Tuesday, December 21, 2021

আয়নার ভিতর ভবিষ্যত

আয়নার ভিতর ভবিষ্যৎ
  নূতন বউ হয়ে নলিনী যেদিন এ বাড়িতে ঢুকেছিলো সেদিন বরণের পর ওর শ্বাশুড়ী শোভাদেবী ওকে নিয়ে নিজের বিশাল বড় বেডরুমটাই ঢুকে কারুকার্যে শোভিত একটি বেশ বড় ড্রেসিং টেবিল দেখিয়ে বলেছিলেন,
--- আজ থেকে প্রায় দুশ বছর আগে এই বংশের কোন এক বধূ তার বাবার দেওয়া এই ড্রেসিং টেবিলটা নিয়ে এসেছিলেন।এটার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।সব তোমায় পরে বলবো।একটা কথা শুধু আজ জানিয়ে রাখি রোজ একবার করে হলেও এই বাড়িতে যখন থাকবে এই আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে কপালে এবং মাথায় সিঁদুর ছোঁয়াবে।কেন কিসের জন্য সব আস্তে আস্তে জানতে পারবে। হ্যাঁ আর একটা কথা এর কাঁচটাকে সব সময় একটা কাপড়ের টুকরো দিয়ে ঢেকে রাখবে।
  বৌভাতের ঠিক পরের দিন লোক দিয়ে ওই ড্রেসিং টেবিলটাকে বাড়ির বিশাল করিডোরের একপ্রান্তে রাখা হয়।যাতে শ্বাশুড়ী বউ তাদের নিজেদের ইচ্ছামত যখন তখন এর সামনে দাঁড়িয়ে সিঁদুর পড়তে পারে।শ্বশুর মশাই ঘরে থাকলে ছেলে বউয়ের যখন তখন ঘরে ঢুকতে অসুবিধা হবে ভেবেই শোভাদেবীর ইচ্ছাতেই এখানে ড্রেসিংটেবিলটা এনে রাখা।
  আজ থেকে প্রায় দুশ বছর আগে এই জমিদার বাড়িতে বউ হয়ে এসেছিলেন অভয়া নামের একজন গরীব তরুণী।তার বাবা তাকে বিয়েতে কিছুই দিতে পেরেছিলেন না।জমিদার পুত্র শিকারে বেরিয়ে তার রূপে মুগ্ধ হয়ে বাড়িতে ফিরে বাবা,মাকে জানায় সে ওই মেয়েটিকে বিয়ে করতে চায়।তখন যুবরাজের বয়স বিয়াল্লিশ বৎসর।এতদিন ধরে সে বিবাহ করবে না বলেই স্থির করে রেখেছিল।কিন্তু হঠাৎ ঠিক সন্ধ্যার  আগে বাড়ি ফেরার পথে অভয়াকে দেখে সে তার প্রেমে পড়ে যায়।
 যে ছেলে বিয়ে করবে না বলে ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা করে বসেছিল সেই ছেলের মুখে বিয়ের কথা শুনে জমিদার ও তার গিন্নী এক মুহুর্ত সময় আর নষ্ট করেননি।মেয়েটির পরিবার থেকে বিয়েতে তাকে কিছুই দিতে পেরেছিল না একমাত্র এই ড্রেসিং টেবিলটা ছাড়া।ড্রেসিংটেবিলটা তৈরি করা হয়েছিল সেগুন কাঠ দিয়ে।
 অভয়া রোজই স্নানের পর এই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সিঁদুর পড়তেন।আর সব সময় আয়নাটাকে ঢেকেই রাখতেন।একদিন সকালে উঠে স্নান করে যখন সিঁদুর পড়ছেন ঠিক সেই সময়ে বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা তার দু'বছরের শিশু পুত্রটি জেগে গিয়ে খাট থেকে পরে যায়।সিঁদুর কৌটো হাতে নিয়েও পরার সুযোগ আর তিনি পান না।কাঁচটাও থাকে খোলা।তিনি দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে নীচু থেকে তুলে নিয়ে তাকে শান্ত করে বুকের দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে যখন পুনরায় সিঁদুর পরতে যান;ওই আয়নার ভিতর তিনি দেখতে পান তার স্বামী ঘোড়ায় করে শিকারের উদ্দেশ্যে আস্তে আস্তে জঙ্গলের ভিতর ঢুকে যাচ্ছেন।কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর ঘোড়াটা যখন তার গতি বেশ কিছুটা কমিয়েছে হঠাৎ কোথা থেকে বিশাল এক চিতা বাঘ এসে লম্বা এক লাফ দিয়ে ঘোড়ার উপর থেকে তাকে মাটিতে ফেলে দিয়েই টেনে হিচড়ে আরও ঘন জঙ্গলের ভিতর নিয়ে যায়।যুবরাজ আর বাড়ি ফিরে আসেননি।
 এরপর বহুবার ওই অভিশপ্ত ড্রেসিংটেবিলটা বিক্রি করতে যাওয়া বা কাউকে দান করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ততবারই পরিবারের উপর কোন না কোন বিপদ ঘনিয়ে এসেছে।
  বংশ পরম্পরা ধরে তাই চলে আসছে ওই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সিঁদুর পরা আর সিঁদুর পরা হয়ে গেলেই আয়নাটিকে একটি কাপড়ের মাধ্যমে ঢেকে রাখা। 
 

No comments:

Post a Comment