সুখের ঘরে আগুন ( প্রথম পর্ব )
নিজের বিয়ের সম্মন্ধটা বলতে গেলে নিলয় নিজেই নিয়ে এসেছিলো | নিলয়ের বিয়ের জন্য বাড়ি থেকে পাত্রী দেখতে শুরু করেছে | নিলয় কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চাকুরীরত | সুদর্শন , সুপুরুষ | ছফুটের কাছাকাছি হাইট | সেবার বিজয়া দশমীর সম্মেলনে বন্ধুদের সাথে পাড়ায় ফ্যানশন দেখতে গিয়ে অম্বিকা সেনের গান শুনে নিলয় মনেমনে ঠিক করেই নেয় মাকে গিয়ে এই মেয়েটির কথা বলবে | বন্ধুদের কাছে জানতে চাওয়ায় তারা বলেছিলো পাশের পাড়ার মেয়ে | যেমন মিষ্টি চেহারা ঠিক তেমনই মিষ্টি গানের গলা | প্রথম দেখাতেই নিলয় অম্বিকার প্রেমে পরে যায় |
সেদিন অনেক রাতে ফেরায় মায়ের কাছে আর অম্বিকার কথা বলা হয়ে ওঠেনা | পরদিন অফিস থেকে ফিরে টিফিন করতে করতে কথা প্রসঙ্গে গতকালের ফ্যানশানের কথা তোলেন মলিনাদেবী | আর ঠিক তখনই ঝোঁপ বুঝে কোপটি মারে নিলয় | বন্ধুদের কাছ থেকে কায়দা করে মেয়েটির বাবার নামটাও জেনে এসেছিলো | নিলয়ের মা ছেলের মনোভাবটি ঠিক বুঝতে পারলেন | ছেলে যে তার বিয়ের পাত্রী নিজেই পছন্দ করেছে এটা বুঝতে তার বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি | সব শুনে তিনি বললেন ,
--- তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে অম্বিকা অমল সেনের মেয়ে | যদি তাই হয় আমি কাল সন্ধ্যায় তোর বাবাকে সাথে নিয়ে গিয়ে কথা বলে আসবো |
--- অমল সেন মানে 'তুমি বাবার বন্ধু অমলকাকুর কথা বলছো ?
--- হ্যাঁ আমার মনেহচ্ছে তো তাই |
নিলয় আর কোন কথা বললোনা | রাতে মলিনাদেবী স্বামীর কাছে সবকিছু খুলে বললেন | সব শুনে নরেশবাবু মলিনাদেবীকে বললেন ,
--- কিন্তু আমি যতদূর জানি অমল তার মেয়েকে এই মুহূর্তে বিয়ে দেবেনা | কারণ অমল কয়েকদিন আগেই কথাই কথাই বলছিলো তার মেয়ে নাকি নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে করবেনা |
--- আরে চলোনাই কাল গিয়ে ব্যপারটা বুঝে আসি |
--- সে যেতে বলছো আমি যাবো | মেয়েটি এখন ম্যাথে মাস্টার্স করছে | সুন্দর গানের গলা , দেখতেও খুব সুন্দর | ছেলেবেলার থেকে প্রচন্ড মেধাবী |
--- আরে তুমি তো মেয়েটিরই গুনকীর্তন করে যাচ্ছ - আমার ছেলেটি ফেলনা নাকি ?অত সুন্দর দেখতে , ভালো চাকরি করে ---
--- আরে বাবা নিজের ছেলের কথা তো সব জানি | মেয়েটি সম্পর্কে তুমি তো কিছুই জানোনা | আমি যেটুকু জানি তাই তোমাকে বললাম |
মলিনাদেবী পাশ ফিরে শুতে শুতে বললেন ,
--- তাহলে কাল সন্ধ্যাতেই দুজনে যাবো মেয়ে দেখতে |
পরদিন ছেলে অফিস যাওয়ার সময় ছেলেকে তিনি বলে দিলেন পাশের বাড়ির কাকিমার কাছে চাবি থাকবে তারা কাল অম্বিকাকে দেখতে যাবেন | যদি সে আগে বাড়িতে এসে যায় তাহলে যেন ওখান থেকেই চাবিটা নিয়ে নেয় |
পরদিন সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগেই স্বামী , স্ত্রী অমলবাবুর বাড়িতে হাজির হয়ে গেলেন | অমলবাবু তো বেজায় খুশি বন্ধু আর বন্ধু পত্নীকে দেখে | অমলবাবুর স্ত্রী আবার খাস বাঙ্গাল ভাষায় কথা বলেন | তিনি তাদের দেখেই একগাল হেসে বললেন ,
-- আরে কর্তা গিন্নী একসাথে দেহি | তা কি মনে কইরা ?
প্রত্তুতরে মলিনাদেবীও একগাল হেসে পরে বললেন ,
--- শুভ বিজয়া দিদি | এই আসলাম অনেকদিন দেখা সাক্ষাৎ নেই | তাই ভাবলাম যাই দিদির সাথে একটু গল্প করে আসি |
--- খুব ভালো করছেন | আপনারা বহেন আমি অম্বিকার বাবাকে ডাইকা লইয়া আসি |
মলিনাদেবী ও নরেশবাবু দুজনে সোফায় বসে ভাবতে লাগলেন যে কাজে এসেছেন সে কথাটা শুরু করবেন কি করে |
ক্রমশঃ
No comments:
Post a Comment