেকে যায় । ছেলেবেলার থেকে দুই বন্ধুরই স্বপ্ন ছিলো দেশের হয়ে কাজ করার জন্য সেনাবাহিনীতে তারা যোগদান করবে ।    .                  চৌদ্দ ,পনের বছরের দুই কিশোর যারা গঠনগতভাবে আলাদা হলেও মননে ছিলো এক ও অভিন্ন । সময় এগিয়ে চলেছে তার নিয়ম মেনেই ; কিন্তু তাদের হৃদয়ে জমে থাকা ভালোবাসা ,দুস্টুমির স্মৃতিগুলি বিন্দুমাত্র মলিনতার ছাপ ফেলতে পারেনি । ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয় জসীম তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের মুক্তি আন্দোলনের জন্য জীবন পণ করে ঝাঁপিয়ে পরে । দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সে প্রতিরক্ষা বাহিনীর উচ্চপদে কর্মরত হয় ।                                                          এদিকে রতন তার বাবা, মায়ের সাথে পশ্চিমবঙ্গে এসে অজানা ,অচেনা দেশে চরম দুর্বিসহ জীবন-যাপন শুরু করে । মাথার উপর ছাদ নেই ,দু'বেলা দু'মুঠো খাবার কোনো সংস্থান নেই ! কখনো রেলষ্টেশনে কখনোবা খোলা আকাশের নীচে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমানো । বাবার কাজে সহায়তা করার জন্য ষ্টেশনের ছোটছোট চায়ের দোকানে বাবার সাথে কাপ ,প্লেট ,কেটলি ধোয়ার কাজ করা ।    .                     সময়ের সাথে সাথে জীবনেরও কিছু পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী । রতনের বাবা ফ্যান কোম্পানীতে সামান্য মজুরীর বিনিময়ে একটি কাজ পান । রতনেরও পড়াশুনা তখন আবার শুরু হয় । অতি দারিদ্রের মধ্য দিয়ে হলেও শিক্ষিত বাবার সহায়তায় প্রাইভেট শিক্ষক ছাড়াই রতন বেশ ভালোভাবেই বি.এ . পাশ করে । শুরু হয় তার জীবনের স্বপ্ন পূরণের জন্য দেশের হয়ে কাজ করার জন্য লড়াই । নানান জায়গায় সেনাবাহিনীর চাকরীর জন্য ইন্টারভিউ দিতে আরম্ভ করে । ঈশ্বরের অপার কৃপায় তার স্বপ্ন পূরণও হয় । সে সেনাবাহিনীতে চাকরী পেয়ে যায় ।  ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে গরু পাচারকে কেন্দ্র করে দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চরম আকার নেয় । আটচলিশ ঘন্টা ধরে দুই পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হতে থাকে । পরিস্থিতি সামাল দিতে উচ্চপদস্থ দুইপক্ষের সেনাবাহিনীর অফিসারেরা দফায় দফায় মিটিং করতে থাকেন । শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় দুই দেশের অফিসারেরা মুখোমুখি একবার মিটিং এ বসবেন ।   .                       রাত তিনটে । মিটিং শেষ হয় । তারা এবারের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার একটা সিদ্ধান্তে আসেন । মিটিং কক্ষ থেকে যখন যে যার মত বেড়িয়ে যাচ্ছেন ,হঠাৎ ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক অফিসার বাংলাদেশের এক সেনা অফিসারকে বলেন ," মিস্টার জসীম উদ্দিন ,যদি কিছু মনে না করেন আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করতাম ।" অফিসার দাঁড়িয়ে যান । ভারতীয় সেনা অফিসার জানতে চান ." আপনার ভ্রূতে যে কাটা দাগটা আছে ,ওটা কি পেয়ারা গাছ থেকে পড়ে যেয়ে হয়েছিল ? "  অফিসের হক্চকিয়ে যান ! তিনি একদৃষ্টে ভারতীয় সেনাঅফিসারের মুখের দিকে তাঁকিয়ে বলেন ,"আপনি কি করে জানলেন ?"  ভারতীয় অফিসার তখন মুচকি ,মুচকি হাসছেন ।  " পিঠের তিনটি সেলাইয়ের দাগ নিশ্চয় এখনো আছে ?"  "কে আপনি ?"  "একটু চিন্তা করে দেখুন তো কারপক্ষে এগুলি জানা সম্ভব ?"          

জসীম সাহেবের হঠাৎ মনে পড়লো মিটিং শুরু হওয়ার আগে যখন পরিচয় পর্ব চলছিল তখন এই সেনাঅফিসারের নাম শুনেছিলেন - রতন মজুমদার । হো ,হো করে জসীমসাহেব হেসে উঠে দু'হাত বাড়িয়ে ছেলেবেলার বন্ধু রতনকে জড়িয়ে ধরলেন ।   "কি অদ্ভুত দেখ ,কোনোদিনও স্বপ্নেও ভাবিনি তোর সাথে আমার আবার দেখা হবে ।"  জসীম কথাগুলি যখন বলছেন তখন তার চোখের কোলদু'টি জলে ভিজে গেছে ।

                 পনের থেকে কুড়ি মিনিটের মত দুই বন্ধু একসাথে ছিলেন । কিন্তু এই সামান্য সময়ের মধ্যেই উভয়েই তিনযুগ আগের দিনগুলি ওলোটপালট করে গল্পে মেতে ছিলেন । সময় ,দেশভাগ ,দীর্ঘদিন দেখা না হওয়া ,সীমান্তরক্ষার সামান্য খুঁটিনাটি ব্যাপারে গোলাগুলি - কোনো কিছুই দুই বন্ধুর বন্ধুত্বকে চিড় ধরাতে পারেনি ।

                  বৈশাখ ,জৈষ্ঠ্য মাসে দুপুরের ঝড়ে সেই আম কুড়ানো, ঈদ , দূর্গাপূজাতে দুজনের ঘুরে বেড়ানো ,  সরস্বতী পূজাতে দু'জনে একসাথে অঞ্জলি দেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু ওই সামান্য সময়ে দুই বন্ধুর চোখের সামনে ভেসে ওঠে । সময় বড় অল্প ,কর্তব্যের নাগপাশে দুজনেই বাঁধা । তাই মুহূর্তেই দুজনেই সজাগ হয়ে ওঠে । পুনরায় দু'জন দুজনকে জড়িয়ে ধরেন । দু'জনেরই চোখ জলে ভিজে যায় । ফোন নম্বর ও বাড়ির ঠিকানা আদানপ্রদান করতে কেউই ভোলেননা । বিদায়কালে তারা দু'জনেই হয়তো ভাবছিলেন, সেই ঈশ্বর বা আল্লা যেই হোননা কেন তাদের বন্ধুত্বটাকে নিয়ে তিনি ছিনিমিনি খেলেছেন । তার যদি এটাই মনের ইচ্ছা ছিল তাহলে তাদের বন্ধুত্বটাকে হরিহর আত্মা তৈরী করেছিলেন কেন ? অপরাধ তো তাদের কিছু ছিলোনা !


                         একজনের গমন পথের দিকে আর একজন অপলক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকেন । দেশের কর্তব্যের কাছে বন্ধুত্বের ভালোবাসার পরাজয় হয় । সেই ভালোবাসার স্থান হয় - কাঁটাতারের বেড়ার দু'পারের দু'দেশে বসবাসকারী দুই বন্ধুর অভিন্ন হৃদয়ে ।

নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
বদলে গেছি
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
 আমি বদলে গেছি ,
বদলাতে বাধ্য হয়েছি ,
কিন্তু বিশ্বাস করো ,
আমি বদলাতে চায়নি !
 কিছু মানুষের -
আচার ,ব্যবহার ,বিশ্বাসে আঘাত ,
পারিপার্শ্বিকতার চাপে -
বদলাতে বাধ্য হয়েছি !
আঘাতের পর আঘাত যখন ,
চরম ক্ষত সৃষ্টি করে !
তখন বিবেকের বিরুদ্ধে যেয়ে -
    বদলাতে হয় -
কিছু সম্পর্ক ,কিছু স্নেহ ,ভালোবাসা ,
ভুলে যেতে হয় !
সমাজের কিছু মুখোশধারীদের জন্য -
আমার মত অনেকেই বদলে যায় !
নন্দা    31.3.17    2.30AM

Sunday, April 2, 2017

2য় অংশ ......,,  সাগর মিত্রাকে বিয়ে করতে বাধ্য হোলো ;বাবার আবেগকে মেনে নিয়ে ,নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে ,জীবনের প্রথম ভালোবাসাকে নিজহাতে গলা টিপে মেরে সে মিত্রাকে জীবনসঙ্গী করে নিলো । অনাড়ম্বর পরিবেশে মুষ্টিমেয় কিছু আত্মীয়স্বজন ,আশেপাশের কিছু পাড়াপ্রতিবেশীর সামনে সে মিত্রাকে রেজিস্ট্রি করে সিঁদুর পরিয়ে দিলো । বৌভাতও হলো জ্ঞাতিবন্ধুদের উপস্থিতিতে ।           


ফুলশয্যার রাতে সাগর মিত্রাকে জানালো যতদিন না সে নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে ততদিন পর্যন্ত স্বামীস্ত্রীর সম্পর্ক বলতে যা বোঝায় তা তাদের মধ্যে গড়ে উঠবেনা । মাঝে মাঝে সে যেমন গ্রামে আসে ঠিক সেইরূপই আসবে । তবে মিত্রার যদি ইচ্ছা করে সে চাকরীর চেষ্টা করতে পারে । গ্রামের দিকে না হোক ,কলকাতার দিকে হলেও কোনো অসুবিধা নেই । লেখাপড়া শিখে শুধু হাতাখুন্তি নাড়ানোর মানষিকতা নিয়ে বসে থাকলে জীবনে অনেককিছু থেকেই বঞ্চিত হতে হবে । ভালো ছাত্রী ছিলে ; তোমার প্রতিটা পরীক্ষার নম্বরও উচ্চমানের । আমার মনেহয় একটু চেষ্টা করলেই তুমি কিছু একটা চাকরী পেয়ে যাবে । মিত্ৰা হা করে সাগরের কথাগুলি শোনে । ঠিকই তো বলছে সে । তবে মনেমনে এটাও ঠিক করে নেয় তার শ্বশুর যতদিন জীবিত আছেন ,ততদিন সে তার কাছেই থাকবে । তবে কলকাতা নয় ,গ্রামের কোনো স্কুলে চাকরীর চেষ্টা সে করে যাবে ।                                   পরদিন সাগর কলকাতায় ফিরে যায় । মিত্ৰা আর সাগরের আলাদা করে কোনো কথা আর হয়না । যাবার সময় অনাদিবাবু ছেলেকে একা পেয়ে বলেন ," আমি জানি বাবা ,আমার কথা রাখতে তুমি এই বিয়ে করতে রাজী হয়েছো । তুমি ভেবোনা ,ও এখন থেকে আমার কাছেই থাকবে । আগে তোমার পড়াশুনা শেষ হোক ,নিজে প্রতিষ্ঠা লাভ করো ; তখন না হয় তুমি মিত্রাকে তোমার কাছে নিয়ে যাবে । ও খুব ভালো মেয়ে বাবা । আমি ওকে ওর ছোটবেলা থেকেই চিনি । তুমি দেখো বাবা তোমরা খুব সুখী হবে ।" সাগর কোনো কথার উত্তর দেয়না । নীচু হয়ে ভক্তিভরে বাবাকে প্রণাম করে 'আসি' বলে বেরিয়ে যায় । মিত্রা ছাদের উপর থেকে দাঁড়িয়ে দেখে যতক্ষণ তাকে দেখা যায় । মনেমনে একটা কষ্ট সে অনুভব করে বাবার কথা রাখতে বাধ্য হয়ে সে তাকে  মেনে নিয়েছে  । কিন্তু মন থেকে কোনোদিনও হয়তো সাগর তাকে মানতে পারবেনা । কিন্তু ঈশ্বর যদি কোনোদিনও আমায় যদি একটুও সুযোগ করে দেন - তাহলে ভালোবাসা দিয়ে ,যত্ন দিয়ে আমি সাগরের জীবনের সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবো । তবে এখন থেকে চাকরীর একটা চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে । ভাগ্যে কি লেখা আছে তা একমাত্র উপরআলায় জানেন !               এদিকে সাগর কলকাতায় ফিরে আসার পর সম্পূর্ণ যেন অন্য মানুষ । সেই উচ্ছলতা ,হাসি ,গান কোনোটাই যেন তার সহপাঠীরা খুঁজে পায়না । সকলে জানতে চায় - " শরীর খারাপ নাকি ? বাড়ির সকলে ভালো তো ? হ্যাঁরে ,তুই কি প্রেমে পড়েছিস ?" কুশল জানতে চাইলে একমাত্র মাথা নাড়ে । বাকি কথা সে এড়িয়ে যায় । স্বরূপার সাথেও দেখা হচ্ছে ,পড়াশুনার ব্যাপারেও কথা হচ্ছে । কিন্তু আলাদাভাবে কোনো কথা বলার সুযোগ স্বরূপা পাচ্ছেনা । কয়েকদিন এভাবে চলার পর সুযোগ বুঝে স্বরূপা সাগরের কাছে জানতে চায় তার কি হয়েছে ? সাগর তাকে বলে ," আমার অনেককিছু বলার আছে তোমাকে । আজ ছুটির পর চলে যেওনা । কথাগুলি তোমাকে বলা একান্ত দরকার ।" স্বরূপা শুধু ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায় ।    .                      কলেজ ছুটির পর দুজনে যেয়ে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে বসে । সাগরকে চুপ করে থাকতে দেখে স্বরূপা তাকে বলে ,"তুমি কি বলবে বলছিলে ?" সাগর স্বরূপার মুখের দিকে না থাকিয়েই সমস্ত ঘটনা তাকে জানায় । একবারও সে মুখ তুলে স্বরূপার দিকে তাঁকিয়ে দেখেনা । যদি সে তার দিকে একবারের জন্যও তাকাতো তাহলে সে দেখতে পেতো  স্বরূপার চোখের জলে তার পরিহিত পোশাক ভিজে গেছে ! সাগর মুখ নীচু করে সেই একইভাবে বলতেই থাকে । তার সমস্ত কষ্ট, দুঃখ আজ যেন সে উজাড় করে দেয় স্বরূপার   কাছে । কোনো রকমে স্বরূপা নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সাগরের কথার মাঝখানেই  হেসে পড়ে বলে ওঠে ," বিয়ে করেছো - তা এত অপরাধবোধে ভুগছো কেনো ?"
সাগর অবাক হয়ে এবার স্বরূপার মুখের দিকে তাকায় । স্বরূপার মুখে হাসি । কিন্তু সাগর তো আর তার অন্তর দহনটা দেখতে পাচ্ছে ! হঠাৎ করেই স্বরূপা  বলে ওঠে ," মেশোমশায়ের কথা রেখে তুমি ঠিকই করেছো । তানাহলে তিনি খুব কষ্ট পেতেন । ভেবে দেখতো - তার অবর্তমানে তুমি যখন তার কথা ভাবতে তখন মেশোমশায়ের কথা রাখতে পারোনি বলে তুমি কতটা কষ্ট পেতে ? যে বয়সেই তিনি যাননা কেন ,তোমার মনে হত তোমার জন্যই এত তাড়াতাড়ি চলে গেছেন । পারতে কোনোদিন নিজেকে ক্ষমা করতে ? পারতেনা ,কিছুতেই পারতেনা । সুতরাং তুমি যেটা করেছো ,তোমার জায়গায় আমি যদি থাকতাম সেটাই করতাম । আমরা যেমন বন্ধু ছিলাম ঠিক তেমনই থাকবো । একটা বছর পর কে কোথায় চলে যাবো আর হয়তো জীবনে দেখাও হবেনা । তুমি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছো । কিন্তু তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ তুমি আর মুখ গোমড়া করে থেকোনা । তোমার বৌ কলকাতা আসলে আমায় জানিও ,আমি নিজে গিয়ে তার সাথে দেখা করে আসবো । বৌকে কিন্তু কখনোই ভালোবাসায় ফাঁকি দিওনা । তার কিন্তু কোনো অপরাধ নেই । তুমি আমায় ভালোবেসেছিলে ; আমিও তাই । হয়তো আমাদের ভালোবাসাটা চরম পূর্ণতা পায়নি , তাইবলে ভালোবাসাটা কিন্তু মরে যাবেনা । তোমার বা আমার জীবনে যেই আসুকনা কেনো - আমরা কেউই কিন্তু তাকে ঠকাতে পারিনা । তুমি কখনোই মিত্রাকে অবহেলা কোরোনা ।" সাগর মিত্রার মুখে কথাগুলি শুনে ফ্যালফ্যাল করে তারদিকে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে থেকে বলে ," তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও । " " কি অন্যায় তুমি করেছো যে তোমায় ক্ষমা করতে হবে ? আচ্ছা সাগর ,কি ভাবো বলোতো তোমরা মেয়েদের ?আমরা মেয়েরা সবসময় পরিস্থিতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে জানি । ভগবান আমাদের এই ভাবেই তৈরী করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন ।? এক নিঃশ্বাসে কথাগুলি বলে স্বরূপা  চুপ করে যায় ।সাগরও চুপ করেই কথাগুলি শোনে । একসময় স্বরুপায় বলে ," চলো এবার , প্রায় সন্ধ্যা হতে আসলো ।" সাগর কোনো কথা না বলেই যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো ।

ভবিতব্য                                     
 নন্দা মুখার্জী রায়চৌধুরী                                                                                                  
         সাগর কিছুতেই বুঝতে পারছে না ; বাবা কোনো মেজকাকুকে দিয়ে তাকে ফোন করলেন বাড়ি যাওয়ার জন্য । এইতো মাত্র কদিন আগেই বাড়ি থেকে সে আসলো । তবে কি বাবার শরীর খারাপ করেছে ?তাই বা কেন হবে ? বাবার শরীর খারাপ করলে তো নিশ্চয় মেজকাকু তাকে বলতেন । সেদিন আসবার সময় বাবা বলেও দিলেন ," ছুটি হলেই বাড়ি চলে এসোনা ,তাতে পড়াশুনার ক্ষতি হয় । তুমি আমার একমাত্র সন্তান । তোমার মায়ের মৃত্যুর সময় তিনি আমাকে বারবার করে শুধু একটি কথায় বলেছিলেন ; যে ভাবেই হোক আমি যেন তোমায় ডাক্তারী পড়াই  । এখানে মিত্র প্রায়ই আসে ,তোমার কাকু, কাকিমাও রয়েছেন ; তারাই আমার দেখাশুনা করবেন । তুমি আমায় নিয়ে কখনো চিন্তা করোনা । মনদিয়ে শুধু পড়াশুনাটা কোরো ।                      মিত্রা হলো সাগরদের পাশের গাঁয়ের মেয়ে । সাগরের বাবার ছাত্রী । সাগরের বাবা একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন ।মিত্ৰা ছিল মেধাবী ছাত্রী । তাই স্বভাবতই সাগরের বাবা অনাদী মুখার্জী তাকে খুব স্নেহ করতেন । যদিও অনাদিবাবু এখন চাকরী থেকে অবসর নিয়েছেন মিত্রারও পড়াশুনা শেষ হয়েছে ; তবুও এখনো প্রায় রোজই মিত্ৰা একবার আসবেই তার মাস্টার মহাশয়ের কাছে । মাঝে মাঝে নিজে রান্না করে বা মায়ের হাতের রান্নাও সে তার শিক্ষাগুরুর জন্য নিয়ে আসে । খুব সুন্দরী মেয়ে মিত্ৰা । স্বভাবতই তার আরও সুন্দর । একই গ্রামে থাকার সুবাদে সাগর ও মিত্রা পরস্পরের পরিচিত এবং উভয়ের মধ্যে মামুলি কথাবার্তাও হয় ।            
   সাগরের মা অনুভাদেবী সাগর যে বছর মাধ্যমিক দেয় ; সে বছরই মারা যান । ছেলের পরীক্ষার ফলটাও জেনে যেতে পারেন না । সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষ । হঠাৎ করেই প্রচন্ড ঠান্ডা লেগে বুকে কফ বসে যায় । গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বেশ কিছুদিন ভর্তিও ছিলেন । কিন্তু বাড়ি আর ফিরতে পারেননি । স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি থাকার সময়ই একদিন তিনি তার স্বামীর হাত দু'টি ধরে তাদের  একমার ছেলেকে ডাক্তারী পড়ানোর  কথা বলেন । শুধু বলেন ই না ,একপ্রকার কথা আদায় করেই নেন । মায়ের মৃত্যুর সময় সাগর মায়ের কাছেই ছিলো । যেন কথা বলতে বলতেই তিনি পরপাড়ের উর্দ্যেশ্যে যাত্রা করেন । তখন সাগরের মাত্র ষোলো বৎসর বয়স । মায়ের মৃত্যুর পর সাগর খুবই ভেঙ্গে পড়েছিলো । কিন্তু তার বাবা ,দুই কাকু ,কাকিমাদের সহায়তায় বেশ তাড়াতাড়িই সামলে উঠেছিলো মায়ের মৃত্যুশোক । প্রায় দিন পনের বাদে সাগরের পরীক্ষার ফল বেড়োয় । নব্বই শতাংশ নম্বর পেয়ে সাগর গ্রামের সোনার ছেলে হয়ে ওঠে । উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলও তার গর্ব করার মত । অনাদিবাবু ছেলেকে জয়েন্টে বসান । ডাক্তারীতে সাগরের রাঙ্ক একশত দশ । চলে আসে সাগর কলকাতায় । সরকারিভাবে ডাক্তারীতে সুযোগ পাওয়ায় অনাদিবাবুরও আর্থিক দিক থেকে অনেক সুবিধা হয় । প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করে অবসর গ্রহণ করার পর কটা টাকায় বা তিনি হাতে পেয়েছেন ? তবুও ছেলের যাতে ডাক্তারী পড়তে কোনো অসুবিধা না হয় সে চেষ্টা তিনি সর্বদা করে যাচ্ছেন ।                              সাগর মেজকাকুকে পুনরায় ফোন করে । কাকু তাকে জানান, "যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রামে চলে আয় । সব কথা বাড়িতে আসার পর হবে ।" বলেই তিনি ফোনটা কেটে দেন । অগত্যা সেদিনই সাগর রাতের শেষ  ট্রেন ধরে গ্রামের উর্দ্যেশ্যে রওনা দেয় । ভোর চারটের সময় স্টেশনে নেমে গ্রামের মেঠো পথ ধরে হাঁটতে শুরু করে । কাকডাকা ভোরে এসে সে বাড়ির উঠানের সামনে দাঁড়ায় । সে দেখে - ওই ভোরেই বাবা উঠানে পায়চারী করছেন । সাগরকে দেখে তিনি বলে ওঠেন ," তুই এসেছিস বাবা ! আমায় বাঁচালি !"  "তুমি ভালো আছো তো বাবা ?"  "ওরে হ্যাঁ ,আমি ভালো আছি ।"  "তবে আমায় আসতে বললে কেন ?"  " বলবো বাবা ,সবই বলবো । তুই ভিতরে যা ,ফ্রেস হয়ে নে - তারপর সব বলছি ।"       
    বাবার কথাগুলি সাগরের কাছে হেঁয়ালি বলে মনে হয় । কিন্তু চিরবাধ্য সাগর বাবাকে আর কোনো প্রশ্ন করেনা । ঘরে ঢুকে হাত ,পা ধুঁয়ে খাঁটের উপর বসতে যাবে ঠিক তখনই মেজকাকিমা চা ,বিস্কুট নিয়ে ঘরে ঢোকেন । সাগর তার মেজমার মুখের কাছে মুখটি নিয়ে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করে ," কি হয়েছে গো মেজমা ?"  তার মেজমা তারই মত আস্তে আস্তে উত্তর দেন ,"সব কথা দাদাই তোকে  বলবেন ।" সাগর বুঝতে পারে তার বাবার দেওয়া কঠিন নির্দেশের ফলেই তার অতি কাছের মেজমার কাছ থেকেও কিছুই জানতে পারলোনা । কাকিমা চলে গেলেন অন্য ঘরে । বার দুই সাগর লক্ষ্য করলো তার ছোট ভাইবোনেরা দরজার ফাকঁ দিয়ে তাকে দেখছে । ইশারায় তাদের কাছে ডাকলো । কিন্তু দুস্টুগুলি একটাও কাছে এলোনা । চা খাওয়া শেষ করে সাগর বাড়ির ভিতরে ঢুকবে বলে উঠে দাঁড়াতেই দেখে ,বাবা এসে বৈঠকখানাতে ঢুকলেন । সাগরের দিকে তাঁকিয়ে বললেন ," এবার তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আমি দেবো । কিন্তু তার আগে একটা কথা আমায় বলতো বাবা ! আজ পর্যন্ত আমি কোনো অন্যায় করেছি কি ?" সাগর হতভম্বের মত বাবার মুখের দিকে তাঁকিয়ে অতন্ত্য নীচু গলায় বললো ,"একথা কেন বলছো ? আমায় সব খুলে বলো । এভাবে বললে তো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা ।"  "না - তুমি আমাকে শুধু বলো কখনো দেখেছো কি আমি কোনো অন্যায় করেছি ? আমার সম্মান ক্ষুন্ন হয় ,আমি কাউকে কথা দিয়ে কথা না রাখতে পারি ,এমনটাতো তুমি নিশ্চয়ই চাও না ।"  " না - কিন্তু বাবা কি হয়েছে আমায় পরিষ্কার করে বোলো । কি কথা কাকে দিয়েছো ? কেন কথা রাখতে পারছো না ? সবকিছু আমাকে খুলে বলো ।"  " বলছি ,সব বলছি তোমায় । বলবো বলেই তো তোমায় ডেকে এনেছি । তুমিই একমাত্র পারো আমার সম্মান রাখতে । বলো বাবা ,রাখবে তো ?" "হ্যাঁ নিশ্চয় রাখবো । তোমার সম্মান ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো কাজ যেমন আগেও করিনি ; এখনো করবোনা । আমাকে কি করতে হবে বলো ।"  "কিন্তু বাবা ,এই মুহূর্তে কাজটা একটু কঠিন তোমার পক্ষে ।"  " সে হোক তুমি আমায় বলো কি করতে হবে ।যত কঠিনই হোক আমি কথা দিচ্ছি তোমায় ,আমি তা পারবো ।"  কিন্তু সাগর স্বপ্নেও ভাবেনি বাবা তাকে এই ধরণের কথা বলতে পারেন । বাবার কথা শুনে সাগরের মাথায় যেন বাজ ভেঙ্গে পড়লো । পায়ের নীচু থেকে মনে হচ্ছে মাটি সরে যাচ্ছে । বাবা কি করে এ রকম কথা দিয়ে ফেললেন ? এই তো মাত্র কদিন আগেই সে স্বরুপাকে তার ভালোলাগার কথাটা জানিয়েছে । যদিও সে মুখে কিছুই বলেনি ; তবুও তার মুখের দিকে তাকিয়ে সাগর বুঝতে পেরেছে - স্বরূপারও তাকে ভালো লাগে । দুজনেরই এবার ফাইনাল ইয়ার । দেখা ,সাক্ষাৎ তাদের প্রায়ই হয় ,কিন্তু কথা হয় খুবই কম । কারণ দুজনেই পড়াশুনার ফাঁকি দেওয়ার পক্ষপাতি নয় । সুতরাং পড়াশুনা নিয়েই তাদের মধ্যে কথা হত বেশি । দিন পনের আগে একদিন সুযোগ পেয়ে সাগর স্বরুপাকে বলে ," তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে ।" স্বরূপা কোনো উত্তর দেয়না । শুধু সাগরের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেয় । স্বরূপারও যে এতে সায় আছে ; ওই লজ্জা মিশ্রিত মুচকি হাসিতেই সাগর তা বুঝতে পারে । তার ঠিক দুদিন পরেই বাড়ি থেকে ফোন ।              অনাদিবাবু সাগরকে বলেন ," মিত্রার বাবা মৃত্যুশয্যায় আমার হাতদুটি ধরে বলে গেছেন ,যাতে তার মেয়ের সর্বরকম দাযিত্ব আমি নিই । তার মায়ের শরীরও খুব একটা ভালোনা । একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ হাত ধরে এমন ভাবে বললেন যে আমি না বলতে পারলামনা । মিত্রা খুব ভালো মেয়ে । তুই ওকে বিয়ে কর বাবা ; তোরা সুখী হবি ।" সাগর বাবার এ কথার উত্তরে খুব শান্তভাবে বলে ,"কিন্তু বাবা ,আমার এখনো পড়াশুনা শেষ হয়নি । আমি এখন কি করে বিয়ে কোরবো ? তুমি বরং একটা ভালো ছেলে দেখে ওর বিয়ের ব্যবস্থা করো ।"  "কিন্তু আমি যে মিত্রার বাবাকে কথা দিয়েছি আমি ওকে আমার ঘরের বৌ করে অন্য । কোনোদিন কথা দিয়ে আমি কথার খেলাপ করিনি । আজ যদি তোমার জন্য আমার কথার খেলাপ হয় সেটা আমার কাছে মৃত্যুর সামিল হবে ।"        
   সাগরের অনেক কিছু বলার ইচ্ছা থাকলেও সে বাবার এই কথার পরে আর কিছুই বলতে পারেনা । চুপ করে বসে থাকে । আর ভাবতে লাগে - বাবা তার কথার খেলাপ করবেননা ; কিন্তু তার যে সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে যাচ্ছে । নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে লাগলো ।কি কোরবে এখন সে ?নিজের জীবনের স্বপ্ন নাকি বাবার দেওয়া কথা ?কোনটা সে রক্ষা কোরবে ? বাবার মুখের উপর না বলা মানে বাবাকে অসম্মান করা ; যা সে কোনোদিনও করেনি । অনাদিবাবু আবারও বলতে শুরু করেন ," তোমাকে এই মুহূর্তে মিত্রাকে সাথে করে নিয়ে যেতে হবেনা ,আর সেটা সম্ভবও নয় ।ও আমার কাছেই থাকবে । তুমি যতদিন না তোমার পড়াশুনা শেষ করছো ,যতদিন না তুমি নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছ - ততদিন পর্যন্ত ওকে নিয়ে তোমার বিন্দুমাত্র ভাবতে হবে না । তুমি শুধু রেজিস্ট্রিটা করে সিঁদুর পড়িয়ে দাও । গ্রামের মানুষজন তো আর সব ভালো নয় । ও আমার কাছেই থাকবে । বরং আমারও সময় ভালো কেটে যাবে , আমিও কথা বলার একজন সাথী পাবো । সত্যিই যদি তুমি আমায় সম্মান করো ,ভালোবাসো - তাহলে তুমি আমার কথাটা শুনবে বলে আমার বিশ্বাস ।

      সাগর মিত্রাকে বিয়ে করতে বাধ্য হোল। বাবার আবেগকে মেনে   নিয়ে,নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে,প্রথম ভালোবাসাকে গলা টিপে মেরে সে মিত্রাকে জীবনসঙ্গী করে নিলো।অনাড়ম্বর পরিবেশ,মুষ্ঠিমেয় কিছু আত্মীয়স্বজন, আশেপাশের কয়েকজন পাড়া প্রতিবেশীর সামনে সে মিত্রাকে রেজিষ্ট্রির পরে সিঁধুর পড়িয়ে দিলো।বৌভাতও হোল জ্ঞাতি বন্ধুদের উপস্থিতিতে।ফুলশয্যার রাতে সাগর মিত্রাকে জানালো যতদিন না সে নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে ততদিন স্বামীস্ত্রীর সম্পর্ক বলতে যা বোঝায় তা তাদের মধ্যে গড়ে উঠবেনা।মাঝে মাঝে সে যেমন গ্রামে আসে ঠিক সেইরূপই আসবে।তবে মিত্রার যদি ইচ্ছা করে সে চাকরীর চেষ্টা করতে পারে।গ্রামের দিকে না হোক কলকাতার দিকে হলেও কোন অসুবিধা হবেনা।লেখাপড়া শিখে শুধু হাতাখুন্তি নাড়ানোর মানসিকতা নিয়ে বসে থাকলে জীবনে অনেককিছুই থেকে বঞ্ছিত হতে হবে।ভালো ছাত্রী ছিলে, তোমার প্রতিটা নম্বরও উচ্চমানের।আমার মনেহয় তুমি একটু চেষ্টা করলেই কিছু একটা চাকরী  পেয়ে যাবে।মিত্রা হা করে সাগরের কথাগুলি শোনে।ঠিকই তো বলছে সে।তবে মনেমনে এটাও ঠিক করে নেয় -তার শ্বশুরমশাই যতদিন জীবিত আছেন ততদিন সে তার কাছেই থাকবে।তার ইচ্ছা কলকাতায় নয় গ্রামের কোন স্কুলেই সে শিক্ষকতার চেষ্টা সে করে যাবে।

           পরদিন সাগর কলকাতায় ফিরে যায়। মিত্রার সাথে আলাদা করে কোন কথা আর হয়না।যাবার সময় অনাদিবাবু ছেলেকে একা পেয়ে বলেন,"আমি জানি বাবা আমার কথা রাখতে তুমি ঐ বিয়ে করতে রাজি হয়েছো তুমি ভেবোনা,ও এখন থেকে আমার কাছেই থাকবে। আগে তোমার পড়াশুনা শেষ হোক ;নিজে প্রতিষ্ঠা লাভ করো, তখন না হয় মিত্রাকে তুমি তোমার কাছে নিয়ে যাবে। ও খুব ভালো মেয়ে বাবা! আমি ওকে ওর ছেলেবেলা থেকেই চিনি ।তুমি দেখো তোমরা খুব সুখি হবে।" সাগর কোন কথার উত্তর দেয়না।নীচু হয়ে ভক্তিভরে বাবাকে প্রনাম করে 'আসি' বলে বেরিয়ে যায়। মিত্রা ছাদের উপর দাঁড়িয়ে দেখে যতক্ষন সাগরকে দেখা যায়।মনে একটা কষ্ট সে ভীষনভাবে উপলব্দি করে যে সাগর বাধ্য হয়ে বাবার কথা রাখতে তাকে মেনে নিয়েছে।হয়তো মন থেকে কোনদিনও তাকে মেনে নিতে পারবেনা।কিন্তু ঈশ্বর যদি তাকে কোনদিনও একটু সুযোগ দেন তাহলে ভালোবাসা দিয়ে,যত্ন দিয়ে সাগরের জীবনের সমস্ত কষ্ট সে ভুলিয়ে দেবে এমন একটি প্রতিজ্ঞা সে মনেমনে করে।তবে এখন থেকে চাকরীর একটা চেষ্টা তাকে করে যেতেই হবে কারন ভাগ্যে কি লেখা আছে তা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন। নিজের পায়ে যেভাবেই হোক তাকে দাঁড়াতে হবে।

      এদিকে সাগর কলকাতায় ফিরে আসার পর সম্পূর্ণ যেন অন্যমানুষ। সেই উচ্ছলতা,হাসি, গল্প কোনটাই তার সহপাঠীরা তার ভিতর খুঁজে পায়না।সকলে জানতে চায় -শরীর খারাপ নাকি?বাড়ির সকলে ভালো তো?হ্যাঁরে-তুই কি প্রেমে পড়েছিস?কুশল জিঙ্গাসা করলে ঘাড় নারে বাকি সব এড়িয়েই যায়।স্বরূপার সাথেও  দেখা হচ্ছে , পড়াশুনা নিয়ে কথাও হচ্ছে।কিন্তু আলাদাভাবে কোন কথা বলার সুযোগ স্বরূপা পাচ্ছেনা।

                      কয়েকদিন এভাবে কাটার পর স্বরূপা সুযোগ পেয়ে সাগরের কাছে জানতে চায় তার কি হয়েছে? সাগর তাকে জানায় অনেক কিছু তার বলার আছে সে যেন ছুটির পর আজ চলে না যায়।স্বরূপা শুধু ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়।
            কলেজ ছুটির পর দুজনে যেয়ে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে বসে। সাগরকে চুপ করে থাকতে দেখে স্বরূপা বলে,"তুমি কি বলবে বলছিলে?"সাগর মুখ নীচু করেই সমস্ত ঘটনা তাকে জানায়।কিন্তু একবারও মুখ তুলে সে স্বরূপার দিকে তাকায়না।যদি সে স্বরূপার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখতো তাহলে সে দেখতে পেতো স্বরূপা তার চোখের জল বারবার তার ওড়না দিয়ে মুছছে।সাগর কথা বলতেই থাকে।কোন রকমে স্বরূপা নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সাগরের কথার মাঝখানেই হেসে পড়ে বলে,"বিয়ে করেছো তা এত অপরাধ বোধে ভুগছো কেন?"

         সাগর অবাক হয়ে এবার স্বরূপার মুখের দিকে তাকায়। স্বরূপার মুখে হাসি।কিন্তু সাগর তো আর তার অন্তর দহনটা দেখতে পাচ্ছেনা!"মেশোমশাইয়ের কথা রেখে তুমি ঠিক কাজই করেছ।তানাহলে তিনি খুব কষ্ট পেতেন।ভেবে দেখো তো তার অবর্তমানে তুমি যখন তার কথা ভাবতে তখন তুমি নিজে কতটা কষ্ট পেতে।ভাবতে তোমার জন্যই তিনি হয়তো তাড়াতাড়ি চলে গেলেন।পারতে কোনদিন নিজেকে ক্ষমা করতে?পারতেনা, কিছুতেই পারতে না!সুতরাং তুমি যা করেছ তোমার জায়গায় আমি থাকলেও তাই করতাম।আমরা যেমন বন্ধু ছিলাম ঠিক তেমনই থাকবো।একটা বছর পর কে কোথায় চলে যাবো আর হয়তো জীবনে দেখাও হবেনা।তোমার নেওয়া সিদ্ধান্তে কোথাও কোন ভুল নেই।কিন্তু তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ তুমি আর মুখ গোমড়া করে থেকোনা।তোমার বৌ কলকাতায় আসলে আমায় জানিও আমি নিজে গিয়ে তার সাথে দেখা করে আসবো।তবে তাকে কিন্তু কখনোই ভালোবাসায় ফাঁকি দিওনা।তার কিন্তু কোন অপরাধ নেই।তুমি আমায় ভালোবেসেছিলে আমিও তাই।হয়তো আমাদের ভালোবাসাটা চরম পুর্নতা পায়নি বা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি;তাইবলে ভালোবাসাটা কিন্তু মরে যায়নি।তোমার বা আমার জীবনে যেই আসুক না কেন আমরা কিন্তু তাকে ঠকাতে পারিনা।তুমি কখনোই মিত্রাকে অবহেলা করবেনা।আমায় কথা দাও। "সাগর স্তব্ধ স্বরূপার মুখে কথাগুলি শুনে।সে স্বরূপার দিকে তাকিয়ে বলে, "তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও"।"কি অন্যায় তুমি করেছ যে তোমায় ক্ষমা চাইতে হচ্ছে?আচ্ছা সাগর কি ভাবো তোমরা মেয়েদের ? আমরা মেয়েরা সব সময় পরিস্থিতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে জানি।ভগবান আমাদের এইভাবেই তৈরি করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে স্বরূপা চুপ করে যায়।সাগরও চুপ করেই থাকে।তারপর একসময় স্বরূপাই বলে,"চলো,সন্ধ্যা হতে আসলো।"সাগর কোন কথা না বলেই যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়।

        স্বরূপা সেদিন আর বাসের জন্য অপেক্ষা না করে একটা ট্যাক্সি ধরেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। চোখের জল যেন কিছুতেই বাঁধ মানছে না।নিজেকে যে কিভাবে সাগরের সামনে সামলে রেখেছিল তা সে নিজেই এখন বুঝতে পারছেনা;কোথা থেকে তার এত শক্তি ও সাহস এসে হাজির হয়েছিল ভাবলে সে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছে।

    পরদিন থেকে স্বরূপা কলেজে ঠিক সেই আগের মতই স্বাভাবিক।ঠিক যেমন পড়াশুনা নিয়ে আগে সাগরের সাথে কথা হত এখনো তেমনই হয়।কিন্তু সাগর কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছেনা। প্রতিটা মুহূর্তেই সে নিজেকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে।পারতপক্ষে সে স্বরূপাকে এড়িয়েই চলে।

          সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই বদলে যেতে থাকে।সাগরও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে।আর স্বরূপা ?কলেজে সে উচ্ছল , প্রানবন্ত আর বাড়িতে সে চুপচাপ।বাবা -মা বারবার জানতে চান তার কি হয়েছে?তার একটাই উত্তর , "কিছুনা।ফাইনাল পরীক্ষা সামনে তাই একটু টেনশানে আছি।"

       কালের নিয়মে সময় তার গতিপথ বদল না করেই এগিয়ে যেতে থাকে।কেটে যায় তিনমাস।এরই মাঝে সাগরের বাবা তাকে ফোন করে জানান মিত্রার মা মারা গেছেন।কিন্তু যেহেতু তার ফাইনাল পরীক্ষা সামনে তাই এই মুহূর্তে সাগরকে বাড়িতে আসতে হবেনা;তিনি নিজেই মিত্রাকে সামলে নেবেন। 
তিন বছর পরের ঘটনা :-

             সাগরের বাবা মারা যাওয়ার পর সাগর যখন শেষবারের মত গ্রামের বাড়িতে যায়;তখন সে মিত্রাকে সঙ্গে করেই কলকাতায় ফেরে।বিয়ের পর যতবারই সে গ্রামে গেছে ততবারই সে মিত্রাকে চাকরীর চেষ্টা করতে বলেছে।তারা দুজনেই সকলের সামনে অতি সাধারন আচরন করে, এমন কি অতি কাছের মেঝমাও বুঝতে পারেননি যে তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর কোনই সম্পর্ক নেই।
          এরই মাঝে সাগরের বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়।সাগর জানতে পেরেই বাড়িতে চলে আসে।কিন্তু সে আসার আগেই সব শেষ হয়ে যায়।তখনই সে ঠিক করে মিত্রাকে নিয়েই সে কলকাতা ফিরবে।শ্রাদ্ধ,নিয়মভঙ্গ সবকিছু মিটে যাওয়ার পর সেদিন রাতেই সাগর মীত্রাকে বলে,"কাল খুব ভোরে বেরবো,জিনিসপত্র সব গুছিয়ে রেখো।তোমার যেগুলি না নিলেই নয় শুধুমাএ সেগুলিই নেবে।প্রথম প্রথম তোমার ওখানে একটু কষ্ট হবে;তারপর আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।একটা কিছু চাকরী-বাকরী থাকলে বাইরে লোকজনের সাথে মিশে সময়টাও কেটে যেত।তা যখন আর হোলনা তখন ওই হাতা-খুন্তীই নাড়তে হবে তোমার।"কথাটা বলেই সাগর হেসে দেয়।মিত্রা অবাক হয়ে সাগরের দিকে তাকিয়ে বলে,"আমিও যাবো সাথে?"
---হ্যাঁ,এখন আর তো এখানে থাকা সম্ভব নয়।আর বাবাই যখন আর নেই তখন বারবার প্রাক্টিসের ক্ষতি করে এখানে আসাও সম্ভব নয়।আর তাছাড়া তুমি এখানে থাকলে আমার লাগাতার একটা টেনশান থাকবে।এতদিন বাবা বেঁচে ছিলেন আমার কোন চিন্তা ছিলোনা।কাকু-কাকীমাদের অনুমতি নেওয়া হয়ে গেছে।এখন আমি একটা ছোট বাড়িতে ভাড়া আছি।পরে দেখে শুনে একটা ভালো বাড়ি ভাড়া করে নেবো।কষ্ট করে একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিও।তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।"
     মিত্রা সাগরের একটু কাছে এগিয়ে এসে অস্ফুট স্বরে মুখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো,"আমি এখানে থাকলে আমার জন্য তোমার চিন্তা হবে? "সাগর কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে মিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।অবাক বিস্ময়ে মিত্রা সাগরের গমন পথের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের মানেই বলতে লাগলো,'এত ভালো মানুষ হয়?বাবার কথা রাখতে যেয়ে যে মানুষটা নিজের ইচ্ছার কোন দাম দেয়নি,ঈশ্বর কোনদিন একটু সুযোগ দিলে মনপ্রান উজাড় করে ভালোবাসা দিয়ে তার না পাওয়াগুলিকে ভুলিয়ে দেওয়ার আপ্রান চেষ্টা করবো।'

            ভবিতব্য (৪র্থ অংশ)
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই সাগর ও মিত্রা বেরিয়ে পড়ে।শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে তারা একটি ট্যাক্সি নিয়ে সাগরের এক কামরা বিশিষ্ট ছোট্ট ভাড়া বাড়িটাই এসে পৌঁছায়।সেখানে ঢুকে মিত্রা দেখে রান্নার ঘর একটা আছে বটে, কিন্তু চায়ের সরঞ্জাম ছাড়া আর কিছুই সেখানে নেই।ঘরে একটা খাট, একটা আলমারি, আর একটা টেবিল চেয়ার।ব্যস-এই হচ্ছে সাগরের সংসারের জিনিসপত্র।সবকিছু দেখেশুনে সে বাথরুমে ঢোকে ফ্রেস হওয়ার জন্য।বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে সে দেখে সাগর চা তৈরি করছে।মিত্রা যেয়ে তাকে বলে, "ওটা আজ থেকে আমার কাজ।তুমি গিয়ে বসো আমি চা নিয়ে আসছি।"সাগর নিঃশব্দে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যায়।মিত্রা দু'কাপ চা করে এনে খাটের উপর বসে।সাগর চা খেতে খেতে তাকে বলে,"আমার এখানে রান্নার সরঞ্জাম কিছুই নেই;এখন হোটেল থেকেই খাবারটা নিয়ে আসি।সন্ধায় বেরিয়ে সব কিনে আনবো।"মিত্রা কোন উত্তর দেয়না।সাগর চা খেয়ে হোটেল থেকে কিছু খাবার-দাবার নিয়ে ফেরে।সন্ধায় তারা বেরিয়ে সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্র কিনে ঘরে ফেরে।শুরু হয় সাগর ও মিত্রার নূতন জীবন।
       
           সময় তার নিজের মতিতেই টিকটিক করে এগিয়ে চলে।যারা তার সাথে তাল মেলাতে পারেনা তারা পিছিয়ে পরে।আর যারা ওই সময়ের চলার সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে তারাই জীবনের সুখপাখিটাকে ধরতে পারে।মিত্রা ও সাগর ঠিক ঘড়ির কাটার মতই নিয়ম করে জীবনের চলার পথটি অতিক্রম করতে থাকে।তাই সুখি হওয়ার চাবিটা তাদের হাতের মুঠোই এসে ধরা দেয়।সুখের পথে তারা হাঁটতে শুরু করে। কিন্তু তাইবলে সাগর যে স্বরূপাকে ভুলে গেছে তা নয়।এমন কোন দিন নেই যেদিন তার স্বরূপার কথা মনে পড়েনি।স্বরূপার কথাটাই মনে করে সাগর সামনের দিনগুলিতে এগিয়ে চলেছে।"মিত্রা তো কোন দোষ করেনি,ওকে কিন্তু তুমি ঠকিও না।"ঐ কথাটাই হয়তো সাগরের জীবনে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার উপায়।না-ভালোবাসার দিক থেকে সাগর মিত্রাকে কখনোই ঠকায়নি, ঠকাতে পারবেও না;কারন মিত্রা যে তাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে।

        দিন,মাস,বছর গড়িয়ে চলে।তাদের সুন্দর ফুটফুটে একটি ছেলেও হয়;যার বয়স এখন একবছর হতে চললো।উভয়েরই ইচ্ছা খুব ঘটা করে জম্মদিন পালন করবে।ঘরে কাজ করার জন্য সব সময়ের একজন কাজের মাসি আছে।কিন্তু মিত্রা তাকে দিয়ে রান্না কখনোই করায় না।সে নিজের হাতে রান্না করেই সাগরকে খাওয়াতে ভালোবাসে।খাবার ভালো লাগলে আড়চোখে মিত্রার দিকে তাকানো আর একটা একটা করে আঙ্গুল চেটে চেটে খাওয়া মিত্রা ভীষন উপভোগ করে।এটা থেকে সে বঞ্চিত হতে চায়না বলেই রান্নাটাও নিজের হাতছাড়া করতে চায়না।
          কিন্তু বিধাতা তাদের কপালে সুখ বেশিদিন লেখেননি!ছেলের আসন্ন জম্মদিন উপলক্ষে ছেলেকে মাসির কাছে রেখে স্বামী-স্ত্রী  মার্কেটিং করতে বেরিয়ে পরে।দু'জনে মিলে প্রচুর কেনাকাটি করে রেস্টুরেন্টে খেয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।আর তখনই ঘটে যায় মারত্মক এক এ্যাকসিডেন্ট!রাস্তা পারাপারের সময় চলন্ত এক বাসের ধাক্কা।দু'জনে দু'দিকে ছিটকে যায়।পথচারীরা ছুটে আসে।কোন রকমে দু'জনকে সকলে মিলে ধরাধরি করে সামনেই একটা নার্সিংহোমে ভর্তি করে।তাদের মধ্য থেকেই একজন সাগরের প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে কার্ডে তার নার্সিংহোমের ঠিকানাটা পায়।সে নিজেই উদ্দোগী হয়ে সাগরের নার্সিংহোমে ফোন করে।ছুটে আসে সাগরের ডক্টর বন্ধু-বান্ধবেরা।মিত্রার তখনও জ্ঞান ছিলো। অস্ফুট স্বরে সে শুধুই 'রূপ রূপ' করছিল।মিত্রা ও সাগরের ছেলের নাম 'স্বরূপ';সাগরই তাকে এই নাম দেয়।  মিত্রা তাকে রূপ  নামেই ধরেই ডাকতো।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মিত্রা ডাক্তারদের কোন সুযোগই দেয়না!সাগরের প্রথম থেকেই জ্ঞান ছিলোনা ;তাকে আই সি সি ইউ তে নিয়ে যাওয়া হয়।  সে ভেন্টিলেশনে চলে যায়।নার্সিংহোমের আইনকানুনের পাঠ চুকিয়ে মিত্রার সৎকার সাগরের বন্ধুরা মিলেই শেষ করে। সাগরের চিকিৎসার যেন কোন গাফলতি না হয় এবং টাকা পয়সার ব্যাপারে কোন চিন্তার কারন নেই যাওয়ার সময় তারা বারবার করে কথাটা জানিয়ে যায়।

       আজ নার্সিংহোমের আই.সি.সি.ইউ তে রাতে যে ডক্টরের ডিউটি তার নাম ডাক্তার স্বরূপা দাশগুপ্তা । তিনি এক এক করে রোগীদের বেডের কাছে যাচ্ছেন আর তার ফাইলটা নিয়ে কেস হিস্টিরিতে চোখ বুলাচ্ছেন । হঠাৎ সাগরের দিকে দৃষ্টি যাওয়াতে তিনি একটু এগিয়ে যেয়েই ফাইলটা হাতে তুলে নেন । না - সে ভুল করেনি ! সাগরই তো । সঙ্গে সঙ্গেই ফাইলটা পড়তে শুরু করেন । একজন নার্সকে ইশারায় কাছে ডাকেন । জানতে চান কখন এবং কিভাবে ডক্টর চক্রবর্তী এখানে ভর্তি হলেন ? স্বরূপা হতভম্বের মতো সামনের চেয়ারটায় বসে পরে । নার্স বলতে থাকেন ,"আজ সন্ধ্যায় একসিডেন্ট করে ডক্টর চক্রবর্তী আর উনার সাথে থাকা এক ভদ্রমহিলা সম্ভবত উনার মিসেস হবেন এখানে ভর্তি হন । উনি যে নার্সিংহোমে আছেন সম্ভবত সেখানে কেউ খবর দেয় । সেখান থেকে উনার সহকর্মীরা এসে স্যারের ( ইনচার্জ অফ আই.সি.সি.ইউ.) সাথে কথা বলে গেছেন । যে ভদ্রমহিলা উনার সাথে ছিলেন তাকে বাঁচানো যায়নি । ডক্টর চক্রবর্তীর বাড়িতে আমরা খবর দিতে  পারিনি । উনার বাড়ি কোথায় ,কে কে আছেন আমরা কিছুই জানতে পারিনি । স্বরূপা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায় । সাগরের সামনে যেয়ে ভালোভাবে দেখে ; সত্যিই সে যা ভাবছে ভুল হচ্ছে না তো ! না - কোনো ভুল হচ্ছেনা ,এ তারই সাগর । কিন্তু কোনোদিন স্বপ্নেও সে ভাবেনি সাগরের সাথে আবার  দেখাটা তার এইভাবে হবে ! ফাইনাল পরীক্ষার পর অনেকটা ইচ্ছা করেই সে আর সাগরের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি । সত্যি বলতে সে চায়নি তারজন্য সাগরের জীবনে কোনো কালো ছায়া পড়ুক ।

            রাত কেটে ভোর হল।সাগরের বেডটা আই সি সি ইউ তে এমন একটি জায়গায় যে ডাক্তারদের টেবিলের সামনেই।কেউ যাতে কিছু বুঝতে না পারে এমনভাবেই স্বরূপা সারারাত সাগরের খেয়াল রাখে।সকালে ডিউটি শেষ হলেই মাকে ফোন করে জানায় তার বাড়ি ফিরতে দেরি হবে।

           চলে যায় সে সাগরের নার্সিংহোমে।সেখানে যেয়ে ডক্টর সাগর চক্রবর্ত্তীর আত্মীয় বলে নিজের পরিচয় দেয় ও তাদের কাছ থেকে সাগরের বাড়ির ঠিকানা জোগাড়  করে।গেট খুলে সোজা বাড়ির ভিতর ঢুকে বেল বাজায়।মাঝবয়সী এক ভদ্রমহিলা এসে দরজা খোলেন।মহিলার কাছে জানতে পারে স্বামী-স্ত্রী দুজনে কাল সন্ধ্যায় বেরিয়েছিল ছেলের জম্মদিনের বাজার করতে।আজ ছেলের জম্মদিন।কিন্তু দু'জনের কেউই আর বাড়ি ফিরে আসেননি।সে কোন খবরও জানতে পারেনি তাদের।কোলের শিশু, সারাটা রাত বুকের দুধের জন্য কেঁদেছে।এই এখন অনেক কষ্ট করে কৌটোর দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়েছি।স্বরূপা সব শুনে ঘুমন্ত শিশুটিকে কোলে তুলতে তুলতে জানতে চায়,"ওর নাম কি?" মাসি বলে, "ওর নাম স্বরূপ।" স্বরূপা নামটি শুনে চমকে ওঠে।বুঝতে পারে সাগর আজও তাকে মনে রেখেছে।সে মাসিকে গতকালের ওদের এ্যাকসিডেন্টের কথা, মিত্রার মৃত্যুর কথা সব জানায়।মাসি খুব কাঁদতে থাকে।মাসি কাঁদতে কাঁদতেই বলতে থাকে, "বৌদিমনি, দাদাবাবু দু'জনেই খুব ভালো মানুষ।আজ প্রায় দু'বছর হোল এখানে আছি একবারের জন্যও মনে হয়নি তারা আমার নিজের কেউ নয়,এটা আমার নিজের বাড়ি নয়।এখন এই দুধের শিশুটিকে নিয়ে আমি একা কি করবো বলতে পারো দিদিমনি?" মুহূর্তে স্বরূপা ঠিক করে নেয় তার করনীয় কাজ।সে মাসিকে জানায় তার ও বাচ্চাটির কিছু জিনিসপত্র খুব তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিতে।স্বরূপা ওদের নিয়েই তার বাড়িতে যাবে।মাসি স্বরূপার কাছে জানতে চায়,"দিদিমনি, তুমি দাদাবাবুর কি হও?" স্বরূপা কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দেয়, "বন্ধু।"

          স্বরূপা ওদের সাথে করেই নিজের বাড়িতে ফেরে।বাড়িতে ফেরার পথে সে বাচ্চাটির জন্য দুধের কৌটো, কিছু খেলনা আর নূতন জামা কিনে নিয়ে আসে।বাড়িতে ফিরে সে তার মা-বাবাকে সাগর ও মিত্রার এ্যাকসিডেন্টের কথা বলে এও বলে যে সাগর তার পূর্বপরিচিত।বাচ্চাটির কথা ভেবেই সে তাকে ও মাসিকে এখানে নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।তার বাবা-মা বরং খুশিই হন;তারা মেয়ের এই কাজকে সমর্থন করেন।বাচ্চাটিকে তার মা নিজ হেফাজতে নিয়ে নেন।পরিচিত মুখ দেখতে না পেয়ে একটু কান্নাকাটি সে করছে ঠিকই কিন্তু সকলের কোলে কোলে দিব্যি তার সময় কেটে যাচ্ছে।স্বরূপা মাকে জানায় আজ ওর জম্মদিন।সে নিজের হাতে পায়েস করে বাচ্চাটিকে খাওয়াবে।একটা ব্যাগ দেখিয়ে বলে,"ওর মধ্যে ওর জন্য কিছু জিনিস আছে, নূতন জামা-প্যান্টও আছে।"মা শুনে শুধু একটু হেসে দেন।

   ডিউটির একটু আগেই সে নার্সিংহোম পৌঁছায়।এরই মধ্যে দু'দু্ইবার ফোন করে সে সাগরের খবর নেয়।যেয়ে দেখে সাগরের জ্ঞান ফিরেছে।ভেন্টিলেশন খুলে দেওয়া হয়েছে।স্বরূপাকে দেখে নিমেষেই সে চিনতে পারে।প্রথমেই সে জানতে চায়,"মিত্রা ভালো আছে তো?"স্বরূপা কি বলবে ভেবে পায়না।উত্তরের অপেক্ষা না করেই সে আবার বলে,"আমার একটি ছেলে আছে বাড়িতে।মাসির কাছে রেখে কাল সন্ধ্যায় বেরিয়েছিলাম।নিশ্চয় খুব কান্নাকাটি করছে!তোমার একটু সময় হবে ওকে দেখতে যাওয়ার?" "তোমার ছেলে এখন আমার বাড়িতে।আমার মা-বাবার কোলে কোলে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আদর খাচ্ছে মোটেই কান্নাকাটি করছেনা।" সাগর এবার সরাসরি স্বরূপার মুখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো,"আর মিত্রা?ও ভালো আছে তো?"স্বরূপা চুপ করে মাথা নীচু করে থাকে।সাগরের বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়না মিত্রা আর নেই!সাগরের চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। "ভগবান আমার কপালে সুখ লেখেননি।যখনই মনে মনে ভেবেছি আমি খুব সুখী তখনই ভগবান আমার সবকিছু কেড়ে নেন।সেই ছেলেবেলা মাকে হারানোর থেকে শুরু হয়েছে।জানো,আমি কোনদিন মিত্রাকে ভালোবাসায় ফাঁকি দিইনি বা বলতে পার দিতে পারিনি।কারন তুমিই আমায় বলেছিলে যে ওর তো কোন দোষ নেই।আমিও ঠিক সেটাই ভেবে দেখেছি।"সাগরের চোখ থেকে পুনরায় জল পড়তে থাকে।"এখন আমার ছেলেকে কে দেখবে?কি করে আমি ওকে মানুষ করবো?"স্বরূপা আনমনা ভাবেই উত্তর দেয়,"কেন আমি আছি তো!" "কি বললে?" "না বলছি আমরা আছি তো কিছু একটা ব্যবস্থা হবেই।"

        দিন সাতেক পরে সাগর নার্সিংহোম থেকে ছুটি পায়।সে বাড়িতে চলে যেতে চায়।স্বরূপা তাকে বোঝায় এই অবস্থায় বাড়িতে গেলে তাকে ও ছেলেকে সামলাতে মাসির খুব অসুবিধা হবে।একজন বয়স্ক মানুষ একদিকে একটি শিশু অপরদিকে একজন রোগীকে  কিছুতেই সামলাতে পারবেন না।কিছুদিনের জন্য সে যাতে তাদের বাড়িতে যায়।সাগরও আপত্তি করে না।সেও ভেবে দেখে কথাটা ঠিক।কিন্তু তবুও বলে,"মাসিমা-মেসোমশাই কিছু মনে করবেন না তো?" "তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবো তাদের অনুমতি নিয়েই আমি এসছি।"
         
        স্বরূপাদের বাড়িতে সাগর আসে।সাগরের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর স্বরূপা যখন খুব ভেঙ্গে পড়েছিল;তখন নিজেকে সব সময় ঘরবন্ধী  করেই রাখতো,যেটুকুন সময় সে বাড়িতে থাকতো।একদিন স্বরূপার অনুপস্থিতিতে তার মা ঘরে ঢুকে তার পড়ার টেবিলের উপর খোলা অবস্থায় একটি ডাইরী দেখতে পান।স্বরূপার মা-বাবা দুজনেই জানতেন ছেলেবেলা থেকেই স্বরূপা নিত্য ডাইরী লেখায় অভ্যস্ত।একমাত্র মেয়ের ব্যবহারের এই পরিবর্তনের কোন সদুত্তর না পেয়ে স্বরূপা কলেজে বেরিয়ে গেলে তিনি চুপি চুপি মেয়ের ঘরে ঢুকে ডাইরিটা হাতের কাছে পেয়ে সাগর সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারেন এবং স্বামীকেও জানান।কিন্তু তারা যে ঘটনাটা জেনে গেছেন সেটা মেয়েকে কোনদিনও বুঝতে দেননি।মেয়ে তাদের খুব জেদী।বিয়ের ব্যপারে যেহেতু সে না বলেছে তারা ভালোভাবেই জানতেন এই না কোনদিনও হ্যাঁ হয়ে আসবেনা।তারা উভয়েই মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করলেও কোনদিন স্বরূপাকে উত্তক্ত করেননি।তাই সাগরের ছেলেকে নিয়ে বাড়ি আসা, সাগরকে নার্সিংহোম থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা-তারা কোন ব্যপারেই আপত্তি করেননি।

       সাগর স্বরূপাদের বাড়িতে ঢোকা মাত্রই তাকে দেখতে পেয়ে ছেলে হাত উঠিয়ে বাবার কোলে যেতে চায়।স্বরূপা এটা দেখেই সাগরকে বলে,"তুমি হাসপাতালের জামা-কাপড় ছেড়ে ফ্রেস হয়ে তারপর রূপকে কোলে নাও।"

         দিনপনের এভাবে কাটার পর সাগর যখন পুরোপুরি সুস্থ্য তখন স্বরূপার অনুপস্থিতিতে তার মা-বাবাকে নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা বলে।স্বরূপার মা-বাবা যেন এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন।কোন রাখঢাক না করেই সরাসরিই সাগরকে বলেন,"যাবে তো নিজের বাড়িতে নিশ্চয় বাবা,তবে আমার ফুটফুটে ওই নাতিটার মাকে সঙ্গে নিয়ে যাও।"সাগর এ কথার অর্থ বুঝতে না পেরে ফ্যাল ফ্যাল করে স্বরূপার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।স্বরূপার মা আবারও বলতে থাকেন,"জানো বাবা এই নাতিটার দিদিমা-দাদু হওয়ার খুব ইচ্ছা আমাদের।আর তোমার মত জামাই সেতো ভাগ্য করে মেলে।আমরা সব জানি বাবা।মেয়েটা আজও তোমাকে খুব ভালোবাসে।তাই তো সে বিয়ে বসতেই চায়না। আমরাও তাকে কোনোদিন বিয়ে করা নিয়ে বিরক্ত করিনি।কারণ আমরা বুঝতে পেরেছিলাম ,বললেও সে রাজী হবেনা । হয়তো তার ভাগ্যের লিখন ছিলো এই ভাবেই তোমায় পাওয়া । সে তো হাসতেই ভুলে গেছিলো । এখন বাড়িতে থাকলেই স্বরূপকে নিয়ে সে তোমার ঘরেই কাটায় । তার মুখে হাসি দেখে আমরাও যে আবার হাসতে শিখেছি । তুমি আর দ্বিমত কোরোনা ,রাজী হয়ে যাও।"  "কিন্তু ওর মতটাও তো জানা দরকার । ওর কাছে জিজ্ঞেস না করে আপনারা কি করে ভাবছেন ,এতগুলো বছর ,এত ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও ও আমায় মেনে নেবে ?"   স্বরূপার বাবা তখন বললেন ,"ঠিক আছে বাবা ,ও আজ ফিরলে তুমি নিজেই নাহয় ওর কাছে জানতে চেও ।"

       স্বরূপা নার্সিংহোম থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে যখন রূপকে কোলে নিয়ে সাগরের ঘরে ঢোকে -সাগর তখন একটা বই পড়ছিলো । সাগরকে কিছু একটা বলার জন্য এগোতেই - সাগর নিজেই বলে ওঠে ,"রুপা ,আমার এই মা হারা ছেলেটির একটা মায়ের খুব দরকার । তুমি পারোনা সেই জায়গাটা পূরণ করতে ?" স্বরূপা সাগরের মুখে হাত চাপা দিয়ে বলে ওঠে ,"ওকে মা হারা বলছো কেন ? হ্যাঁ, আমি ওকে জম্ম দিইনি ঠিক কথা কিন্তু যেদিন থেকে ওকে আমি কোলে তুলে নিয়েছি ; সেদিন থেকেই আমি ওর মায়ের জায়গাটাই নিয়েছি । ওকে আমি আমার সন্তানই মনে করি। এখন যদি ওর বাবা তার বুকে আমায় একটুখানি জায়গা দেয়" - বলেই হেসে দেয় । সাগর হাত বাড়িয়ে ছেলে সমেত স্বরুপাকে বুকে টেনে নেয় ।

~~~~~~~~শেষ~~~~~~~

নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী



           



আছি থাকবো
         নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
বিদায় বেলায় আকুল হয়ে ,
আর কেঁদোনা তুমি ;
আসবো ফিরে কথা দিলাম ,
 থাকবো তোমারই  আমি ।
 যাবার বেলায় একটু হাসো ,
কাছে এসে ভালোবাসো ;
আর থেকোনা দূরে ,
কথা দিলাম আসবো আবার ফিরে ।
পূর্ণিমাতে আকাশেতে,
উঠবে যখন চাঁদ ;
আমার কথা মনে করে ,
কাটিয়োনা বিনিদ্র রাত ।
নন্দা  1.4.17
খোলা চিঠি
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
তুমি বুঝি বুঝতে পেরেছো ?
আমি তোমায় চিনেছি ?
তাই বুঝি করলে আমায় ব্লক ?
শুধু আমি নই ,সখিরাও আমার অবাক !
আচ্ছা - তুমি নাকি ইয়া বড় শিক্ষিত !
কলেজে নাকি পড়াও ?
সবাই তোমায় সম্মান ,ভক্তি করে !
         তারা কি জানে ?
ফেসবুকে তোমার কুকৃতির কথা !
        ভয় পেয়েছো ?
আসল আই .ডি .ডিএক্টিভেট কেনো ?
ফেকটাতো করেছো বন্ধ ,
আর কটা ফেক খুলেছো ?
        একটু যদি বলো !
         আমি জানি -
কোনো একটি ফেক আই .ডি .দিয়ে -
আমার টাইমলাইনে ঢুকবে ,
        আমি এও জানি -
রাগ তোমার আমার পরে নয় -
তুমি আমার সখীদের ইমেজ নষ্ট করতে চাও !
তুমি আমাকে প্রতিবাদী কবি আখ্যা দিয়েছিলে ,
তাই আমিও তোমার অন্যায়ের প্রতিবাদ করলাম ;
সাবধান হও ,নিজের সম্মান অক্ষুন্ন রাখো ,
রাগকে প্রশ্রয় দিও না -
তুমি মানুষ গড়ার কারিগর !
নিজেকে শুধরে নাও ,
মনেকরো এটা তোমার কাছে লেখা আমার চিঠি -
ঠিক যেমন তুমি আমায় ইনবক্সে লিখেছিলে -
বিনম্র শ্রদ্ধা আর প্রণাম জানিয়ে ;
ঈশ্বর তোমাকে সুবুদ্ধি দিন ।
 নন্দা

Saturday, April 1, 2017

যেওনা ভুলে 
         নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
   তোমাদের সুখে ,
   থাকবোনা আর ,
   যেতে দাও আমায় -
   ডেকোনা বারবার ।
যা কিছু আমার ছিলো পাওনা ,
সবই দিয়েছো আমায় -
আঘাতগুলো রেখে দিয়ে আমি ,
ভালোবাসাটুকু নিয়ে যাই  ।
অতীতস্মৃতি মুছে ফেলোনা ,
মনে রেখো কিছু কথা ,
আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে আজ ,
সময়ের সাথে মুছে যাবে মম ব্যথা !
নন্দা  1.4.17 8 PM