Sunday, October 29, 2017

শ্মশানসম হৃদয়
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

হৃদয় আজ হয়েছে নীরব ,
অভাব সেথায় তোমার পরশ ,
হৃদয় হলো শ্মশানবৎ ,
নির্জন শূণ্যতার বসত !

হাহাকার করা এ বুক ,
চোখ বুজে দেখি ওই মুখ ,
ভরে থাকে মন স্মৃতিতে ,
ব্যথা জমে পাহাড়, হৃদয়েতে !

হারিয়েছো তুমি অজানার মাঝে ,
হৃদয় হলো মরুসম তাই -
তোমার স্মৃতির সিঞ্চনতায় ,
তোমায় দেখতে আমি পাই !

@নন্দা  27-10-17 

Saturday, October 28, 2017

নিঠুর পৃথিবী
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

 আমার চারিদিকেই ঘর ,
 তবুও আমি ঘরেরই কাঙ্গাল !
 হৃদয়ে ভালবাসা অফুরান ,
 ভালবাসা পেতে ছোটে কালঘাম !

আমার সকল ,ভালবাসা,ইচ্ছা,কামনা -
বিনিময়ে পাই আপনজনের শুধুই ভৎর্সনা
আমার আজীবন পরিশ্রমের ফল ,
নির্মম বাস্তবতায় হলো বিফল !

@নন্দা    28-10-17  

Thursday, October 26, 2017

জীবনের সাদা পাতা
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

অনেকটা পথ একসাথে হাঁটার পড় -
হয়ে গেলাম একা !

যে কাজগুলি অতি সহজেই করতে পারতাম ,
আজ আর পারিনা ।

আমার কল্পনার রংতুলিতে যে ছবি আঁকতাম ,
ক্যানভাসটাই খুঁজে পাইনা !

নর,নারী সংসার গড়ে তোলে ,
প্রকৃতির নিয়মে আসে সন্তান ;

জীবন হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ -
অকসাৎ একজনের বিদায় !

মণ্ডবে প্রতিমা থাকলে হৈ,হট্টগোল লেগে থাকে ,
নিরঞ্জনের পর সব শান্ত !

আনন্দ,হাসি সব চলে যায় পিছনে -
সামনে অন্ধকার আর শূণ্যতা !

@ নন্দা    

Wednesday, October 25, 2017

নেভেনা আগুন
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

কতটুকু দিলে সবটুকু দেওয়া হয় ,
বুঝলামনা আজও আমি !
কতটা ভালবাসলে ভালবাসা পূর্ণতা পায় ,
জানালোনা অন্তর্যামী !

বিরহ যন্ত্রনায় পুড়ে অঙ্গার হলে ,
যন্ত্রনা বারে দ্বিগুণ -
কতটা সময় দিলে যন্ত্রনা কমে ,
নিভে বুকের আগুন !

ছাইচাপা আগুন ধিকিধিকি জ্বলে ,
সেতো সময়ে হয় শেষ ,
বুকের আগুন শুরু হলে জ্বলা -
আজীবন থাকে তার রেশ !

@নন্দা     24-10-17 

Monday, October 23, 2017


অব্যক্ত যন্ত্রণা 
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 

     অফিস থেকে বেরিয়ে বাস থেকে নেমেই বৃষ্টির সম্মুখীন ! ছাতাটা আজ আনতে ভুলে গেছে রেখা ।গতকাল বৃষ্টিতে ভেজা ছাতাটা ব্যালকনিতে শুকাতে দিয়েছিলো আজ আর আসবার সময় ব্যাগে পুড়তে মনে নেই । এতো তাড়া থাকে অফিসে বেরোনোর সময় ! ছেলে স্কুলে বেরোবে তার খাবার ,টিফিন ,নীলয়ের টিফিন ,দুপুরের খাবার ,ওষুধ সব গুছিয়ে অচলাকে বুঝিয়ে দেওয়া । তারপর নাকে মুখে দু'টি গুঁজেই অফিস ছোটা ।

     আজ প্রায় একবছর হোল নিলয়ের বাম অঙ্গটা পুরো অসার ।প্রথমে সামান্য জ্বর ,গায়ে ব্যথা । কিছুতেই জ্বর কমেনা ;আস্তে আস্তে শরীরের বাম অঙ্গে অসারতা ।আর কিছুই করার নেই ।ফিজিওথেরাপিষ্ট নিয়মিত এসে এক্সারসাইজ করিয়ে যাচেছন । কিনতু উন্নতির কিছুই দেখা যাচেছনা ।শ্বাশুড়ী মাস ছ'য়েক আগে মারা গেছেন । আর শ্বশুরমশাই তো বিয়ের আগেই চলে গেছেন । এখন বাড়িতে মানুষ বলতে সে নিজে ,পঙ্গু স্বামী ,দশ বছরের ছেলে নীলাদ্রী আর সর্বক্ষনের কাজের মেয়ে অচলা । অচলা ভীষণ ভালো মেয়ে ।রেখা যখন বাড়িতে থাকেনা তখন ছেলে স্কুল থেকে ফিরলে বড় রাস্তার মোড় থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে এসে যত্ন সহকারে খাওয়ানো ,তাকে দেখে রাখা ,বড়বাবুর সমস্ত দায়িত্ব পালন করা ,ঘড়ি ধরে তাকে সময়মত ওষুধ খাওয়ানো -সব সবকিছুই  সে করে । রেখা বাড়িতে ফেরার সাথে সাথে তার চা ,জল খাবার এমনকি রাতের রান্না পর্যন্ত সব রেডি থাকে । শুধু সকালের দিকটাই রেখার একটু তাড়া থাকে । দুপুরের রান্নাটা সে নিজের হাতেই করে বাটিতে বাটিতে ঢেলে রেখে যায় ।

            বাসটা এসে এমন জায়গায় দাঁড়ালো সামনে জল আর কাদায় পরিপূর্ণ । পড়ে যাচ্ছিলো । হঠাৎ এক ভদ্রলোক ধরে ফেলেন । মুখের দিকে না তাকিয়েই রেখা তাকে "থ্যাংক্স" বলে । বৃষ্টিটা বেশ জোরেই পড়ছে ।শেডের নীচে ছাতাবিহীন অবস্থায় যারা দাঁড়ানো তারা প্রত্যেকেই ভিজে যাচ্ছেন । আর যাদের কাছে ছাতা আছে তারা সকলেই ছাতা খুলে বৃষ্টির হাত থেকে নিজেদের পোশাক বাঁচাতে সামনের দিকে ছাতা খুলে ধরে আছেন ।রেখা আস্তে আস্তে পিছনদিকটাতে চলে যায় । অন্যমনস্ক ভাবেই চোখ পরে যে ভদ্রলোক তাকে পড়ে যাওয়ার থেকে বাঁচিয়েছিলেন তার দিকে ।
---সৌগত তুমি ? 
সৌগতও এতোক্ষন পরে রেখাকে খেয়াল করে ।
----অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা হোল !
----বার বছর , একযুগ পর । 
----কেমন আছ ? সেই আগের মতই দেখতে আছ , কোন পরিবর্তন হয়নি । বয়স একটুও বাড়েনি ,,,,
----ওসব কথা ছাড়ো । আছি ,ভালোই আছি । তুমি কেমন আছ ? মাসিমা ,মেশোমশাই ,তোমার বৌ ,বাচ্চা আর দেবী ? দেবী কেমন আছে ? নিশ্চয় ওর বিয়ে হয়ে গেছে ? কেমন আছে ও এখন ? ওর শ্বশুরবাড়ি কোথায় ?
----আরে দাঁড়াও ,দাঁড়াও ;এতো প্রশ্নের একবারে উত্তর দেবো কি করে ? এক একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে পরের প্রশ্নটাতো ভুলে যাবো । মা ভালো আছেন ,বাবা আজ দু'বছর হোল আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ।" তারপর হাসতে হাসতে বললো ,"বিয়ে করলে তো বৌ,বাচ্চা ? বিয়ের ফুলই তো ফুটলো না । আর দেবী ?"
            কথা বলতে বলতে বৃষ্টিটা কমে আসলো । এক এক করে সকলে শেডের নীচ থেকে বাস ধরার জন্য বাইরে এসে দাঁড়ালো । সৌগত রেখাকে বলে , "চল ,সামনেই একটা কফিবার আছে ,ওখানে কফি খেতে খেতে কথা হবে ।" 

         বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে রেখা সৌগতর মুখের দিকে তাকালো !
----সে সময় আজ আর আমার হাতে নেই ।বাড়িতে দু'টি প্রাণী হা করে ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে বসে আছে কখন আমি বাড়ি ফিরবো ।একদিন তোমাকে দেওয়ার জন্য আমার হাতে প্রচুর সময় ছিলো ।সেদিন তোমাকে কফিহাউসে আসতে বলে সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও তিনঘন্টা অপেক্ষা করেছিলাম তোমার জন্য ।আমার সাথে দেখা করবার তোমার সময় সেদিন হয়নি । ভীষণ ভেঙ্গে পড়েছিলাম । সেই সময় জীবনটাকে মূল্যহীন মনে হত ! ভেসেই যাচ্ছিলাম । বাবা ,মা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিলেন । নিলয় জীবনে না আসলে বুঝতেই পারতামনা ভালবাসার প্রকৃত মর্ম ।কেনো ,কিসের জন্য তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছিলে জানিনা, আজ আর জানারও কোন ইচ্ছা নেই ।শুধু এটুকুই জানি নিলয় ছাড়া আর কাউকে একান্তে সময় দেওয়ার মত সময় আমার হাতে নেই । আমি আজ সুখী ,খুব সুখী । ওই যে আমার বাস এসে গেছে ।আমি আসি । ভালো থেকো তুমি ।"
         রেখা দৌড়ে যেয়ে বাসে উঠলো ।সৌগত সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের মনেই বললো ,"সেদিন কেনো আসতে পারিনি তা যদি জানতে নিজেই কেঁদে আকুল হতে । তারথেকে এই ভালো হোল -আমার নামটা চিরদিনের মত তোমার মন থেকে মুছে ফেলতে পেরেছো ।আমায় ঠক ,জোচ্চর ,প্রতারক ভাবতে পেরেছো । তুমিও খুব খুব ভালো থেকো ।"

         সৌগত একাই যেয়ে কফিবারে বসে কফি খেতে খেতে ফিরে যায় বার বছর আগের দিনগুলিতে  --
       সেদিন সৌগত কফিহাউজে যাবে বলে তৈরী হচ্ছে ;হঠাৎ লান্ডলাইনে একটা ফোনে জীবনের সব স্বপ্ন হঠাৎ আসা কালবৈশাখীর মত সবকিছু ভেঙ্গে চুরে তচনচ করে দিলো ।একমাত্র আদরের ছোট বোন দেবীকা কলেজ থেকে ফেরার পথে কিছু সমাজ বিরোধী তাকে তুলে নিয়ে যায় ।সমবয়সী অনেক বন্ধুদের সাথে সেও ফিরছিলো ।বন্ধুরা বাঁধা দিতে গেলে সমাজ বিরোধীরা ভোজালী বের করে তাদের দিকে তেড়ে আসে ।সকলেই ভয়ে জড়সড় হয়ে যায় । সমাজ বিরোধীরা দেবীকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর ফোন করে তারা দেবীর বাড়িতে খবর দেয় ।সঙ্গে সঙ্গেই সৌগত দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ।থানা ,পুলিশ সারারাত ছুটাছুটি দেবীর সন্ধান সেদিন আর পাওয়া যায়না ।রেখার কথা ভাববার সময় তখন সৌগতর নেই । কাক ডাকা ভোরে যখন সৌগত বাড়ির অভিমুখে রওনা দিয়েছে ঠিক তখনই পুলিশের একটা ভ্যান ঘ্যাচ করে সৌগতর সামনে এসে দাঁড়ায় ।পুলিশ অফিসার গাড়ি থেকে নেমে সৌগতকে বলেন ,"এখান থেকে কিছুটা দূরে রেললাইনের উপরে আঠার ,উনিশ বছরের একটি মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে ।মর্গে যেয়ে আপনাকে বডি শনাক্ত করতে হবে ।" সৌগত নিজের মাথাটা ধরে রাস্তাতেই বসে পড়ে হাউ ,হাউ করে কাঁদতে লাগে ।বয়স্ক এক পুলিশ অফিসার তার হাত ধরে উঠিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেন । 

               লাশ শনাক্তকরণ ,দাহ ,শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান সব মিটে যাওয়ার পর চিরশান্ত সৌগত অন্য মূর্তি ধারণ করে ।যে ভাবেই হোক বোনের প্রতি এই নারকীয় হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতেই হবে ।থানা ,পুলিশের দরজায় ,দরজায় ঘুরে এক বছরের মধ্যেও কোন সুরাহা সে করতে পারেনা ।সব অপরাধী অধরাই থেকে যায় ।কিনতু এই একবছরে সে এটুকু বুঝতে পারে ধর্ষণকারী বা খুনীরা রাজনৈতিক নেতাদের আত্মীয় আবার কেউ তাদের ছত্রছায়ায় পালিত গুন্ডা । সোজা আঙ্গুলে ঘি কিছুতেই উঠবেনা । কিনতু আইনের ছাত্র সৌগত আইনের বিরুদ্ধচারণও করতে চায়না ।

            সৌগতর সাথে রেখার যখন প্রেম চলছে সৌগতর তখন উকালতির ফাইনাল ইয়ার ।এই এক বছরে তার পড়াশুনার খুব ক্ষতি হয় । শুরু করে সে দিনরাত এককরে পড়াশুনা করতে । উকালতি পাশ করে সে নামজাদা উকিল অমরেশ রায় চৌধুরীর জুনিয়র হিসাবে কাজ শুরু করে । কথায় কথায় সে অমরেশবাবুকে তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য তার বোনের ধর্ষণকারী ও খুনিদের শাস্তি দেওয়ার কথা জানায় । অমরেশবাবু সৌগতকে খুব স্নেহ করতেন । তিনি তাকে কথা দেন এরজন্য  সর্বরকম সাহায্য করতে তিনি প্রস্তুত । 

             নূতন করে আবার কেস ফাইল করা হয় । ফোনে হুমকি দেওয়া ,ভয় দেখানো -অমরেশবাবু ও সৌগতর উপর চলতে থাকে ।কিনতু জাদরেল উকিল অমরেশবাবু কিছুতেই দমে যাওয়ার পাত্র নন ।তার সাথও প্রশাসনিক উপর মহলের উঠাবসা ।স্বাক্ষ্য,সাবুদ প্রমাণসহ তিনজন ধরা পরে । বাকী একজন ওই ঘটনার দু'বছরের  মাথায় মদ্যপ অবস্থায় বাইক এ্যাকসিডেন্টে মারা যায় । এই তিনজনের যাব্বজীবন কারাদণ্ড হয় ।

           সৌগত তার বোনের মৃত্যুর দশ বছরের মাথায় যেয়ে সুবিচার পায় ।এরমধ্যে তার যে রেখার কথা মনে পড়েনি তা  নয় ।  কিনতু ইচ্ছা করেই কোন যোগাযোগ রাখেনি । প্রাণপ্রিয় ছোট্ট বোনটির মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়াটাই তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় ।তাই নিজের হাতেই সে তার ভালবাসাকে গলাটিপে হত্যা করে ।কারণ ভালবাসায় আবদ্ধ হতে গেলে পিছুটান থাকবে আর এই পিছুটানই তাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করবে ।

            বারবছর ধরে সে রেখার কোন খোঁজ করেনি । কারণ সে বুঝতে পেরেছিল বছর একটি মেয়ের পক্ষে কারও অপেক্ষায় বসে থাকা কিছুতেই সম্ভব নয় ।রেখা যে তাকে ভুল বুঝেছে এবং তাকে যে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবেনা এই ব্যপারেও সে নিশ্চিত ছিলো ।

          আজ যখন তার রেখার সাথে দেখা হোল ,সৌগত ভেবেছিলো সব শোনার পর রেখা তার অসহায়তা বুঝতে পারবে -পারবে তাকে ক্ষমা করে দিতে । কিনতু রেখা তো তাকে কোন সুযোগই দিলোনা !

@নন্দা    22-7-17

Sunday, October 22, 2017

"মনের কথা"
                  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী                            আমি জানি তোমার প্রেমের গভীরতা,
 কিন্তু আমি যে অসহায়-                                       সংসার আমাকে আস্ঠে   পৃষ্ঠে বেধেছে --                                                                                             তোমার ডাক আমি শুনতে  চাইনা -                                তুমি যে অনেক দেরী কোরে ফেলেছ,            
আমি এখন রাজরানী-            
অন্য কারও ঘরণী ,                                                      সংসার আমার সুখের ছন্দে ,                                       নৃত্যের তালে চলে ।                                                   বাইরের সব বিসর্জন দিয়ে                                           আজ আমি খুব সুখী ।                                  
 পিছন ফিরে তাকানোর                                          কোনো সময় আমার নেই ।                                          তুমি চলে যাও---                                                        দূরে--  আরও দূরে -বহূ  দূরে--                                     যেখান থেকে তোমার ডাক -                                         আমার কানে এসে  পৌঁছাবে না ।                              
জীবন সন্ধ্যা
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ঘন আবীরে নেমেছে সন্ধ্যা ,
 জীবন ভরেছে আঁধারে ,
দৃষ্টি বুঝি হারিয়েছে আমার ,
 আঁধার ঢেকেছে চারিধারে ।

সীমাহীন যন্ত্রনা বুকের মাঝারে ,
 হৃদয়ের স্পন্দন গতিহীন ,
পাপড়ির মত ঝরলো আশা ,
 বাঁচার ইচ্ছা ক্ষীন !

উচ্ছল জীবনে হঠাৎ ঝড় ,
 সাধের জীবন করলো অচল ,
ভেঙ্গেচুরে সব তচনচ হোলো ,
 জীবন হবেনা আর সচল !

@ নন্দা      20-10-17 

Saturday, October 21, 2017

মৃতের আত্মকথা
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

(সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত একটি গল্প )

          আগে আমাকে সবাই সাতাশ নম্বর বেডের পেশেন্ট বলছিলো ।যে মুহুর্তে আমার মৃত্যু হলো আমি হয়ে গেলাম 'ডেডবডি'। অনেকে আবার সংক্ষিপ্ত করে বডিই বলছিলো ।আগেরদিন সন্ধ্যায় আমার স্ত্রী আমার সাথে দেখা করে গেছে ।তখন আমার খুব তেষ্টা পেয়েছিলো ।ওর কাছে ইশারায় জল খেতে চাইলাম ।যেহেতু আমি ভেন্টিলেশন পেশেন্ট ছিলাম তাই ওরা আমাকে জল দিতে চাইছিলোনা ।আমার স্ত্রী অনেক কাকুতিমিনতি করে তুলো ভিজিয়ে এনে আমার মুখে দু'ফোঁটা জল দিলো । আমি গিলে নিলাম জলটুকুন । সে যেমন ভাবেনি ,আমিও ঠিক তেমনই ভাবিনি এটাই আমাদের শেষ দেখা । সেই মুহুর্তে ছেলেমেয়ে দুটিকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছিলো । ইশারায় স্ত্রীকে বললামও ওদের একটু দেখবো ,ওদের পাঠিয়ে দাও । ও  বললো হাসপাতলের নিয়মানুসারে একজনই ঢুকতে পারবে , ওরা বাইরে আছে ;আগামীকাল এসে দেখা করবে । এদিকে ভিজিটিং আওয়ার শেষ । স্ত্রী চলে গেলো পরেরদিন আসবে বলে । কত কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো কিণ্তু কিছুই বলতে পারছিলাম না । ভেন্টিলেশনে থাকার ফলে মুখে ঢুকানো ছিলো অজস্র নল ; কথা কিছুতেই বলতে পারিনি বিগত ষোলোদিন ধরে । ইশারায় যেটুকু বুঝাতে পেরেছি সকলকে । একবেলা স্ত্রী না আসলে মনেহত কতদিন তাকে দেখিনি । একদিন সে বিশেষ কোন কাজের জন্য সকালে আসতে পারেনি । আমি তো জামাইকেই জিগ্গেস করে বসলাম ইশারায় ,"তোমার মা কোথায় ?"আসলে আমার স্ত্রী এমন একজন মহিলা যে ঘরে বাইরে সমান পারদর্শী । তার উপর আমি সারাজীবন সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে থেকেছি ।

           যাহোক আবার আমার কথায় ফিরে আসি ।রাত তখন অনেক । কটা বাজে ঠিক বলতে পারবোনা ।আমার শরীর আস্তে আস্তে খারাপ হতে লাগলো । চোখের সম্মুখে নিজের পরিবারের সকলের মুখ এক এক করে ভেসে উঠতে লাগলো । ঠিক সেই মুহূর্তেই স্ত্রী ,ছেলে ,মেয়ে , জামাই প্রত্যেককে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিলো । বুঝতে পারছিলাম আমার শেষ সময় এসে গেছে ! গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে । একটু জল পেলে ভালো হত ! কিণ্তু কে দেবে আমায় জল ? এখানে তো আমার নিজের কেউ নেই । সেই সন্ধায় স্ত্রী তিন ফোঁটা জল খাইয়ে গেছে । সারারাত প্রায় সারারাতই কষ্টে ছটফট করেছি । ভোরের দিকে সিস্টর্স ,নার্সদের নজরে আসি । তখনই তারা তৎপর হয় । কিণ্তু ততক্ষনে আমার কার্ডিও এট্যাক করে ফেলেছে । একের পর এক ইঞ্জেকশন তারা পুস করে চলেছে কিণ্তু আমার শরীর আর নিতে কিছুই পারছে না ;সব ওষুধই মুখ দিয়ে বের হয়ে যাচেছ ! পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আমি চলে গেলাম ।

         প্রায় চার ঘন্টা পরে আমার বাড়ির লোককে খবর দিলো ,"আমি মারা গেছি ।"আমার সেজভাই আমায় দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো । সিস্টার তাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বললেন আরও বললেন বাড়ির পুরুষ ছেলেদের খবর দিতে । আমার বডি পরে রইলো সাতাশ নম্বর বেডে । আমি আমার ভাই বেড়োনোর আগেই বেড়িয়ে আসলাম সি.সি.ইউ. থেকে । ভাই এসে একটি বেঞ্চের উপর বসে কাঁদতে লাগলো । আমার আত্মা পাশের এক ভদ্রলোকের ভিতর ঢুকে গেলো । ওই ভদ্রলোক হয়েই আমি নিজেই ভাইকে শান্তনা দিতে লাগলাম । অনেক বুঝালাম তাকে ।

   ইতিমধ্যে আমার বাড়ির প্রচুর লোকজন সেখানে হাজির হয়ে গেলো । আত্মীয়স্বজন , বন্ধুবান্ধব, অন্য ভায়েরা ,আমার স্ত্রীর দিদিরা ,ভাই বৌয়েরা ,স্ত্রীর অনেক বন্ধুবান্ধব -যাদে প্রত্যেককে আমি চিনি ।কিণ্তু আমার চোখদুটি খুঁজছিলো আমার ছেলেকে ।কিছুক্ষনের মধ্যে সেও হন্তদন্ত হয়ে হাজির হয়ে গেলো । আমার মেজভাই তাকে আমার মৃত্যুর খবর জানালো । আমি নেই শুনেই সে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করে । আমার মেজভাই তাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে নিজেও  অঝোরে কেঁদে  চলেছে । ভাই আমার ছেলেকে কোন রকমে একটা জায়গায় বসায় ।আমিও জায়গা পেয়ে ছেলের পাশে বসি । ইচ্ছা করছিলো ছেলেটাকে বলি , "বাবা তুই এভাবে কান্নাকাটি করলে আমি যে খুব কষ্ট পাচ্ছি । তুই তো এখন অনেক ছোট ;ভালো করে লেখাপড়া শিখে মানুষ হ । তুই মানুষ হলেই আমার আত্মা শান্তি পাবে । তোর মা যে একা হয়ে গেলো । মায়ের দিকে খেয়াল রাখিস । তোর মা যে নিজের ওষুধটাও কিনে আনতে ভুলে যায় ;এটা এখন থেকে তোর দায়িত্ব । দিদি , জামাইবাবুর কাছে সারাজীবনই আদরের ভাই হয়েই থাকিস । ওরা মনে কষ্ট পায় এমন কোন কাজ কখনই করবিনা । আরও অনেক কথায় ওর পাশে বসেই বললাম ;কিণ্তু আমি জানি ও কিছুই শুনতে পায়নি । কি করে শুনবে ও আমি যে আর বেঁচে নেই !"

            জামাই ,ভায়েরা ,স্ত্রীর বন্ধুরা সবাই ছুটোছুটি করছে আমার বডি বের করার সরকারী নিয়মকানুন পূরণ করতে । আমি জানি আমার জামাই আমায় খুব ভালবাসে ,শ্রদ্ধা করে । বেচারা নিজের কষ্ট লাঘব করার জন্য একটু কান্নারও সময় পেলোনা । ওর জন্য আমার বুকের ভিতরটা ফেঁটে যাচ্ছে । কিণ্তু কি করবো ? আমি যে অসহায় !

    আমাকে নিয়ে ওরা রাত এগারোটা নাগাদ আমার বাড়িতে আসলো । আত্মীয়স্বজন , পাড়াপ্রতিবেশীতে বাড়ি ,রাস্তা ভর্তি । আমার স্ত্রীকে ঘিরে  মহিলাদের সমাবেশ । সকলেই তার কাছের লোক ! স্বপ্নে পাওয়া দেবতার অবস্থান আমার বাড়িতে । আমি উপরে উঠতে পারছিনা । নীচ থেকেই শুনতে পাচ্ছি আমার স্ত্রী আর মেয়েরা কান্নার আওয়াজ । আমি অসহায় !! কি করবো আমি ? মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি ওর মাসির সাথে নীচে নেমে এসে আমার বুকের পরে পড়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে । কিছুই করার  ক্ষমতা নেই আমার ! কিণ্তু তাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য আমি অনেক কথাই বলে যাচ্ছি , তার সন্তান হয়ে আসবো কথা দিচ্ছি কিণ্তু নিষ্ঠুর পরিহাস !! তার কানে কোন কিছুই যাচ্ছেনা আমি জানি ।

   হঠাৎ করে মনে হচ্ছে আমার সতের বছরের ছেলেটা কয়েক ঘন্টায় বেশ বড় হয়ে গেছে । দৌড়ে যেয়ে ওর মায়ের কাছ থেকে জামা লুঙ্গি নিয়ে এলো । ওর মা আমার সব থেকে প্রিয় লুঙ্গি ও ফতুয়াটা বের করে কাঁদতে কাঁদতে ছেলের হাতে দিলো । ওই টুকুন ছেলে আমার কি সুন্দরভাবে আমায় লুঙ্গিটা পড়িয়ে দিলো । নানান কাজে হাসপাতাল থাকতেই এদিকে ওদিকে ছুটাছুটি করছে দেখেছি ।

         ফতুয়াটা পড়াতে সকলে আমাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করতে লাগলো । মেয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো , "বাবার লাগছে তো ! তোমরা এইভাবে কেনো জামা পড়াচ্ছ ?" আমারও চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছিলো , নারে মা আমার লাগছে না ; আমি এখন সব কষ্ট সব ব্যথার উর্ধে । পারলাম না বলতে ! মেয়ে সযত্নে আমায় জামা পড়িয়ে কপালে চন্দনের টিপ একে দিলো । ছেলে তুলসীপাতা এনে আমার চোখের উপর রাখলো ।

         সকলের শেষে দু'তিনজন ধরে আমার স্ত্রীকে নীচুতে নিয়ে এলো । সে কিছুতেই আমার ওই মৃত মুখ দেখবেনা । আমার পাদুটি ধরে বিড়বিড় করে কি সব বলে যাচ্ছিল । আগেরদিন সে আমার সাথে ইশারায় কথা বলে এসছে ;তাই সে আমার ওই জীবন্ত মুখটাই মনে রাখতে চায় । আমার এই মৃত মুখটা দেখলে তার আরও কষ্ট হবে । আমিও চাইছিলাম না সে আমার ওই মরা মুখটা দেখুক । আমি তো তাকে জানি সে কষ্টে কষ্টে পাগল হয়ে যাবে । এমনিতেই সে অসুস্থ্য । ওষুধগুলো খেতেও তার মনে থাকেনা । আমাকেই মনে করে দিতে হত । দুজনের মধ্যে একটা অদ্ভুত বন্ডিং ছিলো ;ছিড়ে গেলো ,চিরদিনের মত ছিড়ে গেলো ! কারও দোষে নয় ,বিধাতার লিখনে । সুন্দর সাজানো গুছানো সংসারটা আমার তচনচ হয়ে গেলো !আমি তো শুধু টাকা রোজগার করে বৌ এর হাতে তুলে দিয়েছি । কি অদ্ভুত বুদ্ধিমত্তায় সে এই সংসারটিকে সোনার সংসার করে গড়ে তুলেছিল । আমার তো চলে যাওয়ার ইচ্ছা ছিলোনা , তবুও যেতে হলো ! আয়ু শেষ ! কত আশা অপূর্ণ থেকে গেলো ! ভীষন কষ্ট হচ্ছে ! আর কোনদিন এদের কারও সাথে আমার দেখা হবেনা ! একটু পরেই এরা আমাকে নিয়ে চলে যাবে ।এই বাড়ি ,আমার ছেলে ,মেয়ে ,জামাই ,আমার স্ত্রী সব্বাইকে ছেড়ে চিরবিদায় !

      আমি চললাম কাঁচ ঢাকা গাড়িতে আমার পরিচিত পথ ,ঘাট ,লোকজন ,প্রিয়জন সবাইকে ছেড়ে এ জীবনের মত !কিণ্তু আমি আবার আসবো -আসবো ঠিক এই পরিবারেই । কারন এই পরিবারের লোকেরা যে ভালবাসা দিতে জানে পরজম্মে অন্য কোথাও গেলে এই ভালবাসা থেকে আমি বঞ্চিত হবো ;এদের মত কেউ ভালবাসতে জানেনা ! আর এদের ছেড়েও আমি থাকতে পারবনা । তাই আজকের মত আমি চলে গেলেও আবার আসবো এদেরই কাছে । তোমরা কেউ আমার জন্য কেঁদোনা । যে শিশু জম্ম নেবে এই পরিবারে তোমরা জেনে রাখ- সে আমি, আমি আবার আসবো , আসবোই আমি , আসতে আমাকে হবেই তোমাদের কাছে ! অপেক্ষা কর,ধর্য্য ধর -আমি পুনরায় আসছি !!

 @নন্দা         10-9-17

Friday, October 20, 2017

......................"অপবাদ"..............
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

                 শীতকালের সকাল । কুয়াশায় চারপাশ ঢাকা । এতোটাই কুয়াশা যে সামনের মানুষ টাকেও ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না । অনিলবাবু চললেন ব্যাগ হাতে বাজার কোরতে । সংসার বলে কথা !! এই কুয়াশার মধ্যে ও তাঁকে বেড়োতে হোলো । হঠ্য়াত পাড়ার একটি ছেলে তাঁকে ডেকে বললো ,"মেশোমশাই ,খবরটা শুনেছেন "?অনিলবাবু জানতে চাইলেন ,"কি খবর "? "নীরাদী  কাল সুইসাইড করেছে "। অনিলবাবু হতভম্বের মত বললেন ," নীরা "?অনিলবাবু আর কিছু জিগ্গেস না করেই অনমনাভাবেই বাজারের উদেশ্যে রওনা দিলেন । বাড়িতে এসে স্ত্রী কে সব বললেন । ভাবতে লাগলেন ,নীরা তো খুব ভালো মেয়ে । বয়স ও এখন অনেক । বিয়ে-  থা করেনি । সমাজ সেবা করেই তার দিন চলে । বাড়িতে কোনো অভাব নেই । কিছু বাচ্চাকে বিনা পয়সায় পড়ায় ; ঠিক স্কুল এর মত নিয়ম করে । যে যখন বিপদে পড়ে তার বিপদেই সে ছুটে যায় । কি এমন হলো ? হাসি ,খুশি ,প্রানবন্ত মেয়েটার ; যার জন্য তাকে জীবনের এই চরম পথ বেছে নিতে হলো ? সন্ধ্যার দিকে অনিলবাবুর স্ত্রী পাড়ার থেকে শুনে এসে তাঁকে আসল ঘটনাটা জানালেন । কয়েকদিন ধরেই একটি অল্প বয়সী ছেলে তাকে নানান ভাবে উত্যক্ত করছিল । সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাওয়াতে একদিন রাস্তার মাঝ খানে দাড়িয়ে তাকে একটা চড় ও মেরেছিলো । তাতে কোরে ছেলেটা আরও বেশী কোরে ক্ষেপে যায় । দলবল নিয়ে একদিন বাড়িতেও চড়াও হয় । অকথ্য - কুকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে । নীরা তার শিক্ষা এবং রুচির অবমাননা করে না । সে প্রতিবাদ করে ঠিক ই কিন্তু কু- কথায় নয় । তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করে । পরে না পেরে পুলিশ ডেকে তাদেরকে ধরিয়েও দেয় । কিন্তু নেতা - নেত্রীর ছত্র ছায়ায় থাকার ফলে  ,রাতেই তারা ছাড়া পেয়ে যায় । এ অপমান ,এ লজ্জা সে কিছুতেই মানতে পারে না । ভিতরে ভিতরে ক্ষয় হয়ে যেতে থাকে । সারাজীবন মানুষের জন্য সে করেই এসছে । বিনিময়ে সম্মান টুকু ছাড়া কারও কাছে তার কিছু প্রত্যাশা ছিলো না । এ অপমানটা কিছুতেই সে মেনে নিতে পারে না । ঘর বন্ধী অবস্থায় দিন কাটাতে কাটাতে হঠ্য়াত ই তার এই চরম সিদ্ধান্ত । অনিলবাবু সব শুনে  শুধু বললেন ," যে মেয়েটা সারা জীবন শুধু অন্যের কথা ভেবে গেলো ,অন্যের সমস্যার সমাধান কোরে গেলো - আর আমরা তার এই বিপদের দিনে কিছুই কোরতে পারলাম না । বড্ড অভিমান নিয়ে চলে গেলো মেয়েটা । ছি !!আমরা কি মানুষ !! নিজেদের আমরা মানুষ বলে জাহির করি !!নিজের প্রতি নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছা কোরছে "!!! আসলে আমরা বাইরেটা যতই চাকচিক্য রাখিনা কেনো আমাদের সকলেরই ভিতরটা অত্যন্ত কালো !!!

Thursday, October 19, 2017

আকাল
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আলোয় ভরেছে পৃথিবীব্যপী ,
 কোথাও নেই আঁধার ,
আঁধারে ঢেকেছে মানুষের মন !
 মনেই তারআঁধার !

লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ,
 সেজেছে সব নগর-ই ,
দারিদ্রের সাথে পাল্লা দিয়ে ,
 গরীব থাকছে অনাহারী ।

আছে টাকা অনেক যাদের ,
আনন্দ তাদের ঘরে ঘরে
ক্ষুদার জ্বালায় ঢুকছে কেউ
অভাব ,শোকে অকালেই ঝরে !

নন্দা 
কেনো হারালো
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

 হারিয়ে গেছো অনেক দূরে ,
 পাবোনা খুঁজে আর ,
তোমার সাথে হবে দেখা ,
 জীবন তরীর ওপার !

পরে মনে কত কথা ,
 ঝরা ফুলের মালা গাথা ,
শিউলী তলায় সকালবেলা ,
 খেললো বিধাতা নিঠুর খেলা !

হঠাৎ করেই দমকা হাওয়ায়,
 উড়ে গেলো গাঁথা মালা ,
খুঁজে মরি সকলখানে ,
 কোথায় ভিড়লো সেই ভেলা ?

@ নন্দা    17-10 17 

Sunday, October 15, 2017

কল্পনা
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

শোবার ঘরের জানলার ফাঁকে ,
দেখতে আমি পাইযে তাকে ,
যখন থাকি একলা ঘরে ,
সে থাকে জানলার ওপারে ।
তাঁকিয়ে থাকে মুখের দিকে ,
বাস্তবের অনেক দূর থেকে -
আমার সব কল্পনার আলোকে ।
আছে সে অজানা দেশে ,
ভালবাসবে না আর কাছে এসে !
জানি সবই বুঝিও আমি ,
তবুও হৃদয় কাঁপে বারবার ,
নারী মন যে আমার !

13-10-17 

Friday, October 13, 2017

সবাই দুখী
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

 নদী তুমি থমকে কেনো ?
  আমার দুখে কাতর ?
কোথায় তোমার কুলুকুলু ধ্বনি ?
  চঞ্চলতা কোথায় তোমার ভিতর ?

আকাশ এতো ঝরছো কেনো ?
  আমার কান্না দেখে ?
আমার চোখের অশ্রুধারা ,
  যাক তোমার জলে ভেসে ।

বাতাস তুমি স্তব্ধ কেনো ?
  দামাল বেগে আসো ,
আমার দুঃখগুলি উড়িয়ে নিয়ে -
  আমায় হাওয়ায় নিয়ে ভাসো ।

@ নন্দা    12-10-17 

Thursday, October 12, 2017

লক্ষ্য
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

চলতে চলতে ,
জীবন পথে ,
থমকে দাঁড়াতে,
হবেই সবাইকে !
                        ভয় না করে ,
                        ঠিক পথ ধরে ,
                        এগোতেই হবে -
                        ধর্য্য ও নীরবে ।
লক্ষ্য ঠিক রেখে ,
কিঞ্চিতও না সরে ,
দুঃখকে সঙ্গী করে ,
পৌঁছাতেই হবে লক্ষ্যে ।
                           নিঃসঙ্গ সেইক্ষনে ,
                           সাহস থাকলে সনে,
                           হবেনা বিফল মনোরথ,
                            হোকনা বন্ধুর পথ !

@নন্দা    12-10-17  

Wednesday, October 11, 2017

কি যায় আসে
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আমায় তুমি ডাকলে যখন ,
 থাকবো কেনো, আর ঘরে ?
চলো দুজন বেড়িয়ে পড়ি  ,
 হাতে হাত রেখে সুদূরে ।

দুঃখ,যন্ত্রনা পিছনে থাক ,
 এগিয়ে চলি সামনে -
একটু নাহয় নিন্দিতই হবো !
 কি এসে যায় জীবনে ?

লোকলজ্জার ভয় করে তো ,
 কাটালাম সারাজীবন ;
এখন নাহয় সে সব কথা ,
 ভুলে থাকি সর্বক্ষন ।

জীবন নামের এই তরীটি -
 বাইবো আর কতকাল ?
মনের সুখটাই খুঁজি নাহয় ,
 বাঁচবো যতকাল !

@ নন্দা   10-10-17

Tuesday, October 10, 2017

বুঝতে পারিনা
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

বিধাতা লিখলেন অন্যের আয়ু ,
 শাস্তি পেলাম আমি !
তারই সাথে জুড়েছিলো আমার জীবন !
 হলো আমার কপালের লিখন !

কিছু কি ভুল ছিলো আমার ?
 নাকি এটাই ছিলো ভবিতব্য ?
জীবনে যা কিছু ঘটে -
 সেটাই অবশ্যম্ভাবী নাকি ভাগ্য ?

@নন্দা      10-9-17

Monday, October 9, 2017

সদা সত্য
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
                   (1)

সকালের মিষ্টি ওই রোদ ,
দুপুরে দেখায় তার ক্রোধ ,
শৈশবের সব ধর্য্য ,
যৌবনে হয় অসহ্য !

                   (2)

দুঃখ যে ভীষন বেদনাময় ,
জীবনটা অচল করে দেয় ,
সহ্যই বাড়ায় মনের বল ,
দুর্গমকে করে সুগম-স্বচ্ছল ।

                     (3)
ইচ্ছাশক্তির ভীষন গুন ,
অসাধ্যকে করে সাধন ,
দুর্গম পথ হতে পার ,
এশক্তির জুড়ি মেলা ভার ।

@ নন্দা   7-9-17

Friday, October 6, 2017

কবিতা আমার মা
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

কবিরা কি সবকিছুই মনের কথা লেখেন?
তার বেদনা,খুশি কাগজের পাতায় থাকে?
   হয়তো কিছু থাকে সেথায় !
   কিছু থাকে তার অভিজ্ঞতায় ,
   যা থাকে সবই মনে সুপ্ত ,
   খারাপ আর ভাললাগায় হয় জাগ্রত ।
কল্পনা আর বাস্তবে লেখেন কবি সকল কথা ,
পাঠক সমাজ পড়ে বলেন ,"সুন্দর এক কবিতা" ।

কবিতারা কথা বলে মানুষকে জাগায় ,
কখনো সে আবেগে মানুষকে কাঁদায় ,
কবিতা এনে দেয় মানুষকে প্রেম ,
বিরহীনীকে করে তোলে কখনও প্রেমময়ী
বাঁচতে সাহায্য করে স্বপ্ন দেখিয়ে ,
স্বপ্নকে বাস্তবে আনতে শক্তি জোগায় ।

কবিতা আমার গর্ভধারিণীর মত ,
বেদনায় শান্তনা পাই অবিরত ,
জীবন থাকতে মা ছাড়েনা সন্তানকে ,
কবিতাও  ছাড়বেনা কখনো আমাকে ।

@নন্দা          6-9-17   2AM.
অনুকবিতা
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

উদাস মনকে খুশি করতে -
আকাশের দিকে চেয়ে থাকি ,
     সেথায় মুগ্ধতার পরিবেশে ,
      থাকি সুখের আবেশে  ।
শূন্য থেকে পেতে চাই সুখ ,
ঘুচাতে চাই কিছু জীবনের দুখ,
        বিষাদময় এই জীবনে ,
         খুঁজি সুখ আবেশে  !

@নন্দা    5-9-17 

Wednesday, October 4, 2017

জীবন কিসের জন্য
          নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ছোট্ট জীবন, স্বপ্ন অনেক -
ছুটছি সবাই প্রতিকূলে ,
এসেছি একা ,যাবোও একা ,
তবুও হিংসা, বিদ্বেষ মনে !
সেরা হওয়ার দৌড়ে সবাই ,
সারা দিনরাত শুধু ছুটছি -
ছুটতে ছুটতেই জীবন শেষ ,
অকালেই কেউ ঝরে পড়ছি !
কর্ম দ্বারা মানুষকে মানুষেরা ,
যদিবা একটু মনে রাখে ,
সুকর্মের চেয়ে দুষ্কর্মই বেশী ,
তাই হানাহানি,মারামরি করছি ।
আজ মরলে কালকে দু'দিন ,
কেউ রাখে নাগো মনে ,
সকলেই আমার, আমার করে ,
কিছুই যায়না সনে !
টাকার লোভ যে বড় লোভ ,
সবাই ছুঁতে চায় নাগাল ,
টাকার লোভেই চলছে বিশ্ব ,
টাকার লোভেই সব গন্ডগোল !

#  নন্দা        28-9-17