সুখের ঘরে আগুন ( চতুর্থ পর্ব )
নীলিমাদেবী অমলবাবুদের বাড়ি থেকে ফিরে এসে ছেলেকে সবটাই জানালেন | সবকথা শুনে নিলয় খুবই কষ্ট পেলো | প্রথম দেখাতেই নিলয় অম্বিকার প্রেমে পরে গেছিলো | কিন্তু কি আর করা যাবে যে বাড়ি থেকে মেয়েকে এখন বিয়ে দেবেনা তাকে তো আর জোর করে বিয়ে করা যায়না | অগত্যা তারজন্য বাড়ি থেকে অন্যত্র পাত্রীর সন্ধান চলতে লাগলো | সব ঠিক করে এনেও যখন নিলয়কে সেই পাত্রী দেখতে পাঠানো হয় সে দেখে এসে শেষ মুহূর্তে জানায় তার পছন্দ হয়নি | বাড়িতে এই নিয়ে মায়ের সাথে একটু বাকবিতন্ডাও হয় | শেষমেশ মাকে জানিয়ে দেয় সে আর কোন মেয়ে দেখতে যাবেনা যাকে মায়ের পছন্দ হবে তার সাথেই সে গাঁটছড়া বাঁধবে | কিন্তু সংসার তো তাকে নিয়ে ছেলে করবে তাই নরেশবাবুর এ কথায় আবার আপত্তি |
স্বামী , স্ত্রী দুজনে মিলে দেখেশুনে একজনকে পছন্দ করলেন | বহুবার বলা সর্ত্বেও নিলয় এবার আর পাত্রী দেখতে গেলোনা | বিয়ের তোড়জোড় শুরু হল | মেয়ে গ্রাজুয়েট , দেখতেও সুন্দর | দুইবোন তারা | শালিনীই বড় | আর শায়েরী ছোট | বিয়ের দুদিন আগে নিলয়ের মোবাইলে অচেনা একটি নম্বর থেকে ফোন আসে বেশ রাতের দিকে | খুব নিকট আত্মীয়স্বজন দুএকজন বিয়ে বাড়িতে এসেও গেছেন | এভাবে বিয়ের আগে মেয়ে না দেখে বিয়ে করতে মন সায় না দিলেও মত দিতে হয়েছে কারণ নিলয় ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলো যেহেতু অম্বিকাকে সে নিজেই পছন্দ করেছিল তাই অন্য কোন মেয়ে তার পছন্দ হবেইনা |
ফোনটা নিয়ে নিলয় তার ঘর লাগোয়া ব্যালকনিতে চলে যায় |
--- আপনি নিলয় বলছেন ---?
--- হ্যাঁ কিন্তু --
--- আমি শালিনী বলছি , যার সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে | আমার আপনার সাথে কিছু দরকারি কথা ছিল | সময় হবে আপনার কথাগুলো শোনার ?
--- হ্যাঁ বলুন |
শালিনী শুরু করে -
--- আমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে আমার বাবা , মা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন | যখন আমাকে দেখতে আপনার বাবা, মা এসেছিলেন আমি কিছু বলতে পারিনি আমার বাবা , মায়ের সম্মানের কথা ভেবে | আমি আশা করেছিলাম আপনি একবার আসবেন আর আমি আপনাকে তখন সব জানাতে পারবো | যদি সে সুযোগ না আসে তারজন্য আমি একটি কাগজেও সব লিখে রেখেছিলাম | আমার ফোনটাও তারা নিয়ে নিয়েছেন | আজ আমার এক বান্ধবী এসেছে তার ফোন নিয়েই আমি এই ফোনটা করতে পারছি | এবার আসি আসল কথায় --- আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি | ভালো চাকরি করে | কিন্তু আমার বাবা , মা তার সাথে আমার বিয়ে দিতে রাজি নয় কারণ তারা জাতিতে অবাঙ্গালী | আমার সাথে আপনার বিয়ে হলে পুরো তিনটে জীবনই নষ্ট হয়ে যাবে আর আমি কোনদিনও আপনাকে ভালোবাসতে পারবোনা | এখন আপনি বলুন আমায় বিয়ে করতে কি রাজি আছেন ?
নিলয় সব শুনে চুপ করে আছে দেখে শালিনী আবার বললো ,
--- চুপ করে থাকবেননা আপনার সিদ্ধান্তটা আমার জানা দরকার |
--- আপনি কি বলছেন বিয়েটা আমি ভেঙ্গে দেবো? তাতে আপনার এবং আমার বাবা , মায়ের সম্মান থাকবে তো ? প্রথম অবস্থাতেই যদি আপনি আমার বাবা , মায়ের সামনেই সব বলে দিতেন তাহলে দুটো পরিবারের মধ্যে ঘটনাটা সীমাবদ্ধ থাকতো | পরশু বিয়ে | আত্মীয়স্বজন পাড়াপ্রতিবেশী সবাই জেনে গেছে | এখন যদি বিয়েটা ভেঙ্গে দেওয়া হয় তাতে লোক হাসানো হবে আরও বেশি | যে সম্মানের কথা ভেবে সেদিন চুপ ছিলেন আজও সেই সম্মানের কথা ভেবেই চুপ থাকায় বুদ্ধিমানের কাজ হবে | বিয়েটা হয়ে যাক --- পরেরটা পরে ভাবা যাবে |
ক্রমশঃ -
No comments:
Post a Comment