Friday, October 29, 2021

শুকনো গোলাপ

শুকনো গোলাপ
  সহপাঠী অমিতের প্রেমে পড়ে অতসী কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের একদম শেষের দিকে পড়াকালিন।কিন্তু মুখচোরা অমিতের কাছে সে কথা জানানোর কোন সুযোগই পায় না সে।অতসীকে দেখলেই অমিত এমনভাবে সেই স্থান ত্যাগ করে যেন বাঘের মুখে পড়েছে।মাঝে মাঝে অতসীর খুব রাগ হয়।আর মনেমনে ভাবে কলেজে এত ছেলে থাকতে এই হাবলুটার প্রেমে কেন যে পড়লাম সেটাই বুঝতে পারিনা পরক্ষণে ভাবে কবিগুরুর গানের সেই লাইন," প্রেমেরই ফাঁদ পাতা ভুবনে,কে কোথায় ধরা পড়ে কে জানে -"।
 অতসী অনেকবার খেয়াল করেছে যদি কখনো সখনো অমিতের সাথে তার দেখা হয় সে সরাসরি চোখের দিকে কখনোই তাকায় না।অনেক সময় অমিত হয়তো দূরে কোথাও দাঁড়িয়ে আছে অতসীকে দূর থেকে দেখছে।অতসী বুঝতে পারে অমিতও তাকে পছন্দ করে।কিন্তু মুখচোরা হাবলু কখনোই সাহস করে তাকে ভালোবাসার কথাটা বলতে পারেনি।অতসী সাহস নিয়ে এগিয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু কোন না কোন ছুতোয় অমিত সেই স্থান ত্যাগ করেছে।কি করবে অতসী কিছুই আর ভাবতে পারে না।ভাগ্যের হাতে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে ওই হাবলুর কথাই ভাবে।
 অতসীর আর্টস আর অমিতের সাইন্স।শুধু বাংলা আর ইংলিশ ক্লাসটা একসাথেই হত ওদের।অতসী খেয়াল করে দেখেছে সে ক্লাসে ঢুকে যে কোন বেঞ্চেই বসুকনা কেন ওই হাবলুটা তার পিছনের বেঞ্চের দিকে বসবে।মাঝে মাঝে অতসীর মাথা গরম হয়ে যেত।
  ফাইনাল পরীক্ষা চলছে।পরীক্ষার পর কে কোথায় ছিটকে যাবে তার কোন ঠিক নেই।অতসী মেনেই নিয়েছে তার জীবনের প্রথম প্রেম অঙ্কুরেই ঝরে গেল।খুব কাছের বন্ধুদেরও কথাটা সে জানাতে পারেনি।পরীক্ষার মধ্যেই একদিন অতসী খুব তাড়াতাড়ি কলেজ গেলো।মনেমনে ভাবলো,'যা কপালে আছে হবে।যেভাবেই হোক আজকে অমিতকে তার মনের কথা বলতেই হবে।আর মাত্র দুদিন সময় হাতে আছে। কালই অতসীর পরীক্ষা শেষ।গেটের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে।যেই কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে ঢুকছে কেউ একটু আড়চোখে তাকে দেখছে আবার কেউ বা দুকদম তার কাছে এগিয়ে গিয়ে জানতে চাইছে, "তুই কেন এখানে দাঁড়িয়ে আছিস"।উত্তর একটাই "কাজ আছে।" একদম ঘণ্টা পড়ার কিছুক্ষণ আগে অমিত আসলো।বাস থেকে নেমেই এদিক ওদিকে না তাকিয়ে ঘড়ির দিকে একবার সময়টা দেখে নিয়েই দে ছুট।মুহূর্তের মাঝে ঘটনাটা ঘটে গেলো যে অতসী তাকে ডাকার সময়ই পেলো না।তবুও মরিয়া অতসী অমিতের পিছনে কিছুটা ছুটে গিয়ে বললো,"প্লিজ অমিত আমার কথাটা শুনে যাও।" 
 অমিত দাঁড়িয়ে পড়লো।অতসীর দিকে একবার তাকিয়েই মুখটা নামিয়ে নিয়ে বললো,"এক্ষুণি ঘণ্টা পরে যাবে। কাল আমাদের পরীক্ষা শেষ।আমরা কালকে কথা বলবো।আমারও কিছু বলার আছে তোমাকে।"
 অমিত কথাগুলো বলেই চলে গেলো।অতসী যেন আজ হাফ ছেড়ে বাঁচলো।এখন শুধু অপেক্ষা কাল পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত।
 অতসী পরীক্ষা শেষে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।অমিত কোথায় আছে বোঝার চেষ্টা করছে।হঠাৎ অমিতের এক বন্ধু এসে বললো,"অমিত তোর জন্য কলেজের বকুলফুল গাছটার কাছে অপেক্ষা করছে।তোকে ওখানে যেতে বলেছে।অমিতের বন্ধুর মুখ থেকে এ কথাটা জানতে পেরে অতসীর বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো বকুল গাছটার দিকে।অমিত সেখানে বসে আছে।অতসীকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।এগিয়ে গিয়ে বললো," আমি জানি তুমি আমায় কি বলবে আর হয়তো তুমিও জানো আমি তোমায় কি বলবো।কিন্তু সবার আগে আমি তোমায় একটা উপহার দিতে চাই।হয়তো এই উপহারটাই তোমার এবং আমার না বলা সব প্রশ্নের উত্তর দেবে।
 অতসী হাত পেতে বললো,
--- দাও তবে।
  অমিত তার ব্যাগ থেকে একটা খাতা বের করে তার ভিতর থেকে একটা শুকিয়ে যাওয়া গোলাপ বের করে অতসীর হাতে দেয়।আর বলে,
--- তিন বছর ধরে গোলাপটা আমার ব্যাগেই থাকে।কলেজে প্রথম যেদিন তোমায় দেখেছিলাম সেদিনই ভালো লেগেছিলো।কিন্তু দুজনের পড়াশুনার কথা চিন্তা করে সব কথা বলা হয়ে ওঠেনি।আর কিছুটা লজ্জাও ছিল।আমি আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম শেষ পরীক্ষার দিন তোমায় উপহারটা দেবো।পছন্দ হয়েছে তোমার উপহারটা?
--- এই উপহারটার জন্য আমি দুবছর ধরে অপেক্ষা করছি।
--- আর আমি তিন বছর ধরে প্রতি মুহূর্তে সঠিক সময়ে তোমায় উপহারটা দেবো বলে বহন করে চলেছি।আজ আমি উপহারটা দিতে পেরে ভার মুক্ত হলাম।



 

No comments:

Post a Comment