Saturday, November 21, 2020

সুখের ঘরে আগুন ( নবম পর্ব )

সুখের  ঘরে  আগুন  ( নবম  পর্ব )

       বৌভারের  পরে অনেকেই  সেদিন  বাড়ি  চলে  গেছেন | আবার  কেউবা  সকালে  টিফিন  করে , কেউবা  দুপুরে  খেয়েদেয়ে  যে  যার  বাড়ির  পথ  ধরেছেন | একমাত্র  নিলয়ের  অনুরোধে  প্রমিতা আর  রিতেশ  যায়নি  | অবশ্য  নিলয়  অনুরোধ  না  করলেও  প্রমিতা তার  দাদার  মনে  কিসের  এতো  কষ্ট  এই  বিয়ে  করে  সেটা  সে  না  জেনে  কিছুতেই  যেত  না | কারণ  দাদাকে  সে  খুব  ভালোবাসে | সেই  ছোট্ট  থেকে  তাকে  ভাইফোঁটা  দেয়, রাখি  পরায় | দুপুরবেলা  খাওয়াদাওয়ার  পর  নিলয়  সোফার  উপর  বসে  টিভি  দেখতে  দেখতে  ওখানেই  ঘুমিয়ে  পরে | এটা সে  করে  নিজের  ঘরে  যাবে  না  বলেই  প্ল্যানমাফিক | শালিনীও  তাকে  কিছু  বলার  সুযোগ  খুঁজছে  কিন্তু  নিলয়  তাকে  কোন  কথা  বলার  সুযোগই  দিচ্ছে  না | রাতে  খাওয়া  শেষ  করে  নিলয়  যখন  বেসিনে  হাত  ধুতে  যায়  শালিনী  তড়িঘড়ি  খাওয়া  শেষ  করে  নিলয়ের  কাছে  গিয়ে  দাঁড়িয়ে  বলে ,
--- আপনাকে  কিছু  বলার  ছিল |
 নিলয়ও খুব  চাপাস্বরে  উত্তর  দেয় ,
--- আপনার  যা  বলার  বিয়ের  আগেরদিন  তো  বলেই  দিয়েছেন | আমার  আর  কিছু  শোনার  ইচ্ছা  নেই | এবার  যা  করার  আমিই  করবো  | 
 কথাকটি বলে  নিলয়  আর  সেখানে  দাঁড়ায়  না | সকলেই  খেয়ে  উঠে  ড্রয়িংরুমে  বসে  গল্প  করছে | শালিনীও  সেখানে  কিছুক্ষণ বসে  থাকে | প্রমিতাই  তাকে  একসময়  বলে , " বৌদি  তোমার  তো  ঘুম  পেয়েছে | তুমি  গিয়ে  শুয়ে  পড়ো |
--- না  না  ঠিক  আছে  , এই  তো  গল্প  শুনছি  | 
 বাবা,  মা  একসময়  উঠে  শুতে  চলে  যান | কিন্তু  প্রমিতা, রিতেশ  আর  নিলয়  আর  কোন  কথা  খুঁজে  না  পেয়ে  টিভি  চালিয়ে  একটা  মুভি  নিয়ে  সব  বসে  পড়লো  | অনেকক্ষণ শালিনী  বসে  থেকে  শেষে  সেও  উঠে  পড়লো | তারপর  ওরা সবাই  মিলে ছাদে  এসে  একটা  শতরঞ্চি  পাতিয়ে  বসলো | 
--- হ্যাঁ এবার  বল  দাদা  বৌদিকে  নিয়ে  তোর  সমস্যাটা  কি  ?
--- বলছি  সব , বলবো  বলেই  তো  এতো  কান্ড  করে  এখানে  আসা  | একটু  দাঁড়া শুরুটা  নিজের  মনের  মধ্যে  সাজিয়ে  নিই ---|
 কিছুক্ষণ থেমে থেকে  নিলয়  শুরু  করলো  ---
 বিয়ের  আগেরদিন  রাতে  ----- আস্তে  আস্তে  নিলয়  সমস্ত  ঘটনাগুলি  প্রমিতা আর  রিতেশকে  জানালো | এমন  কি  বেসিনের  সামনে  দাঁড়িয়ে  শালিনী  কি  বলেছে  সেটাও  জানালো  | সব  শুনে  দুজনেই  কিছুক্ষণ স্তব্ধ  হয়ে  বসে  থাকলো | তারপর  প্রমিতা বলে  উঠলো , 
--- তাহলে  বিয়েটা  করতে  গেলি  কেন ? এখন  তো  বিষয়টা  আরও জটিল  হয়ে  দাঁড়ালো | 
 রিতেশ  বলে  উঠলো ,
--- বোকার  মত  কথা  বোলো  না | বাড়িতে  তখন  আত্মীয়স্বজন  ভর্তি | ওই  মুহূর্তে  বিয়েটা  ভেঙ্গে দিলে  বাবা , মায়ের  অবস্থাটা  ভেবে  দেখেছো?  দুশ লোক  নিমন্ত্রিত | সমস্ত  কিছুর  বায়না  দেওয়া | কত  লোকে  ছি  ছি  করতো , কত  মানুষ  বিষয়টা  নিয়ে  চর্চ্চা  করতো  ?
--- সেতো এখনো  করবে |
--- সেটা  সংখ্যায়  কম | এটাতে  জানবে  কম  লোকে |
  তারপর  নিলয়ের  দিকে  তাকিয়ে  বললো  ,
--- তুমি  এখন  কি  চাও ? ডিভোর্স  ?
--- তাই  ছাড়া  আর  উপায়  কি ?
 প্রমিতা দাদার  দিকে  করুন  দৃষ্টিতে  তাকিয়ে  বললো ,
--- তুই  একবার  বৌদির  সাথে  কথা  বল  না --
--- কি  কথা  বলবো ?
--- না - বলছি  যদি  এখন  তার  মতের  পরিবর্তন  হয়  ?
 নিলয়  ব্যঙ্গের হাসি  দিয়ে  বলে  উঠলো, 
--- তুই  কি  পাগল  নাকি ? যে  মেয়ে  বিয়ের  আগের  রাত্রে  তার  হবু  স্বামীকে  ফোন  করে  অন্য পুরুষকে  ভালোবাসার  কথা  জানায়  তার  সাথে  সংসার  করা  যায় ? আর  শুধু  সংসার  কেন  তার প্রতি  কোনদিন  ভালোবাসা  জন্মাতে  পারে  ?
--- কেন  পারে  না  দাদা ? দুটো  মানুষ  একসাথে  থাকতে  থাকতে  তাদের  মধ্যে  একটা  সুন্দর  সম্পর্ক  গড়ে  ওঠে  আর  সেই  সম্পর্ক  থেকেই  একের  প্রতি  অন্যের  প্রগাঢ়  ভালোবাসা  জন্মায়  | 
----অনেক  ক্ষেত্রে  তাও হয়না  | দেখ  একটা  ছেলে  বা  মেয়ের  জীবনে  বিয়ের  আগে  ভালোবাসা আসতেই  পারে | অনেক  সময়  এই  ভালোবাসা  বিয়ে  পর্যন্ত  গড়ায় না  | পরে  তাদের  অন্যের  সাথে  বিয়ে  হয়  তারা  অধিকাংশ  ক্ষেত্রে  সুখীও  হয় | আর  এইসব  ক্ষেত্রে  দেখা  যায়  উভয়ই  উভয়ের  ক্ষেত্রে  বিষয়টা  গোপনই রাখে | কিন্তু  যে  মেয়ে  বিয়ের  আগের  রাতে  তার  হবু  স্বামীকে  ফোন  করে  তার  অন্যের  প্রতি  ভালোবাসার  কথা  জানায়  সে  কতটা  ডেসপারেট  | একটা  কথাও  আমি  ভেবেছি  আর  সেটা  হচ্ছে  শালিনীর  বয়স  এখন  তেইশ  বছর | এতটাই  যখন  সে  ডেসপারেট  হয়ে  আমায়  সব  জানিয়েছে  সে  তো  পুলিশের  সাহায্য  নিতে  পারতো  | আমি  মেনে  নিলাম  তার  বাবা,  মা  তাকে  ঘরে  আটকে  রেখে  জোর  করে  বিয়ে  দিয়েছে  | কিন্তু  ফোনটা আমায়  না  করে  সে  তো  পুলিশকে  করতে  পারতো  |
 রিতেশ  এতক্ষণ পরে  বলে  উঠলো , 
--- আমাদের  মধ্যবিত্ত  বাঙ্গালী পরিবারগুলি  সহজে  পুলিশের  ঝামেলায়  যেতে  চায়  না | সেক্ষেত্রে  শালিনীও হয়তো   ভেবেছিলো  পুলিশকে  জানিয়ে  ঝামেলার  থেকে  তোমায়  জানালে  তুমি  যদি  বিয়েটা  করতে  না  চাও  তাহলে  অনেক  হ্যাপা  থেকে  সে  মুক্তি  পাবে | জানি  না  অবশ্য  তার  মনের  কথা | তবে  স্বাভাবিক  ভাবে  এটাই  আমার  মনে  হচ্ছে | আর  ডিভোর্সের  কথা  বলছো ?ওটা  পেতে  গেলেও  তো  কিছুটা  সময়  লাগবে |  ডিভোর্স  বললেই  তো  আর  ডিভোর্স  পাবে  না | কাল  আবার  তোমার  অষ্টমঙ্গল | সেখান  থেকে  ফিরে  এসো তারপর  দেখছি  কি  করতে  পারি |
--- আমি  কি  এবারই  ওখানে  ওকে  রেখে  আসবো ?
--- নারে  দাদা , একসাথেই  ফিরতে  হয় |
 নিলয়  তাচ্ছিল্যের  হাসি  হেসে  বললো ,
--- অনেক  তো  নিয়মকানুন  মানা হল  কি  লাভ  হল  তাতে  ? আসলে  কি  জানিস  তো  - এইসব  নিয়মকানুন  মানে  মানুষ  শুধুমাত্র  যে  কোন  অনুষ্ঠানে  একটু  আনন্দ - ফুর্তি  করতে | এই  নিয়মকানুন  কারও জীবনে  শান্তি  , ভালোবাসা  এনে  দিতে  পারে  না  | মানুষ  জন্মানোর  সময়ই  তার  ভাগ্য  নিয়ে  জন্মায় | কেউ  মানুক  বা  না  মানুক  - কপালের  লিখন  কেউ  খন্ডন  করতে  পারে  না | অনেক  সময়  মানুষ  তার  কঠোর  পরিশ্রম  দ্বারা  ভাগ্যকে  নিয়ন্ত্রণ  করতে  পারে | এখানে  কাজ  করে  সর্বদা  ঘূর্ণয়মান রাহু , কেতু  সহ আরও অন্যান্য  গ্রহ | ওই  গ্রহের  অবস্থান  অনুযায়ীই  ভাগ্য  নিয়ন্ত্রিত  হয়  | জন্মে  দশা  আর  মৃত্যুতে  দোষ  - এটা অবশ্যম্ভাবী | এখানে  কিন্তু  কে  বিশ্বাস  করলো  আর  কে  বিশ্বাস  করলো  না  সেটা  বড়  কথা  নয় | এই  গ্রহ  নক্ষত্র  ব্যাপারগুলো  কিন্তু  বিজ্ঞানও স্বীকার  করে | কিন্তু  বিজ্ঞান  ঠিকুজি  কুষ্ঠী মানে  না | জোতিষীরা  কিন্তু  গ্রহ  নক্ষত্র  অনুযায়ীই  ঠিকুজি , কুষ্ঠি  তৈরী  করে   মানুষের  ভাগ্য  গণনা  করে  থাকেন | আমি  এসব  মানি  আর  মানি  বলেই  এই  ঘটনা  নিয়ে  আমার  কোন  দুঃখ  নেই | আমার  ভাগ্যে  যা  ছিল  তাই  ঘটেছে |

  ক্রমশঃ-

No comments:

Post a Comment