সুখের ঘরে আগুন ( পঞ্চম পর্ব )
শালিনী প্রায় চিৎকার করে উঠলো |
--- কি বলছেন আপনি ? বিয়েটা ছেলেখেলা নাকি ?
--- আমাকে একথা বলার আগে নিজেকে একবার প্রশ্ন করে দেখুন বিয়ের কদিন আগে আপনি আমায় কথাটা জানাচ্ছেন ? বাড়িতে বিয়ে উপলক্ষে আত্মীয়রা পর্যন্ত এসে গেছেন ; আপনার সমস্যার মধ্যে আমায় জড়ানোর আগে আপনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে যখন পারেননি তখন যা হচ্ছে হতে দিন | আমি কেন বিয়েটা ভাঙ্গতে যাবো বলুনতো ? তাতে আমার বাবা , মায়ের মুখে চুনকালি পড়বেনা ? তাদের এবং আমার সম্মানহানী হবেনা ? তারচেয়ে যা হচ্ছে সেটা হতে দিন আর তা নাহলে আপনার যা খুশি তাই করুন ; দয়া করে আমায় আর ফোন করে বিরক্ত করবেননা |
ফোনটা রেখে নিলয় গুম হয়ে ভাবতে থাকে | জীবনের শুরুতেই প্রথম ধাক্কাটা কলেজ লাইফেই খেয়েছে নন্দিনীর কাছ থেকে | একই কলেজে একই সাবজেক্ট ছিল দুজনের | হাসি , গল্প , বেড়ানো , একসাথে সিনেমা দেখা সবই চলতো দুজনের | নিলয় নন্দিনীকে ভালোবাসতো | কিন্তু সে একবারের জন্যও বুঝতে পারেনি নন্দিনী তাকে সে চোখে দেখতোনা | যেদিন নিলয় নন্দিনীকে প্রপোজ করেছিল সেদিন নন্দিনী অবাক হয়ে তাকে বলেছিলো ,
--- সব ছেলেদের এই একই দোষ | তোকে একটু অন্যরকম ভেবেছিলাম | এখন দেখছি তুইও সেই একই দলে |মেয়েরা একটু হেসে কথা বললে , গল্প করলে তোরা ভেবে নিস মেয়েটি তার প্রেমে পড়েছে | কিছুতেই মেয়েদের তোরা বন্ধু ভাবতে পারিসনা | সেই প্রেমিকা বানানোর মানসিকতা নিয়েই মেলামেশা করিস | একটা ছেলে যদি একটা ছেলের বন্ধু হতে পারে , একটা মেয়ে যদি একটা মেয়ের বন্ধু হতে পারে তাহলে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কেন বন্ধু হতে পারেনা --- ?আমাদের সমাজ তোদের এই স্বভাবের জন্যই ছেলে মেয়ের বন্ধুত্বটাকে ঠিকভাবে মানতে পারেনা | আমাদের জেনারেশন থেকে শুরু হয় এই মানসিকতা | আমরাই যদি এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারি তাহলে সমাজ কোনদিনও এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে মানতে পারবেনা | বিদেশে তো এটা হয়না | এটা বিশেষ করে আমাদের বাঙ্গালী সমাজেই বেশি হয়ে থাকে | মানসিকতার পরিবর্তন দরকার নাহলে এই সমাজ সারাজীবন পিছনে পরে থাকবে |
চুপ করে ছিল সেদিন নিলয় | কোন কথার উত্তর দিয়েছিলোনা | প্রথম ভালোবাসার ধাক্কা সাথে এভাবে অপমান - লজ্জায় , ঘৃনায় , অপমানে মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করছিলো | তারপর থেকে খুব প্রয়োজন না হলে সে নন্দিনীর সাথে কথা বলতোনা | নন্দিনীর বিয়েতে অনেক বন্ধুর মধ্যে নিলয়ও নিমন্ত্রিত ছিল | কিন্তু অপমানের জ্বালা ভুলতে না পারায় সে বিয়েতে যায়নি | তারপর কেটে গেছে অনেকগুলি বছর | ভালো চাকরি পেয়েছে , নিজেদের বাড়িটাকে বাবা এবং সে মিলে নিজেদের মনের মত করে সাজিয়েছে | কলেজের সেই নিলয়ের মন থেকে মুছে গেছে নন্দিনী | বাড়ির থেকে যখন বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে তখন ফ্যানশনে হঠাৎ অম্বিকাকে দেখতে পেয়ে ভালোলাগা | সেখানেও একটা ধাক্কা | অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বাবা , মায়ের পছন্দ করা মেয়ে শালিনীকে বিয়ের জন্য মেনে নেওয়া | এখানেও সেই ধাক্কা --- এবারের ধাক্কাটা যেন আরও মারাত্মক | বিয়েটা ভেঙ্গে দিলে তার এবং বাবা , মায়ের সম্মানহানি আর বিয়েটা করলে জীবনটা তছনছ হয়ে যাওয়া | মহা সমস্যায় পড়েছে নিলয় | কাউকে কিছুই বলতে পারছেনা | একটা সুস্থ্য , সুন্দর , আনন্দঘন পরিবেশে তার মুখের একটা কথায় মুহূর্তের মাঝে অন্ধকার নেমে আসবে | কি করবে এখন নিলয় ?
ক্রমশঃ-
No comments:
Post a Comment