Sunday, October 24, 2021

সব স্বপ্ন পূরণ হয় না

সব স্বপ্ন পূরণ হয় না
"এমনই ভারী বর্ষার দিন ছিল সেটা,কত স্বপ্ন ছিল মনে...কিন্তু মুহূর্তের মাঝে সব স্বপ্ন ঝড়ের সাথে সাথে উড়ে গেলো।কোনদিন ভাবতেই পারিনি আমার জীবনে এরূপ একটি অঘটন ঘটতে চলেছে।"
  প্রথম যেদিন কুশলের সাথে আমার পরিচয় সেদিন পুরো কলকাতা শহর ছিল জলের তলায়।প্রায় দুঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম কলেজ স্ট্রিটের একটি দোকানের সেডের নিচে।ভিজে পুরো চুপসে গেছিলাম।শুধু আমিই নই ওখানে যারা যারা দাঁড়িয়ে ছিল তারা প্রত্যেকেই।বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতই যেন হঠাৎ করে আসা এই মুসলধারে বৃষ্টি।ট্যাক্সি,উবের সব বন্ধ।দু একটি বাস যা চলছে তাতে পা দানিতেও পা রাখার জায়গা নেই।একে একে সেডের এবং আশেপাশের সমস্ত দোকানগুলোর জমায়েত জায়গাগুলি ফাঁকা হতে লাগলো।আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল কুশল।তখনো আমি অবশ্য ওর নামটা জানতাম না।হঠাৎ অপরিচিত ছেলেটি আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল,
-- আপনি তো একেবারেই ভিজে গেছেন।কফি হাউজের ভিতর গিয়ে শাড়ীটা একটু নিংড়ে নিন।আর যদি আপত্তি না থাকে চলুন দুজনে এক কাপ করে কফি খেয়ে নিই।
 মনেমনে ভাবলাম লোকালয়ে অযাচিতভাবে এভাবে আমার ভালো চাওয়া মানুষটি খুব একটা খারাপ হবে না।রাজি হয়ে গেলাম।সেদিন কথায় কথায় অনেক কথাই জানলাম আর বললাম। ব্যাংকে চাকরি করেন,বাবা নেই - মা আর সে।সেই শুরু।প্রথমে ফোনে তারপর সপ্তাহে দু একদিন দেখা করা।বেশ চলছিলো।একদিন ওর বাড়িতে নিয়ে গেলো ওর মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।তিনিও খুব ভালো মানুষ।দুবাড়িতেই আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিল।
  হঠাৎ করেই হল ওর মাতৃবিয়োগ। ফোনে আমাকে জানিয়ে ছোট শিশুর মত ভীষণ কান্নাকাটি করতে লাগলো।আমার বাবা সবকিছু জেনে আমায় নিয়ে ওদের বাড়িতে গেলেন।আত্মীয়স্বজন বলতে এক বিধবা মামী আর তার বিয়েদারি মেয়ে।তারাও আমাকে মুহূর্তের মাঝে আপন করে নিলেন।দেখতে দেখতে এক বছর কেটে গেলো।
  বিয়ের দিন ঠিক হল।বিয়ের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবশী ভর্তি বাড়ি।সকলেই হৈ হট্টগোলে সামিল।সেদিন সকাল থেকেই ছিল আকাশের মুখ ভার।চারিদিক এমনভাবে অন্ধকার করে নিয়ে এসেছিল বাইরের দিকে তাকালে মনে হচ্ছিল যেন চারিদিকে কেউ কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছে।ওদের বাড়ি থেকে হলুদ নিয়ে এসে পৌঁছাল প্রায় সন্ধ্যার দিকে।হুগলি থেকে কলকাতার এই দূরত্ব - কিভাবে বরের গাড়ি আসবে এটা নিয়েই আমার বাবা,মা আত্মীয়দের চিন্তা।সেদিন দুটো লগ্নে বিয়ে ছিলো।একটা ছিল সন্ধ্যা লগ্নে অপরটা রাত তিনটের পর।আমার বিয়ের সময় ছিল সন্ধ্যা লগ্নে।কিন্তু সবাই বুঝেই গেছিলাম সন্ধ্যা লগ্নে বিয়ে হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়।সবাই পরের সময়টার অপেক্ষায় ছিল।আমি কনে সেজে সেই বিকেল থেকে বসে।বুকের ভিতর যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছে।সমানে ঠাকুরকে ডেকে চলেছি।রাত বারোটা কিন্তু কোথায় বরবেশি কুশল?বাড়ি তখন ফাঁকা হতে শুরু করেছে।খুব কাছের কয়েকজন ছাড়া তখন আর কেউ নেই।বাবা পাগলের মত ছটফট করছেন।মা ঠাকুরঘরে পরে আছেন।আর আমার কথা নাইবা বললাম।
  ভোরবেলা সেই বৃষ্টি থামলো।কাছের যারা ছিল সবাই যে যার মত গাড়ী,বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো।পুরো চব্বিশ ঘণ্টা পাগলের মত ছোটাছুটির পর বাবা গিয়ে মর্গে কুশলের লাশ সনাক্ত করলেন।বিশাল এক্সিডেন্ট!
 বিয়ে না হয়েও আমি বিধবা হলাম।বাকি জীবনটা এভাবেই কাটিয়ে দেবো মনে করে বাবা,মায়ের মৃত্যুর পর সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে পাহাড়ে চলে এসে এখানেই এই বাচ্চাগুলোর দেখাশুনার দায়িত্বে আছি।
 এতক্ষণ ধরে আমি আমার কলিগের সাথে আমার জীবনের কথাগুলো শেয়ার করছিলাম কারণ অনিন্দ্য আমাকে তার ভালোবাসার কথা জানিয়েছে।আমি যে জীবনে আর কাউকেই স্বামী হিসাবে মেনে নিতে পারবো না,কাউকে ভালোবাসতে পারবো না এটা পরিস্কার করে অনিন্দ্যকে জানিয়ে দেওয়ায় শ্রেয় মনে করলাম।
    

No comments:

Post a Comment