Saturday, June 30, 2018
ভুল করি
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
মানুষ চিনতে পারিনা,
বারবার ভুল করি।
কেউ একটু ভালো কথা বললেই-
তাকে আপন ভেবে ভালোবাসি।
আসলে মানুষের মত দেখতে সবাই,
কিন্তু অধিকাংশই মানুষ নয়।
মুখ ও মুখোশের পার্থক্যটা-
আমি সত্যিই বুঝতে পারিনা।
এই ভুল করাটা এতটাই-
আমার মনে প্রভাব ফেলে-
চা হয়ে যায় নোনতা আর তরকারিটা মিষ্টি,
তবুও মানুষের আদলে গড়া-
মানুষগুলিকে মন থেকেই ভালোবেসে ফেলি।
বারবার ভুল করি,মুখোশটা খুলে গেলে-
তাই আঘাতটা পাই বেশি।
#নন্দা ২৯-৬-১৮ রাত ১০-৪৫
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
মানুষ চিনতে পারিনা,
বারবার ভুল করি।
কেউ একটু ভালো কথা বললেই-
তাকে আপন ভেবে ভালোবাসি।
আসলে মানুষের মত দেখতে সবাই,
কিন্তু অধিকাংশই মানুষ নয়।
মুখ ও মুখোশের পার্থক্যটা-
আমি সত্যিই বুঝতে পারিনা।
এই ভুল করাটা এতটাই-
আমার মনে প্রভাব ফেলে-
চা হয়ে যায় নোনতা আর তরকারিটা মিষ্টি,
তবুও মানুষের আদলে গড়া-
মানুষগুলিকে মন থেকেই ভালোবেসে ফেলি।
বারবার ভুল করি,মুখোশটা খুলে গেলে-
তাই আঘাতটা পাই বেশি।
#নন্দা ২৯-৬-১৮ রাত ১০-৪৫
Friday, June 29, 2018
Thursday, June 28, 2018
বন্ধু প্রীতি
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
আজ কিছুদিন ধরেই সায়নী লক্ষ্য করছে দেবেশ একটু অন্যমনস্ক।অফিস থেকে ফিরেও রাত করে।আগে অফিস থেকে ফিরে টিফিন করে সায়নী ও তাদের তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে সময় কাটাতো।আর এখন এতটাই রাত করে ফেরে টিফিন করার আর প্রয়োজন হয়না,এসে ফ্রেস হয়েই ডিনার সেরে ঘুমিয়ে পড়ে।তাদের মেয়ে শ্রেয়া এখন আর বাবাকে কাছে পায়না বললেই হয়।যেহেতু নিজের থেকে দেবেশ তাকে কিছু বলেনা, শান্ত স্বভাবের সায়নীও কখনোই দেবেশকে কিছু জিজ্ঞাসা করেনা।
অত্যন্ত গরীব ঘরের মেয়ে সায়নী। অনেক কষ্টে বাবা তাকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করিয়েছেন।রূপে-গুনে সে অতুলনীয়া।দেবেশের বাবার এক বন্ধু ও সায়নীর বাবার এক বন্ধুর যৌথ উদ্দোগে এই বিয়ের সম্মন্ধ।দেবেশের মা ছাড়া সংসারে আর কেউই নেই।তিনিও খুব একটা সুস্থ্য নন।বাবা সরকারী চাকরী থেকে রিটায়ার করার পর বছর দুয়েক বেঁচে ছিলেন।শ্বাসকষ্ট জনিত কারনে দুটি লাঞ্চই তার ব্লক হয়ে গেছিল।এমতাবস্থায় বহুদিন নার্সিংহোমে ভেন্টিলেশনে ছিলেন।উনি রিটায়ার করার অনেক আগেই দেবেশ ব্যাংকে চাকরী পেয়ে গেছিলো।রিটায়ার করে যা পেয়েছিলেন তার পুরোটাই খরচ হয়ে যায় নার্সিংহোমের খরচ দিতে।স্বামীর বন্ধু মাঝে মাঝে আসতেন দেবেশ ও তার মায়ের খবর নিতে।তাকেই একদিন আশাপূর্ণাদেবী বলেছিলেন দেবেশের জন্য একটি ভালো পাত্রীর ব্যবস্থা করতে।কারন তার শরীর মোটেই ভালোনা;তিনি চলে যাওয়ার আগে দেবেশকে সংসারী দেখে যেতে চান
মেয়ে দেখতে যেয়ে মা,ছেলের দু'জনেরই সায়নীকে খুব পছন্দ হয়।সায়নী তো পছন্দ হবার মতই মেয়ে।সেদিনই তিনি বিয়ের যাবতীয় কথাবার্তা পাকা করে যান।সায়নীদের আর্থিক অবস্থা যেহেতু মোটেই ভালো নয় সেইহেতু তিনি এক বস্ত্রে ছেলের বৌকে বরণ করবেন কথা দিয়ে যান।কিন্তু একমাত্র মেয়ে তার উপর মা হারা,হরিহরবাবু সাধ্যের অতীত করেন তার সানুর বিয়েতে।
বুদ্ধিমতী,ধীর, শান্ত স্বভাবের সায়নী শ্বশুর বাড়িতে এসেই সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেয়।শ্বাশুড়ীমায়ের সেবা-যত্নেরও কোন ত্রুটি সে রাখেনা।শুধু একটি কাজ আশাপুর্ণা দেবীর জন্য সংসারে বরাদ্ধছিলো;দু'বেলা খাওয়ার সময় তাকে এসে ছেলের সামনে বসতে হত।আর ছুটির দিনে তো তিনবেলায়।এ নিয়ে তিনি দেবেশকে অনেক বুঝিয়েছেন।কিন্তু ছেলের ওই এক গো!ছেলেবেলা থেকে তুমি খাবার সময় সামনে না বসে থাকলে আমি কোন খাবারে স্বাদ পাইনা।আজীবন এটা তোমাকে করতেই হবে।সায়নীর অবশ্য এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই।সেও তার কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসে মা,ছেলের গল্পের মধ্যে যোগ দেয়।আর দেবেশ অফিস থেকে ফিরলে এক সাথে চা খাওয়া,হালকা টিফিন করা আবার রাতে একসাথেই খেতে বসা।আনন্দ, হাসির মধ্য দিয়ে দিনগুলি কোথা দিয়ে যেন কেটে যাচ্ছিল হু-হু করে।এক বছর যেতে না যেতেই কোল আলো করে সায়নীর জীবনে আসে শ্রেয়া।শ্রেয়ার সবকিছু তার ঠাকুমার হাতে।শুধু তাকে খাওয়ানোটা ছাড়া।আশাপুর্ণাদেবী বলেন,"শোন বৌমা,তুমি তোমার সংসার সামলাও আর আমি আমার নাতনীকে সামলাই।কিছুই তো আমায় করতে দাওনা।বসে বসে আমার হাতপায়ে কড়া ধরে গেলো"।
সময় যেন ঝড়ের গতিতে এগিয়ে চলছে।সুখের দিনগুলি হয়তো এভাবেই ধাবমান।মেয়ের যখন আড়াই বছর বয়স তখন একদিন রাতে ঘুমের মধ্যেই স্ট্রোক করে আশপুর্ণাদেবী মারা যান।দেবেশ ভীষনভাবে ভেঙ্গে পড়ে।সময়ের সাথে সাথে আর সায়নীর সর্বদা সঙ্গ দেওয়া, হাসি খুশির মধ্যে রাখার চেষ্টা করার ফলে দেবেশ আস্তে আস্তে তার মাকে হারানোর শোক কিছুটা সামলে ওঠে।এরপর মাসতিনেক সব ঠিকঠাক থাকে।
তারপরেই দেবেশের ভিতর এই পরিবর্তন।প্রতিদিন সায়নী ভাবে আজ নিশ্চয়ই দেবেশ তাকে কিছু বলবে।কিন্তু দেবেশ, সায়নীকে কিছুই বলেনা।আস্তে আস্তে দেবেশ ও সায়নীর ভিতর বিরাট এক ফারাক তৈরি হয়।পৃথিবীতে সায়নীর নিজের বলতে আর কেউই নেই।বাবা দু'বছর হোল গত হয়েছেন।ছোট্ট বাড়িটা তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।এ জীবন তার কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছে।নিজেকে মাঝে মাঝে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করে।কিন্তু শ্রেয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে তাও পারেনা।
ছেলেবেলায় দেবেশের প্রাণপ্রিয় বন্ধু ছিলো অশোক।খুবই গরীব ঘরের সন্তান অশোক।কিন্তু পড়াশুনায় ছিলো তুখোড়।উচ্চমাধ্যমিকে ৮৫%নম্বর নিয়ে পাশ করে যখন অর্থের অভাবে পড়া বন্ধ করে দেবে ভেবেছিল তখন দেবেশের বাবার হস্তক্ষেপে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার নিয়ে পড়াশুনা শুরু করে কোর্স শেষ হওয়ার আগেই চাকরী পাকা হয়ে থাকে।পরবর্তীতে আমেরিকায় চাকরির সুবাদে সেটেল্ড হয়।একমাত্র বৃদ্ধা মাকে সে সাথে করেই নিয়ে যায়।সেখানে এক বাঙ্গালী পরিবারের সাথে দেবেশদের খুব ঘনিষ্টতা হয়।এবং সেই পরিবারের সুন্দরী,শিক্ষিতা ও চাকুরীরতা মেয়েকে সে বিয়ে করে।অশোকের স্ত্রীর সাথে তার মায়ের বনিবনা ছিলোনা।সর্বদায় একটা ঝামেলা লেগেই থাকতো।একদিন অফিসে থাকাকালীন সময়ে তার স্ত্রী মধুরিমা তাকে জানায় যে তার শ্বাশুড়ীমা সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পরে গেছেন।উদভ্রান্তের মত মা অন্তপ্রান ছেলে বাড়িতে এসে দেখে সব শেষ।প্রথম অবস্থাতে সে এই ঘটনাকে এ্যাকসিডেন্ট হিসাবেই মেনে নেয়।কিন্তু দিন যতই এগিয়ে যেতে থাকে তার মনে বদ্ধমূল এক ধারনা জম্মায় যে মধুরিমা ইচ্ছাকৃত তার মাকে সিঁড়ি দিয়ে ধাক্কা মেরে নীচুতে ফেলে দিয়েছে আর তার ফলেই তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে।মায়ের প্রতি অন্ধ ভালোবাসার বসে সে হয়ে ওঠে প্রতিহিংসাপরায়ন।আস্তে আস্তে সে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে যেতে শুরু করে।
রোজ রাতে ঘুমানোর সময় মধুরিমা স্লিপিং ট্যাবলেট খেতো।অশোক বেশি ডোজের ওষুধ কিনে এনে ওই পাত্রে রেখে দেয়।তারপর একরাতে মধুরিমার ঘুমের মধ্যে তাকে গলা টিপে মেরে ফেলে সেই রাতেই সে ফ্লাইট ধরে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়;যার ব্যবস্থা সে অনেক আগে থাকতেই করে রেখেছিলো।কলকাতা পৌঁছে সে পাগলের মত রাস্তা-ঘাটে এদিকে ওদিকে ঘুরে বেরিয়েছে।থাকার কোন সংস্থান নেই, পকেটেও বিশেষ টাকা নেই।তখন অশোক অনেকটাই ভারসাম্যহীন।হঠাৎই দেবেশ একদিন তাকে আবিষ্কার করে ফুটপাতে একটি চায়ের দোকানে বেঞ্চের উপর।অসংলগ্ন কথাবার্তা শুধু নয় দেবেশকে সে চিনতেও পারেনা।দেবেশ জোড় করে অশোককে নিয়ে সোজা পরিচিত এক সাইকিয়াট্রিষ্টের কাছে ।দেবেশ ওই ডাক্তারের আন্ডারে একটি এ্যাসাইলামে সেদিনই অশোককে ভর্তি করে। সেখানেই চিকিৎসা হতে হতে একসময় অশোক সমস্ত ঘটনা ডাক্তারবাবুকে খুলে বলে।
এদিকে দেবেশ সমস্ত ঘটনা স্ত্রী সায়নীর কাছে চেপে যায়।অশোক এতটাই উন্মাদ প্রকৃতির হয়ে গেছিলো যে তাকে পাগলাগারদের আলাদা একটি ঘরে দরজা বন্ধ করে রাখতে হয়েছিলো।কাউকে দেখলেই বিশেষত সে কোন মহিলাকে সহ্য করতে পারতোনা।দেখার সাথে সাথেই সে তার গলা টিপে ধরতে যেত।অথচ কোন বৃদ্ধাকে দেখলে তার পা দু'টি ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতো।দেবেশের মনে হয়েছিলো সায়নীকে জানালে সে ভয় পেয়ে দেবেশকে আর অশোকের কাছে আসতে দেবেনা।ডাক্তার বলেছিলেন অশোক কিছুদিনের মধ্যেই সুস্থ্য হয়ে যাবে।দেবেশও ভেবেছিলো একটু সুস্থ্য হলেই সে তার স্ত্রীকে সব জানাবে। তাই এই ব্যপারটা সে পুরোপুরি সায়নীর কাছে লুকিয়ে যায়।
রোজ অফিস ছুটির পর দেবেশ নিয়ম করে অশোককে দেখতে যেত।বেশ কয়েক মাস এভাবে চলার পর অশোক তখন অনেকটাই সুস্থ্য বন্ধুকে চিনতেও পেরেছে।কিন্তু দেবেশ লক্ষ্য করে অশোকের ভিতর সবসময় একটা ভয় কাজ করে।অনুশোচনায় দগ্ধও হয় একজন মানুষের হত্যাকারী হিসাবে।
অশোক আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে থাকে।দেবেশ ঠিক করে যে সে এবার সবকিছু সায়নীকে জানাবে।সেদিন অফিস থেকে দেবেশ একটু তাড়াতাড়িই বেরোয়।না, আজ অশোকের কাছে নয়;বাড়িতে ফিরে সে সমস্ত ঘটনা সায়নীকে খুলে বলবে। হঠাৎ একটি ফোন এ্যাসাইলাম থেকে।
বিনাকারনে দেবেশের এই অবহেলা সহ্যসীমা অতিক্রম করে সায়নীর।সে মনস্থির করে মেয়েকে নিয়ে সে বাবার বাড়িতেই ফিরে যাবে।যেভাবেই হোক কটা টিউশনি সে জোগাড় করে নেবে।সায়নীর সবসময়ই মনে হচ্ছে দেবেশ কিছু একটা লুকাচ্ছে তার কাছ থেকে।যদি সে অন্য কোন মেয়েকে নিয়ে সুখি হতে চায়,তার জীবনে যদি সত্যিই অন্য কেউ এসে থাকে তাহলে ওদের দু'জনের মাঝখানে প্রাচীর হয়ে সে দাঁড়াবেনা।সে তার ও মেয়ের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে গুছিয়ে ফেলে।সন্ধ্যার পর থেকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাপের বাড়ির চাবিটা পেয়ে তার পার্সে রাখে।বাবার দেওয়া গয়নাগুলিও ব্যাগে রাখে।এই গয়না বিক্রি করেই তো তাকে কিছুদিন চালাতে হবে টিউশনি বা অন্য কোন উপায়ে কিছু রোজগার না করা পর্যন্ত।কিন্তু আজ যেন দেবেশ আরও বেশি দেরি করছে।রাত একটা বাজতে চললো এখনও দেবেশের দেখা নেই।সকাল হলেই সে তার মেয়ে শ্রেয়াকে নিয়ে বেরিয়ে পড়বে।দেবেশের এই বদল আসার পরে বহুদিন হোল সে অভিমান করে তাকে ফোন করাও বন্ধ করে দিয়েছে।
এত রাতে সায়নীর ফোনটা বেজে ওঠায় সে একটু অবাকই হয়।ফোনটা তুলে দেখে তার ছেলেবেলার বন্ধু অপর্ণার ফোন।
---এত রাতে কি ব্যপার?কেমন আছিস?
---আমি জানতাম তুই জেগে আছিস।
---কি করে জানলি?
---আরে দেবেশদাই তো এই মাত্র শ্মশান থেকে বেরোল।
---শ্মশানে দেবেশ কি করতে গেছে?কে মারা গেছে?
---দেবেশদা বাড়িতে পৌঁছালে তুই সব জানতে পারবি।
---দেবেশদার এক বন্ধু সুইসাইড করেছে।মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন।সে অনেক কথা।বাড়িতে যেয়ে সব সেই তোকে বলবে,কিন্তু তুই দেবেশদাকে ভুল বুঝিসনা।ছেলেবেলার বন্ধুর প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য অস্বীকার করতে পারেনি।তোকে যে কোন কারনেই হোক ভয়ে কিছু বলতেও পারেনি।আর এর ফলে তোদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছেও বললো।
---আমি তোর কথা কিছু বুঝতে পারছিনা।তুই কি করে এসব জানলি?
---তুই তো জানিস আমি কে.এম.সি.তে চাকরী পেয়েছি।আজ বার্নিংঘাটে আমার ডিউটি ছিলো।সেখানেই দেবেশদার মুখে সব শুনি।মানুষটা খুব ভেঙ্গে পড়েছে বন্ধুকে হারিয়ে।এখন তোর সঙ্গ মানুষটার খুব দরকার রে!এখন রাখি, আবার একটা বডি এসছে।একদিন যাবো তোর ওখানে।
সায়নী ফোন রেখে সাতপাঁচ ভাবতে লাগে।হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে ওঠে।ভোরের আলো তখন একটু একটু করে উঁকি দিচ্ছে।সায়নী তার গুছানো ব্যাগটা খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে দরজা খুলতে এগিয়ে যায়।
(শেষ)
Monday, June 25, 2018
তবুও বেঁচে আছি
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
জীবনে যে অন্ধকার নেমে এসেছে,
সূর্য্য আর সেখানে কোনদিন উঠবেনা!
কত কষ্ট,কত বেদনা জমা এ বুকে,
উজাড় করে বলার লোক আর নেই,
কি অভিমানে অসময়ে চলে গেলে?
কত স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে গেলো,
হয়নি শেষ ছেলের উচ্চশিক্ষা,
আসেনি নূতন অতিথি মেয়ের ঘরে,
এত কিসের তাড়া ছিলো তোমার?
এমন তো কথা ছিলোনা!
বিধাতা বড্ড পাষান-
একবারও তিনি ভাবলেননা -
তুমি ছাড়া আমরা কত অসহায়!
শুনেছি,বহু পূণ্যের ফলে মানবজনম হয়,
কিন্তু প্রিয়জনকে হারানো?
চরম সত্যটা কোন পাপে হয়?
তিনি আমাদের সব চেষ্টা নরসাৎ করে-
আমাদের কাছ থেকে তোমায় কেড়ে নিলেন,
কেড়ে নিলেন আমার সুখ, আনন্দ আর খুশি!
সময়ের সাথে জীবনও এগিয়ে চলছে,
আমি বেঁচে আছি।
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
জীবনে যে অন্ধকার নেমে এসেছে,
সূর্য্য আর সেখানে কোনদিন উঠবেনা!
কত কষ্ট,কত বেদনা জমা এ বুকে,
উজাড় করে বলার লোক আর নেই,
কি অভিমানে অসময়ে চলে গেলে?
কত স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে গেলো,
হয়নি শেষ ছেলের উচ্চশিক্ষা,
আসেনি নূতন অতিথি মেয়ের ঘরে,
এত কিসের তাড়া ছিলো তোমার?
এমন তো কথা ছিলোনা!
বিধাতা বড্ড পাষান-
একবারও তিনি ভাবলেননা -
তুমি ছাড়া আমরা কত অসহায়!
শুনেছি,বহু পূণ্যের ফলে মানবজনম হয়,
কিন্তু প্রিয়জনকে হারানো?
চরম সত্যটা কোন পাপে হয়?
তিনি আমাদের সব চেষ্টা নরসাৎ করে-
আমাদের কাছ থেকে তোমায় কেড়ে নিলেন,
কেড়ে নিলেন আমার সুখ, আনন্দ আর খুশি!
সময়ের সাথে জীবনও এগিয়ে চলছে,
আমি বেঁচে আছি।
Sunday, June 24, 2018
সময় বাঁধা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
চেয়েছিলাম আকাশ ছুঁতে,
দিলেনা সঙ্গ আমায়,
তারা হলে রাতের আকাশে,
স্বপন আজ মেঘে ভাসে।
বুকের ব্যথায় অশ্রু ঝরে,
স্বপ্ন ভেজে বরিষণে।
জানলার পাশে একাকী,
তারাদের মাঝে তোমায় দেখি।
ইচ্ছে করে আমিও হই তারা,
তোমার মতই অন্যকে দিই ফাঁকি।
তোমার কাছে একটু বসি,
তোমার সাথেই কাঁদি-হাসি।
#নন্দা ৩০-১১-১৭
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
চেয়েছিলাম আকাশ ছুঁতে,
দিলেনা সঙ্গ আমায়,
তারা হলে রাতের আকাশে,
স্বপন আজ মেঘে ভাসে।
বুকের ব্যথায় অশ্রু ঝরে,
স্বপ্ন ভেজে বরিষণে।
জানলার পাশে একাকী,
তারাদের মাঝে তোমায় দেখি।
ইচ্ছে করে আমিও হই তারা,
তোমার মতই অন্যকে দিই ফাঁকি।
তোমার কাছে একটু বসি,
তোমার সাথেই কাঁদি-হাসি।
#নন্দা ৩০-১১-১৭
Friday, June 22, 2018
ধর্ষন কি শুধু শারীরিকই হয়?
অশ্রিল ইঙ্গিতে নয়?
শারীরিক ধর্ষন হলেই দেখি
কলম লেখকের গর্জে ওঠে!
অনেক সময় পথেও নামেন।
কিন্তু অদ্ভুতভাবে দেখছি মানসিক ধর্ষনকারীকে সেই সব মানুষই-
কলমের সাহায্যেই আড়ালে রেখে চলেছে।
এটাই কি রীতি?
যেখানে অর্থ সেখানে অপরাধীর
সব দোষ মাফ!
যতক্ষন না নিজের ঘরে আগুন লাগে-
ততক্ষন অন্যের ঘরের আগুনের
লেলিহান শিখা ওরা দেখতে পায়না?
তবে কি সাহিত্যিকের কলমের ভাষা
আর মনের কথার বিস্তর ফারাক?
#নন্দা
অশ্রিল ইঙ্গিতে নয়?
শারীরিক ধর্ষন হলেই দেখি
কলম লেখকের গর্জে ওঠে!
অনেক সময় পথেও নামেন।
কিন্তু অদ্ভুতভাবে দেখছি মানসিক ধর্ষনকারীকে সেই সব মানুষই-
কলমের সাহায্যেই আড়ালে রেখে চলেছে।
এটাই কি রীতি?
যেখানে অর্থ সেখানে অপরাধীর
সব দোষ মাফ!
যতক্ষন না নিজের ঘরে আগুন লাগে-
ততক্ষন অন্যের ঘরের আগুনের
লেলিহান শিখা ওরা দেখতে পায়না?
তবে কি সাহিত্যিকের কলমের ভাষা
আর মনের কথার বিস্তর ফারাক?
#নন্দা
Thursday, June 21, 2018
কল্পনা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
অজস্র লোকের ভিড়ে,
তোমায় দেখি কল্পনাতে,
পাশেই যেন চলো তুমি,
সঙ্গী হয়েই থাকো সাথে।
সমস্ত কল্পনা জুড়ে-
যে মানুষটার বাস,
তাকে চোখ বুজে অনুভব করতে হয়,
যায়না তাকে ছোঁয়া অনুভবে পরশ পাই।
শিউলিতলায় কুয়াশা ঝরা সকালে,
তার গায়ের গন্ধ ভেসে আসে।
শীতের লেপ গায়ে জড়িয়ে তার ছোঁয়া পাই,
ব্যালকনিতে বসে বৃষ্টির ছোঁয়ায় শিহরিত হই,
আবেগে চোখ দু'টি বুজে আসে;
মনেহয় সে যেন পাশেই আছে।
ভাবনার জাল যখন ছিড়ে যায়,
বৃষ্টির জল, চোখের জল এক হয়।
#নন্দা ২১-৬-১৮ রাত ১-৫০
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
অজস্র লোকের ভিড়ে,
তোমায় দেখি কল্পনাতে,
পাশেই যেন চলো তুমি,
সঙ্গী হয়েই থাকো সাথে।
সমস্ত কল্পনা জুড়ে-
যে মানুষটার বাস,
তাকে চোখ বুজে অনুভব করতে হয়,
যায়না তাকে ছোঁয়া অনুভবে পরশ পাই।
শিউলিতলায় কুয়াশা ঝরা সকালে,
তার গায়ের গন্ধ ভেসে আসে।
শীতের লেপ গায়ে জড়িয়ে তার ছোঁয়া পাই,
ব্যালকনিতে বসে বৃষ্টির ছোঁয়ায় শিহরিত হই,
আবেগে চোখ দু'টি বুজে আসে;
মনেহয় সে যেন পাশেই আছে।
ভাবনার জাল যখন ছিড়ে যায়,
বৃষ্টির জল, চোখের জল এক হয়।
#নন্দা ২১-৬-১৮ রাত ১-৫০
Sunday, June 17, 2018
বাবা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
চলে গেছো তুমি,
বহু যুগ আগে,
আজও আছো অন্তরে,
মনের ঘরে রয়েছে আসন,
আজও পাতা-তোমার তরে।
তোমার জন্য আলাদা করে,
হয়নাকো কোন দিন,
জম্ম থেকে আজ অবধি,
রয়েছ মনে-হয়ে অমলিন।
খুব কি তাড়া ছিলো তোমার বাবা?
তাই এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে চলে গেলে?
তুমি বিনা আমরা যে অসহায়!
একবারও তুমি ভাবলেনা কেন হায়!
তোমার দেখানো পথেই হাঁটি,
নোয়ায় না অন্যায়ের কাছে মাথা,
বিশ্বাসঘাতকে সাজা দিতে,
আর আসোনা কেন বাবা?
সশরীরে থাকতে পাশে যদি,
পেতামনা আজ এত কষ্ট,
আমার স্বপ্ন চুরি করে,
করলো ওরা সব নষ্ট।
গণিত,ইংরাজী আজও যা জানি,
সেতো তোমারই দান,
সশরীরে না থেকে অনুভবে থাকো,
সৎভাবে চলি,তাও তোমারই অবদান,
ফিরে এসো বাবা আর একটিবার,
দাও সঙ্গ সংসার সাগরে লড়তে,
তোমাকে যদি কাছে পাই বাবা,
সবকিছুতেই হবো আমি জয়ী,
ফিরে এসো বাবা আর একটিবার,
সবকিছুতেই কর আমায় বিজয়ী।
# নন্দা ১৭-৬-১৮
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
চলে গেছো তুমি,
বহু যুগ আগে,
আজও আছো অন্তরে,
মনের ঘরে রয়েছে আসন,
আজও পাতা-তোমার তরে।
তোমার জন্য আলাদা করে,
হয়নাকো কোন দিন,
জম্ম থেকে আজ অবধি,
রয়েছ মনে-হয়ে অমলিন।
খুব কি তাড়া ছিলো তোমার বাবা?
তাই এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে চলে গেলে?
তুমি বিনা আমরা যে অসহায়!
একবারও তুমি ভাবলেনা কেন হায়!
তোমার দেখানো পথেই হাঁটি,
নোয়ায় না অন্যায়ের কাছে মাথা,
বিশ্বাসঘাতকে সাজা দিতে,
আর আসোনা কেন বাবা?
সশরীরে থাকতে পাশে যদি,
পেতামনা আজ এত কষ্ট,
আমার স্বপ্ন চুরি করে,
করলো ওরা সব নষ্ট।
গণিত,ইংরাজী আজও যা জানি,
সেতো তোমারই দান,
সশরীরে না থেকে অনুভবে থাকো,
সৎভাবে চলি,তাও তোমারই অবদান,
ফিরে এসো বাবা আর একটিবার,
দাও সঙ্গ সংসার সাগরে লড়তে,
তোমাকে যদি কাছে পাই বাবা,
সবকিছুতেই হবো আমি জয়ী,
ফিরে এসো বাবা আর একটিবার,
সবকিছুতেই কর আমায় বিজয়ী।
# নন্দা ১৭-৬-১৮
Saturday, June 16, 2018
আমার সম্পদ
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
আগের মতন জানালার কাছে বসে
জ্যোস্না দেখতে আর ভালোলাগেনা!
তবুও বসে থাকি জানালার কাছে,
স্বপ্নের জাল বোনা আর হয়না!
সুতোটা বড্ড তাড়াতাড়ি কেটে গেলো,
সত্যি নিয়তির কাছে আমরা খুব অসহায়।
জীবনের চেনা ছন্দ হারিয়ে গেলেও-
কি অদ্ভুতভাবে আমরা বেঁচে থাকি!
যাকে ছাড়া বাঁচবোনা ভাবি,
তাকে ছাড়াই দিব্যি বেঁচে থাকি।
সূর্য্য উঠা আর অস্ত যাওয়াএকটা নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা,
আমার বেঁচে থাকাটাও একটা ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিছু মুহূর্ত,কিছু স্বপ্ন আর কিছু ভালোলাগা-
তোমাকে হারিয়ে এগুলিই আমার বাঁচার সম্পদ।
#নন্দা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
আগের মতন জানালার কাছে বসে
জ্যোস্না দেখতে আর ভালোলাগেনা!
তবুও বসে থাকি জানালার কাছে,
স্বপ্নের জাল বোনা আর হয়না!
সুতোটা বড্ড তাড়াতাড়ি কেটে গেলো,
সত্যি নিয়তির কাছে আমরা খুব অসহায়।
জীবনের চেনা ছন্দ হারিয়ে গেলেও-
কি অদ্ভুতভাবে আমরা বেঁচে থাকি!
যাকে ছাড়া বাঁচবোনা ভাবি,
তাকে ছাড়াই দিব্যি বেঁচে থাকি।
সূর্য্য উঠা আর অস্ত যাওয়াএকটা নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা,
আমার বেঁচে থাকাটাও একটা ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিছু মুহূর্ত,কিছু স্বপ্ন আর কিছু ভালোলাগা-
তোমাকে হারিয়ে এগুলিই আমার বাঁচার সম্পদ।
#নন্দা
Thursday, June 14, 2018
মুক্তি
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
সে দিনটি ছিলো অমাবস্যা।সরকারী চাকরির পদোন্নতি ও বদলির সুবাদে অচেনা,অজানা এক গ্রামের উদ্দেশে রওনা দিলাম ।গ্রামে নূতন পোষ্ট অফিস হওয়াতে আমাকে পোষ্টমাষ্টার পদে উত্তীর্ন করে বলতে গেলে এক জনমানব শূন্য দ্বীপে সরকার পাঠিয়ে দিলেন।কলকাতা শহরের জনবহুল এলাকা বালিগঞ্জ আমার বাড়ি।এক মেয়ে, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আর মাকে নিয়ে সাজানো গুছানো সংসার আমার। পেটের দায়ে সরকারী আজ্ঞা অমান্য করতে পারিনা। সরকার বাহাদুর এক ধাক্কায় আমাকে পোষ্টমাষ্টার বানিয়ে গলাধাক্কা দিয়ে এক গন্ডগ্রামে পাঠিয়ে দেওয়ার সু-বন্দোবস্ত করে ফেললেন।আমিও মোটা মাইনে আর বেঁচে থাকা এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের আরও ভালো রাখার তাগিদে বাধ্য শিশুর মত ব্যাগ-প্যাটরা গুছিয়ে পলাশপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
দুপুরে খেয়েদেয়ে লোটা-কম্বল গুছিয়ে নিয়ে হাওড়া স্টেশনে এসে হাজার হাজার লোকের ভিতর দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিলো কলকাতা শহরের এবং তার আশেপাশের সমস্ত জায়গার লোক যেন আজ হাওড়া স্টেশনে এসে জমা হয়েছে।তখন মেয়ের ছেলেবেলার একটা কথা খুব মনে হচ্ছিল, মেয়েকে নিয়ে বাসে উঠলেই বাসটা যদি ভিড় হয়ে যেত আমার ছোট্ট মেয়ে তখন বলতো,"বাবা, আমি যে বাসটায় উঠি সেটাতেই সবাই উঠে কেন?" আজ আমারও মনের অবস্থা ঠিক একই।গরু হারালেও তার ভিতর খুঁজে পাওয়া যাবেনা।বসা তো দূরহস্ত!দাঁড়িয়ে থাকার জায়গারও অভাব।দাঁড়িয়ে থাকাও সম্ভব হচ্ছেনা;লোকের ধাক্কাধাক্কিতে কখনো দুপা সামনে আবার কখনোবা দুপা পিছনে পিছিয়ে যেতে হচ্ছে।আজ এত ভিড়ের কারন লোক মুখে শুনলাম একটি ট্রেন বেলাইন হওয়াতে পর পর দুটি ট্রেন এখনও এসে পৌঁছাতে পারেনি।সারাইয়ের কাজ চলছে।মাথায় হাত!তারমানে পরপর দুটি ট্রেনের যাত্রী পরবর্তীতে আসা তৃতীয় ট্রেনটিতে উঠবে। নিজের উপর নিজের রাগ হতে লাগলো।এর থেকে বালিগঞ্জ স্টেশনে যেয়ে গাড়ি পাল্টে আর একটি ট্রেনে গেলে অন্তত এই ভিড়ের হাত থেকে বাঁচতাম।একটা গাড়িতে যাবো মনস্থির করে বোকার মত দুশো টাকা ট্যাক্সি ভাড়া দিয়ে ঘাড় ধাক্কা, গলা ধাক্কা,পিঠ ধাক্কা অন্যদের অজান্তেই লাথি, ঘুসি সব খাচ্ছি!গাড়ি আসার পর কি হবে সেটা মনে করতেই ঘামতে শুরু করলাম।সাথে আবার আমার বিশাল আয়তনের তিনখানা ব্যাগ।একটিকে গলায় স্থান দিয়ে বাকি দুটিকে হাতে নিয়ে প্লাটফর্ম থেকে একটু দূরত্বে যেখানে অপেক্ষাকৃত একটু কম লোক সমাগম সেখানে হাজির হয়ে আমার তিন সঙ্গীকে নীচুতে রেখে একসঙ্গীর মাথার উপর বসে পড়লাম।ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষার পর সন্ধ্যা ছটা নাগাদ বহু আঙ্খাংকিত ট্রেনটি দূর থেকে শিস (হুইসেল)দিয়ে তার আগমনবার্তা জানিয়ে দিলো।ব্যস শুরু হোল রেডী, গো, স্টার্ট ।দৌড় প্রতিযোগীতা !সাথে একটা কিনলে অন্যটা ফ্রীর মত ধাক্কাধাক্কিটা উপরি পাওনা!আমিও আমার তিন সঙ্গীকে আমার শরীরের পূর্ব জায়গায় স্থাপন করে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করলাম।
আমার ছুটাই সার হোল।আমি কোন পজিশনে আসতে পারলামনা!কারন যতই আমি সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করিনা কেন;জনসমুদ্র আমার সঙ্গীদের ধাক্কা মেরে আমাকে পিছনে সরিয়ে দেয়।সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও আমি ট্রেনের কোন কামড়ার সম্মুখে যেতে সমর্থ হলামনা।
গাড়ি পূনরায় আমার কানের কাছে শিষ দিয়ে মনেহল একটু তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে টা টা করে প্লাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।আমারই মত আরও বেশ কয়েকজন অপলক দৃষ্টিতে আমাদের আরাধ্য ট্রেনটি যতক্ষণ দেখা যায় বোকার মত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।
খবর নিয়ে জানতে পারলাম পরবর্তী ট্রেন আরও এক ঘন্টা পর।অগত্যা এই বহু আঙ্খাংকিত যানটির জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করলাম বুকের ভিতর ধূপপুকানী নিয়ে।যেন সদ্য প্রেমে পড়া প্রেমিক তার প্রেমিকার আসার অপেক্ষায় বসে।মিনিটে মিনিটেই ঘড়ির দিকে আর তার আসার পথের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ।
অবশেষে তিনি এলেন।ঘড়িতে তখন রাত পৌনে আটটা।মনেহল তাকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খাই।কিন্তু আমার প্রেমিকা আড়ে এবং লম্বায় এতই বিশাল আকৃতির সে আশা ত্যাগ করেই মনের আনন্দে তার ভিতর ঢুকে গেলাম আমার শরীরে অবস্থানরত সঙ্গীদের নিয়ে।আমি উঠে বসতেও পারলাম।দু'ঘন্টার রাস্তা।তারমানে পলাশপুর স্টেশনে নামতে রাত দশটা তো বাজবেই।সারাদিনের এই ধকলের পরে বসে বসে ঝিমাচ্ছিলাম।হঠাৎ চাইইআইইই-- চাআআআআ--।নিলাম এক কাপ চা।চা খেতে খেতে সারাদিনের যুদ্ধের কথা মনে পড়তেই নিজের মনেই হাসতে লাগলাম।হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে।দেখি আমার 'সুইট হার্ট'ফোন করেছেন পৌঁছেছি কিনা জানার জন্য।সংক্ষেপে দুপুরের যুদ্ধের বর্ণনা দিলাম চাপাস্বরে।
নিদৃষ্ট স্টেশন পলাশপুর এসে নামলাম।চারিদিকে শুনশান।এখান থেকে যেতে হবে আরও চার মাইল।সেটা রিক্সা বা ভ্যানে।রিক্সা একটিও নেই।অগত্যা একটি ভ্যানে চেপে বসলাম।পাঁচজন একটি ভ্যানে আর আমার ওই বিশাল আয়তন ও ওজনের তিন সঙ্গী।মনেহচ্ছিল সঙ্গীদের ভ্যানে চাপিয়ে নিজে দৌড়ে ভ্যানের পিছন পিছন যাই। অবস্থা তখন আমার শোচনীয়।ভ্যানের উপর আমি,আমার উপর আমার ভারী ও বড় সঙ্গী,তার উপর মেজটি সর্বশেষে আমার কাঁধের উপর বাইরের দিকে ঝুলন্ত ছোটটি।ভ্যানে বসার পর আমার যে উচ্চতা ছিলো আমার কালের উপর সঙ্গীদের স্থাপন করে দু'হাতে তাদের জড়িয়ে রাখতেও হিমসিম খেতে হচ্ছিলো কারন তখন তাদের উচ্চতা আমার উচ্চতার থেকে ফুট খানেক বেড়ে গেছে।
ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভিতর দিয়ে ভ্যান এগিয়ে চলেছে।সহযাত্রীদের সাথে আলাপচারিতায় জেনে গেলাম পোষ্ট অফিসটি মাস ছ'য়েক আগেই খুলেছে পূরন একটি দোতলার বাড়ির নিচের সম্পূর্ণ অংশটি নিয়ে।উপরে বেশ কয়েকটি বড় কামড়া রয়েছে।সেখানেই পোষ্টমাষ্টারের থাকার ব্যবস্থা।প্রথম অবস্থায় যিনি পোষ্ট মাষ্টার হয়ে এসেছিলেন তিনি দু'মাস এখানে ছিলেন।বদলীর জন্য বারবার সুপারিশ করেও কোন ফল না পেয়ে শেষে চাকরীতে ইস্তফা দিয়ে চলে যান।আর দ্বিতীয়জন পনের দিনের মাথায় হার্ট অ্যাটাকে।তারপর থেকে বলতে গেলে পোষ্ট মাষ্টার ছাড়ায় ঢিমেতালে পোষ্ট অফিসটি চলছে। আমি 'কেন এখানে কোন পোষ্ট মাষ্টার থাকতে চাননা'-জানতে চাওয়ায় কেউ আর কোন কথা না বলে চুপ করে যায়।আমিও আর কোন কথা বাড়ায়না।আমার কি লাভ এসব জেনে?আমি আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর নিতে যাবো কেন?
ভ্যান এসে আমাকে নিদৃষ্ট জায়গায় নামিয়ে দিলো।রাস্তায় কোথাও কোন আলো না থাকলেও কিছু কিছু বাড়িতে ইলেকট্রিক এসে গেছে।কিছুটা হাঁটতে হবে।তবে অতি সামান্যই!আমি সঙ্গী তিনজনকে নিচু হয়ে তুলতে যাবো হঠাৎ দেবদূতের মত এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক এসে বললেন,"আমি ব্যাগগুলো নিয়ে যাচ্ছি আপনি আমার সাথে সাথে চলুন"।পরিচয় জানতে চাইলে বলেন এই গায়েই বাস তার।এও বললেন, আমার জন্যই তিনি অপেক্ষা করছিলেন।বড় একটি লোহার গেটের সামনে ভদ্রলোক দাঁড়ালেন।দেখলাম আমার অফিস কাম বাসস্থানটিতে একটি টিমটিমে বাল্ব জ্বলছে।ভিতর থেকে গেটটি বন্ধ।বুঝলাম ভিতরে কেউ আছে।গেটে শব্দ করলাম।সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো, "আসছি স্যার।"পিছন ফিরে দেখি ওই ভদ্রলোক আমার ব্যাগদু'টিকে নীচুতে রেখে চলে গেছেন।দু'টি বললাম এই কারনে একটি আমার গলাতেই ঝুলন্ত অবস্থায় বিরাজিত ছিলেন।একটু অবাক হলাম।কিন্তু ভাবার সময় পেলামনা কারন ততক্ষনে চল্লিশউর্দ্ধ এক দীর্ঘায়ি পুরুষ এসে গেট খুলে সহাস্য বদনে আমার সঙ্গীদের নিজ হাতে নিয়ে নিয়েছেন।কথা বলে জানতে পারি উনি পোষ্ট অফিসের দারোয়ান এখানেই থাকেন, সাথে উনার স্ত্রীও থাকেন কোন সন্তানাদি নেই।আমার থাকার ব্যবস্থা উপরের ঘরেই।রমাপদ দোতলার সিঁড়ির ঘর খুলে আমাকে উপরে নিয়ে গিয়ে একটি ঘরের দরজা খুলে দিলো।ভিতরে ঢুকে আমার তো চক্ষু চড়কগাছ!দামী সোফা,দামী খাট। সবই পূরন আমলের সেগুন কাঠের তৈরি।খুব সুন্দর করে ঘরটি সাজানো।মনের মধ্যে যে একটি বেড়ার ঘর উঁকি দিচ্ছিল এই গন্ডগ্রামের মধ্যে বুঝলাম সেটা আমার দুঃস্বপ্ন ছিলো।এত সুন্দর একটা থাকার ব্যবস্থা দেখে মনটা ভারী প্রসন্ন হয়ে গেলো।রমাপদ আমায় জানালো আজ রাতের খাবারটা সে নিজেই দিয়ে যাবে।আর আগামীকাল সকালে যেয়ে নিজেই বাজারঘাট করে এনে দেবে তখন আমাকে নিজেই রান্না করে খেতে হবে যতদিন না রান্নার লোক সে খুঁজে আনতে পারছে।কথাগুলো বলে রমাপদ বেরিয়ে গেলো।
সারাদিনের এই ধকলের পর ক্লান্তিতে শরীরে মোটেই জোর ছিলোনা।ঝকঝকে বাথরুমে গিয়ে স্নান সেরে ফ্রেস হয়ে নিলাম।রমাপদ বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আমার সবেধন নীলমনি একটিমাত্র বৌকে ফোন করে বীরদর্পে জানিয়ে দিলাম আমার রাজকীয় বাসস্থানের কথা।
এরপর বাথরুম থেকে বেরিয়ে নিজেকে খাটের উপর এলিয়ে দিতে যাবো হঠাৎ শুনি বাথরুমের ভিতর থেকে জলের আওয়াজ হচ্ছে।কিন্তু আমার পরিস্কার মনে আছে আমি কল বন্ধ করেছি।মনের ভুল ভেবে শুয়েই পড়ি।কিন্তু না এবার যেন বালতি সরানোর শব্দ কানে আসলো।উঠে গেলাম বাথরুমে।হ্যাঁ ঠিকই শুনেছি।একটা কল থেকে জল পড়ছে।কি করে এটা সম্ভব ভাবতে ভাবতেই কলটা বন্ধ করে এসে সোফায় বসলাম।ইতিমধ্যে রমাপদ রাতের খাবারের জন্য চারখানা রুটি ও what not (সর্বরকম সব্জি) তরকারি নিয়ে এসে দিয়ে গেলো।যাওয়ার সময় সকালের বাজার করার টাকাটা চেয়ে নিয়ে গেলো আর বলে গেলো,"স্যার এটা তো গ্রাম, কোনরকম চিৎকার-চেঁচামেচি কান্নার শব্দ শুনলে কোন কিছুতেই দরজা খুলবেন না"।একটা কাগজের চিরকুট টেবিলের উপর রেখে আরও বললো,"এটা আমার ফোন নম্বর।রাতে দরকার হলে আমায় ফোন করবেন কিন্তু আপনি নীচুতে নামবেন না।"
রমাপদর কথাবার্তায় মানুষটিকে খুব কর্তব্যপরায়ন ও ভালো মানুষ বলে মনে হোল।যাহোক সে বেরিয়ে গেলে পেটের ছুঁচোগুলিকে নির্মমভাবে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার দেওয়া রুটি আর সব্জি নিয়ে গোগ্রাসে খেতে শুরু করলাম।শরীর তখন আর চলছেনা।বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দিলাম।শুয়ে পরে মনেহোল ঘরের লাইটটাই তো ওফ করিনি।অলসতায় উঠে আর ওফ ও করলাম না।গাঢ় ঘুমের মধ্যে হঠাৎ পুরুষ কন্ঠে "বাঁচাও বাঁচাও"- বলে চিৎকার।ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম।সাথে আর এক নারী কন্ঠ।সেও চিৎকার করে কি সব বলছে কিন্তু আমার এই ঘুমের ঢুলুনির মধ্যে পরিস্কার বুঝতে পারছিনা।ভাগ্য ভালো লাইটটা জ্বালানো ছিলো।মনে পড়লো রমপদর সতর্কবানী। আবার শুয়ে পড়লাম।
দ্বিতীয় ঘুমে রাত শেষ।চিরদিনের অভ্যাস ছ'টাই ওঠা।ঠিক ছ'টাতেই ধুম ভাঙ্গলো।ব্রাশ করে নীচুতে নেমে চায়ের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম।মিনিট পাঁচেক হেঁটে পেয়ে গেলাম একটি চায়ের দোকান।জায়গা পেয়ে বসে পড়ে বড় এক কাঁচের গ্লাস চায়ের অর্ডার দিলাম।গ্রামের ভিতর নূতন এই মানুষটিকে দেখে সকলেই আড়চোখে আমায় একটু পর্যবেক্ষন করতে চেষ্টা করছে এটা আমি বিলক্ষণ বুঝতে পারি।তাদের কৌতুহল দমন করার জন্য নিজেই আলাপ জমালাম।
----আমি এখানকার পোষ্ট অফিসে নূতন পোষ্টমাষ্টার হয়ে এসেছি।
আমি লক্ষ্য করলাম প্রত্যেকেই প্রত্যেকের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ চাওয়াচাওনি করছে।
----গতকাল এসেছেন?উঠেছেন ওই পোষ্ট অফিসের দোতলার ঘরে?
আমি 'হ্যাঁ'বলাতে দেখলাম সকলের মধ্যেই একটা অস্বাভাবিকতা!প্রশ্নাত্তর পর্ব বেশি দূর আর এগোলো না কারন আমার তাড়া ছিলো তাই আমি ওখান থেকে বেরিয়ে আমার বর্তমান বাসস্থানের দিকে এগোতে থাকি, প্রথমদিন একটু তাড়াতাড়ি অফিসে ঢোকার মনোবাসনা নিয়ে।
রমাপদ ততক্ষণে বাজার দিয়ে গেছে।শুধু বাজার করে দেওয়ায় নয় মাছ, তরকারি কুটে মাছে নুন-হলুদ মাখিয়েও রেখে গেছে।শুধু তাই নয় হাঁড়িতে জল দিয়ে আর একটা বড় পাত্রে চাল রেখে হাঁড়ির কাছেই রেখে দিয়েছে যাতে সহজেই আমার চোখে পড়ে।হয়তো চালটা হাঁড়ির মধ্যে দেয়নি আমার ভাতের পরিমান কতটা হবে বুঝে উঠতে পারেনি বলে।বেশ বুদ্ধিমান মানুষ মনেহোল রমাপদকে।কিন্তু কতগুলো চাল দিলে কি পরিমান ভাত হবে আমিই কি ছাই জানি?তবুও বেশ বিজ্ঞেরমত একটা কাপের দেড়কাপ চাল নিয়ে হাঁড়ির মধ্যে দিয়ে হাঁড়িটা গ্যাসে বসিয়ে দিলাম। ঘরে ঢুকে দেখি রমাপদ একটা নিউজ পেপারও আমার জন্য কিনে এনেছে।পেপারটা নিয়ে সেদিনের হেডলাইনসগুলো চোখ বুলিয়ে সেটিকে ভাঁজ করে খাটের একপাশে রেখে দিলাম সন্ধ্যার দিকে আমার একাকীত্বকে কাটানোর আশায়।বাড়িটার ভিতর দেখলে কে বলবে এটা একটা গন্ডগ্রাম।আধুনিকতার ছাপ চারিপাশে স্পষ্ট।কিন্তু কেন?আস্তে আস্তে সব কিছুই জেনে যাবো ভেবে নিজের কৌতুহলকে শান্তনা দিলাম বা বলতে গেলে দমন করলাম।
সমস্ত তরকারীগুলি দিয়ে মাছের ঝোল আর ভাত করে খেয়ে নিয়ে আমি আমার নিজের অফিসে যেয়ে ঢুকলাম।সকলের সাথেই পরিচিত হলাম।কিন্তু আমি লক্ষ্য করছি গতকাল রাস্তা থেকে শুরু করে অফিসের কর্মচারীদের মধ্যেও আমি ওই বাড়ির দোতলার ঘরে আছি শুনে আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে কি যেন জানতে চায়।কিন্তু আমি কোন প্রশ্ন করলে নানান অছিলায় এড়িয়ে যায়।কেমন যেন একটা রহস্যের সন্ধান পেতে লাগলাম।
সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে রান্না ঘরে ঢুকে এককাপ চা করে পেপারটা নিয়ে বসি।এরই মধ্যে দু'দুবার আমার সুইট হার্ট ফোন করে আমার খবরাখবর নিয়েছেন এবং আমি রান্না করেছি শুনে হেসে কুটিকুটি হয়েছেন।যাহোক-পেপারটা পড়তে পড়তে বাইরে দেখি এক ছায়ামূর্তি।রমাপদ ভেবে পেপার পড়তে পড়তেই ওকে ভিতরে ডাকি।কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে পেপার থেকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখি 'কই কেউ তো না।'একটু অবাক হলেও ভাবি হয়তো আমার দেখার ভুল।
রুটি আমি করতে পারিনা। তাই সকালেই দুটি চাল বেশি নিয়েছিলাম যাতে করে রাতের খাবারটাও হয়ে যায়।রাত প্রায় দশটা।নিউজ পেপার পড়া শেষ করে স্মার্টফোনটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতে করতেই এত রাত হয়ে গেলো।রান্নাঘরে খাবার আনতে যাওয়ার আগে একবার বাথরুমে ঢুকলাম প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে।সারাজীবনই আমার ওই জায়গাটাতেই একটু দেরি হয়।বেশ কিছুক্ষণ বাদে সেখান থেকে বেরিয়ে একটু অবাকই হলাম।আমার জন্য চারটি হাতে গড়া আটার রুটি আর একবাটি আলুর দম আমার ঘরের বড় টেবিলটাতে রাখা।দরজা খোলায় ছিলো সুতরাং এটা আমি নিশ্চিত যে রমাপদই খাবারটা দিয়ে
গেছে।বাইরের সিঁড়ির ঘরের চাবি একটা তার কাছে আর একটা আমার কাছেই থাকে।সকালের রান্না করা খাবারগুলো যা রাতে খাবো ভেবেছিলাম সেগুলো ফ্রিজে তুলে দিলাম।আর রুটি চারটি খেয়ে নিলাম।সকালে আর রান্না করার হ্যাপা রইলোনা।ভাবতে লাগলাম রোজ রাতের রুটি,তরকারীটা যদি রমাপদ দিয়ে যায় তাহলে আমাকে মাসের শেষে ওকে কিছু টাকা দিতেই হবে।
লাইট ওফ করে শুয়ে পড়লাম।ঘাড়ঘুমে যখন আচ্ছন্ন তখন গতকালের সেই পুরুষ কন্ঠের 'বাঁচাও বাঁচাও' বলে চিৎকার।উঠে বসলাম।মনেহচ্ছে চিৎকারটা যেন পাশের ঘর থেকেই আসছে।লাইট জ্বালিয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলাম।গতকাল রাতের মত এক নারী কন্ঠের চিৎকারও কানে ভেসে আসছে।আজ তার একটি কথা বুঝতে পারলাম,এটা তুমি কি করলে?"আমি ওই ঘরটার দিকে যতই এগোতে থাকি চিৎকার-চেঁচামেচি ততই ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকে।যখন তালা দেওয়া ঘরটার সামনে এসে দাঁড়াই তখন সব শান্ত।অদ্ভুত ব্যপার তো!ভূতের ভয় কোনদিন আমার ছিলোনা আজও নেই।ভূত বলে কিছু আছে বলে আমি বিশ্বাসও করিনা।কিন্তু কেন জানিনা আজ জীবনে প্রথমবার মনে হোল কোন ভূত-প্রেত নয় তো ?কিন্তু ভয় আমায় স্পর্শ করতে পারেনি সেদিনও।
পরদিন যথাসময়ে পোষ্ট অফিসে যেয়ে পাহাড় প্রমান কাজ নিয়ে বসলাম।মনেহচ্ছে এখানে পোষ্ট অফিস হওয়ার পর কোন পোষ্টমাষ্টার এ সব ফাইল খুলেও দেখেনি।সহকর্মী প্রবীর সেন অবশ্য পোষ্ট মাষ্টারের কাজগুলো যেহেতু দেখতেন তিনিই এই ব্যাপারে আমায় সাহায্য করতে লাগলেন।কথা প্রসঙ্গে তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন,
--রাতে কেমন ঘুম হচ্ছে?
---ভালোই ঘুমাচ্ছি তো।
---কিছু টের পেলেন?
---কি ব্যপারে বলুন তো?
---না, আসলে বাইরে থেকে যারাই পোষ্টমাষ্টার হয়ে এসেছেন কেউই এক রাতের বেশি ওখানে থাকেন না। কি সব ভূতের উপদ্রব আছে নাকি।একজন তো ভয়েই হার্ট ফেল করলেন, আর একজন চাকরি ছেড়েই চলে গেলেন।
অবাক হয়ে প্রবীর সেনের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,"ভূত-প্রেত আমি বিশ্বাস করিনা।
বাকি ঘটনা চেপে গেলাম কারন ওই চিৎকারের মূল রহস্য আমায় উদ্ভাবন করতেই হবে। আর এটা গতকাল রাতেই আমি ঠিক করে ফেলেছি।
অফিস থেকে ঘরে ফিরে কিছু টিফিন করে আমি রমাপদকে ডেকে নিলাম।উদ্দেশ্য তার কাছ থেকে ঘটনার যদি কোন সূত্র পাই।সরাসরি রমাপদর কাছে জানতে চাইলাম,
---রোজ রাতে পাশের ঘর থেকে একটা আত্মনাদ আসে।অনেকের মুখেই শুনেছি এখানে নাকি খুব ভূতের উপদ্রব।তুমি আমায় বলতো আসল ঘটনাটা কি?হ্যাঁ-তুমি যা জানো সেটাই বোল আমি ভয় পাবোনা কারন ভূত-প্রেত আমি বিশ্বাস করিনা।
---হ্যাঁ বাবু রোজ রাতে ওই আওয়াজটা আমিও শুনি।প্রথম প্রথম আমিও খুব ভয় পেতাম।কিন্তু এখন আর পাইনা।ভূত-প্রেত যাই হোকনা কেন ওরা কখনোই কারও ক্ষতি করেছে বলে শুনিনি।তবে ভয় পেয়ে এক পোষ্টমাষ্টারের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছিলো।অনেক বছর হোল এখানে পরিবার নিয়ে আছি।এ নিয়ে এক একজন এক এক রকম গল্প-কাহিনী শোনায়।অনেক হাত বদল হয়েছে এই বাড়ির।তবে এখন বাড়িটা সরকারের।এই বাড়িতে রাতে যে ঘরটা থেকে চিৎকার আসে শুনেছি সেই ঘরে কেউ শুলেই সকালে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।অদ্ভুত অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে এই দোতলার উপর।সবই লোক মুখে শোনা কথা।ওই চিৎকার ছাড়া আপনি কি কিছু টের পেয়েছেন?
আমিও যে টের পাচ্ছি সে কথা রমাপদর কাছে গোপন রাখলাম।
---না, না,আমি সে রকম কিছু টের পাইনি। আচ্ছা কালকে তুমি কখন এসে রাতের খাবারটা আমায় দিয়ে গেলে?
---আমি তো কাল রাতে আপনাকে কোন খাবার দিইনি।
আমি আকাশ থেকে পড়লাম।তবে কি ভূতের হাতে তৈরি করা খাবার খেলাম।বাহ!বেশ আধুনিক ভূত তো!হাতের রান্নাটাও চমৎকার!রমাপদর ডাকে আমার ভাবনায় ছেদ পড়ে, "বাবু,খাবারের কথা কি বলছিলেন?"
আমি প্রসঙ্গ পাল্টে তার কাছে জানতে চাইলাম,
---আচ্ছা রমাপদ ওই ঘরের চাবিটা কোথায়?
---জানিনা বাবু,আমি আসা থেকেই দেখছি ওই ঘর তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
রমাপদ তার শোনা কাহিনী একের পর এক বলতে শুরু করলো।যখন সে উঠলো রাত প্রায় ন'টা।গ্রামের ভিতর রাত ন'টা মানে অনেক রাত।সে নেমে গেলে আমি রান্নাঘরে ঢুকি খাবারগুলো গরম করার জন্য।মনের ভিতর একটা খচখচানি থেকেই গেলো ওই ঘরের ভিতর কি আছে তা আমাকে জানতেই হবে।কিন্তু অবাক হলাম খাবার গরম করে যখন আমি ঘরে নিয়ে আসি তখন দেখি গতকালের মত রুটি আর আলুরদম টেবিলের উপর ঢাকা দেওয়া।তারমানে আজ আবারও আমাকে ভূতের খাবার খেতে হবে।নিজের হাতের রান্না করা খাবার আর ভূতের খাবার নিয়ে বসে যখন আমি ভাবছি কোনটা খাবো তখন এক অদৃশ্য শক্তি যেন আমার হাতটি নিয়ে রুটির পাত্রে রেখে দিলো।জীবনে প্রথম ভয়ে গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো।
বিছানায় শুয়ে কিছুতেই ঘুম আসেনা।সারাক্ষণ মাথার মধ্যে ভূত ঘুরে বেড়াচ্ছে।যা কোনদিন বিশ্বাস করিনি আজ তাই বিশ্বাস করতে বাধ্য হতে হচ্ছে। কারন নানান ঘটনা প্রমান করছে ভূত বা আত্মা বলে কিছু তো নিশ্চয়ই আছে।কিন্তু যাই হোকনা কেন আমাকে এর একটা হিল্লে করতেই হবে।এইসব আবোলতাবোল ভাবতে ভাবতে যখন ঠিক ঘুমে চোখটা একটু লেগে এসছে তখন অন্যের মুখে নিজের নামটা শুনে তড়িঘড়ি উঠে বসলাম।আর ঠিক তখনই পোষ্ট অফিসের বিশাল দেওয়াল ঘড়িতে ঢং ঢং করে তিনটে বাজার সঙ্কেত জানালো। সামনে তাকিয়ে দেখি সেই ভদ্রলোক যিনি ভ্যান থেকে নামার পর আমার ব্যাগ দুটিকে টেনে এনে পোষ্ট অফিসের সামনে রেখে অদৃশ্য হয়ে গেছিলেন।আমি জানতে চাইলাম,
---এত রাতে আপনি কি করে আমার ঘরে এলেন?কেন এলেন?আমি কি নিচের দরজা খুলে রেখেছিলাম?আর যদিবা আমি দরজা খুলেই রাখি তাহলেও তো রমাপদ ঠিক তালা দিয়ে দেয়।আপনি কেমন করে এলেন উপরে?
---বিজনবাবু, আপনার সাথে আমার একটু কথা ছিলো।
---হ্যাঁ সেতো বুঝতে পারছি কিন্তু আপনি কি করে উপরে আসলেন দয়া করে যদি আমায় বলেন----বলতে বলতে আমি খাট ছেড়ে উঠে দাঁড়াই ঘরের লাইটটা জ্বালাবো বলে।কিন্তু ভদ্রলোকের কথা শুনে আবারও ধপ করে খাটের উপর বসে পড়ি।
---আমি তো উপরেই থাকি।
---উপরে?মানে?উপরে কোন ঘরে?দেখিনি তো কখনো আপনাকে!
---ওইযে যে ঘরে চিৎকার শুনে আপনি দৌড়ে গেলেন সেই ঘরে।
---কিন্তু ওটা তো বাইরে থেকেই সব সময় তালাবন্ধ থাকে।আপনি কি আমার সাথে ইয়ার্কি মারছেন?
---সেই ঘটনাটাই তো আপনাকে জানাতে আসলাম।
---কেন আমাকে কেন?
---এই কেনোর উত্তরটাই তো দেবো।বহু বছর ধরে যে আমি ওই ঘরে বন্ধি আর আপনার জন্যই অপেক্ষারত।
---কে আপনি? আমার জন্যই বা কেন অপেক্ষা করেছেন?আমি আপনার কথার মাথামুন্ড কিছুই বুঝতে পারছিনা।
---আমাকে বলতে দিন;আপনি তাহলে সব বুঝতে পারবেন।কারন আপনাকেই তো বুঝতে হবে।আপনি না বুঝলে আমার মুক্তি যে কোনদিন হবেনা।
---মুক্তি?তারমানে আপনি------?
---হ্যাঁ মুক্তি!আমি বেঁচে নেই।প্রায় দুযুগেরও বেশি বছর আগে আমার মৃত্যু হয়েছে বা বলতে পারেন মরতে বাধ্য হয়েছি।
---কিন্তু কেন?
---তাহলে শুনুন আমার জীবনের ঘটনা।
দুই ছেলে নিয়ে বিধান মজুমদারের সংসার।স্ত্রী ইশানী রূপসী।সেই তুলনায় বিধানবাবু দেখতে খুব একটা ভালো ছিলেননা।নিয়মমাফিক তিনি স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পালন করতেন ঠিকই কিন্তু স্বামী সেবা বলতে যা বোঝায় তা তিনি কোনদিনও করেননি।ছিলেন প্রচন্ডভাবে অর্থলোভী।ফুড কর্পোরেশনে উচ্চপদে চাকরি করার সুবাদে মোটা অঙ্কের টাকা হাতে নিয়ে বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথেই স্ত্রী সে টাকা নিয়ে নিজ জিম্মায় রেখে দিতেন।এ নিয়ে বিধানবাবুর কোনদিনও কোন অভিযোগ ছিলোনা।ছেলেরা বড় হোল।বড় ছেলে চাকরি পাওয়ার পর ইশানীদেবী নিজে পছন্দ করে ছেলের বৌ ঘরে আনলেন।বৌমাটি ছিলো তার শ্বাশুড়ীর পুরো বিপরীত।খুব সংসারী ও লক্ষীমন্ত।বড় ছেলের বিয়ের পর কয়েক মাসের মধ্যেই বিধানবাবু রিটায়ার করেন।
বিধানবাবুর সংসারে কোনদিনও শান্তি ছিলোনা রিটায়ার করার পর অশান্তি আরও চরমে ওঠে।খেতে, বসতে,শুতে সব সময়ই তার স্ত্রী তাকে কথার খোঁটায় তাকে বুঝিয়ে দেন ওই সংসারে তিনি জঞ্জাল স্বরূপ।কারন তার রোজগারের পরিমাণ অনেকটাই কমে গেছিলো।এই অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে তিনি একদিন নিজেই গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন।বৌমা ছুটে এসে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে।অনেক চেষ্টা করেও সে আগুন নেভাতে পারেনা।বিধানবাবু মারা যান।শ্রাদ্ধের পর তারা বাড়িটি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যান।এখন কথা হোল শ্রাদ্ধের পরেও বিধানবাবুর আত্মা মুক্তি পেলোনা কেন?এর কারন হিসাবে তিনি বলেছেন তার মৃত্যুর পর ছেলেরা বাড়িতে অশৌচ পালন করলেও বাইরে বেরিয়ে তারা আমিষ খাবারই খেত।মৃত্যুর পর বাড়ির লোকেরা যে এগারোদিন সেদ্ধ ভাত খায় এটা কোন কুসংস্কার নয়।দেহ ও মনকে প্রবিত্র রাখতে এই কটাদিন কোন প্রাণী হত্যা করা অথ্যাৎ মাছ, মাংস না খাওয়ার যে বিধান শাস্ত্রে রয়েছে তার কারন হিসাবে তিনি বলেছেন ওই এগারোটা দিন আত্মা বাড়ির আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করে।শুদ্ধ মনে, শুদ্ধ দেহে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান না করলে আত্মা সর্বভূতে বিলীন হয়না অথাৎ আত্মার মুক্তি সম্ভব হয়না।তাই তারও মুক্তি হয়নি।এই কারনেই তিনি এই বাড়িটিকে নিয়ে আজও আছেন। এরপর বিধানবাবু যে কথা বলেন তা শুনে আমার পিলে চমকে ওঠে।তিনি বলেন যে তিনি যখন মারা যান তখন তার বৌমাটি ছিলেন সন্তানসম্ভবা।পরবর্তীতে তিনি একটি মৃত পুত্র সন্তান প্রসব করেন।সেই মৃত পুত্র সন্তানটি পরবর্তী জন্মে নাকি আমি!আর বিধানবাবু এত বছর ধরে নাকি আমার জন্যই বসে আছেন।আমি এসে তাকে মুক্তি দেবো।সামনাসামনি ভূতের সাথে কথা বলেও যে ভয় আমি পাইনি এ কথা শুনে বুকটা দুরু দুরু করে কাঁপতে শুরু করলো।আমায় কি করতে হবে জিজ্ঞাসা করাতে তিনি হাতের ইশারায় টেবিলের উপর একটি চাবি দেখিয়ে বললেন যে ওই বন্ধ ঘরের চাবি ওটা;ঘরটি খুলে একটি পূজার ব্যবস্থা করতে আর গীতা পাঠ করতে।পূজার পরে আমি যেন তার আত্মার উদ্দেশ্যে একটি অন্নজল করি তাহলেই নাকি তার আত্মার মুক্তি হবে।চলে যাওয়ার আগে তিনি তার গোত্রটি জানাতে ভুললেননা।
পরদিন ওই চাবি দিয়ে রমাপদকে সাথে নিয়ে তার সমস্ত বাঁধা-নিষেধকে অগ্রাজ্য করে ঘরে ঢুকে ঘরটি পরিষ্কার করি।রমাপদর অনেক প্রশ্নের উত্তরই আমি দিতে পারিনা বা ইচ্ছা করেই দিইনা।স্থানীয় একজন বয়স্ক ঠাকুর মশাইকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে ঘরটিতে নারায়ন পূজা করি ও বিধানবাবুর কথামত তার নামে একটি অন্নজল দান করি।
বলাবাহুল্য ওই পুজোর রাত থেকে কেউ আর কোনদিন কোন চিৎকার ওই ঘর থেকে শুনতে পায়নি।
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
Wednesday, June 13, 2018
অবাক করলে
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
মাঝে মাঝে মনেহয়,
বিশ্বাসঘাতকতার জবাবটা একইভাবে ফিরিয়ে দিই,
কিন্তু কিছুতেই পারিনা!
বিবেক,মনুষ্যত্ব, শিক্ষা আর রুচিবোধ-
চারিপাশ থেকে আমায় ঘিরে ধরে,
আমি দুর্বল হয়ে পড়ি!
ফুলের মত নিস্পাপ হয়ে জম্মগ্রহন করে,
পরিবারে পিতার শিক্ষাকে পাথেয় করে-
আজ এই বয়সে এসে এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা কিছুতেই মানতে পারছিনা!
বুকের ভিতরে সর্বদা একটা ব্যথা অনুভূত হয়,
কিছুতেই এই ব্যথার কারাগার থেকে আমি বেরোতে পারছিনা!
মাঝে মাঝেই ফিরে যাচ্ছি অতীতের সেই দিনগুলিতে।
জীবনে অনেক আঘাত পেয়েছি,
প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা সহেছি,
কিন্তু বন্ধুর(?) এই বিশ্বাসভঙ্গটাকে-
কিছুতেই মানতে পারছিনা।
পুরানো অনেক স্মৃতি মনের মাঝে ভিড় করছে;
তোমায় ভালোবেসেছিলাম,তোমার খুশিতে খুশি হতাম-
কিন্তু তুমি তার মর্যাদা রাখতে পারলে না- মিতা!
#নন্দা ১৩-৬-১৮ রাত ২-৪০
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
মাঝে মাঝে মনেহয়,
বিশ্বাসঘাতকতার জবাবটা একইভাবে ফিরিয়ে দিই,
কিন্তু কিছুতেই পারিনা!
বিবেক,মনুষ্যত্ব, শিক্ষা আর রুচিবোধ-
চারিপাশ থেকে আমায় ঘিরে ধরে,
আমি দুর্বল হয়ে পড়ি!
ফুলের মত নিস্পাপ হয়ে জম্মগ্রহন করে,
পরিবারে পিতার শিক্ষাকে পাথেয় করে-
আজ এই বয়সে এসে এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা কিছুতেই মানতে পারছিনা!
বুকের ভিতরে সর্বদা একটা ব্যথা অনুভূত হয়,
কিছুতেই এই ব্যথার কারাগার থেকে আমি বেরোতে পারছিনা!
মাঝে মাঝেই ফিরে যাচ্ছি অতীতের সেই দিনগুলিতে।
জীবনে অনেক আঘাত পেয়েছি,
প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা সহেছি,
কিন্তু বন্ধুর(?) এই বিশ্বাসভঙ্গটাকে-
কিছুতেই মানতে পারছিনা।
পুরানো অনেক স্মৃতি মনের মাঝে ভিড় করছে;
তোমায় ভালোবেসেছিলাম,তোমার খুশিতে খুশি হতাম-
কিন্তু তুমি তার মর্যাদা রাখতে পারলে না- মিতা!
#নন্দা ১৩-৬-১৮ রাত ২-৪০
Saturday, June 9, 2018
অবশেষে এলে
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
হঠাৎ করেই শিহরিত,
খোলা ছাদে আমি,
পরশে ভিজিয়ে দিলে,
ভিজে হলাম সিক্ত।
ঋতুর বৈচিত্রতায় তুমি এলে,
আমার কাছে বৃষ্টি রূপে,
এলেই যখন কাছে আবার,
থাকো না গো আর কিছুক্ষণ।
সুর বাজছে আজ মনের মাঝে,
সিক্ত করেছো আমায় আর প্রকৃতিকে,
দুপুরের সেই কাঠফাটা রোদের তেজ,
হারিয়েছে তাকে তোমার আসার বেগ।
আহা!কি অপরূপ দৃশ্য,
শরীর মন করলে শীতল,
বলাকারাও আজ আত্মহারা,
বৃষ্টির ধারায় মেতেছে আনন্দে।
#নন্দা দুপুর ৩টে ।
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
হঠাৎ করেই শিহরিত,
খোলা ছাদে আমি,
পরশে ভিজিয়ে দিলে,
ভিজে হলাম সিক্ত।
ঋতুর বৈচিত্রতায় তুমি এলে,
আমার কাছে বৃষ্টি রূপে,
এলেই যখন কাছে আবার,
থাকো না গো আর কিছুক্ষণ।
সুর বাজছে আজ মনের মাঝে,
সিক্ত করেছো আমায় আর প্রকৃতিকে,
দুপুরের সেই কাঠফাটা রোদের তেজ,
হারিয়েছে তাকে তোমার আসার বেগ।
আহা!কি অপরূপ দৃশ্য,
শরীর মন করলে শীতল,
বলাকারাও আজ আত্মহারা,
বৃষ্টির ধারায় মেতেছে আনন্দে।
#নন্দা দুপুর ৩টে ।
Friday, June 8, 2018
সন্তান চোর
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
তোমাকে উজাড় করে ভালোবেসে,
কাছে টেনে নিয়েছিলাম,
তোমায় বিশ্বাস করে সংসারের-
খুঁটিনাটি সব জানিয়েছিলাম।
একটু একটু করে তুমি আমার-
অন্দরমহলে ঢুকেছিলে।
আমাকে গর্ভবতী দেখে-
তোমার লোভ হয়েছিলো!
প্রসবের পূর্ব পর্যন্ত-
তুমি আমার সঙ্গ ছাড়োনি!
সন্তান জম্ম দিতে যে কষ্ট-
যে যন্ত্রনা সব পেলাম আমি!
তুমি আমার সন্তানকে চুরি করলে?
আমায় জম্মদাত্রী হিসাবে অস্বীকার করলে?
এত বিষ তোমার মনের মধ্যে ছিলো?
তুমি তো নরকের কীটেরও অধম!
সকলের কাছে নিজেকে-
মা বলে পরিচয় দিচ্ছ-
পরকালের ভয় তোমার নেই ?
ও,তুমি তো আবার ঈশ্বর মানোনা!
আমার চোখের জল-
তোমার জীবনের অভিশাপ হবেনা?
পারবে তো শেষবেলায় জবাবদিহি করতে?
যারা তোমার পাশে থেকে সহযোগীতা করছে,
তাদের মনের খবর রাখো কি?
তারাই যে নিত্য আমার সন্তানের খবর
আমায় দেয় জানো কি তা ?
চোরের উপর বাটপারী হবে না তো ?
মানুষ হও,মনুষ্যত্ববোধ জাগাও।
# নন্দা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
তোমাকে উজাড় করে ভালোবেসে,
কাছে টেনে নিয়েছিলাম,
তোমায় বিশ্বাস করে সংসারের-
খুঁটিনাটি সব জানিয়েছিলাম।
একটু একটু করে তুমি আমার-
অন্দরমহলে ঢুকেছিলে।
আমাকে গর্ভবতী দেখে-
তোমার লোভ হয়েছিলো!
প্রসবের পূর্ব পর্যন্ত-
তুমি আমার সঙ্গ ছাড়োনি!
সন্তান জম্ম দিতে যে কষ্ট-
যে যন্ত্রনা সব পেলাম আমি!
তুমি আমার সন্তানকে চুরি করলে?
আমায় জম্মদাত্রী হিসাবে অস্বীকার করলে?
এত বিষ তোমার মনের মধ্যে ছিলো?
তুমি তো নরকের কীটেরও অধম!
সকলের কাছে নিজেকে-
মা বলে পরিচয় দিচ্ছ-
পরকালের ভয় তোমার নেই ?
ও,তুমি তো আবার ঈশ্বর মানোনা!
আমার চোখের জল-
তোমার জীবনের অভিশাপ হবেনা?
পারবে তো শেষবেলায় জবাবদিহি করতে?
যারা তোমার পাশে থেকে সহযোগীতা করছে,
তাদের মনের খবর রাখো কি?
তারাই যে নিত্য আমার সন্তানের খবর
আমায় দেয় জানো কি তা ?
চোরের উপর বাটপারী হবে না তো ?
মানুষ হও,মনুষ্যত্ববোধ জাগাও।
# নন্দা
Tuesday, June 5, 2018
তুমি এলে
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
হঠাৎ আসা বৃষ্টি,
ভিজে গেছি আমি,
চারিপাশে জল থৈ থৈ,
ভিজে গেছে সমস্ত শরীর,
শাড়ির প্রতি পাটেপাটে,
জল ছাড়েনি ঠোঁট দুটিকে,
ভিজিয়ে দিয়েছে তাকেও,
চিবুক থেকে টুপটাপ ধারা,
পড়ছে শিহরিত শরীরে।
এ তো ঠিক যেন তোমার সোহাগ,
তুমি যা দিতে আগে,
নির্জন দুপুরে জলমধ্যে দাঁড়িয়ে,
চারিদিকে চেয়ে দেখি,
কোথাও তুমি নেই!
মনেমনে ভাবি-
তবে কি বৃষ্টি হয়েই ছদ্মবেশে-
এলে আমার কাছে?
# নন্দা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
হঠাৎ আসা বৃষ্টি,
ভিজে গেছি আমি,
চারিপাশে জল থৈ থৈ,
ভিজে গেছে সমস্ত শরীর,
শাড়ির প্রতি পাটেপাটে,
জল ছাড়েনি ঠোঁট দুটিকে,
ভিজিয়ে দিয়েছে তাকেও,
চিবুক থেকে টুপটাপ ধারা,
পড়ছে শিহরিত শরীরে।
এ তো ঠিক যেন তোমার সোহাগ,
তুমি যা দিতে আগে,
নির্জন দুপুরে জলমধ্যে দাঁড়িয়ে,
চারিদিকে চেয়ে দেখি,
কোথাও তুমি নেই!
মনেমনে ভাবি-
তবে কি বৃষ্টি হয়েই ছদ্মবেশে-
এলে আমার কাছে?
# নন্দা
Monday, June 4, 2018
অশ্রু সম্বল
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
আঁধার রাতে একলা ঘরে,
মনে পড়ে কত কথা,
স্মৃতির পাতা উল্টে দেখি,
জমাট বাঁধা বুকে ব্যথা!
পরশ আমি পাইগো তোমার,
প্রতিরাতে ঘুমের মাঝে,
হঠাৎ এসে হঠাৎ করেই,
যাও হারিয়ে একটু হেসে।
লুকোচুরির এই যে খেলা,
আর না লাগে ভালো,
মনের মাঝে আছো সদাই,
একসাথেতেই চলো।
তবুও তোমায় হারায় আমি,
প্রতিক্ষণে প্রতিপলে,
মনের মাঝেই বসত তোমার,
সময় কাটাই চোখের জলে।
#নন্দা ১-৬-১৮ রাত ৩টে
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
আঁধার রাতে একলা ঘরে,
মনে পড়ে কত কথা,
স্মৃতির পাতা উল্টে দেখি,
জমাট বাঁধা বুকে ব্যথা!
পরশ আমি পাইগো তোমার,
প্রতিরাতে ঘুমের মাঝে,
হঠাৎ এসে হঠাৎ করেই,
যাও হারিয়ে একটু হেসে।
লুকোচুরির এই যে খেলা,
আর না লাগে ভালো,
মনের মাঝে আছো সদাই,
একসাথেতেই চলো।
তবুও তোমায় হারায় আমি,
প্রতিক্ষণে প্রতিপলে,
মনের মাঝেই বসত তোমার,
সময় কাটাই চোখের জলে।
#নন্দা ১-৬-১৮ রাত ৩টে
Friday, June 1, 2018
বেইমান
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
প্রাচীরের গাত্রে আগাছার মত বড় হচ্ছিলে,
ভালোবেসে হাতে ধরে তুলে এনে ঠাঁই দিলাম-
নিজের ফুল-বিতানে।
দিনরাত পরিশ্রম দিয়ে একটু একটু করে তোমায়,
বড় করতে লাগলাম।
আস্তে আস্তে তুমি আমার বিতানের সকলকে ছাড়িয়ে-
মাথা তুলে দাঁড়ালে।
গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ সহ্যসীমা অতিক্রম করলে,
সুশীতল বাতাসের আশায়
তোমার শাখাতলে যেয়ে দাঁড়ালাম।
আর তুমি অকৃতজ্ঞ, বেইমানের মত,
তোমার ভারী একটি ডাল-
হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে আমার কাঁধের উপর ফেললে।
ভূ-লুন্ঠিত হয়ে যন্ত্রনায় কাতরাতে লাগলাম,
হয়তো তখন তুমি মনেমনে হাসছো!
আমি ভুলেছিলাম;আগাছা আগাছায় হয়,
তাকে যতই যত্ন করে বড় করিনা কেন,
সে নাম, পরিচয় গোত্রহীন!
একটি না হোক, বেশ কয়েকটি কোপে তোমায় শেষ করে দিতে পারতাম,
বিবেক বাঁধা দিলো,
শত হোক তোমার বেড়ে উঠা আমার বিতানে।
#নন্দা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
প্রাচীরের গাত্রে আগাছার মত বড় হচ্ছিলে,
ভালোবেসে হাতে ধরে তুলে এনে ঠাঁই দিলাম-
নিজের ফুল-বিতানে।
দিনরাত পরিশ্রম দিয়ে একটু একটু করে তোমায়,
বড় করতে লাগলাম।
আস্তে আস্তে তুমি আমার বিতানের সকলকে ছাড়িয়ে-
মাথা তুলে দাঁড়ালে।
গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ সহ্যসীমা অতিক্রম করলে,
সুশীতল বাতাসের আশায়
তোমার শাখাতলে যেয়ে দাঁড়ালাম।
আর তুমি অকৃতজ্ঞ, বেইমানের মত,
তোমার ভারী একটি ডাল-
হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে আমার কাঁধের উপর ফেললে।
ভূ-লুন্ঠিত হয়ে যন্ত্রনায় কাতরাতে লাগলাম,
হয়তো তখন তুমি মনেমনে হাসছো!
আমি ভুলেছিলাম;আগাছা আগাছায় হয়,
তাকে যতই যত্ন করে বড় করিনা কেন,
সে নাম, পরিচয় গোত্রহীন!
একটি না হোক, বেশ কয়েকটি কোপে তোমায় শেষ করে দিতে পারতাম,
বিবেক বাঁধা দিলো,
শত হোক তোমার বেড়ে উঠা আমার বিতানে।
#নন্দা
Subscribe to:
Posts (Atom)