শুধু একটি রাত
" এই দিনটার অপেক্ষা থাকে সারা বছর কিন্তু -"
তবুও নিজের ইগো ঝেড়ে ফেলে তার কাছে আসতে পারে না।আমি জানি একবার যদি রুপশ্রী সব ভুলে গিয়ে দেবদূতের কাছে ক্ষমা চায়,ক্ষমা চায় বলছি কেন - একবার যদি তাকে আর একটা সুযোগ দেয় তাহলেই কিন্তু সবকিছু ঠিক হয়ে যেত।কিন্তু কিছুতেই সে মাথা মাথা নোয়াবে না।আসলে তুমিও তো ওই ধরনের।নিজের ভুল কিছুতেই স্বীকার করবে না।"
--- বেশ তো মেয়ের কথা বলছিলে।হঠাৎ আমায় ধরে টানছো কেন?
--- তোমায় ধরে টানছি এই কারণেই এই স্বভাবটা তো সে তোমার থেকেই পেয়েছে।
অনিন্দ্যবাবু আর কোন কথা না বলে পেপারটা সামনে ধরে ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দিলেন।আর সেখানেই চুপচাপ রূপশ্রীর মা শ্রীময়ী বসে সাতপাঁচ ভেবে চলেছেন।
আজ আট বছর হতে চললো রুপশ্রীর বিয়ে হয়েছে দেবদূতের সঙ্গে।বছর চারেক খুব ভালোই ছিলো দুজনে।দেবদূত নামকরা কোম্পানির উচ্চপোষ্টে কর্মরত।বাবা, মা হারা সন্তান সে।আত্মীয় স্বজনেরা দেখেশুনে বিয়ের সম্মন্ধ করেছিলো।তারপর দেবদূত দেখেই ফাইনাল করেছে।রূপশ্রী সাধারণ ভাবে গ্র্যাজুয়েশনটা কমপ্লিট করেছিলো।আহামরি সুন্দরী না হলেও কেউ কুৎসিত তাকে বলবে না।তবে রূপশ্রীর গায়ের রংটা চোখে পড়ার মত।দুধে আলতা গায়ের রং তার।সংসারের কাজেও যথেষ্ঠ পারদর্শী।তার চরিত্রের সব থেকে বড় দোষ যেটা -সে তার ভুল বুঝতে পারলেও কখনোই মুখ ফুটে ভুল স্বীকার করে না।'একদম বাপ কা বেটি।'
একবার পুজোর সময় পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে সেখানে হঠাৎ করেই দেখা হয়ে যায় দেবদূতের অফিস কলিগ অপরিজিতার সাথে।দেখাটা কাকতালীয় হলেও রূপশ্রী নিজের ইচ্ছামত মনের মধ্যে একটা স্ক্রিপ্ট তৈরি করে নেয়।আর সেখানে সে তার যুক্তি,তর্ক দিয়ে দেবদূতকে বলে,
-- তুমি অপরাজিতার সাথে পরামর্শ করেই একই জায়গায় এসেছো।
--- পাগল নাকি তুমি?ও এসেছে ওর হাজব্যান্ড এর সাথে।আর আমি জানবোই বা কেমন করে যে ওরা এখানেই আসছে কলকাতার পুজো ছেড়ে।আর সব থেকে বড় কথা হল এখানে আসার সিদ্ধান্ত তোমার।আমি কিন্তু এবারের পুজোটা কলকাতাতেই কাটাতে চেয়েছিলাম।
দেবদূতের সমস্ত কথায় অরণ্যে রোদন হয়।ঝামেলার এই শুরু।অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলেও অপরাজিতাকে নিয়ে দেবদূতকে জড়িয়ে নানান কটূক্তি।তারপর রূপশ্রী একদিন সত্যিই ঘর ছাড়ে।দেবদূত শুধু পায়ে ধরতেই বাকি রেখেছিল সেদিন।তার মস্তবড় অপরাধ ছিল সেদিন তর্কাতর্কির মাঝে দেবদূত রূপশ্রীকে বলেছিলো,
--- তুমি একজন মানসিক রোগী ।তোমাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো দরকার।
রূপশ্রী তারপর আর ফিরে যায়নি দেবদূতের কাছে।সব থেকে অদ্ভুত যে ব্যাপারটা দেবদূত প্রতিবছর দশমীর দিনে তার শ্বশুরবাড়িতে আসে।একমাথা সিঁদুর পরে মাকে বরণ করতে যায় রূপশ্রী।দেবদূতের সাথে তার দেখাও হয়।কিন্তু কোন কথা সে বলেনা।সে বসে থাকতেই তার সামনের থেকে গটগট করতে করতে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।অথচ এই দশমীর দিনে বিকেল থেকেই সে সেজেগুজে বারবার জানলা দিয়ে রাস্তার দিকে উঁকি দিতে থাকে।তাকে দেখলেই বোঝা যায় সে আজ খুব আনন্দে আছে
শ্রীময়ীদেবী এবার ঠিক করেন যে ভাবেই হোক দেবদূতকে এক রাত এখানে রাখতেই হবে।
দেবদূত এবারেও আসে।পূর্ব পরিকল্পনা মত অনিন্দ্যবাবু হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়েন।শ্রীময়ীদেবী কাঁদো কাঁদো হয়ে দেবদূতকে তার শ্বশুরের কথা চিন্তা করে এক রাত থেকে যেতে বলেন।দেবদূত অনিচ্ছা সত্বেও রাজি হয়।কিন্তু অতিরিক্ত ঘর না থাকায় শ্রীময়ীদেবী যখন দেবদূতকে রূপশ্রীর ঘরে শুতে বলেন সে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় 'না।' বাধ্য হয়ে দেবদূত ড্রয়িংরুমের সোফার উপর শোয়।
সকলে ঘুমিয়ে পড়লে অনেক রাতে পা টিপে টিপে রূপশ্রী দেবদূতের কাছে এগিয়ে গিয়ে তার গায়ে একটি চাদর দিতে যায়।আর ঠিক তখনি জেগে থাকা আর ঠিক এই প্রতীক্ষাতে থাকা দেবদূত এক টানে রূপশ্রীকে নিজের বুকের উপর টেনে নেয়। মান-অভিমান, ঝগড়া অন্ধকারের মধ্যে মিশে গিয়ে দুটো নরনারী পুনরায় এক হয়ে যায়।
#আজকের_ব্লগিং_সূত্র
No comments:
Post a Comment