সুখের ঘরে আগুন ( ষষ্ঠ পর্ব )
সারাটা রাত নিলয় না ঘুমিয়েই কাটালো | এই বিয়েটা না করা মানে তার সম্মানহানি আর বিয়ে করা মানে জীবনটা শেষ হয়ে যাওয়া | সবকিছু ভুলে শালিনীকে নিয়ে সুখী হতেই তো চেয়েছিলো | অনেক মানুষের জীবনেই বিয়ের আগে প্রেম আসে | কিন্তু সে প্রেম অনেকেরই বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়না | তার জীবনেও এসেছিলো ; সেই প্রথম প্রেমকে মনের কোন একজায়গায় ঘুম পাড়িয়ে রেখে জীবনটাকে এগিয়ে নিয়ে যায় অনেকেই | অনেকেই আবার অভিনয়ের মধ্য দিয়েই জীবন কাটিয়ে দেয় | অভিনয় করতে করতেই মানুষটার প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য আর ভালোবাসা গড়ে ওঠে | কিন্তু শালিনীর মত মেয়েরা যারা বিয়ের মাত্র কয়েকঘন্টা আগে তার উঠবি স্বামীকে জানিয়ে দেয় সে অন্য কাউকে ভালোবাসে -- সে মেয়েকে নিয়ে তো কোনমতেই জীবন চালানো সম্ভব নয় |
পরদিন বিয়ে | মাঝে মাঝেই তার কানে আসছে সম্মিলিত উলু আর শঙ্খধ্বনি | নিজের ঘরের মধ্যেই বসে সাতপাঁচ ভেবে চলেছে | দুপুরবেলা তাকে যখন খেতে ডাকা হল সে গিয়ে দেখলো মেঝেতে আসন পেতে থালার চারিপাশে নানান পদ রান্না ভর্তি বাটি সাজানো | মা বললেন ,
--- আজ নিচুতে বসে খেতে হয় | আমি তোকে আইবুড়ো ভাত খাওয়াবো | বসে পড় আশীর্বাদটা সেরে নিই |
নিলয় কোন কথা না বলে আসনের উপর গিয়ে বসলো | অতি দুঃখের মধ্যে মনেমনে তার হাসিও পাচ্ছে --- আশীর্বাদ ? কি হবে আশীর্বাদ করে? সে তো তার ভবিতব্য জেনেই গেছে | যতই সকলে মিলে তাকে সুখী হওয়ার জন্য আশীর্বাদ করোনা কেন সে তো শালিনীকে নিয়ে কোনদিনও সুখী হতে পারবেনা | এইসব আচার-অনুষ্ঠান , আশীর্বাদের যে কোন মূল্য নেই তার প্রমাণ তো সে পেয়েই গেছে | তাকে নিয়ে সকলে হাসি ঠাট্টায় মশগুল -- নিলয়ের এসব কিছুই ভালো লাগছেনা চুপচাপ সে বসে আছে | বাবা , মা ছাড়াও অন্যান্য আত্মীয়রা যারা ওখানে উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে বয়োজ্যোষ্ঠরা সকলেই নিলয়কে ধানদূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করলেন | পরিশেষে নিলয় খেয়েদেয়ে এসে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লো | গতকাল রাতের না ঘুমানোটা সে আজকের দুপুরে উসুল করে নিলো |
ভোররাত থেকে শুরু হল বিয়ের নানান আচারানুষ্ঠান | মুখ বুজে বুকের যন্ত্রণা বুকে রেখে নিলয় মা বা কোন আত্মীয়স্বজনদের কোন কিছুতেই বাঁধা দিলোনা | কারণ সে চায়নি এই বিয়ে তার জীবনে কোন সুখ , শান্তি বা আনন্দ না দিলেও এই বিয়েকে কেন্দ্র করে তার মা , বাবা এবং আত্মীয়দের মধ্যে একটা বিশাল পাওনা লুকিয়ে আছে | তার থেকে সে কিছুতেই তাদের বঞ্চিত করতে পারবেনা | একসময় গায়ে হলুদ পর্বও মিটে গেলো | এই একটা জায়গায় সকলকে নিলয় বলেছিলো ,
--- কাইন্ডলি আমায় বেশি হলুদ মাখাবেননা | সকলে শুধু কপালে হলুদটা দিন |
একথা শুনে নিলয়ের মা সকলকেই নিষেধ করেছিলেন যাতে নিলয়কে হলুদ মাখানো নিয়ে কেউ পীড়াপীড়ি না করে | হলুদ নিয়ে নিলয়ের মামা , মামী আর তার বিবাহিত মাসতুত বোন রওনা হয়ে গেলো শালিনীদের বাড়ির উদ্দেশ্যে | সে বাড়িতে প্রচুর আপ্যায়ন তারা পেলো ঠিকই কিন্তু নিলয়ের মাসতুত বোন প্রমিতা শালিনীর হাবভাব কথাবার্তায় খুশি হতে পারলোনা | প্রমিতা এসে সে তার দাদাকে বলেও দিলো ,
--- মেয়েটা ঠিক মিশুকেনা | দেখতে সে সুন্দর একথা অস্বীকার করার উপায় নেই | তাদের বাড়ির লোকও আমাদের খুব যত্ন করেছে | মেয়েটার মধ্যে এই বিয়ে নিয়ে কোন ভাবান্তর আমি লক্ষ্য করলামনা | মনেহল ওর যেন বিয়েতে মত নেই | অবশ্য সবই আমার অনুমান | ঈশ্বর যেন আমার এই অনুমানটা ভুল প্রমাণিত করেন | তুই একবার তো বিয়ের আগে ওর সাথে কথা বলতে পারতিস |
নিলয় কথাগুলো চুপ করে শুনে মনেমনেই বললো -- তোর অনুমান একদম সত্যি রে মিতা | আমি একটু একটু করে যে খাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি সেটা বুঝতে পেরেও চুপ করে আছি | কিন্তু কি করণীয় কিছুই বুঝতে পারছিনা | পরে হেসে পরে বোনকে বললো ,
--- কি আর হবে? মনের মিল না হলে ডিভোর্স দিয়ে দেবো |
--- এটা কোন সলিউশন দাদা ? লোকে কি বলবে ?
হঠাৎ নিলয় উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো ,
--- সবসময় লোকের কথা ভাবতে গেলে আমার জীবনটা তো শেষ হয়ে যাবে | এখন কিছু করতে পারবোনা , পরে কিছু করবোনা --- এভাবে তো আর জীবন চলেনা |
প্রমিতা দাদার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো ,
--- তুই এতো উত্তেজিত হয়ে উঠলি কেন ? কিছু তো একটা হয়েছে | যেটা তুই কাউকে বলতে পারছিসনা | তোর যদি আপত্তি না থাকে আমার সাথে শেয়ার করতে পারিস | নিজের মনের মধ্যে সবকিছু রেখে দিলে কষ্টটা বেশি পাবি |
নিলয় একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বললো, " আর কষ্ট "!
ক্রমশঃ-
No comments:
Post a Comment