"ভাগ্যের লিখন" ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী ) ~~~~~~ দেবতোষ বাবুর স্ত্রী তার ভাসুর দেবপ্রিয় বাবুকে ফোন করে জানান যে অনতিবিলম্বে তিনি যেন মুম্বাই চলে আসেন ডক্টর জবাব দিয়ে দিয়েছেন ; শেষ মুহূর্তে তিনি তার দাদা ও ভাইপোকে দেখতে চান / দেবপ্রিয়বাবুর সাথে তার ভায়ের দেখা নেই প্রায় কুড়ি বছর / সম্পর্ক আছে ঠিকই ; ফোন করে উভয় উভয়ের খবরাখবর নিয়ে থাকেন /কিন্তু দেবতোষবাবু যেমন কখনোই তার দাদাকে মুম্বাই যেতে বলেন না ,অপরদিকে দেবপ্রিয়বাবু ও তার ভাইকে কলকাতায় তাদের পৈতৃক ভিটাতে আসতে বলেন না / সেই যে মুম্বাই চাকরী পেয়ে ভাই চলে গেলো আর কখনোই সে বাড়িতে আসেনি / মা ,বাবা দুজনেই মারা যাওয়ার পর দাদা ভাইকে যেমন আসতে বলেননি ,ভাই ও আসেনি / কিন্তু দু'বারই তিনি ভাইকে জানিয়েছেন / দেবতোষ যখন চাকরী পেয়ে মুম্বাই যান ,তখন দেবপ্রিয়বাবু অফিসের কাজে কলকাতার বাইরে ছিলেন /ছোট ছেলের সাথে বড় বৌমাকে শ্বাশুড়ি পাঠিয়ে দেন ছেলের নুতন কর্মস্থলে সংসারটা গুছিয়ে দেওয়ার জন্য /প্রথম অবস্থায় নিরূপা রাজী হয়না ; কিন্তু স্বামীর অনুরোধে তিনি তার দেওরের সাথে মুম্বাই পাড়ি দেন / কথা হয় অফিসের কাজ সেরে ফেরার পথে তিনি নিরূপাকে সঙ্গে নিয়েই ফিরবেন /অগত্যা নিরূপা রাজী হন /মুম্বাই এসে আট থেকে ন'দিনের মধ্যেই নিরূপা সুন্দর করে তার দেওরের ভাড়া করা ফ্লাটটা গুছিয়ে ফেলেন /বৌদি ,দেওরের সম্পর্ক আর পাঁচটা ঘরের মতোই অত্যন্ত মধুর ,ঠাট্টা- ইয়ার্কির মধ্যেই সীমাবদ্ধ /একদিন দেবতোষ অফিস যাওয়ার সময় বৌদিকে বলে যান যে তার ফিরতে দেরী হবে এবং তিনি খেয়েই আসবেন /যথারীতি নিরূপা রাতের খাবার খেয়ে দেওরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন / রাত প্রায় একটার সময় দেবতোষ ফ্ল্যাটে ফেরেন /নিরূপা তাকে দেখে থ হয়ে যান /তিনি ভাবেন যে কোনোদিন মদ ছুঁয়েও দেখেনি সে কিনা আকণ্ঠ মদ খেয়ে ফিরেছে /ভালোভাবে দাঁড়াতেও পারছে না / তিনি কোনো রকমে নিজের দম বন্ধ করে দেওরকে এনে খাটের উপর শুইয়ে দেন /আর তখনই ঘটে যায় সেই কলঙ্কৃত অধ্যায় | কিছুতেই নিরূপা দেবতোষের দু'হাতের বন্ধন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না | প্রথমে জোড়াজুড়ি ,ধস্তাধস্তি পরে দেবতোষের পায়ে ধরেও নিজের সম্মান রক্ষা করতে অক্ষম হয় | পরদিন দেবতোষ যখন ঘুম থেকে ওঠে তখন অনেক বেলা | স্ববতই গতরাতের ঘটনার কথা তার কিছুই মনে পরে না | এত বেলা হয়ে গেছে ,বৌদি তাকে কেনো অফিস যাওয়ার জন্য ডাকেনি ; জানতে ছুটে যায় তার ঘরে | কিন্তু যেয়ে দেখে ঘর শুন্য | রান্না ঘরেও নেই ,আবার ফিরে আসে বৌদির ঘরে | সেখানে সে দেখতে পায় একটি চিঠি পরে রয়েছে খাটের পরে | চিঠিটি খুলে সে পড়তে শুরু করে - ঠাকুরপো , যে স্নেহের চোখে তোমায় আমি দেখতাম ;তার চরম অপমান কালরাতে তুমি আমার সাথে করেছো | বয়সে বড় হয়েও আমি পা ধরেও তোমার কাছ থেকে আমি আমার সম্মান বাঁচাতে পারিনি | আমি আজই কলকাতায় ফিরে যাচ্ছি | জীবনে কোনোদিনও তোমার মুখ যেন আমায় দেখতে না হয় | তুমি যদি কোনোদিন আর আমার সামনে এসে দাঁড়াও ,সেদিনই আমার জীবনের শেষদিন হবে | আমি এ জীবনে তোমায় আর কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবো না ... এক নিঃশ্বাসে দেবতোষ চিঠিটা পড়ে | একটু একটু করে গতকালের ঘটনা আপসা আপসা তার মনে পড়তে লাগে | তখন সে দুই হাতে মুখ ঢেকে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করে | আর মনে মনে বলতে লাগলো ," বিশ্বাস করো কাল রাতে আমার কোনো জ্ঞান ছিলো না | পার্টিতে ওই হুল্লোড় ,শেষে আলাদা করে কোনো এক রুমে কয়েকজন বন্ধু মিলে নীল ছবি আমার সব শিক্ষা ,দীক্ষা ,রুচি - পাল্টে দিয়েছিলো | যা করেছি সে অন্যায়ের কোনো ক্ষমা নেই | ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলছি -এ জীবনে এ কালো মুখ আর তোমায় দেখতে হবে না | কোনোদিন তোমার সামনে যেয়ে আমি আর দাঁড়াবো না | দেবপ্রিয় ফোন পেয়েই কাল বিলম্ব না করেই ছেলেকে নিয়েই প্লেনে রওনা দেন |দেবেশকে বাইরে বসিয়ে রেখে অনেক কাকুতি মিনতি করে ভিজিটিংস আওয়ারের আগেই তিনি ভায়ের বেডের কাছে এসে দেখেন দেবতোষ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন আর চোখের দু'পাশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে | তিনি তার মাথার কাছে এগিয়ে যান | অত্যন্ত মৃদু স্বরে ডাকেন -'দেবু' -দেবতোষ চোখ খুলে দাদার দিকে তাঁকিয়ে দেখেন ,এক মাথা সাদা চুল ; তার সুন্দর ,সুপুরুষ দাদা বুড়ো হয়ে একি চেহারা করেছে ! " দেবু ,আমি এসছি রে ! কেমন আছিস তুই ?প্রথমে চিনতে একটু অসুবিধা হলেও পরে তিনি দাদাকে চিনতে পারেন | কিন্তু কোনো কথা না বলে দাদার হাত দু'টি ধরে তিনি কেঁদেই যান | দেবপ্রিয় বলেন ," কাঁদছিস কেন ? তুই ভালো হয়ে যাবি |" এবার নিজের হাত দু'টি একসাথে জড়ো করে দাদার দিকে তুলে বলেন ,"আমি আর ভালো হতে চাই না দাদা | মস্ত বড়ো অপরাধী আমি ; আমার পাপের ফলে আজ আমার এই পরিণতি !তুই জানিস না দাদা আমি কি করেছি বৌদির সাথে |" দেবপ্রিয় ভায়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেন ,"জানি সব জানি | তোর বৌদি আমায় সব বলেছে | ছেড়ে দে ভাই - সে সব কথা | তোর ছেলেকে দেখবি ? ও কিন্তু জানে আমিই ওর বাবা | শুধু ও কেনো - আমি আর তোর বৌদি ছাড়া কেউই জানে না - যে তুই ওর বাবা ,আর কেউ কোনোদিন জানতেও পারবে না |" দেবতোষ কোনো কথা না বলে চোখ বন্ধ করেই থাকেন | দু'চোখের কোল বেয়ে অবিরাম ধারায় জলের ধারা নেমে চলেছে | দেবপ্রিয় বাইরে বেড়িয়ে যেয়ে ছেলে দেবেশকে ও তার কাকিমাকে (??) ভিতরে ডেকে আনেন | দেবেশ এসে দেবতোষের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত রেখে মুখে এসে পড়া চুলগুলি সরিয়ে দেয় | দেবতোষ চোখ খুলে দেবেশের দিকে তাকান | হঠ্যাৎ দেখা যায় দেবতোষের শরীরটা একটু কেঁপে ওঠে আর সঙ্গে সঙ্গেই চোখ দু'টিও বন্ধ হয়ে যায় |
Tuesday, February 14, 2017
"ভাগ্যের লিখন" ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী ) ~~~~~~ দেবতোষ বাবুর স্ত্রী তার ভাসুর দেবপ্রিয় বাবুকে ফোন করে জানান যে অনতিবিলম্বে তিনি যেন মুম্বাই চলে আসেন ডক্টর জবাব দিয়ে দিয়েছেন ; শেষ মুহূর্তে তিনি তার দাদা ও ভাইপোকে দেখতে চান / দেবপ্রিয়বাবুর সাথে তার ভায়ের দেখা নেই প্রায় কুড়ি বছর / সম্পর্ক আছে ঠিকই ; ফোন করে উভয় উভয়ের খবরাখবর নিয়ে থাকেন /কিন্তু দেবতোষবাবু যেমন কখনোই তার দাদাকে মুম্বাই যেতে বলেন না ,অপরদিকে দেবপ্রিয়বাবু ও তার ভাইকে কলকাতায় তাদের পৈতৃক ভিটাতে আসতে বলেন না / সেই যে মুম্বাই চাকরী পেয়ে ভাই চলে গেলো আর কখনোই সে বাড়িতে আসেনি / মা ,বাবা দুজনেই মারা যাওয়ার পর দাদা ভাইকে যেমন আসতে বলেননি ,ভাই ও আসেনি / কিন্তু দু'বারই তিনি ভাইকে জানিয়েছেন / দেবতোষ যখন চাকরী পেয়ে মুম্বাই যান ,তখন দেবপ্রিয়বাবু অফিসের কাজে কলকাতার বাইরে ছিলেন /ছোট ছেলের সাথে বড় বৌমাকে শ্বাশুড়ি পাঠিয়ে দেন ছেলের নুতন কর্মস্থলে সংসারটা গুছিয়ে দেওয়ার জন্য /প্রথম অবস্থায় নিরূপা রাজী হয়না ; কিন্তু স্বামীর অনুরোধে তিনি তার দেওরের সাথে মুম্বাই পাড়ি দেন / কথা হয় অফিসের কাজ সেরে ফেরার পথে তিনি নিরূপাকে সঙ্গে নিয়েই ফিরবেন /অগত্যা নিরূপা রাজী হন /মুম্বাই এসে আট থেকে ন'দিনের মধ্যেই নিরূপা সুন্দর করে তার দেওরের ভাড়া করা ফ্লাটটা গুছিয়ে ফেলেন /বৌদি ,দেওরের সম্পর্ক আর পাঁচটা ঘরের মতোই অত্যন্ত মধুর ,ঠাট্টা- ইয়ার্কির মধ্যেই সীমাবদ্ধ /একদিন দেবতোষ অফিস যাওয়ার সময় বৌদিকে বলে যান যে তার ফিরতে দেরী হবে এবং তিনি খেয়েই আসবেন /যথারীতি নিরূপা রাতের খাবার খেয়ে দেওরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন / রাত প্রায় একটার সময় দেবতোষ ফ্ল্যাটে ফেরেন /নিরূপা তাকে দেখে থ হয়ে যান /তিনি ভাবেন যে কোনোদিন মদ ছুঁয়েও দেখেনি সে কিনা আকণ্ঠ মদ খেয়ে ফিরেছে /ভালোভাবে দাঁড়াতেও পারছে না / তিনি কোনো রকমে নিজের দম বন্ধ করে দেওরকে এনে খাটের উপর শুইয়ে দেন /আর তখনই ঘটে যায় সেই কলঙ্কৃত অধ্যায় | কিছুতেই নিরূপা দেবতোষের দু'হাতের বন্ধন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না | প্রথমে জোড়াজুড়ি ,ধস্তাধস্তি পরে দেবতোষের পায়ে ধরেও নিজের সম্মান রক্ষা করতে অক্ষম হয় | পরদিন দেবতোষ যখন ঘুম থেকে ওঠে তখন অনেক বেলা | স্ববতই গতরাতের ঘটনার কথা তার কিছুই মনে পরে না | এত বেলা হয়ে গেছে ,বৌদি তাকে কেনো অফিস যাওয়ার জন্য ডাকেনি ; জানতে ছুটে যায় তার ঘরে | কিন্তু যেয়ে দেখে ঘর শুন্য | রান্না ঘরেও নেই ,আবার ফিরে আসে বৌদির ঘরে | সেখানে সে দেখতে পায় একটি চিঠি পরে রয়েছে খাটের পরে | চিঠিটি খুলে সে পড়তে শুরু করে - ঠাকুরপো , যে স্নেহের চোখে তোমায় আমি দেখতাম ;তার চরম অপমান কালরাতে তুমি আমার সাথে করেছো | বয়সে বড় হয়েও আমি পা ধরেও তোমার কাছ থেকে আমি আমার সম্মান বাঁচাতে পারিনি | আমি আজই কলকাতায় ফিরে যাচ্ছি | জীবনে কোনোদিনও তোমার মুখ যেন আমায় দেখতে না হয় | তুমি যদি কোনোদিন আর আমার সামনে এসে দাঁড়াও ,সেদিনই আমার জীবনের শেষদিন হবে | আমি এ জীবনে তোমায় আর কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবো না ... এক নিঃশ্বাসে দেবতোষ চিঠিটা পড়ে | একটু একটু করে গতকালের ঘটনা আপসা আপসা তার মনে পড়তে লাগে | তখন সে দুই হাতে মুখ ঢেকে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করে | আর মনে মনে বলতে লাগলো ," বিশ্বাস করো কাল রাতে আমার কোনো জ্ঞান ছিলো না | পার্টিতে ওই হুল্লোড় ,শেষে আলাদা করে কোনো এক রুমে কয়েকজন বন্ধু মিলে নীল ছবি আমার সব শিক্ষা ,দীক্ষা ,রুচি - পাল্টে দিয়েছিলো | যা করেছি সে অন্যায়ের কোনো ক্ষমা নেই | ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলছি -এ জীবনে এ কালো মুখ আর তোমায় দেখতে হবে না | কোনোদিন তোমার সামনে যেয়ে আমি আর দাঁড়াবো না | দেবপ্রিয় ফোন পেয়েই কাল বিলম্ব না করেই ছেলেকে নিয়েই প্লেনে রওনা দেন |দেবেশকে বাইরে বসিয়ে রেখে অনেক কাকুতি মিনতি করে ভিজিটিংস আওয়ারের আগেই তিনি ভায়ের বেডের কাছে এসে দেখেন দেবতোষ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন আর চোখের দু'পাশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে | তিনি তার মাথার কাছে এগিয়ে যান | অত্যন্ত মৃদু স্বরে ডাকেন -'দেবু' -দেবতোষ চোখ খুলে দাদার দিকে তাঁকিয়ে দেখেন ,এক মাথা সাদা চুল ; তার সুন্দর ,সুপুরুষ দাদা বুড়ো হয়ে একি চেহারা করেছে ! " দেবু ,আমি এসছি রে ! কেমন আছিস তুই ?প্রথমে চিনতে একটু অসুবিধা হলেও পরে তিনি দাদাকে চিনতে পারেন | কিন্তু কোনো কথা না বলে দাদার হাত দু'টি ধরে তিনি কেঁদেই যান | দেবপ্রিয় বলেন ," কাঁদছিস কেন ? তুই ভালো হয়ে যাবি |" এবার নিজের হাত দু'টি একসাথে জড়ো করে দাদার দিকে তুলে বলেন ,"আমি আর ভালো হতে চাই না দাদা | মস্ত বড়ো অপরাধী আমি ; আমার পাপের ফলে আজ আমার এই পরিণতি !তুই জানিস না দাদা আমি কি করেছি বৌদির সাথে |" দেবপ্রিয় ভায়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেন ,"জানি সব জানি | তোর বৌদি আমায় সব বলেছে | ছেড়ে দে ভাই - সে সব কথা | তোর ছেলেকে দেখবি ? ও কিন্তু জানে আমিই ওর বাবা | শুধু ও কেনো - আমি আর তোর বৌদি ছাড়া কেউই জানে না - যে তুই ওর বাবা ,আর কেউ কোনোদিন জানতেও পারবে না |" দেবতোষ কোনো কথা না বলে চোখ বন্ধ করেই থাকেন | দু'চোখের কোল বেয়ে অবিরাম ধারায় জলের ধারা নেমে চলেছে | দেবপ্রিয় বাইরে বেড়িয়ে যেয়ে ছেলে দেবেশকে ও তার কাকিমাকে (??) ভিতরে ডেকে আনেন | দেবেশ এসে দেবতোষের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত রেখে মুখে এসে পড়া চুলগুলি সরিয়ে দেয় | দেবতোষ চোখ খুলে দেবেশের দিকে তাকান | হঠ্যাৎ দেখা যায় দেবতোষের শরীরটা একটু কেঁপে ওঠে আর সঙ্গে সঙ্গেই চোখ দু'টিও বন্ধ হয়ে যায় |
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment