Monday, October 25, 2021

অপেক্ষার আত্মতৃপ্তি

অপেক্ষার আত্মতৃপ্তি
  রোজের মত আজও দুপুরের দিকে একটা খাবারের প্যাকেট আসলো।যুথিকাদেবী মনেমনে বললেন,' আজও মায়ের সাথে দেখা না করে চলে গেলি বাবু?' বলেই তিনি খাবারের প্যাকেটটা খুলে খেতে শুরু করলেন।ভাতের উপর টপটপ করে চোখের জল পড়ছে আর বিড়বিড় করে নিজের মনেই বলে চলেছেন,' রোজ রোজ খাবার না পাঠিয়ে যদি একবার এসে দেখা করতিস সোনা তাহলে তোর এই অভাগা মা সবচেয়ে বেশি খুশি হত।'
  বছর খানেক আগে দুপুরের দিকে দেবেশ যখন অফিসে তখন যুথিকাদেবীএকমাত্র ছেলের বউয়ের কুকীর্তি দেখে ফেলেন।এই সময়ে সাধারণত তিনি ঘরের বাইরে আসেন না।কিন্তু সেদিন জলের জগে জল না থাকার দরুন ঘর থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে গিয়ে হঠাৎ বৌমার ঘর থেকে হাসির আওয়াজ শুনে ভেবেছিলেন তার বাবু ওরফে দেবেশ বুঝি অফিস থেকে ফিরে এসেছে এই অসময়ে।তাই তিনি দরজার কাছে দাঁড়িয়েই 'বাবু বাবু' বলে বেশ কয়েকটা ডাক দেন।ভিতর থেকে তখন কথা ও হাসির আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়।তখন তিনি 'বৌমা বৌমা' বলে অনেক ডাকাডাকির পর ভিতর থেকে তার আদরের বৌমা অভিনয়ের মত ঘুম জড়ানো গলায় চেঁচিয়ে বলে ওঠে,"আমি ঘুমাচ্ছি এখন।পড়ে শুনবো আপনার কথা।"
 বৃদ্ধা আর কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে আসেন।কিন্তু মনটা তার খুঁতখুঁত করতেই লাগে।তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেটের কাছে পাঁচিলের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখে অপেক্ষা করতে থাকেন।কিছুক্ষণ পর তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে একটি ছেলে।সে গেট থেকে বেরিয়ে গেলে যূথিকাদেবী বৌমার মুখোমুখি হন।দু এক কথায় ঝামেলা প্রচন্ড শুরু হয়।'বাবু আসলে তাকে সব জানিয়ে দেবো'- এটাই ছিল তার মস্তবড় ভুল যা তিনি তার বৌমাকে বলেছিলেন।
 শীলা ঘরে ঢুকেই তার স্বামীকে ফোন করে প্রচণ্ড কান্নাকাটি করতে থাকে যে দেবেশের মা খামোখা তাকে উল্টোপাল্টা কথা বলেছেন।শীলা এতই কাদঁছিলো সব কথা দেবেশ ভালোভাবে বুঝতেও পারছিল না।তাই তাকে বলেছিলো ,"বাড়িতে গিয়ে সব শুনবো" বাড়িতে এসে যা শুনেছিল তা হল দুপুরের খাবার দিতে দেরি হওয়ায় শ্বাশুড়ী খাবারের থালা তার গায়ের উপর ছুড়ে মেরেছেন আর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন।দেবেশ মায়ের কাছে ঘটনার বিবরণ শোনার কোনো প্রয়োজনীয়তা মনে করেনি।তার মা তাকে সেদিনের কোন ঘটনায় জানিয়েছিল না।তার উদ্দেশ্য ছিল বৌমাকে ভয় দেখিয়ে সোজা পথে আনা।
 দেবেশ এই ঘটনার দুদিন পড়ে মাকে নিয়ে মাসীর বাড়ি যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্টেশনে মাকে বসিয়ে রেখে টিকিট কাটতে যাচ্ছি বলে সেই যে গেল আর ফিরে আসেনি।অনাহারেই বৃদ্ধার দিন কাটতো।কিন্তু রেলে কর্মরত একজন সহৃদয় ব্যক্তি দিনের পর দিন একজন বৃদ্ধাকে একই জায়গায় বসে থাকতে দেখে তার কাছে গিয়ে সব কথা জানতে পারেন।তিনিই নিত্য যুথিকাদেবীর খাবারের ব্যবস্থা করেন।প্রথম প্রথম নিজেই  খাবার বৃদ্ধার সামনে এনে দিতেন।এখন অবশ্য কোন লোক মারফৎ পাঠিয়ে দেন।কারণ প্রথমদিন খাবারের প্যাকেট দেখে বলেছিলেন, "আমার বাবু পাঠালো বুঝি?"আর তিনিও 'হ্যাঁ' বলেছিলেন।শত আঘাত পাওয়া এক মাকে আর আঘাতে জর্জরিত করতে চাননি।আর কটাদিনই বা বাঁচবেন।বাকি জীবনটা ছেলের অপেক্ষাতে নিজ ছেলের পাঠানো অন্ন মনে করে আত্মতৃপ্তিটা নিয়েই থাকুন।

No comments:

Post a Comment