প্রতিশোধ নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
তরুন সাব ইন্সপেক্টর অফিসার রাজেশ চৌধুরী হাঁফাতে হাঁফাতে ওসির ঘরে ঢুকে বললেন ,"স্যার ,আজও সেই একই ভাবে খুন করা হয়েছে বাসের কন্ডাক্টরকে । আগেরদিন ওই বাসের বাসচালককে ঠিক যেভাবে খুন করা হয়েছিলো | তারমানে স্যার বোঝা যাচ্ছে - খুনি একই ব্যক্তি |" ওসির কপালে ভাঁজ পরে | তিনি মনোযোগ সহকারে অফিসারের কথা শুনতে থাকেন | অফিসার আবারও শুরু করেন ,"মাস দুয়েক আগে সতের বছরের একটি মেয়েকে বাসের ভিতর গণধর্ষণ করেছিল ; সংখ্যায় ওরা পাঁচজন ছিলো | ওদের প্রত্যেকের নামেই কেস হয়েছিলো | কিন্তু কেসটি হঠাৎ করেই তুলে নেওয়া হয় | যে দুজন খুন হয়েছেন তাদের নামও ওই তালিকায় ছিলো | এটা থেকে পরিষ্কার যে - যে মেয়েটি ধর্ষিতা হয়েছিল এবং পরে মারা যায় ; তারই কোনো নিকট আত্মীয় এই খুনের সঙ্গে জড়িত | অদ্ভুতভাবে দুটি খুনই একইভাবে হয়েছে | মনে হচ্ছে কেউ যেন খুন হওয়া মানুষ দুটির পুরুষাঙ্গ টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে |" ওসি চিৎকার করে বলে উঠলেন ," কি যাতা বলছেন আপনি ?" খুব দৃঢ়ভাবে অফিসার উত্তর দিলেন ," অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি স্যার |" বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে পুলিশ অফিসার দুমাস আগে ধর্ষিতা হওয়া বন্দনা ঘোষের বাড়িতে যায় | বাড়ি বলতে বস্তিতে ছোট্ট একখানি ঘর | ঘরে একটা তক্তপোষ ,আলো বাতাস বিহীন | সেই তক্তপোষের উপর বসে এক ভদ্রলোক কেশেই চলেছেন | ঘরের মেঝেতে বসে চল্লিশউর্ধো এক ভদ্রমহিলা স্টোভে কিছু একটা রান্না করছেন | বাইরে থেকে অফিসার হাঁক দিলেন ,"কে আছেন ঘরে ?" ভদ্রমহিলা ছিন্ন শত মলিনবস্ত্রটাকে গায়ে জড়াতে জড়াতে বাইরে এসে পুলিশ দেখে ভয়ে দুপা পিঁছিয়ে গেলেন | তারপর কোনোরকমে উচ্চারণ করলেন ,"আমরা তো কেস তুলে নিয়েছি স্যার | মেয়েটা মরার আগে বলে গেছিলো করা ওর উপর অত্যাচার করেছিলো ; তাই বস্তির লোকদের সাথে যেয়ে ওদের নামে নালিশ করেছিলাম | কিন্তু ওরা বাড়িতে এসে শাসিয়ে গেছিলো কেস তুলে না নিলে ওরা সমস্ত বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দেবে | তাই পরদিনই কেস তুলে নি | এখন আপনারা আবার কি জন্য এসেছেন ?" অফিসার বুঝতে পারছেন কোনো সুপারিকিলারকে দিয়ে এ কাজ এরা করাতে পারেনা ; সে বুদ্ধি এবং সামর্থ কোনোটাই এদের নেই |তবুও তিনি কর্তব্যের খাতিরে জানতে চাইলেন ," আপনাদের কোনো আত্মীয়স্বজন আছেন ?" " না স্যার,পৃথিবীতে আমরা তিনটি প্রাণীই ছিলাম ,মেয়েটা চলে গেলো ; এখন আমি আর ঐ মানুষটা ছাড়া আর আমাদের কেউ নেই । কিন্তু কেন বলুন তো ?" অফিসার এ কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বেড়িয়ে যান ।তারপরের তিন রাত্রি ঐ একইভাবে আরও তিনটি খুন । প্রশাসন কর্তাদের কালঘাম ছুঁটে যাচ্ছে । খুনের কিনারা বা কোনো সূত্র তারা কেউ পাচ্ছেন না । পরপর পাঁচ রাতে পাঁচটি খুন । খুনের কিনারায় পুলিশ প্রশাসন নাজেহাল । ৬ষ্ঠদিন রাত বারোটা ।তবুও তিনি কর্তব্যের খাতিরে জানতে চাইলেন ," আপনাদের কোনো আত্মীয়স্বজন আছেন ?" " না স্যার,পৃথিবীতে আমরা তিনটি প্রাণীই ছিলাম ,মেয়েটা চলে গেলো ; এখন আমি আর ঐ মানুষটা ছাড়া আর আমাদের কেউ নেই । কিন্তু কেন বলুন তো ?" অফিসার এ কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বেড়িয়ে যান ।তারপরের তিন রাত্রি ঐ একইভাবে আরও তিনটি খুন । প্রশাসন কর্তাদের কালঘাম ছুঁটে যাচ্ছে । খুনের কিনারা বা কোনো সূত্র তারা কেউ পাচ্ছেন না । পরপর পাঁচ রাতে পাঁচটি খুন । খুনের কিনারায় পুলিশ প্রশাসন নাজেহাল ।
৬ষ্ঠদিন রাত বারোটা ।ওসির ঘরে দরজা ভেজিয়ে খুনের কিনারা করতে জরুরী মিটিং চলছে | হঠাৎ ঘ্যাচ করে বদ্ধ দরজাটা খুলে গেলো | সবাই দরজার দিকে তাঁকালেন কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলেন না | একটা ফাঁকা চেয়ার ছিলো ,সকলেই দেখলেন চেয়ারটা একটু নড়ে উঠলো | রুমের ভিতর একটা দম বন্ধ করা পরিস্থিতি | তারপর একটা অট্টহাসি ; মনেহচ্ছে হাসির দাপটে ঘরের দেওয়াল ভেঙ্গেচুড়ে চুরমার হয়ে যাবে | হাসি আর কিছুতেই থামেনা | দুঁদে সব পুলিশ অফিসারদের মুখ শুকিয়ে কাঠ | সকলেই ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছেন | সব থেকে সাহসী অফিসার সুপ্রিয় দত্ত অজ্ঞান হয়ে টেবিলেই মাথা দিয়ে পরে আছেন | এমনিতে তিনি নির্ভিক ,কিন্তু ভুত প্রেত প্রচন্ড ভয় পান | বাকিরা তার সাহায্যে এগিয়ে আসার মত অবস্থায় নেই | সকলের হাত ,পা অসাড় হয়ে গেছে যেন | সকলেই জড়সড় হয়ে ওই ফাঁকা (?) চেয়ারটার দিকে তাকিঁয়ে | বাতাসে ভেসে আসার মত কান্না ভেঁজা কণ্ঠে তারা শুনতে পেলেন ," তোমরা এত বড় বড় অফিসার ,আমার পরে যে অত্যাচার হলো - পাঁচ পাঁচটা নরপশু আমার এই ছোট শরীরটাকে খুবলে ,ছিঁড়ে খেলো ; মৃত্যুর আগে তাদের নাম আমি বলে যাওয়ার পরও তোমরা তাদের শাস্তি দিতে পারলে না ? তাই তাদের আমি নিজের হাতে শাস্তি দিয়েছি | আমি পাঁচটা খুন করেছি ; আমাকেউ তোমরা কোনো শাস্তি দিতে পারবেনা । ওদের মেরে ফেলবার সময় আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো ,কিন্তু ওরা আমায় যে কষ্ট দিয়েছে তার কাছে ওই কষ্টটা কিচ্ছুনা | তোমরা তো প্রমান পাওনি তাই ওদের ধরোনি ; তাইতো আমি নিজে এসে প্রমান দিয়ে গেলাম ওদের আমি মেরেছি ,সেই বন্দনা ঘোষ - যে লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করে মা,বাবার মুখে খাবার জুটাতো |আমি খুব কষ্ট পেয়েছি ,ওদের পা ধরে কেঁদেছি কিন্তু ওরা শোনেনি | ওদের মেরে ফেলে দিয়ে আমি কি কোনো অন্যায় করেছি কাকু ?" হঠাৎ অফিসার রাজেশ চৌধুরী চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে কপালে হাত ঠেকিয়ে শুন্য চেয়ারটার (?) দিকে তাকিঁয়ে একটা স্যালুট করেন | বাকি সবাই চুপ | চেয়ারটা পুনরায় নড়ে উঠলো |
নন্দা 1.2.17 ( সম্পূর্ণ একটি কাল্পনিক কাহিনী )
No comments:
Post a Comment