Tuesday, February 28, 2017

অবুঝ মন  ( তৃতীয় অংশ )       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী             

পরদিন ভোরবেলা বিপাশা ঠিক করে প্রথমে সে প্রকাশকের কাছে যাবে । সেখান থেকে সে জোগাড় কোরবে আগন্তুকের বাড়ির ঠিকানা । যে ভাবেই হোক এই লেখকের সাথে তাকে দেখা করতেই হবে ।        

ভোরবেলা উঠে স্নান ,খাওয়া সেরে সে বেরিয়ে পরে কলেজ স্ট্রিটের 'মানবী' প্রকাশক সংস্থার উর্দ্দেশ্যে । অলিগলি অনেক হাঁটাহাঁটির পর সে পৌঁছায় সঠিক জায়গায় । দুপুর বারোটার আগে প্রকাশক সংস্থার মালিক আসেননা । অগত্যা বসেবসে পুরানো দিনগুলিতে ফিরে যাওয়া । ভিক্টোরিয়ায় ফুচ্কা খেতে যেয়ে টকজলটা পরে যেয়ে যে বিপাশার হলুদ শাড়িতে দাগ লেগে গেছিলো - সেটা তো তুষার ছাড়া আর কেউই জানেনা ! তাহলে লেখক আগন্তুক কিভাবে এইরূপ একটি ঘটনা তার উপন্যাসে এনে দাঁড় করলেন ? এইরূপ আরও অনেক ঘটনা যা তুষার ছাড়া আর কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয় .....। তার ভাবনায় ছেদ পরে হঠাৎ কারও কথায় --    

---আপনি আমার জন্য বসে আছেন ?     

---হ্যাঁ ,আমি এই প্রকাশক সংস্থার মালিকের সাথে একটু কথা বলতে চাই ।       ---হ্যাঁ ,আমিই মালিক । বলুন আপনি কি জানতে চান ?       ---আপনার এখন থেকে লেখক আগন্তুকের সব লেখা ছাপা হয় । আপনি যদি দয়া করে তার ঠিকানাটা আমায় দেন ,তাহলে খুব উপকৃত হবো ।         ---কিন্তু এইভাবে অনুমতি ছাড়া আমরা কোনো লেখকের ঠিকানা দিতে পারিনা ।                        অনেক কাকুতি ,মিনতি ,অনুনয়বিনয় শেষে নিজের দুটি হাত জড়ো করে লেখক আগন্তুকের ঠিকানা মিললো বিপাশারকলেজ স্ট্রীট থেকে বেশি দূরে নয় । তবুও তাড়াতাড়ির জন্য বিপাশা একটি টাক্সিই নিলো । প্রকান্ড এক বাড়ির সামনে এসে ট্যাক্সি দাঁড়ালো । বাইরে থেকে বাড়িটাকে দেখে মনে হচ্ছে একটি বিশাল বাংলো । লেখকবাবু বাড়িতে আছেন কিনা জানতে চাওয়ায় দাড়োয়ান মাথা নাড়িয়ে 'হ্যাঁ' বলে একটা কাগজের চিরকুট হাতে ধরিয়ে দিলো বিপাশার । বিপাশা নিজের নাম আর বাবার পদবীটা লিখে দাড়োয়ানকে চিরকুটটা ফেরৎ দিল । খানিক বাদে ফিরে এসে বিপাশাকে সঙ্গে নিয়েই লেখকবাবুর ঘর দেখিয়ে দিলো । বাড়ির সামনে এসে যখন ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়েছিলো তখন বিপাশা দেখে গেটের কাছেই প্রাচীরের গায়ে শ্বেতপাথরের উপর কালো রঙ্গে লেখা বাড়ির নাম 'প্রতীক্ষা' ।             

      বিপাশা এসে পর্দা সরাতেই অপর প্রান্ত থেকে গলা ভেসে এলো ,  

---পদবীটা ভুল আছে ;ওটা মিত্র হবে । দাস পদবীটা সাতাশ বছর আগেকার । পদবীটা না লিখলেও শুধু নামেই আমার চিনতে কোনো অসুবিধা হতনা ।     .         বিপাশা পর্দা ধরে সেখানেই দাঁড়িয়ে । হাঁটতেই যেনো সে ভুলে গেছে । "তুষার - তূষার বেঁচে আছে?" নিজেকেই নিজে বিপাশা প্রশ্ন করে । তার গলা দিয়ে কোনো স্বর বের হয়না । এতগুলো বছর বাদেও তুষারের গলা চিনতে বিপাশার বিন্দুমাত্র ভুল হয়না । বিপাশা ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে দেখে তুষার এগিয়ে এসে বিপাশাকে বলে ," কি হলো ? ভিতরে এসো ।"           তুষারের কথাগুলি এতটাই স্বাভাবিক লাগে বিপাশার যেন রোজ তার সাথে বিপাশার দেখা হয় ,কথা হয় । বিপাশা আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় । মুহূর্তে তার মাথাটা ঘুরে যায় । তুষার তাকে ধরতে গেলে সে নিজেকে সামলে নেয় । তুষার একগ্লাস জল তার হাতে ধরিয়ে দেয় । গ্লাসটা হাতে ধরেই বিপাশা বসে   থাকে ; যেন কিভাবে জল খেতে হয় তা পর্যন্ত সে ভুলে গেছে । তুষার খুব আস্তে করে বলে,"জলটা খেয়ে নাও ।"


     বেশ কিছুক্ষন দুজনেই চুপচাপ থাকার পর নীরবতা ভেঙ্গে বিপাশায় তুষারকে জিজ্ঞাসা করে ,

---কেন করলে আমার সাথে এরকম ?

--- কোনো উপায় ছিলোনা । যে পিসিমার কাছে আমি থাকতাম সেই পিসীমার ছেলে সুখেন্দু । প্রথমদিন পরীক্ষা দিয়ে যখন নিজের ঘরে ফিরি ; তখন পিসীমা একটি ছবি এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন ,' এই মেয়েটার সাথে সুখেন্দুর বিয়ে ঠিক করছি ,দেখতো মেয়েটা দেখতে কেমন ?' ছবিটার দিকে তাঁকিয়ে দেখি তোমার ছবি । মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো তখন । সুখেন্দু তখন সবে চাকরী পেয়েছে ,ভালো চাকরি ,উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ । কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না । খুব ভালো ছেলে সে । প্রায় সমবয়সী আমরা । মনকে শান্তনা দিলাম - তোমায় যখন ভালোবাসি ,তোমার সুখই আমার সুখ । সুখেন্দুর সাথে বিয়ে হলে তুমি খুব সুখী হবে । তাই তোমার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হলাম । সত্যি বলোতো সেই মুহুর্তে আমার আর কি করার ছিল ? আমি তখন বেকার ,এদিকে তোমার বাড়িতে বিয়ের সম্মন্ধ দেখছেন । আমার স্বল্প বুদ্ধিতে মনে হয়েছিলো যেহেতু আমি তোমায় ভালোবাসি ; তুমি সুখী হলেই আমি ভালো থাকবো ।"

---আর আমার ভালোবাসা ? তার কোনো মূল্যই তো দিলেনা ?

--- তুষার চুপ করে বসে থাকে । বিপাশা তাকে আবারও একই প্রশ্ন করে ।

নন্দা    ( শেষ অংশ কাল )
অবুঝ মন  ( ২য়  অংশ )  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
                       এই ঘটনার পর পাঁচ ,সাতদিন কেটে গেলো | তুষার কিন্তু বিপাশাদের বাড়িতে আর গেলোনা | পাগলের মত তুষারকে বিপাশা খুঁজে বেড়িয়েছে | কিন্তু কোথায় তুষার ? তুষারের ও নিজের বন্ধুদের কাছে ,তুষারের দূরসম্পর্কের ওই পিসিমার বাড়ি  ও গ্রামের বাড়ির ঠিকানা জানতে চেয়েছে | কিন্তু কেউই তার কোনো সন্ধান দিতে  | আর পারবেই বা কি করে ? বিপাশাকেও তো সে কোনোদিন তার পিসিমার বাড়ি বা গ্রামের বাড়ির ঠিকানা বলেনি | বহুবার বিপাশা তার কাছে জানতে চেয়েছে ,পিসিমার বাড়ির কথা | কিন্তু কোনোদিনও তুষার তাকে ঠিক কোন জায়গাটায় পিসিমার বাড়ি সেটা বলেনি |                          
বাড়িতে বিয়ের জন্য নিত্য অশান্তি | বিয়েতে মত না দিলে বিপাশার মা জলস্পর্শ করবেননা বলে দরজায় ছিটকেনি দিলেন | সকলের চাপের কাছে বিপাশা শেষ পর্যন্ত বিয়েতে রাজী হয় | বুকের যন্ত্রণার উপর একটা মস্তবড় পাথর চাপা দিয়ে সকলের সামনে সে হাসিমুখেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে | কিছুতেই সে বুঝতে পারেনা তুষার তার সাথে কেনো এমন করলো ! বিয়ের প্রায় মাসখানেক পর খবরের কাগজে বিপাশা দেখে তুষারের ভারসিটির লাইব্রেরীর কার্ডের ছবিটা | চমকে ওঠে | কাগজটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে খবরটা পরে | হাওড়া রেললাইনের উপর অপরিচিত এক যুবকের ট্রেনে কাটা লাশ পাওয়া গেছে | মুখাকৃতি তার এতটাই বিকৃত হয়েছে যে তার পকেট থেকে পাওয়া ভার্সিটির কার্ডের সাথে মেলানো সম্ভব হচ্ছেনা | কার্ডে পাওয়া নাম অনুযায়ী মনে করা হচ্ছে - যুবকটির নাম তুষার মজুমদার |                                 
কাগজটি হাতে ধরে কতক্ষন এভাবে বিপাশা বসে ছিলো তা সে নিজেই জানেনা | চোখেরজল পড়তে পড়তে একসময় তাও বন্ধ হয়ে যায় | বিয়ের পর থেকেই সুখেন্দু অফিস চলে যাওয়ার পর স্নান সেরে সে খবরের কাগজটা নিয়ে শুয়ে পড়তো | প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তো | সংসারে তো মানুষ দুজন ; সে আর সুখেন্দু | বিয়ের মাসখানেক আগে সুখেন্দু চাকরী পায় | কিন্তু তার পোস্টিং হয় কলকাতার বাইরে - কুচবিহার | শ্বাশুড়িমা তার স্বামী ,শ্বশুরের ভিটা ছেড়ে আসবেন না | তাই চাকরী পাওয়ার পরই তিনি ছেলের বিয়ে দিয়ে দেন | অন্ধকার ঘরে পেপার হাতে বিপাশা যেন এ জগতেই নেই | বারবার কলিং বেলের আওয়াজ তার কানে যাচ্ছে কিন্তু পা দুটো তার যেন চলছে না | অনেকক্ষন পর সে উঠে দাঁড়ায় | ঘরের লাইটটা জ্বালিয়ে দেখে সন্ধ্যা সাতটা | তারমানে সুখেন্দু এসে গেছে | কোনো রকমে হেঁটে যেয়ে দরজাটা খুলে দেয় | সুখেন্দু হেসে পরে জিজ্ঞাসা করে ," কিগো ঘুমিয়ে পড়েছিলে ?" অস্ফুট স্বরে বিপাশা উত্তর দেয় ," হ্যাঁ "|             
     
    জীবনে এরপরে কি করে যে সাতাশটা বছর কেটে গেছে তা বোধকরি বিপাশা নিজেও জানেনা | বিয়ের দুবছরের মাথায় তাদের একটি ফুটফুটে মেয়ে হয় | নিজেরা দেখেশুনে প্রবাসী ছেলের সাথে মেয়ের বিয়েও দিয়ে দেয় । মেয়ে ,জামাই অস্ট্রেলিয়াতেই থাকে । তাদেরও একটি সুন্দর ,ফর্সা একদম মোমের পুতুলের মত মেয়ে হয়েছে ।যার বয়স এখন ছমাস । নাতনীর জম্মের কয়েকদিনের মধ্যেই সুস্থ্য ,স্বাভাবিক সুখেন্দু স্ট্রোকে মারা যায় ।সম্পূর্ণ একা হয়ে যায় বিপাশা । মেয়ে বারবার করে তার কাছে চলে যাওয়ার জন্য বলেছে । কিন্তু বিপাশা রাজী হয়নি  । আবার তাই ডাইরী কলমকে সঙ্গী করেছে । দু'একটা ম্যাগাজিনে ছোট গল্প লিখতে লিখতে হঠাৎই সে তার নিজের জীবনী লিখে ফেলে । ছেলেবেলার বন্ধু রচনার সাথে তার নিত্য যোগাযোগ । ডাইরীটা সে রচনাকে পড়তে দেয় । কিন্তু রচনা তাকে অবাক করে দিয়ে ফোনে জানায় ,"তোর এই লেখাটার সাথে প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক আগন্তুকের 'শেষ দেখার' হুবহু মিল রয়েছে ।"  " তোর কাছে আছে আগন্তুকের উপন্যাসটা ?"  " হ্যাঁ আছে তো ,আমি কাল নিয়ে তোর কাছে যাবো ।"
       পরদিন ঠিক সকাল এগারোটা নাগাদ রচনা তার ছোট নাতনীটিকে সাথে নিয়ে বিপাশার বাড়িতে আসে । রচনা চিরকালই গল্প ,কবিতা পড়ার পোঁকা যাকে বলে । কারও কোনো নুতন লেখা বেরিয়েছে জানতে পারলেই তা সে কিনবেই । বলতে গেলে নিজের বাড়িটাকে ছোটোখাটো একটা লাইব্রেরী বানিয়ে ফেলেছে ।
     রচনারা চলে যাওয়ার পর বিপাশা বইটা নিয়ে বসে । গল্পের নাম "শেষ দেখা" লেখক আগন্তুক । বিপাশা শুয়ে শুয়ে বইটা পড়তে শুরু করে । তার লেখা "উত্তর পাইনি" আর আগন্তুকের লেখা "শেষ দেখা"-র ঘটনা এক শুধু লেখাটাই অন্যভাবে । বিকালের আগেই খাপছাড়া ,খাপছাড়া ভাবে বিপাশা পুরো উপন্যাসটাই শেষ করে । পার্থক্য শুধু একজায়গাতেই তার নিজের লেখা গল্পটি বিয়োগান্তক আর আগন্তুকের লেখা উপন্যাসটি মিলনাত্মক । ঘটনার বিস্তৃত বিবরণে বিপাশার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলিই কল্পনার সাহায্যে এক সুন্দর মাত্রা এনে দিয়েছেন আগন্তুক । বিপাশা ভাবতে থাকে - কে এই আগন্তুক ? কি করে এটা সম্ভব হলো ? জানতেই হবে আমাকে ! আমার জীবনের খুঁটিনাটি ঘটনাসমূহ তিনি কি করে জানলেন ?
নন্দা    (আবার কাল )

অবুঝ মন  ( প্রথম অংশ ) নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী         
"কি করে এটা সম্ভব ? আমার লেখার সাথে বিখ্যাত ঔপন্যাসিক 'আগন্তুকের' লেখার মিল ? না এটা হতে পারেনা | রচনা এটা ঠিক বলছে না | এ লেখা একান্ত আমার | এর সাথে কারও লেখার মিল থাকতেই পারেনা | এটা আমার সম্পূর্ণ নিজের জীবনের কাহিনী | এই কাহিনীর সাথে মিল হয়তো একজনেরই থাকতে পারতো ; কিন্তু সেই তো আজ আর এই পৃথিবীতে নেই | দুই যুগেরও বেশী হয়ে গেছে সে শুধু আমাকেই ছেড়ে নয় ,এই পৃথিবী ছেড়েই অনেক দূরে ,বহুদূরে চলে গেছে | যেখান থেকে কেউ কোনোদিনও আর ফিরে আসতে পারেনা |"
           একাকী জানালার কাছে বসে কথাগুলি ভাবতে ভাবতে বিপাশা ফিরে যায় সাতাশ বছর আগের কলেজ জীবনের দিনগুলিতে | যাদবপুর উনিভার্সিটিতে সে আর তুষার বাংলায় এম .এ করছে |তখন থেকেই বিপাশা একটু আধটু লেখালেখি শুরু করেছে |আর ফাইনাল ইয়ারে ওঠার আগেই তুষারের দুটি গল্পগ্রন্থ বেরিয়ে গেছে | সেই বই দুটি আজও বিপাশার আলমারীর শাড়ির ভিতর রয়েছে | বিয়ের পর যখন সে অষ্টমঙ্গলায় বাড়িতে এসেছিলো তখনই বইদুটি সে নিয়ে এসেছিলো | আজ সাতাশ বছর ধরে যক্ষের ধনের মত বই দুটিকে লুকিয়ে রেখেছে | মাঝে মাঝে যখন সে একা ঘরে থাকতো তখন বইদুটি বের করে শুধুই তার পৃষ্ঠাগুলি উল্টে পাল্টে দেখতো | বই এ যাতে পোঁকা না ধরে তারজন্য সে নিমপাতা বইয়ের ভাঁজেভাঁজে রেখে দিয়েছিলো | কিন্তু এখন আর লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে বইদুটি বের করে দেখতে হয়না | এখন সে সম্পূর্ণ একা এক বিশাল বাড়িতে | মেয়ের বিয়ের পর জামাই এর সাথে মেয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যায় | বিপাশার স্বামী ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিলেন রিটায়ার করার ছ'মাসের মধ্যেই হার্টঅ্যাটাকে বিপাশাকে একা রেখে তিনিও চলে যান |চিকিৎসা করার বিন্দুমাত্র সুযোগ সুখেন্দু বিপাশাকে দেয়নি | বছর খানেক হলো বিপাশা আবার ডাইরী ,কলম নিয়ে বসেছে | এখন বিপাশার সময় কাটানোর একমাত্র সঙ্গী ডাইরী আর কলম |
                 তুষার ও বিপাশা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসতো | বিয়ে করে সুখী হওয়ার স্বপ্নও তারা দেখেছিলো | তুষার থাকতো তার দূরসম্পর্কের এক পিসিমার বাড়িতে | গ্রামে ছিলো তুষারদের বাড়ি | এম .এ .করার জন্য কলকাতায় এসে পিসিমার বাড়িতে একখানা ঘর ভাড়া করে টাকার বিনিময়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করে সেখানেই থাকতো | তুষারের কাছেই বিপাশা গল্প শুনেছে পিসিমার অৱস্থাও খুব একটা ভালো ছিলো না | পিসিমার একটি ছেলে ছিলো তুষারেরই বয়সী ; সে ছিল খুব মেধাবী | তুষারদের গ্রামের বাড়িতে প্রচুর জমিজমা ছিলো | খুব ধনী না হলেও স্বচ্ছপরিবার ।
              বিপাশা তুষার একসাথে সিনেমা দেখা ,ভিক্টোরিয়া ,চিড়িয়াখানা ঘুরে বেড়ানো ,ফুঁচকা খাওয়া --আজও মনে পড়লে বিপাশা ভাবে এই তো সে দিনের কথা | বেশ ভালোই কাটছিলো দিনগুলি | কিন্তুহঠাৎ করেই এম ,এ .ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার পর তুষার  যেন কর্পূরের মোট উবে গেলো |অনেক চেষ্টা করেও বিপাশা তার কোনো সন্ধান পেলোনা | শেষের পরীক্ষার দিনগুলিতেও তুষার পরীক্ষার হলে ঢুকতো একদম ঘন্টা পড়ার পর | কেমন যেন উদভ্রান্তের মত লাগতো তাকে | পরীক্ষা শেষ হলেই বিপাশার অগোচরে বেরিয়ে যেত | একদিন বিপাশা দৌড়ে যেয়ে তুষারকে ধরে ,  
--- কি ব্যাপার বলোতো ? তুমি আজ কদিন ধরে এমন ভাব করছো যেন আমাকে চিনতেই পারছো না !
   --- না ,ঠিক তা নয় | আসলে পরীক্ষা নিয়ে একটু টেনশনে আছি |
   --- আমার যে তোমার সাথে খুব দরকারী একটা কথা আছে |  
---এক্ষুণি বলবে ?   
---বাড়ি থেকে আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখছে |  তুষার অনমনভাবে উত্তর দিলো ,"হ্যাঁ জানি তো !" 
---কি বললে ? তুমি কি করে জানলে ? আমি তো তোমায় কিছু বলিনি !  
--- না ,না ,আমি কি করে জানবো ? এই মাত্র তো তোমার কাছ থেকেই জানলাম |
    ---কি বলবো আমি এখন বাড়িতে ?
    ---আরে আগে পরীক্ষাটা শেষ হোক | তারপর আমি যেয়েই নাহয় তোমার বাড়িতে প্রস্তাব দেবো | তাঁরা তো আর পরীক্ষার মধ্যেই তোমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন না |
  ---না তা নয় | তবুও তোমার তো কথাটা জানা দরকার |   ---চিন্তা কোরনা | দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে |             তারপরদিনই ছিলো শেষ পরীক্ষা | পরীক্ষা শেষে তুষার এসে বিপাশার সামনে দাঁড়িয়ে তার হাতে তুষারের লেখা দ্বিতীয় বইটি "শুধু তোমারই জন্য " তুলে দিয়ে বলে ,"এটা তোমার গিফ্ট |"
   ---গিফ্ট মানে ? তোমার আর একটা বই বেরিয়েছে ?   ---হ্যাঁ | প্রথমটাই তোমাকে দিলাম |   
---তুমি আমার বাবার কাছে কবে যাবে ?
   
---তুষার আস্তে আস্তে বললো ," যাবো ,এর মধ্যেই যাবো | তুমি ভালো থেকো | আর হ্যাঁ - দু'একের মধ্যে না গেলে চিন্তা কোরনা |"
              
বিপাশা তুষারের মুখের দিকে তাঁকিয়ে বলে ,"কি হয়েছে তোমার ? কথাগুলি তোমার এরকম লাগছে কেন ? সত্যি করে বোলো নাগো ,কি হয়েছে ?" তুষার হেসে পরে |"আরে কিছুই হয়নি | তুমি ভালো থেকো | আসি |"               
       বিপাশার সেদিন মনে হয়েছিলো তুষার জোড়করে তার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছে | তুষারের সাথে বিপাশার এই শেষ দেখা |  
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 24.10.16 ( পরবর্তী অংশ কা

Sunday, February 26, 2017

          জীবনে হাঁটতে ,হাঁটতে হঠাৎ আমরা থমকে দাঁড়াই ;বলা ভালো সেই মুহূর্তে জীবনের উপর থেকে যে মস্ত বড় ঝড় বয়ে যায় তারজন্যই দাঁড়াতে বাধ্য হই । হঠাৎ নামা বৃষ্টিতে মাথা বাঁচাতে যেমন কোথাও আশ্রয় নিই ; বৃষ্টি থেমে গেলে আবার বেরিয়ে পড়ি নিজ গন্তব্যে । জীবনের উপরে যে ঝড় আসে, ঝড়ের রেশ যতক্ষণ থাকে - সেই মুহূর্তে আমাদের জীবনের হাঁটাটাও বক্রপথে এগিয়ে চলে । এলোমেলো করে দেয় অনেককিছু  । ভেঙ্গে পড়ি ,অসহায় হয়ে পড়ি । তছনচ করে দেওয়া সময়টাকে গুছিয়ে নিতে আরও অনেকটা সময় লাগে । সময়ের সাথে সাথে আমরা প্রতেক্যে গুছিয়েও নিতে পারি ! শুধু ক্ষত হয়ে থেকে যায় কিছু স্মৃতি । যে ক্ষত আজীবন সারেনা । সেই ক্ষত নিয়েই আবার জীবনের পথে হাঁটতে শুরু করি !!! হয়তো এরই নাম জীবন !!!
নন্দা  26.2.17  রাত আটটা ,,

Saturday, February 25, 2017


পাথরের মূর্তি
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
ভারতবর্ষের প্রতিটি দেশে এসেছি ঘুরে ,
দেখেছি অনেক ,শিখেছি আরও বেশি ,
স্বার্থের নেশায়  ডুবেছে মানুষ ,
কেউ দেখেনা অসহায়কে ফিরে !
নিজেকে নিয়েই মশগুল সবে ,
কেউ রাখেন কারও খোঁজ ,
দিনের পর দিন উপবাসী কেউ ,
কারও সামনে নিত্য রাজভোজ |
মন্দিরে মন্দিরে পূজার ছলে ,
দুগ্ধে করে মূর্তি স্নান -
অবোধ শিশু দুধের অভাবে ,
মুখ করে থাকে ম্লান |
মূর্তির কাছে পরে থাকা দুধ ,
কোনো শিশু যদি ভুলে খায় ,
'অধর্ম' বলে চিৎকার করে সবে ,
বিনা দোষে গলাধাক্কা খায় !
সোনার আভরণে সর্জিত দেবদেবী ,
মন্দিরে বড় তালা -
অন্যায়ের কোনো প্রতিবাদ নেই ,
পাথরের মূর্তি বোবা ও কালা !

নন্দা  23.2.17

Friday, February 24, 2017


দারিদ্রের কাছে পরাজয়
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
হঠাৎ করেই হোলো দেখা ,
অনেকদিন পরে -
স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছো ,
অনেক লোকের ভিড়ে |
নেই নেই করেও -
কুড়িটি বছর হবে ,
তবুও চিনলাম এক পলকেই |
চোখাচোখি হতেই -
এগিয়ে গেলাম কাছে ,
তুমি আগের মতোই জড়সড় !
লুকিয়ে রাখলে নিজেকে |
বয়েস থেকে অনেক বৃদ্ধ ,
হয়ে গেছো যেন -
শরীরের প্রতি অযত্ন ,অবহেলা -
এত করলে কেনো ?
আমায় তুমি ফিরিয়েছিলে ,
দারিদ্রের কথা বলে ;
এখনো কিন্তু রেখেছি অন্তর ,
তোমার জন্যই খুলে |
জানি আমি জানি,
তুমিও একা -
পারোনি  আপন করতে কাউকে ,
সেই একই কথা বলে -
এতদিন পরে -
আজও কি ফিরাবে আমাকে ?
নন্দা  21.2.17
কেন এমন হল
            নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
হয়তো আছিস একলা বসে ,
ভাবছিস আমার কথা ,
পুরানো কথা মনে করে ,
উল্টাছিস স্মৃতির পাতা |
স্মৃতিগুলি আজও স্পষ্ট -
অক্ষরগুলো হয়েছে মলিন ,
জীবন নদীর স্রোতের কাছে ,
ভালোবাসা রয়েছে অমলিন  |
থাকনা  দূরে ক্ষতি কি তাতে ,
মন দুটো তো কাছে -
ভাগ্য আমাদের হয়নি সহায় ,
ফিরি বারবার তাই পিছে |
নন্দা    23.2.17   11 PM. .

Thursday, February 23, 2017


দুঃখকে পিঞ্জর থেকে ,
      মুক্তি দাও -
অপমানকে ভুলে যাও ,
অন্যায়কারীকে ক্ষমা -
       করে দাও ,
নিজে ঠিক থাকলে -
       অপবাদ গায়ে লাগবে না ।    

               নন্দা

Saturday, February 18, 2017

তোমার পাগলী
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
আমি সাজবো শুধু তোমার জন্যই ,
   পড়বো কাজল চোখে ,
কপালে দেবো লাল টিপ ,
   গোলাপী রং ঠোঁঠে |
আমায় বলো পাগলী তুমি !
   সাজবো তবে কেন ?
যেমন আছি তেমন করেই ,
   আমায় বুকে টেনো ।
চুলগুলি সব থাকবে খোলা ,
   পড়বো না কাজল চোখে -
ঠোঁট দু'টি কাঁপবে শুধু ,
   মুখটি লুকাবো বুকে |
আমি পাগলী শুধু তোমার কাছেই -
   ঠাঁই দিও বুকেই আমায় ,
সারাজীবন ডাকবে পাগলী -
   ডাকটি  ওই মুখেই মানায় |
নন্দা  18.2.17  9-30PM.

Friday, February 17, 2017

অনুকবিতা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
অভিমানী ওগো,কেনো চলে গেলে ?
কত জ্বালা যন্ত্রনা,নিয়ে গেলে অজান্তে ?
কথা ছিল,একসাথে থাকবো চিরকাল ,
হারানোর ব্যথা, বইতে হবে যে অনন্তকাল !
নন্দা
এক পশলা বৃষ্টি চাই
                        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

      আমি বড় ক্লান্ত -
চাই এক পশলা বৃষ্টি ,
একটুখানি ভিজতে চাই ,
আমার একাকিত্ব ,নিঃসঙ্গতাকে -
ধুয়ে ,মুছে সাফ করে ফেলতে চাই !
     ভুলে যেতে চাই -
অতীতের সুখস্মৃতিগুলি !
সামনে এগিয়ে যেতে চাই ,
নুতন করে কাউকে দিতে চাই ,
আমার সাঁজানো পুষ্পাঞ্জলি |

নন্দা    17.2.17  1-30AM
      আমার ব্যর্থতা           নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী      আমার মনের সাদা খাতায় ,
 এঁকেছিলাম এক আলপনা ,
 পূজার অর্ঘ্য সাজিয়েছিলাম ,
 কোরবো তোমার বন্দনা | 

শাঁখ বাজিয়ে উলু দিয়ে ,
 নিলো তোমায় বরণ করে ,
শুভদৃষ্টির সময় দেখলাম ,
মুখটি আছো কালো করে | 

অনেক ভাবনা নিয়ে মনে ,
এলাম আমি তোমার সনে ,
প্রথম রাতেই জানিয়ে দিলে -
মনটি বাঁধা তোমার অন্যখানে |  
১৬.২.১৭    ১২.৩০ AM.
দীপ নেভেনি
                নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
           
     আমার নীলাকাশ -
আজ অন্ধকারে ছেঁয়ে গেছে ,
স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়েছে ,
আমার ঘরের নিভিয়ে প্রদীপ ,
জ্বালিয়েছো অন্যের ঘরে আলো ,
জীবন নদীর শেষপাড়ে আমি দাঁড়িয়ে ,
তুমি পেয়েছো খুঁজে তোমার কূল ,
আছ প্রিয়ার জন্য দু'হাত বাড়িয়ে |
যেদিন আমি চলে যাবো -
এই পৃথিবী ছেড়ে ,
অজান্তে কখনো চোখ দু'টি গো -
যদি তোমার জলে ভরে ,
উঠবে সেদিন সূর্য্য দেখো ,
আরও উজ্জ্বল হয়ে -
আমার সকল কষ্ট ,গ্লানি ,
তাতেই যাবে মুছে ,ধুয়ে |
নন্দা   16.2.17   1.15 AM

Thursday, February 16, 2017

আজও ভালোবাসি
                 নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
প্রথম ছোঁয়ার পরশে ,
রাঙ্গিয়েছিলে যেদিন মন ,
ছিলোনা সেদিন ভালোবাসার দিন ;
ফাগুনের কোনো ক্ষণ |
হঠাৎ করেই টেনেছিলে ,
বুকের মেঝেতে -
শরীর আমার কাঁপিয়ে দিয়ে ;
ঠোঁট দুটিতে আলতো পরশ দিলে যে !
ছিলোনা সেদিন কোকিলের কুহুতান ,
আমার হৃদয় ভরিয়ে দিয়েছিলে -
শুধু গেয়ে গান ;
চাওয়ার থেকেও অনেক বেশী ,
দিয়েছিলে আমায় ;
সেই দিনটি মনে রেখেই -
আজও ভালোবাসি তোমায় |
নন্দা   14.2.17    11-40

তুমি হারিয়েছো -আমার জীবন হতে ,
হারায়নি তোমার ছোঁয়া -
পাথরের বুকে লেখা যে নাম -
যায়না যেমন ধোয়া |
'নন্দা'

Tuesday, February 14, 2017

ভালোবাসা মানুষকে কেন যে কাঁদায় -              
বার বার ধরা দিয়ে দূরে চলে যায় গো              
দূরে চলে যায় -                                       
ভালবাসে যত - ব্যথা দেয় শত -                
ছলনাতে ভুলিয়ে কেনো ?                              ভালোবাসি ,ভালোবাসি -
বলে বার বার         
অনেক আঘাতের পর ,
 বুঝেছি এবার              
দুনিয়াটা বড়ো স্বার্থপর                                    
এতদিন পরে বুঝলাম -
 কেউ কারো নয় / 28.12.15.

"ভাগ্যের লিখন"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী ) ~~~~~~                    দেবতোষ বাবুর স্ত্রী তার ভাসুর দেবপ্রিয় বাবুকে ফোন করে জানান যে অনতিবিলম্বে তিনি যেন মুম্বাই চলে আসেন ডক্টর জবাব দিয়ে দিয়েছেন ; শেষ মুহূর্তে তিনি তার দাদা ও ভাইপোকে দেখতে চান / দেবপ্রিয়বাবুর সাথে তার ভায়ের দেখা নেই প্রায় কুড়ি বছর / সম্পর্ক আছে ঠিকই ; ফোন করে উভয় উভয়ের খবরাখবর নিয়ে থাকেন /কিন্তু দেবতোষবাবু যেমন কখনোই তার দাদাকে মুম্বাই যেতে বলেন না ,অপরদিকে দেবপ্রিয়বাবু ও তার ভাইকে কলকাতায় তাদের পৈতৃক ভিটাতে আসতে বলেন না / সেই যে মুম্বাই চাকরী পেয়ে ভাই চলে গেলো আর কখনোই সে বাড়িতে আসেনি / মা ,বাবা দুজনেই মারা যাওয়ার পর দাদা ভাইকে যেমন আসতে বলেননি ,ভাই ও আসেনি / কিন্তু দু'বারই তিনি ভাইকে জানিয়েছেন / দেবতোষ যখন চাকরী পেয়ে মুম্বাই যান ,তখন দেবপ্রিয়বাবু অফিসের কাজে কলকাতার  বাইরে ছিলেন /ছোট ছেলের সাথে বড় বৌমাকে শ্বাশুড়ি পাঠিয়ে দেন ছেলের নুতন কর্মস্থলে সংসারটা গুছিয়ে দেওয়ার জন্য /প্রথম অবস্থায় নিরূপা রাজী হয়না ; কিন্তু স্বামীর অনুরোধে তিনি তার দেওরের সাথে মুম্বাই পাড়ি দেন / কথা হয় অফিসের কাজ সেরে ফেরার পথে তিনি নিরূপাকে সঙ্গে নিয়েই ফিরবেন /অগত্যা নিরূপা রাজী হন /মুম্বাই এসে আট থেকে ন'দিনের মধ্যেই নিরূপা সুন্দর করে তার দেওরের ভাড়া করা ফ্লাটটা গুছিয়ে ফেলেন /বৌদি ,দেওরের সম্পর্ক আর পাঁচটা ঘরের মতোই অত্যন্ত মধুর ,ঠাট্টা- ইয়ার্কির মধ্যেই সীমাবদ্ধ /একদিন দেবতোষ অফিস যাওয়ার সময় বৌদিকে বলে যান যে তার ফিরতে দেরী হবে এবং তিনি খেয়েই আসবেন /যথারীতি নিরূপা রাতের খাবার খেয়ে দেওরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন / রাত প্রায় একটার সময় দেবতোষ ফ্ল্যাটে ফেরেন /নিরূপা তাকে দেখে থ হয়ে যান /তিনি ভাবেন যে কোনোদিন মদ ছুঁয়েও দেখেনি সে কিনা আকণ্ঠ মদ খেয়ে ফিরেছে /ভালোভাবে দাঁড়াতেও পারছে না / তিনি কোনো রকমে নিজের দম বন্ধ করে দেওরকে এনে খাটের উপর শুইয়ে দেন /আর তখনই ঘটে যায় সেই কলঙ্কৃত অধ্যায় | কিছুতেই নিরূপা দেবতোষের দু'হাতের বন্ধন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না | প্রথমে জোড়াজুড়ি ,ধস্তাধস্তি পরে দেবতোষের পায়ে ধরেও নিজের সম্মান রক্ষা করতে অক্ষম হয় |       পরদিন দেবতোষ যখন ঘুম থেকে ওঠে তখন অনেক বেলা | স্ববতই গতরাতের ঘটনার কথা তার কিছুই মনে পরে না | এত বেলা হয়ে গেছে ,বৌদি তাকে কেনো অফিস যাওয়ার জন্য ডাকেনি ; জানতে ছুটে যায় তার ঘরে | কিন্তু যেয়ে দেখে ঘর শুন্য | রান্না ঘরেও নেই ,আবার ফিরে আসে বৌদির ঘরে | সেখানে সে দেখতে পায় একটি চিঠি পরে রয়েছে খাটের পরে | চিঠিটি খুলে সে পড়তে শুরু করে -    ঠাকুরপো ,                    যে স্নেহের চোখে তোমায় আমি দেখতাম ;তার চরম অপমান কালরাতে তুমি আমার সাথে করেছো | বয়সে বড় হয়েও আমি পা ধরেও তোমার কাছ থেকে আমি আমার সম্মান বাঁচাতে পারিনি | আমি আজই কলকাতায় ফিরে যাচ্ছি | জীবনে কোনোদিনও তোমার মুখ যেন আমায় দেখতে না হয় | তুমি যদি কোনোদিন আর আমার সামনে এসে দাঁড়াও ,সেদিনই আমার জীবনের শেষদিন হবে | আমি এ জীবনে তোমায় আর কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবো না ...         এক নিঃশ্বাসে দেবতোষ চিঠিটা পড়ে | একটু একটু করে গতকালের  ঘটনা আপসা আপসা তার মনে পড়তে লাগে | তখন সে দুই হাতে মুখ ঢেকে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করে | আর মনে মনে বলতে লাগলো ," বিশ্বাস করো কাল রাতে আমার কোনো জ্ঞান ছিলো না | পার্টিতে ওই হুল্লোড় ,শেষে আলাদা করে কোনো এক রুমে কয়েকজন বন্ধু মিলে নীল ছবি আমার সব শিক্ষা ,দীক্ষা ,রুচি - পাল্টে দিয়েছিলো | যা করেছি সে অন্যায়ের কোনো ক্ষমা নেই | ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলছি -এ জীবনে এ কালো মুখ আর তোমায় দেখতে হবে না | কোনোদিন তোমার সামনে যেয়ে আমি আর দাঁড়াবো না |              দেবপ্রিয় ফোন পেয়েই কাল বিলম্ব না করেই ছেলেকে নিয়েই প্লেনে রওনা দেন |দেবেশকে বাইরে বসিয়ে রেখে অনেক কাকুতি মিনতি করে  ভিজিটিংস আওয়ারের আগেই তিনি ভায়ের বেডের কাছে এসে দেখেন দেবতোষ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন আর চোখের দু'পাশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে | তিনি তার মাথার কাছে এগিয়ে যান | অত্যন্ত মৃদু স্বরে ডাকেন -'দেবু' -দেবতোষ চোখ খুলে দাদার দিকে তাঁকিয়ে দেখেন ,এক মাথা সাদা চুল ; তার সুন্দর  ,সুপুরুষ দাদা বুড়ো হয়ে একি চেহারা করেছে ! " দেবু ,আমি এসছি রে ! কেমন আছিস তুই ?প্রথমে চিনতে একটু অসুবিধা হলেও পরে তিনি দাদাকে চিনতে পারেন | কিন্তু কোনো কথা না বলে দাদার হাত দু'টি ধরে তিনি কেঁদেই যান | দেবপ্রিয় বলেন ," কাঁদছিস কেন ? তুই ভালো হয়ে যাবি |" এবার নিজের হাত দু'টি একসাথে জড়ো  করে দাদার দিকে তুলে বলেন ,"আমি আর ভালো হতে চাই না দাদা | মস্ত বড়ো অপরাধী আমি ; আমার পাপের ফলে আজ আমার এই পরিণতি !তুই জানিস না দাদা আমি কি করেছি বৌদির সাথে |" দেবপ্রিয় ভায়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেন ,"জানি সব জানি | তোর বৌদি আমায় সব বলেছে | ছেড়ে দে ভাই - সে সব কথা | তোর ছেলেকে দেখবি ? ও কিন্তু জানে আমিই ওর বাবা | শুধু ও কেনো - আমি আর তোর বৌদি ছাড়া কেউই জানে না - যে তুই ওর বাবা  ,আর কেউ কোনোদিন জানতেও পারবে না |" দেবতোষ কোনো কথা না বলে চোখ বন্ধ করেই থাকেন | দু'চোখের কোল বেয়ে অবিরাম ধারায় জলের ধারা নেমে চলেছে | দেবপ্রিয় বাইরে বেড়িয়ে যেয়ে ছেলে দেবেশকে ও তার কাকিমাকে (??) ভিতরে ডেকে আনেন | দেবেশ এসে দেবতোষের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত রেখে মুখে এসে পড়া চুলগুলি সরিয়ে দেয় | দেবতোষ চোখ খুলে দেবেশের দিকে তাকান | হঠ্যাৎ দেখা যায় দেবতোষের শরীরটা একটু কেঁপে ওঠে আর সঙ্গে সঙ্গেই চোখ দু'টিও বন্ধ হয়ে যায় |
আজও ভালোবাসি
                 নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
প্রথম ছোঁয়ার পরশে ,
রাঙ্গিয়েছিলে যেদিন মন ,
ছিলোনা সেদিন ভালোবাসার দিন ;
ফাগুনের কোনো ক্ষণ |
হঠাৎ করেই টেনেছিলে ,
বুকের মেঝেতে -
শরীর আমার কাঁপিয়ে দিয়ে ;
ঠোঁট দুটিতে আলতো পরশ দিলে যে !
ছিলোনা সেদিন কোকিলের কুহুতান ,
আমার হৃদয় ভরিয়ে দিয়েছিলে -
শুধু গেয়ে গান ;
চাওয়ার থেকেও অনেক বেশী ,
দিয়েছিলে আমায় ;
সেই দিনটি মনে রেখেই -
আজও ভালোবাসি তোমায় |
নন্দা   14.2.17    11-40

Monday, February 13, 2017

কেনো অবহেলা


কেনো অবহেলা
              নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

জন্ম নিলাম মেয়ে রূপে ,
আঁতুরঘরে বাজলো না শাঁখ ,
আলোচনায় হোলো ঠিক ,
ব্লেডটা না পোড়ায় থাক !
অবহেলা ,অনাদরে -
বড় হচ্ছি আমি যখন ,
মায়ের কোল আলো করে ,
ভাই এলো ঠিক তখন ।
ভায়ের খাবার,ভায়ের পড়া ,
সব দিকেতেই সবার নজর ,
আমি কি খেলাম,পড়লাম ,
কেউ রাখেনা তার খবর !
একই মায়ের এলাম কোলে ,
আকাশ,পাতাল প্রভেদ মোদের !
কি অপরাধে হলাম অপরাধী ,
কোরবো নালিশ কাছে কাদের ?
বাইশেই আমি শ্বশুড়বাড়ি ,
ভাই উচ্চশিক্ষায় বিদেশে ,
দু'টি সন্তানের হলাম মা ,
জানিয়ে দিলো ভাই ফিরবেনা দেশে ।
শ্বশুড়,শ্বাশুড়ী নেই তো আমার ,
স্বামী,সন্তান সংসার -
অভাব আমার নেই যে কোনো ,
এখনও কাঁদে অন্তর আমার ।
প্রথম,প্রথম আসতো টাকা ,
বাবা,মায়ের তরে -
দিনে দিনে বন্ধ হল ,
অভাব এলো আমার বাপেরঘরে ।
নিয়ে এলাম তাঁদের আমি ,
আমার স্বামীর বাড়ি ,
সেবা দিয়ে,যত্ন দিয়ে ,
ছেলের দেওয়া আঘাত ভুলানোর ,
বৃথাই চেষ্টা করি ।
সব সময়েই ফেলেন অশ্রু ,
মুছাই আঁচল দিয়ে ,
করেন আদর এখন আমায় -
তাঁদের বুকের মাঝে নিয়ে ।
এই আদরে কত যে সুখ ,
পাইনি আমি ছেলেবেলায় !
অন্তর আমার আর কাঁদেনা ,
মেয়ে বলে অবহেলায় !
নন্দা  ১৩.২.১৭   দুপুর ১-২০ ।

Sunday, February 12, 2017

বসন্ত আসবে না
          নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
প্রেমহীন জীবনে প্রকৃতি আনে বসন্ত বারবার ,
কোকিলের কুহুতানে উদাস করে মন আমার ,
রাধাচূড়া,কৃষ্ণচূড়া পাশাপাশি ফোঁটে গাছে ,
প্রেমের শিখাটি অভিমানেই নিভে গেছে ,
রাতজাগা চোঁখদুটির অশ্রুতে ভেজে বালিশ ,
কোরবোনা কারও কাছে কোনো অভিযোগ ,নালিশ,
অভিমান,আবেগ সব মিলেমিশে এক হয় ,
বুকের মাঝে কালবৈশাখীর তুফান থামে নাতো হায়!অবুঝ মনে শুধু জাগিয়ে রেখেছি আশা ,
কাছে যদি আসো কভু দেবে ভালোবাসা ,
বিছানায় একা আমি কাটে বিনিদ্র রজনী ,
খাড়া থাকে কানদুটি যদি পাই তব পদধ্বণি ।
নন্দা   ১০.২.১৭

Thursday, February 9, 2017

পাইনি কিছু
            নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
আকাশের কোল বেয়ে ,
বৃষ্টি যখন ঝরে -
বিধাতার অপরূপ সৃষ্টিতে ,
ভিজতে ইচ্ছা করে |
আমার নয়ন হতে ,
অশ্রু যখন ঝরে -
সকলের অগোচরে ,
মুছি আঁচল দিয়ে |
জীবননদী পার হতে যেয়ে ,
 কখনো জোয়ার, কখনো ভাঁটা ,
স্রোতের অনুকূলে সাঁতার কেটেছি যত  ,
প্রতিকূল পেয়ে পিছিয়েছি শত |
জীবন থেমে থাকেনি -
সময়ের সাথে সেও দিয়েছে পাড়ি ,
পাওয়ার থেকে না পাওয়ার বোঝাটা,
আজ যেন বড্ড ভারী !
নন্দা   7.2.17  2PM.
 

Wednesday, February 8, 2017


"দারিদ্রের অভিশাপ"                    
  নন্দা মুখার্জী রায়             স্কুল ছুটির পর দুই বিনুনী ঝোলাতে ঝোলাতে রেখা বিজিতের দিকে চিৎকার করতে করতে ছুঁটে আসতে থাকে ,"বিজিত একটু দাঁড়া ,তোর সাথে কথা আছে|" বিজিত রাস্তার মাঝখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো | দুজনে একই স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ে | কিন্তু ছেলে এবং মেয়েদের আলাদা বিল্ডিং | ছেলেবেলা থেকেই দুজনের সাথে খুব বন্ধুত্ব | একই পাড়ায় দুজনেরই বাড়ি | মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথ | দুই বাড়ির সকলেই জানে তাদের মধ্যে এই গাঢ় বন্ধুত্বের কথা | পাড়ার অনেকেইভাবে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক | আসলে আমাদের বাঙ্গালীদের সমাজটাই এইরূপ ! একটি ছেলে ও একটি মায়ের মধ্যের বন্ধুত্বের সম্পর্কটিকে ভালোভাবে নেয় না | এটা তারা বাঁকা দৃষ্টিতে দেখবেই |     রেখা হাঁফাতে হাঁফাতে এসে বিজিতকে একটা টিফিনবক্স দিয়ে বললো ,"এইনে মা তোকে গাজরের হালুয়া রান্না করে পাঠিয়েছেন ,টিফিনের সময় তোকে খুঁজে পাইনি |" বিজিত ছো মেরে নেওয়ার মত টিফিন বাটিটা নিয়ে মুখে হাসি আনে  বললো ," গাজরের হালুয়া ? মাসিমা দারুন করেন ,কালকে তোর বাটি ফেরত দেবো |"    কখনো বিজিত রেখাদের বাড়ি যেয়ে সারাদিন থাকছে ,খাচ্ছে আবার কখনো বা রেখা বিজিতদের বাড়িতে | এইভাবেই দিন গড়িয়ে যেতে থাকে | দেখতে দেখতে তারা মাধ্যমিক ,উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে একই কলেজে ভর্তিও হয় | বন্ধুত্বটা ঠিক সেই আগের মতোই থেকে যায় | কলেজের বন্ধু মহলও ভাবতো দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক | এ নিয়ে তারা হাসি ,ঠাট্টাও করতো | কিন্তু দুজনের কোনো হেলদোল ছিলোনা কারণ ছেলেবেলা থেকে এগুলি শুনতে শুনতে দুজনেরই গা সওয়া হয়ে গেছে | কিন্তু বন্ধুত্বে কোনো চিড় ধরেনি বা একে অপরের প্রতি কখনোই দুর্বল হয়ে পড়েনি |    দ্বিতীয় বর্ষে পড়াকালীন সময়ে হঠাৎ একদিন রেখাবিজিতদের বাড়িতে এসে বলে," তোর সাথে একটা কথা আছে ,খুব দরকারি - একটু বাইরে চল | বিজিতকে নিয়ে বাইরে এসে একটি ছেলের সাথে পিরচয় করিয়ে দেয় | "এর নাম সৌনক | কমপিউটার ইঞ্জিনিয়ার | কয়েক মাস হলো একটা কোম্পানীতে চাকরী পেয়েছে |     ---আমাকে এগুলি কেন বলছিস ?    --- তোকে ছাড়া আর কাকে বলবো বল ? আমি সৌনককে ভালোবাসি |                বিজিত একটু হেসে পরে বলে ,"সে আমি বুঝতে পেরেছি |তা এখন আমাকে কি করতে হবে ?    ---আরে বাবা ! তোকে কিছুই করতে হবেনা | তুই আমার ছেলেবেলার বন্ধু | তাই তোকেই সবার আগে জানালাম |       বিজিতের সাথে সৌনকের একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠলো | এখন অধিকাংশ সময় তারা তিনজনেই এদিক ,ওদিক ঘুরে বেড়ায় | এইভাবে বেশ চলছিল দিনগুলি | কিন্তু হঠাৎ একদিন খুব রাতে রেখার মা বিজিতকে ফোন করে জানতে চায় ; রেখা তাদের বাড়িতে আছে কিনা | বিজিত মাসিমাকে জানায় আজ সারাদিন রেখার সাথে তার দেখা হয়নি | একথা শুনে মাসিমা তাকে বলেন যে সন্ধ্যা থেকে রেখাকে পাওয়া যাচ্ছেনা | সঙ্গে সঙ্গে বিজিত সাইকেল নিয়ে রেখাদের বাড়ি চলে আসে | সেখানে যেয়ে সে জানতে পারে কোনো এক প্রতিবেশিনী রেখাকে একটি ছেলের সাথে ঘুরতে দেখেছেন | ছেলেটি যে বিজিত নয় তাও তিনি উল্লেখ করেছেন | রেখাকে জিজ্ঞেস করতে রেখা পরিষ্কার জানিয়ে দেয় সে ওই ছেলেটিকে ভালোবাসে এবং তাকেই বিয়ে করতে চায় সে | রেখার বাবা খবর নিয়ে জানতে পারেন ,ছেলেটিদের অবস্থা মোটেই ভালো নয় | বিবাহযোগ্যা দুই বোন আছে | একমাত্র রোজগেরে ওই ছেলে | খুবই অভাবের মধ্য দিয়ে ওদের দিন চলে | কিন্তু রেখাকে তারা বুঝাতে অক্ষম হন যে এখানে বিয়ে হলে সে ভালো থাকবেনা | শুধু ভালোবাসা দিয়ে জীবন চলেনা | কিছুটা তর্কবিতর্ক ঝগড়াঝাটির পরে রেখা রাগ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় সকলের অলক্ষ্যে | পরে তাকে দেখতে না পেয়ে ভেবেছিলেন রেখা বুঝি বিজিতদের বাড়িতেই গেছে | খারাপ কিছু তাদের মনেহয়নি |       বিজিত রেখার বাবার কাছ থেকে সৌনকদের ঠিকানা নিয়ে সকাল বেলাতেই  তাদেরবাড়িতে হাজির হয় ; কারণ বারবার ফোন করা শর্তেও রেখা ও সৌনকের সুইচ অফ পায় | ছোট্ট একটি ভাড়াবাড়ি ,দু'টি মাত্র বেডরুম | বিজিত ঘরে ঢুকে দেখে রেখার একমাথা সিঁদুর | হাতে শাঁখা ,পলা | বৌ বেশে রেখাকে বেশ লাগছে | গায়ে কোনো গয়না নেই বললেই চলে | রেখাকে দেখতে পেয়ে বিজিত যতটা না আনন্দিত হয় ; তার থেকে কষ্ট পায় বেশী | মাসিমাতো ঠিক কথায় বলেছিলেন | বাড়ির সর্বত্র একটা দারিদ্রের ছাপ | রেখা এখানে কি ভাবে সুখী থাকবে ? ওই পরিবেশ থেকে এসে সে কি ভাবে এখানে মানিয়ে নেবে ? বিজিতকে দেখে রেখা খুব খুশি হয় | কিছুক্ষন ওখানে কাটিয়ে বিজিত রেখাদের বাড়িতে ফিরে এসে সব ঘটনা মাসিমা ,মেশোমশাইকে খুলে বলে |   দিনের পর দিন রেখার মা ,বাবাকে বুঝিয়ে রেখা ও সৌনককে মেনে নিতে রাজি করায় বিজিত | সে নিজেই যেয়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে | বছর খানেক বেশ হাসি ,খুশিতেই তাদের সময় কেটে যায় | এর পরেই শুরু হয় মনোমালিন্য | সমস্যা সেই অর্থ ! বিয়ের পর হানিমুনে যাওয়ার জন্য রেখা যখন সৌনককে বলতো ,সবসময় অফিসের কাজের বাহানায় সৌনক বিষয়টিকে এড়িয়ে চলতো | আসতে আসতে রেখা বুঝে ফেলে সৌনকের আর্থিক অক্ষমতার কথা |  এই এক বছরের মধ্যেই সৌনকের বড়বোনের বিয়ে দিতেই সে হিমশিম খেয়েছে | সব কিছু বুঝেও রেখা ধর্য্য ধরে মানিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে | বাপের বাড়িতে দিনদিন  রেখার আসা ,যাওয়া ,থাকা ,খাওয়া বেড়ে যায় | সৌনক এটা ভালোভাবে মেনে নিতে পারেনা | এ নিয়েও শুরু হয় ঝামেলা | সমস্যা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে যেদিন সৌনক হঠাৎ করেই ড্রিংক করে বাড়িতে ফেরে | রেখা এটাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা |চিৎকার ,চেঁচামেচি হতে হতে হঠাৎ করেই নেশার ঘোরে সৌনক রেখাকে একটা ধাক্কা মারে | রেখা ছিটকে যেয়ে আলমারীর উপর পরে | আলমারীর হাতলে রেখার কপাল অনেকটা কেটে যায় | রাত তখন গভীর | কিছুই করার নেই | অন্য ঘর থেকে কোনো সাড়াও সে পায় না | অভিমানে ,দুঃখে ,কষ্টে - নিজের ক্ষত নিজেই কাপড়ের আঁচল দিয়ে  চেপে রেখে মুখ বুজে যন্ত্রনা সহ্য করে চোখের জলে নিজেকে ভাসিয়ে |    খুব ভোরে সে বিজিতকে ফোন করে সব ঘটনা জানায় | বিজিত সঙ্গে সঙ্গেই একটা ট্যাক্সি নিয়ে রেখার শ্বশুড়বাড়ি এসে হাজির হয় | রক্তে রেখার কাপড় পুরো ভিজে গেছে | অত ভোরে সকলে তখনও ঘুমাচ্ছে | বিজিত রেখাকে নিয়ে হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে চলে আসে | কপালে দু'টি সেলাই পরে | ইন্জেকশন দিয়ে ,সেলাই করিয়ে বিজিত রেখার কাছে জানতে চায় ,   ---তুই এখন কোথায় যাবি ?   ---আমার এখন কোথায় যাওয়া উচিত বলতো ?   ---দেখ রেখা ,আমি তোকে ছেলেবেলা থেকেই খুব ভালোবাসি ,কিন্তু সেটা প্রেমের দৃষ্টিতে নয় | আর আমি এও জানি ,তোর ও ব্যাপারটা একই |তোর এই কষ্ট আমি সহ্য করতে পারছিনা | আমার মনেহচ্ছে আমার বুকে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে | তুই নিজেই ঠিক কর তোর এখন কোথায় যাওয়া উচিত |       রেখা তার কপালের সেলাইয়ের উপর আলতো করে হাতটা রেখে বললো ," সৌনক তার ভালোবাসার চিহ্ন আমাকে দিয়ে দিয়েছে | তাই তার কাছে আমি আর ফিরে যাবোনা | যে সৌনককে আমি ভালোবেসেছিলাম - সেই সৌনক আর আজকের সৌনকের মধ্যে আকাশ পাতাল প্রভেদ |" অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বললো," তুই আমাকে আমার বাবা ,মায়ের কাছেই নিয়ে চল |"     বছর পাঁচেক পরের ঘটনা :-  বিজিত ভালো সরকারী চাকরী পায় |মা ,বাবার পছন্দ করা মেয়ের সাথে তার বিয়েও হয় | মেয়েটিও খুব ভালো | সুতরাং বিজিত খুব সুখী হয় | কিন্তু তার মন রেখার জীবনের এই শোচনীয় পরাজয় কিছুতেই মানতে পারেনা | ওই ঘটনার পর সৌনক বেশ কয়েকবার রেখাকে নিতে আসে | কিন্তু চরম অপমান আর অভিমানে রেখা তার সাথে দেখায় করেনা | সৌনক বিজিতের সাথে দেখা করেও চেষ্টা করে বিজিতের সাহায্য নিয়ে রেখাকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য | কিন্তু বিজিতও নানা অছিলায় বিষয়টাকে এড়িয়ে যায় | কারণ সেও চাইছিলো রেখা নূতনভাবেই জীবনটা শুরু করুক | এইভাবেই কেটে যায় পাঁচ পাঁচটা বছর | এই পাঁচ বছরে রেখার জীবনে অনেক পরিবর্তন আসে | সে বি .এড .ট্রেনিং নিয়ে একটা প্রাইমারী স্কুলে চাকরীও পায় | এই দীর্ঘ পাঁচ বছরে তার বাবা ,মা দুজনেই তাকে ছেড়ে চলে যান | সে বাড়িতে সম্পূর্ণ একা | মাঝে মাঝে বিজিত ও তার বৌ এসে তাকে সঙ্গ দেয় | এইভাবেই কালের নিয়মে দিন চলে যেতে থাকে | রেখা ইচ্ছা করেই বিজিতের আপত্তি শর্তেও দূরে বদলী নিয়ে চলে যায় ,পরিচিত মানুষজনের আড়ালে |     বিজিত এবং তার পরিবারের সাথে রেখার যোগাযোগটা থেকেই যায় ,ফোন বা যাতায়াতের মাধ্যমে | বিজিতের বৌ সুপ্রিয়া রেখাকে খুবই ভালোবাসে | দিদি বলে ডাকে ,খুব ভক্তি সম্মানও করে | তাদের দু'বছরের ছেলেকে নিয়ে দুজনে এসে রেখার কাছে কতদিন  থেকেও যায় |     রেখার স্কুলে একটা বাচ্চা মেয়ে পরে যার মুখটা দেখলেই রেখার সৌনকের কথা মনে পরে যায় |সৌনকের মুখটা যেন কেটে বসানো মেয়েটির মুখে | যত কষ্টেরই হোক না কেনো জীবনের প্রথম ভালোবাসা ,যা কখনোই ভুলতে কেউ পারেনা | শতআঘাত ,শত অপমান ,শত লাঞ্চনা শর্তেও সে ঠিক মনের মধ্যে কোনো এক জায়গায় ঘুমিয়ে থাকে | যাকে চেষ্টা করে অন্য কেউ এমন কি নিজেও মুছে ফেলা যায়না | রেখাও পারেনি | এতগুলি বছর বাদে শুধুমাত্র  সৌনকের মুখের সাথে মিল পেয়ে তার সেই ঘুমিয়ে থাকা বা শুকনো ভালোবাসার গাছে কেউ যেন জল ঢেলে সতেজ করে দিলো ।  সকলের অলক্ষ্যে সে তার ছোট্ট ছাত্রিকে ডেকে তার বাবার নাম জিজ্ঞেস কোরলো । বাবার নাম শুনে সে চম্কে উঠলো | "সৌনক সরকার" | মেয়েটির কাছ থেকে সে আরও জানতে পারে - যদিও সে তাকে গুছিয়ে কিছুই বলতে পারেনা ; রেখাকে সাজিয়ে নিতে হয় কথাগুলি | সে আর তার মা মামাবাড়িতে থাকে | তার বাবা নেই ,সে কোনোদিন দেখেওনি |     সোমা রেজিস্ট্রি খাতা বের করে তার ছাত্রী শিরিন সরকারের বাড়ির ঠিকানা দেখে সন্ধ্যার সময় সেখানে উপস্থিত হয় | ছোট্ট শিরিন তার আন্টিকে দেখে খুব খুশি | হাত ধরে টানতে টানতে তার মায়ের কাছে নিয়ে যায় | কিন্তু রেখা শিরিনের মা সুতপার ব্যবহারে খুব অবাক হয় | প্রথম অবস্থায় সুতপা কিছুক্ষন রেখার মুখের দিকে তাঁকিয়ে থেকে অত্যন্ত নীচু স্বরে বলে ," দিদি ঘরে চলো |" রেখা খুবই অবাক হয় | সে সুতপার পিছুপিছু শোবার ঘরে যেয়ে ঢোকে | দেওয়ালের দিকে চোখ পড়তেই দেখে সৌনকের খুব সুন্দর একটা ছবি বাঁধানো | নিজের অজান্তেই তার চোখের থেকে টপটপ করে জল পড়তে থাকে | সুতপা এগিয়ে এসে রেখার হাতদুটি ধরে বলে ," কেঁদোনা দিদি | যে চলে গেছে তার জন্য কেঁদে তার আত্মাকে কষ্ট দিওনা |"" তুমি আমায় চেনো ?"

-- না দিদি ,আগে কোনোদিন তোমায় দেখিনি | কিন্তু তোমার এত গল্প শুনেছি ; আর তাছাড়া শিরিনের বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন তোমার একটা ছবি আমাদের কলকাতার বাড়িতে দেওয়ালে ঝুলানো ছিলো | বিয়ের আগেই আমাকে তোমাদের কথা সব জানিয়েছিলো | আর বলেছিলো ," আমার সাথে বিয়ে বসতে হলে ঘরে বাঁধানো ছবির মানুষটিকে মেনে নিতে হবে | এত স্পষ্টভাবে কথাগুলি বলেছিলো মানুষটিকে খুব ভালো লেগে গেছিলো | আমার কপাল মন্দ ! মেয়ে যখন পেটে হঠাৎ অফিস থেকে আসার পথে এক্সিডেন্ট করে | হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো | কিন্তু তখন সব শেষ |আমি আর কোথায় যাবো ? তাই বাপের বাড়িতেই চলে এসছি  | তবে একটা কথা আমি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি দিদি ,যেটা তুমি বুঝতে পারোনি ,মানুষটা তোমায় খুব ভালোবাসতো |"

রেখা পাথর | সৌনকের তার প্রতি ভালোবাসা এত গভীর ছিল তা সে কোনোদিন বুঝতেই পারেনি | সৌনকের দারিদ্রের কাছে ভালোবাসা চাপা পরে গেছিলো | আর সেদিন সে যা করেছিল সবই তো ঘটেছিলো তার ড্রিংক করার ফলে | কি জন্য কেন সে ড্রিংক করেছিল তাও তো বলার সুযোগ আমি তাকে  দিই নি  ! এতটা কঠোর কি করে হলাম ?

সুতপা চা নিয়ে ঘরে ঢোকে | এসে দেখে রেখা প্রচন্ড ভাবে ঘামছে | "দিদি তোমার শরীর খারাপ লাগছে ?"  সুতপা জানতে চায় |

ব্যাগের থেকে কাঁপাকাঁপা হাতে রেখা ফোনটা বের করে  বিজিতকে ফোন করতে যায় | কিন্তু ওর হাত থেকে ফোনটা পরে যায় ,মুখে শুধু বলতে পারে- "বিজিত" |


রেখাকে ধরে সুতপা ও তার বাড়ির লোকেরা খাটের উপর শুইয়ে দেয় | সুতপা ফোনটা তুলে বিজিতের কন্টাক্টস দেখে তাকে ফোন করে সব জানায় | বিজিত সঙ্গে সঙ্গেই বাইক নিয়ে বিরাটি সুতপাকে বাড়ি এসে হাজির হয় | সঙ্গে সে এম্বুলেন্স নিয়েই আসে | এম্বুলেন্সের ভিতরেই জড়িয়ে যাওয়া রেখার অনেক কথার মাঝে বিজিত শুধু বুঝতে পারে ," আমি ভুল চিনেছিলাম সৌনককে | ওর ভালোবাসা আমি বুঝতে পারিনি | অভাবের কাছে ওর ভালোবাসা হার মেনে গেছিলো | ওর সাথে দেখা করে আমাকে ক্ষমা চাইতেই হবে |"


হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে সব শেষ |
নন্দা

Sunday, February 5, 2017


অনুকবিতা
              নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
রাতের আকাশের তাঁরারা স্বাক্ষী ,
আমার গভীর ভালোবাসার ;
চলে গেছো তুমি -
ফিরবে না জানি ,
জ্বলবে না আলো ,
জীবনে আমার |
বিরহিনী সকলে আমার ব্যথায় ,
তবুও চোখ দু'টি শুধু আমায় কাঁদায় |
আমার প্রশ্ন
             নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
বাঙ্গালীর আশা ,বাঙ্গালীর স্বপ্ন ,
   বাঙ্গালীর অহংকার -
বাহান্ন সালের একুশে ফেব্রূয়ারি -
   ভাষা আন্দোলন |
তিনশ পঁয়ষট্টি দিন ভুলে থাকি -
   আমরা এই দিনটি ,
লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে -
ছেলেমেয়েকে ইংরাজি মিডিয়ামে পড়িয়ে -
   তাদের শিক্ষিত করে তুলি ;
বাংলা লিখতে ও পড়তে তারা জানেনা !
নেই কোনো সম্যক জ্ঞান,
 ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে !
আমরা বাঙ্গালী ,মাতৃভাষা বাংলা বলে,
আমরা গর্ব করি  -
এইভাবে চলতে লাগলে -
আগামী প্রজম্ম একুশে ফেব্রূয়ারির -
মাহাত্ম মনে রাখতে পারবে কি ?
নন্দা  4.2.17  11-40 PM.

Saturday, February 4, 2017

অনুকবিতা
              নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
জীবনের গল্প শুরুর আগেই ,
হয়ে গেলো শেষ ;
জীবনের খাতা পরে আছে সাদা ,
কোথাও নেই খুশির রেশ |
হাসি ছিলো গান ছিলো,
ছিলো ছন্দ জীবনে ,
সবকিছু হারিয়ে গেলো ,
মিথ্যে অভিমানে |
নন্দা   17,1,17

Friday, February 3, 2017


প্রতিশোধ              নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী            


তরুন সাব ইন্সপেক্টর অফিসার  রাজেশ চৌধুরী হাঁফাতে হাঁফাতে ওসির ঘরে ঢুকে বললেন ,"স্যার ,আজও সেই একই ভাবে খুন করা হয়েছে বাসের কন্ডাক্টরকে । আগেরদিন ওই বাসের বাসচালককে ঠিক যেভাবে খুন করা হয়েছিলো | তারমানে স্যার বোঝা যাচ্ছে - খুনি একই ব্যক্তি |" ওসির কপালে ভাঁজ পরে | তিনি মনোযোগ সহকারে অফিসারের  কথা শুনতে থাকেন | অফিসার আবারও শুরু করেন ,"মাস দুয়েক আগে সতের বছরের একটি মেয়েকে বাসের ভিতর গণধর্ষণ করেছিল ; সংখ্যায় ওরা পাঁচজন ছিলো | ওদের প্রত্যেকের নামেই কেস হয়েছিলো | কিন্তু কেসটি হঠাৎ করেই তুলে নেওয়া হয় | যে দুজন খুন হয়েছেন তাদের নামও ওই তালিকায় ছিলো | এটা থেকে পরিষ্কার যে - যে মেয়েটি ধর্ষিতা হয়েছিল এবং পরে মারা যায় ; তারই কোনো নিকট আত্মীয় এই খুনের সঙ্গে জড়িত | অদ্ভুতভাবে দুটি খুনই একইভাবে হয়েছে | মনে হচ্ছে কেউ যেন খুন হওয়া মানুষ দুটির পুরুষাঙ্গ টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে |" ওসি চিৎকার করে বলে উঠলেন ," কি যাতা বলছেন আপনি ?"  খুব দৃঢ়ভাবে অফিসার উত্তর দিলেন ," অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি স্যার |"   বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে পুলিশ অফিসার দুমাস আগে ধর্ষিতা হওয়া বন্দনা ঘোষের বাড়িতে যায় | বাড়ি বলতে বস্তিতে ছোট্ট একখানি ঘর | ঘরে একটা তক্তপোষ ,আলো বাতাস বিহীন | সেই তক্তপোষের   উপর বসে এক ভদ্রলোক কেশেই চলেছেন | ঘরের মেঝেতে বসে চল্লিশউর্ধো এক ভদ্রমহিলা স্টোভে কিছু একটা রান্না করছেন | বাইরে থেকে অফিসার হাঁক দিলেন ,"কে আছেন ঘরে ?" ভদ্রমহিলা ছিন্ন শত মলিনবস্ত্রটাকে গায়ে জড়াতে জড়াতে বাইরে এসে পুলিশ দেখে ভয়ে দুপা পিঁছিয়ে গেলেন | তারপর কোনোরকমে উচ্চারণ করলেন ,"আমরা তো কেস তুলে নিয়েছি স্যার | মেয়েটা মরার আগে বলে গেছিলো করা ওর উপর অত্যাচার করেছিলো ; তাই বস্তির লোকদের সাথে যেয়ে ওদের নামে নালিশ করেছিলাম | কিন্তু ওরা বাড়িতে এসে শাসিয়ে গেছিলো কেস তুলে না নিলে ওরা সমস্ত বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দেবে | তাই পরদিনই কেস তুলে নি | এখন আপনারা আবার কি জন্য এসেছেন ?"    অফিসার বুঝতে পারছেন কোনো সুপারিকিলারকে দিয়ে এ কাজ এরা করাতে পারেনা ; সে বুদ্ধি এবং সামর্থ কোনোটাই এদের নেই |তবুও তিনি কর্তব্যের খাতিরে জানতে চাইলেন ," আপনাদের কোনো আত্মীয়স্বজন আছেন ?"  " না স্যার,পৃথিবীতে আমরা তিনটি প্রাণীই ছিলাম ,মেয়েটা চলে গেলো ; এখন আমি আর ঐ মানুষটা ছাড়া আর  আমাদের কেউ নেই । কিন্তু কেন বলুন তো ?" অফিসার এ কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বেড়িয়ে যান ।তারপরের তিন রাত্রি ঐ একইভাবে আরও তিনটি খুন । প্রশাসন কর্তাদের কালঘাম ছুঁটে যাচ্ছে । খুনের কিনারা বা কোনো সূত্র তারা কেউ পাচ্ছেন না ।    পরপর পাঁচ রাতে পাঁচটি খুন । খুনের কিনারায় পুলিশ প্রশাসন নাজেহাল । ৬ষ্ঠদিন রাত বারোটা ।তবুও তিনি কর্তব্যের খাতিরে জানতে চাইলেন ," আপনাদের কোনো আত্মীয়স্বজন আছেন ?"  " না স্যার,পৃথিবীতে আমরা তিনটি প্রাণীই ছিলাম ,মেয়েটা চলে গেলো ; এখন আমি আর ঐ মানুষটা ছাড়া আর  আমাদের কেউ নেই । কিন্তু কেন বলুন তো ?" অফিসার এ কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বেড়িয়ে যান ।তারপরের তিন রাত্রি ঐ একইভাবে আরও তিনটি খুন । প্রশাসন কর্তাদের কালঘাম ছুঁটে যাচ্ছে । খুনের কিনারা বা কোনো সূত্র তারা কেউ পাচ্ছেন না ।    পরপর পাঁচ রাতে পাঁচটি খুন । খুনের কিনারায় পুলিশ প্রশাসন নাজেহাল ।


৬ষ্ঠদিন রাত বারোটা ।ওসির ঘরে দরজা ভেজিয়ে খুনের কিনারা করতে জরুরী মিটিং চলছে | হঠাৎ ঘ্যাচ করে বদ্ধ দরজাটা খুলে গেলো | সবাই দরজার দিকে তাঁকালেন কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলেন না | একটা ফাঁকা চেয়ার ছিলো ,সকলেই দেখলেন চেয়ারটা একটু নড়ে উঠলো | রুমের ভিতর একটা দম বন্ধ করা পরিস্থিতি | তারপর একটা অট্টহাসি ; মনেহচ্ছে হাসির দাপটে ঘরের দেওয়াল ভেঙ্গেচুড়ে চুরমার হয়ে যাবে | হাসি আর কিছুতেই থামেনা | দুঁদে সব পুলিশ অফিসারদের মুখ শুকিয়ে কাঠ | সকলেই ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছেন | সব থেকে সাহসী অফিসার সুপ্রিয় দত্ত অজ্ঞান হয়ে টেবিলেই মাথা দিয়ে পরে আছেন | এমনিতে তিনি নির্ভিক ,কিন্তু ভুত প্রেত প্রচন্ড ভয় পান | বাকিরা তার সাহায্যে এগিয়ে আসার মত অবস্থায় নেই | সকলের হাত ,পা অসাড় হয়ে গেছে যেন | সকলেই জড়সড় হয়ে ওই ফাঁকা (?) চেয়ারটার দিকে তাকিঁয়ে | বাতাসে ভেসে আসার মত কান্না ভেঁজা কণ্ঠে তারা শুনতে পেলেন ," তোমরা এত বড় বড় অফিসার ,আমার পরে যে অত্যাচার হলো - পাঁচ পাঁচটা নরপশু আমার এই ছোট শরীরটাকে খুবলে ,ছিঁড়ে খেলো ; মৃত্যুর আগে তাদের নাম আমি বলে যাওয়ার পরও তোমরা তাদের শাস্তি দিতে পারলে না ? তাই তাদের আমি নিজের হাতে শাস্তি দিয়েছি | আমি পাঁচটা খুন করেছি ; আমাকেউ তোমরা কোনো শাস্তি দিতে পারবেনা । ওদের মেরে ফেলবার সময় আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো ,কিন্তু ওরা আমায় যে কষ্ট দিয়েছে তার কাছে ওই কষ্টটা কিচ্ছুনা | তোমরা তো প্রমান পাওনি তাই ওদের ধরোনি ; তাইতো আমি নিজে এসে প্রমান দিয়ে গেলাম ওদের আমি মেরেছি ,সেই বন্দনা ঘোষ - যে লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করে মা,বাবার মুখে খাবার জুটাতো |আমি খুব কষ্ট পেয়েছি ,ওদের পা ধরে কেঁদেছি কিন্তু ওরা শোনেনি | ওদের মেরে ফেলে দিয়ে আমি কি কোনো অন্যায় করেছি কাকু ?"  হঠাৎ অফিসার রাজেশ চৌধুরী চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে কপালে হাত ঠেকিয়ে শুন্য চেয়ারটার (?) দিকে তাকিঁয়ে একটা স্যালুট করেন | বাকি সবাই চুপ | চেয়ারটা পুনরায় নড়ে উঠলো |


নন্দা 1.2.17    ( সম্পূর্ণ একটি কাল্পনিক কাহিনী )

Wednesday, February 1, 2017


অনুকবিতা
         নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
ছোট্ট আমাদের জীবন ,
সুখ আর দুঃখ নিয়ে মেতে থাকি ,
চাহিদা অপরিসীম -
তার ফলেই যত কলহ আর অন্যায় ,
হঠাৎ করেই জীবনের পরিসমাপ্তি !
স্তদ্ধ হয়ে যায় সবকিছু ,
অমর  কেউ নয় !
অ-টাকে বাদ দিলে মর-ই হয় !
নন্দা   1.2.17  1AM.
অন্তরে আছো ( একুশে )
                    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
এখনো সাঁঝের আকাশ ,
আবীরে হয় লাল -
এখনো প্রভাতে পাখি গায় গান ;
এখনো আমি সন্ধ্যা হলে -
জানলা দিয়ে সুদীর্ঘ পথ দেখি অবিরাম |
পরদেশী তুমি ,ভুলে গেছো বুঝি ?
তাই ফিরলেনা আর !
কিশোরী মনে দোলা দিয়ে তুমি ,
হলে কেন দেশান্তর ?
জীবন কারও থেমে থাকেনা ,
থামবেনা আমারও জীবন ,
প্রথম ছোঁয়ার পরশ নিয়ে -
মনে রাখবো তোমায় আমরণ |
যখন আমি নিস্তব্ধ ঘরে -
থাকবো বসে একা ;
পড়বে মনে তোমার পরশ ,
নাইবা পেলাম এ জনমে আর দেখা |
সেদিনের সেই শিহরিত শরীর ,
পড়লে মনে আজও জাগে শিহরণ ;
ঠোঁট দু'টি তখন থরথর কাঁপে ,
বুকে ওঠে সেই একই আলোড়ন |
নন্দা  23.1.17