অবুঝ মন ( তৃতীয় অংশ ) নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
পরদিন ভোরবেলা বিপাশা ঠিক করে প্রথমে সে প্রকাশকের কাছে যাবে । সেখান থেকে সে জোগাড় কোরবে আগন্তুকের বাড়ির ঠিকানা । যে ভাবেই হোক এই লেখকের সাথে তাকে দেখা করতেই হবে ।
ভোরবেলা উঠে স্নান ,খাওয়া সেরে সে বেরিয়ে পরে কলেজ স্ট্রিটের 'মানবী' প্রকাশক সংস্থার উর্দ্দেশ্যে । অলিগলি অনেক হাঁটাহাঁটির পর সে পৌঁছায় সঠিক জায়গায় । দুপুর বারোটার আগে প্রকাশক সংস্থার মালিক আসেননা । অগত্যা বসেবসে পুরানো দিনগুলিতে ফিরে যাওয়া । ভিক্টোরিয়ায় ফুচ্কা খেতে যেয়ে টকজলটা পরে যেয়ে যে বিপাশার হলুদ শাড়িতে দাগ লেগে গেছিলো - সেটা তো তুষার ছাড়া আর কেউই জানেনা ! তাহলে লেখক আগন্তুক কিভাবে এইরূপ একটি ঘটনা তার উপন্যাসে এনে দাঁড় করলেন ? এইরূপ আরও অনেক ঘটনা যা তুষার ছাড়া আর কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয় .....। তার ভাবনায় ছেদ পরে হঠাৎ কারও কথায় --
---আপনি আমার জন্য বসে আছেন ?
---হ্যাঁ ,আমি এই প্রকাশক সংস্থার মালিকের সাথে একটু কথা বলতে চাই । ---হ্যাঁ ,আমিই মালিক । বলুন আপনি কি জানতে চান ? ---আপনার এখন থেকে লেখক আগন্তুকের সব লেখা ছাপা হয় । আপনি যদি দয়া করে তার ঠিকানাটা আমায় দেন ,তাহলে খুব উপকৃত হবো । ---কিন্তু এইভাবে অনুমতি ছাড়া আমরা কোনো লেখকের ঠিকানা দিতে পারিনা । অনেক কাকুতি ,মিনতি ,অনুনয়বিনয় শেষে নিজের দুটি হাত জড়ো করে লেখক আগন্তুকের ঠিকানা মিললো বিপাশারকলেজ স্ট্রীট থেকে বেশি দূরে নয় । তবুও তাড়াতাড়ির জন্য বিপাশা একটি টাক্সিই নিলো । প্রকান্ড এক বাড়ির সামনে এসে ট্যাক্সি দাঁড়ালো । বাইরে থেকে বাড়িটাকে দেখে মনে হচ্ছে একটি বিশাল বাংলো । লেখকবাবু বাড়িতে আছেন কিনা জানতে চাওয়ায় দাড়োয়ান মাথা নাড়িয়ে 'হ্যাঁ' বলে একটা কাগজের চিরকুট হাতে ধরিয়ে দিলো বিপাশার । বিপাশা নিজের নাম আর বাবার পদবীটা লিখে দাড়োয়ানকে চিরকুটটা ফেরৎ দিল । খানিক বাদে ফিরে এসে বিপাশাকে সঙ্গে নিয়েই লেখকবাবুর ঘর দেখিয়ে দিলো । বাড়ির সামনে এসে যখন ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়েছিলো তখন বিপাশা দেখে গেটের কাছেই প্রাচীরের গায়ে শ্বেতপাথরের উপর কালো রঙ্গে লেখা বাড়ির নাম 'প্রতীক্ষা' ।
বিপাশা এসে পর্দা সরাতেই অপর প্রান্ত থেকে গলা ভেসে এলো ,
---পদবীটা ভুল আছে ;ওটা মিত্র হবে । দাস পদবীটা সাতাশ বছর আগেকার । পদবীটা না লিখলেও শুধু নামেই আমার চিনতে কোনো অসুবিধা হতনা । . বিপাশা পর্দা ধরে সেখানেই দাঁড়িয়ে । হাঁটতেই যেনো সে ভুলে গেছে । "তুষার - তূষার বেঁচে আছে?" নিজেকেই নিজে বিপাশা প্রশ্ন করে । তার গলা দিয়ে কোনো স্বর বের হয়না । এতগুলো বছর বাদেও তুষারের গলা চিনতে বিপাশার বিন্দুমাত্র ভুল হয়না । বিপাশা ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে দেখে তুষার এগিয়ে এসে বিপাশাকে বলে ," কি হলো ? ভিতরে এসো ।" তুষারের কথাগুলি এতটাই স্বাভাবিক লাগে বিপাশার যেন রোজ তার সাথে বিপাশার দেখা হয় ,কথা হয় । বিপাশা আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় । মুহূর্তে তার মাথাটা ঘুরে যায় । তুষার তাকে ধরতে গেলে সে নিজেকে সামলে নেয় । তুষার একগ্লাস জল তার হাতে ধরিয়ে দেয় । গ্লাসটা হাতে ধরেই বিপাশা বসে থাকে ; যেন কিভাবে জল খেতে হয় তা পর্যন্ত সে ভুলে গেছে । তুষার খুব আস্তে করে বলে,"জলটা খেয়ে নাও ।"
বেশ কিছুক্ষন দুজনেই চুপচাপ থাকার পর নীরবতা ভেঙ্গে বিপাশায় তুষারকে জিজ্ঞাসা করে ,
---কেন করলে আমার সাথে এরকম ?
--- কোনো উপায় ছিলোনা । যে পিসিমার কাছে আমি থাকতাম সেই পিসীমার ছেলে সুখেন্দু । প্রথমদিন পরীক্ষা দিয়ে যখন নিজের ঘরে ফিরি ; তখন পিসীমা একটি ছবি এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন ,' এই মেয়েটার সাথে সুখেন্দুর বিয়ে ঠিক করছি ,দেখতো মেয়েটা দেখতে কেমন ?' ছবিটার দিকে তাঁকিয়ে দেখি তোমার ছবি । মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো তখন । সুখেন্দু তখন সবে চাকরী পেয়েছে ,ভালো চাকরি ,উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ । কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না । খুব ভালো ছেলে সে । প্রায় সমবয়সী আমরা । মনকে শান্তনা দিলাম - তোমায় যখন ভালোবাসি ,তোমার সুখই আমার সুখ । সুখেন্দুর সাথে বিয়ে হলে তুমি খুব সুখী হবে । তাই তোমার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হলাম । সত্যি বলোতো সেই মুহুর্তে আমার আর কি করার ছিল ? আমি তখন বেকার ,এদিকে তোমার বাড়িতে বিয়ের সম্মন্ধ দেখছেন । আমার স্বল্প বুদ্ধিতে মনে হয়েছিলো যেহেতু আমি তোমায় ভালোবাসি ; তুমি সুখী হলেই আমি ভালো থাকবো ।"
---আর আমার ভালোবাসা ? তার কোনো মূল্যই তো দিলেনা ?
--- তুষার চুপ করে বসে থাকে । বিপাশা তাকে আবারও একই প্রশ্ন করে ।
নন্দা ( শেষ অংশ কাল )
পরদিন ভোরবেলা বিপাশা ঠিক করে প্রথমে সে প্রকাশকের কাছে যাবে । সেখান থেকে সে জোগাড় কোরবে আগন্তুকের বাড়ির ঠিকানা । যে ভাবেই হোক এই লেখকের সাথে তাকে দেখা করতেই হবে ।
ভোরবেলা উঠে স্নান ,খাওয়া সেরে সে বেরিয়ে পরে কলেজ স্ট্রিটের 'মানবী' প্রকাশক সংস্থার উর্দ্দেশ্যে । অলিগলি অনেক হাঁটাহাঁটির পর সে পৌঁছায় সঠিক জায়গায় । দুপুর বারোটার আগে প্রকাশক সংস্থার মালিক আসেননা । অগত্যা বসেবসে পুরানো দিনগুলিতে ফিরে যাওয়া । ভিক্টোরিয়ায় ফুচ্কা খেতে যেয়ে টকজলটা পরে যেয়ে যে বিপাশার হলুদ শাড়িতে দাগ লেগে গেছিলো - সেটা তো তুষার ছাড়া আর কেউই জানেনা ! তাহলে লেখক আগন্তুক কিভাবে এইরূপ একটি ঘটনা তার উপন্যাসে এনে দাঁড় করলেন ? এইরূপ আরও অনেক ঘটনা যা তুষার ছাড়া আর কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয় .....। তার ভাবনায় ছেদ পরে হঠাৎ কারও কথায় --
---আপনি আমার জন্য বসে আছেন ?
---হ্যাঁ ,আমি এই প্রকাশক সংস্থার মালিকের সাথে একটু কথা বলতে চাই । ---হ্যাঁ ,আমিই মালিক । বলুন আপনি কি জানতে চান ? ---আপনার এখন থেকে লেখক আগন্তুকের সব লেখা ছাপা হয় । আপনি যদি দয়া করে তার ঠিকানাটা আমায় দেন ,তাহলে খুব উপকৃত হবো । ---কিন্তু এইভাবে অনুমতি ছাড়া আমরা কোনো লেখকের ঠিকানা দিতে পারিনা । অনেক কাকুতি ,মিনতি ,অনুনয়বিনয় শেষে নিজের দুটি হাত জড়ো করে লেখক আগন্তুকের ঠিকানা মিললো বিপাশারকলেজ স্ট্রীট থেকে বেশি দূরে নয় । তবুও তাড়াতাড়ির জন্য বিপাশা একটি টাক্সিই নিলো । প্রকান্ড এক বাড়ির সামনে এসে ট্যাক্সি দাঁড়ালো । বাইরে থেকে বাড়িটাকে দেখে মনে হচ্ছে একটি বিশাল বাংলো । লেখকবাবু বাড়িতে আছেন কিনা জানতে চাওয়ায় দাড়োয়ান মাথা নাড়িয়ে 'হ্যাঁ' বলে একটা কাগজের চিরকুট হাতে ধরিয়ে দিলো বিপাশার । বিপাশা নিজের নাম আর বাবার পদবীটা লিখে দাড়োয়ানকে চিরকুটটা ফেরৎ দিল । খানিক বাদে ফিরে এসে বিপাশাকে সঙ্গে নিয়েই লেখকবাবুর ঘর দেখিয়ে দিলো । বাড়ির সামনে এসে যখন ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়েছিলো তখন বিপাশা দেখে গেটের কাছেই প্রাচীরের গায়ে শ্বেতপাথরের উপর কালো রঙ্গে লেখা বাড়ির নাম 'প্রতীক্ষা' ।
বিপাশা এসে পর্দা সরাতেই অপর প্রান্ত থেকে গলা ভেসে এলো ,
---পদবীটা ভুল আছে ;ওটা মিত্র হবে । দাস পদবীটা সাতাশ বছর আগেকার । পদবীটা না লিখলেও শুধু নামেই আমার চিনতে কোনো অসুবিধা হতনা । . বিপাশা পর্দা ধরে সেখানেই দাঁড়িয়ে । হাঁটতেই যেনো সে ভুলে গেছে । "তুষার - তূষার বেঁচে আছে?" নিজেকেই নিজে বিপাশা প্রশ্ন করে । তার গলা দিয়ে কোনো স্বর বের হয়না । এতগুলো বছর বাদেও তুষারের গলা চিনতে বিপাশার বিন্দুমাত্র ভুল হয়না । বিপাশা ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে দেখে তুষার এগিয়ে এসে বিপাশাকে বলে ," কি হলো ? ভিতরে এসো ।" তুষারের কথাগুলি এতটাই স্বাভাবিক লাগে বিপাশার যেন রোজ তার সাথে বিপাশার দেখা হয় ,কথা হয় । বিপাশা আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় । মুহূর্তে তার মাথাটা ঘুরে যায় । তুষার তাকে ধরতে গেলে সে নিজেকে সামলে নেয় । তুষার একগ্লাস জল তার হাতে ধরিয়ে দেয় । গ্লাসটা হাতে ধরেই বিপাশা বসে থাকে ; যেন কিভাবে জল খেতে হয় তা পর্যন্ত সে ভুলে গেছে । তুষার খুব আস্তে করে বলে,"জলটা খেয়ে নাও ।"
বেশ কিছুক্ষন দুজনেই চুপচাপ থাকার পর নীরবতা ভেঙ্গে বিপাশায় তুষারকে জিজ্ঞাসা করে ,
---কেন করলে আমার সাথে এরকম ?
--- কোনো উপায় ছিলোনা । যে পিসিমার কাছে আমি থাকতাম সেই পিসীমার ছেলে সুখেন্দু । প্রথমদিন পরীক্ষা দিয়ে যখন নিজের ঘরে ফিরি ; তখন পিসীমা একটি ছবি এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন ,' এই মেয়েটার সাথে সুখেন্দুর বিয়ে ঠিক করছি ,দেখতো মেয়েটা দেখতে কেমন ?' ছবিটার দিকে তাঁকিয়ে দেখি তোমার ছবি । মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো তখন । সুখেন্দু তখন সবে চাকরী পেয়েছে ,ভালো চাকরি ,উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ । কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না । খুব ভালো ছেলে সে । প্রায় সমবয়সী আমরা । মনকে শান্তনা দিলাম - তোমায় যখন ভালোবাসি ,তোমার সুখই আমার সুখ । সুখেন্দুর সাথে বিয়ে হলে তুমি খুব সুখী হবে । তাই তোমার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হলাম । সত্যি বলোতো সেই মুহুর্তে আমার আর কি করার ছিল ? আমি তখন বেকার ,এদিকে তোমার বাড়িতে বিয়ের সম্মন্ধ দেখছেন । আমার স্বল্প বুদ্ধিতে মনে হয়েছিলো যেহেতু আমি তোমায় ভালোবাসি ; তুমি সুখী হলেই আমি ভালো থাকবো ।"
---আর আমার ভালোবাসা ? তার কোনো মূল্যই তো দিলেনা ?
--- তুষার চুপ করে বসে থাকে । বিপাশা তাকে আবারও একই প্রশ্ন করে ।
নন্দা ( শেষ অংশ কাল )