Friday, December 10, 2021

বসন্তে ফুল গাঁথলো মালা

বসন্তে ফুল গাঁথলো মালা
 "মহুয়ার মালা গলে কে তুমি এলে
নয়ন ভুলানো রূপে কে তুমি এলে?"
  আকাশ জোড়া ফাগের রাগ;প্রকৃতিতে আজ লেগেছে শিহরণ!আর সামনের মানুষটাকে দেখে অনুলিকার সমস্ত শরীর রোমাঞ্চিত!
 কিন্তু কে ও?সকলের মাঝে সারা মুখ,শরীর জুড়ে রং মাখানো যেন ইচ্ছা করেই মাথার টুপিটা বড্ড বেশি নীচু করা।
দাদার বন্ধুদের সকলকেই অনুলিকার চেনা।সেই চেনার সূত্র ধরেই যাকে নিয়ে একসময় সংসারে জ্বলে উঠেছিল আগুন;সেতো এখন আর এখানে থাকেই না। অনুলিকার জীবনের ঝড় থামাতে এক সময় চলে গেছিলো সুদূর লন্ডনে। দাদাও বিয়ে করে দেশের বাইরে।মা চলে গেছেন অনেক আগেই।বাপ,বেটির সংসার আজ।বাবার পেনশন আর অনুলিকার প্রাইমারী স্কুলের চাকরিতে বেশ ভালোই চলে যায়।দাদা প্রথম প্রথম টাকা পাঠাতো ঠিকই কিন্তু ধীরে ধীরে সংখ্যায় তা কমতে থাকায় বাবা ই একদিন তাকে জানিয়ে দেন তাদের কোন অভাব নেই।যা রোজগার তাতে ভালোভাবেই দুজনের চলে যায়।দাদাও টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেয়।
 অথচ এই দাদা ই একদিন তার বন্ধুর সাথে বোন অনুলিকার সম্পর্ক মেনে নেবে না বলে গায়ে হাত তুলতেও ছাড়েনি।তার বন্ধু শমিতের অপরাধ সে ব্রাহ্মণ নয়,তাছাড়া ভালো চাকরীও করে না। শমিতের সাথে তার বোনের বিয়ে হলে অন্য বন্ধুদের কাছে তার মাথা হেঁট হবে।মায়েরও আপত্তি ছিল।কিন্তু বাবা বলেছিলেন,
--- জীবনটা ওর।ওকে ওর মত করে ভাবতে দে।আজকের দিনের ছেলে হয়ে কি করে বলিস ব্রাহ্মণ না হলে বোনের বিয়ে দিবি না?পৈতে ধুয়ে কি জল খাবে?আজ ভালো চাকরি করেনা তো কি হয়েছে ? ভবিৎষতে ভালো চাকরী তো পেতেই পারে।আর তাছাড়া অনুও তো রোজগারের চেষ্টা করছে।     কিন্তু অনুলিকার দাদা চিৎকার,চেঁচামেচি করে বাড়ির পরিবেশটাই গুমোট করে ছাড়লো।সবকিছু জানার পর শমিত অনুলিকাকে শুধু বলেছিলো,
--- তুমি আমায় কথা দাও আমি যতদিন না ভালো রোজগার করছি ততদিন পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করবে।আমার জীবনে তুমিই হচ্ছ প্রথম প্রেম।আর এই ভালোবাসাকে পূর্ণতা দিতে যতদূর যেতে হয় আমি যাবো।শুধু তোমার কথাটা জানার উপরেই সবকিছু নির্ভর করছে।
 সেদিন অনুলিকা তাকে কথা দিয়েছিল সে সারাজীবন শমিতের জন্য অপেক্ষা করবে।পড়ে অনুলিকা জেনেছিল শমিত যে কোম্পানিতে চাকরি করতো সেখানে তার কাজের প্রতি নিষ্ঠা দেখে সেই কোম্পানির মালিক তাকে শমিতের কাছ থেকে লিখিত নিয়ে এই মর্মে যে তাকে আজীবন এই কোম্পানিতেই চাকরি করতে হবে এবং তারপর তাকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেয় কোম্পানির স্বার্থে উন্নত শিক্ষার জন্য।
  বাড়িতে অনুলিকার বিয়ের জন্য প্রচুর অশান্তি হয়েছে।কিন্তু বাবা পাশে থাকায় দাদা কিংবা মা কেউই তার উপর জোর খাটাতে পারেননি।বছর তিনেক পর দাদা পারি দেয় আমেরিকা।সেখানে গিয়ে এক বিদেশিনীর প্রেমে পরে।দুবছরের মধ্যে বিয়েও করে নেয়।মায়ের অমত ছিলনা।ছেলের তো শত দোষ মাফ।তিনি তো জীবনে তার ছেলের কোন দোষই দেখতে পাননি।বাবা শুধু হেসে বলেছিলেন,
--- ছেলেটা তোমার পেটে হলেও মেয়েটা বোধহয় পিঠে হয়েছে।
 মা চোখ কটমট করে বাবার দিকে তাকিয়ে নিজ কাজে চলে গেছিলেন।
 দাদা দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর কেউ আর দোলপূর্ণিমায় কখনো অনুলিকাদের বাড়িতে রং খেলতে আসেনি।আজ এতগুলি বছর বাদে দাদার বন্ধুরা আবার অনুলিকাদের ছোট্ট উঠোনটিতে।বাবা এগিয়ে গিয়ে বারান্দার গ্রীলটা খুলে দিয়ে তাঁর সেই চিরাচরিত ভঙ্গিতে তাদের আপ্যায়ন করলেন আর চিৎকার করে বললেন,
--- ওরে অনু এতগুলি বছর বাদে আমার সব ছেলেগুলো আমার পায়ে রং দিতে এসেছে।তুই সেই আগের মত এক গামলা মুড়ি মেখে নিয়ে আয় চানাচুর,পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা আর সরষের তেল দিয়ে।
 জানলা দিয়ে উকি মেরে দেখলাম রাস্তার দিকে মুখ করে সেই মানুষটি দাঁড়িয়ে।বাবা তাকে ডেকে বললেন,
--- আরে তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে কেন এদিকে এসো।
 ধীর পায়ে সে বাবার সামনে এসে দাঁড়ালো।বাবা তাকে চিনতে পেরে আনন্দে চেঁচিয়ে উঠলেন,
--- অনু দেখে যা কে এসেছে।আমি জানতাম একদিন তুমি ঠিক ফিরে আসবে।আমার অনু যে আজও তোমার অপেক্ষায় বসে।
 সকলের মধ্য থেকে এক বন্ধু দাদার কানে কানে বললো," আমাদের দায়িত্ব শেষ।বুড়ো বয়সে তোর জন্য আবার এই রং মাখতে বেরোনো। এবার আমরা আসি।"
 কিন্তু কথাটা বাবার কানে গেলো,
--- আরে সেই আগের মত সবাই বসে মুড়ি মাখাটা তো খেয়ে যাও।
  এক এক করে সবাই চলে গেলো।বাবা শমিতকে বললেন,
--- এবার তুমি অনু মায়ের কাছে যাও।অনু মায়ের জন্য আমার সব চিন্তা আজ শেষ হল।

No comments:

Post a Comment