যদি ফিরে আসে
বহুদিন পর বাড়ির ছেলে বাড়ি আসছে।আজ প্রায় বছর আট হল সেই যে অসিত বিয়ের দুবছরের মাথায় চাকরির সুবাদে কানাডা চলে যায় তারপর আর বাড়িতে আসেনি।প্রতিবারই বলে পুজোর সময় বাড়ি আসবে কিন্তু শেষ মুহূর্তে জানায় আসতে পারবে না।অফিস ছুটি দিচ্ছে না।
কলকাতায় একটি বিদেশি কোম্পানির উচুঁ পোষ্টে চাকরি করতো অসিত পাল।মায়ের ছেলেবেলার বন্ধুর মেয়েকে মা নিজেই পছন্দ করে পাকা কথা দিয়ে তারপর ছেলেকে জানান।ছেলেও না বলতে পারেনি মায়ের মুখের উপর। অসিতের মনে হয়েছিল এতে মা মনে খুব আঘাত পাবেন।বাবার মৃত্যুর পর অনেক কষ্ট করেই অসিতকে তার মা মানুষ করেছেন।লোকের বাড়িতে রান্নাও করেছেন একসময়।আজ তিনি একটু সুখের মুখ দেখেছেন।তাই হয়ত মায়ের মুখের উপর না করতে পারেনি।কিন্তু মন থেকেও বিদিপ্তাকেও মেনে নিতে পারেনি।বিয়ের পর থেকেই একটা ভালোমানুষের মুখোশ পরে মা আর বউয়ের সাথে দুটো বছর কাটিয়েছে।আর তলে তলে চেষ্টা চালিয়ে গেছে বাইরে চলে যাওয়ার।যা মা বা বউ কেউই ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি।অসিত যখন বাইরে চলে যায় তখন বিদিপ্তা পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট।সুন্দর ফুটফুটে ছেলেটি হওয়ার পরেও সে দেশে ফেরেনি।সব সময়ের জন্যই সে অফিসের দোহাই দিয়েই দেশে না আসা করেছে।মাস গেলে ঠিক খরচের টাকাটা মায়ের অ্যাকাউন্টে সময়মত পাঠিয়ে দেয়।সপ্তাহে দু থেকে তিনবার ফোনও করে।মাঝে মধ্যে তার অফিস টাইমে ভিডিও কল করেও সকলের সাথে কথা বলে।
মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে মেনে নিতে না পেরেও নিজের অমতে সেই মেয়েকে মায়ের মন রাখতে বাধ্য হয়ে বিয়ে করে শত চেষ্টা করে বিদেশের মাটিতে পারি দেয় নিজের মনে ক্ষোভ নিয়ে - ' মায়ের পছন্দ করা মেয়ে নিয়ে মা নিজেই সংসার করুন,ওই স্বল্প শিক্ষিত মেয়েটাকে আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না।মা একবারও আমার কাছে কিছুই জানতে চাইলেন না?এবার তো তাকে দেখার লোক এসেই গেছে আমি আমার নিজের মত করেই জীবনটা কাটাবো অথচ কিছুই কেউ বুঝতে পারবে না।"
কানাডা পৌঁছানোর দুবছরের মাথায় একই অফিসে কর্মরত প্রবাসী সুনীল বোসের নজরে আসে সে।সুনিলবাবু তাকে নিজের বাড়িতে প্রায়ই নিমন্ত্রণ করতেন এই কারণেই অসিতকে তার বড় মেয়েটির সাথে বিয়ে দিয়ে বড় জামাই করার এক অদম্য ইচ্ছায়।অসিত অজান্তেই তার ফেলা টোপটা গিলে ফেলে।দুবছরের মাথায় পায়েলের সাথে তার বিয়ে হয়ে যায়।সে সুনীল বোসকে জানিয়েছিল দেশে তার নিজের বলতে কেউই নেই।কোনদিন দেশে ফেরার ইচ্ছাও নেই।
সকাল থেকেই বিদিপ্তা আর তার শ্বাশুড়ী অসিতের প্রিয় খাবারগুলো করতে ব্যস্ত।সাত বছরের অয়ন বারবার মা,ঠাকুমার কাছে জানতে ছুটে আসছে "বাবার আর কত দেরি হবে আসতে?বাবা কখন আসবে?" আর মাঝে মাঝেই ছুটে চলে যাচ্ছে ঘরে বড় করে বাঁধানো বাবা,মায়ের ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে।
আজও অয়ন মাঝে মধ্যেই বাবা,মায়ের ছবিটার দিকে তাকিয়ে ভাবে বাবা কেন এমন করলেন আমাদের সাথে?এখন তার বয়স আঠারো বছর।মায়ের লাল সিঁথিটার দিকে তাকিয়ে মনে আসা সব প্রশ্নের উত্তর নিজেই খোঁজার চেষ্টা করে।ঠাকুমা মৃত্যুর সময় বারবার করে বাবার কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন আজও চোখ বুঝলে অয়ন দেখতে পায় - অত কষ্টের মাঝেও মায়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন,"ওকে ক্ষমা করে দিও বৌমা।একদিন না একদিন ও ঠিক ফিরে আসবে তোমার কাছে।"
বলাবাহুল্য অসিত সেদিন আসেনি শুধু না ; সেদিনের পর থেকে বিদিপ্তাদের সাথে সম্পর্কও ছিন্ন করেছে।
বিদিপ্তা আজও একমাথা সিঁদুর নিয়ে অসিতের অপেক্ষায় যদি সে ফিরে আসে।
No comments:
Post a Comment