সুখের ঘরে আগুন ( দ্বিতীয় পর্ব )
অমলবাবুর সাথে গল্পগুজবে আসর যখন জমে উঠেছে তখন অম্বিকা ট্রেতে করে দুপ্লেট মিষ্টি নিয়ে এসে হাজির পিছন পিছন রাধাদেবী | অম্বিকাকে স্বামী , স্ত্রী দুজনেই চিনতেন | অম্বিকা মিষ্টির প্লেটগুলি ট্রে থেকে টেবিলে নামিয়ে রেখে নিলয়ের বাবা মাকে প্রণাম করে যখন চলে যাচ্ছে নীলিমাদেবী ডেকে তাকে পাশে বসান এবং বলেন ,
--- মেয়ে তো বড় হয়ে গেলো দিদি তা বিয়ের কথা কিছু ভাবছেন ?
কথাটা লুফে নিয়ে রাধাদেবী বললেন ,
--- হেই কথাডাই তো বাপ মাইয়াকে বুঝাইতে পারিনা | তিনি চাকরি না পাইয়া বিয়া করবেন না আর বাবাও তাতে সায় দেয় |
অমলবাবু বেশ দৃঢ়তার সাথে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন ,
--- মেয়েকে আমি নিজের পায়ে দাঁড় না করিয়ে কিছুতেই বিয়ে দেবোনা | পড়াশুনা শেষ হওয়ার পর একটা চাকরি ও জোগাড় করুক অবশ্য এখন চাকরি পাওয়া তো আর মুখের কথা নয় কিন্তু তবুও ও যতদিন চাকরি না পায় তুমি যতই অশান্তি করোনা কেন আমি কিছুতেই ওর বিয়ে দেবোনা | নরেশবাবু ও মলিনাদেবী পরস্পরের মুখের দিকে তাকালেন |
এবার অম্বিকা মাসিমা মেশোমশায়ের উদ্দেশ্যে বললো ,
--- বাড়িতে সবসময় এই বিয়ে নিয়ে ঝামেলা | মাকে কিছুতেই আমরা বুঝাতে পারিনা আজকের যুগে ছেলেমেয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই | আমি একমাত্র মেয়ে উনাদের | তাদের সমস্ত দায়িত্ব আমার | বাবা রিটায়ার করেছেন | আমাকে এতো কষ্ট করে এতদূর লেখাপড়া শেখাচ্ছেন তা সবকিছু কি ওই রান্নাঘরের জন্য ? আজকের দিনে মানুষের চাহিদা আর অসুখ বিসুখের সাথে পাল্লা দিতে গেলে স্বামী , স্ত্রী দুজনকেই যে চাকরি করতে হবে মা তা বুঝতেই চাননা |
আবারও নিলয়ের বাবা , মা পরস্পরের মুখের দিকে তাকালেন কিন্তু অম্বিকা বা তার বাবার কথার কোন প্রত্যুত্তর দিলেননা | যে কথাটা বলবেন বলে ওরা এসেছিলেন কথাটা আর বলা হয়ে উঠলোনা | তারপরও কিছুক্ষণ বসে গল্প করেছিলেন এবং কথায় কথায় জানিয়ে এসেছিলেন তারা তাদের ছেলেকে বিয়ে দিতে চান তাছাড়া ছেলের পুরো বায়োডাটাও জানাতে ভুল করেননি | পরিচিত কোন মেয়ের সন্ধান থাকলে তাদের যেন জানানো হয় | কোন মেয়ে পড়াশুনা করছে এমন মেয়েও যদি পাওয়া যায় তাহলেও বিয়ের পরে তার পড়াশুনা চালিয়ে যেতে কোন বাধা তারা দেবেননা | এমন কি সে যদি পরবর্তীতে চাকরিও করে তাদের তাতেও কোন আপত্তি থাকবেনা | মুখে অম্বিকার সাথে নিলয়ের বিয়ের কথা না বললেও মোটামুটি ইঙ্গিতটা দিয়েই এসেছিলেন |
নরেশবাবু আর মলিনাদেবী ঘর থেকে বেরোনোর পরেই প্রচন্ড ঝামেলা শুরু হয় অমলবাবু আর রাধাদেবীর মধ্যে |
--- নরেশবাবুর পোলাডা শুনছি খুবই ভালা মানুষ | চাকরি করেও বেশ | তোমার মাইয়ার সব আশাই পূরণ হইবো | সে পড়াশুনাও শেষ করতে পারবে আর চাকরি পাইলেও করতে পারবে তুমি এই সম্বন্ধটা হাতছাড়া কইরোনা |
--- বারবার এককথা বলতে আমার ভালো লাগেনা রাধা | আমি এখন মেয়ের বিয়ে দেবোনা |
--- তা দিবা কেন ? এমন পাত্র হাতছাড়া করলে পরে নিজের হাত কামড়াইতে হইবো এই আমি কইয়া দিলাম |
--- নিজের হাত কামড়ালে কামড়াবো তোমার হাত কখনোই কামড়াতে যাবোনা |
কথাগুলো বলে একটা পাঞ্জাবী আলনা থেকে টেনে নিয়ে গজগজ করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন |
রাগের চোটে ঘর থেকে বেরিয়ে হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে বেশ অনেকটাই এসে একটা পার্কে ঢুকে চুপচাপ বসে থাকলেন বেশ কিছুক্ষণ | বসে বসে তিনি এই সম্মন্ধটা নিয়ে অনেক ভাবলেন | বয়স হয়েছে তার | রিটায়ার করেছেন | যদি হঠাৎ করে তার কিছু হয়ে যায় তাহলে মেয়েটা মাকে নিয়ে অথৈ সমুদ্রে পড়বে | এখানে বিয়ে হলে মেয়েটাকে যখন খুশি দেখতে আসতে পারবেন আবার পড়াশুনা পরবর্তীতে চাকরি কোনটাতেই তার কোন অসুবিধা হবেনা | এটাও ভাবলেন তিনি যদি এই মুহূর্তে রাজি হন তাহলে স্ত্রীর কাছে হেরে যাবেন | তাই এখনই এই সম্মন্ধ নিয়ে আগ বাড়িয়ে তিনি তার রাধাকে কিছু বলতে যাবেননা | আগে মেয়ের সাথে কথা বলতে হবে | যদি সে রাজি হয় পরে বাকি সব ভাবা যাবে | তারপর তিনি ইচ্ছাকৃতই রাগের পরিমাণ বাড়াতে বেশ রাত করেই বাড়ি ফিরলেন মুখটা বেশ গম্ভীর করে |
ক্রমশঃ-
No comments:
Post a Comment